প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
সংবিধান গৃহীত হওয়ার ৭৫ তম বর্ষে লোকসভায় বিশেষ আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ভাষণ দিয়েছেন
ভারত গণতন্ত্রের জননী: প্রধানমন্ত্রী
আমাদের সংবিধান ভারতের ঐক্যের ভিত্তি স্থাপন করেছে: প্রধানমন্ত্রী
২০১৪ সালে এনডিএ যখন সরকার গঠনে সুযোগ পেয়েছে তখনই গণতন্ত্র এবং সংবিধান শক্তিশালী হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
দরিদ্র জনগণকে তাঁদের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়াই আমাদের সব থেকে বড় লক্ষ্য এবং সংকল্প: প্রধানমন্ত্রী
আমরা যদি আমাদের মৌলিক কর্তব্যগুলি পালন করি, তাহলে উন্নত ভারত গঠনে কেউই আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না: প্রধানমন্ত্রী
Posted On:
14 DEC 2024 11:59PM by PIB Kolkata
নতুন দিল্লি, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
সংবিধান গৃহীত হওয়ার ৭৫ তম বর্ষে লোকসভায় বিশেষ আলোচনায় আজ প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ভাষণ দিয়েছেন। শ্রী মোদী বলেন, দেশের প্রতিটি নাগরিকদের কাছে এবং বিশ্বের সেইসমস্ত জনসাধারণ— যাঁরা গণতন্ত্রকে সম্মান করেন তাঁদের সকলের জন্য এটি অত্যন্ত গর্বের এক মূহূর্ত, যে আমরা গণতন্ত্রের উৎসব উদযাপন করছি। আমাদের সংবিধান রচয়িতাদের দূরদৃষ্টি, ভাবনা এবং উদ্যোগের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সংবিধানের ৭৫ বছরের এই যাত্রা অত্যন্ত স্মরণীয়। সংসদের সদস্যরা এই উৎসবে সামিল হওয়ায় তিনি সন্তোষপ্রকাশ করেন। এই উপলক্ষে তাঁরা নিজ নিজ বক্তব্য উপস্থাপন করায় তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানান।
৭৫ তম বর্ষপূর্তিকে এক ব্যতিক্রমী অর্জন বলে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পরে ভারত সম্পর্কে যেসব ভবিষ্যবাণী করা হয়েছিল সেগুলিকে নস্যাৎ করে দিয়েছে সংবিধান। সংবিধান রচয়িতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি এই সাফল্য অর্জনের কৃতিত্ব দেশের কোটি কোটি মানুষকে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী জানান, সংবিধান রচয়িতারা যে মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে এটি রচনা করেছেন, সেগুলি সফলভাবে দেশের নাগরিকরা গ্রহণ করেছেন।
শ্রী মোদী বলেন, ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষের জন্ম হয়েছে এই ভাবনায় সংবিধান রচয়িতারা বিশ্বাসী ছিলেন না। তাঁরা মনে করতেন ভারতের এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে। ভারতের গণতন্ত্র এবং সাধারণতন্ত্র সারা বিশ্বের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস। আর তাই, ভারত গণতন্ত্রের জননী হিসেবে বিবেচিত। আমরা শুধু এক মহান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিকই নয়, আমরা গণতন্ত্রকে গড়ে তুলেছি।
সংবিধান সম্পর্কে রাজর্ষি পুরুষত্তম দাস ট্যান্ডনের বক্তব্য উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যুগ যুগ ধরে আমাদের ঐতিহ্যকে স্মরণ করে এই সভায় গঠনমূলক বিভিন্ন আলোচনা হয়েছে।” ড. এস রাধাকৃষ্ণণের বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “সাধারণতন্ত্রের ব্যবস্থাপনা এই মহান দেশের জন্য নতুন কোনো ধারণা নয়। আমাদের ঐতিহাসের সূচনা কাজ থেকেই এই ব্যবস্থা আমাদের দেশে রয়েছে।” বাবাসাহেব ড. আম্বেদকরের বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “ভারতের গণতন্ত্র সম্পর্কে শুধু ধারণাই ছিল না, একটা সময় ছিল যখন এদেশে একাধিক প্রজাতন্ত্রের অস্তিত্বের প্রমাণ মেলে।”
সংবিধান রচনার সময়ে মহিলাদের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণপরিষদে ১৫ জন সম্মানীয় সদস্য ছিলেন। তাঁরা তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গী এবং ভাবনার সাহায্যে সংবিধানের খসড়া তৈরি করেছেন। এঁদের প্রত্যেকের স্বতন্ত্র পরিচিতি ছিল। মহিলা সদস্যরা যে পরামর্শগুলি দিয়েছেন, সংবিধানে তার সুদূর প্রসারী প্রভাব পড়েছে। মহিলাদের অধিকার সম্পর্কে স্বাধীনতার শুরু থেকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের বহু দেশে এই নিয়ে ভাবনাচিন্তা অনেক পরে শুরু হয়েছে। জি২০ গোষ্ঠীর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়েও ভারত সেই একই ভাবনায় চালিত হয়েছে। নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম সফলভাবে কার্যকর করতে সমস্ত সাংসদ একজোট