প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

আসামে ক্যান্সার হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং জাতির উদ্দেশে উৎসর্গীকরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 28 APR 2022 7:18PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৮ এপ্রিল, ২০২২

 

আসামের মাননীয় রাজ্যপাল শ্রী জগদীশ মুখীজি, আসামের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাজি, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগী শ্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালজি, শ্রী রামেশ্বর তেলিজি, দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রক্ষাকারী মাননীয় শিল্পপতি শ্রী রতন টাটাজি, আসাম সরকারের মন্ত্রী শ্রী কেশব মহন্তজি, শ্রীমতী অজন্তা নিয়োগজি, শ্রী অতুল বোরাজি, আর এই মাটির সন্তান ও ভারতের আইন জগতে যিনি অসাধারণ কর্মদক্ষতার সঙ্গে দীর্ঘকাল সেবা করেছেন আর আজ আইন রচনার প্রক্রিয়ায় সংসদে আমাদের সঙ্গ দিচ্ছেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি শ্রদ্ধেয় শ্রী রঞ্জন গগৈজি, অন্যান্য সাংসদগণ, বিধায়কগণ আর আমার আসামের প্রিয় ভাই ও বোনেরা!

“প্রথমটে মই রঙ্গালি বিহু, আরু, অসমিয়া নববখোর শুভেসসা জনাইসু।”
(অর্থাৎ - প্রথমেই আমি আপনাদের রঙ্গালি বিহু এবং অসমিয়া নববর্ষ উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা জানাই।)  

উৎসব এবং উদ্দীপনার এই ঋতুতে আসামের উন্নয়নের ধারাকে আরও গতি প্রদানের জন্য আজ এই যে অসাধারণ সমারোহের আয়োজন, সেখানে আমারও আপনাদের সঙ্গে সেই উদ্দীপনায় যুক্ত হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। আজ এই ঐতিহাসিক নগরে আমি অসমিয়া গৌরব, আসামের উন্নয়নে নিজের অবদান রক্ষাকারী এখানকার সমস্ত মহান সন্তানদের স্মরণ করছি, আর সাদরে তাঁদের সবাইকে প্রণাম জানাচ্ছি।

বন্ধুগণ,

ভারতরত্ন ভুপেন হাজারিকাজির একটি গান আছে –

“বʼহাগ মাথোঁ এটি ঋতু নহয়
নহয় বʼহাগ এটি মাহ
অসমীয়া জাতির ই আয়ুস রেখা
গণ জীওনর ই খাহ”।
অর্থাৎ -  বৈশাখ মাসটি কোনও ঋতু নয়, বৈশাখ নিছকই কোনও মাস নয়, এটি অসমীয়া জাতির জীবনরেখা, গণজীবনের সঙ্গী।

আসামের জীবনরেখাকে অক্ষয় এবং প্রখর করে তোলার জন্য আমরা দিন-রাত আপনাদের আপ্রাণ সেবা করার চেষ্টা করতে থাকি। এই সঙ্কল্প নিয়ে বারবার আপনাদের মাঝে আসার ইচ্ছে করে। আসাম আজ শান্তির জন্য, উন্নয়নের জন্য একজোট হয়ে উৎসাহে টৈটম্বুর আর আমি একটু আগেই কার্বী আঙ-লোঙ-এ দেখেছি, আর আমি অনুভব করছিলাম, এ কেমন উদ্দীপনা, এ কেমন উৎসাহ, এ কেমন স্বপ্ন, এ কেমন সঙ্কল্প!

