প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

মার্কিন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রেস বিবৃতি

Posted On: 23 JUN 2023 5:48PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ২৩ জুন, ২০২৩

মহামান্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন; দুদেশের প্রতিনিধিরা; সংবাদমাধ্যমের বন্ধুরা!

নমস্কার!

প্রথমেই আমি প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে তাঁর সুচিন্তিত বক্তব্য এবং ভারত-মার্কিন সম্পর্কের বিষয়ে ইতিবাচক চিন্তাভাবনার জন্য ধন্যবাদ জানাই।

বন্ধুরা,

আজকের দিনটি ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ইতিহাসে এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। আজ আমাদের আলোচনা এবং গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি আমাদের সার্বিক বিশ্বব্যাপী কৌশলগত অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, তাকে নতুন দিকনির্দেশ ও উদ্যম দিয়েছে। 

বন্ধুরা,

ভারত-মার্কিন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারিত্ব শুধু দুই দেশের জন্যই নয়, বিশ্ব অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকা আজ ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। বাণিজ্য সম্পর্কিত বকেয়া সমস্যাগুলি মিটিয়ে নিয়ে আমরা নতুন করে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের কারিগরি সহযোগিতার এক গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো হল আইসিইটি (ইনিশিয়েটিভ ফর ক্রিটিকাল অ্যান্ড ইমার্জিং টেকনোলজিস) অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জন্য উদ্যোগ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেমিকন্ডাক্টর, মহাকাশ, কোয়ান্টাম এবং টেলিকমের মতো ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগিতা সম্প্রসারিত করে আমরা একটি শক্তিশালী ভবিষ্যতমুখী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলছি। মাইক্রোন, গুগল এবং অ্যাপ্লাইড মেটিরিয়ালস-এর মতো মার্কিন সংস্থাগুলির ভারতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত এই ভবিষ্যতমুখী অংশীদারিত্বের প্রতীক।

এই সফরে, অন্য বেশ কিছু মার্কিন সংস্থার সিইও-দের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও আমার হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় আমি ভারতের প্রতি তাঁদের উৎসাহ ও ইতিবাচক মনোভাব অনুভব করেছি। আমাদের কৌশলগত প্রযুক্তি অংশীদারিত্বকে অর্থবহ করে তুলতে সরকার, ব্যবসায়িক মহল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে যে একযোগে কাজ করতে হবে, সেবিষয়ে আমরা সকলেই একমত। দূষণমুক্ত জ্বালানির দিকে এগিয়ে যাওয়ার যে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ভারত ও আমেরিকার রয়েছে, তা বাস্তবায়িত করতে আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর মধ্যে দূষণমুক্ত হাইড্রোজেন, বায়ু শক্তি, ব্যাটারি স্টোরেজ, কার্বন হ্রাস প্রভৃতির মতো ক্ষেত্র রয়েছে।

বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তার মধ্যে বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে হাতে হাত মিলিয়ে নির্ভরযোগ্য নিরাপদ ও নমনীয় সরবরাহশৃঙ্খল ও মূল্যশৃঙ্খল গড়ে তোলার বিষয়েও আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভারত-মার্কিন ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আমাদের পারস্পরিক আস্থা ও অভিন্ন কৌশলগত অগ্রাধিকারের প্রতীক। ক্রেতা-বিক্রেতার পুরনো সম্পর্ককে পেছনে ফেলে আজ আমরা প্রযুক্তি হস্তান্তর, যৌথ উন্নয়ন ও যৌথ উৎপাদনের দিকে এগিয়ে চলেছি। জেনারেল ইলেকট্রিক, ভারতে প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে ইঞ্জিন নির্মাণের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা এক যুগান্তকারী চুক্তি। এতে দুদেশেই নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নতুন আকার পাবে। দুদেশের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত শিল্প ও স্টার্ট আপগুলি এই সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তাদের একত্রে সংযুক্ত করাই আমাদের প্রতিরক্ষা শিল্প সংক্রান্ত পথ নির্দেশিকার মূল উদ্দেশ্য। মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দীর্ঘদিন ধরেই আমরা একে অপরের সহযোগী। “আর্টেমিস অ্যাকর্ডস” –এর মাধ্যমে আমাদের মহাকাশ সহযোগিতা এক যুগান্তকারী উচ্চতায় পৌঁছেছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, ভারত-মার্কিন অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে আকাশও শেষ সীমা নয়।

বন্ধুরা, 

আমাদের সম্পর্কের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হল, দুদেশের মানুষের মধ্যে বন্ধন। বর্তমানে ৪০ লক্ষেরও বেশি ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকার অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। আজ সকালে হোয়াইট হাউসে বিপুল সংখ্যায় ভারতীয় মার্কিনদের উপস্থিতি আবারও বুঝিয়ে দিয়েছে যে, এরাই হলেন আমাদের সম্পর্কের মূল চালিকাশক্তি। এই বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেঙ্গালুরু ও আহমেদাবাদে বাণিজ্য দূতাবাস খোলার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। একইভাবে সিয়াটলে ভারতের একটি বাণিজ্য দূতাবাস খোলা হবে।

বন্ধুরা,

আজকের বৈঠকে আমরা বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা, আমাদের অভিন্ন অগ্রাধিকার। আমরা উভয়েই মনে করি, এই অঞ্চলের উন্নয়ন ও সাফল্য সমগ্র বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কোয়াড অংশীদারদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই অঞ্চলের সমস্ত দেশের সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানোর বিষয়ে আমরা একমত। সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত ও আমেরিকা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলছে। সীমান্তপারের সন্ত্রাস নির্মূল করতে সুসমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আমরা সহমত। কোভিড অতিমারী এবং ইউক্রেনের যুদ্ধে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণের দেশগুলি। এই সমস্যা সমাধানে সমস্ত দেশের ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার বলে আমরা মনে করি। ইউক্রেনের ঘটনাক্রমের শুরু থেকেই ভারত আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে এর সমাধানের উপর জোর দিয়ে এসেছে। শান্তি পুনরুদ্ধারের জন্য যেকোনো প্রয়াস চালাতে আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। জি২০-তে ভারতের সভাপতিত্বে আমরা ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ ধারণার উপর বিশেষ জোর দিয়ে দক্ষিণের দেশগুলির কণ্ঠস্বর তুলে ধরার উপর গুরুত্ব দিচ্ছি। আফ্রিকান ইউনিয়নকে জি২০-র পূর্ণ সদস্য পদ দিতে চেয়ে আমার প্রস্তাবকে সমর্থন করার জন্য আমি প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ধন্যবাদ জানাই।

বন্ধুরা, 

আমাদের যাবতীয় সমন্বিত প্রয়াসের মূল মন্ত্র হল গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা। বিশ্বের দুই বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারত ও আমেরিকা একসঙ্গে বিশ্ব শান্তি, সুস্থিতি ও সমৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। আমি নিশ্চিত যে এই মূল্যবোধের ভিত্তিতে আমরা শুধু দুদেশের মানুষেরই নয়, সারা বিশ্বের আশা আকাঙ্খা পুরণে সমর্থ হব।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন,

আজকের ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য আমি অন্তরের গভীর থেকে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। সারা ভারতবর্ষের সঙ্গে আমিও ব্যক্তিগতভাবে এই বছরের জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে ভারতে আপনাকে স্বাগত জানাতে উন্মুখ হয়ে রয়েছি। প্রেসিডেন্ট যেমন বলেছেন, সেই মতো আমাকে এখন মার্কিন কংগ্রেসে বক্তব্য রাখতে যেতে হবে, তাই আর বেশি সময় না নিয়ে আমি আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করি। আবারও প্রেসিডেন্টকে আমি ধন্যবাদ জানাই। 

CG/SD/SKD/



(Release ID: 1934979) Visitor Counter : 148