হয়েছিলেন। এর মাধ্যমে, সরকার রাজনীতিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি সুনিশ্চিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়ে মহিলাদের বিষয়গুলি বিবেচনা করা হয়। সংবিধানের ৭৫ তম বর্ষপূর্তিতে দেশের রাষ্ট্রপতি একজন জনজাতি গোষ্ঠীভুক্ত মহিলা হওয়ায় তিনি সন্তোষপ্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমাদের গণতন্ত্রের প্রকৃত চেতনার প্রতিফলন এর মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়েছে। সংসদে এবং মন্ত্রীপরিষদে মহিলাদের অংশগ্রহণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। “সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, খেলাধুলা অথবা অন্য যে কোনো ক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ এবং অবদান দেশের জন্য গর্বের।” মহাকাশ ক্ষেত্র সহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দেশের মহিলাদের অবদানের জন্য ভারত গর্বিত। এই অনুপ্রেরণার অন্যতম উৎস আমাদের সংবিধান।
দ্রুতহারে ভারতের উন্নয়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, সেদিন আর বেশি দূরে নেই, যখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে ভারত আত্মপ্রকাশ করবে। ১৪০ কোটি ভারতবাসীর সংকল্পের মাধ্যমে ২০৪৭ সালে দেশ উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। ভারতের ঐক্য এই সংকল্প পূরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সংবিধান ভারতের ঐক্যের ভিত্তি স্থাপন করেছে। সংবিধান রচয়িতাদের মধ্যে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীরা যেমন ছিলেন, পাশাপাশি লেখক, চিন্তাবিদ, সমাজ সংস্কারক, শিক্ষাবিদ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরাও ছিলেন। এঁরা প্রত্যেকে ভারতের ঐক্যের বিষয়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সংবিধান রচয়িতারা প্রকৃত অর্থে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার পরবর্তীকালে স্বার্থপর মানসিকতার জন্য দেশের একতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভারতের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের মনোভাবে আমাদের ঔপনিবেশিক মানসিকতার কারণে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা এই মানসিকতাকে লালন করতেন তাঁরা ভারতের ভালো দিকগুলি দেখতে পেতেন না, যাঁরা মনে করতেন ভারতের জন্ম ১৯৪৭ সালে তাঁরা এই বৈচিত্র্যের ধারণায় বিশ্বাসী ছিলেন না। বৈচিত্র্যের এই অমূল্য সম্পদকে কাজে না লাগিয়ে তাঁরা দেশের একতাকে ক্ষতি করে, একধরণের বিষাক্ত বীজ বপন করেছেন। আমাদের জীবনে বৈচিত্র্য এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এই বৈচিত্র্যকে যথাযথভাবে রক্ষা করার মধ্য দিয়ে ড. বি আর আম্বেদকরের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা সম্ভব।
শ্রী মোদী বলেন, গত ১০ বছর ধরে দেশের একতাকে শক্তিশালী করার জন্য সরকার বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেছে। সংবিধানের ৩৭০ ধারা দেশের ঐক্যকে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। তাই, সংবিধানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই ৩৭০ ধারার বিলোপ ঘটানো হয়েছে।
শ্রী মোদী বলেন, দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং বিদেশী বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে এক যথাযথ পরিবেশ গড়ে তোলা প্রয়োজন। দীর্ঘদিন ধরে পণ্য পরিষেবা কর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আজ অর্থনীতিতে সমতা আনার ক্ষেত্রে এই পণ্য পরিষেবা কর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পূর্ববর্তী সরকারের অবদানের কথা স্বীকার করে তিনি জানান, বর্তমান সরকার ‘এক দেশ এক কর ব্যবস্থা’র ধারণায় এই কর ব্যবস্থাকে কার্যকর করেছে।
আমাদের দেশের দরিদ্র মানুষের কাছে রেশন কার্ড একটি মূল্যবান নথি। দরিদ্র মানুষেরা যখন এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যান, তখন তাঁরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হন। আগে কোনো দরিদ্র মানুষ যখন এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যান, সেই সময়ে তিনি রেশন কার্ডের সুবিধা পেতেন না। অথচ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার পাওয়ার সংস্থান রয়েছে। আর তাই ঐক্যের ভাবনাকে শক্তিশালী করার জন্য ‘এক দেশ এক রেশন কার্ড’ চালু করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দরিদ্র মানুষদের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং সাধারণ নাগরিকদের দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। যখন স্বাস্থ্য পরিষেবা সকলের নাগালের মধ্যে আসে, তখন এই কাজে আরও একধাপ এগনো যায়। দেশের ঐক্যের নীতিকে অনুসরণ করে আয়ুষ্মান কার্ডের মধ্য দিয়ে ‘এক দেশ এক স্বাস্থ্য কার্ড’ চালু করা হয়েছে। বর্তমানে বিহারের প্রত্যন্ত কোনো অঞ্চলের বাসিন্দা যদি পুনেতে কাজ করতে যান, তাহলে সেখানেও তিনি আয়ুষ্মান কার্ডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা পাবেন।
