কেন্দ্রীয়মন্ত্রিসভা

সশস্ত্র বাহিনীতে তরুণদের নিয়োগে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদন, এক রূপান্তরমুখী সংস্কারের দৃষ্টান্ত


অগ্নিবীরদের চার বছরের জন্য তিন বাহিনীতে নেওয়া হবে

৪৬ হাজার অগ্নিবীর নিয়োগ করা হবে চলতি বছরে

Posted On: 14 JUN 2022 2:13PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১৪ জুন, ২০২২

 

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা আজ সশস্ত্র বাহিনীতে ভারতীয় যুবকদের নিয়োগের এক আকর্ষণীয় প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এই প্রকল্পের নাম ‘অগ্নিপথ’ এবং যেসব তরুণ এই প্রকল্পে নির্বাচিত হবেন, তাঁদের বলা হবে অগ্নিবীর। ‘অগ্নিপথ’ দেশপ্রেমী ও উজ্জীবিত তরুণদের সশস্ত্র বাহিনীতে চার বছরের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দেবে।

‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পটি সশস্ত্র বাহিনীর এক তারুণ্যময় প্রতিরূপ গড়ে তোলার জন্য উদ্ভাবিত। যেসব তরুণ সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দিয়ে সামরিক উর্দি পরিধানে বিশেষ আগ্রহী, তাঁদের জন্য সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি সমাজের তরুণ প্রতিভা, বিশেষ করে যাঁরা এখনকার প্রযুক্তিগত উন্নতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেন, তাঁদের বাহিনীতে টেনে আনার পাশাপাশি, সমাজে দক্ষ, শৃঙ্খলাপরায়ণ এবং উজ্জীবিত মানবসম্পদ যোগানোর লক্ষ্যে পরিকল্পিত। সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে এই প্রকল্প সশস্ত্র বাহিনীর এক তারুণ্যে ভরা প্রতিরূপ সৃষ্টিতে সাহায্য করার পাশাপাশি, বাহিনীতে সামর্থ্য ও উদ্দীপ্ত ভাবধারার প্লাবন সৃষ্টিতে সাহায্য করবে। সেই সঙ্গে, আরও বেশি প্রযুক্তি সক্ষমতাযুক্ত সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার দিকে এক রূপান্তরমূলক পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেবে। কেননা, এটাই এই সময়ের সবচেয়ে বড় চাহিদা। এই প্রকল্প রূপায়িত হলে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর গড় বয়স ৪-৫ বছর কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশ উচ্চ আদর্শে উজ্জীবিত ও পরিশ্রমী তরুণদের আত্মশৃঙ্খলাপরায়ণতা, একাগ্রতা এবং শ্রমের উপযোগিতা সম্পর্কে গভীর বোধের দ্বারা উপকৃত হবে। কেননা এরা অন্যান্য ক্ষেত্রেও অবদান রাখতে পারবে। স্বল্পকালীন সামরিক সেবায় যোগদানের পরিণাম জাতি, সমাজ এবং দেশের যুবশক্তির কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। দেশপ্রেমের বোধ দলগতভাবে কাজ করা, শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, দেশের প্রতি আনুগত্য এবং প্রশিক্ষিত কর্মীবলের প্রাপ্তি বহিঃশত্রুর শাসানি, আভ্যন্তরীণ সমস্যা ও জাতীয় বিপর্যয়ের মতো সমস্যার ক্ষেত্রে জাতীয় সুরক্ষাকে বহুগুণ বাড়িয়ে তুলবে।

তিন বাহিনীর মানবসম্পদ নীতির ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করতে চলেছে সরকারের আনা এই প্রতিরক্ষা নীতি সংক্রান্ত বিরাট সংস্কার। অবিলম্বে কার্যকর হওয়া এই নীতিই এরপর থেকে বাহিনীত্রয়ে নিযুক্তির ক্ষেত্রে নির্ণায়ক ভূমিকা নেবে।

অগ্নিবীরদের সুবিধা: অগ্নিবীরদের এক বিশেষ আকর্ষণীয় মাসিক প্যাকেজ দেওয়া হবে। এছাড়াও,  বাহিনীত্রয়ের ক্ষেত্রে প্রদত্ত ঝুঁকি ও সুকঠিন অবস্থাজনিত ভাতাও তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে। চার বছরের নিযুক্তি পর্ব শেষে অগ্নিবীরদের এককালীন ‘সেবানিধি’ প্যাকেজও দেওয়া হবে, যা তাদের মাসিক প্যাকেজ থেকে ৩০ শতাংশ হারে গত চার বছরে কেটে নেওয়া হয়েছে এবং সরকারও একই পরিমাণ অর্থ প্রতি মাসে তাদের তহবিলে প্রদান করেছে। নীচের সারণী থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট হবে: 

