প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
জাতির উদ্দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত ২’০, (২৫তম পর্ব) অনুষ্ঠানের বাংলা অনুবাদ
Posted On:
27 JUN 2021 11:43AM by PIB Kolkata
নতুনদিল্লি, ২৭.০৬.২০২১
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার! প্রায়শই ‘মন কি বাত’ এ আপনাদের প্রচুর প্রশ্ন থাকে। এই বার আমি ভাবলাম যে ভিন্ন কিছু করা যাক, আমি আপনাদের প্রশ্ন করব। অতএব মনযোগ দিয়ে শুনুন আমার প্রশ্ন।
…অলিম্পিকে ব্যক্তিগত স্বর্ণপদক জয়ী প্রথম ভারতীয় কে ছিলেন?
…অলিম্পিকের কোন খেলায় এখনও পর্যন্ত ভারত সবথেকে বেশি পদক জিতেছে?
…অলিম্পিকে কোন খেলোয়াড় সবথেকে বেশি পদক জিতেছেন?
বন্ধু, আপনি আমাকে উত্তর দিন বা না দিন, কিন্তু মাইগভে অলিম্পিকের উপর যে ক্যুইজ আছে সেখানে প্রশ্নের উত্তর যদি দেন তাহলে অনেক পুরস্কার পাবেন। মাইগভে ‘রোড টু টোকিও ক্যুইজে’ এমন অনেক প্রশ্ন আছে। আপনারা ‘রোড টু টোকিও ক্যুইজে’ অংশ নিন। ভারত আগে কেমন ফল করেছে? টোকিও অলিম্পিক্সের জন্য এখন আমাদের কেমন প্রস্তুতি রয়েছে? এইসব নিজে জানুন আর অন্যদেরও জানান। আমি আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ জানাতে চাই যে আপনারা এই ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় অবশ্যই অংশগ্রহণ করুন।
বন্ধু, যখন টোকিও অলিম্পিক্সের কথা হচ্ছে তখন মিলখা সিংয়ের মত কিংবদন্তী অ্যাথলীটকে কে ভুলে যেতে পারে! কিছু দিন আগেই করোনা তাঁকে আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। যখন তিনি হাসপাতালে ছিলেন তখন ওঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল আমার। কথা বলার সময় আমি ওঁর কাছে নিজের আগ্রহ প্রকাশ করলাম। আমি বলেছিলাম যে আপনি তো ১৯৬৪ সালে টোকিও অলিম্পিক্সে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তাই এই বার, যখন আমাদের খেলোয়াড়রা, অলিম্পিক্সের জন্য টোকিও যাচ্ছে, তখন আমাদের অ্যাথলীটদের মনোবল বাড়াতে হবে আপনাকে, নিজের বার্তা দিয়ে তাঁদের অনুপ্রাণিত করতে হবে। উনি খেলাধুলোর প্রতি এতটাই নিবেদিত এবং আবেগপ্রবণ যে অসুখের মধ্যেও উনি তৎক্ষণাৎ রাজিও হয়ে গেলেন। দুর্ভাগ্য যে নিয়তি অন্য কিছু স্থির করে রেখেছিল। আমার এখনও মনে আছে, ২০১৪ সালে তিনি সুরাতে এসেছিলেন। আমরা এক ‘নাইট ম্যারাথনে’র উদ্বোধন করেছিলাম। সেইসময় ওঁর সঙ্গে যে আলাপ-আলোচনা হয়েছিল, খেলাধুলোর ব্যাপারে যে কথা হয়েছিল তাতে আমিও অনেক প্রেরণা পেয়েছিলাম। আমরা সবাই জানি যে মিলখা সিংয়ের গোটা পরিবার খেলাধুলোর প্রতি উৎসর্গীকৃত, ভারতের গৌরব বাড়িয়েছেন।
বন্ধু, যখন মেধা, উৎসর্গ, দৃঢ়প্রতিজ্ঞা আর খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতা একসঙ্গে মেশে তখন কেউ চ্যাম্পিয়নে পরিণত হয়। আমাদের দেশে তো অধিকাংশ খেলোয়াড় ছোট-ছোট শহর, নগর, গ্রাম থেকে উঠে আসেন। আমাদের টোকিওগামী অলিম্পিক দলেও এমন অনেক খেলোয়াড় রয়েছেন, যাঁদের জীবন খুবই অনুপ্রাণিত করে। আমাদের প্রবীণ যাদবজী সম্পর্কে আপনারা শুনলে আপনাদেরও মনে হবে যে কত কঠিন সঙ্ঘর্ষের মধ্যে দিয়ে প্রবীণজী এখানে পৌঁছেছেন। প্রবীণ যাদবজী মহারাষ্ট্রের সতারা জেলার এক গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ধনুর্বিদ্যার অসাধারণ খেলোয়াড়। ওঁর মা-বাবা মজদুরি করে সংসার চালায়, আর এখন তাঁদের পুত্র নিজের প্রথম অলিম্পিক্সে অংশ নিতে টোকিও যাচ্ছেন। এটা শুধু ওঁর মা-বাবার জন্যই নয়, আমাদের সবার জন্য কত গৌরবের কথা। এমনই আর একজন খেলোয়াড় আছেন, আমাদের নেহা গোয়েলজী। নেহা টোকিওগামী মহিলা হকি দলের সদস্য। ওঁর মা আর বোন সাইকেলের কারখানায় কাজ করে সংসার চালানোর খরচা জোগাড় করেন। নেহার মতই দীপিকা কুমারীজীর জীবনের পথচলাও চড়াই-উৎরাইয়ে পূর্ণ। দীপিকার বাবা অটো রিকশা চালান আর ওঁর মা নার্স। আর এখন দেখুন, দীপিকা এবার টোকিও অলিম্পিক্সে ভারতের পক্ষ থেকে একমাত্র মহিলা তীরন্দাজ। এক সময় বিশ্বের প্রথম স্থানাধিকারী তীরন্দাজ দীপিকার সঙ্গে আমাদের সবার শুভকামনা রয়েছে।