শ্রী মোদী বলেন, অতীতে বিদ্যুৎ সরবরাহে অপ্রতুলতার কারণে দেশের এক অংশে বিদ্যুৎ-এর প্রাচুর্য থাকত, তখন অন্য অংশ অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকতো। ভারত আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন আলোচনার সময়ে বিদ্যুতের ঘাটতির মতো বিষয়ে সমালোচিত হত। আমাদের ঐক্যের মন্ত্রকে অনুসরণ করে সংবিধানের চেতনার সাহায্যে সরকার ‘এক দেশ এক গ্রিড’ ব্যবস্থাপনার সূচনা করেছে। বর্তমানে দেশের প্রতিটি প্রান্তে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে ‘এক দেশ এক গ্রিড’ ব্যবস্থার সূচনা হয়েছে, ফলে দেশের প্রতিটি প্রান্তে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে।
দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, সরকার জাতীয় ঐক্যকে শক্তিশালী করার জন্য সুষম উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে। উত্তরপূর্ব, জম্মু-কাশ্মীর, হিমালয় সন্নিহিত অঞ্চল এবং মরুভূমিতে সরকার পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করে তুলছে। এর মধ্য দিয়ে দেশের যে কোনো অংশে উন্নয়ন নিশ্চিত হয়েছে।
হ্যাভ এবং হ্যাভ নট-এর মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা করে ডিজিটাল ইন্ডিয়া উদ্যোগ সফলভাবে কার্যকর হয়েছে। গণতন্ত্রের মাধ্যমে প্রযুক্তি এই সাফল্য অর্জনে সহায়তা করেছে। সংবিধান রচয়িতাদের ভাবনায় ভারত বর্তমানে অপটিক্যাল ফাইবারকে দেশের প্রতিটি গ্রামপঞ্চায়েতে পৌঁছে দিয়েছে।
আমাদের সংবিধান ঐক্যের প্রত্যাশা করে। আর তাই এই চেতনা থেকে আমাদের মাতৃভাষাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত-এর অভিযানকে শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য দৃঢ় হয়েছে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে মূল্যবোধ সঞ্চারিত হয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাশী-তামিল সঙ্গমম এবং তেলুগু-কাশী সঙ্গমমের মতো উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে সামাজিক বন্ধন আরও শক্তিশালী হয়েছে বলে শ্রী মোদী মনে করেন। তিনি বলেন, সংবিধানের মূল ভাবনা ভারতের ঐক্যকে স্বীকৃতি দেয়।
শ্রী মোদী বলেন, আজ যখন সংবিধান ৭৫ তম বর্ষপূর্তি উদযাপন করছে , একই ভাবে এই সংবিধানের ২৫, ৫০ এবং ৬০ বছর পূর্তিও সময়গুলিও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সংবিধানের ২৫ তম পূর্তির সময়কালে এর মূল ভাবনার উপর আঘাত হানা হয়েছিল। সেই সময়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। তদানিন্তন সরকার দেশকে একটি কারাগারে পরিণত করে। নাগরিকদের অধিকার হরণ করা হয়। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা লুন্ঠিত হয়। গণতন্ত্র সেই সময়ে চরম সঙ্কটের সম্মুখীন হয় এবং সংবিধান রচয়িতাদের আত্মত্যাগের মর্যাদাহানি করা হয়।
শ্রী মোদী বলেন, অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে দেশ ২০০০ সালের ২৬ নভেম্বর সংবিধানের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শ্রী বাজপেয়ী দেশের কাছে এই উপলক্ষে বিশেষ এক বার্তা পৌঁছে দেন। তিনি ঐক্য, জণগনের অংশগ্রহণ এবং অংশীদারিত্বের উপর বিশেষ জোর দেন। সংবিধানের মূল ভাবনাকে উজ্জীবিত করা এবং এবিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে তদানিন্তন প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ৫০ তম বর্ষপূর্তির সময়কালে তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তাঁর সময়কালেই গুজরাটে সংবিধানের ৬০ বছর পূর্তি উদযাপিত হয়। দেশকের ইতিহাসে সেই প্রথম হাতির পিঠে সংবিধানকে রেখে গৌরব যাত্রার আয়োজন করা হয়। অথচ আজ সংবিধান যখন ৭৫ তম বর্ষে পদার্পণ করলো, তখন লোকসভার এক প্রবীণ নেতা প্রশ্ন করছেন ২৬ নভেম্বর সংবিধান দিবস পালনের যৌক্তিকতা কোথায়, কারণ ২৬ জানুয়ারি তো রয়েইছে!
