অর্থমন্ত্রক
azadi ka amrit mahotsav

২০২৩-২৪ এর কেন্দ্রীয় বাজেটের সারাংশ


২০২৩-২৪ এর কেন্দ্রীয় বাজেটে অমৃতকালের জন্য এক সশক্ত ও অন্তর্ভুক্ত অর্থনীতি গড়ে তোলার পথরেখা

অমৃতকালের ভিত্তি হিসাবে ৪টি রূপান্তরকামী সুযোগের জন্য ত্রিমুখী জোর

মূলধনী খাতে ব্যয় বরাদ্দ ৩৩ শতাংশ বাড়িয়ে ১০ লক্ষ কোটি

মূলধনী ব্যয় মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৪.৫ শতাংশ

২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে আর্থিক ঘাটতি মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৫.৯ শতাংশ হওয়ার অনুমান

২০২২-২৩ অর্থবর্ষে মোট প্রকৃত অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি

২০২৩ অর্থবর্ষে রপ্তানি ১২.৫ শতাংশ হারে বাড়বে

উচ্চ মানের উদ্যানজাত শস্যের জন্য আত্মনির্ভর ক্লিন প্ল্যান প্রোগ্রামে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ

দেশে ১৫৭টি নতুন নার্সিং কলেজ স্থাপন করা হবে

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বরাদ্দ ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৭৯ হাজার কোটি টাকা

রেলের জন্য এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বাধিক ২ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা মূলধনী বরাদ্দ

পুর পরিকাঠামো ও উন্নয়ন তহবিল গঠন

গোবর্ধন প্রকল্পে সারা দেশে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে ৫০০টি নতুন ‘বর্জ্য থেকে সম্পদ’ সৃষ্টির ইউনিট গড়ে তোলা হবে

জৈব সার ও কীটনাশক উৎপাদন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সরবরাহের জন্য সারা দেশে ১০ হাজ

Posted On: 01 FEB 2023 1:37PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

 

স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে ৭ শতাংশ হারে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির অনুমানে, বিশ্ব ভারতীয় অর্থনীতিকে এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের মর্যাদা দিয়েছে। এই বৃদ্ধি হার বিশ্বের প্রধান প্রধান অর্থনীতিগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ। কোভিড মহামারী এবং রাশিয়া – ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের প্রভাব সত্ত্বেও এই হার অর্জন করা সম্ভব হবে। আজ সংসদে ২০২৩ – ২৪ অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারমন আজ এই কথা বলেছেন। তিনি জোরের সঙ্গে জানিয়েছেন, ভারতীয় অর্থনীতি সমস্ত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে সঠিক পথে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে।

প্রথম পর্যায়:

শ্রীমতী সীতারমন বলেন, পূর্ববর্তী বাজেটের ভিত্তিতেই যে আশার সঞ্চার হয়েছে, তার উপর India@100 – এর পথরেখা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে এক সমৃদ্ধ ও অন্তর্ভুক্ত ভারতের ভাবনা রয়েছে। দেশের সমস্ত অঞ্চল, নাগরিকদের বিশেষ করে যুবক, মহিলা, কৃষক, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী ও তপশিলি জাতি/উপজাতি ভুক্তদের কাছে উন্নয়নের সুফল পৌঁছে দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে।

বহুমুখী সমস্যার মধ্যেও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা:

অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট ভাষণে বলেন, নির্দিষ্ট কিছু কারণে ভারত বিশ্বের মধ্যে উন্নয়নের জয়ধ্বজা তুলে ধরেছে। এই কারণগুলির মধ্যে বিশ্বমানের ডিজিটাল জনপরিকাঠামো, যেমন – আধার, কো-উইন অ্যাপ এবং ইউনাইটেড পেমেন্ট ইন্টারফেস রয়েছে। ভারতে কোভিড মহামারী প্রতিরোধে যে দ্রুততার সঙ্গে ভ্যাকসিন কর্মসূচি রূপায়িত হয়েছে, তাকে অতুলনীয় বলা যেতে পারে। এছাড়াও, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রাগুলি অর্জনে ‘মিশন লাইফ’ এবং জাতীয় হাইড্রোজেন মিশনের মতো কর্মসূচি রয়েছে। তিনি বলেন, কোভিড মহামারী সময়কালে দেশের কোনও মানুষকে যাতে অভুক্ত থাকতে না হয়, সেই লক্ষ্যে ২৮ মাস ধরে ৮০ কোটিরও বেশি মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়া হয়েছে। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে কেন্দ্র প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনার আওতায় ২০২৩ – এর পয়লা জানুয়ারি থেকে সমস্ত অন্ত্যোদয়ভুক্ত ও দরিদ্র পরিবারগুলির জন্য আরও এক বছর বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেবে। এ বাবদ কেন্দ্রীয় সরকার ২ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় বহন করবে।

জি-২০’র নেতৃত্বদানে ভারত:

অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যেই ভারত জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতি পদে আসীন হয়েছে। এর ফলে, বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে ভারতের সামনে এক অনন্য সুযোগ এসেছে। এ ধরনের বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় এবং সারা বিশ্বের সুষম অর্থনৈতিক বিকাশের লক্ষ্যে ভারত ‘বসুধৈব কুটুম্বকম্‌’ মন্ত্রের ভিত্তিতে এক জনকেন্দ্রিক কৌশল  রূপায়ণে নেতৃত্ব দিতে চাইছে।

২০১৪ থেকে অর্জিত লক্ষ্যগুলি:

শ্রীমতী সীতারমন বলেন, ২০১৪ সাল থেকে সরকার দেশের সমস্ত নাগরিকের জন্য জীবনের মানোন্নয়ন ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন সুনিশ্চিত করতে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। বিগত ৯ বছরে ভারতীয় অর্থনীতি আয়তনে বিশ্বের মধ্যে দশম স্থান থেকে বৃদ্ধি পেয়ে পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে। অন্যদিকে, দেশের অর্থনীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে, কর্মী ভবিষ্যনিধি প্রকল্পের আওতায় দ্বিগুণেরও বেশি মানুষ নথিভুক্ত হয়ে ২৭ কোটিতে পৌঁছেছে। ২০২২ সালে ইউনাইটেড পেমেন্ট ইন্টারফেসের মাধ্যমে ৭ হাজার ৪০০ কোটি ডিজিটাল পেমেন্টে ১২৬ লক্ষ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।

অন্তর্ভুক্ত উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি যাতে প্রাপকদের হাতে যথাযথভাবে পৌঁছে দেওয়া যায়, তার জন্য বহু ধরনের প্রকল্পের সুদক্ষ রূপায়ণ করা হয়েছে। তিনি জানান, স্বচ্ছ ভারত অভিযানে দেশের ১১ কোটি ৭০ কোটি পরিবারের জন্য পাকা শৌচালয়ের ব্যবস্থা হয়েছে; উজ্জ্বলা যোজনার আওতায় ৯ কোটি ৬০ লক্ষ রান্নার গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ১০২ কোটি মানুষের জন্য ২২০ কোটি কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জন ধন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়ে ৪৭ কোটি ৮০ লক্ষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বিমা ও প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি যোজনার আওতায় ৪৪ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষকে বিমার সুবিধা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পে দেশের ১১ কোটি ৪০ লক্ষ কৃষককে ২ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

অমৃতকালের লক্ষ্য:

অর্থমন্ত্রী বলেন, অমৃতকালে আমাদের দেশে প্রযুক্তি-কেন্দ্রিক এবং জ্ঞান-ভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশের চিন্তাভাবনা রয়েছে। শক্তিশালী আর্থিক ক্ষেত্র ‘সবকা সাথ, সবকা প্রয়াস’ – এর মাধ্যমে জনঅংশীদারিত্বে এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে। অর্থমন্ত্রী আরও জানান, অমৃতকালের লক্ষ্যগুলি অর্জনে ৩টি বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, যুবক-যুবতীদের আশা-আকাঙ্খা পূরণে তাদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগের ব্যবস্থা করা, আর্থিক বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ছাড়াও ব্যাপক ভিত্তিতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে শক্তিশালী করার কথা ভাবা হয়েছে। অমৃতকালে এই লক্ষ্য অর্জনে ৪টি সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভারতের রূপান্তর ঘটাতে হবে। এগুলি হ’ল নিম্নরূপ:

১) মহিলাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন: দীনদয়াল অন্ত্যোদয় যোজনা এবং জাতীয় গ্রামীণ জীবন জীবিকা মিশনে সাফল্যের সঙ্গে সারা দেশে ২১ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে তোলা হয়েছে। এই গোষ্ঠীগুলির কাজকে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যেতে বৃহদায়তন উৎপাদন উদ্যোগ বা জোট গড়ে তোলা হবে। কয়েক হাজার করে সদস্য নিয়ে গড়ে তোলা এই জোটকে পেশাদারী দক্ষতায় পরিচালনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

২) প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা কৌশল সম্মান: শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ভারতে হস্তশিল্পীরা তাঁদের নিজস্ব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এমন শিল্প বস্তুর সৃষ্টি করে চলেছেন, যা ভারতকে অনন্য সম্মান এনে দিয়েছে। এইসব হস্তশিল্পীরাই হলেন আমাদের বিশ্বকর্মা, এদের মধ্যে আত্মনির্ভর ভারতের মূল সুরটি প্রতিফলিত হয়।

ভারতের এইসব চিরাচরিত হস্তশিল্পীদের কাজকর্মের উন্নয়নে একগুচ্ছ সহায়তা প্রস্তাব সহ নতুন একটি প্রকল্পের কথা ভাবা হয়েছে। এদের ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ শৃঙ্খলের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। এর জন্য যে শুধুমাত্র আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে, তাই নয়, এদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ, আধুনিক পরিবেশ-বান্ধব ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার রপ্ত করা, পণ্যের বিপণন, ডিজিটাল লেনদেন সহ সংশ্লিষ্ট সব ধরনের কাজ শেখানোর ব্যবস্থা হবে। এর ফলে, হস্তশিল্পীদের মধ্যে তপশিলি জাতি/উপজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী, মহিলা ও দরিদ্র শ্রেণীর মানুষরা বিশেষভাবে উপকৃত হবেন।

৩) পর্যটন: অর্থমন্ত্রী বলেছেন যে, ভারতে অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থান ও বস্তু রয়েছে। পর্যটনের ক্ষেত্রে যে বিপুল সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে, তাকে কাজে লাগিয়ে, বিশেষ করে যুবকদের জন্য কর্মসৃজন ও শিল্পোদ্যোগ গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। এইসব উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের পর্যটন ক্ষেত্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে মিশন মোডে কাজ শুরু হবে। এতে বিভিন্ন রাজ্য সরকার, সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির সংযুক্তি এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বকে কাজে লাগানো হবে।

৪) পরিবেশ-বান্ধব বৃদ্ধি: পরিবেশ-বান্ধব অর্থনৈতিক বৃদ্ধি প্রসঙ্গ অর্থমন্ত্রী বলেন, ভারত পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানী, শক্তি, কৃষি, পরিবহণ, আবাসন, যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে বহুধরনের কর্মসূচি রূপায়ণের কাজ শুরু করেছে। এর ফলে, অর্থনীতির কার্বন নির্ভরশীলতা কমানো সম্ভব হবে এবং ব্যাপক হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

