প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

গুজরাটে বিনিয়োগকারীদের শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 13 AUG 2021 1:43PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১৩ আগস্ট, ২০২১

নমস্কার!

আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগী শ্রী নীতিন গড়করিজি, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিজয় রুপানিজি, অটো ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত সমস্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ, সমস্ত ও..এম. অ্যাসোসিয়েশন, মেটাল এবং স্ক্র্যাপিং ইন্ডাস্ট্রির সমস্ত সদস্যগণ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ!

৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের আগে আজকের এই কর্মসূচি, আত্মনির্ভর ভারতের বড় লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করার দিশায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আজ দেশ ন্যাশনাল অটোমোবাইল স্ক্র্যাপেজ পলিসি চালু করছে। এই নীতি নতুন ভারতের মোবিলিটির অটো সেক্টরকে নতুন পরিচয় প্রদানকারী। দেশে ভেহিকেল পপুলেশনের আধুনিকীকরণকে আনফিট ভেহিকেলগুলির একটি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় সড়ক থেকে সরানোর ক্ষেত্রে এই নীতি খুব বড় ভূমিকা পালন করবে। দেশের প্রায় প্রত্যেক নাগরিক, প্রত্যেক শিল্পোদ্যোগ, প্রত্যেক ক্ষেত্রে এর ফলে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

বন্ধুগণ,

আপনারা সবাই জানেন যে দেশের অর্থনীতির জন্য মোবিলিটি কত বড় ফ্যাক্টর। মোবিলিটিতে আধুনিকতা আসায় ট্র্যাভেল এবং ট্রান্সপোর্টেশনের বোঝা যেমন হ্রাস পেয়েছে, তেমনই অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও সহায়ক রূপে প্রমাণিত হয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর ভারত নির্মল, যানজটহীন এবং কনভেনিয়েন্ট মোবিলিটির লক্ষ্য নিয়ে এগোবে; এটাই আজ সময়ের চাহিদা আর সেজন্য সরকার আজকের এই পদক্ষেপ নিয়েছে, আর এতে শিল্প জগতের, আপনাদের মতো সমস্ত মহারথীদের, সংশ্লিষ্ট সকলের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে।

বন্ধুগণ,

নতুন স্ক্র্যাপিং নীতিতে বর্জ্য থেকে সম্পদ-এর অভিযান ‘সার্কুলার ইকনমি’র একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। এই নীতি দেশের শহরগুলি থেকে দূষণ কম করা আর পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি আমাদের দ্রুত উন্নয়নের দায়বদ্ধতাকেও তুলে ধরছে। রিইউজ, রিসাইকেল এবং রিকভারি-র সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে এই নীতি অটো সেক্টরে এবং মেটাল সেক্টরে দেশের আত্মনির্ভরতাকে নতুন প্রাণশক্তি যোগাবে। শুধু তাই নয়, এই নীতি দেশে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি নতুন বিনিয়োগ আনবে আর হাজার হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।

