স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক
azadi ka amrit mahotsav

লোকসভায় আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ ইন্ডিয়ান জাস্টিস কোড, 2023, ইন্ডিয়ান সিভিল ডিফেন্স কোড, 2023 এবং ইন্ডিয়ান এভিডেন্স বিল, 2023 পেশ করেছেন ।

Posted On: 11 AUG 2023 7:32PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ১১ই আগস্ট, ২০২৩

 

গতবছর ১৫ই আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী দেশবাসীর সামনে যে পাঁচটি শপথ নিয়েছিলেন তার মধ্যে একটি ছিল – দাসত্বের সমস্ত লক্ষণের অবসান ঘটানো – আজকের তিনটি বিল মোদীজির এই একটি শপথ পূরণ করতে চলেছে। 

ব্রিটিশ  পার্লামেণ্টে পাশ হওয়া ভারতীয় দণ্ডবিধি ১৮৬০, ফৌজদারি কার্যবিধি (১৮৯৮) ১৯৭৩ এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইন ১৮৭২ কে প্রত্যাহার করে, আজ আমরা তিনটি নতুন আইন নিয়ে এসেছি। 

ইন্ডিয়ান পেনাল কোড, ১৮৬০ আইনটি ভারতীয় ন্যায় সংহিতা,২০২৩  দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে, ফৌজদারি কার্যবিধি কোড ১৮৯৮ প্রতিস্থাপিত হবে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ২০২৩-এর মাধ্যমে এবং ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট, ১৮৭২প্রতিস্থাপিত হবে ভারতীয় সাক্ষ্য বিধেয়ক,২০২৩ এভিডেন্স বিল দ্বারা।

বাতিল হওয়া এই তিনটি আইন ব্রিটিশ শাসনকে শক্তিশালী করতে ও তাকে রক্ষা করতে তৈরি করা হয়েছিল আর তাদের উদ্দেশ্য ছিল শাস্তি প্রদান করা, ন্যায়বিচার নয়।   

তিনটি নতুন আইনের লক্ষ্য হবে সংবিধান প্রদত্ত ভারতীয় নাগরিকদের সমস্ত অধিকার রক্ষা করা, এগুলির উদ্দেশ্য শাস্তি দেওয়া নয় বরং ন্যায়বিচার প্রদান । 

ভারতীয় ভাবধারাকে সঙ্গ নিয়ে তৈরি এই তিনটি আইন আমাদের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় একটি বড় পরিবর্তন আনবে।   

 শাসনের বদলে নাগরিককেন্দ্রিক ভাবনায় অনেক বড়ো নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে এই আইন এনেছে মোদী সরকার।
 
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৯ সালে বলেছিলেন, ব্রিটিশ শাসনের সমস্ত আইন, তারা যে বিভাগেই হোক না কেন, পর্যাপ্ত আলোচনা ও বিবেচনার পরে বর্তমান সময় অনুসারে এবং ভারতীয় সমাজের স্বার্থে প্রণয়ন করা উচিত। 

 ১৮টি রাজ্য, ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, সুপ্রিম কোর্ট, ১৬টি হাইকোর্ট, ৫টি বিচার বিভাগীয় একাডেমি, ২২টি আইন বিশ্ববিদ্যালয়, ১৪২ জন সংসদ সদস্য, প্রায় ২৭০ জন বিধায়ক এবং জনসাধারণ এই নতুন আইনগুলির বিষয়ে তাঁদের পরামর্শ দিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে, চার বছর ধরে এই আইনগুলি নিয়ে নিবিড় আলোচনা হয়েছে এবং তিনি নিজে এই বিষয়ে অনুষ্ঠিত ১৫৮টি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। 

 ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা, যা সিআরপিসি- কে প্রতিস্থাপন করবে, এতে এখন ৫৩৩টি ধারা রয়েছে, ১৬০টি ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে, ৯টি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে এবং ৯টি ধারা বাতিল করা হয়েছে।

ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, যা আইপিসিকে প্রতিস্থাপন করবে, এতে আগের ৫১১টি ধারার পরিবর্তে ৩৫৬টি ধারা থাকবে, ১৭৫টি ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে, ৮টি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে এবং ২২টি ধারা বাতিল করা হয়েছে। 

