প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

জাতীয় প্রযুক্তি দিবস ২০২৩ উপলক্ষে নতুন দিল্লিতে ১১ই মে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী

Posted On: 11 MAY 2023 12:57PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি,  ১১  মে, ২০২৩

 

নতুন দিল্লির প্রগতি ময়দানে আজ জাতীয় প্রযুক্তি দিবস ২০২৩ উপলক্ষে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। এই অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে জাতীয় প্রযুক্তি দিবসের ২৫ বছর উদযাপনের সূচনা হয়। চলবে ১৪ই মে পর্যন্ত। এই উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী দেশের বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত ৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকারও বেশি নানাবিধ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন। দেশের বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করতে প্রধানমন্ত্রীর আত্মনির্ভর ভারতের দিশার সঙ্গে এগুলি সঙ্গতিপূর্ণ।

যে সমস্ত প্রকল্পের আজ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হল সেগুলির মধ্যে রয়েছে লেসার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েব অবজারভেটরি- ইন্ডিয়া (এলআইজিও-ইন্ডিয়া)। ওড়িশার জাতনিতে হোমি ভাবা ক্যান্সার হাসপাতাল এবং গবেষণা কেন্দ্র, মুম্বাই-এ টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের প্ল্যাটিনাম জুবলি ব্লক প্রভৃতি।

যে সমস্ত প্রকল্পগুলি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করা হল তার মধ্যে রয়েছে মুম্বাইয়ে ফিসন মলিবডেনাম-৯৯ প্রোডাকশন ফিসিলিটি, বিশাখাপত্তনমে রেয়ার আর্থ পারমানেন্ট ম্যাগনেট প্ল্যান্ট, নবি মুম্বাইয়ে ন্যাশনাল হ্যাড্রন বিম থেরাপি ফিসিলিটি, রেডিওলজিক্যাল রিসার্চ ইউনিট, বিশাখাপত্তনমে হোমি ভাবা ক্যান্সার হাসপাতাল এবং গবেষণা কেন্দ্র এবং নবি মুম্বাইয়ে মহিলা ও শিশুর ক্যান্সার হাসপাতাল বিল্ডিং।

এই অনুষ্ঠানে ভারতে সাম্প্রতিক অতীতে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যে উন্নতি হয়েছে তা তুলে ধরে একটি এক্সপো-র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী এবং তিনি তা ঘুরে দেখেন। এই উপলক্ষ্যে একটি স্মারক ডাক টিকিট ও মুদ্রার আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের ইতিহাসে ১১ই মে সব থেকে এক সম্মানজনক দিন। তিনি বলেন, পোখরান পরমানু বিস্ফোরণের মধ্যে দিয়ে ভারতের বৈজ্ঞানিকরা যে অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছিল এবং দেশবাসীকে গর্বিত করেছিল তা তুলে ধরতেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। তিনি বলেন, ‘আমি কখনই ভুলতে পারবো না সেই অসাধারণ ঘটনা যখন অটলজি ভারতের সফল পরমানু পরীক্ষার ঘোষণা করছেন।’ তিনি বলেন পোখরান পরমানু পরীক্ষা ভারতের বৈজ্ঞানিক সক্ষমতার প্রসারেই কেবল যে সাহায্য করেছে তা নয়, দেশকে বিশ্বস্তরে এক উজ্জীবিত শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অটলজির কথায় “আমরা আমাদের যাত্রার কখনও বিরতি দিইনি এবং কোনোদিন আমাদের চলার পথে কোনো চ্যালেঞ্জের কাছে আত্মসমর্পণ করিনি।” জাতীয় প্রযুক্তি দিবস উপলক্ষে প্রত্যেক নাগরিককে প্রধানমন্ত্রী তাঁর শুভেচ্ছা জানান।