বাজেটের অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলি:

শ্রীমতী নির্মলা সীতারমন এবারের বাজেটে ভারতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে ৭টি অগ্রাধিকার ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছেন। অমৃতকালের মধ্যে এই ৭টি অগ্রাধিকার ক্ষেত্রকে ‘সপ্তর্ষী’ হিসাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলি হ’ল – ১) অন্তর্ভুক্ত বিকাশ, ২) প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া, ৩) পরিকাঠামো ও বিনিয়োগ, ৪) সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো , ৫) পরিবেশ-বান্ধব বৃদ্ধি, ৬) যুব শক্তি এবং ৭) আর্থিক ক্ষেত্র।

অগ্রাধিকার-১: অন্তর্ভুক্ত বিকাশ:

তিনি বলেন, সরকারের ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ – এই মূল মন্ত্রের মধ্যে সবার জন্য উন্নয়নের ভাবনা নিহীত রয়েছে। কৃষক, মহিলা, যুব, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী, তপশিলি জাতি/উপজাতি, দিব্যাঙ্গজন, অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বলতর শ্রেণী এবং সুযোগ থেকে বঞ্চিত মানুষের উন্নয়নের কথা ধরা হয়েছে। তিনি জানান, জম্মু-কাশ্মীর, লাদাখ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির জন্য উন্নয়নে জোর অব্যাহত থাকবে।

কৃষি ও সমবায়:

কৃষি ক্ষেত্রে ডিজিটাল জনপরিকাঠামো

অর্থমন্ত্রী বলেন, কৃষি ক্ষেত্রে ডিজিটাল জনপরিকাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর ফলে, সমস্ত কৃষককে উন্নয়নের সুফল দেওয়া যাবে। শস্য পরিকল্পনা, মাটির স্বাস্থ্য, কৃষি যন্ত্রপাতি, কৃষি ঋণ, কৃষি বিমা প্রভৃতি ক্ষেত্রে সমস্ত কৃষি-কেন্দ্রিক তথ্য পরিষেবাকে এক ছাতার তলায় আনা হবে। এর মধ্যে ফলনের আগাম পূর্বাভাষ, বাজারের ভবিষ্যৎ হালচাল এবং কৃষি-ভিত্তিক শিল্প ও স্টার্টআপ গড়ে তোলারও প্রস্তাবও রয়েছে।

কৃষি উন্নয়ন তহবিল:

গ্রামাঞ্চলে কৃষি-ভিত্তিক স্টার্টআপ শুরু করতে যুব শিল্পোদ্যোগীদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে একটি বিশেষ তহবিল গড়ে তোলার কথা অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন। কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উদ্ভাবনমূলক এবং সহজ সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যেই এই স্টার্টআপগুলি কাজ করবে। এছাড়া, কৃষি পদ্ধতিতে রূপান্তর আনতে, উৎপাদনশীলতা ও লভ্যাংশ বাড়াতে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে এগুলি কাজ করবে।

তুলোর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি:

অতিরিক্ত লম্বা তন্তুর তুলোর উৎপাদন বাড়াতে সরকারি – বেসরকারি অংশীদারিত্বে ক্লাস্টার-ভিত্তিক উদ্যোগে সহায়তা করবে। এর ফলে, কৃষক, রাজ্য এবং শিল্প সংস্থার মধ্যে কাঁচামাল সরবরাহ, পরিষেবা এবং বাজার সংযুক্তির ব্যবস্থা করা যাবে।

আত্মনির্ভর উদ্যানপালন কর্মসূচি:

শ্রীমতী সীতারমন জানিয়েছেন, সরকার উচ্চ মানের উদ্যানজাত পণ্যের জীবাণুমুক্ত বীজ, সার ও অন্যান্য জিনিসপত্রের সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে ‘আত্মনির্ভর পরিচ্ছন্ন বৃক্ষ কর্মসূচি’ চালু করবে।

‘শ্রী অন্ন’ – বিশ্বের মিলেট উৎপাদন কেন্দ্র:

শ্রীমতী সীতারমন প্রধানমন্ত্রীকে উদ্বৃত করে বলেন, মিলেটের মতো পুষ্টিকর খাদ্যশস্যকে জনপ্রিয় করে তুলতে খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকদের কল্যাণের লক্ষ্যে এই ধরনের উদ্যোগে অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন, ভারতে জোয়ার, বাজরা, রাগি, কুট্টু, রামদানা, কাঙনি, কুটকি, কোডো, চিনা এবং শামার মতো বিভিন্ন প্রজাতির শ্রী অন্ন উৎপাদিত হয়ে থাকে। আমাদের দেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রী অন্ন রপ্তানিকারক হিসাবে উঠে এসেছে। তিনি ভারতকে শ্রী অন্ন উৎপাদনে বিশ্বব্যাপী কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে এই ফসল নিয়ে গবেষণার লক্ষ্যে হায়দরাবাদে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ মিলেট রিসার্চ’কে উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলবে।

কৃষি ঋণ:

কৃষকদের কল্যাণ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, পশুপালন, ডেয়ারি এবং মৎস্যচাষের উপর গুরুত্ব দিয়ে কৃষি ক্ষেত্রে ঋণের পরিমাণ ২০ লক্ষ কোটি টাকা করা হবে। তিনি আরও জানান যে, সরকার প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনার আওতায় ৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে একটি নতুন প্রকল্প চালু করবে। এর ফলে, মৎস্যজীবী, বিক্রেতা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগকে নিয়ে একযোগে মৎস্য উদ্যোগের দক্ষতা বাড়াবে এবং বিপণন সহজতর হবে।