 ভারতীয় সাক্ষ্য বিধেয়ক, যা এভিডেন্স অ্যাক্টকে প্রতিস্থাপন করবে, এতে আগের ১৬৭টির পরিবর্তে ১৭০টি ধারা থাকবে, ২৩টি ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে, ১টি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে এবং ৫টি ধারা বাতিল করা হয়েছে।

 

এই তিনটি পুরানো আইনে ঔপনিবেশিক উপাদানে পরিপূর্ণ ছিল, সেগুলি ব্রিটেনের পার্লামেন্টে প্রণীত হয়েছিল, আজ আমরা মোট ৪৭৫টি জায়গায় দাসত্বের এই চিহ্নগুলি বিলুপ্ত করে নতুন আইন নিয়ে এসেছি।

 

এই আইনে ইলেকট্রনিক্স ও ডিজিটাল রেকর্ড, ই-মেইল, সার্ভার লগস, কম্পিউটার, স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ, এসএমএস, ওয়েবসাইট, অবস্থানগত প্রমাণ, মেইল, ডিভাইসে প্রাপ্ত বার্তা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নথির সংজ্ঞা সম্প্রসারিত করা হয়েছে। 

এই আইনে এফআইআর থেকে কেস ডায়েরি, কেস ডায়েরি থেকে চার্জশিট এবং চার্জশিট থেকে রায় প্রদান পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে ডিজিটালাইজ করার বিধান রয়েছে। 

 তল্লাশি ও বাজেয়াপ্ত করার সময় ভিডিওগ্রাফি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে যা মামলার অংশ হবে এবং নিরপরাধ নাগরিকদের সমস্যায় ফেলতে পারবে না, এই ধরনের রেকর্ডিং ছাড়া পুলিশের কোনও চার্জশিট বৈধ বলে বিবেচিত হবে না।   

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ফরেনসিক বিজ্ঞানের সাহায্যে অপরাধ নির্ণয়কে উৎসাহ জোগাতে ন্যাশানাল ফরেনসিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটি স্থাপনের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 

 তিন বছর পর থেকে দেশে প্রতি বছর ৩৩ হাজার ফরেনসিক সায়েন্স বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানী পাওয়া যাবে, এই আইনে অপরাধ নির্ণয়ের হার ৯০ শতাংশের ওপরে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। 

৭ বছর বা তার বেশি সাজাযোগ্য অপরাধের ঘটনাস্থলে ফরেনসিক দলের পরিদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, এর মাধ্যমে পুলিশের হাতে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আসবে, এরফলে প্রকৃত আসামিদের আদালতে বেকসুর খালাস পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে। 

 নাগরিকদের সুবিধা সুনিশ্চিত করার জন্য স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর প্রথমবার মোদি সরকার জিরো এফআইআর চালু করতে চলেছে, অপরাধ যেখানেই হোক না কেন সেই এলাকার থানার বাইরেও অভিযোগ নথিভুক্ত করা যেতে পারে।
প্রথমবারের মতো ই-এফআইআর-এর ব্যবস্থা যুক্ত করা হচ্ছে, প্রতিটি জেলা এবং থানা একজন করে পুলিশ অফিসারকে মনোনীত করবে যিনি গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির পরিবারকে অনলাইনে এবং ব্যক্তিগতভাবে তার গ্রেপ্তারের বিষয়ে অবহিত করবেন।
 যৌন হিংস্রতার ক্ষেত্রে আক্রান্তদের জবানবন্দি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে বয়ানের ভিডিও রেকর্ডিংও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। 
৯০ দিনের মধ্যে পুলিশকে অভিযোগের স্ট্যাটাস দেওয়া আর তারপর প্রতি ১৫ দিনে অভিযোগকারীকে স্ট্যাটাস দেওয়া বাধ্যতামূলক হবে। 

 ভুক্তভোগীর কথা না শুনে কোনও সরকার ৭ বছর বা তার বেশি কারাদণ্ডের মামলা প্রত্যাহার করতে পারবে না, এতে নাগরিকদের অধিকার রক্ষা হবে। 
 