আজকের যে সমস্ত প্রকল্পের উদ্বোধন হল সেগুলিকে ভবিষ্যৎদর্শী প্রকল্প হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মুম্বাইয়ে ন্যাশনাল হ্যাড্রন বিম থেরাপি ফিসিলিটি, রেডিওলজিক্যাল রিসার্চ ইউনিট, বিশাখাপত্তনমে ফিসন মলিবডেনাম-৯৯ প্রোডাকশন ফিসিলিটি, রেয়ার আর্থ পারমানেন্ট ম্যাগনেট প্ল্যান্ট, এর পাশাপাশি বিভিন্ন ক্যান্সার গবেষণা হাসপাতাল দেশের অগ্রগতিকে পরমানু প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও প্রসারিত করবে। এলআইজি ও ইন্ডিয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এলআইজি-ও একবিংশ শতাব্দীর প্রথম সারির বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উদ্যোগ বিজ্ঞানের ছাত্র এবং গবেষকদের সামনে এই মানমন্দির নতুন সম্ভাবনার সুযোগ নিয়ে আসবে বলে তিনি জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪৭-এর লক্ষ্যকে সামনে রেখে অমৃতকালের এই প্রারম্ভিক পর্বে আমাদের সামনে লক্ষ্য স্পষ্ট। আমাদের দেশকে বিকশিত এবং আত্মনির্ভর করে তুলতে হবে। উদ্ভাবন, বৃদ্ধি এবং সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিমন্ডল গড়ে তোলার গুরুত্বের কথা বলেন তিনি। প্রতিটি পদক্ষেপে প্রযুক্তির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত এক সর্বাত্মক লক্ষ্য এবং ৩৬০ ডিগ্রি অভিমুখ নিয়ে এই পথে অগ্রসর হচ্ছে। তিনি বলেন, ভারত মনে করে প্রযুক্তি হল দেশের অগ্রগতির ধারক, তা সে তার কতৃত্ব কারুর ওপর চাপিয়ে দেওয়ার জন্য নয়।

‘বিদ্যালয় থেকে স্টার্টআপ তরুণ মনকে উদ্ভাবনের লক্ষ্যে সঞ্জীবিত করা’ আলোচনায় আজকের এই বিষয়ের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের তরুণ এবং শিশুরাই ভারতের ভবিষ্যৎ নির্ণয় করবে। তিনি বলেন, আজকের শিশু এবং তরণদের মধ্যে যে আবেগ, শক্তি এবং সক্ষমতা রয়েছে তাই হল ভারতের শক্তি। ডঃ এ পি জে আব্দুল কালামকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত একটি জ্ঞান সমাজ হিসেবে বিকশিত হচ্ছে এবং এই লক্ষ্যে শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তিনি বলেন, বিগত ৯ বছরে তরুণ মানুষকে উজ্জীবিত করতে শক্ত ভিত সঞ্চার করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ৭০০ জেলায় ১০ হাজার অটল টিঙ্কারিং ল্যাব-এর উল্লেখ করে বলেন, এগুলি উদ্ভাবনের ধাতৃগৃহ হয়ে উঠবে। এই ল্যাবগুলির ৬০ শতাংশ সরকারি গ্রামীণ স্কুলে রয়েছে। ৭৫ লক্ষেরও বেশি ছাত্রছাত্রী ১২ লক্ষেরও বেশি উদ্ভাবনী প্রকল্প নিয়ে এই অটল টিঙ্কারিং ল্যাব-এ কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যালয় স্তর থেকে তরুণ বিজ্ঞানী হয়ে গড়ে ওঠার এই স্বপ্নকে লালন করতে সকলের সম্মিলিত সহযোগিতা দরকার যাতে তাদের মেধার বিকাশ ঘটতে পারে এবং তারা তাদের চিন্তাধারার রূপায়ণ ঘটাতে পারে। তিনি অটল ইনোভেশন সেন্টারে শত শত স্টার্টআপের উল্লেখ করে বলেন, নব ভারতে এগুলি নতুন পরীক্ষার হিসেবে বিকশিত হয়ে উঠবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের এই উদ্ভাবকরাই আগামীদিনে বিশ্বের উদ্যোগপতি হয়ে উঠবে।

