প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

জাতীয় রোজগার মেলায় প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দিয়েছেন

বিভিন্ন সরকারি দপ্তর এবং সংস্থায় নব-নিযুক্তদের ৭১ হাজার নিয়োগপত্র বিতরণ করেছেন

“বর্তমানে ভারত দ্রুততম অর্থনীতি হয়ে উঠছে”

Posted On: 13 APR 2023 12:03PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১৩ এপ্রিল, ২০২৩


প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে জাতীয় রোজগার মেলায় ভাষণ দিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সরকারি দপ্তর এবং সংস্থায় নব-নিযুক্তদের মধ্যে ৭১ হাজার নিয়োগপত্র বিতরণ করলেন। সারা দেশ থেকে নির্বাচিত নতুন নিযুক্তরা ভারত সরকারের বিভিন্ন দপ্তর এবং পদে যোগ দেবেন যেমন, ট্রেন ম্যানেজার, স্টেশন মাস্টার, সিনিয়র কর্মাশিয়াল-কাম-টিকিট ক্লার্ক, ইনস্পেক্টর, সাব-ইনস্পেক্টর, কনস্টেবল, স্টেনোগ্রাফার, জুনিয়র অ্যাকাউন্ট্যান্ট, পোস্টাল অ্যাসিস্ট্যান্ট, ইনকাম ট্যাক্স ইনস্পেক্টর, ট্যাক্স অ্যাসিস্ট্যান্ট, সিনিয়র ড্রাফটসম্যান, জেই / সুপারভাইজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, টিচার, লাইব্রেরিয়ান, নার্স, প্রবেশনারি অফিসার, পিএ, এমটিএস প্রভৃতি। নব-নিযুক্তরা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সকল নব-নিযুক্তদের জন্য অনলাইন ওরিয়েন্টেশন কোর্স ‘কর্মযোগী প্রারম্ভ’-এর মাধ্যমে নিজেদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের সময় মেলার সঙ্গে ৪৫টি স্থানকে যুক্ত করা হয়েছিল।


ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বৈশাখীর পবিত্র দিন উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি প্রার্থী এবং তাঁদের পরিবারকে নিয়োগপত্র পাওয়ার জন্য অভিনন্দন জানান।


প্রধানমন্ত্রী বলেন যে সরকার উন্নত ভারতের সঙ্কল্প পূরণে দেশের যুব সমাজের মেধা এবং প্রাণশক্তির জন্য সঠিক সুযোগ দিতে দায়বদ্ধ। শ্রী মোদী সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রসঙ্গটি তুলে ধরে বলেন যে এনডিএ-শাসিত রাজ্যগুলি যেমন গুজরাট থেকে আসাম এবং উত্তরপ্রদেশ থেকে মহারাষ্ট্রে দ্রুতগতিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, গতকাল শুধুমাত্র মধ্যপ্রদেশেই ২২ হাজারেরও বেশি শিক্ষককে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। “এই রোজগার মেলা দেশের যুব সমাজের জন্য আমাদের দায়বদ্ধতার প্রমাণ।”


ভারত সারা বিশ্বের মধ্যে দ্রুততম অর্থনীতি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে গোটা পৃথিবী আন্তর্জাতিক মন্দা এবং অতিমারীর সমস্যার মধ্যে ভারতকে একটি উজ্জ্বল বিন্দু হিসেবে দেখছে। তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে নতুন ভারত যে নীতি এবং কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে তাতে নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেছে।” তিনি বলেন যে ২০১৪-র পর ভারত আগেকার প্রতিক্রিয়াশীল অবস্থানের তুলনায় অতি সক্রিয় মনোভাব গ্রহণ করেছে। শ্রী মোদী বলেন, “এতে এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যেখানে একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক সাক্ষী থাকছে কর্মসংস্থান এবং স্বনিযুক্তির নানা সুযোগ-সুবিধার যা আগে কল্পনাও করা যেত না। যুব সমাজ এখন এমন এমন ক্ষেত্র পাচ্ছে যা ১০ বছর আগেও ছিল না।” স্টার্ট-আপ এবং ভারতের যুব সমাজের উৎসাহের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী একটি রিপোর্টের কথা বলেন যেখানে স্টার্ট-আপরা ৪০ লক্ষের বেশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে। তিনি কর্মসংস্থানের নতুন পথ হিসেবে ড্রোন এবং ক্রীড়াক্ষেত্রেরও উল্লেখ করেন।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের ভাবনা এবং প্রচেষ্টা, স্বদেশী এবং ‘ভোকাল ফর লোকাল’কেও ছাড়িয়ে চলে গেছে। আত্মনির্ভর ভারত অভিযান এমনই একটি অভিযান যেখানে গ্রাম থেকে শহরে কোটি কোটি কর্মসংস্থানের সুবিধা তৈরি হচ্ছে।” তিনি দেশজ প্রযুক্তিতে তৈরি আধুনিক উপগ্রহ এবং সেমি-হাইস্পিড ট্রেনের উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে ৩০ হাজারের বেশি এলএইচবি কামরা তৈরি হয়েছে ভারতে গত ৮-৯ বছরে। এইসব কামরাগুলির জন্য প্রযুক্তি ও কাঁচামাল ভারতে হাজার হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে।