ছোট ছোট মামলায়ও সামারি ট্রায়ালের ব্যপ্তি বাড়ানো হয়েছে, এখন ৩ বছর পর্যন্ত শাস্তিযোগ্য অপরাধ সামারি ট্রায়ালের অন্তর্ভুক্ত হবে, এই একটি বিধান দিয়েই দায়রা আদালতে ৪০ শতাংশের বেশি মামলার নিষ্পত্তি সম্ভব হবে।

 চার্জশিট দাখিলের জন্য ৯০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে আর পরিস্থিতি দেখে আদালত আরও ৯০ দিনের অনুমতি দিতে পারবেন, এভাবে ১৮০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে বিচারের জন্য পাঠাতে হবে।

আদালত এখন ৬০ দিনের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে চার্জ গঠনের নোটিশ দিতে বাধ্য থাকবে, যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে মাননীয় বিচারককে সিদ্ধান্ত দিতে হবে, এতে বছরের পর বছর সিদ্ধান্ত ঝুলে থাকবে না আর ৭ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত অনলাইনে আপলোড করতে হবে।

 সরকারি কর্মচারী বা পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে বিচারের জন্য ১২০ দিনের মধ্যে অনুমতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে অন্যথায় এটিকে ‘বিবেচিত অনুমতি’ হিসাবে গণ্য করা হবে এবং বিচার শুরু করা হবে। 

ঘোষিত অপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার বিধানও আনা হয়েছে, আন্তঃরাজ্য গোষ্ঠী এবং সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের কঠোর শাস্তির নতুন বিধানও এই আইনে যুক্ত করা হচ্ছে। 

 বিয়ে, চাকরি ও পদোন্নতির মিথ্যা প্রতিশ্রুতি এবং মিথ্যা পরিচয়ের ভিত্তিতে যৌন সম্পর্ককে প্রথমবারের মতো অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, গণধর্ষণের সব মামলায় ২০ বছরের কারাদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।  
১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের সঙ্গে অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধানও রাখা হয়েছে, গণ পিটুনি - র জন্য ৭ বছর, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং মৃত্যুদণ্ডের তিনটিরই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। 

 মহিলাদের মোবাইল ফোন বা হার ছিনতাই অপরাধের কোনও বিধান ছিল না, এখন এর জন্যও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।  

স্থায়ী পঙ্গুত্ব বা মস্তিষ্কের মৃত্যুর ক্ষেত্রে ১০ বছর বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। 

 শিশুদের সঙ্গে অপরাধ করলে শাস্তি ৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়েছে, অনেক অপরাধে জরিমানার পরিমাণ বাড়ানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।  

অতীতে রাজনৈতিক লাভের স্বার্থে অপরাধ মার্জনা করার অনেক দৃষ্টান্ত দেখা গেছে, বর্তমানে মৃত্যুদণ্ডকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে সর্বনিম্ন ৭ বছরে আর ৭ বছর কারাদণ্ডকে সর্বনিম্ন ৩ বছর করা যেতে পারে কিন্তু কোনও অপরাধীকে রেহাই দেওয়া যাবে না।  

 মোদি সরকার রাষ্ট্রদ্রোহের সম্পূর্ণ অবসান ঘটাতে চলেছে কারণ ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ এবং প্রত্যেকের কথা বলার অধিকার রয়েছে।
আগে সন্ত্রাসবাদের কোনো সংজ্ঞা ছিল না, এখন সশস্ত্র বিদ্রোহ, নাশকতামূলক কার্যকলাপ, বিচ্ছিন্নতাবাদ, ভারতের একতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতাকে চ্যালেঞ্জ করার মতো অপরাধ এই প্রথম এই আইনে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
 অনুপস্থিতিতে বিচারের ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে দায়রা আদালতের বিচারক কর্তৃক পলাতক ঘোষিত ব্যক্তির বিচার করা হবে এবং অনুপস্থিতিতে সাজা দেওয়া হবে, অপরাধী বিশ্বের যে প্রান্তেই লুকিয়ে থাকুক না কেন, সাজার বিরুদ্ধে আবেদন করতে ভারতীয় আইন ও আদালতের আশ্রয়    নিতে হবে। 
আইনে মোট ৩১৩টি পরিবর্তন করা হয়েছে যা আমাদের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনবে এবং প্রত্যেকে সর্বোচ্চ ৩ বছরের মধ্যে বিচার পেতে সক্ষম হবে।
 এই আইনে নারী ও শিশুদের বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়েছে, অপরাধীরা যাতে শাস্তি পায় এবং পুলিশ যেন তাঁদের অধিকারের অপব্যবহার করতে না পারে, সেরকম ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। 

