প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

আজ থেকে ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সি শুরু হল - শ্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রধানমন্ত্রী

Posted On: 01 DEC 2022 9:59AM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি,  ০১  ডিসেম্বর, ২০২২
 

জি২০-র পূর্বেকার ১৭টি প্রেসিডেন্সিতে অনেকগুলি উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া গেছে- এদের মধ্যে অন্যতম ম্যাক্রো অর্থনীতির স্থিরতা নিশ্চিতকরণ, আন্তর্জাতিক কর ব্যবস্থায় সমতা, দেশের ঋণের বোঝা হ্রাস। আমরা এই সাফল্য থেকে উপকৃত হব এবং এর ওপর ভিত্তি করে আরও এগোব।

তবে ভারত এই গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকার পাওয়ার সময় আমি নিজেকে জিগ্যেস করি- এখনও কি জি২০ আরও এগোতে পারে? সমগ্র মানব সমাজের কল্যাণে আমরা কি আমাদের মৌলিক মানসিকতা পরিবর্তন করতে পারি?

আমার বিশ্বাস আমরা পারি।

আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী তৈরি হয় আমাদের পারিপার্শ্বিকতা থেকে। সর্বকালের ইতিহাসে দেখা যায় মানব সমাজ অভাবের মধ্যেই বাস করেছে। আমাদের লড়তে হয়েছে সীমিত সম্পদের জন্য, কারণ আমাদের বেঁচে থাকা নির্ভর করতো অপরকে বঞ্চিত করা থেকে। ধারনার, আদর্শের, পরিচিতির মধ্যে লড়াই এবং প্রতিযোগিতা- এটাই ছিল স্বাভাবিক।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা আজও সেই একই মনোভাবের ফাঁদে বন্দি। এটা আমরা দেখতে পাই যখন দেশে দেশে লড়াই হয় অঞ্চল অথবা সম্পদ নিয়ে। আমরা দেখতে পাই যখন অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ করতে হয় সশস্ত্র পাহারার মধ্যে। আমরা দেখতে পাই যখন কোটি কোটি মানুষের যখন প্রয়োজন এমন সময়েও কিছু মানুষ টিকার মজুতদারি করে।

কেউ তর্ক করতে পারেন যে সংঘর্ষ এবং লোভ মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। আমি মানি না। যদি মানুষ জন্মগতভাবেই স্বার্থপর হত তাহলে এই যে এত আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের দীর্ঘস্থায়ী আবেদন যা আমাদের বহুর মধ্যে একের শিক্ষা দেয় তাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে?

ভারতে এমনই এক জনপ্রিয় ঐতিহ্য যাতে সকল জীব, এমনকি জড় পদার্থকেও মনে করা হয় পাঁচটি মৌলিক বস্তু অগ্নি, পৃথ্বী, বায়ু, জল এবং ব্যোম দ্বারা নির্মিত। এই উপাদানগুলির মধ্যে ঐক্য- আমাদের নিজেদের মধ্যে বা একে অপরের মধ্যে- আমাদের শারীরিক, সামাজিক এবং পরিবেশের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন।

ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সি এই একাত্ম হওয়ার বিশ্ববার্তাকে প্রসারে কাজ করবে। সেইজন্য আমাদের মূল মন্ত্র- ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’।

এটা শুধুমাত্র একটি শ্লোগান নয়, এতে মানবিক পরিস্থিতির সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলিও ধরা হয়েছে যাকে আমরা সম্মিলিতভাবে গ্রহণ করতে অক্ষম হয়েছি।

আজ আমাদের সারা বিশ্বের মানুষের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর মতো যথেষ্ট উৎপাদন করার উপায় আছে।

আজ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করার প্রয়োজন নেই- আমাদের যুগের প্রয়োজন নেই যুদ্ধের যুগ হয়ে ওঠার। নিশ্চিতভাবে তা হয়ে ওঠা উচিত নয়! আজ আমাদের প্রধান সমস্যাগুলি যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাসবাদ এবং অতিমারী একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করে তার সমাধান করা সম্ভব নয়, বরং একসঙ্গে কাজ করেই তা করা সম্ভব।

সৌভাগ্যের বিষয়, আজকে প্রযুক্তি আমাদের সার্বিক, মানবিক সমস্যা সমাধানের উপায়। বিশাল ভার্চুয়াল বিশ্ব যার আমরা অংশীদার, সেখানে দেখা যাচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তির উচ্চতা।

বিশ্বের জনসংখ্যার ৬ ভাগের ১ ভাগ মানুষ থাকে এদেশে- ভাষা, ধর্ম, আচার এবং বিশ্বাসের বৈচিত্র্য বাহুল্য নিয়ে ভারত যেন এক ছোটখাটো বিশ্ব।

সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রাচীনতম ঐতিহ্য নিয়ে ভারত গণতন্ত্রের ডিএনএ ভিত্তির সহায়ক। গণতন্ত্রের জননী হিসেবে ভারতের জাতীয় সংহতি কোনো আদেশ-নির্দেশের ফলে নয়, বরং লক্ষ লক্ষ কণ্ঠস্বরকে মিলিয়ে একটি ঐক্যের সুর গড়ে উঠেছে।

আজ ভারত দ্রুততম বৃদ্ধিশীল বৃহৎ অর্থনীতি। আমাদের নাগরিক কেন্দ্রিক প্রশাসনিক আদর্শ এমনকি সবচেয়ে প্রান্তবাসী নাগরিকেরও যত্ন নেয়, আমাদের দক্ষ যুব সমাজের সৃষ্টিশীল প্রতিভার লালন-পালন করে।

আমরা চেষ্টা করেছি জাতীয় উন্নয়ন যেন উপর থেকে নীচ প্রশাসনিক রীতি না হয়ে নাগরিক কেন্দ্রিক ‘মানুষের আন্দোলন’ হয়ে ওঠে।

আমরা প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিয়েছি জনকল্যাণে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে যা উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং আন্তঃকার্যকরী। এর ফলে সামাজিক সুরক্ষা, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং ইলেক্ট্রনিক্স পেমেন্ট-এর মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক অগ্রগতি ঘটেছে।

এইসব কারনেই ভারতের অভিজ্ঞতা আন্তর্জাতিক সংকটের সমাধানে কাজে লাগবে।

আমাদের জি২০ প্রেসিডেন্সিকালে আমরা ভারতের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা এবং মডেল প্রদান করবো অন্যদের বিশেষ করে বিকাশশীল বিশ্বকে।

জি২০-তে আমাদের অগ্রাধিকার হবে শুধুমাত্র জি২০ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেই নয়, দক্ষিণ গোলার্ধের আমাদের সহ-সাথীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই যাদের কথা সাধারণত শোনা হয় না।

আমাদের অগ্রাধিকার হবে আমাদের ‘এক পৃথিবী’র স্বাস্থ্য ফেরানোর ওপর নজর দেওয়া, আমাদের ‘এক পরিবার’-এর মধ্যে সম্প্রীতি তৈরি করা এবং আমাদের ‘এক ভবিষ্যৎ’-এর জন্য আশা জোগানো।

আমাদের গ্রহের নিরাময়ে আমরা উৎসাহ দেব দীর্ঘস্থায়ী এবং পরিবেশ বান্ধব জীবনশৈলীর ওপর যার ভিত্তি হবে প্রকৃতির প্রতি ভারতের আস্থার ঐতিহ্য।

মানব পরিবারে ঐক্য, সম্প্রীতি প্রসারে আমাদের চেষ্টা হবে খাদ্য, সার এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত বস্তুর আন্তর্জাতিক সরবরাহকে রাজনীতি মুক্ত করা যাতে ভূ-রাজনৈতিক কারনে মানবতার সংকট না গড়ে ওঠে। যেমন আমাদের নিজেদের পরিবারে যার প্রয়োজন বেশি তার দিকেই আমাদের প্রথম নজর দিতে হয়।

আমাদের আগামী প্রজন্মের মধ্যে আশার বীজ প্রোথিত করতে সবচেয়ে শক্তিশালী দেশগুলির মধ্যে সততার সঙ্গে আলোচনায় আমরা উৎসাহ দেব- গণ-বিধ্বংসী অস্ত্রের ঝুঁকি কমাতে এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে।

ভারতের জি২০ কর্মসূচি হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক, উচ্চাশাসম্পন্ন, কার্যকরী এবং সিদ্ধান্তমূলক।

আসুন আমরা একযোগে ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সিকে নিরাময়, সম্প্রীতি এবং আশার প্রেসিডেন্সি করে গড়ে তুলি।

আসুন আমরা একসঙ্গে মানবকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিকতার এক নতুন আদর্শ গড়ে তুলি।

 

PG/AP/NS



(Release ID: 1880332) Visitor Counter : 302