এই বিশেষ অধিবেশনে সংবিধানের ক্ষমতা এবং বৈচিত্র্য নিয়ে আলোচনা হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষপ্রকাশ করেন। তিনি বলেন, অনেকেই নানা টানাপোড়েনে ভুগছেন, কারণ এর মধ্য দিয়ে তাঁদের কারোর কারোর ব্যর্থতা জনসমক্ষে প্রকাশিত হচ্ছে। নিরপেক্ষভাবে যদি জাতীয় স্বার্থে সংবিধান নিয়ে আলোচনা হয় তাহলে তা নতুন প্রজন্মকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলবে।
প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে বলেন, এই সংবিধানের কারণে তাঁর মতো সাধারণ পরিবারের থেকে উঠে আসা অনেকে আজ বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছতে পেরেছেন। তাঁর কোনো পারিবারিক ইতিহাস নেই, একমাত্র সংবিধানের ক্ষমতাবলে এবং জনগণের আশীর্বাদে তিনি আজ এই জায়গায় পৌঁছেছেন। তাঁর মতো আরও অনেকে এধরণের পদে আসীন হয়েছেন। দেশ তাঁর প্রতি তিনবার আস্থা রাখায় তিনি অত্যন্ত ভাগ্যবান। এই সংবিধান না থাকলে এই সুযোগ পাওয়া যেতো না।
শ্রী মোদী বলেন, ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ এই সময়কালে ভারতবর্ষ কোনো নির্বাচিত সরকার পায়নি। সেই সময়ে অস্থায়ীভাবে জনাকয়েক বাছাই করা মানুষের নেতৃত্বে সরকার পরিচালিত হয়েছিল। ১৯৫২ সালের আগে পর্যন্ত রাজ্যসভা গঠিত হয়নি। এর আগে কোনো বিধানসভা নির্বাচন না হওয়ায় জনাদেশ পাওয়া যায়নি। কিন্তু এসব সত্ত্বেও ১৯৫১ সালে, যখন কোনো নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় ছিল না সেই সময়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর আঘাত হানার জন্য সংবিধানকে সংশোধন করতে একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। সংবিধান রচয়িতাদের এর মধ্য দিয়ে অপমান করা হয়েছে। গণপরিষদ জনগণকে যে অধিকার দিয়েছিল, সংসদের পেছনের দরজা দিয়ে — একটি নির্বাচিত নয় এধরণের সরকারের প্রধানমন্ত্রী সেই অধিকারকে হরণ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি সিদ্ধান্তকে অকার্যকর করতে সংবিধান সংশোধন করা হয়, গণতন্ত্রের ডানাকে সঙ্কুচিত করা হয়। বিচার ব্যবস্থার পর্যালোচনা ছাড়াই সংসদ সংবিধানের যে কোনো অনুচ্ছেদকে পরিবর্তন করতে পারতো, আদালতের ক্ষমতাও হ্রাস করা হয়েছে, এইভাবে তদানিন্তন সরকার গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করে এবং বিচার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জরুরি অবস্থার সময়ে দেশের সংবিধানের অপব্যবহার হয়েছে। ১৯৭৫ সালে ৩৯ তম সংশোধনী পাশ করা হয়। যার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং অধ্যক্ষের নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ করে কেউ আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন না।
এছাড়াও জরুরি অবস্থার সময়ে মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। হাজার হাজার মানুষকে কারাবন্দী করা হয়। বিচারপতি এইচ আর খান্না তদানিন্তন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি রায়দান করায় তাঁকে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়নি, যদিও অভিজ্ঞতার বিচারে তাঁরই সেই দায়িত্ব পাওয়ার কথা ছিল। এটি সংবিধান এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মর্যাদাহানি করে।
সুপ্রিম কোর্টের শাহ বানু-র মামলার রায়দানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের মর্যাদা অনুসারে একজন ভারতীয় মহিলাকে যখন ন্যায় বিচার দেওয়া হচ্ছিল, সেই সময়ে্র দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের সেই চেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন। একজন প্রবীণ মহিলাকে তাঁর অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য সংসদ এমন এক আইন প্রণয়ন করে যার মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের সেই আদেশ অকার্যকর হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেও শক্তিশালী করা হয় সেই সময় প্রথমবার সংবিধান সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই পরিষদের কোনো সাংবিধানিক স্বীকৃতি ছিল না। ভারতীয় সংবিধানে জনগণ সরকারকে নির্বাচিত করে, সেই সরকার প্রধান মন্ত্রিসভা গঠন করে। অথচ মন্ত্রিসভার কোনো সিদ্ধান্তকে বলদর্পি ব্যক্তিবিশেষ সাংবাদিকদের সামনে অকার্যকর করেছে এই নজিরও রয়েছে। এধরণের ব্যক্তিরা সংবিধানকে কোনো শ্রদ্ধা দেখাননি এবং সব থেকে দুর্ভাগ্যজনক হলো তদানিন্তন মন্ত্রিসভাও গৃহীত সেই সিদ্ধান্তের পরিবর্তন ঘটিয়েছিল।
শ্রী মোদী বলেন, ৩৭০ ধারার বিষয়ে অনেকেই ওয়াকিবহাল। অথচ ৩৫এ সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানেন। এই ৩৫এ অনুচ্ছেদটি সংসদের অনুমোদন ছাড়াই কার্যকর হয়েছিল। সংসদ, যা সংবিধানের মূল অভিভাবক— তাকে অগ্রাহ্য করে ৩৫এ চাপিয়ে দেওয়া হয়। জম্মু-কাশ্মীরের জন্য এই অনুচ্ছেদটি সংসদকে অন্ধকারে রেখে রাষ্ট্রপতির নির্দেশনামায় গৃহীত হয়।
শ্রী মোদী বলেন, অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারের আমলে ড. আম্বেদকরের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অথচ পরবর্তী ১০ বছরে সেই স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যখন তাঁর সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে তখন ড. আম্বেদকরের প্রতি শ্রদ্ধা নির্বেদনের মাধ্যমে তারা আলিপুর রোডে ড. আলিপুর স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন।
