ভূ-বিজ্ঞানমন্ত্রক

বর্ষশেষ পর্যালোচনা-২০২১ : ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রক

Posted On: 29 DEC 2021 3:14PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১

 

কোভিড-১৯ মহামারীর দরুণ চলতি বছরে মানবসভ্যতা বেশ কিছু অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হয়েছে। ভূ-বিজ্ঞান ক্ষেত্রে ভারতীয় বিজ্ঞানী ও গবেষকরা একাধিক উল্লেখযোগ্য সাফল্যের নজির রেখেছেন। ভারতীয় বিজ্ঞানী ও গবেষকদের কঠোর পরিশ্রম ও নিরলস প্রয়াসের কয়েকটি সাফল্যের দৃষ্টান্ত এখানে উল্লেখ করা হ’ল:

২০২১-এ ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রকের উল্লেখযোগ্য সাফল্য:

• কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটি গত ১৬ জুন গভীর সমুদ্রের অতলে থাকা সম্পদ অনুসন্ধান ও সরকারের নীল অর্থনীতি উদ্যোগে সমর্থন যোগাতে একটি উচ্চাকাঙ্খী কর্মপরিকল্পনা ডীপ ওশন মিশন অনুমোদন করে। এই কর্মসূচি খাতে ৪ হাজার ৭৭ কোটি টাকা তহবিল সংস্থান করা হয়। একাধিক প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে নোডাল সংস্থা হিসাবে ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রক এই উচ্চাকাঙ্খী পরিকল্পনাটি রূপায়ণ করবে। 

• ভূ-বিজ্ঞান প্রতিমন্ত্রী ডাঃ জিতেন্দ্র সিং গত ৫ নভেম্বর ডীপ ওশন কর্মসূচির আওতায় ভারতীয় সমুদ্রযান মিশনের সূচনা করেছেন।

• ভারত মহাসাগরের মাঝ বরাবর ৫ হাজার ২৭০ মিটার গভীরে খননকার্যের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ওআরভি সাগরনিধি উদ্যোগের সূচনা হয় গত মার্চ-এপ্রিল নাগাদ। 

• বঙ্গোপসাগরের গভীর জলে বায়োজিওকেমিকেল পদার্থের উপস্থিতি পরিমাপ করতে ২টি গ্লাইডার বসানো হয়েছে। এই গ্লাইডারগুলির সাহায্যে বঙ্গোপসাগরের গভীরে অক্সিজেন মিনিমাম জোনে বায়োজিওকেমিকেল পদার্থের পরিমাপ করা সম্ভব হবে। 

• ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রক গত ২৭ জুলাই ভূ-ব্যবস্থা সম্পর্কিত একটি সায়েন্স ডেটা পোর্টাল চালু করে। এই পোর্টালে মন্ত্রকের রূপায়িত বিভিন্ন কর্মসূচির প্রায় ১ হাজার ৫০ মেটাডেটার খতিয়ান রাখা যাবে। 

• সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় তৌকতে, যশ, গুলাব এবং শাহীন স্থলভূমিতে আছড়ে পড়ার সঠিক সময়সীমার আগাম জারি করায় বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষগুলি হাজার হাজার সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। 

• দেশে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়, প্রবল বৃষ্টি, কুয়াশা, তাপ প্রবাহ, শৈত প্রবাহ, বজ্রবিদ্যুৎ জনিত আবহাওয়ার পূর্বাভাস ব্যবস্থায় লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি হয়েছে। ২০১৬-২০২০ পর্যন্ত এই পাঁচ বছরে প্রতিকূল আবহাওয়ার সঠিক পূর্বাভাষ ব্যবস্থায় ২০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে। 

• বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি ও এরকম চরম প্রতিকূল আবহাওয়ার দরুণ হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা কমাতে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ প্রতি ৩ ঘণ্টা অন্তর পূর্বাভাষ জারি করেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চরম প্রতিকূল আবহাওয়ার পূর্বাভাষ এসএমএস এবং ই-মেল মারফৎ জারি করা হয়েছে। এছাড়াও, আকাশবাণী, দূরদর্শন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় আবহাওয়ার সতর্কবার্তা প্রচার করা হয়েছে। 

• হিমাচল প্রদেশে দুটি ও উত্তরাখন্ডে একটি সহ মোট তিনটি ডপলার ওয়েদার র‍্যাডার চালু করা হয়েছে। দেশের ১১টি জেলায় কৃষি-আবহাওয়া পূর্বাভাষ ইউনিট চালু হয়েছে। এর ফলে, চলতি বছরে এ ধরনের ১৯৯টি ইউনিট চালু করা হয়েছে।

• বর্ষার গতিপ্রকৃতি আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য মধ্যপ্রদেশের সেহর জেলায় ১০০ একরের বেশি জায়গা জুড়ে পর্যবেক্ষণমূলক কেন্দ্র অ্যাটমোস্ফিয়ারিক রিসার্চ টেস্টবেড চালু হয়েছে। 

• লাইটনিং লোকেশন নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার আওতায় ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ট্রপিকাল মেটিওরলজি দেশে মোট ৮৩টি সেন্সর বসিয়েছে। এর ফলে, দেশের সমস্ত রাজ্য ও লাক্ষাদ্বীপ বাদে সমস্ত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এ ধরনের সেন্সর বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। 

• দিল্লি জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে বায়ুর গুণমান পরিমাপের জন্য ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ট্রপিকাল মেটিওরলজি সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে ডিসিশন সাপোর্ট সিস্টেম ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। ডাঃ সিং গত ১৮ অক্টোবর এই ব্যবস্থার সূচনা করেন। 

• মধ্য মেয়াদী আবহাওয়ার পূর্বাভাষ দেওয়ার জন্য তথ্য বিশ্লেষণ ব্যবস্থায় আরও বেশি উপগ্রহের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাষ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে একটি হাই রেজোলিউশন র‍্যাপিড রিফ্রেশ ব্যবস্থার সূচনা হয়েছে। 

• হাই রেজোলিউশন র‍্যাপিড রিফ্রেশ ব্যবস্থা প্রতি ১২ ঘণ্টায় সঠিক পূর্বাভাষ দেওয়ার জন্য কাজে লাগানো হচ্ছে। দেশের সমস্ত অঞ্চলকেই এই ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে, যাতে প্রতি ২ ঘণ্টা অন্তর আবহাওয়ার পূর্বাভাষে আবডেট করা যায়। 

• পুণের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ট্রপিকাল মেটিওরলজি প্রতিষ্ঠানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মেশিন লার্নিং, ডীপ লার্নিং সম্পর্কিত ভার্চ্যুয়াল সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। 

• চলতি বছরে উপগ্রহ তথ্যের উপর ভিত্তি করে দ্বি-সাপ্তাহিক ভিত্তিতে সমুদ্রের জলের তাপমাত্রায় হেরফের, জলে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের কুপ্রভাব থেকে প্রবাল প্রাচীরগুলিকে রক্ষা করতে ৮৮টি পরামর্শ জারি করা হয়েছে। 

• পন্ডিচেরী উপকূল থেকে দেড় কিলোমিটার ভেতরে সমুদ্রের ১০ মিটার গভীর পর্যন্ত জলের গুণমান নিরূপণে ন্যাশনাল সেন্টার ফর কোস্টাল রিসার্চ একটি অত্যাধুনিক ব্যবস্থা চালু করেছে। আধুনিক এই ব্যবস্থায় এমন সেন্সর রয়েছে, যার সাহায্যে জলের গুণমান ও উৎপাদনশীলতার উপর নজর রাখা সম্ভব হবে। এই সেন্সর থেকে প্রতি ২০ মিনিটে জলের গুণমান সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়।

• সামুদ্রিক সম্পদ অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ কর্মসূচির আওতায় সাগর সম্পদ জলযানের সাহায্যে ভারতীয় স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক এলাকা থেকে সংগৃহীত সম্পদ বিশ্লেষণ করে ডেকাপড ক্র্যাস্টেসিয়ানের ৬টি নতুন প্রজাতি, নতুন প্রজাতির সামুদ্রিক কীট এবং ২টি নতুন প্রজাতির ইলের হদিশ মিলেছে। 

• ৩৫টি নতুন ভূ-কম্প সম্পর্কিত পর্যবেক্ষণ যন্ত্র বসিয়ে বর্তমান ন্যাশনাল সিসমোলজিকাল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে, যাতে দেশের অধিকাংশ এলাকায় রিখটার স্কেলে তিন বা তার বেশি কম্পনকে রেকর্ড করা যায়। 

• দেশের ৪টি শহরে সিসমিক মাইক্রোজোনেশন সংক্রান্ত কাজকর্ম প্রায় শেষ পর্যায়ে। এছাড়াও, আরও ৮টি শহরে এ সম্পর্কিত কাজকর্ম শুরু হয়েছে। 

• ন্যাশনাল সেন্টার ফর আর্থ সায়েন্স স্টাডিজ সাবমেরিন গ্রাউন্ড ওয়াটার ডিসচার্জ বা অ্যাকুইফারের খোঁজ পেয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল বরাবর সমুদ্রের তলদেশে অ্যাকুইফারের খোঁজ পাওয়া গেছে। 

• আন্টার্টিকায় ভারতের ৪০তম বৈজ্ঞানিক অভিযানের সূচনা হয় গোয়ার মার্মাগাও থেকে গত জানুয়ারি মাসে। এই অভিযানে ৪৩ জন সদস্য ছিলেন। আন্টার্টিকায় ভারতের ৪১তম অভিযানের সূচনা হয় গত ১৫ নভেম্বর গোয়ার ন্যাশনাল সেন্টার ফর পোলার অ্যান্ড ওশন রিসার্চ প্রতিষ্ঠান থেকে। 

• ৪১তম আন্টার্টিকা অভিযানে ২টি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি রয়েছে। এর একটি হ’ল – আন্টার্টিকায় যে ভারতী স্টেশন রয়েছে, সেখানে ভূ-তাত্ত্বিক অনুসন্ধান চালানো। এই অনুসন্ধানের মাধ্যমে অতীতে ভারতের সঙ্গে আন্টার্টিকার যোগসূত্র খুঁজে বের করা হবে। দ্বিতীয় কর্মসূচিটি হ’ল – ব্রিটিশ আন্টার্টিক সার্ভে এবং নরওয়ে পোলার ইন্সটিটিউটের সঙ্গে সহযোগিতায় মৈত্রী স্টেশনের কাছে ৫০০ মিটার তুষার খনন করে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতি গ্রহণ।

• হায়দরাবাদে আইএনসিওআইএস প্রতিষ্ঠানে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেনিং সেন্টার ফর অপারেশনাল ওশনোগ্রাফি গড়ে তোলা হয়েছে। ইউনেস্কোর এই প্রতিষ্ঠানটিতে ৯৫টি দেশ থেকে আসা প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে গত নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৯টি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং ৩টি ওয়েবিনার আয়োজন করা হবে। এর মধ্যে ৯০৬ জন ভারতের এবং ৬২০ জন অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিকে অনলাইন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

• ভারত ও ভিয়েতনাম গত ১৭ ডিসেম্বর সামুদ্রিক বিজ্ঞান ও বাস্তুতন্ত্র নিয়ে কারিগরি সহযোগিতা বাড়াতে একটি সমঝোতাপত্রে স্বাক্ষর করেছে। 

• ভারতের স্বাধীনতা গৌরবময় ৭৫ বছর এবং মানুষের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সাফল্য তুলে ধরতে আজাদি কা অমৃত মহোৎসবের অঙ্গ হিসাবে ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রক গত ১৮-২৪ অক্টোবর পর্যন্ত আইকনিক সপ্তাহ উদযাপন করে। এই উপলক্ষে মন্ত্রকের সমস্ত প্রতিষ্ঠানে আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলা নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

• সপ্তম ভারত আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান উৎসব গত ১০ – ১৩ ডিসেম্বর গোয়ায় আয়োজিত হয়। এবারের উৎসব আয়োজনের মূল দায়িত্বে ছিল ন্যাশনাল সেন্টার ফর পোলার অ্যান্ড ওশন রিসার্চ। এই উৎসবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রদর্শনীর পাশাপাশি, ১২টি ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এবারের উৎসবে ২৫ শতাংশ প্রতিনিধি স্বশরীরে এবং ৭৫ শতাংশ প্রতিনিধি ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যোগ দেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হ’ল এবারের উৎসবে তিনটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড হয়েছে। 

 

CG/BD/SB



(Release ID: 1786129) Visitor Counter : 204