সমবায়:

অর্থমন্ত্রী জানান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকরা যাতে কৃষি ক্ষেত্রে আরও বেশি সুযোগ পান, তার জন্য সরকার সমবায়-ভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে চলবে। ‘সহকার সে সমৃদ্ধি’র লক্ষ্যমাত্রাগুলি পূরণে সরকার ২ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা বিনিয়োগে দেশের ৬৩ হাজার প্রাথমিক কৃষি সম্বায় সমিতিগুলিতে কম্প্যুটার সংযোগের প্রকল্প চালু করেছে। দেশের সমস্ত কো-অপারেটিভ সোশ্যাইটিগুলির কাজকর্মে গতি আনতে একটি জাতীয় সমবায় ভান্ডার গড়ে তোলা হবে। কৃষকরা যাতে তাঁদের ফসলে লাভজনক মূল্য পান, সেই লক্ষ্যে ব্যাপক ভিত্তিতে সারা দেশ জুড়ে বিকেন্দ্রীকৃত সংরক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আগামী ৫ বছরে বহু উদ্দেশ্য-সাধক সমবায় সমিতি গড়ে তুলে মৎস্য ও ডেয়ারি শিল্পকে দেশের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়ন:

মেডিকেল এবং নার্সিং কলেজ

অর্থমন্ত্রী আজ সংসদে আগামী বছরের বাজেট পেশ করে দেশে ১৫৭টি নার্সিং কলেজ গড়ে তোলার প্রস্তাব ঘোষণা করেন। ২০১৪ সাল থেকে দেশে ইতিমধ্যেই কাজ করা ১৫৭টি মেডিকেল কলেজের সঙ্গে একই জায়গায় এগুলি কাজ করবে। ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারত থেকে সিকল সেল অ্যানিমিয়ার মতো ব্যাধি দূরীকরণের লক্ষ্যে একটি অভিযানের সূচনা করা হবে বলে তিনি জানান। সারা দেশের মধ্যে মেডিকেল গবেষণার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নির্দিষ্ট কিছু  আইসিএমআর – এর গবেষণাগারগুলিকে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের কাজে ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ওষুধ শিল্পের উদ্ভাবন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, কোনও একটি বিশেষ উৎকর্ষ কেন্দ্রের মাধ্যমে ওষুধ শিল্পে গবেষণা ও উদ্ভাবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে একটি নতুন কর্মসূচি চালু করা হবে। সরকার বেসরকারি শিল্প ক্ষেত্রকেও বিশেষ বিশেষ রোগের ওষুধপত্র উদ্ভাবনের জন্য গবেষণায় বিনিয়োগে উৎসাহিত করবে।

শিক্ষক প্রশিক্ষণ:

শ্রীমতী সীতারমন বলেন, দেশে শিক্ষক প্রশিক্ষণের কাজকে নতুন দিশা দেওয়ার লক্ষ্যে জ্ঞান চর্চা, পাঠ্যসূচি সংস্কার, পেশাগত উন্নয়ন এবং তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হবে। এই লক্ষ্যে দেশের জেলাগুলিতে শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য কেন্দ্রগুলিকে আরও উন্নত করে তোলা হবে। অর্থমন্ত্রী জানান, দেশের সমস্ত ভৌগোলিক অঞ্চল, ভাষা এবং লিঙ্গ নির্বিশেষে সমস্ত নাগরিক, বিশেষ করে শিশু ও কিশোরদের জন্য উন্নত মানের বই সরবরাহ করতে একটি জাতীয় ডিজিটাল গ্রন্থাগার স্থাপন করা হবে। পঞ্চায়েত ও পুরসভার ওয়ার্ড পর্যায়ে গ্রন্থাগার স্থাপনের জন্য রাজ্যগুলিকে উৎসাহিত করা হবে। এর মাধ্যমে জাতীয় ডিজিটাল গ্রন্থাগার ব্যবস্থাকে কাজে লাগানো সম্ভব হবে। দেশে শিশু ও কিশোরদের মধ্যে পড়াশুনার চর্চা বাড়াতে এবং অতিমারীর সময়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট, চিল্ড্রেন্স বুক ট্রাস্ট এবং অন্যান্য সরকারি – বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে আঞ্চলিক ও অন্যান্য ভাষায় সিলেবাস বহির্ভূত বইপত্র প্রকাশে উৎসাহিত করা হবে।

অগ্রাধিকার-২: প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া:

অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকার আদিবাসী ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য একটি মন্ত্রক ও বিভাগ স্থাপন করেছিল। এর লক্ষ্য ছিল প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছানো। তিনি জানান, মোদী সরকার আয়ুষ, মৎস্য, পশুপালন, ডেয়ারি, দক্ষতা উন্নয়ন, জল শক্তি ও সমবায়ের মতো নতুন মন্ত্রক গঠন করে এই লক্ষ্য পূরণের উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে।

উন্নয়নকামী জেলা ও ব্লক কর্মসূচি:

উন্নয়নকামী জেলা কর্মসূচির সাফল্যের উপর দাঁড়িয়ে দেশের ৫০০টি ব্লকে সরকার সম্প্রতি উন্নয়নকামী ব্লক কর্মসূচি চালু করেছে। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা, কৃষি, জলসম্পদ, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বুনিয়াদী পরিকাঠামো ক্ষেত্রে সরকারি সুযোগ-সুবিধাগুলি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাবে।

প্রধানমন্ত্রী পিভিটিজি উন্নয়ন মিশন:

অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট ভাষণে বলেন, দেশের বিশেষ কিছু দুর্বল আদিবাসী গোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এই লক্ষ্যে একটি প্রধানমন্ত্রী পিভিটিজি উন্নয়ন মিশন চালু করা হবে। এই কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠী পরিবারগুলির কাছে আবাসন, পরিশ্রুত পানীয় জল, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, শিক্ষা, পুষ্টি, সড়ক এবং টেলিসংযোগের মতো সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দিতে ও তাদের সুষম জীবনজীবিকার সুযোগ দিতে একটি কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে আগামী তিন বছরে ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করবে। শ্রীমতী সীতারমন জানান যে, আগামী তিন বছরে দেশের ৭৪০টি একলব্য মডেল স্কুলের জন্য ৩৮ হাজার ৮০০ জন নতুন শিক্ষক নিয়োগ করবে। এইসব স্কুলে সাড়ে তিন লক্ষেরও বেশি আদিবাসী ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা করে।

খরাপ্রবণ এলাকায় জল:

অর্থমন্ত্রী জানান, কর্ণাটকের মতো খরাপ্রবণ এলাকায় সেচের জল এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সহায়তায় ‘আপার ভদ্র প্রকল্প’ রূপায়ণ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা:

বাজেটের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ব্যয় বরাদ্দ ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৭৯ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।

প্রাচীন পুঁথি: অর্থমন্ত্রী জানান, বিভিন্ন ধরনের প্রাচীন পুঁথি ও প্রস্তর লিপি ভান্ডারকে সুরক্ষিত রাখতে একটি ডিজিটাল সংগ্রহালয় গড়ে তোলা হবে। এর প্রথম পর্যায়ে দেশের ১ লক্ষ প্রাচীন পুঁথিকে ডিজিটাইজ করা হবে।

অগ্রাধিকার-৩ : পরিকাঠামো ও বিনিয়োগ:

শ্রীমতী সীতারমন বলেন, যেহেতু পরিকাঠামো ও উৎপাদনমুখী কাজে বিনিয়োগের ফলে এর প্রভাব অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের উপর পড়ে, তাই এই ক্ষেত্রে মূলধনী বিনিয়োগ পর পর তৃতীয় বছর ৩৩ শতাংশ হারে বাড়িয়ে ১০ লক্ষ কোটি টাকা করা হয়েছে। এই পরিমাণ দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৩.৩ শতাংশ। তবে, প্রকৃত প্রস্তাবে মূলধনী বিনিয়োগ প্রায় ১৩.৭ লক্ষ কোটিতে গিয়ে পৌঁছবে বলে তিনি উল্লেখ করেন, যা মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৪.৫ শতাংশ হবে। শ্রীমতী সীতারমন জানান, রাজ্য সরকারগুলিও যাতে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়, সেই লক্ষ্যে ৫০ বছরের মেয়াদে সুদ মুক্ত ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য ১ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে।

রেল:

অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেটে রেলের জন্য মূলধনী বরাদ্দ ২ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা হবে বলে জানিয়েছেন। এই পরিমাণ এযাবৎকালের মধ্যে সর্ববৃহৎ এবং ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষের বরাদ্দের ৯ গুণ বেশি। তিনি জানান, বন্দর, কয়লা কেন্দ্র, ইস্পাত, সার এবং খাদ্যশস্যের পরিবহণের জন্য সর্বব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ১০০টি বিশেষ গুরুত্বের পরিবহণ পরিকাঠামো প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে। এর জন্য অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ৭৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে বেসরকারি ক্ষেত্রে। তিনি জানান, আঞ্চলিক পর্যায়ে বিমান সংযোগের উন্নয়নে ৫০টি অতিরিক্ত বিমানবন্দর, হেলিপোর্ট, ওয়াটার এরোড্রোম এবং অ্যাডভান্স ল্যান্ডিং গ্রাউন্ড’কে পুনরুজ্জীবিত করে তোলা হবে। অর্থমন্ত্রী জানান, পুর এলাকায় পরিকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি বিশেষ তহবিল গড়ে তুলে কাজ চালানো হবে। দেশের দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের শহরগুলির পুর পরিকাঠামো উন্নয়নে জাতীয় আবাসন ব্যাঙ্ক এবং সরকারি সংস্থার মাধ্যমে এই কাজ করা হবে। এজন্য পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের অনুদান থেকে প্রাপ্ত সহায়সম্পদকে কাজে লাগানো হবে। তবে, সরকারও প্রতি বছর এই ক্ষেত্রে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করবে।

অগ্রাধিকার-৪: সম্ভাবনার উন্মোচন:

অর্থমন্ত্রী বলেন, সহজে ব্যবসার সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৩৯ হাজারেরও বেশি নিয়ম-নীতি কমানো হয়েছে বা শিথিল করা হয়েছে এবং ৩ হাজার ৪০০-রও বেশি আইনি সংস্থানকে নিরপরাধমূলক বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার এই লক্ষ্যে ৪২টি কেন্দ্রীয় আইন সংশোধনের জন্য জন বিশ্বাস বিল পেশ করেছে।

কৃত্রিম মেধা ক্ষেত্রে উৎকর্ষ কেন্দ্র:

অর্থমন্ত্রী বলেন, ভারতে কৃত্রিম মেধা ও কৃত্রিম মেধা সংশ্লিষ্ট কাজের সংস্থানের লক্ষ্য পূরণে দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কৃত্রিম মেধা গবেষণার জন্য তিনটি উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। এই প্রযুক্তিকে কৃষি, স্বাস্থ্য, নগরোন্নয়ন প্রভৃতি কাজে লাগানোর জন্য উচ্চ মানের মানবসম্পদ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। অর্থমন্ত্রী আরও জানান, শিক্ষা ক্ষেত্রে স্টার্টআপ – এর মাধ্যমে গবেষণা ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে একটি জাতীয় তথ্য পরিচালন নীতি ঘোষণা করা হবে। অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য একটি ডিজিলকার ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের নথিপত্র যাতে বৃহৎ বাণিজ্যিক উদ্যোগ ও অসরকারি অছি পরিষদগুলি ব্যবহার করতে পারে, সেই লক্ষ্যেই এই কাজ করা হবে। ৫-জি পরিষেবা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী জানান, দেশে ৫-জি পরিষেবার সুযোগ গ্রহণ করতে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ১০০টি গবেষণাগারে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োগমূলক অ্যাপ উদ্ভাবনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এই গবেষণাগারগুলিতে স্মার্ট ক্লাসরুম, প্রিসিজন ফার্মিং, অত্যাধুনিক পরিবহণ ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য প্রয়োগমূলক অ্যাপ উদ্ভাবনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

পরিবেশ-বান্ধব বৃদ্ধি:

শ্রীমতী সীতারমন বলেন, প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ-বান্ধব জীবনযাপনের এক লক্ষ্যের কথা বলেছেন। ভারত এই লক্ষ্যেই দৃঢ় পদক্ষেপে পঞ্চামৃত এবং ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন মুক্ত অর্থনীতি গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছে। সম্প্রতি চালু হওয়া জাতীয় গ্রিন হাইড্রোজেন অভিযানে এজন্য ১৯ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর ফলে, পরিবেশে একদিকে যেমন কার্বন গ্যাস নির্গমন কমবে, অন্যদিকে জীবাশ্ম জ্বালানী আমদানির উপর নির্ভরশীলতা কমবে। এছাড়াও, পরিবেশ-বান্ধব এই বিশেষ জ্বালানী ক্ষেত্রে দেশকে অগ্রবর্তী স্থানে পৌঁছে দেবে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে বার্ষিক ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন গ্রিন হাইড্রোজেন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, শক্তি ক্ষেত্রে পরিবেশ-বান্ধব রূপান্তর ও শক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাজেটে ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সুষম উন্নয়নের পথে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেশে ৪ হাজার মেগাওয়াটের একটি ব্যাটারি এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম গড়ে তোলা হবে। লাদাখ থেকে ১৩ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি আহরণের লক্ষ্যে এবং জাতীয় গ্রিডে সংযুক্তির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা সহ ২০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে।

শ্রীমতী সীতারমন জানান, দেশে জৈব ক্ষেত্রে ‘বর্জ্য থেকে সম্পদ’ উৎপাদনের লক্ষ্যে ৫০০টি নতুন প্ল্যান্ট গড়ে তোলা হবে। এর মধ্যে ২০০টি কম্প্রেস্ট বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট রয়েছে। মোট ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে দেশের পুর এলাকাগুলিতে এ ধরনের ৭৫টি এবং ৩০০টি গোষ্ঠী-ভিত্তিক প্ল্যান্ট এ ধরনের কাজের জন্য গড়ে তোলা হবে। অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে, আগামী তিন বছরে দেশের ১ কোটি কৃষককে জৈবকৃষিতে উৎসাহিত করতে ১০ হাজার বায়ো ইনপুট রিসোর্স কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে জৈবসার এবং কীটনাশক উৎপাদিত হবে। পরিচ্ছন্ন পরিবেশের স্বার্থে পুরনো গাড়িগুলিকে বাতিল করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করবে বলে তিনি জানান।

অগ্রাধিকার-৬: যুবশক্তি:

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, যুবকদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ও তাঁদের স্বপ্ন পূরণে সরকার ইতিমধ্যেই জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করেছে। এই নীতিতে দক্ষতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগের বিষয়গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী তিন বছরে দেশের লক্ষ লক্ষ যুবকের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনার চতুর্থ পর্যায়ের সূচনা করা হবে। এই যোজনায় কোডিং, কৃত্রিম মেধা, রোবটিক্স, মেকাট্রনিক্স, থ্রি-ডি প্রিন্টিং, ড্রোন প্রযুক্তির মতো নতুন বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। শ্রীমতী সীতারমন জানান, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে যুবকদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ বাড়াতে ৩০টি কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। আগামী তিন বছরে দেশের ৪৭ লক্ষ যুবককে শিক্ষানবিশ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য বৃত্তি প্রদান করা হবে।

ইউনিটি মল:

অর্থমন্ত্রী বলেন, রাজ্যগুলির প্রত্যেক জেলাতে একটি বিশেষ ধরনের হস্তশিল্পজাত পণ্যদ্রব্য বিক্রিতে উৎসাহ দিতে রাজ্যের রাজধানী ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে একটি করে ইউনিটি মল স্থাপনে উৎসাহিত করা হবে।

অগ্রাধিকার-৭: আর্থিক ক্ষেত্র:

অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ক্ষেত্রের জন্য ঋণ নিশ্চয়তা

