প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপনের সমাপ্তি অনুষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 30 JUN 2023 3:13PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ৩০ জুন, ২০২৩

দেশের শিক্ষামন্ত্রী শ্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শ্রী যোগেশ সিং, সমস্ত অধ্যাপক, শিক্ষক এবং আমার তরুণ বন্ধুরা। আপনারা যখন আমাকে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তখনই আমি ঠিক করেছিলাম, আমাকে এখানে আসতেই হবে। এখানে এসে মনে হয়, প্রিয়জনদের মধ্যে এলাম। 

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সবকিছু জানতে ও বুঝতে আমরা এই শতবর্ষের যাত্রাপথ নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র দেখেছি। এই বিশাল ব্যক্তিত্বদের দেখলেই বোঝা যায়, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান কতটা। আমার সামনে এমন কিছু মানুষ বসে আছেন, যাঁদের আমি আমার ছাত্রাবস্থা থেকেই চিনি। তাঁরা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন। আমার মনে হয়েছিল, আমি যদি এখানে আসি তাহলে পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবো। ঠিক তাই হয়েছে। 

বন্ধুরা, 

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো পড়ুয়ার কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল কলেজ ফেস্টে অংশগ্রহণ করা। সে তার নিজের কলেজেই হোক বা অন্য কলেজে। আমার কাছেও এটা তেমনই এক সুযোগ। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি  উপলক্ষ্যে উৎসবের এই আবহে আপনাদের মধ্যে থাকতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। বন্ধুরা, ক্যাম্পাসে আসার সত্যিকারের আনন্দ তখনই হয়, যখন আপনার সঙ্গে আপনার সহকর্মীদের দেখা হয়ে যায়। দুই বন্ধুর যখন দেখা হয়, তারা পাশাপাশি হাঁটে, গল্প করে, ইজরায়েল থেকে শুরু করে চাঁদ পর্যন্ত পৃথিবীর যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করে, কিছুই বাকি থাকে না। আপনি কোন্ সিনেমা দেখেছেন, ওটিটি-র কোন্ সিরিজ ভালো হচ্ছে, ওই রিলটা আপনি দেখেছেন না দেখেননি, আড্ডার এমন হাজারো বিষয় কথাবার্তায় উঠে আসে। সেজন্যই আপনাদের মতোই আমিও দিল্লির মেট্রোতে আমার বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে করতে এখানে এসেছি। কত গল্প আর আকর্ষণীয় তথ্য যে আমি পেলাম, তার ইয়ত্তা নেই। 

বন্ধুরা, 

আজকের অনুষ্ঠান আরও একটা দিক থেকে বিশেষ। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এমন এক সময় তার শতবর্ষ পূরণ করছে, যখন সারা দেশ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে অমৃত মহোৎসবে মেতে উঠেছে। যে কোনো দেশেরই সাফল্যের প্রকৃত প্রতিচ্ছবি হল তার বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ বছরের যাত্রায় বহু ঐতিহাসিক মাইলফলক এসেছে। বহু অধ্যাপক, পড়ুয়া ও অন্য বহু মানুষের জীবন এর সঙ্গে জড়িত। এক দিক থেকে দেখলে, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কেবল একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এ এক আন্দোলন। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিটি মুহূর্তে বেঁচে রয়েছে, প্রতিটি মুহূর্তকে জীবন্ত করে তুলছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। এই ঐতিহাসিক উপলক্ষ্যে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অধ্যাপক ও কর্মী, সব পড়ুয়া ও প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। 

বন্ধুরা,

এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নতুন ও পুরনো ছাত্র ছাত্রীরা একত্রিত হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই কিছু  চিরন্তন বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে চর্চা হবে। নর্থ ক্যাম্পাসের বাসিন্দারা কমলানগর, হাডসন লেন এবং মুখার্জী নগর নিয়ে স্মৃতিচারণ করবে। সাউথ ক্যাম্পাসের বাসিন্দারা কথা বলবেন সত্য নিকেতন নিয়ে। যে বছরেই আপনি স্নাতক হয়ে থাকুন না কেন, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন পড়ুয়ার মধ্যে দেখা হলে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা এইসব জায়গাগুলি নিয়ে কথা বলে যেতে পারেন। এর থেকেই আমার মনে হয়, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় যদি ১০০ বছর ধরে এই আবেগকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে, তাহলে মূল্যবোধকেও বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল মন্ত্র ‘নিষ্ঠা ধৃতি সত্যম’ প্রতিটি পড়ুয়ার জীবনে দিশাপ্রদীপের মতো উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। 

