প্রতিরক্ষামন্ত্রক
বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর 'ফাইভ এস' পরিকল্পনা সম্পর্কিত ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলির প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের সম্মেলনে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর ভাষণ
Posted On:
04 FEB 2021 3:25PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
ব্যাঙ্গালোরে এরো-ইন্ডিয়া ২০২১ কর্মসূচির এক পার্শ্ব অনুষ্ঠানে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিং-এর ভাষণের মধ্য দিয়ে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলির প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের সম্মেলনের সূচনা হয়েছে। এই সম্মেলনে একাধিক দেশের প্রতিমন্ত্রীরা ছাড়াও সে দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার এবং উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা সশরীরে বা ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে যোগ দিয়েছেন। সম্মেলনের এজেন্ডার কথা উল্লেখ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী সিং বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বৃহত্তম দেশ হিসেবে এই অঞ্চলের সমস্ত দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ক্ষেত্রে ভারত সর্বদাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ভারতে সুদীর্ঘ ৭,৫০০ কিলোমিটার উপকূল এলাকা রয়েছে। তাই, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও পরিবহণের ক্ষেত্রে ভারতের সুদীর্ঘ উপকূল ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলির কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আরও বলেন, ভারত মহাসাগর অঞ্চলের মধ্য দিয়ে বিশ্বের অর্ধেক কন্টেনারবাহী জাহাজ, এক-তৃতীয়াংশ পণ্যবাহী জাহাজ এবং দুই-তৃতীয়াংশ তেল পরিবহণ হয়ে থাকে।
শ্রী রাজনাথ সিং আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০১৫-তে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমস্ত দেশের অভিন্ন নিরাপত্তা ও অগ্রগতির লক্ষ্যে 'সাগর' পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলিতে সামুদ্রিক নিরাপত্তা, বাণিজ্য, যোগাযোগ, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই এবং পারস্পরিক সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানে গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এই উদ্যোগে গুরুত্ব সম্পর্কে আরও বলেন, সুস্থায়ী আঞ্চলিক উন্নয়ন, নীল অর্থনীতি, মৎস্য শিকার সহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়, জলদস্যু, সন্ত্রাস, অবৈধভাবে মৎস্য শিকার প্রভৃতির মতো প্রথা-বহির্ভূত বিপদগুলির মোকাবিলায় সমবেত প্রয়াস গ্রহণের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত জরুরি হয়েছে উঠেছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলির মধ্যে আর্থিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত সহযোগিতা আরও নিবিড় করার ওপর তিনি গুরুত্ব দেন। এই অঞ্চলের দেশগুলি জলদস্যুতা, মাদক চোরাচালান, অস্ত্রশস্ত্র, পাচার, বিপর্যয়, ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যের মতো একাধিক ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী একবিংশ শতাব্দীতে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সুস্থায়ী অগ্রগতি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে সামুদ্রিক সম্পদের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিশ্বের কয়েকটি সামুদ্রিক এলাকায় পরস্পরবিরোধী দাবীর নেতিবাচক প্রভাব ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় শান্তি সুনিশ্চিত করার বিষয়টিকে আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। এই অঞ্চলের দেশগুলি আইনের শাসন-ভিত্তিক ব্যবস্থার প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সংযমের পরিচয় দিয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্য ও পর্যটনের প্রসারে ভারত সরকারের সাগরমালা, প্রোজেক্ট মৌসম, এশিয়া-আফ্রিকা গ্রোথ করিডর প্রভৃতি কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও নৌ-বাণিজ্যিক সহযোগিতাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলির ভবিষ্যৎ কি হবে তা অনেকটাই নির্ভর করছে নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগগুলিকে সদ্ব্যবহারের প্রয়োগ রীতির ওপর।
মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, ভারত স্টার্ট-আপ-এর ক্ষেত্রে বিশ্বের বৃহত্তম গবেষণা ও উন্নয়নমূলক হাব হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষিতে তিনি ভারত মহসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলিকে পারস্পরিক সুবিধার জন্য স্টার্ট-আপ ক্ষেত্রে ভারতের অনুকূল ব্যবস্থাকে সদ্ব্যবহারের পরামর্শ দেন। তিনি জানান, সম্প্রতি ভারতীয় বিমানবাহিনী হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (হ্যাল)-এর কাছ থেকে ৮৩টি অত্যাধুনিক হালকা ওজন-বিশিষ্ট এমকে-১এ হেলিকপ্টার কেনার বরাত দিয়েছে। এ থেকেই প্রতিরক্ষা উৎপাদন ক্ষেত্রে ভারতের সক্ষমতার দিকটি সুস্পষ্ট হয়।
শ্রী রাজনাথ সিং বলেন, প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদীর 'সাগর' পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে 'প্রতিবেশীরাই সর্বাগ্রে' এবং 'পুবের সঙ্গে কাজ করো' নীতি গ্রহণ করেছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারত এক সুসংবদ্ধ মেরিটাইম ডোমেন অ্যাওয়ারনেস ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। এর ফলে, পারস্পরিক তথ্য আদান-প্রদান ব্যবস্থা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। কোভিডের সময় ভারত 'অপারেশন সাগর' কর্মসূচির মাধ্যমে মোজাম্বিক, মাদাগাসকার সহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসকদল, ওষুধপত্র, চিকিৎসা পরীক্ষার সরঞ্জাম, ভেন্টিলেটর, মাস্ক, দস্তানা প্রভৃতি সরবরাহ করেছে। এমনকি, 'অপারেশন সাগর' কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্যায়ে ভারত মহাসাগর অঞ্চলের চারটি দেশকে ৩০০ মেট্রিক টন মানবিক সাহায্য পাঠানো হয়েছে।
শ্রী সিং আরও জানান, ভারত মানবিক সাহায্যের নিদর্শন হিসেবে ভুটান, মালদ্বীপ, বাংলাদেশ, নেপাল, মায়ানমার, সেশেলস সহ একাধিক দেশকে কোভিড-১৯-এর সময় মানবজাতির সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সাহায্য দিয়েছে। এমনকি, এই দেশগুলিতে কোভিড-১৯ টিকা সরবরাহের পূর্বে টিকাকরণ কর্মসূচির জন্য আধিকারিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। হিমঘর বা সংরক্ষণাগার গড়ে তোলার ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তথ্য পরিচালনার ব্যাপারেও ভারত তার জ্ঞান বিনিময় করেছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মানবিক সঙ্কট এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় ভারত যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা এই অঞ্চলের দেশগুলির প্রতি ভারতের দায়বদ্ধতাকেই প্রতিফলিত করে বলে শ্রী সিং অভিমত প্রকাশ করেন।
উল্লেখ করা যেতে পারে, ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলির প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের এই সম্মেলনে ২৮টি দেশের মধ্যে ২৭টি দেশই অংশগ্রহণ করেছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নৌ-বাণিজ্যিক নিরাপত্তা এবং জলদস্যুতা দমনে ভারতীয় নৌ-বাহিনী ও উপকূল রক্ষীবাহিনীর জাহাজ মোতায়েনের ফলে বাণিজ্যিক জাহাজগুলির ক্ষেত্রে বিপদ অনেকখানি কমেছে। এই সম্মেলন থেকে যে ধারণা ও পরামর্শ পাওয়া যাবে তা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সুপরিকল্পিত কর্মপন্থা এবং পারস্পরিক অংশীদারিত্ব নিবিড় করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নেবে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অভিমত প্রকাশ করেন।
***
CG/BD/DM
(Release ID: 1695279)
Visitor Counter : 401