প্রতিরক্ষামন্ত্রক
জাতীয় নিরাপত্তাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার : জম্মুতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিং
Posted On:
26 JUN 2023 3:32PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২৬ জুন, ২০২৩
জাতীয় নিরাপত্তাই সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এবং সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব, ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। ২৬ জুন, ২০২৩-এ জম্মুতে ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি কনক্লেভ’-এ ভাষণে একথা বলেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিং। তিনি বলেছেন, ভারত গত ৯ বছরে নিরাপত্তা ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের সাক্ষী থেকেছে। তিনি বলেছেন, ২০১৩-১৪-য় ভারতকে দুর্বল ভাবা হত যখন যে কেউ ইচ্ছা করলে সমস্যা তৈরি করতে পারত। কিন্তু আজ যে কোনও সমস্যার মোকাবিলা করতে দেশ সক্ষম।
জাতীয় নিরাপত্তার নীল নকশা সম্পর্কে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর অধীনে সরকার চারটি নির্ণায়ক নীতির ওপর কাজ করছে। সেগুলি হল – নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত লাগতে পারে এমন সবকিছুর মোকাবিলা করা; জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে সবরকম পদক্ষেপ করা; দেশের মধ্যে এমন একটি সুরক্ষার পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যেখানে দেশের অগ্রগতি ঘটাতে সুবিধা হবে, মানুষের জীবন উন্নত হবে এবং তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ হবে এবং বন্ধু দেশগুলির সঙ্গে মিলে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা যেখানে সন্ত্রাসবাদের মতো আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলির মোকাবিলা করা যায় ঐক্যবদ্ধভাবে।
শ্রী রাজনাথ সিং জানান, সেনাবাহিনীকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও প্রযুক্তি দিয়ে সাজাতে চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখা হচ্ছে না যাতে সশস্ত্র বাহিনী সীমান্ত এবং সমুদ্রের নিরাপত্তায় সক্ষম হয়। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে সামনের সারিতে নিয়ে যাওয়া।”
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, “বহুদিন ধরে পাকিস্তান সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি ভাঙবার চেষ্টা করে আসছে। তবে, আমরা ক্ষমতায় আসার পর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করি। আমরা পৃথিবীকে দেখিয়ে দিয়েছি সন্ত্রাসবাদকে কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। এর প্রমাণ উরি এবং পুলওয়ামায় ভারতের ভূমিকা ও সশস্ত্র বাহিনীর শৌর্য। বর্তমানে বেশিরভাগ দেশই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একজোট। মার্কিন রাষ্ট্রপতি শ্রী জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে কিভাবে সন্ত্রাসবাদের ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বের মনোভাবকে পালটাতে পেরেছে।”
শ্রী রাজনাথ সিং বলেন, গত কয়েক বছরে ধারাবাহিক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদীদের নেটওয়ার্ক উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, “সন্ত্রাসবাদের অর্থ যোগান কমেছে। সন্ত্রাসবাদীদের অস্ত্র এবং মাদক সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। সন্ত্রাসবাদীদের দমনের পাশাপাশি যারা গোপনে কাজ করে তাদের নেটওয়ার্কও ভেঙে দেওয়া গেছে।”
জম্মু ও কাশ্মীরে সংবিধানের ৩৭০ অধ্যায় বাতিল প্রসঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মানুষ দেশের মূল প্রবাহের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছেন এবং সেখানে শান্তি এবং প্রগতির নতুন যুগ শুরু হয়েছে।
পাক অধিকৃত কাশ্মীর প্রসঙ্গে শ্রী রাজনাথ সিং বলেন, পাকিস্তান ঐ অঞ্চল অবৈধভাবে দখল করে আছে। তার কোনও অধিকারই নেই। তিনি জানান, ভারতের সংসদে অন্তত তিনটি প্রস্তাব সর্বসম্মতক্রমে পাশ হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে পাক অধিকৃত কাশ্মীর ভারতেরই অঙ্গ।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী চিনের সঙ্গে সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেছেন এটি বোঝাপড়ার অভাবের ফল। তবে চুক্তি এবং প্রোটোকল আছে যার ভিত্তিতে দু’দেশের সেনাবাহিনী সেখানে টহল দেয়। ২০২০-র পূর্ব লাদাখের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চিনের সেনা প্রোটোকল অগ্রাহ্য করে একতরফা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় স্থিতাবস্থার বদল ঘটাতে চেয়েছিল। পিএলএ-এর সেই প্রয়াস প্রতিরোধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর শৌর্য এবং আন্তরিকতার প্রশংসা করেন তিনি।
