প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

ভারতীয় অর্থনীতির চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে পরিকাঠামোর প্রসার ও উন্নয়ন প্রচেষ্টা


‘পরিকাঠামো ও বিনিয়োগ : প্রধানমন্ত্রী গতি শক্তি জাতীয় মাস্টার প্ল্যান-এর সাহায্যে পরিবহণ ক্ষেত্রকে সুদক্ষ করে তোলার প্রচেষ্টা’ শীর্ষক বাজেট পরবর্তী এক ওয়েবিনারে বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর

Posted On: 04 MAR 2023 11:10AM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৪ মার্চ,২০২৩

 

যে কোনও দেশের নিরন্তর উন্নয়ন প্রচেষ্টায় পরিকাঠামোর এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই পরিকাঠামোর প্রসার একান্তভাবে জরুরি। 

‘পরিকাঠামো ও বিনিয়োগ : প্রধানমন্ত্রী গতি শক্তি জাতীয় মাস্টার প্ল্যান-এর সাহায্যে পরিবহণ ক্ষেত্রকে আরও দক্ষ করে তোলার প্রচেষ্টা’ শীর্ষক আজ বাজেট পরবর্তী এক ওয়েবিনারে ভাষণদানকালে এই মত ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। 

তিনি বলেন, এ বছরের বাজেট প্রস্তাব পরিকাঠামো ক্ষেত্রকে আরও চাঙ্গা করে তুলতে সাহায্য করবে। বিশেষজ্ঞরা এ বছরের বাজেট প্রস্তাব তথা কৌশলগত সিদ্ধান্তগুলির বিশেষ প্রশংসা করেছেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের তুলনায় ভারতের মূলধনী ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে পাঁচগুণ। জাতীয় পরিকাঠামো কর্মসূচিতে ১১০ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। কারণ, নতুন নতুন দায়িত্ব, নতুন নতুন সম্ভাবনা ও সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের এক বিশেষ সময়কাল এটি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিকাঠামোর ইতিহাস সম্পর্কে যাঁরা অবগত তাঁরা এই সত্যটি ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারবেন। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের উত্তরাপথ নির্মাণ প্রসঙ্গের অবতারণা করে তিনি বলেন, তাঁর আরদ্ধ এই কাজ আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন সম্রাট অশোক। পরবর্তীকালে শের শাহ সুরি তা আরও উন্নত করে তোলেন। ব্রিটিশরা পরে এই সড়কটিকে জিটি রোডে রূপান্তরিত করে।

মহাসড়কগুলির গুরুত্ব ভারতে বহু শতাব্দী ধরেই স্বীকৃত হয়ে আসছে। নদী উপত্যকা এবং জলপথের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বারাণসীর ঘাটগুলির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বারাণসী কলকাতার সঙ্গে সরাসরি জলপথে যুক্ত রয়েছে। প্রসঙ্গত ২ হাজার বছরেরও বেশি প্রাচীন কাল্লানাই বাঁধের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে অতি প্রাচীন হলেও তামিলনাড়ুর এই বাঁধটি আজও মানুষের উপকারে আসছে। 

পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পূর্ববর্তী সরকারগুলির আমলে দারিদ্র্যের মানসিকতাকে বড় করে দেখা হত। কিন্তু বর্তমান সরকার এই ধরনের মানসিকতা দূর করার কাজে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছে। সেইসঙ্গে, আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজে আরও বেশি পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগে এই সরকার কোনভাবেই পিছিয়ে নেই। 

পরিকাঠামো উন্নয়নকে দেশের উন্নয়নের এক বিশেষ চালিকাশক্তি রূপে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পথ অনুসরণ করে ভারত আগামী ২০৪৭ সালের মধ্যেই একটি উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হবে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের প্রয়োজন উন্নয়নের গতিকে সর্বোচ্চ মাত্রায় নিয়ে যাওয়া। তিনি বলেন, গতি শক্তি জাতীয় মাস্টার প্ল্যান হল এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম যা দেশের অর্থনীতি ও পরিকাঠামো সম্পর্কিত পরিকল্পনাকে উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত করতে পারে। গতি শক্তি জাতীয় মাস্টার প্ল্যান এক কথায় ভারতে পরিকাঠামো ক্ষেত্রের চেহারাই শুধু পালটে দেবে না, সেইসঙ্গে বহু উদ্দেশ্যসাধক পরিবহণ ব্যবস্থাও গড়ে তুলবে। 

প্রধানমন্ত্রীর মতে, ‘প্রধানমন্ত্রী গতি শক্তি জাতীয় মাস্টার প্ল্যান’-এর সুফল আজ সকলেই উপলব্ধি করতে পারছেন। পরিবহণ ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়িয়ে তোলার পথে যে অন্তরায়গুলি ছিল সেগুলি আমরা চিহ্নিত করেছি বলে উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন যে এই কারণেই বর্তমান বছরের বাজেটে ১০০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে এবং এজন্য সংস্থান রাখা হয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকার। 

