প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

টেরি’র বিশ্ব ধারাবাহিক বিকাশ সম্পর্কিত শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী ভাষণ

Posted On: 16 FEB 2022 6:14PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

 

একবিংশতম বিশ্ব ধারাবাহিক বিকাশ সম্পর্কিত শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। প্রথমে গুজরাটে এবং এখন জাতীয় স্তরে, সরকারি পদে বিগত দুই দশক ধরে আমি পরিবেশ এবং নিরন্তর বিকাশের লক্ষ্যে অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছি।

বন্ধুগণ, আমরা এটা শুনেছি যে, প্রায়শই মানুষ বলেন, আমাদের গ্রহ অত্যন্ত ভঙ্গুর। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই গ্রহ ভঙ্গুর নয়। আসলে, আমরাই ভঙ্গুর। এই গ্রহ এবং পরিবেশ-প্রকৃতির প্রতি আমাদের অঙ্গীকারই আসলে ভঙ্গুর। ১৯৭২-এ স্টকহোম সম্মেলন থেকে গত ৫০ বছরে পরিবেশ সম্পর্কে অনেক কথা বলা হয়েছে, কিন্তু কাজ হয়েছে খুব অল্প। পক্ষান্তরে, ভারতে আমরা কথা এবং কাজ – দুই-ই করে দেখিয়েছি।

আমাদের পরিবেশ সংক্রান্ত নীতির মূল কেন্দ্রে রয়েছে দরিদ্র মানুষের কাছে সুলভে শক্তিসম্পদ পৌঁছে দেওয়া। ‘উজ্জ্বলা যোজনা’র মাধ্যমে ৯ কোটির বেশি পরিবারকে দূষণমুক্ত রান্নার জ্বালানি সরবরাহ করা হয়েছে। ‘পিএম-কুসুম’ কর্মসূচির আওতায় আমরা কৃষকদের কাছে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি পৌঁছে দিয়েছি। এমনকি, আমরা কৃষকদেরকে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন প্যানেল বসাতে উৎসাহিত করছি। একইসঙ্গে, এই সৌরবিদ্যুৎ কৃষিকাজে ব্যবহার এবং অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে বিক্রি করার পরামর্শ দিচ্ছি। সৌরবিদ্যুৎচালিত জল পাম্পের ব্যবহার আরও বাড়াতে এবং বর্তমানে চালু পাম্পগুলিকে সৌরবিদ্যুতে রূপান্তরিত করতে জোর দেওয়া হচ্ছে। আমরা রাসায়নিকমুক্ত কৃষিকাজে অগ্রাধিকার দিচ্ছি, যা নিরন্তর এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ কৃষিকাজের বিকাশে সহায়ক হবে।

বন্ধুগণ, আমাদের এলইডি বাতি বিতরণ কর্মসূচি সাত বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। এই কর্মসূচি একদিকে ২২০ বিলিয়ন ইউনিটের বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয় যেমন করেছে, তেমনই প্রতি বছর ১৮০ বিলিয়ন টনের বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমণ হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে। আমরা জাতীয় স্তরে একটি হাইড্রোজেন মিশন শুরু করার কথা ঘোষণা করেছি। এই মিশনের উদ্দেশ্যই হল, অভিনব প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রিন হাইড্রোজেনকে ভবিষ্যৎ শক্তির চাহিদা পূরণে কাজে লাগানো। এই লক্ষ্যে গ্রিন হাইড্রোজেনের পূর্ণ সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে আমি টেরি’র মতো শিক্ষা ও গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানগুলিকে উৎসাহ দিয়ে আসছি।

বন্ধুগণ, ভারত বিবিধতা সমৃদ্ধ একটি দেশ। বিশ্বের মোট ভৌগোলিক এলাকার ২.৪ শতাংশ ভারতে। আমাদের দেশে বিশ্বের বিভিন্ন জৈব-প্রজাতির প্রায় ৮ শতাংশই রয়েছে। তাই, জৈব-প্রজাতি সংরক্ষণে বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষা আমাদের কর্তব্য। আমরা সংরক্ষিত এলাকাগুলিকে আরও শক্তিশালী করছি। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইইউসিএন জৈব-প্রজাতির সংরক্ষণে আমাদের প্রয়াসকে স্বীকৃতি দিয়েছে। হরিয়ানায় আরাবল্লির বায়ো-ডাইভার্সিটি পার্ক ওইসিএম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে যে সমস্ত জৈব-বৈচিত্র্য রয়েছে, তার সংরক্ষণের স্বীকৃতিস্বরূপ এই সাফল্য। একথা জানাতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, রামসার তালিকায় ভারতের আরও দুটি জলাভূমি স্থান পেয়েছে। এর ফলে রামসার তালিকায় ভারতের জলাভূমির সংখ্যা বেড়ে ৪৯ হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই জলাভূমিগুলির মোট ভৌগোলিক এলাকা ১ মিলিয়ন হেক্টরেরও বেশি। ভূমিক্ষয় প্রতিরোধে আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। ২০১৫ থেকেই আমরা ১১.৫ বিলিয়ন হেক্টরের বেশি ভূমিক্ষয় প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছি। 'বন চ্যালেঞ্জে'র মাধ্যমে আমরা জাতীয় অঙ্গীকার পূরণে দায়বদ্ধ। আমরা এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে ইউএনএসসিসিসি-র মাধ্যমে আমাদের যাবতীয় অঙ্গীকার পূরণে আমরা সক্ষম। গ্লাসগো-তে সিওপি-২৬ বৈঠকের সময় আমি আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেছিলাম। 

