প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর ২০০ তম জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী

“ঐতিহ্য ও আধ্যাত্মবোধ হারিয়ে যাওয়ার সময়ে স্বামী দয়ানন্দ আমাদের বেদের শরণাপন্ন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন"

Posted On: 11 FEB 2024 12:32PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর ২০০ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গুজরাটের মোরবির ট্যাঙ্করায় স্বামী দয়ানন্দের জন্মস্থলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ভাষণ দেন। 

স্বামীজির অবদানকে সম্মান জানাতে এবং তার শিক্ষাকে জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে আর্যসমাজ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। গত বছর এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরকম এক মহামহিম ব্যক্তিত্বের অপরিসীম অবদানকে ঘিরে উৎসবের ব্যাপ্তিও বিশালাকার হবে ধরে নেওয়াটাই স্বাভাবিক। 
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন যে, আমি স্থির নিশ্চিত এই অনুষ্ঠান নবপ্রজন্মকে মহর্ষির জীবন এবং চিন্তাধারার সঙ্গে সম্যক পরিচিত করানোর ক্ষেত্রে এক কার্যকরী মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে।   
তিনি বলেন, স্বামী দয়ানন্দের জন্ম হয়েছিল গুজরাটে। তবে তাঁর কর্মক্ষেত্র প্রসারিত হয় হরিয়াণায়। প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিজের জীবন ও ধর্মচেতনায় স্বামী দয়ানন্দের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, তাঁর শিক্ষা আমার জীবনের প্রেক্ষাপট রচনা করেছে এবং তা আমার জীবন যাত্রায় অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। স্বামীজির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেশে এবং বিদেশে ছড়িয়ে থাকা তাঁর অগণিত অনুরাগীকে প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছা জানান। 
স্বামী দয়ানন্দের শিক্ষায় রূপান্তরমূলক প্রভাবের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন কতকগুলি ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণের দেখা মেলে যা ভবিষ্যৎ গতিপথের সূত্র বেঁধে দেয়। ২০০বছর আগে স্বামী দয়ানন্দের জন্মও ছিল সেরকমই এক অভূতপূর্ব মুহুর্ত। ভারতকে অজ্ঞানতা ও কুসংস্কারের শৃঙ্খলমুক্ত করে নব চেতনায় জাগ্রত করতে স্বামীজির অবদানের কথা স্মরণ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈদিক জ্ঞানের গুরুত্বকে নতুন করে অনুধাবন করতে তিনি এক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ঐতিহ্য এবং আধ্যাত্মবাদ ক্রমে হারিয়ে যাওয়ার সময় স্বামী দয়ানন্দ আমাদেরকে বেদের আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বেদের ভাষ্য নিয়ে পাণ্ডিত্যপূর্ণ ব্যাখ্যা এবং তার যৌক্তিক মূল্যায়ণের প্রয়াস গ্রহণ করেছিলেন স্বামীজি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামাজিক প্রথার নির্ভীক সমালোচনার পাশাপাশি স্বামীজি ভারতীয় দর্শনের প্রকৃত সারবত্তার ব্যাখ্যা করেন যা সমাজের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের চেতনাকে জাগ্রত রূপ দেয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বামী দয়ানন্দের শিক্ষা সামাজিক ঐক্যের পাশাপাশি ভারতে প্রাচীন ঐতিহ্য নিয়ে আমাদের মধ্যে এক গর্ববোধের জন্ম দেয়। 