অর্থমন্ত্রী বলেন, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ক্ষেত্রে ঋণদান ব্যবস্থার সংস্কার করে এই প্রকল্পে ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ২০২৩ – এর পয়লা এপ্রিল থেকে এই প্রকল্পের কাজ চালু হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে এই ক্ষেত্রগুলিকে বন্ধক ছাড়াই মোট ২ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে। এই ঋণের সুদ ১ শতাংশ হারে কমানো হবে। অর্থমন্ত্রী জানান, আর্থিক ক্ষেত্রের সবধরনের তথ্য এক জায়গায় পাবার সুবিধার্থে একটি জাতীয় আর্থিক তথ্য ভান্ডার স্থাপন করা হবে। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জনপরিকাঠামোমূলক ক্ষেত্রে ঋণ প্রদানের জন্য একটি আইনি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। কোম্পানি আইনের নিয়মানুসারে, বিভিন্ন কোম্পানিগুলিকে নিয়মমাফিক ঘোষণা ও ফর্ম ফিলাপের জন্য একটি সেন্ট্রাল প্রসেসিং সেন্টার গড়ে তোলা হবে। আজাদি কা অমৃত মহোৎসবের স্মারক হিসাবে মহিলাদের জন্য এককালীন নতুন ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প ‘মহিলা সম্মান সেভিং সার্টিফিকেট’ ইস্যু করা হবে। ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত দু’বছরের জন্য এই প্রকল্প চালানো হবে। এই প্রকল্পে সর্বোচ্চ দু’বছরের জন্য কোনও মহিলা বা বালিকার জন্য ৭.৫ শতাংশ স্থায়ী সুদের হারে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নি করা যাবে। প্রবীণ নাগরিকদের সঞ্চয় প্রকল্পের উর্ধ্বসীমা ১৫ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করা হবে। মাসিক আয় প্রকল্পে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ একক অ্যাকাউন্টে সাড়ে চার লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯ লক্ষ টাকা এবং যৌথ অ্যাকাউন্টে ৯ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ লক্ষ টাকা করা হবে।

আর্থিক পরিচালন:

৫০ বছরের মেয়াদে রাজ্যগুলিকে সুদ মুক্ত ঋণ

শ্রীমতী নির্মলা সীতারমন বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে রাজ্যগুলিকে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে ৫০ বছরের মেয়াদে সুদ মুক্ত ঋণ দেওয়া হবে। এই অর্থে অন্যান্য কাজের মধ্যে পুরনো যানবাহন বাতিল, নগরোন্নয়ন-কেন্দ্রিক যোজনা সংস্কার, পুরসভার আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন, পুলিশ কর্মীদের জন্য আবাসন, ইউনিটি মল নির্মাণ, শিশু ও কিশোরদের জন্য গ্রন্থাগার নির্মাণ, ডিজিটাল পরিকাঠামো গড়ে তোলার মতো কাজ করা যাবে।

অর্থমন্ত্রী জানান, ঋণ ছাড়া সরকারের মোট আয়ের সংশোধিত পরিমাণ দাঁড়াবে ২৪ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কর বাবদ ২০ লক্ষ ৯০ হাজার কোটি টাকা রয়েছে। মোট ব্যয়ের সংশোধিত পরিমাণ হবে ৪১ লক্ষ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে মূলধনী ব্যয় হবে ৭ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অনুরূপভাবে, আর্থিক ঘাটতির সংশোধিত পরিমাণ দাঁড়াবে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৬.৪ শতাংশে।

২০২৩-২৪ এর বাজেট প্রস্তাব:

বাজেটের প্রথম পর্ব শেষ করে শ্রীমতী সীতারমন বলেন, ঋণ ছাড়া সরকারের মোট আয় হবে ২৭ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা এবং মোট ব্যয় হবে ৪৫ লক্ষ কোটি টাকা। কর রাজস্ব বাবদ মোট রাজস্ব আয় হবে ২৩ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকা। আর্থিক ঘাটতি মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৫.৯ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ২০২৫-২৬ এর মধ্যে দেশের আর্থিক ঘাটতিকে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৪.৫ শতাংশের নীচে নামানোর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হবে। ২০২৩-২৪ এর আর্থিক ঘাটতি মেটাতে সরকারকে সময়-ভিত্তিক সিকিউরিটিতে প্রায় ১১ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে ঋণ নিতে হবে। ঘাটতির বাকি অর্থ ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মতো অন্যান্য উৎস থেকে মেটানো হবে। এই অর্থে বাজার থেকে মোট ঋণের পরিমাণ হবে ১৫ কোটি ৪০ লক্ষ কোটি টাকা।

দ্বিতীয় পর্যায়:

শ্রীমতী সীতারমন ব্যক্তিগত আয়করের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ছাড় ঘোষণা করেছেন। পরোক্ষ কর আরোপের ক্ষেত্রেও রপ্তানি বৃদ্ধি, পরিবেশ-বান্ধব শক্তির মতো ক্ষেত্রগুলির কথা মাথায় রাখা হয়েছে।

ব্যক্তিগত আয়কর:

এবারের বাজেটে ব্যক্তিগত আয়করের ক্ষেত্রে মোট ৫টি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা রয়েছে। প্রস্তাবিত নতুন কর ব্যবস্থায় রিবেটের ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে ৭ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। এর অর্থ ৭ লক্ষ টাকা বার্ষিক আয় হলে কোনও আয়কর দিতে হবে না। নতুন প্রস্তাবিত আয়কর ব্যবস্থায় আয়ের ৫টি স্তর বিভাজন করা হয়েছে। কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে ৩ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। এর ফলে, সর্বশ্রেণীর করদাতারা উপকৃত হবেন। বেতনভুক কর্মচারী ও পেনশনারদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনের সুবিধা থাকছে। বেতনভুক কর্মচারীরা এই ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা এবং পেনশনাররা ১৫ হাজার টাকা ছাড় পাবেন। নতুন কর ব্যবস্থায় ২ কোটি টাকার উপরে আয়ের জন্য সারচার্জের হার ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে, আয়করের সর্বোচ্চ হার ৪২.৭৪ শতাংশ থেকে কমে ৩৯ শতাংশ হবে। বেসরকারি ক্ষেত্রে বেতনভুক কর্মচারীদের ছুটি বিক্রি বাবদ করমুক্ত অর্থের ঊর্ধ্বসীমা ৩ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। আগের মতোই অবশ্য নাগরিকরা ইচ্ছে করলে পুরনো কর ব্যবস্থার সুবিধা নিতে পারবেন।