বন্ধুগণ, সমগ্র বিশ্বের নিরন্তর কল্যাণে সমন্বয়মূলক প্রয়াস গ্রহণ প্রয়োজন। পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ক্ষেত্রে আমাদের প্রয়াসগুলি স্বীকৃতি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক সৌর জোটের মাধ্যমে আমাদের উদ্দেশ্যই হল ‘এক সূর্য, এক বিশ্ব, এক গ্রিড’ গড়ে তোলা। আমাদের দূষণমূক্ত জ্বালানির যোগান বাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী ‘এক গ্রিড’ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করতে হবে। আর এটাই আমাদের ‘সমগ্র বিশ্ব’ কল্যাণমূলক প্রয়াস, যা ভারতের মূল্যবোধকেই প্রতিফলিত করে। 

বন্ধুগণ, বিপর্যয় প্রতিরোধী পরিকাঠামো গড়ে তুলতে জোট গঠনের ক্ষেত্রে আমাদের উদ্দেশ্যই হল, প্রাকৃতিক বিপর্যয়প্রবণ এলাকাগুলিতে এক মজবুত পরিকাঠামো গড়ে তোলা। সিওপি-২৬ বৈঠকের পাশাপাশি আমরা দ্বীপরাষ্ট্রগুলিতে বিপর্যয় প্রতিরোধী পরিকাঠামো গড়ে তুলতে এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। প্রকৃতপক্ষে, এই দ্বীপরাষ্ট্রগুলি অত্যন্ত বিপদসঙ্কুল। তাই, এ ধরনের রাষ্ট্রগুলির সুরক্ষায় বিপর্যয় প্রতিরোধী পরিকাঠামো গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। 

বন্ধুগণ, এই দুটি উদ্যোগের সঙ্গে আমরা এখন আরও একটি প্রয়াসকে যুক্ত করছি। আর এটি হল, ‘লাইফ’। পরিভাষায়, পরিবেশের অনুকূল জীবনশৈলী বা ‘লাইফস্টাইল ফর এনভায়রনমেন্ট’। প্রকৃতপক্ষে ‘লাইফ’ হল এমন এক প্রয়াস যা আমাদের গ্রহের অনুকূল জীবনশৈলীর সহায়ক হবে। ‘লাইফ’ বা পরিবেশের অনুকূল জীবনশৈলী এমন একটি জোট-প্রয়াস যা বিশ্বের সমস্ত সম-মনোভাবাপন্ন মানুষকে পরিবেশের অনুকূল জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করে। আমি এই ধরনের সম-মনোভাবাপন্ন মানুষদের তিনটি ‘পি’ হিসেবে গণ্য করি। আর এই তিনটি ‘পি’ হল – ‘প্রো, প্ল্যানেট, পিপল’। পরিভাষায় এই বিশ্বের কল্যাণে আগ্রহী মানুষ। সারা বিশ্বজুড়ে এই তিনটি ‘পি’ বা সম-মনোভাবাপন্ন মানুষদের নিয়েই ‘লাইফ’ জোট-প্রয়াস গড়ে উঠেছে। আমাদের এই প্রয়াস পরিবেশের সুরক্ষায় এক ত্রিমুখী কৌশল গ্রহণে সাহায্য করবে, যা পক্ষান্তরে বিশ্ব কল্যাণের সহায়ক হবে। 

বন্ধুগণ, আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আমার প্রেরণার উৎস। ২০২১-এ আমি বলেছিলাম, মানুষের স্বাস্থ্য এবং আমাদের এই গ্রহ কিভাবে একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। ভারতীয়রা সর্বদাই প্রকৃতির সঙ্গে সম্প্রীতি বজায় রেখে জীবনযাপন করেছেন। আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের আচার-অনুষ্ঠান, আমাদের দৈনিক জীবনযাপন এবং কৃষিকাজ সম্পর্কিত একাধিক উৎসবের মধ্য দিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের নিবিড় বন্ধন প্রতিফলিত হয়। ভারতীয় সংস্কৃতির মূল্য তত্ত্বই হল, সম্পদের ব্যবহার হ্রাস, পুনর্ব্যবহার, পুনরুদ্ধার এবং পুনর্নির্মাণ। ভারত জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় গৃহীত নীতি অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যাবে ঠিক যেমন আগেও করে এসেছে। এই কথাগুলি বলে এবং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার নিয়ে আমি এই শীর্ষ সম্মেলনে সারা বিশ্ব থেকে যোগ দেওয়া সকলকে এবং টেরি’কে আমার শুভেচ্ছা জানাই।

ধন্যবাদ!

অনেক অনেক ধন্যবাদ!

 

CG/BD/DM/



(Release ID: 1799026) Visitor Counter : 192