প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ

Posted On: 23 JUN 2023 7:17AM by PIB Kolkata

                                                                                                                                                                                         নয়াদিল্লি, ২৩ জুন, ২০২৩
 
মাননীয় স্পিকার,

মাননীয়া ভাইস প্রেসিডেন্ট,

মার্কিন কংগ্রেসের বিশিষ্ট সদস্যবৃন্দ,

ভদ্রমহোদয়া ও ভদ্রমহোদয়গণ,

নমস্কার!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে বক্তব্য রাখা সবসময়ই গর্বের এক বিষয়। দু’বার এই সুযোগ পাওয়া অত্যন্ত ব্যতিক্রমী। এই সম্মান দেওয়ার জন্য আমি ১৪০ কোটি ভারতবাসীর পক্ষ থেকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। ২০১৬ সালে আমি যখন এখানে এসেছিলাম তখন যাঁদের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল বর্তমানে তাঁরা অনেকেই এখানে রয়েছেন। ফলে, পুরনো বন্ধুদের ভালোবাসার অনুভূতি আমার হচ্ছে। নতুন যাঁরা এসেছেন তাঁদের উৎসাহ-উদ্দীপনা আমার নজরে আসছে। ২০১৬ সালে সেনেটর হ্যারি রিড, সেনেটর জন ম্যাকিন, সেনেটর ওরিন হ্যাচ, এলিজা কামিংস,  অ্যালসি হেস্টিংস সহ অনেকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁরা আর আমাদের মধ্যে নেই।

মাননীয় স্পিকার,

সাত বছর আগে এক জুন মাসে আমি এখানে এসেছিলাম যখন হ্যামিলটন সব পুরস্কার নিয়ে নেয়। দোলাচালে থাকা সেই ইতিহাসকে আমরা ফেলে এসেছি। এখন আমরা সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, বর্তমান শতাব্দীতে আমাদের কথা জানাতে এসেছি। সাত বছর আগের গ্রীষ্মের পর বহু পরিবর্তন হয়েছে। আবার অনেক কিছু একই আছে। যেমন ধরুন, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অঙ্গীকার। আমাদের বন্ধুত্ব আরও শক্তিশালী হয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে কৃত্রিম মেধায় যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। একইসঙ্গে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতেরও বহু ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি হয়েছে।

মাননীয় স্পিকার ও বিশিষ্ট সদস্যবৃন্দ,

মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, মানুষের কথা শোনা এবং তাঁদের অনুভূতিকে উপলব্ধি করাই হল গণতন্ত্রের প্রকৃত সৌন্দর্য। এর জন্য অনেক সময়, পরিশ্রম ও উদ্যোগ ব্যয় করতে হয়, অনেকটা পথ হাঁটতে হয়। আজ বৃহস্পতিবারের বিকেলে আপনাদের কারোর কারোর দূরে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু এর মধ্যেও আপনারা আমাকে সময় দিয়েছেন। আমি জানি, এই মাসজুড়ে আপনারা কতটা ব্যস্ত ছিলেন।

মাননীয় স্পিকার, এক প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের নাগরিক হিসেবে একটি জিনিস আমাকে স্বীকার করতেই হয়, তা হল আপনি অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ করে থাকেন। ভালো লাগা, সেটিকে কাজে লাগানো এবং নীতির মধ্যে যে বিরোধ চলে তা আমি ভালই উপলব্ধি করতে পারি। আদর্শ ও নীতির মধ্যে যে বিতর্ক সেটিও আমি বুঝি। কিন্তু আজ যখন ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র – বিশ্বের দুই বৃহৎ গণতন্ত্র একত্রিত হওয়ার আনন্দে মেতে উঠেছে, সেখানে আপনারা সকলে সমবেত হয়েছেন দেখে আমি আনন্দিত। দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে ঐক্যমতের যখন প্রয়োজন হয়, তখন আপনারা সহযোগিতা করেন। ভবিষ্যতেও বিভিন্ন নীতি নিয়ে বিরোধ চলবে, কিন্তু আমরা যখন আমাদের দেশের পক্ষে কথা বলব তখন এক সুরে কথা বলব। আর সেটি আপনারা করে দেখান। এর জন্য অভিনন্দন।