ভারতের খেলনা শিল্পের উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের শিশুরা বহু যুগ ধরে বিদেশি খেলনা নিয়েই শুধু খেলত। তিনি আরও বলেন, ভারতীয় শিশুদের মনের মতো করে সেগুলি তৈরিও হত না এবং সেগুলির মানও ভালো ছিল না। প্রধানমন্ত্রী জানান যে সরকার আমদানিকৃত খেলনার জন্য গুণমানের মাত্রা বেঁধে দিয়েছে এবং দেশজ খেলনা শিল্পের প্রসারে কাজ করছে। শ্রী মোদী আরও বলেন যে এর ফলে ভারতের খেলনা শিল্পের মুখ পুরোপুরি বদলে গেছে এবং বিভিন্ন কর্মসংস্থান তৈরি করতে মুখ্য ভূমিকাও নিচ্ছে।


প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম শুধুমাত্র আমদানিই করতে হবে - এই ধরনের মনোভাবের বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে সরকার এই ধারা পরিবর্তন করে দেশজ উৎপাদকদের ওপর ভরসা রেখেছে যার ফলে সশস্ত্র বাহিনী ৩০০-র বেশি অস্ত্রশস্ত্র সরঞ্জামের তালিকা তৈরি করেছে যা শুধুমাত্র ভারতেই তৈরি হবে। তিনি জানান, ১৫ হাজার কোটি টাকার সামরিক সরঞ্জাম সারা বিশ্বে রপ্তানি করা হচ্ছে।


শ্রী মোদী আরও বলেন, গত কয়েক বছরে মোবাইল ফোন উৎপাদন ক্ষেত্রে বিরাট পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, স্থানীয় উৎপাদকদের উৎসাহ দিয়ে এবং তাঁদের উৎসাহভাতা দিয়ে ভারত অনেক বিদেশি মুদ্রার সাশ্রয় করছে। ভারত স্থানীয় চাহিদা মেটাবার পর মোবাইল হ্যান্ডসেট রপ্তানিও করছে।


প্রধানমন্ত্রী কর্মসংস্থান তৈরিতে পরিকাঠামোয় লগ্নির ভূমিকার উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মূলধনী ব্যয়ের ওপর জোর দেওয়ার ফলে সড়ক, রেলপথ, বন্দর এবং বাড়ির মতো পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে। পরিকাঠামোর কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সম্ভাবনার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান যে বর্তমান সরকারের আমলে মূলধনী ব্যয় বেড়েছে চারগুণ।


২০১৪-র আগে ও পরের উন্নয়নের উদাহরণ দিয়ে শ্রী মোদী ভারতীয় রেলপথের উল্লেখ করেন এবং জানান যে ২০১৪-র আগের সাত দশকে যেখানে মাত্র ২০ হাজার কিলোমিটার রেলপথের বৈদ্যুতিকীকরণ হয়েছিল, সেখানে গত ৯ বছরে ৪০ হাজার কিলোমিটার রেলপথের বৈদ্যুতিকীকরণ হয়েছে। তিনি আরও জানান যে ২০১৪-র আগে প্রতি মাসে ৬০০ মিটার মেট্রো রেললাইন বসানো হত, সে জায়গায় আজ প্রতি মাসে ৬ কিলোমিটার রেললাইন বসানো হচ্ছে। তিনি আরও জানান, ২০১৪-র আগে গ্যাসের নেটওয়ার্ক দেশের ৭০টিরও কম জেলায় সীমিত ছিল, সেখানে আজ এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬৩০টি জেলা। গ্রামীণ এলাকায় সড়কের দৈর্ঘ্যের বিষয়ে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে এটি ২০১৪-র পূর্বে ৪ লক্ষ কিলোমিটার থেকে বেড়ে হয়েছে ৭ লক্ষ কিলোমিটার। তিনি আরও জানান, “যখন সড়ক পৌঁছয় গ্রামে গ্রামে, তখন সমগ্র ব্যবস্থায় দ্রুত কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়।”


