প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

প্রথম সারির তিনটি নৌসমরযান আইএনএস সুরাট, আইএনএস নীলগিরি এবং আইএনএস ভাগশীর জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

Posted On: 15 JAN 2025 12:50PM by PIB Kolkata

        নয়াদিল্লি,  ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫


প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ মুম্বাইয়ে ন্যাভাল ডকইয়ার্ডে প্রথম সারির তিনটি নৌসমরযান আইএনএস সুরাট, আইএনএস নীলগিরি এবং আইএনএস ভাগশীর জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেছেন। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ জানুয়ারি দিনটি সেনা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। দেশের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য যেসব বীর যোদ্ধা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের কুর্নিশ জানান। এই উপলক্ষ্যে সেনা বাহিনীর সব সদস্যদের অভিনন্দন জানান তিনি। 

আজকের দিনটিকে ভারতের সামুদ্রিক ঐতিহ্য, নৌবাহিনীর গৌরবময় ইতিহাস এবং আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের জন্য এক বিশেষ দিন হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ, ভারতের নৌবাহিনীকে নতুন শক্তি ও দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছিলেন। আজ শিবাজি মহারাজের মাটিতেই সরকার ভারতীয় নৌবাহিনীকে একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী করে তোলার লক্ষ্যে বৃহৎ পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই প্রথম একইসঙ্গে একটি ডেস্ট্রয়ার, একটি ফ্রিগেট এবং একটি ডুবোজাহাজকে ভারতীয় নৌবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হল। এই নৌযানগুলির প্রতিটিই ভারতে তৈরি হয়েছে, যা অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এই সাফল্যের জন্য তিনি ভারতীয় নৌবাহিনী, নির্মাণ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ এবং দেশের নাগরিকদের অভিনন্দন জানান। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠান আমাদের গৌরবময় ঐতিহ্যকে আমাদের ভবিষ্যত আকাঙ্খার সঙ্গে যুক্ত করছে। ভারতে দীর্ঘ সমুদ্র যাত্রা, সমুদ্র বাণিজ্য, সমুদ্র প্রতিরক্ষা এবং জাহাজ শিল্পের সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। এই ইতিহাসের উত্তরাধিকার নিয়ে আজকের ভারত বিশ্বের সামনে এক প্রধান সমুদ্র শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। আজকের উদ্যোগ তারই এক প্রতিচ্ছবি। চোল রাজবংশের সামুদ্রিক শক্তির প্রতি আইএনএস নীলগিরি সহ এই নৌযানগুলি নিবেদিত হচ্ছে। সুরাট যুদ্ধজাহাজটি আমাদের সেই সময়কার কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন গুজরাটের বন্দরগুলি ভারতের সঙ্গে পশ্চিম এশিয়ার যোগসূত্র হিসেবে কাজ করতো। প্রধানমন্ত্রী ভাগশীর ডুবো জাহাজের উল্লেখ করে বলেন, কয়েক বছর আগে প্রথম ডুবো জাহাজ কালভারি ভারতীয় নৌ বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এটি পি সেভেন ফাইভ শ্রেণীর ষষ্ঠ ডুবো জাহাজ। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত আজ বিশ্বজুড়ে নির্ভরযোগ্য ও দায়িত্বশীল অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশেষত, উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ভারতকে অন্য চোখে দেখা হয়। ভারত সবসময়ই এক মুক্ত, নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভাবনাকে সমর্থন করে এসেছে। উপকূলবর্তী দেশগুলির উন্নয়নে ভারত SAGAR  (Security And Growth for All in the Region) –এর মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলেছে। জি-২০তে সভাপতিত্বের সময়ে ভারত “এক পৃথিবী এক পরিবার এক ভবিষ্যত”-এর ভাবনা তুলে ধরেছে। “এক পৃথিবী, এক স্বাস্থ্য” দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ভারত কোভিড-১৯ অতিমারির সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও ভৌগোলিক গতিশীলতা রক্ষায় ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আঞ্চলিক জলসীমা রক্ষা, অবাধ নৌ যাতায়াত সুনিশ্চিত করা, বাণিজ্য সরবরাহ পথ ও সমুদ্র পরিবহণ নিরাপদ রাখা অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং জ্বালানী সুরক্ষার জন্য একান্ত আবশ্যক। এই অঞ্চলকে সন্ত্রাস এবং অস্ত্র ও মাদক পাচারের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখার ওপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। খনিজ ও মৎস্যের মতো সমুদ্র সম্পদের অপব্যবহার রোধের প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করেন তিনি। যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য নতুন নতুন সমুদ্র পথে বিনিয়োগের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত এই লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে উদ্যোগ নিয়ে চলেছে। সম্প্রতি ভারতীয় নৌবাহিনী ও উপকূল রক্ষী বাহিনী শত শত প্রাণ বাঁচিয়েছে, হাজার হাজার কোটি টাকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পণ্য রক্ষা করেছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে ভারতের ওপর বিশ্বের আস্থা আরও বেড়েছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের সক্রিয় উপস্থিতির জন্য আসিয়ান, অস্ট্রেলিয়া উপসাগরীয় দেশগুলি এবং আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও মজবুত হয়েছে। 

