প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

সংসদে রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের ওপর ধন্যবাদজ্ঞাপক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় রাজ্যসভাতে প্রধানমন্ত্রীর জবাবি ভাষণ

“বিগত ১০ বছরে দেশের সেবায় আমাদের সরকারের উদ্যোগকে সর্বান্তঃকরণে সমর্থন করেছেন ভারতের মানুষ”

“বাবা সাহেব আম্বেদকরের দেওয়া সংবিধানের সুবাদে রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য না হয়েও আমার মতো মানুষের রাজনীতিতে প্রবেশ এবং এই পর্যায়ে পৌঁছনো সম্ভব হয়েছে”

“আমাদের সংবিধান আমাদের দিশা দেখায় আলোকবর্তিকার মতো”

“মানুষ তৃতীয়বার আমাদের ক্ষমতায় এনেছেন এই বিশ্বাস থেকে যে আমরা ভারতের অর্থনীতিকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি করে তুলবো”

“দেশের পক্ষে আগামী ৫ বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ”

“সুপ্রশাসনের আদর্শে এগিয়ে মানুষের ন্যূনতম প্রয়োজন পূরণের প্রশ্নে সম্পৃক্তির অধ্যায় করে তোলা হবে এই পর্বকে”

“এখানেই আমরা থামবো না। আগামী ৫ বছরে নতুন নানা ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে কাজ করবো আমরা”

“প্রতিটি পর্যায়ে অনুপরিকল্পনার মাধ্যমে বীজ থেকে বাজার পর্যন্ত কৃষকদের জন্য একটি শক্তিশালী ও বিস্তৃত প্রণালী গড়ে তোলায় আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি”

“শুধু শ্লোগান নয়, নারী নেতৃত্বাধীন বিকাশের লক্ষ্যে ভারত দায়বদ্ধতার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে”

“জরুরি অবস্থার পর্ব শুধু রাজনৈতিক নয়, ভারতের গণতন্ত্র, সংবিধান এবং মানবতার প্রশ্ন

Posted On: 03 JUL 2024 3:06PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ০৩ জুলাই, ২০২৪

 

সংসদে রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের ওপর ধন্যবাদজ্ঞাপক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় আজ রাজ্যসভাতে প্রধানমন্ত্রী জবাবি ভাষণ দিলেন।

প্রেরণাদায়ী বক্তব্যের জন্য রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সংসদের প্রায় ৭০ জন সদস্য আলোচনায় অংশ নেন। এদের সকলকে প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানান। 

দেশের গণতান্ত্রিক যাত্রার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৬০ বছর পরে দেশের মানুষ একটি সরকারকে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফিরিয়ে এনেছেন – যা ঐতিহাসিক। দেশের মানুষের সিদ্ধান্তকে অসম্মান করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদের সমালোচনা করেন। অনেকেই নিজেদের পরাজয় এবং সরকার পক্ষের জয় মেনে নিতে পারছেন না বলে তাঁর কটাক্ষ।

প্রধানমন্ত্রী আশাবাদী যে, বর্তমান সরকার তার সম্ভাব্য মেয়াদের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ১০ বছর অতিবাহিত করেছে। দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ২০ বছর বাকি রয়েছে। তিনি মনে করেন, বিগত ১০ বছরে দেশের সেবায় তাঁদের সরকারের উদ্যোগকে সর্বান্তঃকরণে সমর্থন করেছেন ভারতের মানুষ। দেশের নাগরিকরা যেভাবে বিভ্রান্তিকর প্রচার, পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং আকাশকুসুম দেখার প্রবণতাকে অস্বীকার করে রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতার পক্ষে রায় দিয়েছেন, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয় বলে প্রধানমন্ত্রীর অভিমত।

ভারতের সংবিধানের ৭৫ বছর এবং ভারতের সংসদের ৭৫ বছর এক বিশেষ সন্ধিক্ষণ বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। বাবা সাহেব আম্বেদকরের দেওয়া সংবিধানের সুবাদেই রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য না হয়েও তাঁর মতো মানুষের রাজনীতিতে প্রবেশ এবং এই পর্যায়ে পৌঁছনো সম্ভব হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, ভারতের সংবিধান কেবলমাত্র কয়েকটি আইনী ধারার সংকলন নয়, তার মধ্যে নিহিত আদর্শ ও মূল্যবোধ দারুনভাবে প্রাসঙ্গিক।

তাঁর সরকার যখন ২৬ নভেম্বর দিনটিকে “সংবিধান দিবস” হিসেবে উদযাপনের প্রস্তাব দেয়, তখন অনেকেই বিরোধিতা করেছিলেন বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। কিন্তু ওই উদ্যোগের সুবাদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে সংবিধান নিয়ে আলোচনা এবং আরও নানা কর্মসূচির ফলে সাংবিধানিক আদর্শ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন হয়ে উঠেছেন বলে তিনি মনে করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধান আমাদের সবচেয়ে বড় প্রেরণার উৎস। তার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে সরকার “জন উৎসব” উদযাপনের পরিকল্পনা করেছে।