বন্ধুগণ,

কিছুক্ষণ আগেই আমি ডিব্রুগড়ে নব-নির্মিত ক্যান্সার হাসপাতাল আর সেখানে গড়ে ওঠা সুবিধাগুলিও দেখেছি। আর আজ এখানে এই মঞ্চ থেকে আসামের সাতটি নতুন ক্যান্সার হাসপাতালের উদ্বোধনও করা হয়েছে। একটা সময় ছিল, সাত বছরে একটা হাসপাতাল তৈরি হয়ে গেলে অনেক বড় উৎসব পালনের বিষয় হয়ে উঠত। আজ সময় বদলে গেছে। একদিনে একটি রাজ্যে সাতটি হাসপাতাল উদ্বোধন হচ্ছে। আর আমাকে বলা হয়েছে যে আরও তিনটি ক্যান্সার হাসপাতাল আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আপনাদের পরিষেবা প্রদানের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। তাছাড়া আজ রাজ্যে সাতটি নতুন আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের শিলান্যাসও হয়েছে। এই হাসপাতালগুলি থেকে আসামের অনেক জেলায় এখন ক্যান্সারের চিকিৎসার সুবিধা আরও বৃদ্ধি পাবে। হাসপাতাল তৈরি করার প্রয়োজন তো রয়েছে, আর সরকার তৈরিও করছে, কিন্তু আমি আপনাদেরকে কিছু উলটো শুভকামনা দিতে চাই। হাসপাতাল আপনাদের পায়ের সামনে উপস্থিত, কিন্তু আমি চাই না যে আসামের জনগণের জীবনে হাসপাতালে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি আসুক। আমি আপনাদের সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করি। আপনাদের পরিবারের কাউকেই যেন হাসপাতালে যেতে না হয়। আমি অত্যন্ত খুশি হব যদি আমাদের সমস্ত নব-নির্মিত হাসপাতাল খালি থেকে যায়। কিন্তু যদি প্রয়োজন পড়ে, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের যেন অসুবিধার কারণে, যথাযথ চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর বিরুদ্ধে লড়াই করার পরিস্থিতি না আসে, আর সেজন্য আপনাদের সেবার জন্য আমাদের এই হাসপাতালগুলি প্রস্তুত থাকবে।

ভাই ও বোনেরা,

আসামে ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য এত বিস্তৃত, এত ব্যাপক ব্যবস্থা এজন্যই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এখানে অনেক বড় সংখ্যায় ক্যান্সার ধরা পড়ে। শুধু আসাম নয়, গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতে ক্যান্সার একটি অনেক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে সবচাইতে বেশি প্রভাবিত হয় আমাদের গরীব পরিবারগুলি, গরীব ভাই ও বোনেরা, আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারের ভাই ও বোনেরা। ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য কয়েক বছর আগে পর্যন্ত এখানকার রোগীদের অন্য রাজ্যের বড় বড় শহরে যেতে হত, আর সেজন্য অনেক বড় অর্থনৈতিক বোঝা গরীব ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলিকে বহন করতে হত। গরীব ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির এই সমস্যা দূর করার জন্য বিগত ৫-৬ বছর ধরে এই রাজ্যে যত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার জন্য আমি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালজিকে, আর বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাজিকে এবং  টাটা মেমোরিয়াল ট্রাস্টকে অনেক অনেক সাধুবাদ জানাই, অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আসাম ক্যান্সার কেয়ার ফাউন্ডেশন রূপে ক্যান্সারের সুলভ এবং কার্যকর চিকিৎসার এত বড় নেটওয়ার্ক এখন এখানে প্রস্তুত। এটা মানবতার জন্য অনেক বড় সেবার উদ্যোগ।

বন্ধুগণ,

আসাম সহ গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ক্যান্সারের এই অনেক বড় সমস্যা থেকে আসাম তথা উত্তর-পূর্বাঞ্চলবাসীকে মুক্ত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারও নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছে। রাজধানী গুয়াহাটিতেও ক্যান্সার চিকিৎসা সংক্রান্ত পরিকাঠামো শক্তিশালী করা হচ্ছে। এ বছরের বাজেটে উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ প্রকল্প ‘পিএম ডিভাইন’-এও ক্যান্সারের চিকিৎসাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য একটি ডেডিকেটেড ফেসিলিটি গুয়াহাটিতে গড়ে উঠবে।

ভাই ও বোনেরা,

ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগ একটি পরিবার রূপে, আর একটি সমাজ রূপে আমাদের মনের দিক থেকে এবং আর্থিকভাবে দুর্বল করে দেয়। সেজন্য বিগত ৭-৮ বছরে দেশে স্বাস্থ্য নিয়ে অনেক বড় এবং ব্যাপক রূপে কাজ করা হচ্ছে। আমাদের সরকার সাতটি বিষয়ে কিংবা বলতে পারেন, স্বাস্থ্যের সপ্তঋষিদের ওপর অগ্রাধিকার দিয়েছে।