বিমান পরিবহণ ক্ষেত্র সম্পর্কে শ্রী মোদী জানান, ২০১৪-র আগে দেশে ৭৪টি বিমানবন্দর ছিল, সেই সংখ্যা বেড়ে আজ হয়েছে ১৪৮। তিনি বিমানবন্দরের কাজকর্মে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনারও উল্লেখ করেন। তিনি এয়ার ইন্ডিয়ার বিশাল মাপের বিমান বরাত দেওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, অন্যান্য কোম্পানিগুলির জন্য একই পরিকল্পনা আছে। তিনি বলেন, বন্দর ক্ষেত্রেও একই অগ্রগতির সাক্ষী থাকছে। অতীতের তুলনায় পণ্য ওঠা-নামা দ্বিগুণ হয়েছে এবং তার জন্য সময় লাগছে অর্ধেক। এইসব উন্নয়ন বহু সংখ্যক কর্মসংস্থান তৈরি করছে।


স্বাস্থ্যক্ষেত্র প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪-র আগে যেখানে ৪০০-রও কম মেডিকেল কলেজ ছিল, সেখানে আজ ৬৬০টি মেডিকেল কলেজ আছে। একইরকমভাবে ২০১৪-র আগে যেখানে মেডিকেল শিক্ষার আসন ছিল ৫০ হাজার তা বেড়ে এখন ১ লক্ষের বেশি হয়েছে। পাশ করা চিকিৎসকের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।


গ্রামীণ এলাকায় এফপিও এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি লক্ষ কোটি টাকার সহায়তা পাচ্ছে, মজুত করার ক্ষমতা বেড়েছে, ২০১৪-র পর ৩ লক্ষের বেশি সাধারণ পরিষেবা কেন্দ্র তৈরি হয়েছে, গ্রামে গ্রামে ৬ লক্ষ কিলোমিটারের বেশি অপটিক্যাল ফাইবার বসানো হয়েছে, পিএমএওয়াই-এর অধীনে গ্রামগুলিতে ৩ কোটি বাড়ির মধ্যে ২ কোটি ৫০ লক্ষের বেশি বাড়ি, ১০ কোটির বেশি শৌচাগার, ১ লক্ষ ৫০ হাজারের বেশি ওয়েলনেস সেন্টার তৈরি হয়ে গেছে এবং কৃষিক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এইসবের ফলে কিছুতে বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।”


শ্রী মোদী ক্রমবৃদ্ধিশীল উদ্যোগপতি এবং ক্ষুদ্র শিল্পের বিষয়টিও ছুঁয়ে যান। তিনি জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা’ সম্প্রতি ৮ বছর পূর্ণ করেছে। এই কর্মসূচিতে ২৩ লক্ষ কোটি টাকার বেশি ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি ছাড়াই ঋণ দেওয়া হয়েছে এবং প্রাপকদের ৭০ শতাংশের বেশি মহিলা। “এই কর্মসূচিতে ৮ কোটি নতুন উদ্যোগপতি তৈরি হয়েছে। শুধুমাত্র ‘মুদ্রা’ যোজনার সাহায্যেই এই প্রথম ব্যবসা শুরু করেছেন তাঁরা” - বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি তৃণমূলস্তরে অর্থনীতিতে প্রাণ আনতে মাইক্রো-ফিনান্সের শক্তির উল্লেখ করেন।


যাঁরা আজ নিয়োগপত্র পেলেন তাঁদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবার এটা একটা সুযোগ। ২০৪৭-এর মধ্যে উন্নত ভারত হওয়ার লক্ষ্যে দেশ এগিয়ে চলেছে। শ্রী মোদী বলেন, “আপনারা আজ আপনাদের যাত্রা শুরু করছেন সরকারি কর্মী হিসেবে। এই যাত্রাপথে মনে রাখতে হবে সেই কথাগুলি যা আপনি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে অনুভব করতেন।” সরকারের কাছ থেকে নব-নিযুক্তদের প্রত্যাশার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আপনাদের দায়িত্ব অন্যদের প্রত্যাশা পূরণ করার। তিনি বলেন, “আপনাদের প্রত্যেকে আপনাদের কাজের মাধ্যমে যে কোনওভাবেই একজন সাধারণ মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলতে পারেন।” শ্রী মোদী কাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলার এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি করার প্রয়াসের ওপর জোর দেন। ভাষণের শেষে প্রধানমন্ত্রী নব-নিযুক্তদের বলেন যে নিয়মিত শেখার চেষ্টা করে যেতে হবে এবং তাহলে নতুন নতুন শিক্ষার প্রভাব পড়বে কাজে এবং ব্যক্তিত্বে। তিনি তাঁদের দক্ষতার উন্নয়ন করার জন্য অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম - ‘iGoT Karmayogi’-তে যোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন।

PG/AP/DM


(Release ID: 1916230) Visitor Counter : 165