একবিংশ শতাব্দীতে ভারতের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ও আধুনিকীকরণের ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জমি, জল, আকাশ, গভীর সমুদ্র, মহাকাশ – ভারত সর্বত্রই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। ধারাবাহিক সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে শ্রী মোদী বলেন, এর অঙ্গ হিসেবে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীকে আরও দক্ষ করে তুলতে ভারত থিয়েটার কম্যান্ড স্থাপন করতে চলেছে। 

আত্মনির্ভরতার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনী এমন ৫০০০-রও বেশি সামগ্রী ও সরঞ্জাম চিহ্নিত করেছে যেগুলি আর আমদানি করা হবে না। দেশীয় সরঞ্জামের ওপর ভারতীয় সেনাদের নির্ভরতা ক্রমশ বাড়ছে। এই প্রসঙ্গে তিনি সশস্ত্র বাহিনীর জন্য কর্ণাটকে দেশের বৃহত্তম হেলিকপ্টার উৎপাদন কারখানা এবং পরিবহণ বিমান কারখানা স্থাপনের উল্লেখ করেন। তেজস যুদ্ধ বিমানের সাফল্য এবং উত্তরপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুতে প্রতিরক্ষা করিডর গড়ে তোলার উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এরফলে প্রতিরক্ষা উৎপাদনে গতি আসবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। মেক ইন ইন্ডিয়ার আওতায় ভারতীয় নৌ বাহিনীর উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণে সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, গত এক দশকে নৌবাহিনীতে ৩৩টি জাহাজ এবং ৭টি ডুবো জাহাজ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, ৪০টির মধ্যে ৩৯টি নৌযান তৈরি হয়েছে ভারতে। এরমধ্যে আইএনএস বিক্রান্তের মতো বিমানবাহী রণপোত এবং পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম আইএনএস অরিহান্ত এবং আইএনএস অরিঘাতের মতো ডুবো জাহাজ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদনের মূল্য এখন ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে ১০০টিরও বেশি দেশে প্রতিরক্ষা সামগ্রী রফতানি করা হচ্ছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেক ইন ইন্ডিয়া প্রয়াস ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা তো বাড়াচ্ছেই, সেইসঙ্গে অর্থনৈতিক অগ্রগতির নতুন নতুন পথ খুলে দিচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি জাহাজ নির্মাণ পরিমণ্ডলের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতে জাহাজ নির্মাণে ১ টাকা বিনিয়োগ হলে অর্থনীতিতে তার দ্বিগুণ ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমানে দেশে ৬০টি বড় জাহাজ তৈরি হচ্ছে যার মোট মূল্য আনুমানিক ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা। এই বিনিয়োগ অর্থনীতিতে প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকার প্রভাব ফেলবে, কর্মসংস্থানের ওপর এর ৬ গুণ প্রভাব পড়বে। জাহাজের বিভিন্ন অংশ দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি সংস্থাগুলিতে তৈরি হয় বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি জাহাজ তৈরিতে যদি ২০০০ কর্মী নিযুক্ত থাকেন তাহলে তারফলে অন্যান্য শিল্পে প্রায় ১২ হাজার কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। 