তিনি বলেন, আমাদের সামাজিক হীনমান্যতা বশতই ব্রিটিশ সরকার আমাদের অন্তজ হিসেবে দেখতো। সামাজিক পরিবর্তনের প্রয়োজনে কেউ কেউ ব্রিটিশ শাসনের গুরুত্বের কথাও উল্লেখ করেছিলেন। তবে, স্বামী দয়ানন্দ এইসব চক্রান্তকারীদের ওপর প্রবল সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, লালা লাজপত রায়, রামপ্রসাদ বিসমিল এবং স্বামী শ্রদ্ধানন্দের মতো আর্যসমাজের ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে একদল বিপ্লবী জন্ম নেন। ফলে দয়ানন্দজি কেবলমাত্র একজন বৈদিক ঋষি ছিলেন তাই নয়, তিনি ছিলেন একজন জাতীয় ঋষি। 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অমৃতকালের সূচনা বর্ষে স্বামী দয়ানন্দের এই ২০০ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। স্বামী দয়ানন্দের দিশাপথকে তিনি রাষ্ট্রের এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বলে ব্যাখ্যা করেন। ভারতকে ঘিরে স্বামীজির মধ্যে যে বিশ্বাসবোধ ছিল, অমৃতকালে সেই বিশ্বাসকেই আমাদের আত্মবিশ্বাসে রূপান্তর ঘটাতে হবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বামী দয়ানন্দ ছিলেন আধুনিকতার প্রবক্তা ও নির্দেশক।
বিশ্ব জুড়ে আর্যসমাজ প্রতিষ্ঠানের বিস্তৃত কার্যকলাপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষায় আড়াই হাজারেরও বেশি বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৪০০-রও বেশি গুরুকুলের মধ্যে দিয়ে আর্যসমাজ আধুনিকতার এক উজ্জীবিত সাক্ষ্য ও পথপ্রদর্শক। তিনি একবিংশ শতাব্দীর পুনর্জাগ্রত চেতনাকে নিয়ে রাষ্ট্র গঠনের কাজে এই সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। ডিএভি প্রতিষ্ঠানকে স্বামীজির এক জীবন্ত স্মৃতি অ্যাখ্যা দিয়ে তাদের সশক্তিকরণে সর্বাঙ্গীন সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী। 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় শিক্ষা নীতি স্বামীজির দিশাপথকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি আর্যসমাজের ছাত্রকূলকে ভোকাল ফর লোকাল, আত্মনির্ভর ভারত, মিশন লাইফ, জলসংরক্ষণ, স্বচ্ছ ভারত, ক্রীড়া ক্ষেত্র এবং স্বাস্থ্যের লক্ষ্যে সক্রিয় যোগদানের আহ্বান জানান। প্রথমবারের ভোটদাতাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল হওয়ার ওপরেও জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।  
আর্যসমাজের আসন্ন ১৫০ তম প্রতিষ্ঠা দিবসের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী এই স্মরণীয় অনুষ্ঠানের সুযোগকে সংঘবদ্ধ অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাওয়ার কাজে লাগানোর কথা বলেন। 
জৈব ও প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষির ওপরে গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী আচার্য দেবব্রতজির প্রয়াসের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, স্বামী দয়ানন্দজির জন্মস্থল থেকেই জৈব ও প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষির বার্তা দেশের সমস্ত কৃষকের কাছে ছড়িয়ে পড়ুক। 
নারীর অধিকারের প্রবক্তা ছিলেন স্বামী দয়ানন্দ। প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক নারীশক্তি বন্দন অধিনিয়মের গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করে বলেন, নিষ্ঠাশীল প্রয়াস এবং নতুন নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে দেশ তার কন্যা সন্তানদের এগিয়ে নিয়ে চলেছে। এইসব সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা করা গেলে তা মহর্ষি দেবানন্দের প্রতি প্রকৃত সম্মান জানানো হবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। 
ভাষণ শেষে প্রধানমন্ত্রী ডিএভি নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত যুব সম্প্রদায়কে সদ্য গঠিত যুব সংগঠন মাই-ভারত-এ যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমি চাই স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর অনুগামীরা ডিএভি শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছাত্র সম্প্রদায়কে মাই-ভারত-এ যোগ দেওয়ার কাজে উৎসাহ দিক।  

PG/AB /SG



(Release ID: 2005343) Visitor Counter : 58