বন্ধুগণ,

আজ আমরা যে প্রোগ্রাম চালু করেছি এর সময়টাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা স্বাধীনতার ৭৫তম বছরে প্রবেশ করতে চলেছি। এখান থেকে দেশের জন্য আগামী ২৫ বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ২৫ বছরে আমাদের কর্মসংস্কৃতি, আমাদের দৈনন্দিন জীবন, আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক অনেক পরিবর্তন আসতে চলেছে, আসবেই। যেভাবে প্রযুক্তি বদলাচ্ছে, আমাদের জীবনশৈলী থেকে শুরু করে আমাদের অর্থনীতি – উভয় ক্ষেত্রেই অনেক পরিবর্তন আসবে। এই পরিবর্তনের মাঝে আমাদের পরিবেশ, আমাদের মাটি, আমাদের সম্পদ, আমাদের কাঁচামাল – এসব কিছুর রক্ষাও ততটাই প্রয়োজনীয়। প্রযুক্তি সঞ্চালনকারী রেয়ার আর্থ মেটালস যা এখনই দুর্লভ। কিন্তু যে মেটাল আজ পাওয়া যাচ্ছে তাও কবে দুর্লভ হয়ে পড়বে তা বলা মুশকিল। ভবিষ্যতে আমরা প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করতে পারি। কিন্তু পৃথিবী মায়ের কাছ থেকে যেসব সম্পদ পাওয়া যায় তা আমাদের হাতে নেই। সেজন্য আজ একদিকে যেমন ভারত গভীর সমুদ্র অভিযানের মাধ্যমে নতুন সম্ভাবনাগুলির খোঁজ করছে, অন্যদিকে সার্কুলার ইকনমিকেও উৎসাহ যোগাচ্ছে। আমাদের উন্নয়নকে কিভাবে দীর্ঘস্থায়ী করা যায়, পরিবেশ-বান্ধব করা যায় সে চেষ্টা করা হচ্ছে। পরিবেশ পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জগুলি আমরা প্রতিদিনই অনুভব করছি। সেজন্য ভারতকে নিজের ভালোর জন্য, নিজের নাগরিকদের ভালোর জন্য বড় পদক্ষেপ নিতেই হবে। এই ভাবনা নিয়েই বিগত বছরগুলিতে শক্তি-উৎপাদন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব কাজ হয়েছে। সৌর এবং বায়ুশক্তি থেকে শুরু করে জৈব জ্বালানি উৎপাদন ক্ষেত্রে আজ ভারত বিশ্বের অগ্রণী দেশগুলির অন্যতম। বর্জ্য থেকে সম্পদ আহরণের একটি অনেক বড় অভিযান আমাদের দেশে চলছে। এই অভিযানকে পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে আর আত্মনির্ভরতার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। আজকাল তো আমরা সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রেও বর্জ্যকে বড় মাত্রায় ব্যবহার করছি। সরকারি ভবন নির্মাণ, গরীবদের জন্য গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রেও আমরা রিসাইক্লিং-কে উৎসাহ যোগাচ্ছি।

বন্ধুগণ,

এমনই অনেক প্রচেষ্টার মধ্যে আজ অটোমোবাইল ক্ষেত্রেরও নাম যুক্ত হল। এই নীতি থেকে সাধারণ পরিবারগুলির সব ধরনের বহুবিধ লাভ হবে। সবচাইতে আগে যে লাভ হবে তা হল পুরনো গাড়ি স্ক্র্যাপ করলে একটি শংসাপত্র পাওয়া যাবে। এই শংসাপত্র যাঁর কাছে থাকবে তাঁকে নতুন গাড়ি কিনলে রেজিস্ট্রেশনের জন্য কোনও টাকা দিতে হবে না। পাশাপাশি তিনি রোড ট্যাক্সের ক্ষেত্রেও কিছু ছাড় পাবেন। দ্বিতীয় লাভ এটা হবে, পুরনো গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ, মেরামতির খরচ, জ্বালানির দক্ষতা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও অনেক সাশ্রয় হবে। তৃতীয় লাভ সরাসরি আমাদের জীবনের সঙ্গে যুক্ত। পুরনো গাড়িগুলিতে পুরনো প্রযুক্তি থাকার ফলে পথ দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। চতুর্থত, এর মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের ফলে আমাদের স্বাস্থ্যে যে প্রভাব পড়ে তাও হ্রাস পাবে। আর সবচাইতে বড় কথা হল, এই নীতির মাধ্যমে শুধুই গাড়ির বয়স দেখে স্ক্র্যাপ করা হবে না। স্ক্র্যাপ করার আগে প্রতিটি গাড়ির বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অথরাইজড অটোমেটেড টেস্টিং সেন্টারে ফিটনেস টেস্ট হবে। সেখানে যদি গাড়িটিকে আনফিট পাওয়া যায় তবেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে স্ক্র্যাপ করা হবে। সেজন্য সারা দেশে যে রেজিস্ট্রার্ড ভেহিকেল স্ক্র্যাপিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে তা হবে প্রযুক্তিচালিত ও স্বচ্ছ লেনদেনের সুবিধা সম্পন্ন।

বন্ধুগণ,

ফর্ম্যাল স্ক্র্যাপিং থেকে কী লাভ হয় তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা গুজরাটের রয়েছে। একটু আগেই নীতিনজি সে কথা বর্ণনা করছিলেন। গুজরাটের অলং এলাকাটি শিপ রিসাইক্লিং হাব রূপে পরিচিত। এই অলং বিশ্বের শিপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের অংশীদারিত্ব দ্রুতগতিতে বাড়াচ্ছে। শিপ রিসাইক্লিং-এর এই পরিকাঠামো এখানে কর্মসংস্থানের হাজার হাজার সুযোগ গড়ে তুলেছে। এই গোটা এলাকায় স্ক্র্যাপিং এর উপযুক্ত পরিকাঠামোও রয়েছে আবার দক্ষ মানবসম্পদও রয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে জাহাজের পর এবার গাড়ি স্ক্র্যাপিং-এর ক্ষেত্রেও এই এলাকা অনেক বড় হাব হয়ে উঠতে পারে।

বন্ধুগণ,

এই স্ক্র্যাপিং নীতি থেকে গোটা দেশে স্ক্র্যাপ সংক্রান্ত ক্ষেত্রটি নতুন প্রাণশক্তি পাবে। নতুন নিরাপত্তা পাবে। বিশেষ করে, স্ক্র্যাপিং-এর সঙ্গে জড়িত আমাদের যে শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা রয়েছেন তাঁদের জীবনে অনেক বড় পরিবর্তন আসবে। এর ফলে শ্রমিকরা নিরাপদ পরিবেশ পাবেন, সংগঠিত ক্ষেত্রের অন্যান্য কর্মচারীদের মতো সমস্ত সুযোগ-সুবিধাও পাবেন। শুধু তাই নয়, স্ক্র্যাপের কাজ করা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অথরাইজড স্ক্র্যাপিং সেন্টারগুলির জন্য কালেকশন এজেন্টের কাজও করতে পারবেন।

বন্ধুগণ,

এই প্রোগ্রাম থেকে অটো এবং মেটাল ইন্ডাস্ট্রির অনেক বেশি লাভ হবে। গত বছরই আমাদের প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার স্ক্র্যাপ স্টিল আমদানি করতে হয়েছিল, কারণ ভারতে এখন পর্যন্ত যত স্ক্র্যাপিং হয় তা প্রোডাক্টিভ নয়। এথেকে এনার্জি রিকভারি অত্যন্ত নগণ্য। হাই স্ট্রেংথ স্টিল অ্যালয়ের সম্পূর্ণ মূল্য পাওয়া যায় না আর যে দামি ধাতু রয়েছে সেগুলির রিকভারিও হয় না। এখন যখন একটি বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি-নির্ভর স্ক্র্যাপিং চালু হবে তখন আমরা সেই বিরল আর্থ মেটালগুলিকে রিকভার করতে পারব।