বছর

মাসিক বিশেষ প্যাকেজ (৭০%)

হাতে পাওয়া অর্থের পরিমাণ

অগ্নিবীর তহবিলে প্রদেয় অর্থ (৩০%)

অগ্নিবীর তহবিলে সরকার প্রদত্ত অর্থ

 

সব অঙ্কই টাকায় (মাসিক অবদানের ভিত্তিতে)

 

প্রথম বছর

৩০০০০

২১০০০

৯০০০

৯০০০

দ্বিতীয় বছর

৩৩০০০

২৩১০০

৯৯০০

৯৯০০

তৃতীয় বছর

৩৬৫০০

২৫৫৮০

১০৯৫০

১০৯৫০

চতুর্থ বছর

৪০০০০

২৮০০০

১২০০০

১২০০০

অগ্নিবীর তহবিলে চার বছর পর অগ্নিবীর পিছু মোট অর্থ

৫.০২ লক্ষ

৫.০২ লক্ষ

চার বছর পর বিদায়

সেবানিধি প্যাকেজে মোট ১১.৭১ লক্ষ টাকা প্রাপ্য (এর মধ্যে রয়েছে – সেবানিধি তহবিলে প্রাপ্য অর্থের উপর সুদের প্রযোজ্য হারে ক্রমপুঞ্জিত সুদ বাবদ অর্থও)  

‘সেবানিধি’ আয়করের আওতার বাইরে থাকবে। তবে, গ্র্যাচ্যুয়িটি বা কৃতজ্ঞতারাশি এবং অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা কিছু পাওয়া যাবে না। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীতে অগ্নিবীররা যতদিন কর্মরত থাকবেন, ততদিন তাঁরা ৪৮ লক্ষ টাকার জীবন বীমার আওতায় থাকবেন এবং এই বীমার জন্য তাঁদের কোনও অর্থ প্রদান করতে হবে না।

জাতির প্রতি সেবাকালে অগ্নিবীরদের বিভিন্ন ধরনের সামরিক দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, শৃঙ্খলা, শারীরিক সক্ষমতা, নেতৃত্বমূলক গুণ, বীরত্ব ও দেশপ্রেমের নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। চার বছরের এই পর্ব শেষে অগ্নিবীররা সুশীল সমাজের অঙ্গ হবেন, যেখানে তাঁরা জাতি গঠন প্রক্রিয়ায় বিরাট অবদান রাখতে পারবেন। প্রত্যেক অগ্নিবীর যে দক্ষতা অর্জন করেছেন, তা তাঁর জীবনপঞ্জীর অঙ্গ-স্বরূপ একটি শংসাপত্রে স্বীকৃতিলাভ করবে। তারুণ্যের গৌরবময় সময়ে চার বছরের এই পর্ব শেষে তাঁরা পরিণত এবং আত্মশৃঙ্খলাবোধে সমৃদ্ধ হবেন। পেশাগত এবং ব্যক্তিগতভাবে আরও উন্নত নাগরিক হয়ে উঠতে পারবেন। অগ্নিবীর পর্বের শেষে তাঁদের জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা উন্মুক্ত হবে, তা জাতি গঠনে বিরাট তাৎপর্যবাহী হবে। এছাড়াও, প্রায় ১১.৭১ লক্ষ টাকার যে সেবানিধি অগ্নিবীররা লাভ করবেন, তা তাঁদের স্বপ্ন সফল করতে সাহায্য করবে আর্থিক কোনও চাপের কাছে নতিস্বীকার না করেই, কেননা সমাজের আর্থিভাবে অবহেলিত অংশের মানুষকে সাধারণত এই ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে হয়।

যেসব ব্যক্তি প্রতিরক্ষা বাহিনীতে নিয়মিত শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্তির জন্য নির্বাচিত হবেন, তাঁদের আরও ১৫ বছর অন্তত সেবা নিযুক্ত থাকতে হবে এবং তাঁরা ভারতীয় বাহিনীত্রয়ের এবং ভারতীয় বিমান বাহিনীর যুদ্ধ শাখার বহির্ভূত হিসাবে নিযুক্ত জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার/অন্যান্য শ্রেণীভুক্তদের জন্য নিয়োগের বর্তমান শর্তাবলীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবেন।