প্রথম চেষ্টাটি হল – যেন অসুখের কারণই না তৈরি হয়। সেজন্য প্রিভেন্টিভ হেলথ কেয়ার বা প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য সুরক্ষার ওপর আমাদের সরকার অনেক জোর দিয়েছে। এই পর্যায়ে যোগ, ফিটনেস, পরিচ্ছন্নতা – এরকম অনেক কর্মসূচি চালু রয়েছে। দ্বিতীয়ত – যদি রোগ হয়ে যায় তাহলে যেন গোড়াতেই জানা যায়। সেজন্য সারা দেশে নতুন টেস্টিং সেন্টার গড়ে তোলা হচ্ছে। তৃতীয় অগ্রাধিকার হল – মানুষের বাড়ির কাছেই প্রাথমিক চিকিৎসার উন্নত সুবিধা প্রদান। সেজন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে গোটা দেশে ওয়েলনেস সেন্টার রূপে একটি নতুন শক্তি প্রদান করে তাদের একটি নেটওয়ার্ককে সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। চতুর্থ অগ্রাধিকার হল – গরীবদের যত আধুনিক ও যতটা ভালো সম্ভব হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। সেজন্য আয়ুষ্মান ভারতের মতো প্রকল্পের মাধ্যমে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা আজ কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে।

বন্ধুগণ,

আমাদের পঞ্চম অগ্রাধিকার হল – ভালো চিকিৎসার জন্য বড় বড় শহরের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করা। সেজন্য স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ওপর আমাদের সরকার অভূতপূর্ব বিনিয়োগ করছে। আমরা দেখেছি যে স্বাধীনতার পর থেকেই যত ভালো হাসপাতাল তৈরি হয়েছে তা বড় বড় শহরগুলিতেই তৈরি হয়েছে। সামান্য স্বাস্থ্য খারাপ হলেই বড় শহরে যাও – এটাই ছিল স্বাভাবিক প্রবণতা। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে আমাদের সরকার এই পরিস্থিতি বদলানোর কাজে ক্রমাগত কাজ করে চলেছে। ২০১৪ সালের আগে দেশে মাত্র সাতটি এইমস হাসপাতাল ছিল। সেগুলির মধ্যে শুধু দিল্লিরটিকে ছেড়ে দিলে অন্য কোথাও এমবিবিএস-এর পড়াশোনা হত না, আবার কোথাও আউট পেশেন্ট ডিপার্টমেন্ট (ওপিডি) বা বহির্বিভাগ ছিল না। তাই সেগুলি সম্পূর্ণ ছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার পর এই সমস্ত ত্রুটি দূর করি, আর তারপর দেশে ১৬টি নতুন এইমস হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করি।

এইমস গুয়াহাটিও এগুলির মধ্যে একটি। আমাদের সরকার দেশের প্রত্যেক জেলায় যাতে একটি মেডিকেল কলেজ অবশ্যই থাকে, সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। ২০১৪ সালের আগে দেশে ৩৮৭টি মেডিকেল কলেজ ছিল। এখন সেগুলির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৬০০-তে পৌঁছে যাচ্ছে।

বন্ধুগণ,

আমাদের সরকারের ষষ্ঠ অগ্রাধিকার এই বিষয়ের ওপর রয়েছে যাতে ডাক্তারদের সংখ্যা যত বেশি সম্ভব বাড়ানো যায়। বিগত সাত বছরে এমবিবিএস এবং পিজি-র জন্য সারা দেশে ৭০ হাজারেরও বেশি নতুন আসন যুক্ত হয়েছে। আমাদের সরকার ৫ লক্ষেরও বেশি আয়ুষ চিকিৎসককেও অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকদের সমকক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এতে ভারতে চিকিৎসক এবং রোগীদের মধ্যে অনুপাতও শুধরেছে। সম্প্রতি সরকার আরও একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে প্রাইভেট মেডিকেল কলেজগুলিতে ৫০ শতাংশ আসনে ততটাই ফি নেওয়া হবে যতটা কোনও সরকারি মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়। দেশের অনেক দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের হাজার হাজার মেধাবী ছাত্রছাত্রী এই সিদ্ধান্তের ফলে উপকৃত হবেন। স্বাধীনতার পর থেকে দেশ আজ পর্যন্ত যতজন ডাক্তার পেয়েছে, আমাদের সরকারের প্রচেষ্টায় এখন আগামী ১০ বছরে দেশ তার থেকেও বেশি ডাক্তার পেতে চলেছে।