বন্ধু, জীবনে আমরা যেখানেই পৌঁছই, যে উচ্চতাতেই উঠি না কেন, মাটির সঙ্গে এই বন্ধন, সবসময়, আমাদের নিজেদের শেকড়ের সঙ্গে বেঁধে রাখে। সঙ্ঘর্ষময় দিনগুলোর পরে পাওয়া সফলতার আনন্দ বেশ অন্যরকম হয়। টোকিওগামী খেলোয়াড়রা শৈশবে রসদ আর উপকরণের সব রকম অভাবের সম্মুখীন হয়েছে কিন্তু তাঁরা সাহস করে টিঁকে থেকেছেন, লেগে থেকেছেন। উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগরের প্রিয়াঙ্কা গোস্বামীর জীবনও আমাদের অনেক কিছু শেখায়। প্রিয়াঙ্কার বাবা বাস কন্ডাক্টর। ছোটবেলায় প্রিয়াঙ্কার সেই ব্যাগটা খুব পছন্দ ছিল যা মেডেল পাওয়া খেলোয়াড়দের দেওয়া হয়। এই আকর্ষণেই প্রথম বার তিনি রেস-ওয়াকিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এখন সে এই ক্ষেত্রের বড় চ্যাম্পিয়ন। জ্যাভেলিন থ্রো-তে অংশ নেওয়া শিবপাল সিং জী বেনারসের বাসিন্দা। শিবপালজীর তো গোটা পরিবারই এই খেলার সঙ্গে যুক্ত। ওঁর বাবা, কাকা আর ভাই, সবাই বর্শা ছোঁড়ায় দক্ষ। পরিবারের এই পরম্পরাই টোকিও অলিম্পিক্সে ওঁর জন্য কাজে আসবে। টোকিও অলিম্পিকের জন্য যাচ্ছেন যে চিরাগ শেট্টি আর তাঁর সঙ্গী সাত্ত্বিক সাইরাজ, তাঁদের উদ্যমও অনুপ্রাণিত করার মত। সম্প্রতি চিরাগের দাদু করোনাতে মারা যান। সাত্ত্বিক নিজেও গত বছর করোনা পজিটিভ হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এই সব সমস্যার পরেও এই দু’জন পুরুষদের ডাবলস শাট্ল প্রতিযোগিতায় নিজেদের সেরাটা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতিতে লেগে রয়েছেন। আর একজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে আমি আপনাদের পরিচয় করাতে চাইব, ইনি হলেন হরিয়ানার ভিওয়ানীর মণীশ কৌশিক জী। মণীশজী চাষ-আবাদ করা পরিবার থেকে এসেছেন। ছোটবেলায় চাষের ক্ষেতে কাজ করতে করতে মণীশজীকে বক্সিংয়ের শখ পেয়ে বসে। আজ এই শখ তাঁকে টোকিও নিয়ে যাচ্ছে। আর একজন খেলোয়াড় রয়েছেন, সি এ ভবানী দেবী জী। নাম ভবানী আর তলোয়ার চালানোতে সুদক্ষ। চেন্নাইয়ের বাসিন্দা ভবানী প্রথম ভারতীয় ফেন্সার যিনি অলিম্পিক্সসের জন্য কোয়ালিফাই করেছেন। আমি কোথাও একটা পড়ছিলাম যে যাতে ভবানীজীর ট্রেনিং বন্ধ না হয় তার জন্য তাঁর মা নিজের গয়নাও বন্ধক রেখেছিলেন।
বন্ধু, এমন তো অসংখ্য নাম রয়েছে কিন্তু মন কি বাতে আমি আজ অল্প কিছু নামেরই উল্লেখ করতে পারলাম। টোকিওগামী সব খেলোয়াড়েরই নিজের সংগ্রামের কাহিনী রয়েছে, বহু বছরের পরিশ্রম রয়েছে। তাঁরা শুধু নিজের জন্যই যাচ্ছেন না বরং দেশের জন্য যাচ্ছেন। এই খেলোয়াড়দের ভারতের গৌরবও বাড়াতে হবে আর মানুষের মনও জয় করতে হবে। আর এই জন্য, আমার দেশবাসী, আমি আপনাদেরও পরামর্শ দিতে চাই, সচেতন বা অচেতনভাবেও এই খেলোয়াড়দের উপর আমাদের চাপ সৃষ্টি করা উচিত নয়, বরং খোলা মনে এঁদের সঙ্গ দিতে হবে, প্রত্যেক খেলোয়াড়ের উৎসাহ বাড়াতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনারা হ্যাশট্যাগ-চিয়ার-ফর-ইণ্ডিয়া সহ আমাদের এই খেলোয়াড়োদের শুভকামনা জানাতে পারেন। আপনারা আর কিছু উদ্ভাবনী করতে চাইলে সেটাও অবশ্যই করুন। যদি আপনাদের এমন কোনও আইডিয়া আসে যেটা আমাদের খেলোয়াড়দের জন্য গোটা দেশের একসঙ্গে মিলে প্রয়োগ করা উচিত, তাহলে আমাকে অবশ্যই পাঠাবেন। আমরা সবাই একসঙ্গে আমাদের টোকিওগামী খেলোয়াড়দের সমর্থন করব – চিয়ার-ফর-ইণ্ডিয়া!!! চিয়ার-ফর-ইণ্ডিয়া!!! চিয়ার-ফর-ইণ্ডিয়া!!!
