প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

প্রধানমন্ত্রী উত্তরপ্রদেশের গোরখপুরে গীতা প্রেসের শতবার্ষিকীর সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছেন

প্রধানমন্ত্রী ছবিতে শিবপুরাণ গ্রন্থের উদ্বোধন করেছেন

প্রধানমন্ত্রী লীলাচিত্র মন্দির দর্শন করেছেন

"গীতা প্রেস শুধুমাত্র একটি ছাপাখানা নয়, এটি জীবন্ত এক আস্থার প্রতীক"

"বাসুদেব সর্বম অর্থাৎ সবকিছুই বাসুদেবের মধ্য থেকে আসা এবং বাসুদেবের মধ্যে থাকা"

"১৯২৩ সালে গীতা প্রেসের মাধ্যমে যে আধ্যাত্মিক জ্যোতি প্রজ্জ্বলিত হয় আজ তা মানব জাতির পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করছে"

"গীতা প্রেস ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করেছে, ভারতের একাত্ম ভাবকে শক্তিশালী করেছে"

"গীতা প্রেস এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের ভাবনার প্রতিনিধি"

"যখন অশুভ শক্তি ও জঙ্গীবাদ শক্তিশালী হয় এবং সত্য বিপদের আধারে নিমজ্জিত হয়, সেই সময় ভাগবত গীতা অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে"

"গীতা প্রেসের মত সংগঠন মানবতার মূল্যবোধ ও আদর্শকে পুনরুজ্জীবিত করে"

"আমরা নতুন এক ভারত গড়ে তুলবো এবং বিশ্বের কল্যাণে আমাদের ভাবনাকে কার্যকর করবো"

Posted On: 07 JUL 2023 5:36PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি,  ৭ জুলাই, ২০২৩


প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ উত্তরপ্রদেশের গোরখপুরে ঐতিহাসিক গীতা প্রেসের শতবার্ষিকী সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি ছবিতে শিবপুরাণ গ্রন্থের উদ্বোধন করেছেন এবং গীতা প্রেস চত্ত্বরে লীলাচিত্র মন্দির দর্শন করেছেন। তিনি ভগবান রামের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদনও করেন।

এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পবিত্র শ্রাবণ মাসে ইন্দ্র দেবের আশীর্বাদ ধন্য হয়ে গোরখপুরে গীতা প্রেসে আসার সৌভাগ্য তাঁর হয়েছে। এই স্থান শিব অবতার গুরু গোরখনাথের আরাধনাস্থল। বহু সাধুর কর্মভূমি হিসেবেও এই স্থান পরিচিত। তাঁর গোরখপুর সফরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, উন্নয়ন এবং ঐতিহ্যের এক আদর্শ উদাহরণ হয়ে উঠেছে তার এই সফর। তিনি জানান এরপর গোরখপুর রেল স্টেশনের পুনরুন্নয়ন প্রকল্পের শিলান্যাস এবং দুটি বন্দেভারত এক্সপ্রেসের যাত্রার সূচনা করবেন। প্রস্তাবিত রেল স্টেশনটির ছবি সাধারণ মানুষের মধ্যে এক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। বন্দেভারত এক্সপ্রেসের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ট্রেন মধ্যবিত্তের সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। অতীতে মন্ত্রীরা তাঁদের অঞ্চলে বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন থামার জন্য চিঠি পাঠাতেন। আর আজ তাঁরা নিজেদের অঞ্চলে বন্দেভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধনের জন্য চিঠি লিখছেন। "বন্দেভারত ট্রেন সকলের মধ্যে উৎসাহের সৃষ্টি করেছে।" আজ যে প্রকল্পগুলি উদ্বোধন ও শিলান্যাস করা হবে, তার জন্য তিনি গোরখপুরের নাগরিকদের অভিনন্দন জানান।  

শ্রী মোদী বলেন, "গীতা প্রেস শুধুমাত্র একটি ছাপাখানা নয়, এটি জীবন্ত এক আস্থার প্রতীক"। কোটি কোটি মানুষের কাছে গীতা প্রেসের দপ্তর একটি আরাধনার স্থল। গীতার মাধ্যমে কৃষ্ণ আসেন, আর এই কৃষ্ণ পরদুঃখকাতরতা এবং কর্মের প্রতীক।  প্রতিটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার সম্বন্ধে জানার আগ্রহ রয়েছে। গীতাকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, "বাসুদেব সর্বম অর্থাৎ সবকিছুই বাসুদেবের মধ্য থেকে আসা এবং বাসুদেবের মধ্যে থাকা"।  

শ্রী মোদী বলেন, ১৯২৩ সালে গীতা প্রেসের মাধ্যমে যে আধ্যাত্মিক জ্যোতি প্রজ্জ্বলিত হয় আজ তা মানব জাতির পথপ্রদর্শক হিসেবে তা কাজ করছে। মানব সেবায় নিয়োজিত এই সংস্থার শতবার্ষিকী উদযাপনের অনুষ্ঠানে অংশ নেবার সুযোগ পেয়ে তিনি আনন্দিত। সরকার গীতা প্রেসকে গান্ধী শান্তি পুরস্কার প্রদান করেছে। এই সংস্থার সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর আবেগ যুক্ত থাকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, কল্যাণ পত্রিকায় লেখা পাঠানোর মধ্য দিয়ে গান্ধীজী এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কল্যাণ পত্রিকায় যাতে কোন বিজ্ঞাপন না বের হয়, তার জন্য গান্ধীজী পরামর্শ দেন। তাঁর সেই পরামর্শ আজও মেনে চলা হচ্ছে। ১০০ বছরের ঐতিহ্যকে স্বীকৃতি দিতে  গান্ধী শান্তি পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে এই সংস্থার প্রতি দেশ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। গত ১০০ বছরে গীতা প্রেস কোটি কোটি পুস্তক প্রকাশ করেছে। যেগুলি বই ছাপানোর থেকেও কম দামে বিক্রি করা হয়েছে। সেই বই লোকের বাড়ির দুয়ারে পৌঁছে দেওয়া হয়। বহু পাঠক এই বই থেকে আধ্যাত্মিক ও বৌদ্ধিক নানা তথ্য পেয়ে থাকেন। এছাড়াও সমাজের জন্য কাজ করার মানসিকতাও বহু মানুষের মধ্যে বই পড়ার মধ্য দিয়ে তৈরি হয়। এই উদ্যোগে যাঁরা প্রচারের আলোয় না থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন, তিনি সেইসব মানুষদের অভিনন্দন জানান। অনুষ্ঠানে শ্রী মোদী শেঠজী জয়দয়াল গোয়াংদতা এবং ভাইজি শ্রী হনুমানপ্রসাদ পোদ্দারের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গীতা প্রেসের মত সংস্থা শুধুমাত্র ধর্মীয় কাজেই যুক্ত নয়, এই সংস্থার একটি জাতীয় চরিত্র রয়েছে। "গীতা প্রেস ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করেছে, ভারতের একাত্ম ভাবকে শক্তিশালী করেছে"। ভারতে গীতা প্রেসের ২০টি শাখা আছে। তাঁকে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। গীতা প্রেসের স্টল দেশের প্রতিটি রেলস্টেশনে দেখা যায়। গীতা প্রেস ১৫টি ভাষায় ১৬০০টি বই প্রকাশ করেছে এবং বিভিন্ন ভাষায় ভারতের মূল ভাবনা তুলে ধরেছে। "গীতা প্রেস এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের ভাবনার প্রতিনিধি"।  

শ্রী মোদী বলেন, যখন সারা দেশ স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন করছে, সেই সময়ে গীতা প্রেসের শতবার্ষিকী উদযাপন নেহাতই কোন সমাপতন নয়। ১৯৪৭ সালের আগে ভারত বিভিন্ন ক্ষেত্রে নবজাগরণ প্রত্যক্ষ করেছে। দেশের আত্মাকে জাগরিত করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সচেষ্ট হয়েছে। ফলস্বরূপ ১৯৪৭ সালে দেশ আত্মা ও মননের দাসত্বের শিকল ভেঙে ফেলতে প্রস্তুত হয়ে ওঠে। গীতা প্রেস স্থাপনেরও এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যুগ যুগ ধরে দাসত্ব ভারতের চেতনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। হাজার বছর আগে বিদেশি হানাদাররা দেশের গ্রন্থাগারগুলি পুড়িয়ে দেয়। "গুরুকুল এবং গুরু পরম্পরা বৃটিশ শাসনে প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়।" অত্যাধিক খরচের জন্য যখন সাধারণ মানুষ বই ছাপাতে পারতেন না, সেই সময় ভারতের পবিত্র গ্রন্থগুলি হারিয়ে যেতে বসে। "আমাদের সমাজ গীতা এবং রামায়ন ছাড়া কিভাবে চলতে পারে? যখন মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের উৎস শুকিয়ে যায়, সেই সময়ে সমাজও থেমে যায়।"