একদিকে রাষ্ট্রদ্রোহের মতো আইন বাতিল করা হয়েছে, অন্যদিকে নারী শোষণ ও গণ পিটুনির মতো জঘন্য অপরাধের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা এবং সংগঠিত অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদকে দমন করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ ইন্ডিয়ান জাস্টিস কোড, 2023, ইন্ডিয়ান সিভিল ডিফেন্স কোড, 2023 এবং ইন্ডিয়ান এভিডেন্স বিল, 2023 লোকসভায় আলোচনার জন্য পেশ করেছেন ।

শ্রী অমিত শাহ বলেন যে, আজ স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব শেষ হচ্ছে এবং অমৃত কাল শুরু হচ্ছে। ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব শেষ হবে এবং ১৬ আগস্ট থেকে স্বাধীনতার ৭৫ থেকে ১০০ বছরের যাত্রা শুরু হবে, যা নিঃসন্দেহে  মহান এক ভারত গড়ে তুলবে। তিনি বলেন যে, গতবছর ১৫ আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি, লাল কেল্লার প্রাকার থেকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার সময়, দেশের জনগণের কাছে পাঁচটি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যার মধ্যে একটি ছিল - আমরা দাসত্বের সমস্ত লক্ষণ শেষ করব! . শ্রী অমিত শাহ বলেন যে, আজ আনা এই তিনটি বিল মোদীজির নেওয়া পাঁচটি প্রতিশ্রুতির মধ্যে একটি পূরণ করছে। এই তিনটি বিলেই ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার জন্য মৌলিক আইন রয়েছে। তিনি বলেন যে ভারতীয় দণ্ডবিধি, ১৮৬০, ফৌজদারি কার্যবিধি, (১৮৯৮),১৯৭৩ এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২, ব্রিটিশরা তৈরি করেছিল এবং ব্রিটিশ পার্লামেন্ট দ্বারা প্রণীত হয়েছিল। আজ আমরা তিনটি নতুন আইন নিয়ে এসেছি। ইন্ডিয়ান পেনাল কোড, ১৮৬০ ইন্ডিয়ান কোড অফ জাস্টিস, ২০২৩ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে, ফৌজদারি কার্যবিধি কোড, ১৮৯৮ ইন্ডিয়ান সিভিল ডিফেন্স কোড, ২০২৩ -র মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত হবে আর ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট, ১৮৭২ ইন্ডিয়ান এভিডেন্স বিল, ২০২৩ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে। এই তিনটি বাতিল আইন ব্রিটিশ শাসনকে শক্তিশালী ও রক্ষা করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল এবং তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল শাস্তি দেওয়া, বিচার করা নয়, আমরা এই দুটি মৌলিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন করতে যাচ্ছি। এই তিনটি আইন  প্রতিস্থাপন করে তিনটি নতুন আইন প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্য হল সংবিধান দ্বারা ভারতীয় নাগরিকদের দেওয়া সমস্ত অধিকার রক্ষা করা। এই আইনগুলির উদ্দেশ্য কাউকে শাস্তি দেওয়া নয়, ন্যায়বিচার প্রদান করা, আর এই প্রক্রিয়ায় অপরাধ প্রতিহত করার ভাবনা তৈরি করার জন্য যেখানে প্রয়োজন শুধু সেখানেই শাস্তি দেওয়া হবে।  

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লোকসভায় আশ্বাস দেন যে ১৮৬০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত, এই দেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা ইংরেজ পার্লামেন্টের তৈরি আইনের ভিত্তিতে কাজ করেছে, এখন এই তিনটি আইন ভারতীয় ভাবনার মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত হবে, যাতে আমাদের অপরাধী বিচার ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসবে। তিনি বলেন, বর্তমান আইনে হত্যা বা নারীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের মতো জঘন্য অপরাধের থেকে রাষ্ট্রদ্রোহ, কোষাগার লুটপাট, সরকারি কর্মকর্তার ওপর হামলার মতো অপরাধ বেশি শাস্তিযোগ্য। তিনি বলেন যে, আমরা এই পদ্ধতির পরিবর্তন করছি এবং এই নতুন আইনের প্রথম অধ্যায় হবে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ। দ্বিতীয় অধ্যায় হবে মানবহত্যা এবং মানবদেহের উপর আঘাত হানার বিরুদ্ধে অপরাধ। আইনে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে নাগরিকদের কেন্দ্রে রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা এই আইন এনেছি।

