প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
যোধপুরে রাজস্থান হাইকোর্টের প্লাটিনাম জয়ন্তী উদযাপনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ
Posted On:
25 AUG 2024 6:53PM by PIB Kolkata
নতুন দিল্লি, ২৫ আগস্ট, ২০২৪
অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাজস্থানের রাজ্যপাল শ্রী হরিভাউ কৃষ্ণরাও বাগদে জি, রাজস্থানের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভজনলাল শর্মা জি, বিচারপতি শ্রী সঞ্জীব খান্না জি, দেশের আইনমন্ত্রী শ্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল জি, রাজস্থান হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি শ্রী মণীন্দ্র মোহন শ্রীবাস্তব জি, অন্যান্য সকল মাননীয় বিচারক, বিচার জগতের সকল গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, উপস্থিত ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ!
প্রথমেই আমি আপনাদের সবার কাছে ক্ষমা চাইছি! কারণ, এখানে পৌঁছতে আমার প্রায় ১০ মিনিট দেরি হয়েছে। তবে আমি মহারাষ্ট্র থেকে ঠিক সময়েই রওয়ানা হয়েছিলাম, কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে সময়মতো পৌঁছাতে পারিনি এবং এর জন্য আমি আপনাদের সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
বন্ধুগণ,
আমি আনন্দিত যে আমি আজ রাজস্থান হাইকোর্টের প্লাটিনাম জুবিলি সেলিব্রেশনে আপনাদের মাঝে থাকার সুযোগ পেয়েছি। রাজস্থান হাইকোর্ট ৭৫টি গৌরবময় বছর পূর্ণ করেছে এমন সময়ে যখন আমাদের সংবিধানও ৭৫ বছর পূর্ণ করতে চলেছে। অতএব, এটি অনেক মহান ব্যক্তির সততা এবং অবদান উদযাপন করার একটি উত্সবও। এটাও সংবিধানের প্রতি আমাদের বিশ্বাসের উদাহরণ। আমি এই উপলক্ষে আপনাদের মধ্যে উপস্থিত সকল আইনবিদ এবং রাজস্থানের জনগণকে অভিনন্দন জানাই, তাঁদের শুভকামনা জানাই।
বন্ধুগণ,
রাজস্থান হাইকোর্টের অস্তিত্বের সঙ্গে আমাদের জাতির ঐক্যের ইতিহাসও জড়িত। আপনারা সকলেই জানেন, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল যখন ৫০০ টিরও বেশি রাজ্যকে একত্রিত করেছিলেন এবং দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, তখন রাজস্থানের অনেক দেশীয় রাজার রাজত্বাধীন রাজ্যও এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। তখন জয়পুর, উদয়পুর এবং কোটার মতো অনেক রাজ্যের নিজস্ব হাইকোর্টও ছিল। তাঁদের একীকরণের মাধ্যমেই এই রাজস্থান হাইকোর্টের সৃষ্টি। অর্থাৎ জাতীয় ঐক্য আমাদের বিচার ব্যবস্থারও ভিত্তিপ্রস্তর। এই ভিত্তিপ্রস্তর যত মজবুত হবে, আমাদের দেশ এবং এর বিচার ব্যবস্থা তত শক্তিশালী হবে।
বন্ধুগণ,
আমি বিশ্বাস করি ন্যায়বিচার সবসময় হওয়া উচিত সহজ এবং স্পষ্ট। তবে কখনও কখনও অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়াগুলি একে কঠিন করে তোলে। ন্যায়বিচারকে যথাসম্ভব সহজ ও স্পষ্ট করে তোলা আমাদের সকলের সম্মিলিত দায়িত্ব। আর আমি সন্তুষ্ট যে আমাদের দেশ এই লক্ষ্যে গত দশ বছরে অনেক ঐতিহাসিক এবং সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা শত শত ঔপনিবেশিক আমলের পরস্পরবিরোধী এবং সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়া আইন বাতিল করেছি। স্বাধীনতার এত দশক পর আমাদের দেশ দাসত্বের মানসিকতা থেকে উদ্ধার পেয়ে ভারতীয় দণ্ডবিধির জায়গায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতা গ্রহণ করেছে। শাস্তির বদলে ন্যায়বিচার, এটা ভারতীয় দর্শনের ভিত্তিও। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা এই ভারতীয় দর্শনকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা আমাদের গণতন্ত্রকে ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে মুক্ত করে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার আইনগুলি যথাসম্ভব কার্যকর করা এখন আমাদের সকলের দায়িত্ব।
বন্ধুগণ,
