প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

একগুচ্ছ রেল প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 06 JAN 2025 3:26PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৬ জানুয়ারি, ২০২৫

 

নমস্কার!

তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল শ্রী জিষ্ণু দেববর্মা, ওড়িশার রাজ্যপাল শ্রী হরি বাবুজি, জম্মু-কাশ্মীরের উপ-রাজ্যপাল শ্রী মনোজ সিনহাজি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ওমর আবদুল্লাজি, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী শ্রী রেওয়ান্ত রেড্ডিজি, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী শ্রী মোহন চরণ মাঝিজি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবজি, শ্রী জি কিষাণ রেড্ডিজি, ডঃ জিতেন্দ্র সিং-জি, শ্রী ভি সোমাইয়াজি, শ্রী রবনীত সিং বিট্টুজি, শ্রী বন্দি সঞ্জয় কুমারজি, অন্যান্য মন্ত্রীরা, সাংসদরা, বিধায়করা, বিশিষ্ট অতিথিবর্গ, ভদ্রমহোদয়া ও ভদ্রমহোদয়গণ!

আজ গুরু গোবিন্দ সিং-জির জন্মবার্ষিকী। সমৃদ্ধশালী ও শক্তিশালী ভারত গড়ার ক্ষেত্রে তাঁর শিক্ষা এবং জীবনাদর্শ আমাদের অনুপ্রাণিত করে। আজ এই পবিত্র দিনে আমি সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। 

বন্ধুগণ,

২০২৫ সালের শুরু থেকেই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ক্ষেত্রে ভারত অভাবনীয় গতিতে এগিয়ে চলেছে। দিল্লি এনসিআর-এ নমো ভারত ট্রেন সহ দিল্লি মেট্রোর একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন করার সৌভাগ্য গতকাল আমার হয়েছে। গতকালই ভারত এক অভূতপূর্ব মাইলফলক অতিক্রম করেছে। আমাদের দেশের মোট মেট্রো প্রকল্পের পরিমাণ ১ হাজার কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে। আজ হাজার হাজার কোটি টাকা মূল্যের একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন এবং আগামীদিনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের শিলান্যাস করা হল। উত্তরে জম্মু-কাশ্মীর থেকে পূর্বে ওড়িশা, দক্ষিণে তেলেঙ্গানা – আজ দেশের বিস্তৃত অংশে অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই তিন রাজ্যে অত্যাধুনিক প্রকল্পের সূচনার মাধ্যমে দেশের বৃহৎ এক অংশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সূচিত হবে। এর মধ্য দিয়ে সারা দেশজুড়ে ঐক্যবদ্ধ এক উন্নয়নের সূত্রপাত ঘটল। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ মন্ত্রের প্রতি আস্থা অর্জিত হচ্ছে এবং উন্নত ভারত গড়ার লক্ষ্যপূরণে আমরা এগিয়ে চলেছি। আজ এই অনুষ্ঠানে আমি এই তিন রাজ্যের জনসাধারণ এবং প্রত্যেক দেশবাসীকে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলির জন্য অভিনন্দন জানাই। ঘটনাচক্রে আজ ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী শ্রী মোহন চরণ মাঝিজির জন্মদিন। এই উপলক্ষে আমি প্রত্যেকের পক্ষ থেকে আপনাকে উষ্ণ অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।

বন্ধুগণ,

বিকশিত ভারতের স্বপ্ন পূরণের জন্য আমাদের দেশ বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ বাস্তবায়িত করছে। ভারতীয় রেল এই লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গত এক দশকে রেলে ঐতিহাসিক সংস্কার হয়েছে। রেলের পরিকাঠামোর অভূতপূর্ব মানোন্নয়ন হয়েছে। ফলস্বরূপ, দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে, নাগরিকদের মনোবল তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।  

বন্ধুগণ,

ভারতীয় রেলের উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করছি। প্রথমটি হল, রেলের পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণ; দ্বিতীয়টি হল যাত্রীদের জন্য অত্যাধুনিক সুবিধার ব্যবস্থা করা; তৃতীয়টি হল দেশের প্রতিটি প্রান্তে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ঘটানো এবং চতুর্থ বিষয়টি হল রেলের মাধ্যমে শিল্প সংস্থাগুলিকে সহায়তা করা ও প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা। আজকের এই অনুষ্ঠান সেই লক্ষ্যপূরণের পথে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। নতুন নতুন ডিভিশন গড়ে তোলা এবং নতুন নতুন টার্মিনাল স্টেশন তৈরির মধ্য দিয়ে একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী অত্যাধুনিক রেল পরিকাঠামো ভারতীয় রেলকে এক নতুন মাত্রায় উন্নীত করবে। এই উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির মাধ্যমে আর্থিক ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি আসবে, রেল চলাচল সংক্রান্ত পরিচালন ক্ষেত্রের প্রসার ঘটবে, বিনিয়োগের নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হবে এবং আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।  