শ্রী অমিত শাহ বলেন যে এই আইনগুলি তৈরির পিছনে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া রয়েছে। তিনি বলেন যে ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আমাদের সকলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে ব্রিটিশদের সময়ে প্রণীত সমস্ত আইন, তারা যে বিভাগেই থাকুক না কেন, আজকের সময় অনুসারে এবং দেশের স্বার্থে সঃেগুলি নিয়ে নিবিড় পর্যালোচনা করে সেগুলিকে ভারতীয় সমাজের উপযোগী করে তুলতে হবে। তিনি বলেন, এসব আইন নিয়ে সর্বস্তরে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ২০১৯ সালের আগস্টে তিনি সুপ্রিম কোর্টের সমস্ত বিচারপতি, দেশের সব হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং দেশের সব আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে চিঠি লিখেছিলেন। ২০২০ সালে, সমস্ত সাংসদ, মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির প্রশাসকদের কাছে চিঠি লেখা হয়েছিল। এরপর ব্যাপক আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করার পর আজ এই প্রক্রিয়া আইনে পরিণত হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন যে ১৮টি রাজ্য, ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, সুপ্রিম কোর্ট, ১৬টি হাইকোর্ট, ৫টি বিচার বিভাগীয় একাডেমি, ২২টি আইন বিশ্ববিদ্যালয়, ১৪২ জন সংসদ সদস্য, প্রায় ২৭০ জন বিধায়ক এবং জনসাধারণ এই নতুন আইনগুলির বিষয়ে তাঁদের পরামর্শ দিয়েছেন। শ্রী শাহ বলেন যে, ৪ বছর ধরে এগুলি নিয়ে নিবিড় আলোচনা হয়েছে এবং তিনি নিজে ১৫৮টি সভায় উপস্থিত ছিলেন। 
  
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা , যা সিআরপি সি-কে প্রতিস্থাপন করবে, এতে  ৫৩৩টি ধারা থাকবে। এখানে ১৬০টি ধারার পরিবর্তন করা হয়েছে, ৯টি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে এবং ৯টি ধারা বাতিল করা হয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, যা আইপিসি-কে প্রতিস্থাপন করবে, এতে আগের ৫১১টি ধারার পরিবর্তে এখন ৩৫৬টি ধারা থাকবে, ১৭৫টি ধারা সংশোধন করা হয়েছে, ৮টি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে এবং ২২টি ধারা বাতিল করা হয়েছে। ভারতীয় সাক্ষ্য বিধেয়ক , যা এভিডেন্স অ্যাক্টকে প্রতিস্থাপন করবে, এতে এখন আগের ১৬৭টির পরিবর্তে ১৭০টি ধারা থাকবে, ২৩টি ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে, একটি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে এবং ৫টি ধারা বাতিল করা হয়েছে। 

শ্রী অমিত শাহ বলেন যে এই তিনটি পুরানো আইন দাসত্বের লক্ষণে পূর্ণ ছিল, এগুলি ব্রিটিশ সংসদে পাস হয়েছিল আর আমরা কেবল সেগুলি গ্রহণ করেছি। এই আইনগুলি বৃটিশ যুক্তরাজ্যের সংসদ, প্রাদেশিক আইন, ক্রাউন প্রতিনিধি, লন্ডন গেজেট, জুরি এবং ব্যারিস্টার, লাহোর সরকার, কমনওয়েলথ রেজুলেশন, যুক্তরাজ্যের গ্রেট ব্রিটেন এবং আয়ারল্যান্ড সংসদের বিজ্ঞপ্তিগুলিকে উল্লেখ করে। বৃটেনের রাণী এবং প্রিভি কাউন্সিল এর রেফারেন্স তৈরি করেছে, লন্ডন গেজেটের বিষয়বস্তুর কপি এবং সারমর্ম, পজেশন অফ দ্য ব্রিটিশ ক্রাউন, ইংল্যান্ডের কোর্ট অফ জাস্টিস এবং বৃটিশ সাম্রাজ্যের নানা স্বায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চলের কথা এই আইনগুলির অনেক জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন, মোট ৪৭৫টি স্থানে দাসত্বের এই নিদর্শনগুলোর অবসান ঘটিয়ে আজ আমরা নতুন আইন নিয়ে এসেছি। আমরা এই আইনগুলির সঙ্গে নতুন যুগকে যুক্ত করার চেষ্টা করেছি। আমাদের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় অনেক সময় লাগে, বিচার এত দেরিতে হয় যে ন্যায়বিচারের কোনো অর্থ হয় না, মানুষ এতে বিশ্বাস হারিয়েছে এবং আদালতে যেতে ভয় পায়। 
 