গত এক দশকে আমাদের দেশ দ্রুত বদলে গেছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ১০ বছর আগের ১০ম অবস্থান থেকে উঠে আমরা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছি। আজ দেশের স্বপ্নগুলি বড়, দেশবাসীর আশা-আকাঙ্খাও ক্রমে বাড়ছে। অতএব, এটি গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা নতুন ভারতের প্রয়োজন অনুসারে নতুন নতুন উদ্ভাবন করি এবং আমাদের ব্যবস্থাগুলিকে আধুনিক করি। পাশাপাশি সবার জন্য ন্যায়বিচার এর ব্যবস্থা করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে আজ আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের বিচার ব্যবস্থায় কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তথ্য প্রযুক্তি বিপ্লব সমাজে কত বড় বড় পরিবর্তন আনতে পারে, আমাদের ই-কোর্ট প্রকল্পটি তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। আজ দেশের ১৮ হাজারের বেশি আদালত কম্পিউটারাইজড হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে যে, ২৬ কোটিরও বেশি মামলার তথ্য একটি ন্যাশানাল জুডিশিয়াল ডেটা গ্রিড বা জাতীয় বিচার বিভাগীয় ডেটা গ্রিডের মাধ্যমে জাতীয় অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করা হয়েছে। আজ সারাদেশে ৩ হাজারের বেশি আদালত কমপ্লেক্স এবং ১২০০ টিরও বেশি কারাগারকে ভিডিও কনফারেন্স পরিষেবার মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছে। আর আমি খুশি যে রাজস্থানও এই লক্ষ্যে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে কাজ করছে। এখানকার শত শত আদালতকে ইতিমধ্যেই কম্পিউটারাইজড করা হয়েছে। পেপারলেস কোর্টস বা কাগজের ব্যবহারবিহীন আদালত, ই-ফাইলিং, সমনের জন্য ইলেকট্রনিক পরিষেবা, প্রযুক্তির মাধ্যমে ভার্চুয়াল শুনানির ব্যবস্থা, এগুলো সাধারণ পরিবর্তন নয়। সাধারণ নাগরিকের দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলে যুগ যুগ ধরে আদালতের সামনে 'চক্কর' শব্দটি বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছিল। আদালতের ক্ষেত্রে, মামলার ক্ষেত্রে, অর্থাৎ এমন একটা জটিল প্রক্রিয়া যেখানে আপনি যদি আটকা পড়েন তাহলে কখন বের হবেন তা জানেন না। যুগের পর যুগ ধরে পীড়িত দেশের সাধারণ নাগরিকের দুর্ভোগ দূর করতে আজ সেই জটিল প্রক্রিয়ার অবসান ঘটাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে দেশ। এতে সাধারণ মানুষের মনে ন্যায়বিচার নিয়ে নতুন আশা জেগেছে। আমাদের এই আশা বজায় রাখতে হবে এবং আমাদের বিচার ব্যবস্থার সময়োপযোগী সংস্কার চালিয়ে যেতে হবে।
বন্ধুগণ,
বিগত বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে, আমি বারবার আপনাদের সকলের মধ্যে আমাদের দেশের ঐতিহ্যশালী বহু প্রাচীন মধ্যস্থতার ব্যবস্থার কথা বলেছি। আজ, দেশে কম ব্যয়বহুল এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অল্টারনেট ডিসপিউট মেকানিজম বা বিকল্প বিবাদ নিরসন প্রক্রিয়া একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপায় হয়ে উঠছে। বিকল্প বিবাদ নিরসন প্রক্রিয়ার এই ব্যবস্থা দেশে সরল জীবনযাপনের পাশাপাশি ন্যায়বিচারের স্পষ্টতা বৃদ্ধি করবে। সরকার আইনের পরিবর্তন এবং নতুন নতুন বিধান সংযোজন করে এ দিকে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। বিচার বিভাগের সহায়তায় এসব ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে।
বন্ধুগণ,