বন্ধুরা,

আমাদের দেশে প্রায়শই বলা হয়:

জ্ঞান-বনেন সুখবন, জ্ঞান-বনেব জীবতি।
জ্ঞান-বনেব শক্তিশালী, তস্মাৎ জ্ঞান-ময়ো ভব।।

এর অর্থ হল যাঁর জ্ঞান আছে তিনিই সুখী, তিনি শক্তিমান। জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তি বিজয়ী হন। তাই ভারতে যখন নালন্দা তক্ষশিলার মতো বিশ্ববিদ্যালয় ছিল তখন ভারত সুখ ও সমৃদ্ধির শীর্ষে ছিল। ভারতে যখন তক্ষশিলার মতো প্রতিষ্ঠান ছিল, ভারত তখন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিশ্বকে পথ দেখিয়েছিল। ভারতের সমৃদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থাই ছিল ভারতের সমৃদ্ধির বাহক।

সেই সময়ে বিশ্বের জিডিপি-তে ভারতের উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল। কিন্তু শত শত বছরের দাসত্ব আমাদের শিক্ষা কেন্দ্রগুলিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সেগুলি ছিল আমাদের শিক্ষার মন্দির। ভারতে মেধার প্রবাহ যখন স্তব্ধ হয়ে গেল, তখন ভারতের বিকাশও স্তব্ধ হল।

দীর্ঘ দাসত্বের পর দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। স্বাধীনতার আবেগকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর ফলে, এমন এক তরুণ প্রজন্মের জন্ম হ’ল যারা সমসাময়িক বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ জানাবার ক্ষমতা রাখে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এই আন্দোলনের এক প্রধান কেন্দ্র ছিল। যে কোর্স নিয়েই পড়ুন না কেন, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পড়ুয়ার উচিত তাদের প্রতিষ্ঠানের শিকড় সম্পর্কে জানা। ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান আমাদের অস্তিত্বকে গঠন করে, আদর্শের ভিত্তি হয় এবং ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করে।

বন্ধুরা, 

ব্যক্তি হোক বা প্রতিষ্ঠান, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা যখন জাতির সংকল্পের সঙ্গে মিলে যায়, তখন তাদের সাফল্যও জাতির সাফল্যের সঙ্গে একাকার হয়ে যায়। এক সময়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মাত্র তিনটি কলেজ ছিল। এখন তা বেড়ে ৯০ এরও বেশি হয়েছে। এক সময়ে ভারতের অর্থনীতি ধুঁকতো, আজ তা বিশ্বের প্রথম পাঁচটি অর্থনীতির মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। আজ দিল্লি বিশ্ববিদ্যাসলয়ে ছাত্রীর সংখ্যা ছাত্রের থেকে বেশি। একইভাবে দেশেও লিঙ্গসাম্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। এরে মানে হ’ল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিকড় যত গভীরে যায়, ততই তা জাতির শাখা-প্রশাখায় সঞ্চারিত হয়। সেজন্যই বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতির ভবিষ্যৎ আশা- আকাঙ্ক্ষার মধ্যে পারস্পরিক যোগ ও সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। 

২৫ বছর পরে দেশ যখন স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন করবে, তখন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় পৌঁছবে ১২৫ বছরে। তখন লক্ষ্য ছিল দেশের স্বাধীনতা অর্জন। আজকের লক্ষ্য হ’ল ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত ভারত গড়ে তোলা। গত শতাব্দীর ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে এর তৃতীয় দশকে স্বাধীনতা আন্দোলনে নতুন গতির সঞ্চার করেছিল। একইভাবে এই শতাব্দীর তৃতীয় দশকে ভারতের উন্নয়ন যাত্রায় নতুন গতির সঞ্চার করতে হবে। বর্তমানে দেশজুড়ে বহু বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ গড়ে উঠছে। সাম্প্রতিককালে আইআইটি, আইআইএম, এনআইটি এবং এইমস-এর মতো প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এই সব প্রতিষ্ঠানই নতুন ভারতের ভিত্তি গড়ে তুলছে। 