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এসব আইনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করা হয়েছে। ইলেকট্রনিক্স ও ডিজিটাল রেকর্ড, ই-মেইল, সার্ভার লগ, কম্পিউটার, স্মার্ট ফোন, ল্যাপটপ, এসএমএস, ওয়েবসাইট, লোকেশনাল এভিডেন্স, মেল এবং ডিভাইসে থাকা বার্তাগুলিকে যাতে আদালতে ব্যবহার করা যেতে পারে, সেজন্য অন্তর্ভুক্ত করার স্বার্থে নথির সংজ্ঞা সম্প্রসারিত করা হয়েছে। ফলে আদালতগুলি অনেক কাগজপত্রের স্তূপ থেকে মুক্তি পাবে। তিনি বলেন, এই আইনে এফআইআর থেকে কেস ডায়েরি, কেস ডায়েরি থেকে চার্জশিট এবং চার্জশিট থেকে রায় পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া ডিজিটাল করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বর্তমানে শুধুমাত্র ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আসামিদের হাজির করা গেলেও এখন সাক্ষ্য শুনানী সহ পুরো বিচার হবে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে। অভিযোগকারী ও সাক্ষীদের সওয়াল জবাব, বিচার ও হাইকোর্টের বিচারে তদন্ত ও সাক্ষ্য রেকর্ডিং এবং আপিলের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে করা যাবে। এ বিষয়ে ন্যাশানাল ফরেনসিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটি এবং সারাদেশের  কারিগরি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে  এটি তৈরি করা হয়েছে। এখন তল্লাশি ও বাজেয়াপ্ত করার সময় ভিডিওগ্রাফি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যেটি মামলার অংশ হবে এবং নিরপরাধ নাগরিকদের জড়ানো হবে না। এ ধরনের রেকর্ডিং ছাড়া পুলিশের কোনো চার্জশিট বৈধ হবে না।   

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও, বিভিন্ন মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হার খুব কম, তাই  ফরেনসিক বিজ্ঞানের প্রসারে কাজ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ন্যাশানাল ফরেনসিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটি স্থাপনের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেন। তিন বছর পর প্রতি বছর ৩৩ হাজার ফরেনসিক সায়েন্স বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানী পাবে দেশ। এই আইনে আমরা দোষী সাব্যস্ত হওয়ার অনুপাত ৯০ শতাংশের উপরে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। এ জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে , ৭ বছর বা তার বেশি শাস্তিযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে ফরেনসিক দলের অপরাধস্থল পরিদর্শন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এর ফলে পুলিশের কাছে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ থাকবে, ফলে আদালতে আসামিদের খালাস পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে। ২০২৭ সালের আগে দেশের সব আদালত কম্পিউটারাইজড হয়ে যাবে। একইভাবে মোবাইল ফরেনসিক ভ্যানের ব্যবহারও প্রয়োগ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে দিল্লিতে আমরা একটি সফল পরীক্ষা করেছি যে ৭ বছরের বেশি শাস্তিযোগ্য যে কোনও অপরাধের ঘটনাস্থল এফ.এস.এল.  টিম পরিদর্শন করে। তারপরই আমরা মোবাইল এফএসএল টিমের অপরাধের ঘটনাস্থলে সরেজমিনে তদন্ত চালু করেছি, এখন থেকে প্রতিটি জেলায় ৩টি মোবাইল এফএসএল টিম থাকবে এবং তাঁরা প্রতিটি ৭ বছরের বেশি শাস্তিযোগ্য অপরাধের ঘটনাস্থলে সরেজমিনে তদন্ত করতে যাবেন।