বন্ধুগণ,

আত্মনির্ভর ভারতকে গতি প্রদান করতে, ভারতে ইন্ডাস্ট্রিকে সাসটেনেবল এবং প্রোডাক্টিভ করে তুলতে নিরন্তর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আমরা পূর্ণ রূপে চেষ্টা করছি যাতে অটো ম্যানুফ্যাকচারিং-এর সঙ্গে যুক্ত ভ্যালু চেন-এর জন্য যতটা সম্ভব ততটাই কম যেন আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু এতে শিল্পোদ্যোগগুলিকেও সামান্য অতিরিক্ত উদ্যোগ নিতে হবে। আগামী ২৫ বছরের জন্য আপনাদের কাছেও আত্মনির্ভর ভারতের একটা স্পষ্ট রোডম্যাপ থাকা প্রয়োজন। দেশ এখন নির্মল, যানজট মুক্ত এবং কনভেনিয়েন্ট মোবিলিটির দিকে এগিয়ে চলেছে। সেজন্য পুরনো দৃষ্টিকোণ আর পুরনো প্র্যাক্টিসগুলিও বদলাতে হবে। আজ ভারত নিরাপত্তা এবং উৎকর্ষের হিসেবে দেশের নাগরিকদের আন্তর্জাতিক মান প্রদানের ক্ষেত্রে দায়বদ্ধ। বিএস-৪ থেকে বিএস--এর দিকে সরাসরি ট্র্যানজিশনের পেছনে এই ভাবনাই কাজ করছে।

বন্ধুগণ,

দেশে গ্রিন এবং ক্লিন মোবিলিটির জন্য সরকার গবেষণা থেকে শুরু করে পরিকাঠামো পর্যন্ত প্রত্যেক স্তরে ব্যাপক কাজ করছে। ইথানল থেকে শুরু করে হাইড্রোজেন ফুয়েল কিংবা ইলেক্ট্রিক মোবিলিটি, সরকারের এই অগ্রাধিকারগুলির সঙ্গে শিল্পোদ্যোগগুলির সক্রিয় অংশীদারিত্ব অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। গবেষণা ও উন্নয়ন থেকে শুরু করে পরিকাঠামো পর্যন্ত শিল্প জগতকে তাদের অংশীদারিত্ব বাড়াতে হবে। সেজন্য আপনারা যে রকম সাহায্য চান সরকার তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। এখান থেকে আমাদের নিজেদের অংশীদারিত্বের নতুন মাত্রায় পৌঁছতে হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই নতুন প্রোগ্রাম দেশবাসীকেও অটো সেক্টরে একটি নতুন প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ করে তুলবে, নতুন গতি আনবে আর নতুন আস্থাও সঞ্চারিত হবে। আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ সুযোগকে আমার মনে হয় না শিল্প জগৎ হাতছাড়া হতে দেবে। আমি মনে করি না যে পুরনো গাড়িগুলিকে যাঁরা বহন করে চলেছেন, তাঁরা এই সুযোগকে হাতছাড়া করবেন। এটা নিজেই একটা বড় পরিবর্তনের সপক্ষে আস্থা উদ্রেগকারী ব্যবস্থা। আজ গুজরাটে এই কর্মসূচিকে উদ্বোধন করা হল। নতুন নীতি চালু করা হল, আর শুধু গুজরাটে কেন, আমাদের দেশেই সার্কুলার ইকনমি শব্দটি হয়তো এখন নতুন এসেছে! কিন্তু আমরা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, বাড়িতে জামা-কাপড় পুরনো হলে দিদা-ঠাকুমারা সেগুলি সেলাই করে কাঁথা বানিয়ে ফেলতেন। তারপর একদিন সেই কাঁথাও পুরনো হয়ে যেত। তখন সেগুলি ছিঁড়ে ঘর মোছা হিসেবে ব্যবহার করতেন। রিসাইক্লিং নতুন কী বলছে? সার্কুলার ইকনমিই বা নতুন কী বলছে? এই পুনর্ব্যবহার ভারতের জীবনে নতুন কিছু নয়। আমাদেরকে এখন শুধু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এগিয়ে নিয়ে গেলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আবর্জনা থেকে সম্পদ উৎপাদনের এই অভিযানে প্রত্যেকেই শরিক হবেন আর আমরাও নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করার লক্ষ্যে সফল হব। আমি আরেকবার আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

CG/SB/DM/…..14th August, 2021…

 



(Release ID: 1745885) Visitor Counter : 203