মাননীয় স্পিকার,

মানুষের মধ্যে সমতা বিধানের অনুপ্রেরণাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিত। আপনারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকে সহযোগিতা করেছেন সেটিই আপনাদের ইতিহাস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে তাঁদের সকলকে আপনারা যুক্ত করেছেন। এঁদের মধ্যে অনেকেরই ভারতে শিকড় রয়েছে। কেউ কেউ এখানেও উপস্থিত। আমাকে জানানো হয়েছে, এই সদনের নতুন এক উপাদান ‘সামোসা ককাস’। ভবিষ্যতে এখানে ভারতীয় খাবারের বৈচিত্র্য আরও বৃদ্ধি পাবে সেই আশাই রাখি। মহান মার্কিন ও ভারতীয় ব্যক্তিত্বদের মাধ্যমে গত দু’শতাব্দী ধরে আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছি। মহাত্মা গান্ধী ও মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই। মুক্তি, সাম্য ও ন্যায়বিচারের পক্ষে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁদের এই অবকাশে স্মরণ করি। আজ কংগ্রেস সদস্য জন লুইসকে আমি শ্রদ্ধা জানাই। আরও অনেকের সঙ্গে তিনিও এই কাজে যুক্ত ছিলেন।

মাননীয় স্পিকার,

আমাদের পবিত্র ও অভিন্ন মূল্যবোধ হল গণতন্ত্র। দীর্ঘদিন ধরে এর পরিবর্তন হয়েছে। তবে ইতিহাস থেকে একটি বিষয় খুব পরিষ্কার।

গণতন্ত্র সাম্য ও মর্যাদাকে সমর্থন করে।

গণতন্ত্র বিবাদ ও বিসংবাদকে স্বাগত জানায়।

ভাবনা ও তার প্রকাশকে ডানা মেলতে সাহায্য করাই গণতন্ত্রের সংস্কৃতি।

অতীত থেকেই ভারত এই মূলবোধগুলিকে লালিত করে এসেছে।

গণতন্ত্রের ভাবনার পরিবর্তনের নিরিখে বলা যায়, ভারত হল গণতন্ত্রের জননী।

বহু যুগ আগে আমাদের প্রাচীনতম ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে,

‘একম সৎ বিপ্রা বহুধা বদন্তী’

অর্থাৎ, সত্য একটিই, কিন্তু বিদ্বানরা বিভিন্নভাবে তা প্রকাশ করে থাকেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর প্রাচীনতম গণতন্ত্র আর ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র।

গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের জন্য আমাদের অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে।

একযোগে আমরা বিশ্বকে উন্নত ভবিষ্যৎ উপহার দেব এবং উন্নত এক বিশ্ব ভবিষ্যতকে উপহার দেব।

মাননীয় স্পিকার,

গত বছর ভারত তার স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ উদযাপন করেছে। প্রতিটি মাইলফলকই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। হাজার হাজার বছর নানাভাবে বিদেশি শাসনে থাকার পর আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তারপর ৭৫ বছরের এক গুরুত্বপূর্ণ সফর করেছি। এটি শুধুমাত্র গণতন্ত্রকে উদযাপন করাই নয়, এই উদযাপন বৈচিত্র্যেরও। আমরা যেমন সংবিধান পেয়েছি, একইসঙ্গে সামাজিক ক্ষমতায়নেরও ভাবনায় বিকশিত হয়েছি। আমাদের প্রতিযোগিতামূলক এবং সহযোগিতামূলক এক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো যেমন রয়েছে, পাশাপাশি আমাদের ঐক্য ও সংহতিও আছে।

আমাদের দেশে ২,৫০০টি রাজনৈতিক দল আছে। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন, ২,৫০০। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ২০টি আলাদা আলাদা দল সরকার চালায়। আমাদের সরকারি ভাষা ২২টি। এছাড়াও হাজার হাজার কথ্য ভাষা রয়েছে। কিন্তু আমরা একই সুরে কথা বলি। ১০০ মাইল পেরোলেই আমাদের খাদ্যাভ্যাস বদলে যায়। ধোসা থেকে আলুর পরোটা, শ্রীখন্ড থেকে সন্দেশ – সবগুলিই আমরা দারুণভাবে খাই। বিশ্বের প্রতিটি ধর্মের মানুষ আমাদের দেশে বসবাস করেন এবং আমরা সকলে মিলে একসঙ্গে থাকি।বৈচিত্র্যই হচ্ছে ভারতে জীবনযাপনের স্বাভাবিক পন্থা।