১৯৯২ সালে শ্রী চন্দ্র শেখরের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়ে দিল্লির জনপথে আম্বেদকর আন্তর্জাতিক কেন্দ্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অথচ পরবর্তী ৪০ বছরে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। তিনি সরকারের দায়িত্বভার গ্রহণের পর ২০১৫ সালে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। ড. আম্বেদককে স্বাধীনতার বহু পরে ভারত রত্ন দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ড. বি আর আম্বেদকরের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী আন্তর্জাতিক স্তরে উদযাপিত হয়েছে। ১২০টি দেশে এই উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ড. আম্বেদকরের জন্ম শতবার্ষিকীর সময়ে তাঁর জন্মস্থান মৌ-এ একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়।
দূরদর্শী ড. বি আর আম্বেদকরের সমাজের প্রান্তিক মানুষদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকারের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান এই নেতা মনে করতেন ভারতকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে দেশের কোনো অংশকে দুর্বল রাখলে চলবে না। তাঁর সেই ভাবনা থেকেই সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অথচ আজ ভোট রাজনীতির জন্য অনেকেই ধর্মীয় তোষণকে উৎসাহিত করতে সংরক্ষণ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে উদ্যোগী হয়েছে। যার ফলে, তপশিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
শ্রী মোদী বলেন, পূর্ববর্তী সরকারগুলি সংরক্ষণের বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছে। ড. আম্বেদকর সাম্যের জন্য এবং সুষম উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তিনি মন্ডল কমিশনের প্রতিবেদন দীর্ঘদিন কার্যকর না করায় প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। যদি অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে আগেই কার্যকর করা হতো তাহলে অনেকেই আজ গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারতেন। সংবিধানের খসড়া তৈরির সময়ে ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। সেই সময়ে সংবিধান রচয়িতারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ভারতবর্ষের মতো দেশে ধর্মীয় ভিত্তিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা কার্যকর করলে তা দেশের ঐক্য ও সংহতির পক্ষের ক্ষতিকর হবে। পূর্ববর্তী সরকারগুলি ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণকে কার্যকর করতে উদ্যোগী হয়েছিল, যা সংবিধানের মূল ভাবনার পরিপন্থী। এধরণের কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও সুপ্রিম কোর্টে সেগুলিকে কার্যকর করতে দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যা আসলে সংবিধান রচয়িতাদের ভাবনাকে অপমান করার সামিল।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সম্পর্কে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধান রচয়িতারা এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, নির্বাচিত সরকারই এবিষয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। ড. আম্বেদকর অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে মত প্রকাশ করেছিলেন। ড. আম্বেদকর ধর্মের ভিত্তিতে ব্যক্তিগত আইন প্রণয়নের বিরুদ্ধে ছিলেন। গণপরিষদের এক সদস্য কে এম মুন্সী অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে মত দেন। সুপ্রিম কোর্টও এর পক্ষে বার বার মত প্রকাশ করেছে। সংবিধানের ভাবনাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সরকার একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেওয়ানি বিধি কার্যকর করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দল দেশের সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেনি তার সদস্যরা কিভাবে এই সংবিধানকে সম্মান দেখাবেন। ১৯৯৬ সালে বিজেপি যখন একক বৃহত্তম সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল এবং রাষ্ট্রপতি সংবিধানকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানায়, তখন সেই সরকারের মেয়াদ ছিল মাত্র ১৩ দিন। ১৯৯৮ সালে মাত্র ১ ভোটে হেরে গিয়ে এনডিএ সরকারের পতন হয়েছিল। তদানিন্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে পদত্যাগ করেছিলেন। অন্যদিকে, অর্থের বিনিময়ে ভোট কিনে সংখ্যালঘু এক সরকারকে টিকিয়ে রাখার নজির-ও দেশে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে এনডিএ যখন সরকার গঠনে সুযোগ পেয়েছে তখনই গণতন্ত্র এবং সংবিধান শক্তিশালী হয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর সরকার অকার্যকর বেশ কিছু বিধি নিয়মকে বাতিল করেছে। গত ১০ বছরে দেশের ঐক্য এবং সংহতির স্বার্থে, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে, সংবিধানের মূল ভাবনাকে অক্ষুণ্ণ রেখে কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে। তিন দশক ধরে ওবিসি সম্প্রদায়ের জন্য গঠিত কমিশনকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি অগ্রাহ্য করার পর তার সরকার সেই কমিশনকে স্বীকৃতি দেয়।