বন্ধুরা, 

শিক্ষা কেবল শিক্ষাদানের একটি প্রক্রিয়াই নয়, এটি শেখারও একটি প্রক্রিয়া। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার মূল ভাবনা ছিল পড়ুয়াদের কী শেখানো হবে - তা নিয়ে। আমরা এ থেকে মনোযোগ সরিয়ে ভাবছি, পড়ুয়ারা কী শিখতে চায় – সেই বিষয়ে। সবার সম্মিলিত প্রয়াসে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। ছাত্র ছাত্রীরা এখন নিজেদের পছন্দের বিষয়গুলি বেছে নেওয়ার দুর্দান্ত সুযোগ পাচ্ছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মানোন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা ক্রমাগত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রতিযোগিতামুখী করে তুলতে আমরা জাতীয় প্রাতিষ্ঠানিক র‍্যাঙ্কিং কাঠামো চালু করেছি। এতে দেশজুড়ে প্রতিষ্ঠানগুলি অনুপ্রেরণা পাচ্ছে। আমরা শিক্ষার মানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্তশাসনকে যুক্ত করেছি। যে প্রতিষ্ঠানের কাজ যত ভালো হবে, তাকে তত বেশি স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হবে। 

বন্ধুরা,

শিক্ষা ক্ষেত্রে ভবিষ্যতমুখী নীতি ও সিদ্ধান্তের সুবাদে আজ ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বিশ্বস্তরে স্বীকৃতিলাভ করছে। ২০১৪ সালে যেখানে মাত্র ১২টি ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কিউএস ওয়ার্ল্ড র‍্যাঙ্কিং-এ জায়গা পেয়েছিল, সেখানে আজ এই সংখ্যা বেড়ে ৪৫ হয়েছে। 

আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বিশ্বে তাদের স্বচন্ত্র পরিচয় গড়ে তুলেছে। উন্নত গুণমানের শিক্ষা, শিক্ষক-পড়ুয়া অনুপাত এবং সুনামের দিক থেকে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলি দ্রুত উন্নতি করছে। আর বন্ধুরা, আপনারা কি জানেন, এই সব কিছুর পিছনে কী রয়েছে? এর চালিকা শক্তি ভারতের যুব শক্তি, এই হলে উপস্থিত আমাদের তরুণদের অসীম সম্ভাবনা। 

বন্ধুরা, 

একটা সময় ছিল যখন পড়ুয়ারা কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সময়ে সেখানে চাকরির সুযোগ পাওয়া যায় কি না, সেই বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিতো। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া মানে ডিগ্রী পাওয়া, আর ডিগ্রী পাওয়া মানে চাকরি। শিক্ষা এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু আজকের যুব সমাজ তাদের জীবনকে এই সীমিত ধারণার মধ্যে আবদ্ধ রাখতে চায় না। তারা নতুন কিছু করতে চায়, নিজেদের পথ নিজেরাই তৈরি করে নিতে চায়।

২০১৪ সালের আগে ভারতে মাত্র কয়েকশো স্টার্ট-আপ ছিল। আজ ভারতে স্টার্ট-আপ –এর সঙ্গে ১ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৪-১৫ সালের তুলনায় ৪০ শতাংশেরও বেশি পেটেন্ট নথিবদ্ধ করা হচ্ছে। পেটেন্ট অনুমোদনের সংখ্যাও ৫ গুণ বেড়েছে। বিশ্ব উদ্ভাবনী সূচকে ভারত ৮১ নম্বরে ছিল, সেখান থেকে এখন ৪৬ নম্বরে উঠে এসেছে। 