বন্ধুগণ,

আমাদের সরকারের সপ্তম অগ্রাধিকার স্বাস্থ্য পরিষেবার ডিজিটাইজেশন। সরকার চেষ্টা করছে যাতে চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ দীর্ঘ লাইন থেকে রোগীরা মুক্তি পান। চিকিৎসার নামে হাসপাতালে গিয়ে যত নতুন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, সেগুলি থেকে যেন মুক্তি পান। এর জন্য একের পর এক নতুন প্রকল্প চালু করা হয়েছে। গোটা দেশের নাগরিকরা দেশের যে কোনও জায়গায় গিয়ে যেন কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পগুলির সুবিধা পেতে পারেন সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। সেজন্য কোনও ধরনের বাধা-নিষেধ যেন না থাকে এটাই আমাদের ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান হেলথ’-এর ভাবনা। এই প্রচেষ্টা ১০০ বছরের সর্ববৃহৎ মহামারীর ক্ষেত্রেও দেশের সম্বল হয়ে উঠেছে, অনেক জটিল সমস্যার সমাধানের শক্তি যুগিয়েছে।  

বন্ধুগণ,

আজ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পগুলি দেশে ক্যান্সারের চিকিৎসাকে সুলভ এবং সস্তা করে তুলছে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমাদের সরকার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েরাও যাতে চিকিৎসক হয়ে উঠতে পারে, গ্রামে বসবাসকারী ছেলে-মেয়েরা যারা জীবনে ইংরেজি পড়ার সুযোগ পায়নি, তারাও যেন চিকিৎসক হতে পারে তা সুনিশ্চিত করতে এখন কেন্দ্রীয় সরকার সেই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে। এখন ছাত্রছাত্রীরা তাদের মাতৃভাষায় কিংবা স্থানীয় ভাষায় মেডিকেল এডুকেশন পেতে পারে তার জন্যও সরকার সমস্ত পরিষেবা তৈরি করছে যাতে গরীব ঘরের ছেলে-মেয়েরাও চিকিৎসক হয়ে উঠতে পারে।

বিগত বছরগুলিতে ক্যান্সারের এমন অনেক প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম প্রায় অর্ধেক করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে প্রত্যেক বছর ক্যান্সার রোগীদের প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জন ঔষধি কেন্দ্রের মাধ্যমে ৯০০-রও বেশি ওষুধ সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে। যে ওষুধ আগে ১০০ টাকায় পাওয়া যেত তা এখন ১০ টাকা কিংবা ২০ টাকা দামে যেন পাওয়া যায়, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই অনেক ওষুধ ক্যান্সারের চিকিৎসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই পরিষেবাগুলির মাধ্যমে রোগীদের কয়েকশ’ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। অনেক পরিবারের বয়স্ক মা-বাবারা ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগে আক্রান্ত। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের রোগীদের জন্য মাসে ১ হাজার, ১ হাজার ৫০০ বা ২ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হয়। জন ঔষধি কেন্দ্রগুলিতে সেই খরচ ৮০, ৯০ বা ১০০ টাকা খরচ করে যাতে হয়ে যায়, সেই চিন্তাই আমরা করেছি।

শুধু তাই নয়, আয়ুষ্মান ভারত যোজনার মাধ্যমে উপকৃতদের মধ্যে একটি বড় সংখ্যক মানুষ হলেন ক্যান্সারের রোগী। যখন এই প্রকল্প ছিল না, তখন অনেক গরীব পরিবারের মানুষ ক্যান্সারের চিকিৎসাই করাতেন না। তাঁরা ভাবতেন যে যদি হাসপাতালে যাই তাহলে সন্তানদের ঋণ করতে হবে আর এই ঋণ আমার ছেলে-মেয়েদেরকেই শোধ করতে হবে। বুড়ো বাবা-মা মরে যাওয়া পছন্দ করতেন, কিন্তু ছেলে-মেয়েদের ওপর বোঝা হতে পছন্দ করতেন না। সেজন্য তাঁরা হাসপাতালে যেতেন না, চিকিৎসা করাতেন না। বিশেষ করে আমাদের মা ও বোনেরা, তাঁরা তো চিকিৎসা করাতেনই না। তাঁরা ভাবতেন যে চিকিৎসার জন্য ঋণ নিতে হবে, বাড়ি, জমি বিক্রি করতে হবে। আমাদের মা, বোন ও মেয়েদের এই চিন্তা থেকে মুক্ত করার জন্য আমাদের সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। গরীব মা-বাবারা যদি চিকিৎসার অভাবে মারা যান, তাহলে আমরা কোন কাজের জন্য?