বন্ধুগণ,

২০১৪ সালে আমরা ভারতীয় রেলের আধুনিকীকরণের যে যাত্রা শুরু করেছিলাম, আজ বন্দে ভারত ট্রেন, অমৃত ভারত স্টেশন এবং নমো ভারত রেল সেই উদ্যোগের ফসল। উচ্চাকাঙ্ক্ষী ভারত কম সময়ের মধ্যে বেশি কিছু অর্জন করতে চায়। জনগণ দীর্ঘ পথ দ্রুততার সঙ্গে পাড়ি দিতে চায়। তাই, দেশজুড়ে উচ্চগতির রেল পরিষেবার দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। বর্তমানে ৫০টির বেশি রুটে বন্দে ভারত ট্রেন চলাচল করছে। ১৩৬টি পরিষেবার মাধ্যমে যাত্রীরা আরামদায়ক সফর করতে পারছেন। দিন কয়েক আগে আমি একটি ভিডিও দেখছিলাম। ওই ভিডিওটিতে বন্দে ভারতের নতুন স্লিপার কোচগুলি ঘন্টায় ১৮০ কিলোমিটার বেগে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছিল। এই সাফল্য প্রতিটি ভারতবাসীকে গর্বিত করবে। এই সাফল্য শুরু হয়েছে মাত্র। সেদিন আর বেশি দেরি নেই যখন দেশ প্রথম বুলেট ট্রেন চলাচল করতে দেখবে।

বন্ধুগণ,

আমাদের মূল লক্ষ্য হল, যাত্রা শুরুর স্টেশন থেকে গন্তব্যের স্টেশন পর্যন্ত রেল সফর যাতে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে তার ব্যবস্থা করা। আর তাই, দেশজুড়ে ১,৩০০-র বেশি অমৃত স্টেশন গড়ে তোলা হচ্ছে। গত এক দশকে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়েছে। ২০১৪ সালে দেশের মাত্র ৩৫ শতাংশ রেলপথের বৈদ্যুতিকীকরণ হয়েছিল, আর আজ প্রায় ১০০ শতাংশ রেলপথের বৈদ্যুতিকীকরণ সম্পূর্ণ হতে চলেছে। পাশাপাশি আমরা প্রচুর জায়গায় রেল পরিষেবা পৌঁছে দিয়েছি। গত ১০ বছরে ৩০ হাজারের বেশি নতুন রেললাইন পাতা হয়েছে, হাজার হাজার রোড ওভারব্রিজ বা আন্ডারপাস তৈরি করা হয়েছে ও ব্রডগেজ লাইনে প্রহরীবিহীন লেভেল ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দুর্ঘটনা হ্রাস পেয়েছে, যাত্রীদের সুরক্ষা বৃদ্ধি পেয়েছে। ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের মতো আধুনিক রেল প্রকল্পের বাস্তবায়ন দ্রুতগতিতে হচ্ছে। এই বিশেষ করিডরগুলি নিয়মিত পথে যাত্রী ভিড় এড়াতে সাহায্য করবে। উচ্চ গতিসম্পন্ন ট্রেন চালানোর সুযোগ এনে দেবে।

বন্ধুগণ,

ভারতীয় রেলের এই সংস্কার কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রেও সহায়ক হচ্ছে। মেড ইন ইন্ডিয়া কর্মসূচিকে উৎসাহিত করা, মেট্রো রেল এবং অন্যান্য ট্রেনের জন্য আধুনিক কোচ নির্মাণ, স্টেশনগুলির সংস্কার, সোলার প্যানেল বসানো, ‘এক স্টেশন এক পণ্য’ উদ্যোগকে বাস্তবায়িত করার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। গত এক দশকে লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতী রেলে স্থায়ী সরকারি চাকরি পেয়েছেন। মনে রাখতে হবে, রেলের যে নতুন কোচগুলি তৈরি হচ্ছে তার কাঁচামাল অন্য ফ্যাক্টরি থেকে আসে। এর ফলে, ওই শিল্পগুলির চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। ফলস্বরূপ আরও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। রেলের কাজের জন্য বিশেষ দক্ষতা যাতে অর্জিত হয়, সেই লক্ষ্যে ভারত প্রথম গতি শক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে, যা এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।  

