প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

পশ্চিমবঙ্গে আইআইটি খড়্গপুরের ৬৬তম সমাবর্তন সমারোহে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 23 FEB 2021 3:23PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

 

নমস্কারজি,

 

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহযোগী শ্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশাঙ্কজি, শ্রী সঞ্জয় ধোত্রেজি, আইআইটি খড়্গপুরের চেয়ারম্যান শ্রী সঞ্জীব গোয়েঙ্কাজি, ডায়রেক্টর শ্রী ভি কে তিওয়ারিজি, অন্যান্য ফ্যাকাল্টি মেম্বার, সমস্ত কর্মচারী বন্ধুগণ, অভিভাবক-অভিভাবিকাগণ, আর আমার নবীন বন্ধুরা! আজকের দিনটি আইআইটি খড়্গপুরের শুধু সেই ছাত্রছাত্রীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয় যাঁরা তাঁদের ডিগ্রি পাচ্ছেন। আজকের দিনটি নতুন ভারত নির্মাণের জন্যও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের সকলের কাছ থেকে শুধুই আপনাদের অভিভাবক-অভিভাবিকা এবং অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের প্রত্যাশা জুড়ে নেই, ১৩০ কোটি ভারতবাসীর আকাঙ্ক্ষারও আপনারা প্রতিনিধি। সেজন্য এই প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে দেশকে একবিংশ শতাব্দীতে আত্মনির্ভর ভারতে পরিণত করার লক্ষ্যে যে ব্যবস্থা গড়ে উঠছে, সেখানে নতুন নেতৃত্ব প্রদানের জন্য আপনাদের নিয়ে প্রত্যাশা রয়েছে। নতুন ব্যবস্থা গড়তে হবে; আমাদের স্টার্ট-আপসের বিশ্বে, আমাদের উদ্ভাবনের বিশ্বে, আমাদের কর্পোরেট বিশ্বে, দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় – সর্বত্র নতুন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এই ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে আপনারা শুধুই নিজেদের নতুন জীবন শুরু করবেন না, আপনারা দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে নিজেরাই এক একজন স্টার্ট-আপ হয়ে উঠবেন। সেজন্য এই যে ডিগ্রি, এই যে মেডেল আপনাদের হাতে এসেছে, তা একভাবে দেখতে গেলে কোটি কোটি দেশবাসীর আশা এবং আকাঙ্ক্ষাপূরণের দায়িত্ব প্রদানকারী পত্র - যা আপনাদের বাস্তবায়িত করতে হবে। আপনারা বর্তমানের দিকে লক্ষ্য রেখে ভবিষ্যতকেও কল্পনা করুন। আমাদের আজকের প্রয়োজন কী, আর ১০ বছর পরে কী কী প্রয়োজন হবে তার জন্য আজ সুপরিকল্পিতভাবে উদ্ভাবনের কাজ করলে তা আগামীকালের ভারতকে গড়ে তুলবে। আগামীকালের জন্য আজই প্রস্তুতি নিতে হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আপনাদের মধ্যে একটি ক্ষমতা সহজভাবেই বিকশিত হয়, আর সেটি হল কোনকিছুকে 'প্যাটার্ন' থেকে 'পেটেন্ট'এর দিকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা। অর্থাৎ, একভাবে আপনাদের বিষয়গুলিকে অনেক বড় করে দেখার একটা নতুন দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষমতা আপনাদের মধ্যে রয়েছে। সেজন্য আজ আমাদের চারপাশে যে তথ্যের ভাণ্ডার রয়েছে তাতে যত সমস্যা, আর সেগুলির যে 'প্যাটার্ন' সেগুলিকে আপনারা অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে দেখতে পান। প্রতিটি সমস্যার সঙ্গে 'প্যাটার্ন' জুড়ে থাকে। সেই সমস্যাগুলির 'প্যাটার্ন' বুঝে আমাদের সেগুলির সুদূরপ্রসারী সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এই বুঝতে পারা ভবিষ্যতে নতুন নতুন উদ্ভাবন, নতুন নতুন 'ব্রেকথ্রু'র ভিত্তি হয়ে ওঠে। আপনারা ভাবুন, আপনারা কত মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারবেন, কত মানুষের জীবন বাঁচাতে পারবেন, দেশের কত সম্পদ বাঁচাতে পারবেন, যদি আপনারা 'প্যাটার্ন'কে ঠিকভাবে বোঝেন আর সেগুলিকে বুঝে যথাযথ সমাধান বের করতে পারেন। আর আপনাদের এই সমাধানগুলির সম্পূর্ণ সম্ভাবনা আছে যা আপনাদের ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক সাফল্য দেবে।

 

বন্ধুগণ,

 

জীবনের যে পথে এখন আপনারা এগিয়ে চলেছেন, সেখানে নিশ্চিতভাবে আপনাদের সামনে অনেক প্রশ্ন আসবে। এই পথটা ঠিক না ভুল? লোকসান হবে না তো? সময় নষ্ট হবে না তো? এরকম অনেক প্রশ্ন আপনাদের মস্তিষ্ককে অবশ করে দেবে। এই প্রশ্নগুলির উত্তর হল 'সেলফ থ্রি'। আমি সেলফির কথা বলছি না, ‘সেলফ থ্রি'র কথা বলছি। অর্থাৎ, ‘সেলফ অ্যাওয়ারনেস, সেলফ কনফিডেন্স’ আর সবথেকে বড় শক্তি থাকে যাতে, সেটা হল 'সেলফলেসনেস’! আপনারা নিজেদের সামর্থ্যকে চিনুন আর এগিয়ে যান। পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যান, আর নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে এগোন। আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে -

 

“শনৈঃ পন্থাঃ শনৈঃ কন্থা শনৈঃ পর্বতলঙ্ঘনম।

শনৈর্বিদ্যা শনৈর্বিত্তং পত্রশ্যতানি শনৈঃ শনৈঃ।।”

অর্থাৎ, যখন পথ দীর্ঘ তখন চাদর সেলাই থেকে শুরু করে পাহাড় চড়াই, পড়াশোনা থেকে শুরু করে জীবনের রোজগার – এসব কিছুর জন্য ধৈর্য্য রাখতে হয়, ধৈর্য্য দেখাতে হয়। কয়েকশ' বছর আগেই বিজ্ঞানের আবিষ্কার আজকের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। কিন্তু জ্ঞান এবং বিজ্ঞানের প্রয়োগ নিয়ে যত কথা ও গল্প, ধীরে ধীরে ধৈর্য্যের সঙ্গে সেই কথা ও গল্পগুলিকে শুনলে বোঝা যাবে, সেগুলি  আজও ততটাই শ্বাশত। আপনারা সবাই বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের যে পথে এগিয়ে চলেছেন সেখানে তাড়াহুড়োর কোনও জায়গা নেই। আপনারা যা ভেবেছেন, আপনারা যে উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করছেন, এমনও হতে পারে যে সেখানে আপনারা সম্পূর্ণ সাফল্য পাবেন না। কিন্তু আপনাদের সেই অসফলতাকেও সাফল্য বলে মনে করা হবে, কারণ আপনারা সেখান থেকেও অনেক কিছু শিখবেন। আপনাদের মনে রাখতে হবে যে প্রত্যেক বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত অসাফল্য থেকে একটি নতুন পথ বেরিয়ে আসে। আমি আপনাদের সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে দেখতে চাই। এই বিফলতাই আপনাদের সাফল্যের পথ গড়ে তুলতে পারে।

 

বন্ধুগণ,

 

একবিংশ শতাব্দীর ভারতের পরিস্থিতিও বদলে গেছে, প্রয়োজনগুলিও বদলেছে, আর প্রত্যাশাগুলিও বদলে গেছে। এখন আইআইটি-গুলি আর নিছকই ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনলজি হয়ে থেকে গেলে চলবে না, সেগুলিকে এখন ইনস্টিটিউটস অফ ইন্ডিজিনিয়াস টেকনলজি রূপে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের আইআইটি-গুলি যত বেশি ভারতের সমস্যাগুলি দূর করার জন্য গবেষণা করবে, ভারতের জন্য সমাধান তৈরি করবে, ততটাই তারা বিশ্বব্যাপী প্রয়োগের মাধ্যম হয়ে উঠবে। আমাদের এত বড় জনসংখ্যার মাঝে আপনাদের যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সাফল্যে পরিণত হবে, সেগুলি বিশ্বের কোথাও অসফল হবে না।

 

বন্ধুগণ,

 

আপনারা এটা জানেন যে এই সময় যখন গোটা বিশ্ব আবহাওয়া পরিবর্তনের সমস্যাগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করছে, ভারত তখন আন্তর্জাতিক সৌর সঙ্ঘ – আইএসএ গড়ে তোলার ভাবনা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে এবং একে মূর্ত রূপ দিয়েছে। আজ বিশ্বের অনেক দেশ ভারতের শুরু করা এই অভিযানে যুক্ত হয়েছে। এখন আমাদের ওপর দায়িত্ব পড়েছে যে আমরা এই অভিযানকে আরও কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। আমরা কি বিশ্বকে সস্তা, সুলভ, পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি দিতে পারব, যা ভারতের এই উদ্যোগকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে? ভারতের পরিচিতিকে আরও সুদৃঢ় করবে? আজ ভারত সেই দেশগুলির অন্যতম যেখানে সৌরশক্তির প্রতি ইউনিট দাম অনেক কম। কিন্তু বাড়িতে বাড়িতে সৌরশক্তি পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমাদের এখনও অনেক সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। আমি একবার বলেওছিলাম যে আমি আইআইটি-র ছাত্রছাত্রীদের সামনে অবশ্যই এই প্রস্তাব রাখব। মনে করুন, আমরা নির্মল রান্নার জন্য যদি কোনও অভিযান চালাই, আর সৌরশক্তির ভিত্তিতে বাড়িতে বাড়িতে উনুন জ্বলে, সৌরশক্তির ভিত্তিতেই বাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চয়ের ব্যাটারির ব্যবস্থা আমরা করতে পারি! আপনারা দেখুন, ভারতে ২৫ কোটি উনুন রয়েছে। ২৫ কোটি বাড়িতে উনুন জ্বলে। কাজেই ২৫ কোটি সৌর উনুন বিক্রি হতে পারে। যদি এতে সাফল্য পাওয়া যায় তাহলে যে বৈদ্যুতিন যানবাহনের জন্য সস্তা ব্যাটারির অনুসন্ধান চলছে, তাকে ‘ক্রস সাবসিডাইজ’ করে দেবে। এখন এ কাজ আইআইটি-র নবীন বন্ধুদের থেকে ভালো করে কারা করতে পারবেন? ভারতের এ ধরনের প্রযুক্তি চাই যা পরিবেশের ন্যূনতম ক্ষতি করে টেকসই হয় এবং অত্যন্ত সহজে এগুলি ব্যবহার করা যায়।

 

বন্ধুগণ,

 

বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রটিও এমন একটি বিষয় যে ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বের আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। বড় বড় বিপর্যয়ে জীবনের পাশাপাশি সব থেকে বেশি পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ক্ষতি হয়। এই বিষয়টি মাথায় রেখে ভারত দু'বছর আগে রাষ্ট্রসঙ্ঘে ‘কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রিসেলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার – সিবিআরআই’ আহ্বান করেছিল। বিশ্বের অনেক দেশও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা নিয়ে ভারতের দুশ্চিন্তা, ভারতের উদ্যোগকে তাঁরা বুঝতে পারছেন। আজ বিশ্ববাসী এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন। এমন সময়ে ভারতের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের ওপরও সকলের নজর রয়েছে, এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক।  তাঁরা জানতে আগ্রহী  যে,ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার নির্মাণে আপনারা বিশ্বকে কী সমাধান দিতে পারেন? দেশে আজ যত ছোট-বড় বাড়ি তৈরি হচ্ছে, বড় বড় দালান তৈরি হচ্ছে, সেগুলিকে আমরা প্রযুক্তির সাহায্যে কিভাবে বিপর্যয় নিরোধক করে তুলতে পারি, এ ব্যাপারে আমাদের ভাবতে হবে। আমরা দেখেছি যে আমাদের দেশে বড় বড় সেতু নির্মিত হয়, আর একটি ঝড় এলে সব সর্বনাশ হয়ে যায়। আমরা সম্প্রতি দেখেছি, উত্তরাখণ্ডে কী হয়েছে! মনে প্রশ্ন জাগে, আমরা কবে এবং কিভাবে টেকসই ও উন্নত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব?

 

বন্ধুগণ,

 

গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, “জাতিকে পাওয়া মানেই নিজের আত্মাকে বর্ধিত রূপে অনুভব করা। যখন আমরা নিজেদের ভাবনার মাধ্যমে জাতিকে পুনঃসৃষ্টি করি, কাজে এবং পরিষেবায় তখনই আমরা নিজেদের দেশের আত্মাকে অনুভব করি।” আজ খড়্গপুর সহ দেশের সম্পূর্ণ আইআইটি নেটওয়ার্ক থেকে দেশ এটা প্রত্যাশা করে যে তাঁরা নিজেদের ভূমিকা বিস্তারিত করুক। আপনাদের এখানে আগে থেকেই এর জন্য একটি সমৃদ্ধ ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি, ইন্ডাস্ট্রি ৪.০-র জন্য এখানে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবনে জোর দেওয়া হচ্ছে। এআই সংশ্লিষ্ট বিদ্যায়তনিক গবেষণাকে শিল্পক্ষেত্রে কার্যকরি পরিবর্তনের জন্য আপনারা অনেক চেষ্টা করছেন। ‘ইন্টারনেট অফ থিংস’ থেকে শুরু করে ‘মডার্ন কনস্ট্রাকশন টেকনলজি’ - এগুলি আইআইটি খড়্গপুরের প্রশংসনীয় সাফল্য। আপনারা এখন এগুলি নিয়ে কাজ করছেন। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়েও আপনাদের সফটওয়্যার সমাধান দেশের কাজে লাগছে। এখন আপনাদের 'হেলথ টেক' বা স্বাস্থ্য প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ সমাধান নিয়েও দ্রুতগতিতে কাজ করতে হবে। যখন আমরা স্বাস্থ্য প্রযুক্তির কথা বলি তখন শুধুই ডেটা, সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার নিয়ে কথা বলি না। একটি সম্পূর্ণ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থাপনার কথা বলি। প্রতিরোধক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা থেকে শুরু করে নিরাময় পর্যন্ত আধুনিক সমাধান আমাদের দেশকে দিতে হবে। করোনার এই সঙ্কটকালে আমরা দেখেছি কিভাবে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জামগুলি (পিপিই) একটি বড় বাজারে পরিণত হয়েছে। মানুষ আগে থার্মোমিটার এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ বাড়িতে রাখতেন। কিন্তু এখন ব্লাড প্রেশার চেক করার জন্য, সুগার চেক করার জন্য, ব্লাড অক্সিজেন চেক করার জন্য সরঞ্জামও বাড়িতে রাখতে শুরু করেছেন। স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার সঙ্গে যুক্ত সরঞ্জামের চাহিদা বাড়িতে বাড়িতে বাড়ছে। ভারতে পিপিই সুলভ করে তুলতে সঠিক তথ্য প্রদানকারী প্রযুক্তির সাহায্যে নতুন নতুন সমাধান বিকশিত করতে হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

করোনা-উত্তর বিশ্ব পরিস্থিতিতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে ভারত একটি বড় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগী হয়ে উঠতে পারে। এই ভাবনা নিয়ে এ বছর বিজ্ঞান এবং গবেষণার জন্য বাজেট বাড়ানো হয়েছে। পিএম রিসার্চ ফেলো স্কিমের মাধ্যমে আপনাদের মতো মেধাবী বন্ধুদের জন্য গবেষণার নতুন মাধ্যম গড়ে তোলা হয়েছে। আপনাদের ভাবনাগুলির যথাযথ ইনকিউবেশনের জন্য স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া মিশন থেকেও আপনারা সাহায্য পাবেন। কিছুদিন আগেই আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সংস্কার করা হয়েছে। এ সম্পর্কে আমি আপনাদের বিশেষভাবে বলতে চাই। সরকার মানচিত্র এবং জিও-স্পেশিয়াল ডেটাকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে দিয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রযুক্তি স্টার্ট-আপ ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে, আত্মনির্ভর ভারতের অভিযানও আরও দ্রুত হবে, আর দেশের নবীন স্টার্ট-আপস এবং উদ্ভাবকরা নতুন স্বাধীনতা পাবেন।

 

বন্ধুগণ,

 

আমাকে বলা হয়েছে যে জিমখানায় আপনারা বেশ কিছু সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া সম্বন্ধীয় এবং অন্যান্য প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন। এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমাদের লক্ষ্য কেবল নিজেদের বিশেষজ্ঞ করে তোলা অবধি সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। আমাদের জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপক বিস্তার ঘটাতে হবে। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে এজন্য একটি ‘মাল্টি-ডিসিপ্লিনিয়ারি অ্যাপ্রোচ’-এর লক্ষ্য রাখা হয়েছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আইআইটি খড়্গপুর এক্ষেত্রে আগে থেকেই উন্নত মানের কাজ করে চলেছে। আমি আইআইটি খড়্গপুরকে আরেকটি বিষয়ের জন্য শুভেচ্ছা জানাব। আপনারা নিজেদের অতীতকে, নিজেদের পুরাতন জ্ঞান-বিজ্ঞানকে যেভাবে ভবিষ্যতে আপনাদের উদ্ভাবনের শক্তি রূপে গড়ে তুলছেন তা প্রকৃতপক্ষেই প্রশংসনীয়। আপনারা বেদ থেকে শুরু করে উপনিষদ পর্যন্ত আর অন্যান্য সংহিতায় যে জ্ঞানের ভাণ্ডার রয়েছে তা নিয়ে ‘এম্পারিকাল স্টাডি’কেও উৎসাহ জোগাচ্ছেন। আমি এর অত্যন্ত প্রশংসা করি।

 

বন্ধুগণ,

 

এ বছর ভারত স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে পা রাখতে চলেছে। আইআইটি খড়্গপুরের জন্য এ বছরটি অত্যন্ত বিশেষ কারণ এই স্থান যেখানে আপনারা সাধনা করেন, যা আপনাদের জীবনকে নতুন মাত্রায় উন্নীত করে, এই স্থানটি স্বাধীনতা আন্দোলনের মহান অতীতের সঙ্গে যুক্ত। এই মাটি আন্দোলনের ক্ষেত্রে নবীন শহীদদের মাটি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর নৈতিকতার সাক্ষী রয়েছে। আমি আপনাদের অনুরোধ জানাব, বিগত বছরগুলিতে যে ৭৫টি বড় আবিষ্কার, বড় উদ্ভাবন, বড় সমাধান আইআইটি খড়্গপুর থেকে বেরিয়ে এসেছে, সেগুলির সংকলন প্রস্তুত করুন। সেগুলিকে দেশ এবং বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিন। অতীতের এই প্রেরণাগুলি থেকে আগামী বছরগুলির জন্য দেশ নতুন উৎসাহ পাবে, নবীব প্রজন্ম নতুন আত্মবিশ্বাস পাবে। আপনারা আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাবেন। দেশের প্রত্যাশাগুলি কখনও ভুলবেন না। দেশের আকাঙ্ক্ষাগুলি আজকে আপনাদের শংসাপত্র, আপনাদের প্রমাণপত্র। এই প্রমাণপত্র দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখার জন্য নয়। শুধু পেশার কারণে কোথাও পাঠানোর জন্য নয়। এই শংসাপত্রগুলি আজ আপনারা পাচ্ছেন তা ১৩০ কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার এক প্রকার দাবিপত্র, বিশ্বাসপত্র, আশ্বস্ত করার পত্র। আমি আপনাদের আজ এই শুভ অবসরের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আপনাদের থেকে আপনাদের মাতা-পিতার যত  প্রত্যাশা আছে, আপনাদের অধ্যাপকরা আপনাদের নিয়ে যত পরিশ্রম করেছেন, এই সবকিছু আপনাদের পৌরুষ দিয়ে, স্বপ্ন দিয়ে, সঙ্কল্প দিয়ে আপনাদের যাত্রাকে সফল করুন। সকলের মুখে হাসি ফোটান। এই প্রত্যাশা নিয়ে আপনাদের সবাইকে আরেকবার অনেক অনেক শুভকামনা, অনেক ধন্যবাদ!!

***

 

 

CG/SB/DM



(Release ID: 1701834) Visitor Counter : 162