আমি কয়েকদিন আগেই আমেরিকা সফর করে ফিরেছি। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন, আজ ভারতের সম্মান ও গর্ব কতটা বেড়েছে। এর কারণ কী? উত্তরটা খুব সোজা। ভারতের সামর্থ্য বেড়েছে এবং ভারতের যুব সমাজ বিশ্বের আস্থা অর্জন করেছে। আমার এই সফরের সময় ভারত ও আমেরিকা একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। যার নাম ইনিশিয়েটিভ অন ক্রিটিক্যাল অ্যান্ড ইমার্জিং টেকনোলজি – আইসিইটি। এই চুক্তির সুবাদে পৃথিবী থেকে মহাকা্শ, সেমিকন্ডাকটর থেকে কৃত্রিম মেধা – বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের তরুণদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে। 

যে প্রযুক্তিগুলি একসময়ে ভারতের নাগালের বাইরে ছিল, আমাদের যুব সমাজ এখন তার নাগাল পাচ্ছে। তাদের দক্ষতা আরও বাড়ানো হবে। মাইক্রন, গুগল, ব্রিটেনের অ্যাপ্লায়েড মেটিরিয়ালসের মতো কোম্পানীগুলি ভারতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বন্ধুরা, ভবিষ্যতে আপনাদের জন্য দুর্দান্ত সুযোগ আপনার দরজায় কড়া নাড়তে চলেছে।

বন্ধুরা, 

শিল্প ৪.০ –র বিপ্লবও এখন আমাদের দোরগোড়ায় এসেছে। কৃত্রিম মেধা এবং অগমেন্টেড রিয়্যালিটি/ভার্চ্যুয়াল রিয়্যালিটি যেসব বিষয় আমরা এতদিন বিজ্ঞান-কল্পকাহিনীর সিনেমায় দেখতাম, তা এখন আমাদের বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা হয়ে উঠেছে। গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে অস্ত্রোপচার – রোবটিক্স এখন নিউ নর্মাল হয়ে উঠেছে। এই সব ক্ষেত্রই ভারতের তরুণ প্রজন্মের জন্য, পড়ুয়াদের জন্য নতুন নতুন পথ তৈরি করছে। সাম্প্রতিককালে ভারত তার মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র খুলে দিয়েছে, ড্রোন সংক্রান্ত নীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। এই সব সিদ্ধান্তই আমাদের দেশের যুব সমাজের সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করছে। 

বন্ধুরা, 

হাজার হাজার তরুণ ও ছাত্র ছাত্রীরা কিভাবে এর থেকে উপকৃত হচ্ছে তা ভারতের উন্নয়ন যাত্রার আরেকটি দিক। আজ বিশ্বের সমস্ত প্রান্তের মানুষ ভারত, ভারতের পরিচয় এবং ভারতের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। করোনা অতিমারির সময়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশ নিজেদের সমস্যা নিয়ে হিমসিম খাচ্ছিল। কিন্তু ভারত শুধু নিজের চাহিদাই পূরণ করেনি, অন্যান্য দেশের দিকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।

সেজন্যই সারা বিশ্ব ভারত সম্পর্কে কৌতুহলী হয়ে ওঠে। তারা জানতে চায়, কী সেই মূল্যবোধ, যা সঙ্কটের সময়েও সেবার প্রেরণা যোগায়। ভারতের ক্রমবর্ধমান সামর্থ্য, জি২০ –র সভাপতিত্ব – এই সবকিছুই সেই কৌতুহলকে বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে মানববিদ্যা নিয়ে যে ছাত্র ছাত্রী পড়াশুনো করেন, তাদের সামনে অসংখ্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সবাই এখন আমাদের যোগ বিদ্যা, সংস্কৃতি, উৎসব, সাহিত্য, ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রথা এমনকি খাবারদাবার নিয়েও আলোচনা করছে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে এগুলি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। তাই ভারতীয় তরুণদের চাহিদা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। সেইসব তরুণ যারা ভারতকে বিশ্বের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারবেন, আমাদের সৃষ্টিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পারবেন। আজ গণতন্ত্র, সাম্য এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার মতো ভারতীয় মূল্যবোধগুলি সর্বজনীনভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। সরকারি ফোরাম থেকে শুরু করে কূটনীতি – ভারতীয় যুব সমাজের সামনে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচুর সুযোগ তৈরি হচ্ছে। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত ক্ষেত্রগুলি দেশের ভিতরেও যুব সমাজের সামনে অসীম সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।