পরোক্ষ কর প্রস্তাব:

অর্থমন্ত্রী পরোক্ষ কর ব্যবস্থার সরলীকরণের মাধ্যমে করের ভার লাঘব এবং কর প্রশাসনকে উন্নত করার কথা বলেছেন। বস্ত্র বয়ন ও কৃষি ক্ষেত্র ছাড়া অন্যান্য পণ্যের উপর বুনিয়াদী আমদানি শুল্ক ২১ থেকে কমিয়ে ১৩ শতাংশ করা হয়েছে। খেলনা, বাই সাইকেল, মোটরযান এবং ন্যাপথার মতো শিল্পে অবশ্য আমদানি শুল্ক, সেস এবং সারচার্জের সামান্য কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। সংমিশ্রিত কমপ্রেস্ট প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর আমদানি শুল্ক এবং পণ্য ও পরিষেবা কর দেওয়া কম্প্রেস্ট বায়োগ্যাসকে আমদানি শুল্ক থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ চালিত যানবাহনে ব্যবহৃত  লিথিয়াম আয়রণ সেল ব্যাটারি উৎপাদনের জন্য মূলধনী পণ্য ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে ছাড় দেওয়া হয়েছে। মোবাইল ফোনের ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। লিথিয়াম আয়ন সেল ব্যাটারিতে কম হারে শুল্কের সুবিধা আরও এক বছর পাওয়া যাবে। টেলিভিশন যন্ত্রাংশের উপর আমদানি শুল্ক ২.৫ শতাংশ হারে কমানো হয়েছে। অনুরূপভাবে, রান্নাঘরে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক চিমনির যন্ত্রাংশে আমদানি শুল্ক রদ বদল করা হয়েছে। কৃত্রিম্ভাবে উৎপাদিত ইথাইল অ্যালকহলকে আমদানি শুল্কে ছাড় দেওয়া হয়েছে।

অভিন্ন আয়কর রিটার্ন ফর্ম:

এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটে করদাতাদের সুবিধার্থে একটি নতুন কর রিটার্ন ফর্ম চালু করার কথা বলা হয়েছে। এর ফলে, করদাতাদের অভিযোগ নিষ্পত্তিতে সুবিধা হবে। প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে ছোট ছোট আপিলগুলি নিষ্পত্তিতে ১০০ জন জয়েন কমিশনার র‍্যাঙ্কের অফিসার নিয়োগ করা হবে। কর ছাড়ের সুবিধা যাতে নির্দিষ্ট করদাতারা পেতে পারেন, সেই লক্ষ্যে নিজস্ব বাসগৃহে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ক্যাপিটাল গেইন – এর সুবিধা পাওয়া যাবে। উচ্চ মূল্যসম্পন্ন বিমা পলিসি ক্ষেত্রেও কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা থাকবে।

সমবায়:

সমবায় ক্ষেত্রেও এবারের বাজেটে একগুচ্ছ নতুন প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে অনুমান-ভিত্তিক করের সুবিধা ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগ ও বিশেষ কিছু পেশার মানুষের জন্য ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও, ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রে কর সংক্রান্ত বেশ কিছু সুবিধার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সমবায় ক্ষেত্রে নতুন সংস্থাগুলি আগামী বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে উৎপাদনমূলক কাজ শুরু করলে ১৫ শতাংশ হারে কম করের সুবিধা পাবে। বাজেটে চিনির কো-অপারেটিভগুলিতে ২০১৬-১৭ অ্যাসেসমেন্ট ইয়ারের আগে আখচাষীদের দেও অর্থকে ব্যয় হিসাবে দেখানোর সুযোগ দেওয়া হবে। প্রাথমিক কৃষি সমবায় সমিতিগুলিতে এবং গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্কে সদস্য পিছু নগদ অর্থ জমার সর্বোচ্চ সীমা ২ লক্ষ টাকা করা হয়েছে।

স্টার্টআপ:

বাজেট ভাষণে ৩১ মার্চ ২০২৩ থেকে ৩১ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত স্টার্টআপ-গুলিকে কর ছাড়ে সুবিধার জন্য নথিভুক্তির সীমা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হয়েছে স্টার্টআপ-গুলির ক্ষেত্রে।

সিজিএসটি আইনে সংশোধন:

এবারের বাজেটে সিজিএসটি আইন সংশোধন করে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা পর্যন্ত জিএসটি প্রদানে গাফিলতির জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে, কোনও পণ্য বা পরিষেবা সরবরাহ না করে ইনভেয়স দেওয়া হলে আগের মতোই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও, এই আইনে কোনও আধিকারিককে কর্তব্যে বাধাদান, সাক্ষীসাবুদ বা নথিপত্র নষ্ট করা ও তথ্য না দেওয়ার মতো কিছু বিষয়কে নিরপরাধমূলক বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

কর হারে পরিবর্তনের প্রভাব:

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর প্রস্তাবে পরিবর্তনের ঘোষণা করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এর ফলে সরকারের ৩৮ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হবে। তবে, প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব সংগ্রহ করা যাবে। ফলে, মোট ৩৫ হাজার কোটি টাকার সমতুল রাজস্বের ক্ষতি হবে।

 

PG/PB/SB



(Release ID: 1895558) Visitor Counter : 6200