আমাদের বিচার বিভাগ ধারাবাহিকভাবে দেশের বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে সতর্ক ও সক্রিয় থাকার নৈতিক দায়িত্ব পালন করেছে। কাশ্মীরবাসীর ওপর থেকে সংবিধানের ৩৭০ ধারা অপসারণ এবং দেশের সাংবিধানিক একীকরণের উদাহরণ আমাদের সামনে রয়েছে। সিএএ -এর মতো মানবিক আইনের উদাহরণ আমাদের সামনে রয়েছে। এই ধরনের দেশের স্বার্থে স্বাভাবিক ন্যায়বিচার কী বলে, তা আমাদের আদালতের সিদ্ধান্ত থেকে সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট হয়েছে। হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত বিচার বিভাগ বহুবার এ ধরনের বিষয়ে 'নেশন ফার্স্ট' বা দেশ সর্বাগ্রে -র সংকল্পকে শক্তিশালী করেছে। আপনাদের হয়তো মনে আছে, এবার ১৫ আগস্টে, আমি লাল কেল্লার প্রাকার থেকে ‘সেক্যুলার সিভিল কোড’ বা ধর্মনিরপেক্ষ অসামরিক বিধানের কথা বলেছিলাম। যদিও দেশের কোনও সরকার প্রথমবারের মতো এই বিষয়ে এত সোচ্চার হয়েছে, কিন্তু ভুল্লে চল্বেনা যে, আমাদের বিচার বিভাগ কয়েক দশক ধরে এর পক্ষে কথা বলে আসছে। আমি নিশ্চিত যে, জাতীয় ঐক্য সংক্রান্ত নানা বিষয়ে বিচার বিভাগের এই স্পষ্ট অবস্থান বিচার বিভাগের প্রতি দেশবাসীর আস্থা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
বন্ধুগণ,
একবিংশ শতাব্দীতে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে শব্দটি একটি বড় ভূমিকা পালন করতে চলেছে তা হল ইন্টিগ্রেশন বা সংহতি। সমস্ত পরিবহন ব্যবস্থাগুলির সংহতি, তথ্য সংহতি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সংহতি। আমাদের ভাবনা হল দেশের সমস্ত তথ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থা – যা আলাদা আলাদাভাবে কাজ করছে সেগুলিকে সংহত করতে হবে। পুলিশ, ফরেনসিক, প্রসেস সার্ভিস মেকানিজম এবং সুপ্রিম কোর্ট থেকে জেলা আদালত পর্যন্ত সবাইকে একসঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করতে হবে। আজ রাজস্থানের সমস্ত জেলা আদালতে এই সংহতি প্রকল্প শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের সাফল্যের জন্য আমি আপনাদের সকলকে অনেক শুভকামনা জানাই।
বন্ধুগণ,
প্রযুক্তির ব্যবহার আজকের ভারতে দরিদ্রদের ক্ষমতায়নের জন্য একটি ‘ট্রাইড অ্যান্ড টেস্টেড ফরমুলা’ বা পরীক্ষিত এবং আস্বাদিত সূত্র হয়ে উঠছে। গত ১০ বছরে অনেক আন্তর্জাতিক রেটিং এজেন্সি এবং সমীক্ষা সংস্থা এর জন্য ভারতের প্রশংসা করেছে। ডিবিটি থেকে ইউপিআই, অনেক ক্ষেত্রেই ভারতের কাজ বিশ্বব্যাপী মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বিচার ব্যবস্থায়ও আমাদের একই অভিজ্ঞতাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। এই লক্ষ্যে, প্রযুক্তি এবং প্রত্যেকের নিজস্ব ভাষায় আইনি নথির অ্যাক্সেস বা সহজলভ্যতা দরিদ্রদের ক্ষমতায়নের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হয়ে উঠবে। সরকার এর জন্য দিশা নামে একটি ‘ইনোভেটিভ সলিউশন’ বা উদ্ভাবনী সমাধান প্রক্রিয়াকেও উৎসাহ জোগাচ্ছে। আমাদের আইনের ছাত্র- ছাত্রীরা এবং অন্যান্য আইন বিশেষজ্ঞরা আমাদের এই অভিযানে অংশগ্রহণ করে আমাদের অভিযানে সাহায্য করতে পারেন। এ ছাড়া দেশের সমস্ত প্রধান আঞ্চলিক ভাষায় মানুষ যাতে আইনি কাগজপত্র ও রায় পেতে পারে সেজন্যও কাজ করতে হবে। আমাদের সুপ্রিম কোর্ট এই অভিযান শুরু করেছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনায় একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে সমস্ত বিচার সংক্রান্ত নথি ১৮টি ভাষায় অনুবাদ করা যাবে। এই ধরনের সমস্ত প্রচেষ্টার জন্য আমি আমাদের বিচার বিভাগেরও প্রশংসা করি ।
বন্ধুগণ,
আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আমাদের আদালত ন্যায়বিচারের সরলতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিইয়ে যেতে থাকবে। আমরা যে উন্নত ভারতের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি, সেখানে সবার জন্য সরল, সহজলভ্য এবং সহজ ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আশা নিয়ে, আমি আবারও রাজস্থান হাইকোর্টের প্ল্যাটিনাম জয়ন্তীতে আপনাদের সকলকে অভিনন্দন জানাই, আপনাদের অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ!
PB/SB
(Release ID: 2050538)
Visitor Counter : 70
Read this release in:
English
,
Urdu
,
Marathi
,
Hindi
,
Hindi_MP
,
Manipuri
,
Assamese
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Odia
,
Telugu