আজ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে আদিবাসী সংগ্রহালয় গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়ে আপনারা স্বাধীন ভারতের উন্নয়ন যাত্রার সম্পূর্ণ ছবি দেখতে পাবেন। আপনারা জেনে খুশী হবেন, দিল্লিতে ‘যুগে যুগীন ভারত’ নামে বিশ্বের বৃহত্তম ঐতিহ্য সংগ্রহালয় গড়ে তোলা হচ্ছে। যেসব তরুণ শিল্প, সংস্কৃতি ও ইতিহাস নিয়ে আগ্রহী – তাঁরা তাঁদের ভালোলাগাকে পেশায় পরিণত করার প্রচুর সুযোগ এখন পাচ্ছেন। একইভাবে ভারতীয় শিক্ষকরাও এখন বিশ্বে তাঁদের এক স্বতন্ত্র পরিচয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমি যখন বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে দেখা করি, তখন তাঁদের অনেকেই অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে ভারতীয় কোনো শিক্ষকের সঙ্গে তাঁদের সংযোগের কথা বলেন।

ভারতের সফট পাওয়ার যুব সমাজের সামনে সাফল্যের এক নতুন পথ খুলে দিতে পারে। এজন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রস্তুত হতে হবে এবং আমাদের নিজেদের মানসিকতাকে প্রস্তুত করতে হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের জন্য সঠিক পথ নির্বাচন করে নিজের লক্ষ্য স্থির করতে হবে। 

আপনারা যখন এই প্রতিষ্ঠানের ১২৫ বছর পূর্তি উদযাপন করবেন, তখন হয়তো এই প্রতিষ্ঠান বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির একটি হয়ে উঠবে। তাই এই লক্ষ্য অর্জনে আপনারা সবাই প্রয়াসী হন। ভবিষ্যতের রূপ দেওয়া উদ্ভাবনগুলি যাতে এখানেই ঘটে এবং বিশ্বের শ্রেষ্ঠ চিন্তাভাবনা ও নেতারা এখান থেকেই আবির্ভূত হয়, সেজন্য আপনাদের নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে।

বন্ধুরা, এত পরিবর্তনের মধ্যেও কিন্তু নিজেদের সম্পূর্ণ পাল্টে ফেলবেন না। কিছু জিনিস যেমন আছে, তেমনই রেখে দিন। নর্থ ক্যাম্পাসের প্যাটেল চেস্টের চা, নুডলস্, সাউথ ক্যাম্পাসের চাণক্যর মোমো – এগুলির স্বাদ যাতে কোনোদিনও না পাল্টায় তা আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে। 

বন্ধুরা, 

আমরা যখন নিজেদের জীবনে কোনো লক্ষ্য স্থির করি, তখন প্রথমে নিজেদের মন ও হৃদয়কে তার জন্য প্রস্তুত করে তুলতে হয়। সেইরকমই কোনো একটি জাতির মন ও হৃদয়কে প্রস্তুত করে তোলার দায়িত্ব তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির। একমাত্র আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির দূরদৃষ্টি ও কাজের মধ্য দিয়েই আমাদের নতুন প্রজন্ম ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠতে পারবে, সামনে আসা চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করার মতো মানসিকতা অর্জন করতে পারবে।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় তার যাত্রায় অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সংকল্পগুলিও পূরণ করবে। ১০০ বছর ধরে যেভাবে আপনারা এই যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন সেভাবেই আরও সামর্থের সঙ্গে, আরও সুন্দরভাবে, আরও স্বপ্ন ও সংকল্পের সঙ্গে, আরও সাফল্যের সঙ্গে আপনারা সামনের পথে এগিয়ে যান। আরও কৃতিত্ব আপনাদের পদচিহ্ন ছুঁয়ে থাকুক, আপনাদের উপর নির্ভর করে জাতিও এগিয়ে চলুক - এই শুভেচ্ছার সঙ্গে আমি আপনাদের সবাইকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।

ধন্যবাদ!

AC/SD/SKD


(Release ID: 1946428) Visitor Counter : 242