প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৩ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও বার্তার বঙ্গানুবাদ

Posted On: 05 JUN 2023 2:58PM by PIB Kolkata

 নয়াদিল্লি, ০৫ জুন, ২০২৩ 


নমস্কার!
বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আমি আপনাদের, আমার দেশ এবং সারা বিশ্বের প্রতি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। এই বছর পরিবেশ দিবসের মূল ভাবনা হ’ল ‘একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জন অভিযান’। আমি খুশি যে, এই বিষয়ে সারা বিশ্ব উদ্যোগী হওয়ার আগে থেকেই বিগত ৪ - ৫ বছর ধরে ভারত কাজ করে চলেছে। ২০১৮’য় একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে ভারত দুটি পর্যায়ে কাজ শুরু করে। একদিকে, আমরা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করি, অন্যদিকে বাতিল হওয়া প্লাস্টিকের প্রক্রিয়াকরণ বাধ্যতামূলক করা হয়। এর ফলে, এখন বাধ্যতামূলকভাবে ভারতে ৩০ লক্ষ টন প্লাস্টিকের মোড়ক প্রক্রিয়াকরণ করা হচ্ছে, যা আসলে ভারতে প্রতি বছর তৈরি হওয়া প্লাস্টিক বর্জ্যের ৭৫ শতাংশ। প্রায় ১০ হাজার উৎপাদনকারী, আমদানীকারক এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মালিক এই উদ্যোগে সামিল হয়েছেন। 
বন্ধুগণ,
একবিংশ শতকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ এবং পরিবেশ সংরক্ষণের প্রশ্নে ভারত সুনির্দিষ্ট পথে এগিয়ে চলেছে। বর্তমান চাহিদা এবং ভবিষ্যতের পরিস্থিতির মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রেখে ভারত এগোচ্ছে। একদিকে আমরা দরিদ্রের মধ্যে দরিদ্রতমদের ন্যূনতম চাহিদা পূরণে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি, অন্যদিকে ভবিষ্যতের জ্বালানীর চাহিদা মেটানোর বিষয়টিতেও যথাযথ মনোযোগ দিচ্ছি আমরা।
বিগত ৯ বছরে পরিবেশ-বান্ধব শক্তি ক্ষেত্রে ভারত নজিরবিহীন অগ্রাধিকার দিয়েছে। সৌরশক্তি উৎপাদনে বিপুল গতি সঞ্চার হয়েছে এবং বহুসংখ্যক বাড়িতে পৌঁছে গেছে এলইডি বাল্ব। এর ফলে, মানুষের, বিশেষত দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে। পাশাপাশি, পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টিও নিশ্চিত হচ্ছে। বিদ্যুতের খরচ ধারাবাহিকভাবে কমছে। অতিমারীর সময় ভারতের নেতৃত্ব স্বীকার করে নিয়েছে সারা বিশ্ব। ঐ সময় ভারত পরিবেশ-বান্ধব হাইড্রোজেন মিশনের সূচনা করে। এরই সঙ্গে, প্রাকৃতিক ও জৈব চাষে অগ্রাধিকার দিয়ে মাটি ও জলকে রাসায়নিক সারের বিপদ থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রেও এগোনো সম্ভব হয়।  
ভাই ও বোনেরা,
পরিবেশ-বান্ধব ভবিষ্যৎ এবং অর্থনীতির বাস্তয়ায়নের পাশাপাশি আজকের দিনটিতে দুটি নতুন উদ্যোগের সূচনা হচ্ছে। গত ৯ বছর ধরে ভারতে জলাভূমি এবং রামসর অঞ্চলের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। আজ সূচনা হচ্ছে ‘অমৃত ধরোহর যোজনা’। রামসর অঞ্চলগুলি পরিবেশ-বান্ধব পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠবে এবং ভবিষ্যতে হাজার হাজার মানুষের পরিবেশ-বান্ধব কর্মসংস্থানের সহায়ক হবে। দ্বিতীয় উদ্যোগটি দেশের দীর্ঘ উপকূল অঞ্চল এবং সেখানে বসবাসরত মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত। ‘মিষ্টি যোজনা’র আওতায় দেশের ম্যানগ্রোভ বাস্তুতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত ও সুরক্ষিত করা হবে। ৯টি রাজ্যের ম্যানগ্রোভ আচ্ছাদন ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে এই উদ্যোগ। পাশাপাশি, সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধির মোকাবিলা করে উপকূলীয় অঞ্চলকে ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রকোপ থেকেও রক্ষা করবে এই উদ্যোগ। এর ফলে, উপকূল অঞ্চলে বসবাসরত মানুষের জীবিকা এবং জীবনযাপনের প্রশ্নে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। 
বন্ধুগণ,
ক্ষুদ্র স্বার্থের উপরে উঠে বিশ্ব জলবায়ু সংরক্ষণে প্রতিটি দেশের উদ্যোগী হওয়া জরুরি। প্রধান প্রধান উন্নত দেশে বিকাশের যে পন্থা চালু রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে দীর্ঘদিন ধরেই। ঐ প্রণালী অনুযায়ী, উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিবেশের প্রতি কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে, ঐ দেশগুলি অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পথে এগোলেও তার দাম মেটাতে হয়েছে সারা বিশ্বকে। এমনকি, আজও কয়েকটি উন্নত দেশের ভুল নীতির খেসারত দিতে হচ্ছে উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশগুলিকে। দশকের পর দশক পেরিয়ে গেলেও কয়েকটি দেশের এই ধরনের নীতি নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। আজ ভারত জলবায়ু বিষয়ক সুবিচারে দাবি তুলেছে। 