শ্রী মোদী বলেন, ড. বি আর আম্বেদকরের রচিত সংবিধান জম্মু-কাশ্মীরে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হয়নি, এর মূল কারণ ছিল ৩৭০ অনুচ্ছেদ। সরকার দেশের প্রতিটি প্রান্তে ড. আম্বেদকরের সংবিধানকে কার্যকর করতে উদ্যোগী হয়, তাই তারা ৩৭০ ধারাকে বাতিল করেন। সুপ্রিম কোর্ট তাদের সেই সিদ্ধান্তকে মান্যতা দিয়েছে। সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের পাশাপাশি মহাত্মা গান্ধীর একটি অঙ্গীকারকে বাস্তবায়িত করা হয়েছে। মহাত্মা গান্ধী সহ অন্যান্য প্রবীণ নেতৃবৃন্দ দেশ ভাগের সময়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সংখ্যালঘুদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। আর তাই তাঁদের সেই অঙ্গীকারকে সম্মান জানাতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করা হয়েছে। তাঁর সরকার অতীতের বিভিন্ন ভুলকে সংশোধন করতে উদ্যোগী হয়েছে। সরকারের গৃহীত বিভিন্ন সংশোধনগুলি ক্ষমতালোভীরা নানা উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের জনসাধারণের কাছে সংবিধান অত্যন্ত সংবেদনশীল। এই সংবিধান একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠনের পথকে প্রশস্ত করেছে।
স্বাধীনতার বহু বছর পরেও দেশের অনেক পরিবার শৌচালয় ব্যবহার করতে পারেন নি। দরিদ্র মানুষদের স্বপ্ন পূরণ করতে তাঁর সরকার এক নতুন অভিযান শুরু করে। এর জন্য উপহাসের শিকার হয়েছেন তারা। কিন্তু সাধারণ নাগরিকের মর্যাদা রক্ষা করাকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ দরিদ্র মানুষের প্রতি অবিচার বন্ধ করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংবিধান প্রত্যেকের জন্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করলেও দেশের বহু মানুষ আজও বিশুদ্ধ পানীয় থেকে বঞ্চিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিবর্ণ নির্বিশেষে সমাজের বিপুল অংশের মানুষ এখনও দারিদ্রের কারণে উন্নয়নের স্বাদ পাননি। এর ফলে নানা অসন্তোষ দেখা গিয়েছে। একারণে তাঁর সরকার অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়েপড়া শ্রেণীর মানুষের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। এই প্রথম এমন এক সংশোধন কার্যকর করা হয়েছে যার বিরোধিতা কেউ করেননি। সংবিধানের সামাজিক ঐক্যের ভাবনার বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এটি সম্ভব হয়েছে।
শ্রী মোদী জানান, কিভাবে সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে তাঁরা নারীর ক্ষমতায়নের দিকটিকে নিশ্চিত করেছেন। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে যেসব দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা জটিল অসুখে অক্রান্ত হতেন তাঁরা সেই সময় বিভিন্ন ভাবে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতেন। এঁদের কথা বিবেচনা করে সরকার আয়ুষ্মান ভারতের সূচনা করেছেন। ৫০ থেকে ৬০ কোটি মানুষ যাতে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা পান তা নিশ্চিত করতেই এই প্রকল্প শুরু করা হয়েছে। এছাড়াও সমাজের যেকোনো শ্রেণীর প্রবীণ নাগরিক, যাঁদের বয়স ৭০-এর বেশি তাঁরা সকলেই এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। দেশের ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্রের নাগপাশ থেকে মুক্ত করার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাঁরা দারিদ্রের সম্মুখীন হয়েছেন, তাঁরাই এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন। আর তাই তাঁর সরকার বিনামূল্যে বহু মানুষকে রেশন দিচ্ছেন। অতীতে দরিদ্রদের জন্য শুধুমাত্র শ্লোগান তৈরি করা হতো। দরিদ্র মানুষের কথা বিবেচনা করে ব্যাঙ্কগুলির জাতীয়করণ করা হয়। অথচ ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৫০ কোটি নাগরিক ব্যাঙ্কের ভেতরে ঢুকতে পারেন নি। তাঁর সরকার দরিদ্র নাগরিকদের জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। অতীতে এক প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, দিল্লি থেকে কোনো দরিদ্র মানুষের জন্য এক টাকা বরাদ্দ করা হলে তাঁর কাছে মাত্র ১৫ পয়সা পৌঁছায়। কিন্তু তাঁর সরকারের উদ্যোগে দরিদ্র মানুষের জন্য নির্ধারিত অর্থর পুরোটাই ওই দরিদ্র মানুষের কাছে আজ পৌঁছাচ্ছে। গরিবী হঠাও-এর মতো শ্লোগান গরিব মানুষের উপকারে আসেনি। ভিন্নভাবে সক্ষম মানুষদের কথা বিবেচনা করে তাঁর সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। ট্রেনে যাতে দিব্যাঙ্গরা হুইল চেয়ার নিয়ে উঠতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশজুড়ে অভিন্ন সাইন ল্যাঙ্গুলেজ চালু করার ফলে ভিন্নভাবে সক্ষমরা আজ উপকৃত।
শ্রী মোদী বলেন, অতীতের কোনো সরকার যাযাবর শ্রেণীর মানুষের কল্যাণে কোনো প্রকল্প কার্যকর করেনি। তাঁর সরকার সংবিধানের আওতায় এঁদের জন্য এক কল্যাণ পর্ষদ গঠন করেছে। রাস্তার হকারদের মূলধন যোগানোর জন্য পিএম স্বনিধি প্রকল্পের সূচনা করা হয়েছে। দেশের হস্ত শিল্পীদের কথা বিবেচনা করে পিএম বিশ্বকর্মা প্রকল্পের সূচনা করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় বংশপরম্পরায় আমাদের যে সব হস্তশিল্পী নানা ধরণের শিল্পকর্মে যুক্ত ছিলেন তাঁদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ছাড়াও অত্যধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার জন্য সহযোগিতার সংস্থান রাখা হয়েছে।