বন্ধুগণ,

রেল পরিষেবার সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন সদর দপ্তর এবং ডিভিশন গড়ে তোলা হবে। জম্মু ডিভিশনের সুফল শুধু জম্মু ও কাশ্মীরই পাবে না, হিমাচল প্রদেশ এবং পাঞ্জাবের বহু শহরও এর সুফল লাভ করবে। এছাড়াও, লেহ-লাদাখের জনগণেরও আরও সুবিধা হবে।

বন্ধুগণ,

জম্মু ও কাশ্মীর রেল পরিকাঠামো ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। দেশজুড়ে উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুলা রেল পরিষেবার কথা যথেষ্ট চর্চিত হচ্ছে। এই প্রকল্প জম্মু-কাশ্মীরের সঙ্গে ভারতের অন্যান্য অংশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করবে। এই প্রকল্পের অঙ্গ হিসেবে বিশ্বের উচ্চতম রেল ব্রিজ চেনাব সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়াও, এই প্রকল্পে দেশের প্রথম কেবল রেলসেতু – আঞ্জি খাড় ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে। এই দুটি সেতুই প্রযুক্তিবিদ্যার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব। এর ফলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের আর্থিক প্রগতি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত হয়েছে। 

বন্ধুগণ,

প্রভু জগন্নাথের আশীর্বাদে ওড়িশা প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। রাজ্যের বিস্তীর্ণ উপকূল অঞ্চল আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। ওড়িশায় নতুন নতুন রেললাইন বসানোর কাজ চলছে। এক্ষেত্রে ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে। রাজ্যে সাতটি গতি শক্তি কার্গো টার্মিনাল ইতোমধ্যেই উদ্বোধন হয়েছে। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের প্রসার ঘটবে। আজ ওড়িশায় রায়গড় রেল ডিভিশনের শিলান্যাস করা হল। ফলে, এই রাজ্যের রেল প্রকল্পের আরও সম্প্রসারণ ঘটবে। ওড়িশা জুড়ে পর্যটন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। আদিবাসী অধ্যুষিত দক্ষিণ ওড়িশা এর ফলে উপকৃত হবে। জন মন যোজনার মতো বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা পিছিয়ে পড়া আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলির উন্নয়নে ব্রতী হয়েছি। এই পরিকাঠামো আমাদের সেই উদ্যোগকে বাস্তবায়িত করতে সহায়তা করবে।

বন্ধুগণ,

তেলেঙ্গানার চেরলাপল্লীতে নতুন টার্মিনাল স্টেশনটি উদ্বোধন করে আমি আনন্দিত। এই স্টেশনটি আউটার রিং রোডের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করায় এই অঞ্চলের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। এই স্টেশনে অত্যাধুনিক প্ল্যাটফর্ম, লিফট ও এসক্যালেটরের মতো বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকছে। পুরো স্টেশনটির বিদ্যুতের চাহিদা মেটাবে সৌরবিদ্যুৎ। নতুন এই রেল টার্মিনাল সেকেন্দ্রাবাদ, হায়দরাবাদ এবং কাচিগুড়ার মতো টার্মিনাল স্টেশনগুলির ওপর চাপ কমাবে। এর ফলে, মানুষের জীবনযাত্রা যেমন সহজ হবে, পাশাপাশি সহজে ব্যবসা-বাণিজ্যও করা যাবে।

বন্ধুগণ,

দেশজুড়ে আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তুলতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ে, জলপথ এবং মেট্রো নেটওয়ার্ক দ্রুতগতিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে। দেশের বিমানবন্দরগুলিতে আন্তর্জাতিক মানের পরিষেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০১৪ সালে ভারতে বিমানবন্দরের সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৪, আর আজ সেই সংখ্যা ১৫০ – যা দ্বিগুণেরও বেশি। একইভাবে, ২০১৪ সালে দেশের মাত্র পাঁচটি শহরে মেট্রো পরিষেবা পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে দেশজুড়ে ২১টি শহরে এই পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে। এই উন্নয়নের সঙ্গে ভারতীয় রেলের আধুনিকীকরণের কাজও তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে। 

বন্ধুগণ,

বিকশিত ভারত গড়ার লক্ষ্যে এই উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি কার্যকর হচ্ছে। প্রত্যেক দেশবাসীর সামগ্রিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার ফসল উন্নত এক ভারত গড়ে তোলা। আমি নিশ্চিত, আমরা সকলে একসঙ্গে উন্নয়নের এই পথ ধরে এগিয়ে যাব। আরও একবার এই সাফল্যগুলির জন্য আমি প্রত্যেক দেশবাসীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।

অনেক অনেক ধন্যবাদ!
প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি হিন্দিতে ছিল। 

 

SC/CB/DM


(Release ID: 2091196) Visitor Counter : 6