ভাই ও বোনেরা,

আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু বিনামূল্যে চিকিৎসাই পাওয়া যাচ্ছে না, ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগের ক্ষেত্রেও শুরুতে ডিটেক্ট করার ক্ষেত্রে সুবিধা হচ্ছে। আসাম সহ গোটা দেশে যে হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার খোলা হচ্ছে, সেগুলিতে ১৫ কোটিরও বেশি বন্ধুদের ক্যান্সার সংক্রান্ত পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়েছে। ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যে যত দ্রুত সম্ভব রোগ সম্পর্কে জানা যায়, তাহলে এই রোগকে জটিল হয়ে ওঠা থেকে আটকানো যেতে পারে।

বন্ধুগণ,

দেশে চিকিৎসা পরিকাঠামো শক্তিশালী করার যে অভিযান চলছে তার দ্বারা আসামবাসীও লাভবান হচ্ছেন। হিমন্তজি এবং তাঁর টিম প্রত্যেক জেলায় মেডিকেল কলেজ খোলার রাষ্ট্রীয় সঙ্কল্পের জন্য প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সরকার এটা সুনিশ্চিত করেছে যে অক্সিজেন থেকে শুরু করে ভেন্টিলেটর পর্যন্ত সমস্ত পরিষেবা আসামে ক্রমাগত বাড়তে থাকবে। ক্রিটিকাল কেয়ার ইনফ্রাস্ট্রাকচার আসামে দ্রুতগতিতে বাস্তবায়িত করার জন্য আসাম সরকার খুব ভালো কাজ করার লক্ষ্যে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে।

ভাই ও বোনেরা,

করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে দেশবাসী এবং বিশ্ববাসী লাগাতর লড়াই করছেন। ভারতে টিকাকরণ অভিযানের পরিধি অনেক বেড়ে গেছে। এখন তো শিশুদের জন্যও অনেক ভ্যাক্সিন অ্যাপ্রুভ হয়েছে। বয়স্কদের প্রিকশন ডোজের জন্য অনুমতি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন এটা আমাদের সকলের দায়িত্ব যে যথাসময়ে নিজেই গিয়ে টিকা নেব এবং যত দ্রুত সম্ভব আমাদের বাড়ির বাচ্চাদের সুরক্ষাকবচের ব্যবস্থাও করব।

বন্ধুগণ,

কেন্দ্রীয় সরকার এবং আসাম রাজ্য সরকার চা বাগানগুলিতে কর্মরত লক্ষ লক্ষ পরিবারের উন্নত জীবনযাত্রা সুনিশ্চিত করার জন্য সম্পূর্ণ সততার সঙ্গে কাজ করে চলেছে। বিনামূল্যে রেশন থেকে শুরু করে প্রত্যেক বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে দেওয়ার মতো যত সুবিধা রয়েছে, আসাম সরকার সেগুলিকে দ্রুতগতিতে চা বাগানগুলিতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। নবীন প্রজন্মের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগগুলিকে উন্নত করার জন্যও ক্রমাগত চেষ্টা করা হচ্ছে। উন্নয়নের দ্বারা যেন সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি লাভবান হন, কোনও পরিবার যেন বাকি না থাকে, এটাই আমাদের প্রচেষ্টা, এটাই আমাদের সঙ্কল্প।

ভাই ও বোনেরা,

আজ ভারতে উন্নয়নের যে ধারা নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি তাতে জনকল্যাণের পরিধিকে আমরা অনেক ব্যাপক করে দিয়েছি। আগে শুধু কিছু সাবসিডিকেই জনকল্যাণের সঙ্গে যুক্ত করে দেখা হত। পরিকাঠামোর উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রকল্পকে জনকল্যাণের সঙ্গে যুক্ত করে দেখা হত না। অথচ, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে গণ-পরিষেবাগুলির ডেলিভারি খুব কঠিন হয়। বিগত শতাব্দীর সেই ধ্যান-ধারণাগুলিকে পেছনে ফেলে এখন দেশ এগিয়ে চলেছে। আজ আপনারা দেখতে পাচ্ছেন যে আসামের দূরদুরান্ত এলাকায় উন্নত মানের সড়কপথ গড়ে উঠছে। ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর সেতু তৈরি হচ্ছে, রেল নেটওয়ার্ক আরও শক্তিশালী করে তোলা হচ্ছে। এই সবকিছুর মাধ্যমে স্কুল, কলেজে যাওয়া-আসা সহজ হয়েছে। কর্মসংস্থানের নতুন নতুন সুযোগ খুলেছে। দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর মানুষদেরও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। আজ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর মানুষেরাও মোবাইল ফোনের পরিষেবা ব্যবহার করতে পারছেন, ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছেন। এর ফলে তাঁরা সরকারের প্রতিটি পরিষেবা সহজেই পেতে পারছেন, সর্বস্তরে  দুর্নীতি থেকে মুক্তি পাচ্ছেন।

