প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

রোটারি ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ব সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 05 JUN 2022 9:50PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লী,  ৫  জুন, ২০২২


বিশ্বজুড়ে রোটারি সদস্যদের বিশাল পরিবার রয়েছে, প্রিয় বন্ধুগণ নমস্কার। রোটারি ইন্টারন্যাশনাল সম্মেলনে ভাষণ দিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। এই ধরণের প্রতিটি রোটারি সমাবেশ একটি ছোট বিশ্ব সম্মেলনের মতো। এখানে বৈচিত্র্য এবং প্রাণবন্ত ভাব রয়েছে। রোটারি সদস্যরা সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল। তবুও আপনারা কেবল কাজের মধ্যেই নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। আমাদের বসুন্ধরাকে আরও ভালো করে তোলার জন্য আপনাদের ইচ্ছা এই মঞ্চে সকলকে একত্রিত করেছে। এটি সাফল্য এবং সেবার একটি প্রকৃত মিলন।

বন্ধুগণ,

এই সংস্থার দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র রয়েছে। প্রথমটি হল- নিজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সেবা। দ্বিতীয়টি হল- সবচেয়ে বেশি পরিষেবা দানের মাধ্যমে উপকার। সমগ্র মানবজাতির কল্যাণের জন্য এগুলি গুরুত্বপূর্ণ নীতি। হাজার হাজার বছর আগে মুনি-ঋষিরা আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থনা করেছেন- ‘সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ, সর্বে সন্তু নিরাময়ঃ’

এর অর্থ প্রত্যেক জীব সুখী হোক, প্রত্যেক জীব সুস্থ জীবন যাপন করুক।

আমাদের সংস্কৃতিতে এও বলা রয়েছে
“পরোপকারায় সতাম্ বিভূতয়ঃ”

এর অর্থ মহাত্মারা অন্যের মঙ্গলের জন্য কাজ করে বেঁচে থাকেন। আমাদের দেশ বুদ্ধ এবং মহাত্মা গান্ধীর দেশ, যাঁরা অন্যের জন্য বেঁচে থাকার অর্থ কাজের মাধ্যমে বুঝিয়েছেন।

বন্ধুগণ,

আমরা সকলেই পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল , পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বে বাস করি। স্বামী বিবেকানন্দ যেকথা বলেছিলেন সে কথাই উদ্ধৃত করে জানাচ্ছি, “এই মহাবিশ্বের একটি অণুও সমগ্র বিশ্বকে টেনে না নিয়ে নড়তে পারে না।” সেজন্য আমাদের পৃথিবীকে আরও সমৃদ্ধ ও সুস্থায়ী করতে ব্যক্তি, সংস্থা এবং সরকারের একযোগে কাজ করা গুরত্বপূর্ণ। পৃথিবীর উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এমন বিভিন্ন ক্ষেত্রে রোটারি ইন্টারন্যাশনালকে কঠোর পরিশ্রম করতে দেখে আমি আনন্দিত। উদাহরণ স্বরূপ পরিবেশ সুরক্ষার কথা বলা যেতে পারে। এই সময় প্রয়োজন সুস্থায়ী উন্নয়ন । প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকা আমাদের শতাব্দী প্রাচীন নীতির মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে ১.৪ বিলিয়ন ভারতীয় পৃথিবীকে আরও স্বচ্ছ এবং সবুজ করে তোলার জন্য সম্ভাব্য সকল প্রয়াস চালাচ্ছে। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ভারতের একটি ক্রমবর্ধমান ক্ষেত্র। বিশ্বস্তরে ভারত আন্তর্জাতিক সৌর জোট গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছে। ভারত এক সূর্য, এক বিশ্ব, এক গ্রিড ক্ষেত্রে কাজ করছে। সম্প্রতি গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত কপ২৬ সম্মেলনে আমি লাইফ (এলআইএফই)- পরিবেশের জন্য জীবনযাপন নিয়ে কথা বলেছিলাম। এটি প্রতিটি মানুষের পরিবেশগত সচেতন জীবনযাপনকে বোঝায়। ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে ভারতের প্রতিশ্রুতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে প্রশংসিত হয়েছে।