শ্রী মোদী বলেন, যখন অশুভ শক্তি ও জঙ্গীবাদ শক্তিশালী হয় এবং সত্য বিপদের আধারে নিমজ্জিত হয়, সেই সময় ভাগবত গীতা অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে। গীতা উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, যখন কোন ধর্মের মধ্যে সঙ্কট দেখা দেয়, সেই সময় ঈশ্বর পৃথিবীতে আবির্ভূত হন। গীতার দশম অধ্যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিভাবে বিভিন্ন সময়ে ঈশ্বরের আবির্ভাব ঘটেছে। কখনও আবার গীতা প্রেসের মত সংগঠন জন্ম নিয়েছে, যারা মানবতার মূল্যবোধ ও আদর্শকে পুনরুজ্জীবিত করে। ১৯২৩ সালে এই সংগঠন তৈরির হওয়ার পরে মানুষের মধ্যে চেতনা এবং ভাবনার বিকাশ ঘটাতে গীতা প্রেস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি বাড়ির সদস্যদের গীতা সহ আমাদের বিভিন্ন গ্রন্থ ভারতীয় মানসিকতায় ভাবতে সহায়তা করে। "পারিবারিক ঐতিহ্য ও নতুন প্রজন্ম এই বইগুলি নিয়ে পড়াশুনা করে। এই ভাবে বিভিন্ন প্রজন্মের ভিত হয়ে উঠতে পারে পবিত্র এই গ্রন্থগুলি।"  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, "যখন উদ্দেশ্য সঠিক হয়, আপনার মূল্যবোধ নির্ভেজাল থাকে তখন সাফল্য সমার্থক হয়ে ওঠে। গীতা প্রেস তার উদাহরণ।" মানুষকে কর্তব্যের পথ দেখানো এবং সামাজিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে গীতা প্রেসের মত সংগঠনগুলি সাহায্য করে। গঙ্গা নদীর পরিচ্ছন্নতা, যোগ বিজ্ঞান, পতঞ্জলীর যোগসূত্র প্রকাশ করা এবং আয়ুর্বেদের 'আরোগ্য আঁক' যখন আয়ুর্বেদের সঙ্গে যুক্ত হয় তখন 'জীবন চর্চা আঁক' ভারতীয় জীবনযাত্রা সম্পর্কে মানুষকে পরিচিত করায়। এই উদ্যোগগুলি দেশের জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, "সাধুসন্তদের পরিস্থিতির মূল্যায়ন কখনই ব্যর্থ হয়নি, তাঁদের সিদ্ধান্তগুলি কখনই ফাঁকা বুলি ছিল না"। লালকেল্লার প্রাকার থেকে তাঁর প্রদত্ত ভাষণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার অর্থ দাসত্বের মানসিকতা থেকে মুক্ত হওয়া এবং আমাদের ঐতিহ্য সম্পর্কে গর্ব অনুভব করা। আজ দেশ উন্নয়ন ও ঐতিহ্যকে একসঙ্গে নিয়ে চলেছে। একদিকে যেমন ভারত ডিজিটাল প্রযুক্তি তৈরি করছে, অন্যদিকে কাশী করিডোরের পুনরুন্নয়নের কাজ চলেছে। পবিত্র বিশ্বনাথ ধাম স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হচ্ছে। দেশে আন্তর্জাতিক মানের পরিকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি কেদারনাথ এবং মহাকাল মহালোকে তীর্থযাত্রীদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েক শতাব্দীর পর অযোধ্যায় সুবিশাল রাম মন্দির গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে। আজ নৌবাহিনীর নতুন প্রতীক ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের সময়কালের চিহ্ন বহন করছে। রাজপথের নাম পরিবর্তন করে কর্তব্যপথ রাখা হয়েছে। আদিবাসীদের ঐতিহ্যকে সম্মান জানানোর জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হচ্ছে। যার মধ্য দিয়ে আদিবাসী সমাজের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হচ্ছে। প্রাচীন যুগে বিভিন্ন চুরি হওয়া মুর্তি দেশে ফিরিয়ে আনার কাজ চলছে।  

তাঁর ভাষণের শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সাধু সন্ন্যাসীরা উন্নত এবং অধ্যাত্মবাদের পরিপূর্ণ ভারতবর্ষের যে চিত্র তুলে ধরেছেন, তা যে কতটা যথার্থ সেটি আজ বোঝা যাচ্ছে। আজ দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রের উন্নয়নে আমাদের সাধু সন্ন্যাসীদের আধ্যাত্মিকতার শক্তিকে কাজে লাগানো হচ্ছে। "আমরা নতুন এক ভারত গড়ে তুলবো এবং বিশ্বের কল্যাণে আমাদের ভাবনাকে কার্যকর করবো"

অনুষ্ঠানে উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল শ্রীমতী আনন্দীবেন প্যাটেল, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, গোরখপুরের সাংসদ শ্রী রবি কিষাণ, গীতা প্রেসের অছি পরিষদের সাধারণ সচিব শ্রী বিষ্ণুপ্রসাদ চাঁদগোঠিয়া এবং চেয়ারম্যান কেশরাম আগরওয়াল সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
 


CG/CB/AS/ 8  July, 2023... (1,340)



(Release ID: 1938379) Visitor Counter : 139