আমার প্রিয় দেশবাসী, করোনার বিরুদ্ধে আমাদের দেশবাসীদের লড়াই অব্যাহত, কিন্তু এই লড়াইতে আমরা এক হয়ে অনেক অসাধারণ লক্ষ্যও পূরণ করছি। এই কিছু দিন আগেই আমাদের দেশ এক অভূতপূর্ব কাজ করেছে। ২১শে জুন টিকাকরণের পরবর্তী দফা শুরু হল আর সেদিনই দেশ ছিয়াশি লক্ষেরও বেশি মানুষকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার রেকর্ড বানিয়ে ফেলল, আর সেটাও মাত্র এক দিনে। ভারত সরকারের তরফ থেকে বিনামূল্যে এত বেশি সংখ্যক মানুষকে টিকা দেওয়া আর সেটাও মাত্র এক দিনে। স্বাভাবিক যে এটা নিয়ে অনেক চর্চা হয়েছে।
বন্ধু, এক বছর আগে সবার সামনে প্রশ্ন ছিল যে টিকা কবে আসবে? আজ আমরা এক দিনে লক্ষ লক্ষ মানুষকে মেড ইন ইণ্ডিয়া টিকা বিনামূল্যে দিচ্ছি আর এটাই তো নতুন ভারতের পরিচয়।
বন্ধু, টিকার সুরক্ষা যাতে দেশের প্রত্যেক নাগরিক পায় তার জন্য আমাদের নিরন্তর প্রয়াস করতে হবে। অনেক জায়গায় টিকা নিয়ে সংশয় দূর করতে অনেক সংগঠন, সুশীল সমাজের সদস্যরা এগিয়ে এসেছেন আর সবাই মিলে তাঁরা খুব ভালো কাজ করছেন। চলুন, আমরাও আজ এক গ্রামে যাই আর সেই সব মানুষদের সঙ্গে কথা বলি।
প্রধানমন্ত্রী : হ্যালো
রাজেশ : নমস্কার
প্রধানমন্ত্রী : নমস্কার
রাজেশ : আমার নাম রাজেশ হিরাবে, গ্রাম পঞ্চায়েত দুলারিয়া ব্লক ভীমপুর
প্রধানমন্ত্রী : রাজেশ জি আপনাকে ফোন করার কারণ আপনাদের গ্রামে করোনা পরিস্থিতি কি রকম?
রাজেশ : এখানে করোনা তেমন কিছু নয় স্যার
প্রধানমন্ত্রী : এখন কেউ অসুস্থ নয় তো?
রাজেশ : স্যার
প্রধানমন্ত্রী : গ্রামে কতো জন থাকেন? মানে গ্রামের জনসংখ্যা কতো?
রাজেশ : গ্রামে ৪৬২জন পুরুষ আর ৩৩২ জন মহিলা থাকেন স্যার
প্রধানমন্ত্রী : রাজেশ জি আপনি টিকা নিয়েছেন?
রাজেশ : এখনো নিই নি স্যার
প্রধানমন্ত্রী : এখনো নেন নি কেন?
রাজেশ : স্যার এখানে একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে খুব ভয়ভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। লোকজন ভয় পেয়ে গেছে স্যার
প্রধানমন্ত্রী : আপনার মনেও কি ভয় আছে?
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার, সারা গ্রামেই এমন ভ্রান্তি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল স্যার
প্রধানমন্ত্রী : আরে এ কেমন কথা হল?
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : দেখুন রাজেশ জি
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আপনাকে আর গ্রামের ভাইবোনকে এটা বলতে চাই, যদি কোনো ভয় থাকে তো ভুলে যান।
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : সারা দেশে প্রায় ৩১ কোটিরও বেশি মানুষ ভ্যাক্সিন নিয়েছেন
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আপনি জানেন কি আমি নিজেও দু ডোজ ভ্যাক্সিন নিয়ে নিয়েছি।
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আমার মায়ের বয়স প্রায় একশ বছর। তিনিও দুটো ডোজ নিয়েছেন। কখনও কারো জ্বর জ্বালা হয়। তাও অল্প হয়, কয়েক ঘণ্টার জন্য। দেখুন ভ্যাক্সিন না নেওয়া তো অত্যন্ত ভয়াবহ ব্যাপার
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : এর ফলে আপনি নিজেকে বিপদে ফেলছেন আবার নিজের পরিবার গ্রামবাসী সবাইকেই বিপদে ফেলছেন।
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : রাজেশ জি যত তাড়াতাড়ি হয় ভ্যাক্সিন নিয়ে নিন এবং সমস্ত গ্রাম বাসীকে জানান ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ বছরের ওপর সবাইকে বিনামূল্যে ভ্যাক্সিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার,হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আপনিও গ্রামের লোকেদের বলুন, গ্রামে এরকম ভয়ের আবহাওয়ার তো কোনো কারণ নেই।
রাজেশ : কারণ সেটাই স্যার, কিছু লোক ভুল ভ্রান্তি ছড়িয়ে দিয়েছে আর লোকে খুব ভয় পেয়ে গেছে, যেমন, ভ্যাক্সিন নেওয়ার পর যে জ্বর আসছে, জ্বর থেকে রোগটা ছড়িয়ে যাওয়া, এমনকি মানুষের মৃত্যুর ভ্রান্তিও ছড়ানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী : ওহ ওহ, দেখুন এখন রেডিও টিভি আরও অনেক সংবাদমাধ্যমে লোককে বোঝানো সহজ হয়ে যাচ্ছে, আর দেখুন আমি আপনাকে বলি, ভারতের এমন অনেক গ্রাম আছে যেখানে গ্রামের ১০০% লোক টীকাকরণ করিয়ে নিয়েছে।
রাজেশ :হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আপনাকে একটা উদাহরণ দিই
রাজেশ :হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : কাশ্মীরের বান্দিপোরা জেলায় বেয়ান (Weyan) গ্রামের ১০০% মানুষ টিকা নিয়েছে। কাশ্মীরের এই গ্রামে ১৮ বছরের ওপরের সবাই টীকা নিয়ে নিয়েছে। নাগাল্যান্ডের তিনটে গ্রামের কথা শুনেছি সেখানকার ১০০% মানুষ ভ্যাক্সিন নিয়েছে।
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার,হ্যাঁ স্যার
প্রধানমন্ত্রী : রাজেশ জি, আপনাকে আপনার গ্রামের এবং আশেপাশের সব গ্রামে এই কথা পৌঁছে দিতে হবে, আপনি যেওরকম বলছে এটা ভ্রান্তি, আর সত্যি এটা একটা ভ্রান্তি।
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার
প্রধানমন্ত্রী : ভ্রান্তি কাটানোর একমাত্র উপায় আপনি নিজে টিকা নিয়ে অন্যের ভয় কাটান। আপনি তাই করবেন তো?