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অধিকারের কথা বিবেচনা করে সংবিধানে প্রয়োজনীয় আইন কার্যকর করা হয়েছে। এর ফলে, এই শ্রেণীর নাগরিকরাও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারবেন। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে শ্রী মোদী অম্বাজির উমারগ্রামের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানতে পারেন আদিবাসী অধ্যুষিত ওই অঞ্চলে কোনো স্কুলে বিজ্ঞান পড়ানো হয় না। ফলে সংশ্লিষ্ট জনজাতির কেউই চিকিৎসক বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুযোগ পান না। তাঁদের কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী ওই অঞ্চলের স্কুলগুলিতে বিজ্ঞান শাখার পাঠক্রমের সূচনা করেন।
রাষ্ট্রপতির পরামর্শক্রমে পিএম জনধন যোজনায় সমাজের পিছিয়েপড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে একগুচ্ছ প্রকল্পের সূচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর মানুষরা অতীতে নানা ধরণের ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির শিকার হতেন। এইসব মানুষদের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে তাঁর সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের সূচনা করেছেন। গত ৬০ বছরে দেশের ১০০টি জেলাকে পিছিয়ে পড়া জেলার তকমা দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ দাঁড়ায় ওই জেলাগুলিতে সেই সমস্ত আধিকারিকদের পাঠানো হয়, যাঁরা সেখানে গিয়ে কাজ করাটিকে আকর্ষণীয় বলে একদমই মনে করতেন না। কিন্তু তাঁর সরকার উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলার ধারণা নিয়ে আসায় অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এই জেলাগুলি এখন ৪০টি বিষয়ের ভিত্তিতে নজরদারিরি আওতায় এসেছে। আজ উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলি জাতীয় মানের বিচারে ভালো এক স্থানে এসে পৌঁছেছে। বর্তমানে ৫০০টি ব্লককে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্লক হিসেবে চিহ্নিত করে উন্নয়নের কাজ চলছে।
রাম ও কৃষ্ণের সময়েও দেশে জনজাতি সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব ছিল। অথচ স্বাধীনতার কয়েক দশক পরেও তাদের জন্য আলাদা কোনো মন্ত্রক তৈরি করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী জানান, অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকারই প্রথম আদিবাসী বিষয়ক একটি পৃথক মন্ত্রণালয় গড়ে তুলেছিল। তাদের উন্নয়নের জন্য বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। মৎস্যজীবীদের কল্যাণের কথা বলতে গিয়ে শ্রী মোদী বলেন, প্রথমবারের মতো তাদের সরকার একটি মৎস্যজীবীদের জন্য পৃথক মৎস্য মন্ত্রণালয় তৈরি করেছে এবং তাদের কল্যাণের জন্য পৃথক বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে।
দেশের ক্ষুদ্র কৃষকদের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন, সমবায়ের ধারণা তাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ক্ষুদ্র কৃষকদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সমবায় খাতকে দায়িত্বশীল, শক্তিশালী করে ক্ষুদ্র কৃষকদের ক্ষমতায়নের জন্য একটি পৃথক সমবায় মন্ত্রণালয় তৈরি করা হয়েছে। একটি দক্ষ কর্মীবাহিনীর গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে শ্রী মোদী বলেন, বিশ্বজুড়ে আজ একটি দক্ষ কর্মীবাহিনীর চাহিদা রয়েছে। আমরা যদি দেশের বিপুল জনসংখ্যার সুবিধা পেতে চাই, তাহলে আমাদের এই কর্মশক্তিকে দক্ষ হতে হবে। দেশের তরুণরা যাতে বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করতে পারেন এবং যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন সেজন্য আলাদা একটি দক্ষতা মন্ত্রণালয় তৈরি করা হয়েছে।
উত্তর-পূর্বের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কম ভোট বা আসনের কারণে আমাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে অবহেলা করা হয়েছে। অটল বিহারীজির সরকারই প্রথমবারের মতো উত্তর-পূর্বের কল্যাণে পৃথক মন্ত্রক তৈরি করেছিল। এর সুফল হিসেবে ওয়ি অঞ্চলে রেল, রাস্তা, বন্দর, বিমানবন্দর তৈরির জন্য উত্তর-পূর্ব ভারতে উন্নয়ন গতি পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ভূমি সংক্রান্ত রেকর্ডের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। জমির মালিকানা দেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে গ্রামের প্রতিটি সাধারণ মানুষের কাছে তার বাড়ির, জমির নথি, বাড়ির মালিকানার কাগজপত্র থাকে। এর ফলে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া যাবে এবং ওই সম্পত্তির অবৈধ দখলের ভয় নেই।
শ্রী মোদী বলেন, এই সমস্ত কাজের জন্য , গত ১০ বছরে দরিদ্র মানুষরা নতুনভাবে আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যর নাগপাশ থেকে মুক্ত করা হয়েছে। আমরা সংবিধান মেনে কাজ করছি বলেই এসব সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, নিছক একটি স্লোগান নয়, এটি আমাদের বিশ্বাসের এক জায়গা। তাই আমরা বৈষম্য ছাড়াই সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করি । ১০০ % সুবিধাভোগী যাতে পুরো সুবিধা পান সেজন্য সরকার প্রকল্পগুলি যথাযথ ভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। দেশে যদি প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতা থাকে , যদি সত্যিকারের সামাজিক ন্যায়বিচার থাকে তবে সরকারি প্রকল্পের সব সুযোগ প্রতিটি মানুষের কাছে পৌছাবে। যারা এই প্রকল্পগুলি পাওয়ার অধিকারী তাদের কোনো বৈষম্য ছাড়াই পুরো সুবিধা দেওয়া উচিত। এটাই প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতা ও আসল সামাজিক ন্যায়বিচার।