বন্ধুগণ,

আমি আনন্দিত যে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধির ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। ভারতে, আমরা ২০১৪ সালে স্বচ্ছ ভারত মিশন বা পরিচ্ছন্ন ভারত অভিযান শুরু করেছি। ৫ বছরে আমরা সম্পূর্ণ স্যানিটেশনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করেছি। এতে বিশেষ করে ভারতের দরিদ্র মানুষ এবং মহিলারা উপকৃত হয়েছেন। বর্তমানে ভারত ঔপনিবেশিকতার শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন করছে। জল বাঁচাতে নতুন সম্মিলিত আন্দোলন শুরু হয়েছে। জল সংরক্ষণে প্রাচীন অভ্যাসের সঙ্গে আধুনিক সমাধান যুক্ত হয়েছে। সেখান থেকেই এই আন্দোলন অনুপ্রাণিত হয়েছে।

বন্ধুগণ,

আরও একটি অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কোভিড পরবর্তী বিশ্বে স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলা। আত্মনির্ভর ভারত দেশে ক্রমশই অঙ্গ হয়ে উঠছে। এর উদ্দেশ্য হল ভারতকে স্বনির্ভর করে তোলা এবং বিশ্বব্যাপি সমৃদ্ধিতে অবদান রাখা। আমি অবশ্যই জানাবো যে, ভারত বিশ্বের বৃহত্তম এবং দ্রুত ক্রমবর্ধমান স্টার্টআপ ইকো ব্যবস্থাপনাগুলির মধ্যে অন্যতম একটি দেশ। এই স্টার্টআপগুলির মধ্যে অনেকেই বিশ্বব্যাপি সমস্যা মোকাবিলায় সমাধান দিতে প্রস্তুত।

বন্ধুগণ,

আমরা ভারতে বিশ্বব্যাপি সেরা পদ্ধতিগুলি থেকে শিক্ষা নেওয়ার এবং অন্যদের সঙ্গে তা ভাগ করে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। ভারতে এক সপ্তমাংশ মানুষ বাস করেন। তাই ভারতের যেকোন সাফল্য অর্জন বিশ্বে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ প্রসঙ্গে কোভিড-১৯ টিকাকরণের উদাহরণ সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছি। যখন এক শতাব্দীতে একবার কোভিড-১৯ মহামারী এসেছিল, তখন অনেকেই ভেবেছিলেন বিশাল জনসংখ্যার দেশ ভারত এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এতটা সফল হবে না। ভারতের মানুষ তাদের ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে। ভারত নিজের দেশেই প্রায় ২ বিলিয়ন ডোজ দিয়েছে। একইভাবে ভারত ২০২৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নির্মূল করার জন্য কাজ করছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব এই রোগ নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। তার ৫ বছর আগেই ভারতে এই লক্ষ্যপূরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমি এই কয়েকটি মাত্র উদাহরণ তুলে ধরলাম। তৃণমূল স্তরে এই প্রয়াসকে সাহায্য করার জন্য আমি রোটারি পরিবারের সদস্যদের আহ্বান জানাই।

বন্ধুগণ,

পরিশেষে আমি পুরো রোটারি পরিবারের কাছে একটি অনুরোধ করবো। দু'সপ্তাহ পরে ২১ জুন সমগ্র বিশ্ব আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উদযাপন করবে। আপনারা সকলেই জানেন যোগব্যায়াম মানসিক, শারীরিক, বৌদ্ধিক এবং আধ্যাত্মিক সুস্থতার জন্য একটি কার্যকরী উপায়। রোটারি পরিবার কি সারা বিশ্বে যোগ দিবস পালন করতে পারে? রোটারি পরিবার কি তার সদস্যদের মধ্যে নিয়মিত যোগ অনুশীলনকে উৎসাহিত করতে পারে? এমনটা করলে উপকার দেখতে পাবেন।

এই সমাবেশে ভাষণ দিতে আমায় আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আমি আবারও আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। সমগ্র রোটারি ইন্টারন্যাশনাল পরিবারের জন্য আমার শুভেচ্ছা। ধন্যবাদ! আপনাদের অনেক ধন্যবাদ!


CG/SS/NS



(Release ID: 1831613) Visitor Counter : 125