শ্রী অমিত শাহ বলেন যে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর প্রথমবারের মতো, আমরা নাগরিকদের সুবিধা নিশ্চিত করতে জিরো এফআইআর শুরু করছি। এখন যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার থানা এলাকার বাইরেও তা নথিভুক্ত করা যাবে। অপরাধ নথিভুক্ত হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠাতে হবে। প্রথমবারের মতো আমরা ই-এফআইআর-এর ব্যবস্থা যুক্ত করছি। প্রতিটি জেলা এবং থানা একজন পুলিশ অফিসারকে মনোনীত করবে যিনি গ্রেপ্তারের বিষয়ে অনলাইনে এবং ব্যক্তিগতভাবে গ্রেপ্তার ব্যক্তির পরিবারকে অবহিত করবেন। শ্রী শাহ বলেন, যৌন হিংসার ক্ষেত্রে আক্রান্তের বিবৃতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং যৌন হয়রানির ক্ষেত্রেও জবানবন্দি ভিডিও রেকর্ডিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ৯০ দিনের মধ্যে পুলিশকে অভিযোগ তদন্তের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং তারপরে প্রতি ১৫ দিন অন্তর অভিযোগকারীকে স্ট্যাটাস দিতে হবে। ভুক্তভোগীর কথা না শুনে কোনও সরকার ৭ বছর বা তার বেশি সময়কালীন কারাদণ্ডের মামলা প্রত্যাহার করতে পারবে না, ফলে নাগরিকদের অধিকার রক্ষা হবে। এই আইনে শাস্তি হিসেবে  প্রথমবারের মতো কমিউনিটি সার্ভিস চালু করা হবে। ছোট ছোট মামলায় সামারি ট্রায়ালের সুযোগও বাড়ানো হয়েছে, এখন ৩ বছর পর্যন্ত সাজাপ্রাপ্ত অপরাধগুলো সামারি ট্রায়ালে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, শুধু এই ব্যবস্থার মাধ্যমেই দায়রা আদালতে ৪০ শতাংশের বেশি মামলা শেষ হবে। চার্জশিট দাখিলের জন্য ৯০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে এবং পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে আদালত আরও ৯০ দিনের অনুমতি দিতে পারবে। এভাবে ১৮০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে বিচারের জন্য পাঠাতে হবে। আদালত এখন ৬০ দিনের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অভিযোগ গঠনের নোটিশ দিতে বাধ্য।  বিচারকের কাছে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত দিতে হবে, এতে বছরের পর বছর ধরে সিদ্ধান্ত ঝুলে থাকবে না এবং ৭ দিনের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত অনলাইনে দিতে হবে।
 
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে সরকারকে সরকারি কর্মচারি বা পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে বিচারের অনুমতির বিষয়ে ১২০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, অন্যথায় এটিকে বিবেচনাধীন অনুমতি হিসাবে গণ্য করা হবে এবং বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এ ছাড়াও আরেকটি বড় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা হয়েছে।  বর্তমানে কর্মরত পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট (এসপি)-ই একই ফাইল দেখে সাক্ষ্য দেবেন, আগে যিনি ছিলেন তাকে আসতে হবে না, যার ফলে সাক্ষ্যদান প্রক্রিয়া দ্রুত হবে এবং ন্যায়বিচার হবে। এ ছাড়া ঘোষিত অপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার বিধানও আনা হয়েছে। এই আইনে আন্তঃরাজ্য গোষ্ঠী এবং সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের কঠোর শাস্তির একটি নতুন ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছে। মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ ও নানা সামাজিক সমস্যার সমাধানের জন্যও অনেক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিয়ে, চাকরি ও পদোন্নতির মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে এবং ভুল পরিচয়ের ভিত্তিতে যৌন মিলনকে প্রথমবারের মতো অপরাধ হিসেবে গণ্য করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গণধর্ষণের সব ক্ষেত্রেই ২০ বছরের সাজা বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে, যা আজও বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধানও রাখা হয়েছে। গণ পিটুনির জন্য ৭ বছর, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও মৃত্যুদণ্ডের তিনটি বিধানই রাখা হয়েছে। আগে মহিলাদের মোবাইল ফোন বা হার ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রে কোনও আইনি ব্যবস্থা না থাকলেও এখন এক্ষেত্রেও ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