কঠোর পরিশ্রমের গুরুত্ব নিয়ে মহর্ষি পতঞ্জলিকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের পর থেকে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে তা এক বিরাট পরিবর্তন করেছে। স্টার্টআপ ইন্ডিয়া ক্যাম্পেন, ডিজিটাল ইন্ডিয়া, জাতীয় শিক্ষা নীতি ভারতকে নতুন শিখরে প্রতিষ্ঠিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান বইয়ের পাতা থেকে উঠে এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে পেটেন্ট এনে দিচ্ছে। ১০ বছর আগের পেটেন্টের সংখ্যা প্রতি বছর যেখানে ৪ হাজার ছিল আজ তা ৩০ হাজারও ছাপিয়ে গেছে। এই সময়কালের মধ্যে নক্সার নিবন্ধীকরণ ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজারে পৌঁছেছে। ট্রেড মার্ক যেখানে ৭০ হাজারের কম ছিল তা আড়াই লক্ষে ছাপিয়ে গেছে বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত আজ সমস্ত লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এক প্রযুক্তি নেতৃত্বের জায়গা করে নিচ্ছে। প্রযুক্তি উদ্ভাবন কেন্দ্রের সংখ্যা ২০১৪ সালে যেখানে ১৫০এর কাছাকাছি ছিল তা আজকে সাড়ে ৬শো ছাপিয়ে গেছে। তিনি বলেন, বিশ্ব উদ্ভাবনী সূচক তালিকায় ভারত ৮১ স্থান থেকে ৪০তম স্থানে উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের স্টার্টআপের সংখ্যা ১০০ থেকে বেড়ে ১ লক্ষে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম স্টার্টআপ হিসেবে ভারত আত্মপ্রকাশ করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা সময় ছিল যখন ডেবিড ও ক্রেডিট কার্ডকে মর্যাদার প্রতীক হিসেবে দেখা হত এবং তা ছিল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। কিন্তু আজ ইউপিআই এক অত্যন্ত সাধারণ এবং এক সরলীকৃত ব্যবস্থাকে নিয়ে এসেছে। ভারত সর্বাধিক ডেটা ব্যবহারকারী দেশগুলির মধ্যে প্রথম সারিতে। শহরাঞ্চল থেকে গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি। জ্যাম ট্রিনিটি, জেম পোর্টাল, কোউইন পোর্টল, ই ন্যাম প্রযুক্তিকে অন্তর্ভুক্তির এক ধারক হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তির সঠির ব্যবহার সমাজকে নতুন শক্তি দেয়। অনলাইন বার্থ সার্টিফিকেট, ই পাঠশালা এবং দিক্ষা ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, স্কলারশিপ পোর্টাল, মেডিক্যাল চিকিৎসার জন্য ই-সঞ্জীবনী, প্রবীণদের জন্য জীবন প্রমান প্রভৃতি নাগরিকদের প্রতি পদে সুবিধা এনে দিয়েছে। সহজে পাসপোর্ট, ডিজি যাত্রা, ডিজি লকার এই সমস্ত কিছুই জীবনধারনের সাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধিতে এবং সামাজিক ন্যায় বিচার সুনিশ্চিত করতে দৃষ্টান্ত স্বরূপ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃত্রিম মেধা সরঞ্জাম এক নতুন নির্ণায়ক হয়ে উঠতে চলেছে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অমিত সম্ভাবনার সঞ্চার হচ্ছে। ড্রোন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন উদ্ভাবন চিন্তা জায়গা করে নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আই-ক্রিয়েট এবং ডিআরডিও তরুণ বিজ্ঞানী পরীক্ষাগার এই লক্ষ্যে নতুন মাত্রা সংযোজন করছে। এসএসএলভি, পিএসএলভি, অরবিটাল প্ল্যাটফর্মের মতো প্রযুক্তি সমূহ নতুন নির্ণায়ক হিসেবে উঠে আসছে। মহাকাশ ক্ষেত্রে স্টার্টআপ-এর পাশাপাশি প্রবীনদের জন্য নতুন সম্ভাবনার সুযোগ নিয়ে আসছে কোডিং, গেমিং এবং প্রোগ্রামিং-এর মতো অগ্রবর্তী এলাকাগুলিতে।

উদ্ভাবন এবং সুরক্ষার ক্ষেত্রে হ্যাকাথনের গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার হ্যাকাথন সংস্কৃতির প্রসারের নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে যাতে ছাত্রছাত্রীরা নতুন চ্যালেঞ্জের লক্ষ্যে অবতীর্ণ হতে পারে। অটল টিঙ্কারিং ল্যাব থেকে যেসব ছাত্রছাত্রী বেরোচ্ছে তাদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা তৈরি ওপর গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী জানতে চান ‘দেশের বিভিন্ন জায়গায় এমন ১০০টি পরীক্ষাগারকে কী আমরা চিহ্নিত করতে পারি যেগুলি সম্পূর্ণভাবে তরুণ সম্প্রদায় দ্বারা চালিত?’ প্রধানমন্ত্রী স্বচ্ছ জ্বালানী এবং প্রাকৃতিক চাষবাসের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, এক্ষেত্রে গবেষণা এবং প্রযুক্তির প্রসারের প্রয়োজন রয়েছে। ভাষণ শেষে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় প্রযুক্তি সপ্তাহের ওপর আস্থা ব্যক্ত করে বলেন, এই সমস্ত সম্ভাবনাকে রূপদান করতে এটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিং, কেন্দ্রীয় কর্মী, জনঅভিযোগ এবং পেনশন প্রতিমন্ত্রী শ্রী জীতেন্দ্র সিং অন্যদের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

 

PG/AB/NS



(Release ID: 1923560) Visitor Counter : 93