আজ সারা বিশ্ব ভারত সম্পর্কে আরও বেশি করে জানতে চায়। এই সদনেও আমি সেই কৌতুহল প্রত্যক্ষ করেছি। গত এক দশকে আমরা ভারতে কয়েকশ’ মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যদের অভ্যর্থনা জানিয়েছি। তাঁরা সকলেই ভারতের উন্নয়ন, গণতন্ত্র এবং বৈচিত্র্য সম্পর্কে বুঝতে চান। এই মুহূর্তে ভারত কি করছে তা জানতে চান। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কাছে সেই প্রসঙ্গটি আমি জানিয়েছি।

মাননীয় স্পিকার,

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি যখন প্রথম সফর করি তখন বিশ্ব অর্থনীতির নিরিখে ভারতের স্থান ছিল দশম। আজ ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। খুব শীঘ্রই আমরা তৃতীয় স্থানে উন্নীত হব। আমাদের অর্থনীতি দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতের যখন উন্নয়ন হয়, তখন সারা বিশ্বেরও উন্নয়ন হয় কারণ, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-ষষ্ঠাংশ ভারতবাসী। গত শতাব্দীতে ভারত যখন স্বাধীনতা লাভ করেছে সেই সময় বিশ্বের অনেক দেশই ঔপনিবেশিক শাসন থেকে নিজেদের মুক্ত করার অনুপ্রেরণা পেয়েছে। এই শতাব্দীতে ভারত উন্নয়নের এক লক্ষ্যমাত্রা যখন স্থির করেছে, তখন অন্য দেশগুলিও একইভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছে। আমাদের নীতি হল ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াস’ অর্থাৎ, একযোগে আমরা সকলের উন্নতিসাধন করব যেখানে প্রত্যেকের উদ্যোগ ও বিশ্বাস জড়িয়ে রয়েছে।

কিভাবে এই ভাবনাটিকে আমরা দ্রুততার সঙ্গে কাজে লাগাচ্ছি সে সম্পর্কে আপনাদের একটু বলি। আমরা পরিকাঠামোর উন্নয়নকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা ১৫ কোটির বেশি মানুষকে ৪ কোটি বাড়ি বানিয়ে দিয়েছি। এই সংখ্যা অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যার ছয়গুণ। বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা নিশ্চিত করার জন্য আমরা একটি জাতীয় স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প চালাই যার সুবিধা পান ৫০ কোটি মানুষ। এই সংখ্যা দক্ষিণ আমেরিকার মোট জনসংখ্যার থেকেও বেশি। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি প্রক্রিয়ায় যাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল না, আমরা তাঁদের অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছি। এই প্রকল্পেও ৫০ কোটি মানুষ উপকৃত হয়েছেন।

এটি উত্তর আমেরিকার মোট জনসংখ্যার কাছাকাছি। ডিজিটাল ইন্ডিয়া গড়ে তোলার কাজে আমরা উদ্যোগী হয়েছি। আজ ভারতে ৮৫ কোটি মানুষ স্মার্ট ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এই সংখ্যা ইউরোপের জনসংখ্যার চাইতেও বেশি! আমরা ২২০ কোটি কোভিড টিকার ডোজ বিনামূল্যে দেশবাসীকে দিয়েছি। এভাবে উদাহরণ দিতে থাকলে আমি কোনও মহাদেশই  হয়তো আর খুঁজে পাব না, তাই আমি এখানে থামছি।

মাননীয় সদস্যবৃন্দ,

বিশ্বের প্রাচীনতম ধর্মগ্রন্থ বেদ। বেদ হল মানবজাতির এক রত্নসম্পদ যা হাজার হাজার বছর আগে রচিত। সেই সময় বেদ-এর অনেক শ্লোক মহিলা সন্ন্যাসীরাও রচনা করেছেন। আর আজ আধুনিক ভারতে মহিলারা উন্নত এক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শুধুমাত্র মহিলাদেরই উপকার হবে, এ ধরনের উন্নয়নে ধারণায় ভারত বিশ্বাসী নয়। আমরা চাই মহিলাদের নেতৃত্বে উন্নয়ন হবে, যেখানে উন্নয়ন যাত্রায় মহিলারা সামনের সারিতে থাকবেন। আজ আমাদের রাষ্ট্রের প্রধান এমন এক মহিলা যিনি অতি সাধারণ এক আদিবাসী পরিবার থেকে উঠে এসেছেন।  