 

শ্রী অমিত শাহ বলেন যে গুরুতর আঘাতের কারণে নিষ্ক্রিয়তা এবং সামান্য আঘাতের মামলা - উভয় অপরাধের ক্ষেত্রেই ৭ বছরের শাস্তির বিধান ছিল, আমরা উভয়কে আলাদা করেছি। তিনি বলেন, আক্রান্তের স্থায়ী পঙ্গুত্ব বা মস্তিষ্কের মৃত্যু হলে অপরাধীর ১০ বছর কারাদণ্ড থেকে বাড়িয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শিশুদের সঙ্গে অপরাধ করলে শাস্তির মেয়াদ  ৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়েছে। অনেক অপরাধে জরিমানার পরিমাণ বাড়ানোরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। হেফাজত থেকে পালিয়ে যাওয়া অপরাধীদের জন্য ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধানও রয়েছে। রাজনৈতিক লাভের স্বার্থে অপরাধ মাফ করার অনেক দৃষ্টান্ত দেখা গেছে, এখন মৃত্যুদণ্ডকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে সর্বনিম্ন ৭ বছরে আর ৭ বছর কারাদণ্ডকে সর্বনিম্ন ৩ বছর করা যেতে পারে কিন্তু কোনও অপরাধীকে রেহাই দেওয়া যাবে না। 

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে, মোদি সরকার রাষ্ট্রদ্রোহের সম্পূর্ণ অবসান ঘটাতে চলেছে কারণ ভারত একটি গণতন্ত্র এবং প্রত্যেকের কথা বলার অধিকার রয়েছে। আগে সন্ত্রাসবাদের কোনো সংজ্ঞা ছিল না, এখন সশস্ত্র বিদ্রোহ, নাশকতামূলক কার্যকলাপ, বিচ্ছিন্নতাবাদ, ভারতের একতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতাকে চ্যালেঞ্জ করার মতো অপরাধ এই প্রথম এই আইনে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, এবং এর সাথে সম্পর্কিত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অধিকারও দেওয়া হয়েছে। তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার বিবেচনায় আদালত এ আদেশ দেবেন। শ্রী শাহ বলেছেন যে অনুপস্থিতিতে বিচারের ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে দায়রা আদালতের বিচারক কর্তৃক পলাতক ঘোষিত ব্যক্তির বিচার করা হবে এবং অনুপস্থিতিতে সাজা দেওয়া হবে, অপরাধী বিশ্বের যে প্রান্তেই লুকিয়ে থাকুক না কেন, সাজার বিরুদ্ধে আবেদন করতে ভারতীয় আইন ও আদালতের আশ্রয় নিতে হবে।

 

 

শ্রী অমিত শাহ বলেন যে প্রচুর সংখ্যক বিবাদাস্পদ মামলার সম্পত্তির নথি সারা দেশের থানাগুলিতে পড়ে আছে, এগুলি ভিডিওগ্রাফির করে যাচাইকৃত অনুলিপি আদালতে জমা দেওয়ার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যেতে পারে। তিনি বলেন, আইনে মোট ৩১৩টি পরিবর্তন করা হয়েছে যা আমাদের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনবে এবং প্রত্যেকে সর্বোচ্চ ৩ বছরের মধ্যে বিচার পেতে সক্ষম হবে।

শ্রী শাহ বলেন, এই আইনে নারী ও শিশুদের বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়েছে, অপরাধীরা যাতে শাস্তি পায় এবং পুলিশ যেন তাঁদের অধিকারের অপব্যবহার করতে না পারে, সেরকম ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

একদিকে রাষ্ট্রদ্রোহের মতো আইন বাতিল করা হয়েছে, অন্যদিকে নারী শোষণ ও গণ পিটুনির মতো জঘন্য অপরাধের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা এবং সংগঠিত অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদকে দমন করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

*

AC/SB


(Release ID: 1950755) Visitor Counter : 833