শ্রী মোদী বলেন, নির্দিষ্ট গুণমানের বহু উদ্দেশ্যসাধক পরিকাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে আগামী দিনগুলিতে পরিবহণ খাতে ব্যয়ও অনেকটাই হ্রাস পাবে। ফলে, ভারতে উৎপাদিত পণ্যের ওপর তার ইতিবাচক প্রভাবও পড়বে। সেইসঙ্গে, এই পণ্যগুলির উপযোগিতা ও কার্যকারিতাও আরও ভালোভাবে প্রমাণিত হবে।

শ্রী মোদী বলেন, পরিবহণ ক্ষেত্রের পাশাপাশি মানুষের জীবনযাত্রা তথা বাণিজ্যিক কাজকর্মকে সহজতর করে তোলার কাজও উৎসাহিত হবে পরিবহণ পরিকাঠামোর হাত ধরে। তাই, দেশে এই ধরনের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় বেসরকারি ক্ষেত্রকে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। 

রাজ্যগুলির ভূমিকা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিভিন্ন রাজ্যকে ৫০ বছরের মেয়াদে যে ঋণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে তার সুদমুক্ত সময়কালের সীমা আরও এক বছর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এজন্য বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০ শতাংশের মতো।

ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারী সকলের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী এমন এক ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলেন যেখানে পরিকাঠামো উন্নয়নের চাহিদার বিষয়টি আগাম আন্দাজ করা সম্ভব হয়। তিনি বলেন, আমাদের প্রয়োজন এমন এক সুসংহত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা যাতে ভবিষ্যতের চিত্রটি সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। এই কাজে ‘প্রধানমন্ত্রী গতি শক্তি জাতীয় মাস্টার প্ল্যান’-এর যে এক বিশেষ ভূমিকা রয়েছে, একথাও প্রসঙ্গত উল্লেখ করেন তিনি। একইসঙ্গে, চক্রাকার অর্থনীতির ধারণাকে বাস্তবায়িত করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। 

কচ্ছ-এর ভূমিকম্পজনিত পরিস্থিতিকালে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কচ্ছ-এর পুনরুদ্ধার ও পুনরুন্নয়ন প্রচেষ্টায় এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গির নেপথ্যে ছিল উন্নয়নের তাগিদ, রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি নয়। সরকারের উন্নয়ন প্রচেষ্টার সুবাদে কচ্ছ বর্তমানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের এক বিশেষ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। 

দেশের স্বাভাবিক পরিকাঠামোকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে ব্যবহারিক পরিকাঠামোর বলিষ্ঠতা যে একান্ত জরুরি, একথাও স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এক শক্তিশালী সামাজিক পরিকাঠামো যুব সমাজকে সুদক্ষ করে তুলতে পারে এবং তাঁদের মেধা ও প্রতিভা বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগাতে পারে। এই পরিস্থিতিতে তরুণরা আরও ভালোভাবে দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে পারবেন। দক্ষতা বিকাশ, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, আর্থিক তথা অর্থনৈতিক দক্ষতা এবং শিল্পোদ্যোগ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে শ্রী মোদী বলেন, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণে এগুলি আমাদের পথ দেখাতে পারে। ক্ষুদ্র ও বৃহদায়তন শিল্পগুলির প্রসার ও উন্নয়নে এক বিশেষ ব্যবস্থা গড়ে তোলার অনুকূলেও মত প্রকাশ করেন তিনি। 

ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারী সকল অংশীদারদের মতামত ও পরামর্শের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে জাতির উন্নয়নে তাঁরা শুধু নিজেদের অবদানই সৃষ্টি করতে পারেন না, একইসঙ্গে তাঁরা উন্নয়নের চালিকাশক্তিতেও নতুন করে গতিসঞ্চার করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর মতে, পরিকাঠামো উন্নয়ন শুধুমাত্র রেল, সড়ক, বন্দর এবং বিমানবন্দর নির্মাণের মধ্যেই আজ আর সীমাবদ্ধ নেই বরং, এই ধরনের পরিকাঠামোর উন্নয়ন এ বছরের বাজেটের এক বিশেষ অংশ হয়ে উঠেছে। শ্রী মোদী বলেন, দেশের গ্রামগুলিতে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য সংগ্রহ করে রাখার উপযোগী পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। এজন্য বড় বড় প্রকল্প নির্মাণের কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। গ্রাম ও শহরগুলিতে যে নতুন নতুন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, রেল স্টেশন এবং পাকা বাড়ি গড়ে তোলার কাজ চলছে একথাও তিনি প্রসঙ্গত উল্লেখ করেন। 

পরিশেষে, সকলের মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে এবং বিভিন্ন মতামত, প্রস্তাব ও পরামর্শদানের মাধ্যমে ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারী সকল পক্ষ যে এই ওয়েবিনারকে তথা সরকারের বাজেট প্রস্তাবকে সফল করে তুলতে বিশেষভাবে সচেষ্ট হবেন, এ বিষয়ে তাঁর গভীর আশা ও আস্থার কথা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

বাজেট পরবর্তী যে ১২টি ওয়েবিনারের আয়োজন করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে আজকের ওয়েবিনারটি ছিল তার মধ্যে অষ্টম। বাজেট প্রস্তাব, ২০২৩-এর সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মতামত ও পরামর্শ আহ্বানের জন্যই এই ওয়েবিনারগুলি আয়োজিত হচ্ছে।

 

PG/SKD/DM/



(Release ID: 1905190) Visitor Counter : 121