দেশকে যথাযথভাবে পথ দেখানোর মাধ্যম হিসেবে সংবিধানের চেতনার কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের চালিকাশক্তি হিসেবে কেন্দ্রে রয়েছে রাজনীতি । আগামী দশকে আমাদের গণতন্ত্র, আমাদের রাজনীতির দিকনির্দেশনা কী হবে তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে হবে।
শ্রী মোদী কিছু দলকে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থপরতা এবং ক্ষমতার বোধ সম্পর্কে প্রশ্ন করা প্রয়োজন। তারা কখনও এটি নিয়ে ভাবেন কি না । সমস্ত দলের জন্যই এগুলি প্রযোজ্য। এগুলোই তার মনের ভাবনা যা তিনি লোকসভার সামনে রাখতে চান।
প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, দেশের তরুণদের আকৃষ্ট করতে, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এবং দেশের তরুণদের উন্নতির জন্য সব রাজনৈতিক দলের সচেষ্ট হওয়া উচিত। তরুণদের রাজনীতিতে যুক্ত করা দেশের গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন । এমন এক লক্ষ তরুণকে দেশের রাজনীতিতে আনতে হবে, যাদের পরিবারের কেউ রাজনিতির সঙ্গে যুক্ত নন। দেশের জন্য নতুন শক্তি এবং তরুণদের প্রয়োজন, যারা নতুন সংকল্প এবং স্বপ্ন নিয়ে আসবেন।
লাল কেল্লা থেকে সংবিধানের প্রতি আমাদের কর্তব্য সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন সংবিধান নাগরিকদের অধিকার নির্ধারণ করলেও , নাগরিকদের কাছ থেকে কর্তব্যপালনও আশা করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এর অভাব দেখা যায়। আমাদের সভ্যতার সারাংশ হল ধর্মর পথ অনুসরণ করা এবং কর্তব্যপালন করা। মহাত্মা গান্ধীর বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, গান্ধীজী বলেছিলেন, তাঁর মা অশিক্ষিত ছিলেন, কিন্তু শেখা মায়ের কাছ থেকে শিখেছিলেন যে আমরা কীভাবে আমাদের দায়িত্ব পালন করি সেটি তার মায়ের কাছ থেকেই তিনি শিখেছিলেন। গান্ধীজীর বক্তব্য অনুসারে যদি আমরা আমাদের মৌলিক কর্তব্যগুলি মেনে চলি তাহলে উন্নত ভারত গড়া থেকে কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না। সংবিধানের ৭৫ বছর পূর্তিতে আমাদের কর্তব্য পালনে আমরা আরো দায়বদ্ধ হব, দেশের উন্নতিতে শামিল হব, সেই অঙ্গীকার আমাদের করতে হবে, এটিই সময়ের দাবি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের ভবিষ্যতের জন্য সংবিধানের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি সংসদের কাছে ১১টি প্রস্তাব পেশ করতে চান। প্রথম প্রস্তাব হলো, নাগরিক হোক বা সরকার, প্রত্যেকের দায়িত্ব পালন করতে হবে। দ্বিতীয় প্রস্তাব হল সবকা সাথ সবকা বিকাশ ভাবনায় প্রতিটি ক্ষেত্রে, সমাজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে সব ধরণের সুফল পেতে হবে । তৃতীয় প্রস্তাব হলো, দুর্নীতির প্রশ্নে আপোষহীন হতে হবে, দুর্নীতিগ্রস্তদের সামাজিকভাবে অগ্রাহ্য করতে হবে। চতুর্থ প্রস্তাব হলো, দেশের নাগরিকদের দেশের আইন, দেশের নিয়মকানুন, দেশের ঐতিহ্যকে গর্বের সঙ্গে মেনে চলতে হবে। পঞ্চম সংকল্প দাসত্বের মানসিকতা থেকে মুক্তি, দেশের ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত হতে হবে। ষষ্ঠ প্রস্তাব হলো, দেশের রাজনীতিকে স্বজনপ্রীতির সমস্যা থেকে মুক্ত করতে হবে। সপ্তম প্রস্তাব, সংবিধানকে সম্মান করতে হবে, সংবিধানকে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে নয়। অষ্টম প্রস্তাব , সংবিধানের চেতনা অনুসারে যারা সংরক্ষণের সুবিধা পাচ্ছেন, তাদের সেই সুবিধা দেওয়া অব্যাহত রাখতে হবে। ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ দেওয়ার সমস্ত প্রচেষ্টা বন্ধ করতে হবে। নবম প্রস্তাব, মহিলাদের নেতৃত্বে উন্নয়নে ভারত বিশ্বের কাছে উদাহরণ হয়ে উঠুক। দশম প্রস্তাব, রাষ্ট্রের উন্নয়নের মাধ্যমে জাতির উন্নয়ন, এটিই হোক আমাদের উন্নয়নের মন্ত্র। একাদশ প্রস্তাব, এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত-এর ভাবনাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি সকলে মিলে এই প্রস্তাবগুলি বাস্তবায়িত করার সংকল্প নিয়ে যদি এগিয়ে যাই তাহলে সকলের উদ্যোগে আমরা উন্নত ভারত গঠনের স্বপ্ন পূরণ করতে পারব। যখন ১৪০ কোটি দেশবাসীর স্বপ্ন পূরণ হয় এবং দেশ এই সব সংকল্প নিয়ে এগোতে শুরু করে, তখন অর্জিত লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী বলেন ১৪০ কোটি দেশবাসীর প্রতি তাঁর অগাধ শ্রদ্ধা এবং তাদের শক্তিতে আস্থা রয়েছে, দেশের যুব শক্তি, দেশের নারী শক্তির প্রতি তাঁর অগাধ বিশ্বাস রয়েছে। তাঁর ভাষণের শেষে শ্রী মোদী বলেন, ২০৪৭ সালে দেশ যখন স্বাধীনতার শতবার্ষিকী উদযাপন করবে, তখন আমরা উন্নত ভারতের নাগরিক হিসেবে সেই উদযাপন করব ,এই সংকল্প নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে ।
PG/ CB/SKD
(Release ID: 2085298)
Visitor Counter : 20
Read this release in:
English
,
Urdu
,
Hindi
,
Marathi
,
Manipuri
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam