প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
পণ্ডিত যশরাজ কালচারাল ফাউন্ডেশনের শুভ সূচনা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা
Posted On:
28 JAN 2022 5:43PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২৮ জানুয়ারি, ২০২২
নমস্কার!
এই বিশেষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত দুর্গা যশরাজজি, সারঙ্গদেব পণ্ডিতজি, পণ্ডিত যশরাজ কালচারাল ফাউন্ডেশনের সহ-সংস্থাপক নীরজ জেটলিজি, দেশ ও বিশ্বের সংশ্লিষ্ট সকল সঙ্গীতজ্ঞ এবং শিল্পীগণ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ!
আমাদের দেশে সঙ্গীত, সুর এবং স্বরকে অমর বলে মনে করা হয়। কথিত আছে যে স্বরের প্রাণশক্তিও অমর হয়, এর প্রভাবও অমর হয়। এক্ষেত্রে যে মহাত্মা সঙ্গীতকে নিয়েই বেঁচে আছেন, সঙ্গীতই যাঁর অস্তিত্বের প্রতিটি কোষে গুঞ্জরিত হয়, তাঁরা শরীর ত্যাগ করার পরেও ব্রহ্মাণ্ডের প্রাণশক্তি ও চেতনায় অমর থাকেন।
আজ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সঙ্গীতজ্ঞ ও শিল্পীদের দ্বারা যে সঙ্গীত পরিবেশন করা হচ্ছে, যেভাবে পণ্ডিত যশরাজজির সুর, তাঁর সঙ্গীত আমাদের মধ্যে আজ গুঞ্জরিত হচ্ছে, সঙ্গীতের এই চেতনায় এই অনুভব জাগ্রত হয়ে ওঠে যেন পণ্ডিত যশরাজজি স্বয়ং আমাদের মধ্যে এসে উপস্থিত হয়েছেন। যেন তিনি নিজেই এই সঙ্গীত পরিবেশন করছেন।
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে তাঁর শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ঐতিহ্যকে আপনারা সবাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তাঁর ঐতিহ্যকে আগামী অনেক প্রজন্ম অনেক শতাব্দীর জন্য সুরক্ষিত করে রেখে যাচ্ছেন। আজ পণ্ডিত যশরাজজির জন্মজয়ন্তীর পূণ্য সমারোহের দিনও। এই দিনটিতে পণ্ডিত যশরাজ কালচারাল ফাউন্ডেশন স্থাপনের এই অভিনব কাজের জন্য আমি আপনাদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। বিশেষ করে, শ্রী দুর্গা যশরাজজি এবং পণ্ডিত সারঙ্গদেবকে শুভেচ্ছা জানাই। আপনারা আপনাদের পিতার প্রেরণাকে, তাঁর তপস্যাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য সমর্পণ করার সঙ্কল্প নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আমারও অনেকবার পণ্ডিত যশরাজজির শাস্ত্রীয় গায়েন নিজের কানে শোনার এবং তাঁর সঙ্গে দেখা করার ও কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছে।
বন্ধুগণ,
সঙ্গীত একটি অত্যন্ত গুঢ় বিষয়। আমি এই সম্পর্কে খুব বেশি জানি না। কিন্ত আমাদের ঋষিরা স্বর এবং নাদ নিয়ে যত ব্যাপক জ্ঞান বিতরণ করেছেন তা নিজের মধ্যে অত্যন্ত বিশিষ্ট ও অদ্ভূত। আমাদের সংস্কৃত গ্রন্থগুলিতে লেখা আছে –
“নাদ রূপঃ স্মৃতো ব্রহ্মা, নাদ রুপো জনার্দনঃ।
নাদ রূপঃ পারা শক্তিঃ, নাদ রুপো মহেশ্বরঃ।।”
অর্থাৎ, ব্রহ্মাণ্ডের জন্মদাতা, ব্রহ্মাণ্ডের জন্মদাত্রী, পালনকর্ত্রী এবং সঞ্চালনকারিনী ও লয়কারিনী শক্তিগুলি নাদ রূপেই থাকে। নাদকে, সঙ্গীতকে, প্রাণশক্তির এই প্রবাহের মধ্যে দেখার, বোঝার এই শক্তিই ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে এত অসাধারণ করে তোলে। সঙ্গীত একটি এমন মাধ্যম, যা আমাদের সাংসারিক কর্তব্যগুলিকে অনুভব করায় আর সাংসারিক মোহ থেকে মুক্তিও দেওয়ায়। সঙ্গীতের বৈশিষ্ট্য এটাই যে আপনারা তাকে ছুঁতে না পারলেও, স্পর্শ করতে না পারলেও, এটি অনন্তকাল ধরে আপনার মধ্যেই গুঞ্জরিত হতে থাকে।
আমাকে বলা হয়েছে যে পণ্ডিত যশরাজ কালচারাল ফাউন্ডেশনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল ভারতের জাতীয় ঐতিহ্য, কলা এবং সংস্কৃতির রক্ষা, সংরক্ষণ করা, এর বিকাশ এবং প্রচার করা। আমি এটা জেনে খুব খুশি হয়েছি যে এই ফাউন্ডেশন উদীয়মান শিল্পীদের উন্নয়নে সহযোগিতা করবে, শিল্পীদের আর্থিক রূপে সক্ষম করে তোলার জন্য চেষ্টা করবে, সঙ্গীত ক্ষেত্রের শিক্ষা এবং গবেষণাকেও আপনারা এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য বলে ভাবছেন। আমি মনে করি, পণ্ডিত যশরাজজির মতো মহান ব্যক্তিত্বের স্মৃতিতে আপনারা এই যে কাজটি করছেন, আপনাদের যে প্রকল্প, এর যে রোডম্যাপ তৈরি করেছেন, এটি তাঁর প্রতি অনেক বড় শ্রদ্ধাঞ্জলি। আমি এটাও বলব যে এখন তাঁর অনেক শিষ্যদের জন্য এক প্রকার গুরুদক্ষিণা দেওয়ার সময় এসেছে।
বন্ধুগণ,
আজ আমরা একটি এমন সময়ে মিলিত হচ্ছি যখন প্রযুক্তি সঙ্গীত বিশ্বেও অনেকটাই প্রবেশ করেছে। আমার এই পণ্ডিত যশরাজ কালচারাল ফাউন্ডেশনের প্রতি অনুরোধ যে আপনারা দুটি বিষয়ে বেশি করে গুরুত্ব দিন। আমরা সবাই বিশ্বায়নের কথা শুনি, কিন্তু বিশ্বায়নের যে পরিভাষা তার অধিকাংশই ঘুরে-ফিরে অর্থ-কেন্দ্রিক হয়ে ওঠে, তার সব কথাই যেন অর্থনীতির বিভিন্ন মাত্রাকে স্পর্শ করে। আজকের বিশ্বায়নের দৌড়ে ভারতীয় সঙ্গীতও যেন তার আন্তর্জাতিক পরিচয় গড়ে তুলতে পারে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজের প্রভাব বাড়াতে পারে, এটা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত মানব মনের গভীরতাকে আন্দোলিত করার সামর্থ্য রাখে। এর পাশাপাশি, প্রকৃতি ও পরমাত্মার ঐক্যকে, ঐক্যের অভিজ্ঞতাকেও গুরুত্ব দেয়। ‘ইন্টারন্যাশনাল যোগা ডে’ বা আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে এখন গোটা বিশ্বে যোগ এক প্রকার সহজ অস্তিত্বের অভিজ্ঞতা হয়ে উঠেছে, আর এতে একটা অভিজ্ঞতায় আমরা ঋদ্ধ হচ্ছি যে ভারতের এই ঐতিহ্য থেকে গোটা মানবজাতি, গোটা বিশ্ব উপকৃত হয়েছে। বিশ্বের প্রত্যেক মানুষ যোগ-এর মতো ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে জানা, বোঝা, শেখা এবং উপকৃত হওয়ার অধিকারী। এটা আমাদের দায়িত্ব, আমরা এই পবিত্র কাজটিও সম্পন্ন করব।
আমার দ্বিতীয় পরামর্শ হল, যখন প্রযুক্তির প্রভাব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে, তখন সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও প্রযুক্তি এবং তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব আসা উচিৎ। ভারতে এমন স্টার্ট-আপ গড়ে ওঠা উচিৎ, যা সম্পূর্ণরূপে সঙ্গীতের প্রতি উৎসর্গীকৃত। ভারতীয় বাদ্যযন্ত্র-ভিত্তিক, ভারতের সঙ্গীতের পরম্পরা-ভিত্তিক, ভারতীয় সঙ্গীতের যে পবিত্র ধারা রয়েছে, গঙ্গার মতো পবিত্র ধারাগুলি রয়েছে, সেগুলিকে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কিভাবে সুসজ্জিত করব, তা নিয়ে অনেক কিছু করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এতে আমাদের দেশের যে গুরু-শিষ্য পরম্পরা রয়েছে, তাকেও উৎসাহ যোগাতে হবে। কিন্তু প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি আন্তর্জাতিক শক্তিতে পরিণত হতে হবে, প্রয়োজনে মূল্য সংযোজন করতে হবে।
বন্ধুগণ,
ভারতের জ্ঞান, ভারতের দর্শন, ভারতের চিন্তন, আমাদের দেশের ভাবনাচিন্তা, আমাদের দেশের আচার-ব্যবহার, আমাদের সংস্কৃতি ও শিষ্টাচার, আমাদের সঙ্গীত – এসব কিছুর মূলে। এই সমস্ত বিষয়গুলি মানবতার জন্য সেবার ভাব নিয়ে অনেক শতাব্দী ধরে আমাদের সকলের জীবনে বংশপরম্পরায় চেতনা সঞ্চারিত করেছে, সঞ্জীবিত রেখেছে। গোটা বিশ্বের কল্যাণের কামনা সহজ রূপেই এতে প্রকট হয়। সেজন্য আমাদের ভারতকে, ভারতের ঐতিহ্যগুলিকে, আর পরিচয়কে আমরা যতটা এগিয়ে নিয়ে যাব, ততটাই আমরা মানবতার সেবাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করব। এটাই আজকের ভারতের বক্তব্য, এটাই আজকের ভারতের মন্ত্র।
আজ আমরা কাশীর মতো কলা ও সংস্কৃতির প্রাচীন কেন্দ্রগুলির পুনরুজ্জীবিত করছি, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং প্রকৃতি প্রেম নিয়ে আমাদের যে আস্থা রয়েছে, আজ ভারত তার মাধ্যমে বিশ্বকে সুরক্ষিত ভবিষ্যতের পথ দেখাচ্ছে। ঐতিহ্যের পাশাপাশি উন্নয়ন – এই মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে যাওয়া ভারতের এই যাত্রায় ‘সবকা প্রয়াস’ সামিল হতে হবে।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, পণ্ডিত যশরাজ কালচারাল ফাউন্ডেশন এখন আপনাদের সকলের সক্রিয় অবদানের সাফল্যের নতুন উচ্চতা অর্জন করবে। এই ফাউন্ডেশন সঙ্গীত সেবার, সাধনার এবং দেশের প্রতি আমাদের সঙ্কল্পগুলির সিদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমে হয়ে উঠবে।
এই বিশ্বাস নিয়ে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই, আর এই নতুন প্রচেষ্টার জন্য আমার অন্তর থেকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।
ধন্যবাদ!
CG/SB/DM/
(Release ID: 1793986)
Visitor Counter : 164
Read this release in:
English
,
Urdu
,
Hindi
,
Marathi
,
Assamese
,
Manipuri
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam