প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

“মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ বর্তমান যুগে আরও বেশি মাত্রায় প্রাসঙ্গিক”


তামিলনাড়ুর দিন্দিগুলে গান্ধীগ্রাম রুরাল ইনস্টিটিউটের ৩৬তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে বললেন প্রধানমন্ত্রী

Posted On: 11 NOV 2022 5:56PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১১ নভেম্বর, ২০২২

 

মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ বর্তমান যুগে খুবই প্রাসঙ্গিক। যুদ্ধ-বিগ্রহ ও সংঘাতের অবসান এবং জলবায়ু সমস্যার মোকাবিলার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর চিন্তাভাবনা ও মতাদর্শের মধ্যে আমরা সঠিক সমাধানটি খুঁজে পেতে পারি। বর্তমান বিশ্বে যেক’টি সমস্যা রয়েছে তার মোকাবিলায় গান্ধীজির চিন্তাদর্শ অনুসরণ করেই আমরা তার সমাধান খুঁজে পেতে পারি। প্রসঙ্গত, মহাত্মা গান্ধীর গ্রামভাবনার ওপরও আলোকপাত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে গান্ধীজির চিন্তাভাবনাকে আমাদের অনুসরণ করে যেতে হবে। 

তামিলনাড়ুর দিন্দিগুল-এ গান্ধীগ্রাম রুরাল ইনস্টিটিউটের ৩৬তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গান্ধীগ্রামে উপস্থিত থেকে তিনি যে এক বিশেষ প্রেরণা ও অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলেন, একথাও স্বীকার করেন তিনি। শ্রী মোদী বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটির সূচনা মহাত্মা গান্ধীর হাত দিয়েই। এখানে পল্লী উন্নয়নের যে কর্মপ্রচেষ্টা চলছে তার মধ্যে গান্ধীজির আদর্শ ও চিন্তাভাবনার প্রভাব সুস্পষ্ট।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গান্ধীবাদকে অনুসরণ করে যে সমস্ত ছাত্রছাত্রী তাঁদের জীবনকে নিয়োজিত করেছেন তাঁদের সামনে এক বিশেষ সুযোগ আজ উপস্থিত, তা হল – গান্ধীজির মতাদর্শ ও চিন্তাদর্শ অনুসরণ করে যাওয়ার মধ্যেই মহাত্মাজির প্রতি সর্বশ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধা নিবেদনের পথ তাঁরা খুঁজে পেতে পারেন। প্রসঙ্গত, ‘জাতির জন্য খাদি, ফ্যাশনের জন্য খাদি’ – এর দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, এই অভিযানটি দীর্ঘ সময় বাদে বিস্মৃতপ্রায় একটি বস্ত্র ভাণ্ডারকে আবার সকলের সামনে তুলে ধরতে পেরেছে। গত আট বছরে খাদি বস্ত্রের বিপণন বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০০ শতাংশেরও বেশি। গত একটি বছরেই খাদি ও গ্রামোদ্যোগ কমিশন ১ লক্ষ কোটি টাকার রেকর্ড পরিমাণ লেনদেন করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। শ্রী মোদী বলেন, আন্তর্জাতিক ফ্যাশন দুনিয়ার বহু নামকরা ব্র্যান্ডই আজ খাদি বস্ত্র ব্যবহার করছে। কারণ, খাদির তৈরি পোশাক পরিবেশ-বান্ধব বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই ঘটনাকে ব্যাপক উৎপাদনের একটি বিপ্লব প্রচেষ্টা না বলে বরং সাধারণ মানুষের হাত দিয়ে উৎপাদন ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী বিপ্লব বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহাত্মা গান্ধী খাদিকে গ্রামীণ আত্মনির্ভরতার ভিত বলে মনে করতেন। তাঁর সেই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে কেন্দ্রীয় সরকারও আত্মনির্ভর ভারত গঠনের পথে অগ্রসর হয়েছে। শ্রী মোদী বলেন, তামিলনাড়ু হয়ে উঠেছিল স্বদেশী আন্দোলনের এক বিশেষ কেন্দ্র। আত্মনির্ভর ভারত গঠনের কাজেও এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চলেছে এই রাজ্যটি।

মহাত্মা গান্ধীর গ্রামোন্নয়ন ভাবনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রাম জীবনের মূল্যবোধের সংরক্ষণে বিশ্বাসী ছিলেন গান্ধীজি। তিনি মনে করতেন যে এর মধ্য দিয়েই একটি গ্রাম এগিয়ে যেতে পারে। গান্ধীজির সেই আদর্শকে অনুসরণ করেই কেন্দ্রীয় সরকার পল্লী উন্নয়নের কাজে ব্রতী হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মতে, গ্রাম ও নগর জীবনের মধ্যে যেটুকু পার্থক্য রয়েছে সেটুকু আমরা স্বীকার করে নিতে প্রস্তুত যদি এই দুটির মধ্যে কোনো সংঘাত বা বৈষম্য না ঘটে। প্রসঙ্গত, সম্পূর্ণ গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে শ্রী মোদী বলেন, ৬ কোটিরও বেশি বাড়িতে বর্তমানে পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে গেছে ২.৫ কোটি গৃহস্থ বাড়িতে এবং সড়ক নির্মাণের মধ্য দিয়ে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করে তোলা হয়েছে। এইভাবেই তাঁর সরকার উন্নয়নকে সাধারণ মানুষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে আগ্রহী। শহর ও গ্রাম জীবনের মধ্যে যে বৈষম্য ছিল তা এইভাবেই দূর করা সম্ভব বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, এই বিষয়টি ছিল মহাত্মা গান্ধীর চিন্তাভাবনার এক বিশেষ দিক। তাঁর সরকার সেই চিন্তাদর্শ অনুসরণ করেই স্বচ্ছ ভারত অভিযান শুরু করেছে। শুধুমাত্র প্রাথমিক কিছু সুযোগ-সুবিধা গ্রামগুলিতে পৌঁছে দেওয়ার মধ্যেই সরকারের কাজ সীমাবদ্ধ নয়, বরং আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রয়োগ থেকে গ্রামবাসীরা যাতে কোনভাবেই বঞ্চিত না হন তা নিশ্চিত করতেও তাঁর সরকার বদ্ধপরিকর। দেশের প্রায় ২ লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতকে ৬ লক্ষ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অপটিক ফাইবার কেবলের মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

গ্রামোন্নয়নকে একটি নিরন্তর প্রচেষ্টা বলে বর্ণনা করে শ্রী মোদী বলেন যে গ্রামের যুব সমাজের দায়িত্ব রয়েছে এই বিশেষ ক্ষেত্রটিতে নেতৃত্ব দেওয়ার। নিরন্তর কৃষি উন্নয়ন প্রচেষ্টা যে দেশের গ্রামগুলির ভবিষ্যৎ বনিয়াদকে আরও দৃঢ় করে তুলতে পারে, একথারও উল্লেখ করেন তিনি। প্রাকৃতিক কৃষি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্গ্যানিক প্রথায় ও পদ্ধতিতে কৃষিকর্ম চমৎকার ফল দেখিয়েছে। বিশেষত, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এর সাফল্য উল্লেখ করার মতো। গত বছরের বাজেটে অর্গ্যানিক তথা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কৃষি প্রচেষ্টা সম্পর্কিত এক বিশেষ নীতির কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটি ফলনই যথেষ্ট নয়। নানা ধরনের খাদ্যশস্য যেমন বাজরা এবং অন্যান্য শস্যের ফলনেরও আজ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

আচার্য বিনোবা ভাবে-র গ্রাম ভাবনার কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, গ্রাম পর্যায়ে যে সমস্ত সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলিতে নির্বাচন হওয়া উচিৎ যথাযথভাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহাত্মা গান্ধী এক ঐক্যবদ্ধ স্বাধীন ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে সংগ্রাম করে গেছেন। ভারতের সেই ঐক্য ভাবনার ক্ষেত্রে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে রয়েছে এই গান্ধীগ্রাম। তামিলনাড়ুকে জাতীয় বিবেকের এক বিশেষ ভিত্তিভূমি রূপে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাশ্চাত্য থেকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর স্বামী বিবেকানন্দ এখানে বীর নায়কের সম্মান পেয়েছিলেন। 

‘কাশী তামিল সঙ্গমম’ কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, এটি অনতিবিলম্বেই কাশীতে রূপায়িত হতে চলেছে। এর মাধ্যমে কাশী এবং তামিলনাড়ুর মধ্যে বন্ধন ও যোগাযোগ নিবিড়তর হয়ে উঠবে। এই প্রচেষ্টাকে ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাই হল আমাদের ঐক্যের মূলমন্ত্র। 

রানি ভেলু নাচিয়ারের উৎসর্গের কথা স্মরণ করে শ্রী মোদী বলেন, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রামকালে তিনি এই গান্ধীগ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সুতরাং, আমি আজ এমন একটি অঞ্চলে উপস্থিত রয়েছি যেখানে নারীশক্তির উন্মেষ তথা জাগরণ ঘটেছিল। অনেক তরুণ-তরুণীই এখানে স্নাতক পর্যায়ের পাঠ সম্পূর্ণ করেছেন। গ্রামীণ মহিলাদের সাফল্যকে তাঁরা আরও ত্বরান্বিত করবেন বলে আমি আশাবাদী। কারণ, এইভাবেই তাঁদের সাফল্যের মধ্য দিয়েই জাতির সাফল্য সুনিশ্চিত হবে। 

প্রধানমন্ত্রী এদিন তাঁর ভাষণে ভারতের ভ্যাক্সিন অভিযান, দরিদ্রদের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে বলেন যে ভারতের এই সাফল্য আজ সারা বিশ্বের কাছে অনুসরণযোগ্য। বিশ্বের বহু দেশ যখন শতাব্দীর কঠিনতম সঙ্কটে দিশাহীন হয়ে পড়েছে, ভারত তখন তাদের কাছে এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকার মতো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভারত সম্পর্কে আজ বিশেষভাবে আশাবাদী। তারা মনে করে, অনেক কিছুই ভারত আজ করে দেখাতে পারে। সুতরাং, দেশের তরুণ প্রজন্মের হাতে দায়িত্ব রয়েছে ভারতের এক উজ্জ্বলতর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার। বর্তমান প্রজন্ম শুধুমাত্র সমস্যার মোকাবিলাই করেন না, সেইসঙ্গে সমস্যার সমাধানের মধ্যে তাঁরা আনন্দও খুঁজে পান। কি, কেন এবং কিভাবে – এই প্রশ্নে তাঁরা বিব্রত নন, কারণ এর উত্তরও তাঁদের অজানা নয়। তাঁরা শুধু নির্ভীকই নন, একইসঙ্গে তাঁরা নিরলস পরিশ্রমী। উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গে সাফল্যের পথও আজ তাঁদের নখদর্পণে। তাই, আজকের তরুণ স্নাতকদের কাছে আমার একটাই বার্তা, তা হল – আপনারা হলেন এক নতুন ভারতের প্রতিষ্ঠাতা। ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আপনাদের হাতেই। অমৃতকালের ২৫ বছরে আপনাদের সেই সাফল্যের দিকেই আমরা তাকিয়ে রয়েছি। 

গান্ধীগ্রাম রুরাল ইনস্টিটিউটের আজকের সমাবর্তনে উপস্থিত ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ ব্যাচের ছাত্রছাত্রীদের স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করা হয়। স্বর্ণ পদক বিজয়ী ছাত্রছাত্রীদের প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণ পদক দিয়ে সম্মানিত ও অভিনন্দিত করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী শ্রী এম কে স্ট্যালিন, রাজ্যপাল শ্রী আর এন রবি, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ডঃ এল মুরুগান, চ্যান্সেলর ডঃ কে এম আন্নামালাই এবং উপাচার্য অধ্যাপক গুরমিত সিং। 


PG/SKD/DM/



(Release ID: 1875571) Visitor Counter : 2411