এই প্রকল্পটি সশস্ত্র বাহিনীতে তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার মধ্যে সুন্দর প্রতিসাম্য সৃষ্টি করে আরও বেশি তরুণ ও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত লড়াকু বাহিনী গঠনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

সুবিধা:

·         সশস্ত্র বাহিনীতে নিয়োগ সংক্রান্ত নীতির ক্ষেত্রে রূপান্তরমুখী সংস্কার।

·         যুবশক্তির পক্ষে দেশের সেবা করা এবং জাতিগঠনে অবদান রাখার এক অনন্য সুযোগ।

·         সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিরূপ আরও তারুণ্যে ভরা ও গতিশীল করে তোলা।

·         অগ্নিবীরদের জন্য আকর্ষণীয় আর্থিক প্যাকেজ।

·         অগ্নিবীরদের সেরা প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ পাওয়ার এবং তাঁদের দক্ষতা ও যোগ্যতা বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ।

·         নাগরিক সমাজে সুশৃঙ্খল, দক্ষ এবং সামরিক ভাবধারায় প্রশিক্ষিত তরুণ কর্মীবলের প্রাপ্তি।

·         নাগরিক সমাজে যাঁরা ফিরে আসবেন, তাঁদের জন্য পর্যাপ্ত পুনর্নিয়োগের সুযোগ ও যুবসমাজের সামনে আদর্শ হয়ে ওঠার সুযোগ।

শর্তাবলী: ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের আওতায় অগ্নিবীরদের বাহিনীতে চার বছরের জন্য নিয়োগ করা হবে। তাঁরা সশস্ত্র বাহিনীতে একটি বিশেষ পদ পাবেন, যা হবে বর্তমান সব পদের থেকে আলাদা। চার বছরের সেবা সমাপ্ত হলে প্রতিষ্ঠানগত প্রয়োজন এবং বিভিন্ন সময়ে সশস্ত্র বাহিনীর দ্বারা ঘোষিত নীতি অনুযায়ী, অগ্নিবীরদের বাহিনীতে স্থায়ী নিযুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হবে। এইসব আবেদনগুলি কেন্দ্রীভূতভাবে বিবেচিত হবে গত চার বছরে তাঁদের পারদর্শিতার নিরিখে এবং প্রতিটি নির্দিষ্ট ব্যাচের ২৫% অগ্নিবীর সশস্ত্র বাহিনীতে নিয়মিতভাবে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ পাবেন। এ বিষয়ে বিশদ নির্দেশিকা আলাদাভাবে জারি করা হবে। এই বাছাই প্রক্রিয়া সশস্ত্র বাহিনীর একান্ত নিজস্ব আওতাধীন।

তিন বাহিনীর জন্য এই নিয়োগ প্রক্রিয়া অনলাইনে কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহীত হবে। এছাড়াও, স্বীকৃত কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেমন – শিল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (আইটিআই), জাতীয় দক্ষতা ও যোগ্যতা কাঠামো (এনএসকিউএফ) ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে বিশেষ র‍্যালি ও ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ – এর মাধ্যমেও নিয়োগ হবে। ‘সর্বভারতীয় ও সর্বশ্রেণী’ ভিত্তিতে নিয়োগ হবে এবং এজন্য বয়ঃসীমা হবে সাড়ে সতেরো বছর থেকে একুশ বছর। সশস্ত্র বাহিনীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণী/ট্রেডে প্রযোজ্য শারীরিক যোগ্যতা ও স্বাস্থ্যগত যোগ্যতার মাপকাঠিতেই অগ্নিবীরদেরও যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। অগ্নিবীরদের শিক্ষাগত যোগ্যতাও বিভিন্ন শ্রেণীতে নিযুক্তির জন্য ধার্য ন্যূনতম যোগ্যতার নিরিখেই হবে (যেমন – জেনারেল ডিউটি সৈন্যের ক্ষেত্রে নিযুক্তির যোগ্যতা হ’ল দশম শ্রেণী উত্তীর্ণ)।

 

PG/SB



(Release ID: 1833961) Visitor Counter : 284