শ্রী রাজনাথ সিং আরও একবার জানান, সরকার সবসময়ই চায় সীমান্ত সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে মেটাতে। তিনি বলেন, সামরিক এবং কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা চলছে মতভেদ মেটাতে। তিনি দেশকে আশ্বস্ত করে জানান সরকার ভারতের সীমান্ত বিষয়ে কখনও আপোস করবে না। এটি সম্মান ও আত্মমর্যাদার প্রশ্ন। তিনি আরও বলেন, “আমরা কখনও আমাদের সীমান্তের পবিত্রতা নষ্ট হতে দেব না।”
জাতীয় নিরাপত্তা বাড়াতে সরকার গৃহীত পদক্ষেপগুলি ছুঁয়ে যান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী যার মধ্যে রয়েছে সীমান্তে পরিকাঠামো বৃদ্ধি এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ‘আত্মনির্ভরতা অর্জন’। আত্মনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে গৃহীত বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের কথা বলেন তিনি যেমন দেশজকরণের তালিকার বিজ্ঞপ্তি জারি এবং ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা মূলধনের ৭৫ শতাংশই ঘরোয়া শিল্পের জন্য বরাদ্দ করা। তিনি বলেন, “ভারত চায় না আমদানিকৃত অস্ত্রের ওপর নির্ভর করতে। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা তখনই জোরালো হবে যখন আমরা প্রতিরক্ষা উৎপাদনে আত্মনির্ভর হয়ে উঠব। আমাদের লক্ষ্য ‘মেক ইন ইন্ডিয়া, মেক ফর দ্য ওয়ার্ল্ড’। আমাদের প্রয়াসের ফল পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে আমরা ট্যাঙ্ক, বিমানবাহী জাহাজ, ডুবোজাহাজ এবং বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র তৈরি করছি। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ২০১৪-য় রপ্তানির পরিমাণ যেখানে মাত্র ৯০০ কোটি টাকা ছিল তা এখন ১৬ হাজার কোটি টাকা পেরিয়ে গেছে। রপ্তানির পরিমাণ খুব শীঘ্রই ২০ হাজার কোটি টাকাও পেরিয়ে যাবে।”
শ্রী রাজনাথ সিং সরকারের কাঠামোগত সংস্কারের কথাও বলেন যেমন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ নিয়োগ এবং সামরিক বিষয়ক দপ্তর স্থাপন। তিনি জানান, সরকার সবসময়েই সামনের দিকে এগোচ্ছে এবং থিয়েটার কম্যান্ড গড়ার কাজ চলছে। এটি ভবিষ্যতে হবে আরও একটি বৈপ্লবিক সংস্কার।
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের পরিবর্তিত ভাবমূর্তির ওপর আলোকপাত করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাসযোগ্যতার কারণেই বিশ্বে এখন সকলে ভারতের কথা শুনতে চায়।
শ্রী রাজনাথ সিং আমেরিকা ও রাশিয়ার মতো বিশ্বের বৃহৎ শক্তির সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। এই বিশ্বায়নের যুগে ভারতের নিরাপত্তার স্বার্থেই এটি প্রয়োজন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বাভাবিক মিত্র এবং তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও দৃঢ় হয়েছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আরও বলেন, ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে, সেনাবাহিনীর মধ্যে যোগাযোগ বেড়েছে, তথ্য হস্তান্তর ও কৃত্রিম মেধা ক্ষেত্র, সাইবার, মহাকাশ এবং লজিস্টিক্সের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বেড়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে বলেন, দু’দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নতুন যুগে প্রবেশ করেছে।
শ্রী রাজনাথ সিং বিশ্বের সমস্যাগুলির মোকাবিলায় সুসংহত ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “ভারত গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তি। সেজন্য আমাদের বৃহত্তর প্রতিবেশে অন্য দেশের সঙ্গে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়টি জুড়ে দিতে হবে।”
শ্রী রাজনাথ সিং ভারতে যৌথ উদ্যোগে এফ-৪১৪ ফাইটার জেট ইঞ্জিন তৈরি করতে জেনারেল ইলেক্ট্রিক এরোস্পেস এবং হিন্দুস্তান এরোনটিক্স লিমিটেডের চুক্তির কথা বলেন। তিনি বলেন, “এই চুক্তির ফলে আমরা জেট ইঞ্জিন উৎপাদনকারী চতুর্থ দেশ হয়ে উঠব। তেজস বিমানে ভারতে তৈরি এই ইঞ্জিনগুলি জুড়ে দেওয়া হবে।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এমকিউ-৯বি ড্রোন কেনার দর এবং অন্যান্য বিষয়ে জল্পনা-কল্পনা উড়িয়ে দিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জানান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এই দরের সঙ্গে অন্য দেশকে জেনারেল অ্যাটোমিক্স (জিএ) কি দরে বেচে সেটি যাচাই করবে। তিনি আরও জানান, কেনা-বেচা সম্পন্ন হবে বর্তমানে চালু পদ্ধতি মেনেই।
CG/AP/DM/
(Release ID: 1935423)