ভাই ও বোনেরা,

‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস অউর সবকা প্রয়াস’-এর এই ভাবনা নিয়ে আমরা আসাম এবং দেশের উন্নয়নকে গতি প্রদান করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আমরা চেষ্টা করছি যাতে আসামের যোগাযোগ ব্যবস্থা সুদৃঢ় হয়। আমরা চেষ্টা করছি যাতে এরাজ্যে নানা শিল্পে বিনিয়োগের নতুন নতুন সুযোগ গড়ে ওঠে। আসামে বিনিয়োগের জন্য অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাগুলিকে আমাদের সুযোগে পরিবর্তিত করতে হবে। চা থেকে শুরু করে জৈব চাষ, ভোজ্যতেলের সঙ্গে জড়িত নানা প্রকল্প, পর্যটন, আসামের উন্নয়নকে আমাদের নতুন উন্নয়নের গন্তব্য পর্যন্ত নিয়ে যাব।

বন্ধুগণ,

আমার আজকের আসাম যাত্রা আমার জন্য অত্যন্ত স্মৃতিবিজড়িত হয়ে উঠতে চলেছে। একদিকে আমি সেই মানুষদের সঙ্গে দেখা করে এসেছি যাঁরা বোমা, বন্দুকের রাস্তা ছেড়ে এখন সমাজের মূলস্রোতে ফিরে এসেছেন। তাঁদের জীবনে আর যেন বিচ্ছিন্নতাবাদের শিকার না হতে হয়, তাঁদের সুখ-শান্তির ব্যবস্থা যেন বজায় থাকে, আর সেজন্যই আপনাদের আশীর্বাদ নিতে এসেছি। কিন্তু এখানে এসে আমি নিজেই সবচাইতে বড় উদ্দীপনা এবং উৎসবের অনুষ্ঠান দেখে উজ্জীবিত হয়েছি। আজ আসামে আমাদের হাজার হাজার মা ও বোন আমাকে এই অনুভব এনে দিয়েছেন। আমি অনেক বছর ধরে আসামে আসছি। সম্ভবত কোনও বিহু এমন যায়নি, যখন আমার সেই সময়ে আসাম সফর হয়নি। কিন্তু আজ আমি এত বড় মাত্রায় একসঙ্গে মা ও বোনেদের বিহুর ছন্দে মত্ত হয়ে নাচতে দেখে অবাক হয়েছি। আমি এই ভালোবাসার জন্য, এই আশীর্বাদের জন্য বিশেষ করে, আসামের মা ও বোনেদের প্রণাম জানাই, তাঁদের আমি অন্তর থেকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।

বন্ধুগণ,

আরও একবার শ্রদ্ধেয় রতন টাটাজি নিজে থেকে এখানে এসেছেন। তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক চা দিয়ে শুরু হয়েছে, আর ‘চাহত’ বা আকাঙ্ক্ষায় বিস্তৃত হয়েছে। আর আজ তিনি আমাদের উত্তর-পূর্ব ভারতের জনগণের স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করার জন্যও আমাদের সঙ্গে এই অনুষ্ঠানে শরিক হয়েছেন। আমি তাঁকেও স্বাগত জানিয়ে আরও একবার আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক নতুন পরিষেবার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

অনেক অনেক ধন্যবাদ!

আমার সঙ্গে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে বলুন –

ভারতমাতা কী জয়!
ভারতমাতা কী জয়!
ভারতমাতা কী জয়!

অনেক অনেক ধন্যবাদ!

 

CG/SB/DM/


(Release ID: 1821852) Visitor Counter : 328