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে ওঠার লক্ষ্যে ভারতের অগ্রগতির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উৎপাদন ও রফতানি ক্ষেত্রে ক্রমাগত বিকাশ ঘটছে। বন্দরভিত্তিক উন্নয়নের এই মডেল সমগ্র অর্থনীতির বিকাশে গতি আনবে এবং হাজার হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রয়োজন মেটাতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, নীতি ও প্রকল্প গ্রহণের মধ্য দিয়ে তাঁর সরকারের তৃতীয় মেয়াদের সূচনা হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য, প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়ন সুনিশ্চিত করা। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে বন্দরক্ষেত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর তৃতীয় মেয়াদের প্রথমেই নেওয়া বড় সিদ্ধান্তগুলির অন্যতম হল, মহারাষ্ট্রের ভাদাভান বন্দরের অনুমোদন দেওয়া। এই আধুনিক বন্দরটি গড়ে তুলতে ৭৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। এরফলে মহারাষ্ট্রে হাজার হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। 

গত এক দশকে সীমান্ত ও উপকূল ভাগে যোগাযোগ পরিকাঠামো বৃদ্ধির লক্ষ্যে যে অভূতপূর্ব কাজ হয়েছে তার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি জম্মু কাশ্মীরে সোনমার্গ সুড়ঙ্গ চালু হয়েছে। এরফলে কার্গিল ও লাদাখের মতো সীমান্ত এলাকায় সহজেই পৌঁছোনো যাবে। গতবছর অরুণাচল প্রদেশে সেলা সুড়ঙ্গ চালু হয়েছে। এরফলে সেনাবাহিনী দ্রুত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় পৌঁছোতে পারছে। শিনকুন লা সুড়ঙ্গ এবং জোজিলা সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ চলছে। ভারতমালা প্রকল্পের আওতায় সীমান্ত এলাকায় জাতীয় মহাসড়কের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। সীমান্তের গ্রামগুলির উন্নয়নে হাতে নেওয়া হয়েছে ভাইব্র্যান্ট ভিলেজ কর্মসূচি। প্রত্যন্ত দ্বীপগুলিতেও উন্নয়নের ব্যাপক কর্মসূচি সরকার হাতে নিয়েছে। 

মহাকাশ এবং গভীর সমুদ্রের ভবিষ্যত গুরুত্বের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত এই ক্ষেত্রগুলিতে সক্ষমতা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে। সমুদ্রযান প্রকল্পের আওতায় বিজ্ঞানীদের সমুদ্রের ৬০০০ মিটার গভীরে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এপর্যন্ত হাতেগোনা কয়েকটি মাত্র দেশই এই সাফল্য অর্জন করেছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একবিংশ শতাব্দীতে ঔপনিবেশিকতাবাদের সমস্ত চিহ্ন থেকে ভারতকে মুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে নৌবাহিনী নেতৃত্ব দিচ্ছে। ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের গৌরবময় ঐতিহ্যের সঙ্গে নৌবাহিনীর পতাকা সংযুক্ত করা হয়েছে। অ্যাডমিরাল পদের অধিকারীদের কাঁধে থাকা প্রতীকগুলির নক্সা বদল করা হয়েছে। ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে দেশকে মুক্ত করতে মেক ইন ইন্ডিয়া এবং আত্মনির্ভর ভারত কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ভারতকে এক উন্নত বিকশিত রাষ্ট্রে পরিণত করতে সমগ্র জাতি একযোগে কাজ করবে বলে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। 

মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল শ্রী সি পি রাধাকৃষ্ণান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিং, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবিশ, প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী শ্রী সঞ্জয় শেঠ প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। 
                                   
SC/ SD /AG


(Release ID: 2093111) Visitor Counter : 6