বিভিন্ন স্তরে প্রায় ১৫ লক্ষ নির্বাচিত মহিলা স্থানীয় প্রশাসনে আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আজ আমাদের দেশে মহিলারা সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীতে কাজ করছেন। শতাংশের হিসেবে বিশ্বের সবথেকে বেশি মহিলা বিমানচালকই হলেন ভারতীয়। আমাদের মঙ্গল অভিযানেও তাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমি বিশ্বাস করি, একটি কন্যাশিশু সারা পরিবারের মানোন্নয়ন ঘটাবে। মহিলাদের ক্ষমতায়নের মধ্য দিয়ে দেশের পরিবর্তন সাধিত হবে।

মাননীয় স্পিকার,

ভারত তারুণ্যে ভরপুর প্রাচীন এক দেশ, যে দেশ তার ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত। আমাদের যুব সম্প্রদায় দেশকে প্রযুক্তির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলছেন। আর্থিক লেনদেন, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, মেশিন লার্নিং, মোবাইল অ্যাপ তৈরি, ফিনটেক অথবা ডেটা সায়েন্সে ভারতের যুব সম্প্রদায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কিভাবে একটি সমাজ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সুবিধাকে কাজে লাগাতে পারে তার আদর্শ উদাহরণ হয়ে উঠেছি আমরা। ভারতে প্রযুক্তি শুধুমাত্র উদ্ভাবনের কাজেই ব্যবহার হয় না, এর মাধ্যমে সমাজের অন্তর্ভুক্তির কাজও চলে। আজ ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে রক্ষা করে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলি মানুষের অধিকার ও মর্যাদাকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে।  

গত ৯ বছর ধরে ১০০ কোটির বেশি মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও মোবাইল নম্বরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করার ফলে অনন্য এক ডিজিটাল বায়োমেট্রিক পদ্ধতির সূচনা হয়েছে। এই পরিকাঠামো গড়ে ওঠায় মুহূর্তের মধ্যে আমাদের নাগরিকরা প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকেন। ৮৫ কোটি মানুষ তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নানা ধরনের আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন। কোটি কোটি কৃষকের অ্যাকাউন্টে বছরে তিনবার শুধুমাত্র একটি বোতাম টিপে টাকা পাঠানো হচ্ছে। এই ধরনের আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ ৩২ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু এই পদ্ধতিতে আমরা ২,৫০০ কোটি ডলার সাশ্রয় করেছি। আপনারা যদি ভারত সফর করেন তাহলে দেখবেন, সেখানে প্রত্যেকেই ফোনের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন চালাচ্ছেন। রাস্তার হকাররাও এখন এভাবেই টাকা-পয়সার লেনদেন করেন।

গত বছর সারা বিশ্বে প্রতি ১০০টি ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনের মধ্যে ৪৬টিই ভারতে হয়েছে। প্রায় ৪ লক্ষ মাইল অপটিক্যাল ফাইবার বসানো হয়েছে, সস্তায় ডেটা পরিষেবা দেওয়ার ফলে বহু মানুষ উপকৃত। কৃষকরা সহজেই আবহাওয়া সম্পর্কে তথ্য পাচ্ছেন। প্রবীণ নাগরিকরা তাঁদের সামাজিক সুরক্ষা খাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা এর মাধ্যমে পেয়ে থাকেন। ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন বৃত্তির সুযোগ পাচ্ছেন। চিকিৎসকরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে টেলি-মেডিসিনের সুবিধা মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। মৎস্যজীবীরা কোথায় মাছ পাওয়া যাবে, কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কিভাবে ঋণ পাবেন তাও তাঁদের ফোনের সাহায্যেই জানতে পারছেন। গণতন্ত্রের ভাবনা, সমন্বয় এবং স্থিতিশীলতা আজ সর্বত্র অনুভূত। এর মধ্য দিয়ে সারা পৃথিবীর কাছে আমাদের পরিচিতিও নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আমাদের এই গ্রহের প্রতি কর্তব্য ভারতে ক্রমশ বাড়ছে।