রাজেশ : অবশ্যই স্যার
প্রধানমন্ত্রী : ঠিক তো
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার, আপনার সঙ্গে কথা বলার পর মনে হচ্ছে, আমি তো নেবই বাকিদের কেও নিতে বলবো।
প্রধানমন্ত্রী : আচ্ছা গ্রামের আর কেউ আছেন যাঁর সঙ্গে আমি কথা বলতে পারি?
রাজেশ : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী :কে কথা বলবেন?
কিশোরীলাল : হ্যালো স্যার নমস্কার
প্রধানমন্ত্রী : নমস্কার, কে কথা বলছেন?.
কিশোরীলাল : আমার নাম কিশোরীলাল দুর্বে
প্রধানমন্ত্রী : হ্যা কিশোরীলাল জি আমি রাজেশ জির সঙ্গে কথা বলছিলাম
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : তো রাজেশ তো খুব দুঃখের সঙ্গে বলছিলেন লোকজন টিকা নিয়ে নানা রকম কথা বলে।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী :আপনিও কি এমন সব কথা শুনেছেন?
কিশোরীলাল : স্যার আমি এমন শুনেছি..
প্রধানমন্ত্রী : কি শুনেছেন?
কিশোরীলাল : কারণ এটাই স্যার আমাদের পাশেই মহারাষ্ট্র। ওখানকার কিছু আত্মীয়-স্বজন গোচের মানুষ গুজব ছড়াচ্ছেন যে টিকা নিলে লোকজন সবাই নাকি মারা যাচ্ছে, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছে স্যার। মানুষের মনে অনেক ভ্রান্তি রয়েছ স্যার, তাই নিচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী : না... বলছে কি? এখন করোনা চলে গিয়েছে, এমন বলছে?
কিশোরীলাল : হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী : করোনা তে কিছুই হবে না এরকম বলছে কি?
কিশোরীলাল : না, করোনা চলে গিয়েছে তা বলছে না স্যার, বলছে করোনা তো রয়েছে কিন্তু টিকা যারা নিচ্ছে তারা মানে অসুস্থ হচ্ছে, সবাই মারা যাচ্ছে। তারা এরকম পরিস্থিতির কথা বলছেন স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আচ্ছা টিকা এর কারনে মারা যাচ্ছে?
কিশোরীলাল : আমার এলাকা আদিবাসীদের এলাকা স্যার, এমনিতেই লোকজন এসবে তাড়াতাড়ি ভয় পায়.... যা ভ্রান্তি ছড়িয়ে দেয়, সেই কারণেই লোকজন টিকা নিচ্ছে না স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : দেখুন কিশোরীলালজি...
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার...
প্রধানমন্ত্রী : এই গুজব ছড়ানোর মানুষজন তো গুজব ছড়াতেই থাকবেন।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী : আমাদের তো জীবন বাঁচাতে হবে, আমাদের গ্রামের সবাই কে বাঁচাতে হবে, আমাদের দেশবাসীদের বাঁচাতে হবে। আর যদি কেউ বলে যে করোনা চলে গিয়েছে তাহলে সেই ভ্রান্তিতে থাকবেন না।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী : এই অসুখটা এমনই যে বহুরূপে রয়েছে।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : এটা রূপ বদলায়... নতুন নতুন রং-রূপে পৌঁছে যাচ্ছে।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী : আর এর থেকে বাঁচার জন্য আমাদের কাছে দুটো রাস্তা রয়েছে। এক তো করোনার জন্য যে নিয়ম তৈরি করা হয়েছে, যেমন মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, দূরত্ব বজায় রাখা আর দ্বিতীয় রাস্তা হল একই সঙ্গে টিকা লাগানো, এও এক ভালো সুরক্ষা কবচ তাই তার চিন্তাও করুন।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ।
প্রধানমন্ত্রী : আচ্ছা কিশোরীলালজি বলুনতো,
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : যখন মানুষ আপনার সঙ্গে কথা বলে তখন আপনি তাদের কিভাবে বোঝান? আপনি বোঝানোর কাজটা করেন তো নাকি আপনিও গুজবে কান দেন?
কিশোরীলাল : বোঝাবো কি, ওরা সবাই সংখ্যায় বেশি হয়ে যায় স্যার, তখন আমিও ভয় পেয়ে যাই স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : দেখুন কিশোরীলাল জি, আজ আপনার সঙ্গে আমার কথা হল, আপনি আমার বন্ধু।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আপনি ভয় পাবেন না আর মানুষেরও ভয় দূর করতে হবে। দূর করবেন তো?
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার। দূর করব স্যার, মানুষদের ভয় দূর করব স্যার। আমি নিজেও টিকা নেবো।
প্রধানমন্ত্রী : দেখুন, গুজবে একদম কান দেবেন না।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ
প্রধানমন্ত্রী : আপনি কি জানেন, আমাদের বৈজ্ঞানিকেরা কত কষ্ট করে এই টিকা বানিয়েছে?
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : বছরভর, রাতদিন সব বড় বড় বৈজ্ঞানিকেরা কাজ করেছেন আর আমাদের বিজ্ঞানের উপর ভরসা রাখতে হবে, বৈজ্ঞানিকদের উপর ভরসা রাখতে হবে। আর যেসব লোকজন মিথ্যে প্রচার করছেন তাদের বারবার বোঝাতে হবে যে দেখুন ভাই এভাবে চলবে না, এত জন মানুষ টিকা নিয়েছেন তাদের কিছু হয়নি।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ
প্রধানমন্ত্রী : আর গুজব থেকে খুব বেঁচে থাকতে হবে, গ্রামকেও বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ
প্রধানমন্ত্রী : আর রাজেশজি, কিশোরীলালজি, আপনাদের মত বন্ধুদেরকে তো আমি বলব যে আপনি আপনাদের গ্রামেই শুধু নয়, অন্যান্য গ্রামেও এইসব গুজব থামানোর কাজ করুন আর মানুষকে বলুন আমার সঙ্গে আপনাদের কথা হয়েছে।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : বলে দেবেন, আমার নাম বলে দেবেন।
কিশোরীলাল : বলবো স্যার, আর লোকজনদের ও বোঝাবো এবং নিজেও টিকা নেব।
প্রধানমন্ত্রী : দেখুন আপনার পুরো গ্রামকে আমার তরফ থেকে শুভকামনা জানাবেন।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আর সবাইকে বলবেন যখনই আপনার নম্বর আসবে...