দেশের ভোটদাতাদের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ ‘বিকশিত ভারত’ এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর ধারনায় সমর্থন জানিয়েছেন। বিগত ১০ বছরে তাঁর সরকারের কাজকর্মের স্বীকৃতির পাশাপাশি আগামী দিনের স্বপ্ন পূরণের বিষয়টিও ভোটদাতাদের কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছে। 

বিশ্বজোড়া প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও বিগত ১০ বছরে ভারতীয় অর্থনীতি বৃহত্তম অর্থনীতির তালিকায় ১০ থেকে ৫ নম্বরে উঠেছে বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, মানুষ এবার ভোট দিয়েছেন ওই তালিকায় ভারতকে তৃতীয় স্থানে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। 

উন্নয়নের কাজে গতি আনায় সরকারের দায়বদ্ধতার কথা আবারও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সুপ্রশাসনের আদর্শে এগিয়ে মানুষের ন্যূনতম প্রয়োজন পূরণের প্রশ্নে সম্পৃক্তির অধ্যায় করে তোলা হবে আগামী ৫ বছরের পর্বকে। আরও জোর দেওয়া হবে দারিদ্র দুরীকরণে। ভারতকে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ করে তোলায় স্টার্টআপ পরিমণ্ডল এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের শহরাঞ্চল চালিকা শক্তি হয়ে উঠবে বলে তিনি মনে করেন। 

বর্তমান শতক প্রযুক্তি চালিত – একথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী গণ পরিবহণ সহ আরও নানা ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তিগত উদ্যোগের কথা বলেনন। ছোট শহরগুলি ওষুধপত্র, শিক্ষা এবং উদ্ভাবনের প্রশ্নে বড় ভূমিকা নেবে বলে তিনি আশাবাদী।

কৃষক, দরিদ্র, নারী শক্তি এবং যুবা শক্তি – চারটি স্তম্ভকে আরও জোরদার করে তোলার গুরুত্ব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের বিকাশ যাত্রায় এই ক্ষেত্রগুলি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

কৃষি এবং কৃষক কল্যাণের প্রশ্নে সাংসদরা যেসব পরামর্শ দিয়েছেন তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ১০ বছরে কৃষি লাভজনক একটি পেশা হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে তিনি ঋণ, বীজ, সার সরবরাহের নিশ্চয়তা এবং শস্য বীমার কথা বলেন। প্রতিটি পর্যায়ে অনুপরিকল্পনার মাধ্যমে বীজ থেকে বাজার পর্যন্ত কৃষকদের জন্য একটি শক্তিশালী ও বিস্তৃত প্রণালী গড়ে তোলায় তাঁর সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।

কিষান ক্রেডিট কার্ডের ইতিবাচক নানা দিকের কথা উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে। এই সুবিধা মৎস্যজীবী এবং পশুপালকদের কাছেও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তুলে ধরেন ক্ষুদ্র কৃষকদের কল্যাণের লক্ষ্যে গৃহীত পিএম কিষান সম্মান নিধি প্রসঙ্গ – যার মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন ১০ কোটি কৃষক এবং গত ৬ বছরে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা। আগের জমানায় এইসব ক্ষেত্রে নজর দেওয়া হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। 

বিরোধীরা কক্ষ ত্যাগ করার পরেও ভাষণ চালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী। সভার চেয়ারম্যানের প্রতি সহমর্মিতার বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, মানুষের সেবক হিসেবে তিনি প্রতিক্ষণে দায়বদ্ধ। আইনসভার ঐতিহ্য লঙ্ঘনের জন্য বিরোধীদের সমালোচনা করেন তিনি। 

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তাঁর সরকার দরিদ্র কৃষকদের সারের ভর্তুকি বাবদ ১২ লক্ষ কোটি টাকা দিয়েছে – যা স্বাধীনতার পর সর্বোচ্চ। কৃষকদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে রেকর্ড বৃদ্ধিই শুধু নয়, তাঁদের থেকে ফসল কেনাতেও নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। আগেকার জমানার তুলনায় তাঁর সরকার বিগত ১০ বছরের মধ্যেই ধান ও গম চাষীদের ২.৫ গুণ বেশি অর্থ দিয়েছে বলে তাঁর মন্তব্য। আগামী ৫ বছরে নতুন নানা ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে কাজ হবে বলে তিনি জানান। বিশ্বের বৃহত্তম শস্য ভাণ্ডার পরিকল্পনা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে লক্ষ লক্ষ শস্য ভাণ্ডার গড়ে তোলার কাজ চলছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফুল-ফল চাষ কৃষির গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এই ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত উন্নয়নে ধারাবাহিকভাবে কাজ করছে তাঁর সরকার। 

ভারতের উন্নয়ন যাত্রায় মূল মন্ত্র ‘সকলের সঙ্গে সকলের বিকাশ’ – একথা আবারও উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নাগরিকদের মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন নিশ্চিত করা তাঁর সরকারের অগ্রাধিকার। স্বাধীনতার পর দশকের পর দশক ধরে যাঁরা অবহেলিত থেকেছেন তাঁদের এখন মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে তিনি দিব্যাঙ্গজনের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বলেন। রূপান্তরকামীদের জন্যও তাঁর সরকার নতুন আইন রূপায়ণে উদ্যোগী হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য। এদের অনেকে পদ্ম সম্মানও পেয়েছেন। তিনি সগর্বে বলেন, পশ্চিমী দেশগুলি এখন ভারতের ইতিবাচক যাত্রায় চমৎকৃত।

যাযাবর এবং অর্ধ-যাযাবর জনগোষ্ঠীর একটি কল্যাণ পর্ষদ গড়ে তোলা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। বিশেষভাবে সঙ্কটাপণ্য আদিবাসী গোষ্ঠী (পিভিটিজি) উন্নয়ন খাতে জন মান প্রকল্পের আওতায় ২৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি নয়, তাঁর সরকার বিকাশের বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেয় বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। 

ভারতের বিকাশ যাত্রায় বিশেষ ভূমিকায় থাকা বিশ্বকর্মাদের পেশাগত দক্ষতা ও রুজিরোজগার বাড়াতে ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হওয়া, পিএম স্বনিধি প্রকল্পের আওতায় পথ বিক্রেতাদের কাছে ব্যাঙ্ক ঋণের সুবিধা, পৌঁছে দেওয়ার বিষয়গুলিও উঠে আসে তাঁর বক্তব্যে।

প্রধানমন্ত্রী আবারও বলেন, নারী নেতৃত্বাধীন বিকাশের লক্ষ্যে ভারত দায়বদ্ধতার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। এটি কেবলমাত্র একটি শ্লোগান হয়ে নেই। এজন্য শৌচালয় নির্মাণ, স্যানিটারি প্যাডের সরবরাহ, প্রতিষেধক প্রদান, রান্নার গ্যাস সরবরাহে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি। দরিদ্রদের হাতে তুলে দেওয়া ৪ কোটি বাসস্থানের বেশিরভাগই মহিলাদের নামে নিবন্ধীকৃত বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। তাঁর ভাষণে উঠে আসে মুদ্রা এবং সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার কথা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আরও বলেন, এখনও পর্যন্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ১ কোটি মহিলা লাখ পতি দিদি হয়ে উঠেছেন, তাঁর সরকারের এই মেয়াদে সংখ্যাটি ৩ কোটিতে নিয়ে যাওয়া হবে। নমো ড্রোন দিদি, পাইলট দিদি প্রভৃতি প্রকল্পও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে জায়গা পায়। 

মহিলাদের নিয়ে রাজনীতি করার নেতিবাচক প্রবণতার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গে নারী নির্যাতনের একের পর এক ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। 

তিনি আরও বলেন, সারা বিশ্বে ভারতের ভাবমূর্তি পাল্টাচ্ছে। লাল ফিতের দেশের তকমা ঘুচিয়ে ভারত এখন বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অন্যতম গন্তব্য হয়ে উঠেছে, বাড়ছে কর্মসংস্থান।

১৯৭৭-এর লোকসভা নির্বাচনের সময়ে সংবাদ মাধ্যম এবং বেতারের স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ওই সময়ে মানুষ সংবিধান রক্ষা এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভোট দিয়েছিলেন। সেই দিশাতেই ভারতের মানুষ এবার তাঁর সরকারকেই বেছে নিয়েছেন। জরুরি অবস্থার সময়ে দেশের মানুষের ওপর নির্যাতনের একের পর এক ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ওই সময়ে ৩৮, ৩৯ এবং ৪২তম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের মর্যাদা হ্রাস করা হয়েছিল বলে তাঁর অভিযোগ। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেওয়ার জন্য এক সময়ে যেভাবে জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদ গড়া হয়েছিল তাও নিন্দাযোগ্য বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। একটি পরিবারের বিশেষ সুবিধা পাওয়া ভারতীয় গণতন্ত্রকে অতীতে কালিমালিপ্ত করেছে বলে তাঁর কটাক্ষ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জরুরি অবস্থার বিষয়টি শুধু রাজনৈতিক নয়, ভারতের গণতন্ত্র, সংবিধান এবং মানবতার প্রশ্নেও বিচার্য। ওই সময়ে বিরোধী পক্ষের শীর্ষ নেতাদের কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। বহু মানুষ ঘরছাড়া হয়ে আর ফেরেন নি। মুজাফ্ফর নগর কিংবা তুর্কমান গেটে সংখ্যালঘুরা অবর্ণনীয় পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিলেন। 

দুর্নীতিগ্রস্তদের রক্ষা করতে বিরোধীরা ব্যস্ত বলে প্রধানমন্ত্রী কটাক্ষ করেন। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির অপব্যবহার হচ্ছে এই অভিযোগ খারিজ করে দেন তিনি। ২০১৪-য় তাঁর নেতৃত্বে সরকার গঠিত হওয়ার পর দরিদ্রদের কল্যাণে এবং দুর্নীতিগ্রস্তদের সাজা দিতে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

সাম্প্রতিক প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলছে তারা রেহাই পাবে না বলে তিনি জানিয়ে দেন। 

জম্মু ও কাশ্মীরে ভোটদানের হারে বৃদ্ধি, ভারতের সংবিধান, গণতন্ত্র এবং নির্বাচন কমিশনের ওপর সেখানকার মানুষের আস্থার প্রতিফলন বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চল দেশের বিকাশের প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার হয়ে উঠছে। বর্তমান জমানায় সেখানকার পরিকাঠামোগত উন্নয়নে নজিরবিহীন কাজ হয়েছে। 

মণিপুর নিয়ে রাজ্যসভার আগের অধিবেশনে তাঁর বক্তব্যের কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকার ধারাবাহিকভাবে উদ্যোগী। অশান্তির জেরে ১১ হাজারেরও বেশি এফআইআর দায়ের হয়েছে এবং ৫০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই রাজ্যে হিংসার ঘটনা কমছে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। ওই রাজ্যে শান্তি ফেরাতে ছুটে গেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। 

মণিপুরে সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্র মণিপুর সরকারের সঙ্গে একযোগ কাজ করছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। তিনি আরও বলেন, মণিপুরে সামাজিক বিভেদের বিষয়টি বহু দিনের। স্বাধীনতার পর সেখানে ১০বার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়েছে। ১৯৯৩-এর পর ৫ বছর ধরে সেখানে সামাজিক সংঘাতের এক দীর্ঘ অধ্যায়ের সাক্ষী থেকেছে ইতিহাস। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদীয় রাজনীতিতে আসার অনেক আগেই একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর গুরুত্ব অনুধাবন করেছেন। সেইজন্য জি২০ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে প্রাদেশিক স্তরেও। কোভিড অতিমারির সময়েও রাজ্যগুলির সঙ্গে বোঝাপড়ার ভিত্তিতে এগনো হয়েছে।

প্রাদেশিক প্রতিনিধিত্ব ভিত্তিক রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেমি কনডাকটর এবং বৈদ্যুতিন পণ্য উৎপাদনের প্রশ্নে ভারত আগামী বিপ্লবে নেতৃত্ব দেবে। এক্ষেত্রে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য উদ্যোগী হতে রাজ্যগুলিকে তিনি পরামর্শ দেন। উত্তর পূর্বের অসমে সেমি কনডাকটর ক্ষেত্র দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। 

২০২৩ সালটিকে রাষ্ট্রসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ ঘোষণার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিষয়টি ভারতের ক্ষুদ্র চাষীদের ক্ষমতায়নের প্রতিফলন। মিলেট উৎপাদন বৃদ্ধি করতে এবং আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে প্রাদেশিক স্তরে উদ্যোগ প্রয়োজন বলে তিনি জানান। 

‘ইজ অফ ডুইং’-এর মন্ত্রকে পাথেয় করে নাগরিকদের জীবনযাত্রা সহজতর করে তোলায় সচেষ্ট হতে রাজ্যগুলির কাছে তিনি আবেদন রাখেন। পঞ্চায়েত, নগরনিগম, জেলা পরিষদ – প্রতিটি স্তরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে বলে তিনি মনে করিয়ে দেন।

সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দক্ষতা সুপ্রশাসনের অন্যতম অঙ্গ এবং একবিংশ শতকের যাবতীয় সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর অন্যতম চাবিকাঠি বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। 

জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্রমবর্ধমান প্রবণতার মোকাবিলায় রাজ্যগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা মনে করিয়ে দেন। স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে সর্বস্তরে উদ্যোগ প্রয়োজন বলে তাঁর মন্তব্য।

বর্তমান শতক ভারতের শতক হতে চলেছে এবং এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে বলে প্রধানমন্ত্রী সকলকে বার্তা দেন। সংস্কার এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে নাগরিক কেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ডাক দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিকশিত ভারত ১৪০ কোটি নাগরিকের একত্রিত অভিযান।

রাষ্ট্রপতির প্রতি আবারও ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ শেষ করেন।

PG/AC/SKD



(Release ID: 2030548) Visitor Counter : 5