আমরা বিশ্বাস করি, পৃথিবী আমাদের জননী এবং আমরা তার সন্তান।

ভারতীয় সংস্কৃতি পরিবেশ এবং আমাদের গ্রহকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করা শেখায়। দ্রুততম অর্থনৈতিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পাশাপাশি আমরা সৌরশক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা প্রায় ২,৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছি। হ্যাঁ, আপনারা ঠিকই শুনেছেন, ২,৩০০ শতাংশ!

জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত রাষ্ট্রগুলির মধ্যে আমরা একমাত্র দেশ যারা প্যারিস অঙ্গীকারকে বাস্তবায়িত করেছি। আমাদের মোট জ্বালানির ৪০ শতাংশের বেশি বর্তমানে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি থেকে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, ২০৩০ সালের আগেই আমরা এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছি। কিন্তু আমরা এখানেই থেমে থাকিনি। গ্লাসগো সম্মেলনে আমরা পরিবেশের জন্য জীবনচর্যা অর্থাৎ, ‘মিশন লাইফ’-এর প্রস্তাব করেছি। স্থিতিশীল এক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে যা জন-আন্দোলনের রূপ নেবে অর্থাৎ, এ কাজে শুধুমাত্র সরকারকে যুক্ত করা হবে না।

প্রত্যেক নাগরিক তাঁর নিজের পছন্দমতো জিনিস বাছাই করে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করতে পারে। সুস্থায়ী এক ব্যবস্থাপনাকে জন-আন্দোলনে রূপ দেওয়ার মধ্য দিয়ে পৃথিবীর কার্বন নিঃসরণকে শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে এগিয়ে যাবে। আমাদের উদ্দেশ্য হল পৃথিবী-বান্ধব উন্নয়ন, সমৃদ্ধি এবং পৃথিবীর কল্যাণে মানুষ যাতে ভাবনাচিন্তা করেন তা নিশ্চিত করা।

মাননীয় স্পিকার,

আমরা ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ ভাবনায় বিশ্বাসী অর্থাৎ, ‘এক বিশ্ব এক পরিবার’। বিশ্বের প্রতিটি মানুষ যাতে উপকৃত হন সেভাবেই আমরা আমাদের কাজ করি। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানি পৌঁছে দিতে ‘এক সূর্য, এক পৃথিবী, এক গ্রিড’ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ‘এক বিশ্ব, এক স্বাস্থ্য’ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণী উন্নতমানের স্বাস্থ্য পরিষেবা পাবেন, এই ভাবনায় আমরা বিশ্বাসী।

একইভাবে যখন আমরা জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতিত্বের দায়িত্ব পালন করছি তখন ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ ভাবনায় এগিয়ে চলেছি। আমরা যোগাভ্যাসের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর মধ্যে ঐক্যভাব গড়ে তুলতে চাই। গতকালই সারা পৃথিবী জুড়ে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উদযাপিত হয়েছে। মাত্র এক সপ্তাহ আগে শান্তিরক্ষী বাহিনীর শহীদ সদস্যদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাষ্ট্রসঙ্ঘে স্মারক প্রাচীর গড়ে তোলার যে প্রস্তাব আমরা দিয়েছিলাম, সব দেশ তাকে স্বাগত জানিয়েছে।

এ বছর সারা বিশ্ব আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ পালন করছে। এর মধ্য দিয়ে সুস্থায়ী কৃষি ও পুষ্টির দিকটিকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। কোভিডের সময় আমরা ১৫০টির বেশি দেশে ওষুধ ও টিকা সরবরাহ করেছি। বিপর্যয়ের সম্মুখীন নানা দেশে প্রথম আমরাই ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে দল পাঠিয়ে থাকি। যাঁদের প্রয়োজন বেশি তাঁদেরই আমরা আমাদের সীমিত সম্পদের মাধ্যমে সহায়তা করেছি। আমরা পরনির্ভরতা নয়, দক্ষতা গড়ে তুলতে উদ্যোগী।

মাননীয় স্পিকার,

যখন আমি সারা বিশ্বের প্রতি ভারতের ভাবনার কথা উল্লেখ করি তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেখানে বিশেষ একটি স্থান অধিকার করে। আমি জানি, আমাদের দু’দেশের সম্পর্ক আপনাদের সকলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কংগ্রেসের প্রতিটি সদস্যের এ বিষয়ে আগ্রহ আছে। ভারতের প্রতিরক্ষা ও এরোস্পেস শিল্পের যখন বিকাশ ঘটে, তখন ওয়াশিংটন, অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, অ্যালাবামা, সাউথ ক্যারোলিনা ও পেনসিলভ্যানিয়াতেও তার ইতিবাচক প্রভাব নজরে আসে। ভারতীয়রা যখন বেশি বিমানযাত্রা করেন, তখন একটি বিমান কেনার বরাত দিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪টি রাজ্যে ১ লক্ষের বেশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়।

যখন কোনও মার্কিন ফোন নির্মাতা সংস্থা ভারতে বিনিয়োগ করে, তখন উভয় দেশেই কর্মসংস্থান ও সুযোগ তৈরি হয়। সেমি-কন্ডাক্টর এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ নিয়ে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একযোগে কাজ শুরু করলে সারা বিশ্বের সরবরাহ শৃঙ্খল আরও বেশি প্রাণবন্ত ও ভরসাযোগ্য হয়ে ওঠে। মাননীয় স্পিকার, বাস্তবিকই আমরা গত শতাব্দীতেও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রশ্নে কোনও উদ্যোগ নিইনি। আর আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠেছে। আজ ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশ এবং সমুদ্র, বিজ্ঞান এবং সেমি-কন্ডাক্টর, স্টার্ট-আপ এবং সুস্থায়ী উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং প্রযুক্তি, কৃষিকাজ এবং অর্থনীতি, শিল্পকলা এবং কৃত্রিম মেধা, জ্বালানি এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তার প্রশ্নে একযোগে কাজ করে চলেছে।

আমি আরও বলতে পারি, কিন্তু এক কথায় বলা যায় আমাদের সহযোগিতার সুযোগ সীমাহীন।

আমাদের একযোগে কাজ করার সম্ভাবনা অন্তহীন।

আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিকভাবেই সৌহার্দ্যপূর্ণ।

এক্ষেত্রে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শুধুমাত্র শব্দের বানান করাই নয়, প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারতীয়রা তাঁদের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। মননে, প্রতিভায়, দক্ষতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের প্রতি তাঁদের ভালোবাসার মধ্য দিয়ে তাঁরা আমাদের মধ্যে এক সেতুবন্ধের রচনা করেছেন। বিভিন্ন সম্ভাবনাকে তাঁরা আমাদের সামনে হাজির করেছেন। আমাদের অংশীদারিত্বের সম্ভাবনাকে তাঁরা তুলে ধরেছেন।

মাননীয় স্পিকার, বিশিষ্ট সদস্যবৃন্দ,

অতীতের প্রতিটি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মার্কিন রাষ্ট্রপতি আমাদের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে তুলতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম সেই সম্পর্ককে আরও গভীর করতে  সফল হয়েছে। রাষ্ট্রপতি বাইডেনের সঙ্গে সহমত পোষণ করে আমি বলতে পারি, এই শতাব্দীর এটি সেরা অংশীদারিত্ব কারণ, এই অংশীদারিত্ব অনেক কিছুই বাস্তবায়িত করতে সাহায্য করছে। গণতন্ত্র ও জনবিন্যাস বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছতে সহায়ক হবে। বিশ্বায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব হল আমাদের সরবরাহ শৃঙ্খলের প্রতি বাড়তি নির্ভরতা।   

একযোগে আমরা এই সরবরাহ শৃঙ্খলের বিকেন্দ্রিকরণ এবং তার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে কাজ করবো। প্রযুক্তি একবিংশ শতাব্দীতে নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি এবং নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করবে। আর তাই, আমরা দুই দেশ ‘গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জন্য উদ্যোগ’ নেওয়ার ক্ষেত্রে উদ্যোগী হয়েছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে আমাদের অংশীদারিত্ব মানবজাতির জন্য সহায়ক হবে এবং জলবায়ু পরিবর্তন, ক্ষুধা দূরীকরণ ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে যা সাহায্য করবে।

মাননীয় স্পিকার এবং বিশিষ্ট সদস্যবৃন্দ,

গত কয়েক বছর ধরে আমরা উদ্বেগজনক বিভিন্ন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি। ইউক্রেন সংঘাতের মধ্য দিয়ে ইউরোপে যুদ্ধ ফিরে এসেছে। ঐ অঞ্চলের মানুষ গভীর সমস্যায় পড়েছেন।  এই সংঘাতে শক্তিধর দেশগুলি যুক্ত হওয়ায় এর ফল হয়েছে মারাত্মক। গ্লোবাল সাউথ অর্থাৎ, উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলি বিশেষভাবে এই নেতিবাচক পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সনদ অনুযায়ী যে কোনও বিবাদের শান্তিপূর্ণ মীমাংসার জন্য সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার নীতি মেনে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

আমি সর্বসমক্ষে বলেছি, এখন যুদ্ধের সময় নয়। কূটনৈতিক পদ্ধতিতে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে হবে। রক্তপাত ও সাধারণ মানুষের দুর্দশা মোচনের জন্য যা যা করণীয় আমাদের সকলকে তা করতে হবে। মাননীয় অধ্যক্ষ, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সংঘাতের কালো ছায়া ঘনিয়ে উঠেছে। ঐ অঞ্চলের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার প্রশ্নে আমাদের অংশীদারিত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

একটি মুক্ত ও সমন্বিত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গড়ে তোলাই আমাদের উদ্দেশ্য। এখানে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সমুদ্রযাত্রাকে নিরাপদ করে তুলতে হবে। আসিয়ান গোষ্ঠীর নেতৃত্বে   এই অঞ্চলের ছোট-বড় সমস্ত রাষ্ট্র তাদের পছন্দ অনুযায়ী উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে। যে উন্নয়নযাত্রায় ঋণের বোঝা থাকবে না, যেখানে কৌশলগত কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হবে না, সব দেশ উন্নয়নযাত্রায় সামিল হবে।

একটি সহযোগিতামূলক পরিবেশ গড়ে তুলতে শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে আমরা কাউকে বাদ দিয়ে চলব না। আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে আমরা একযোগে কাজ করব। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে আমাদের অংশীদারদের যুক্ত করব। এক্ষেত্রে ঐ অঞ্চলে কোয়াড একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠেছে।  

মাননীয় স্পিকার,

৯/১১-র পর দু’দশকেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। মুম্বাইয়ে ২৬/১১ হানার পর এক দশক পেরিয়ে গেছে। কিন্তু সারা বিশ্বের কাছে মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদ এখনও বিরাট এক ঝুঁকি।  এরা নতুন নতুন পরিচয়ে আত্মপ্রকাশ করছে, কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য একই রয়েছে। সন্ত্রাসবাদ মানবজাতির বড় শত্রু। এই সমস্যার সমাধানে কোনরকমের দ্বিধাদ্বন্ধ থাকা উচিত নয়। এই ধরনের শক্তিকে যারা উৎসাহ যোগায় এবং জঙ্গীবাদকে যারা রপ্তানি করে তাদের সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

মাননীয় স্পিকার,

মানবজাতির জন্য কোভিড-১৯ যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল। সারা বিশ্ব এর ফলে ক্ষতির সম্মুখীন। কোভিডের কারণে কংগ্রেস সদস্য রন রাইট সহ যেসব কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের এই অবকাশে স্মরণ করি। আমরা এই মহামারী থেকে বেরিয়ে এসেছি। এখন নতুন এক বিশ্ব আমাদের গড়ে তুলতে হবে। এই সময়ে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করা, সকলের খেয়াল রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়নশীল দেশগুলিকে এক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে। এই কারণে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আফ্রিকান ইউনিয়নকে জি-২০ গোষ্ঠীর পূর্ণ সদস্য করা উচিত।  