কিশোরীলাল : হ্যাঁ...
প্রধানমন্ত্রী : তখনই টিকা অবশ্যই নেবে।
কিশোরীলাল : ঠিক আছে স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আমি চাই গ্রামের মহিলারা, আমার মায়েরা বোনেরা
কিশোরীলাল : হ্যাঁ স্যার
প্রধানমন্ত্রী : এই কাজের সঙ্গে আরো বেশি বেশি করে যুক্ত হন ও সক্রিয় রূপে ওঁদের সঙ্গে রাখুন।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ
প্রধানমন্ত্রী : কখনো কখনো মায়েরা বোনেরা যখন কোন কথা বলেন তখন মানুষ তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে যায়।
কিশোরীলাল : হ্যাঁ
প্রধানমন্ত্রী : আপনার গ্রামে যখন টিকাকরণ শেষ হয়ে যাবে তখন আমাকে জানাবেন তো?
কিশোরীলাল : হ্যাঁ, জানাবো স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : পাক্কা জানাবেন?
কিশোরীলাল : হ্যাঁ
প্রধানমন্ত্রী : দেখুন, আমি আপনার চিঠির অপেক্ষা করবো।
কিশোরীলাল: হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী: ঠিক আছে রাজেশজি কিশোরজি, অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেলাম।
কিশোরীলাল: ধন্যবাদ স্যার। আমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
বন্ধুরা, এই করোনা কালে যেভাবে ভারতের গ্রামের মানুষজন, আমাদের বনবাসী ও আদিবাসী ভাইবোনেরা নিজেদের সক্ষমতা এবং বোধশক্তির পরিচয় দিয়েছেন তা সমগ্র বিশ্বের জন্য কখনো না কখনো কেস স্টাডির একটি বিষয় হবে। গ্রামের লোকেরা কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরি করেছে, স্থানীয় প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী কোভিড বিধি তৈরি করেছে। গ্রামের লোকেরা কাউকে খিদের জ্বালা বুঝতে দেয়নি, কৃষিকাজও বন্ধ হতে দেয়নি। নিকটবর্তী শহরে যাতে রোজ দুধ সব্জি এসব পৌঁছয় গ্রামের লোকেরা তাও সুনিশ্চিত করেছে অর্থাৎ নিজেদের সঙ্গে অন্যদেরও খেয়াল রেখেছে। ঠিক এভাবেই আমাদের টিকাকরণ অভিযানের সময় একই কাজ করে যেতে হবে। আমাদের সচেতন থাকতে হবে এবং অন্যদেরও সচেতন করতে হবে। প্রতিটা গ্রামে যাতে প্রত্যেকে টিকা পায় তা সমস্ত গ্রামের লক্ষ্য হওয়া উচিত। মনে রাখবেন, আর আমি এ কথাই আপনাদের বিশেষ ভাবে বলতে চাই। আপনারা নিজেদের মনকে একবার জিজ্ঞেস করুন- প্রত্যেকেই তো সফল হতে চায় কিন্তু প্রকৃত সাফল্যের মন্ত্র কি? প্রকৃত সাফল্য আসে ধারাবাহিকতা থেকে। এজন্য আমাদের থেমে গেলে চলবে না, কোন ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হলেও চলবে না। আমাদের সর্বদা চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, করোনার বিরুদ্ধে জিততেই হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের দেশে এখন বর্ষাও এসে গেছে। বর্ষায় যখন বৃষ্টি হয় তখন তা কেবল আমাদের জন্যই হয় না, সেই বৃষ্টি থেকে আগামী প্রজন্মও উপকৃত হয়। বর্ষার জল ভূ-মধ্যে প্রবেশ করে শুধু সঞ্চিতই হয় না তা জলস্তর বৃদ্ধিও করে। তাই আমি জল-সংরক্ষণকে দেশ সেবার একটি রূপ বলেই মনে করি। আপনারাও হয়তো দেখেছেন, আমাদের মধ্যে অনেকেই এই পূণ্য কাজকে নিজেদের দায়িত্ব হিসেবে মেনে চলেন। ঠিক এমনই একজন মানুষ উত্তরাখণ্ডের পৌরী গারোয়ালের সচ্চিদানন্দ ভারতী জি। ভারতী জি একজন শিক্ষক এবং তিনি তার কাজের মধ্যে দিয়ে মানুষকে খুব সুন্দর শিক্ষা প্রদান করেছেন। আজ তার প্রচেষ্টাতেই পৌরি গারোয়ালের উফরৈখাল অঞ্চলে জল সংকট-এর কঠিন সময় কেটে গিয়েছে। যেখানে লোক জলের জন্য কষ্ট পেত, সেখানে আজ সারা বছর জল-সরবরাহ অব্যাহত থাকে।
বন্ধুরা, পাহাড়ে জল সংরক্ষণের একটি প্রচলিত প্রথা রয়েছে, যাকে "চাল-খাল"ও বলা হয়ে থাকে, অর্থাৎ জল জমানোর জন্য একটা বড় গর্ত খোঁড়া। ভারতী জি এই প্রচলিত প্রক্রিয়াটিতে কিছু নতুন কৌশল প্রয়োগ করেন, এভাবেই তিনি পরপর ছোট-বড় একাধিক পুকুর খনন করেন। এর ফলে উফরৈখলের পাহাড়ি অংশ কেবল সবুজই হয় নি, সেখানকার মানুষের পানীয় জলের সমস্যাও দূর হয়ে গেছে। আপনারা একথা জেনে আশ্চর্য হয়ে যাবেন যে ভারতী জি এরকমই ৩০০০০ এর বেশি জল কুন্ড তৈরি করেছেন। ৩০ হাজার! ভগীরথ এর মত তার এই কাজ আজও চলছে এবং অনেক লোক কে অনুপ্রাণিত করছে।
বন্ধুরা, এভাবেই UP র বাঁদা জেলার অন্ধাভ গ্রামের লোকেরাও একটা অন্যরকম কিছু করার প্রচেষ্টা করেছেন। তাঁরা তাঁদের এই অভিযানের একটা ভারী সুন্দর নাম দিয়েছেন-' ক্ষেতের জল ক্ষেতে, গ্রামের জল গ্রামে'। এই অভিযানের সময় গ্রামের কয়েকশো বিঘার ক্ষেতকে উঁচু উঁচু করে ঘিরে দেয়া হয়েছে যাতে বর্ষার জল খেতে এসে জমা হতে থাকে এবং মাটিতে প্রবেশ করতে থাকে। এখন এই সমস্ত লোকেরা সেই আলে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করছেন। অর্থাৎ এখন কৃষক বন্ধুরা জল বৃক্ষ ও অর্থ এই তিনই পাবে। ভালো কাজের জন্য তাদের গ্রামের পরিচিতি বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। বন্ধুরা, এ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের আশেপাশে যেভাবে আমরা জল সংরক্ষণ করতে পারি তা আমাদের করতে হবে। বর্ষার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়কে নষ্ট হতে দেওয়া চলবে না।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে- “নাস্তি মূলম্ অনৈষেধম”
অর্থাৎ পৃথিবীতে এমন কোন গাছ নেই যার কোন না কোন ঔষধি গুণ নেই। আমাদের চারপাশে এমন অনেক গাছপালা আছে যাদের অদ্ভুত কিছু ঔষধি গুণ আছে, কিন্তু অনেক সময় আমাদের সে সম্পর্কে কোন ধারণা থাকে না। আমায় নৈনিতাল থেকে এ বিষয়ে পরিতোষ ভাই একটি চিঠি লিখেছেন। তিনি লিখেছেন যে গুলঞ্চ এবং আরো অনেক গাছপালার অদ্ভুত ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে তিনি জানতে পেরেছেন করোনা আসার পর। পরিতোষ আমায় অনুরোধ করেছে যে ‘মন কি বাত’ এর সমস্ত শ্রোতাদের যেন আমি বলি- তারা যাতে তাদের আশেপাশের গাছপালা সম্পর্কে জানেন এবং অন্যদেরও জানান। আসলে এগুলি আমাদের শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য, যা আমাদেরই সংরক্ষণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে বলি, মধ্যপ্রদেশের ছাতনা জেলার এক বন্ধু শ্রীমান রামলোটন কুসওয়াহা জি একটি প্রশংসনীয় কাজ করেছেন। রামলোটন জি তার ক্ষেতে একটি দেশীয় মিউজিয়াম বানিয়েছেন। এই মিউজিয়ামে তিনি অসংখ্য ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন ভেষজ গাছ-পালা ও বীজ সংগ্রহ করে রেখেছেন। তিনি তা দূর দুরান্ত থেকে সংগ্রহ করে এখানে এনেছেন। তাছাড়া তিনি প্রতিবছর বহু ধরনের ভারতীয় শাকসবজিও চাষ করে থাকেন। রামলোটন জির এই বাগান ও দেশীয় মিউজিয়াম বহু লোক দেখতেও আসেন এবং সেখান থেকে অনেক কিছু শিখেও যান। সত্যিই এ এক অদ্ভুত সুন্দর উদ্যোগ যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ও বহু জায়গায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। আমি চাই, আপনাদের মধ্যে যারা এরকম কিছু করতে সক্ষম তারা যেন তা অবশ্যই করেন। এর ফলে আপনার উপার্জনের একটা নতুন সুযোগও তৈরি হতে পারে। আর অন্যদিকে, স্থানীয় গাছপালার জন্য আপনার অঞ্চলের পরিচিতিও তাতে বাড়বে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আর কিছুদিন বাদে পয়লা জুলাই আমরা ন্যাশানাল ডক্টরস ডে পালন করব। এই দিনটি দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ডক্টর বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে উদযাপিত হয়। করোনার সময় ডাক্তারদের ভূমিকায় আমরা সবাই যথার্থই কৃতজ্ঞ। আমাদের চিকিৎসকেরা নিজেদের প্রাণ এর পরোয়া না করে আমাদের সেবা করেছে। সেজন্যই এ বছর জাতীয় চিকিৎসক দিবস আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বন্ধুরা, চিকিৎসার দুনিয়ার সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন "Whenever the art of medicine is loved there is also a love of Humanity'' অর্থাৎ যেখানে ওষুধের গুনাগুনের এর জন্য ভালোবাসা থাকে সেখানে মানবতার জন্যেও ভালোবাসা থাকে। চিকিৎসকেরা এই ভালবাসার শক্তি দিয়েই আমাদের সেবা করে থাকেন। সেজন্য আমাদের দায়িত্ব ততটাই ভালোবাসার সঙ্গে তাদের ধন্যবাদ জানানো ও উৎসাহিত করা। যদিও আমাদের দেশে এমন বহু মানুষ রয়েছেন যারা ডাক্তারদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেন এবং তাদের সহযোগিতা করেন। শ্রীনগর থেকে এরকমই এক উদ্যোগের বিষয়ে আমি জানতে পেরেছি, সেখানে ডাল লেকে একটি বোট আম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এই পরিষেবাটি শুরু করেছেন শ্রীনগরের একজন হাউসবোট মালিক তারিখ আহমেদ পাতলু। তিনি নিজেও একজন কোভিড যোদ্ধা, যা তাকে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করতে অনুপ্রাণিত করেছে। তার সেই অ্যাম্বুলেন্স থেকে সচেতনতা বৃদ্ধির অভিযানও চলছে, তিনি সেজন্য তার অ্যাম্বুলেন্স থেকে অনবরত এ বিষয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। প্রচেষ্টা এটাই যে- জনসাধারণ যেন মাস্ক পরা থেকে শুরু করে অন্যান্য সমস্ত প্রয়োজনীয় সতর্কতাঃ মেনে চলেন, তা নিশ্চিত করা।
বন্ধুরা, ডক্টরস ডে র সঙ্গে সঙ্গে পয়লা জুলাই চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেটস ডেও পালন করা হয়। আমি কয়েক বছর আগে দেশের চার্টার্ড অ্যাকাউন্টটেন্টদের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক স্তরের ভারতীয় অডিট ফার্ম উপহার চেয়েছিলাম। আজ আমি তাদের সেই কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। অর্থব্যবস্থায় পারদর্শিতা আনবার জন্য চার্টার্ড অ্যাকাউন্টটেন্টরা খুব ভাল এবং ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারেন। আমি প্রত্যেক চার্টার্ড অ্যাকাউন্টটেন্ট ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আমার শুভেচ্ছা জানাই।
আমার প্রিয় দেশবাসী, করোনার বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধের একটা বিশেষত্ব আছে। এই যুদ্ধে দেশের প্রতিটি ব্যক্তি নিজের ভূমিকা পালন করেছেন। আমি ‘মন কি বাত’ এ অনেকবার এটা বলেছি। কিন্তু কিছু মানুষের অভিযোগও থাকে যে তাদের ব্যাপারে অতোটা বলা হয় না। অনেক লোক, তা সে ব্যাংক স্টাফই হোক, টিচার হোক, ছোটো ব্যবসায়ী বা দোকানদার হোক , দোকানের কর্মী হোক, ফুটপাথের হকার ভাই বোনেরা হোক, নিরাপত্তা কর্মী হোক বা ডাক পিয়ন বা ডাকঘরের কর্মচারী- আসলে এই লিস্ট বিরাট লম্বা, আর প্রত্যেকে নিজের ভুমিকা পালন করেছেন। প্রশাসন ও শাসনব্যবস্থাতেও কতো মানুষ আলাদা আলাদা স্তরে কাজ করছেন।
বন্ধুরা, আপনারা সম্ভবত গুরুপ্রসাদ মহাপাত্রের নাম শুনেছেন যিনি ভারত সরকারের সচিব ছিলেন । আমি আজ ‘মন কি বাত’ এ তাঁর উল্লেখ করতে চাই। গুরুপ্রসাদ জীর করোনা হয়েছিল তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন আর নিজের কর্তব্য করে যাচ্ছিলেন । দেশে অক্সিজেনের উৎপাদন যাতে বৃদ্ধি পায় ও দূর দুরান্তে অক্সিজেন পৌঁছয় এর জন্য তিনি দিন রাত কাজ করেছেন। এক দিকে কোর্ট কাছারীতে ঘোরাঘুরি, মিডিয়ার চাপ- এক সাথে উনি অনেক গুলি ব্যাপারে লড়ছিলেন, অসুখের সময়েও তিনি কাজ বন্ধ করেন নি । বারণ করা সত্বেও উনি জেদ করে অক্সিজেনের ব্যাপারে হওয়া ভিডিও কনফারেন্স গুলিতে থাকতেন । ওঁর কাছে দেশবাসীর চিন্তা ছিল। হাসপাতেলের বেডেও উনি নিজের চিন্তা ছেড়ে দেশের লোকের কাছে যাতে অক্সিজেন পৌঁছয় সেই ব্যবস্থা করায় ব্যস্ত ছিলেন। আমাদের প্রত্যেকের জন্য এটি দুঃখজনক যে এরকম একজন কর্ম যোগীকে দেশ হারিয়েছে । করোনা ওঁকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে । এরকম অগুন্তি মানুষ আছেন যাদের কথা কখোনো বলা হয় নি। এরকম মানুষদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি এটাই হবে যে প্রত্যেকে আমরা সম্পুর্ণ কোভিড প্রোটোকল মেনে চলি, ভ্যক্সিন অবশ্যই নিই।
আমার প্রিয় দেশবাসী ‘মন কি বাত’ এর সবথেকে ভাল দিক হল যে এতে আমার থেকে আপনাদের অংশ গ্রহন বেশি থাকে। এক্ষুনি আমি মাই গভ-এ চেন্নাই-এর থিরু আর গুরুপ্রসাদের একটী পোস্ট দেখলাম। উনি যা লিখেছেন সেটা জেনে আপনাদের ও ভাল লাগবে।উনি লিখেছেন যে উনি মন কি বাত অনুষ্ঠানের নিয়মিত শ্রোতা। গুরুপ্রসাদজীর পোস্ট থেকে আমি কিছু লাইন উদ্ধৃত করছি। উনি লিখেছেন “যখনই আপনি তামিলনাড়ু সম্বন্ধে বলেন তখন আমার আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। আপনি তামিল ভাষা, তামিল সংস্কৃতির মহত্ব, তামিল উৎসবগুলি ও তামিলনাড়ুর বিশিষ্ট স্থানগুলির আলোচনা করেছেন । গুরুপ্রসাদজী আরো লিখেছেন যে মন কি বাত এ আমি তামিলনাড়ুর লোকেদের সাফল্য সম্বন্ধেও অনেকবার বলেছি। তিরুক্কুরল এর প্রতি আপনার ভালবাসা ও তিরুবল্লুবরজীর প্রতি আপনার শ্রদ্ধার সম্পর্কে আর কি ই বা বলা যায়। এইজন্য আমি ‘মন কি বাত’ এ আপনি তামিলনাড়ু সম্বন্ধে যা বলেছেন সব সংগ্রহ করে একটা ই –বুক তৈরি করেছি।আপনি কি এই ই- বুক সম্পর্কে কিছু বলবেন ? আর নমো অ্যাপের ও এটিকে প্রকাশ করবেন? ধন্যবাদ।
এটা গুরুপ্রসাদজীর লেখা চিঠি আমি আপনাদের সামনে পড়ছিলাম। গুরুপ্রসাদজী আপনার পোস্টটী পড়ে খুব আনন্দ পেলাম। এখন আপনি আপনার ই-বুকে আরও একটি পাতা জুড়ে দিন ।
...নান তমিলকলা চারাক্তিন পেরিয়ে অভিমানী
নান উলগতলয়ে পলমায়াং তমিল মোলিইয়ন পেরিয়ে অভিমানী।
উচ্চারণের ত্রুটি অবশ্যই হবে, কিন্তু আমার চেষ্টা আর ভালবাসা কখনো কমবে না। যারা তামিল ভাষী নন তাদের আমি বলতে চাই গুরুপ্রসাদজীকে আমি বললাম
আমি তামিল সংস্কৃতির বড় ভক্ত
আমি পৃথিবীর সব থেকে পুরোনো ভাষা তামিলের বড় ভক্ত।
বন্ধুরা, বিশ্বের সব থেকে পুরোনো ভাষা তামিল, আমাদের দেশের, প্রত্যেক ভারতবাসীর এর গুণগান করাই উচিৎ, এর প্রতি গর্ব অনুভব করা উচিৎ । আমিও তামিল নিয়ে খুব গর্ব বোধ করি। গুরুপ্রসাদজী আপনার এই প্র্য়াস আমায় নতুন দৃষ্টিদান করল। কারন আমি আমি যখন ‘মন কি বাত’ করি, সহজ সরল ভাবে নিজের বক্তব্য রাখি। আমি জানতামই না যে এও এটার একটা অঙ্গ। আপনি যখন সব পুরোনো কথা সংগ্রহ করলেন তখন আমিও সেটা একবার নয় দু-দুবার পড়লাম । গুরুপ্রসাদজী আপনার এই বইটি আমি নমো আপেও নিশ্চয় আপলোড করাব। ভবিষ্যতের চেষ্টার জন্য আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ আমরা করোনার অসুবিধে ও সাবধানতা সম্বন্ধে কথা বললাম , দেশের ও দেশবাসীর কিছু অভিজ্ঞতা নিয়েও আলোচনা করলাম। এখন একটা বড় সুযোগ আমাদের সামনে আছে. ১৫ ই অগাস্টও আসছে। স্বাধীনতার ৭৫ বছরের অমৃত মহোৎসব আমাদের জন্য খুব বড় প্রেরণা। আমরা দেশের জন্য বাঁচতে শিখি। স্বাধীনতার যুদ্ধ দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গের গাথা। স্বাধীনতার পরের এই সময় কে আমাদের দেশের জন্য বেঁচে থাকা মানুষদের জীবন গাথা করে তুলতে হবে, আমাদের মন্ত্র হওয়া উচিত – ভারতই হবে প্রথম, আমাদের সব সিদ্ধান্ত, সব নির্ণয় এর আধার হওয়া উচিত ইন্ডিয়া ফার্স্ট।
বন্ধুরা অমৃত মহোৎসব দেশের কিছু সামগ্রিক লক্ষ্যও স্থির করেছে। যেমন আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মৃতিচারণ করে তাঁদের ইতিহাস কে পুনরুজ্জীবিত করা প্রয়োজন । আপনাদের হয়তো মনে আছে যে আমি ‘মন কি বাত’ এ যুব সম্প্রদায় কে স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর ইতিহাস লিখতে ও গবেষণা করার অনুরোধ করেছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল যে যুব সম্প্রদা্যের প্রতিভা এগিয়ে আসুক, যুব চিন্তা যুব ভাবনা সামনে আসুক, যাতে যুব লেখনী নতুন উৎসাহের সঙ্গে লেখে। আমার এটা দেখে খুব ভাল লাগল যে খুব কম সময়ের মধ্যে আড়াই হাজারের ও বেশি যুবক-যুবতী এই কাজ করার জন্য এগিয়ে এসেছেন । বন্ধুরা মজার কথা এই যে উনবিংশ আর বিংশ শতাব্দীর যুদ্ধের কথা তো প্রায়শই হয়, একবিংশ শতাব্দীতে যারা জন্মেছেন এরকম তরুন বন্ধুরাও উনবিংশ আর বিংশ শতাব্দীর স্বাধীনতার যুদ্ধের ব্যাপারে মানুষকে জানাবার জন্য কাজ করেছেন । এরা সবাই মাই গভের সম্পুর্ণ বিবরণ পাঠিয়েছেন। এরা হিন্দি, ইংলিশ, তমিল , কন্নড় , বাংলা , তেলেগু, মারাঠী, মালয়ালম, গুজরাতী দেশের এইরকম, আলাদা আলাদা ভাষায় স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর লিখবেন। কেউ স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে যুক্ত আশেপাশের অঞ্চলের তথ্য জোগাড় করছেন আবার কেউ আদিবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ওপর বই লিখছে্ন । একটা ভাল আরম্ভ। আপনাদের সবাইকে অনুরোধ যে যেভাবে পারেন অমৃত মহোৎসবের সঙ্গে অবশ্যই যুক্ত হোন। এটা আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা স্বাধীনতার ৭৫ তম অধ্যায়ের সাক্ষী থাকতে পারছি। তাই এর পরের বার যখন মন কি বাত করব তখন অমৃত মহোৎসবের প্রস্তুতি নিয়েও কথা বলব। আপনারা সবাই সুস্থ থাকুন। করোনা সম্পর্কিত সব নিয়মগুলি মেনে এগিয়ে চলুন। নিজেদের নতুন নতুন প্রয়াসের দ্বারা দেশকে এরকমই গতিময় করে রাখুন। এই শুভেচ্ছার সঙ্গে অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
CG/CB/
(Release ID: 1730650)
Visitor Counter : 591
Read this release in:
Gujarati
,
Telugu
,
Assamese
,
English
,
Urdu
,
Marathi
,
Hindi
,
Manipuri
,
Punjabi
,
Odia
,
Tamil
,
Kannada
,
Malayalam