বন্ধুগণ,
ভারত চিরাচরিত সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও প্রগতির মেলবন্ধন ঘটাতে চেয়েছে। সেই সূত্র ধরে আজকের ভারত অর্থনীতির পাশাপাশি, বাস্তুতন্ত্রের উপরও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে। পরিকাঠামো খাতে ভারত লগ্নি করছে নজিরবিহীন মাত্রায়। একদিকে ৪জি ও ৫জি সংযোগ প্রসারিত করছে ভারত, অন্যদিকে একই সঙ্গে বাড়িয়ে তুলেছে তার অরণ্য আচ্ছাদন। ভারতে দরিদ্রদের জন্য ৪ কোটি গৃহ যেমন নির্মিত হয়েছে, তেমনই বন্যপ্রাণ এবং অভয়ারণ্যের বিকাশেও দেশ এগিয়ে চলেছে। একদিকে যেমন জল জীবন মিশন হাতে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে তেমনই জল সংরক্ষণের লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়েছে ৫০ হাজার অমৃত সরোবর। ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠেছে। আবার অন্যদিকে, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবহার ক্ষেত্রেও এই দেশের স্থান প্রথম ৫টি দেশের মধ্যে। কৃষিজ পণ্য রপ্তানী বৃদ্ধির পাশাপাশি, পেট্রোলের ২০ শতাংশ ইথানল সংরক্ষণের প্রশ্নেও গুরুত্ব দিয়েছে ভারত। কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার - এর মতো সংগঠন তৈরির পাশাপাশি, ভারত ইন্টারন্যাশনাল বিগ ক্যাট অ্যালায়েন্স – এরও ঘোষণা করেছে, যার লক্ষ্য ব্যাঘ্র সংরক্ষণ। 
বন্ধুগণ,
পরিবেশের জন্য জীবনশৈলী বা মিশন লাইফ সারা বিশ্বে জনআন্দোলনের চেহারা নেওয়ায় আমি ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত আনন্দিত। গুজরাটের কেভাডিয়ায় – একতানগরে যখন আমি এর সূচনা করি, তখন মানুষ বিষয়টি নিয়ে উৎসুক ছিলেন। আজ জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সচেতনা প্রসারে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছে এই অভিযান। মিশন লাইফ – এর আওতায় মাত্র এক মাস আগে একটি কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। ৩০ দিনের মধ্যে তাতে প্রায় ২ কোটি মানুষ সামিল হয়েছেন বলে আমি খবর পেয়েছি। ‘গিভিং লাইফ টু মাই সিটি’ মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও ক্যুইজ প্রতিযোগিতার। বিভিন্ন ইকো ক্লাবের মাধ্যমে এই অভিযানে যোগ দিয়েছেন বিদ্যালয়ের লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক। দৈনন্দিন জীবনে বর্জ্য হ্রাস, পুর্নব্যবহার এবং প্রক্রিয়াকরণের মন্ত্রের বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। মিশন লাইফ – এর মূল কথাই হ’ল আচরণগত পরিবর্তন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণে এ এক গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। 
বন্ধুগণ,
শুধুমাত্র দেশের অভ্যন্তরেই নয়, সারা বিশ্বের মানুষ ভারতের উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। গত বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত স্তরে অনুসরণীয় পরিবেশ-বান্ধব উদ্ভাবনী রীতিনীতির আদান-প্রদানের প্রশ্নে আমি সারা বিশ্বের কাছে আবেদন রেখেছিলাম। তাতে সাড়া দিয়েছেন প্রায় ৭০টি দেশের মানুষ, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন – শিক্ষার্থী, গবেষক, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ, পেশাদার, অ-সরকারি সংগঠন এবং সাধারণ নাগরিক। প্রতিযোগিতামূলক এই আয়োজনে কৃতিত্বের স্বীকৃতিতে আজ কয়েকজনকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে - আমি তাঁদের অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুগণ,
মিশন লাইফ – এর বাস্তবায়নে গৃহীত প্রতিটি পদক্ষেপ আগামী দিনে পরিবেশগত প্রশ্নে বিশ্বের সুরক্ষায় বর্ম হিসেবে কাজ করবে। এই অভিযানকে কেন্দ্র করে চিন্তাভাবনা নিয়ে একটি সংকলন আজ প্রকাশ করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি যে, পরিবেশ-বান্ধব উন্নয়ন কর্মসূচি আগামী দিনে আরও জোরদার হবে। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আমি আরও একবার সকলকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
ধন্যবাদ!

(প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি হিন্দিতে ছিল)


AC/AC/SB


(Release ID: 1946780) Visitor Counter : 192