আরও ভালো সম্পদ ও প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে আমাদের বহুস্তরীয় সংগঠনগুলির সংস্কারের প্রয়োজন। সমস্ত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলির প্রশাসনিক ক্ষেত্রে যা কার্যকর হওয়া দরকার, বিশেষ করে, রাষ্ট্রসঙ্ঘে। সারা বিশ্বে যখন পরিবর্তন আসছে, আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলিরও তখন পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। তা না হলে নিয়ম না মেনে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টির একটা ঝুঁকি থেকেই যায়। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে নতুন এক বিশ্ব গড়ে তুলতে হবে যেখানে আমাদের দুই দেশ অংশীদার হিসেবে সামনের সারিতে থাকবে।  
 
মাননীয় স্পিকার এবং বিশিষ্ট সদস্যবৃন্দ,

আজ আমাদের সম্পর্কের যে নতুন প্রভাত সূচিত হয়েছে তার মাধ্যমে আমাদের দুই দেশের ভবিষ্যৎই নির্ধারিত হবে না, সারা বিশ্বের ভবিষ্যৎও এর মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। তরুণ মার্কিন কবি আমান্ডা গোড়ম্যান বলেছেন -

“দিনের যখন সূচনা হয় আমরা তখন ছায়া থেকে বেরিয়ে আসি,
দ্বিধাহীন ও ভয়শূন্য হয়ে,
নতুন প্রভাতকে আমরা মুক্ত করি।
সব সময়ই যা আলোকিত,
শুধু আমাদের দেখার সাহস থাকতে হবে।”

আমাদের ভরসাযোগ্য অংশীদারিত্ব হল এই নতুন প্রভাতের সূর্যের মতো যা সর্বত্র আলোর পরশ ছড়িয়ে দেয়। আমার স্বরচিত এক কবিতার কথা মনে পড়ছে :

“মাথা উঁচু করে আকাশে
ঘন মেঘকে ছিন্ন করে
আলোকিত করার সঙ্কল্পে
সূর্যের সদ্য উদয় হয়েছে।
এক দৃঢ় সঙ্কল্পকে হাতিয়ার করে
সব ধরনের বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে
ঘোর অন্ধকারকে দূর করতে
সূর্যের সদ্য উদয় হয়েছে।।”

মাননীয় স্পিকার এবং বিশিষ্ট সদস্যবৃন্দ,

আমরা আলাদা আলাদা প্রেক্ষাপট ও ইতিহাস থেকে এসেছি, কিন্তু আমাদের লক্ষ্য অভিন্ন, গন্তব্য এক। যখন আমাদের অংশীদারিত্ব শক্তিশালী হয়, তখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আসে, উদ্ভাবনমূলক উদ্যোগ বৃদ্ধি পায়, বিজ্ঞান বিকশিত হয়, মানবজাতি উপকৃত হয়, আকাশ ও সমুদ্র আরও নিরাপদ হয়ে ওঠে। এর মাধ্যমে গণতন্ত্রের আরও বিকাশ হবে। সারা বিশ্ব সুন্দর হয়ে উঠবে।

আমাদের অংশীদারিত্বের এটিই লক্ষ্য। এই শতাব্দীর জন্য এটিই আমাদের বার্তা। মাননীয় স্পিকার এবং বিশিষ্ট সদস্যবৃন্দ, আমাদের অংশীদারিত্ব আরও শক্তিশালী হয়ে উঠলে এই সফর এক ইতিবাচক পরিবর্তনের সাক্ষী হয়ে থাকবে। গণতন্ত্রের গুরুত্ব আমাদের একযোগে বোঝাতে হবে। ভারত-মার্কিন অংশীদারিত্বে আপনাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে আমি আশাবাদী।

২০১৬ সালে যখন আমি এসেছিলাম সেই সময় বলেছিলাম, “এক গতিময় ভবিষ্যতের জন্য আমাদের অংশীদারিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” সেই ভবিষ্যৎ আজ বাস্তবায়িত। মাননীয় স্পিকার, মাননীয়া ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বিশিষ্ট সদস্যবৃন্দ, এই সম্মান দেওয়ার জন্য আরও একবার আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।

ঈশ্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মঙ্গল করুন।

জয় হিন্দ।

ভারত-মার্কিন সৌহার্দ্য দীর্ঘজীবী হোক।


CG/CB/DM/



(Release ID: 1934812) Visitor Counter : 324