প্রতিরক্ষামন্ত্রক
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বর্ষশেষ সমীক্ষা, ২০২০
Posted On:
01 JAN 2021 7:57PM by PIB Kolkata
নতুন দিল্লি, ০১ জানুয়ারি, ২০২১
২০২০ সালটি শুরু হয়েছিল ভারতীয় প্রতিরক্ষা ইতিহাসে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তকে সঙ্গে নিয়ে। গত বছরে গড়া হয় ফৌজ বিষয়ক দপ্তর এবং তৈরি হয় চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সি ডি এস) পদ। জেনারেল বিপিন রাওয়াত ২০২০-র ১ জানুয়ারি সি ডি এস পদের দায়িত্ব নেন। স্থল, বায়ু, নৌ সমস্ত বাহিনীর তিন শাখার বিষয়েই সি ডি এস হন প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর প্রধান সমর উপদেষ্টা।
- ভারতীয় সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ রেখা ও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় দৃঢ়তার সঙ্গে শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাত এনেছে এবং জঙ্গিপনা/সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান অবিরাম চালিয়ে গেছে।
- এবছর আমাদের সেনাবাহিনীর শৌর্যবীর্যের সবচেয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে গালওয়ান উপত্যকায় ভারতের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করা, একাজে শহিদ হন ২০ জন সাহসী জেনা।
- ভারত সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে সীমান্তে একতরফাভাবে স্থিতাবস্থা বদলানোর কোন প্রচেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না এবং আমরা দেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর।
- ভারতীয় সেনাকে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখতে বাজেটের বাধ্যবাধকতা হটানো হয়েছে।
- ভারতের সার্বভৌমত্বকে যারা চ্যালেঞ্জ জানায় তাদের কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে, ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বায়ু সেনা আটটি রাফাল যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে। বিশ্বমানের এই রাফাল ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এক আমূল পরিবর্তনকারী। ব্রহ্মস সুপারসনিক বা শব্দের চেয়ে দ্রুতগামী ক্ষেপণাস্ত্র বসানো হয়েছে সুখই (Su-30 MKI) যুদ্ধবিমানে।
- সাবমেরিন – বিধ্বংসী স্টেলথ কর্ভেট কাভারাত্তি (পি ৩১) এবং যুদ্ধ জাহাজ এল সি ইউ এল ৫ যোগ দেওয়ায় জাতীয় নৌ বাহিনীর শক্তি বেড়েছে আরো।
- আত্মনির্ভর ভারত কর্মসূচির সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিরক্ষা সামগ্রী সংগ্রহ পদ্ধতি, ২০২০ এর লক্ষ হল দেশি শিল্পে উৎসাহ দেওয়া এবং প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনে আরো স্বনির্ভরতা অর্জন।
- ভারতীয় নৌ বাহিনীর জন্য বরাত দেওয়া ৪৫টি জাহাজের মধ্যে, ৪১টি তৈরি হচ্ছে দেশে। সাবমেরিনও দেশে নির্মাণ করা হবে।
- অটোমেটিক রুটের আওতায় প্রতিরক্ষা সামগ্রী তৈরিতে সরাসরি বিদেশি লগ্নির সর্বোচ্চ সীমা ৪১ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ শতাংশে।
- আত্মনির্ভরতার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও বিকাশ সংস্থা (Defence Research and Development Organisation - DRDO) এর তৈরি অগ্নি এবং পৃথ্বী ক্ষেপণাস্ত্র, হালকা যুদ্ধ বিমান, তেজস; বহু – ব্যারেল বিশিষ্ট রকেট লঞ্চার, পিনাক ইত্যাদি ভারতের সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে অনেকখানি।
- বেশ কয়েক বছর যাবৎ মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে শর্ট সার্ভিস কমিশনড মহিলা আধিকারিকদের স্থায়ী কমিশন মঞ্জুর করা হয়েছে। নৌসেনার জাহাজে নিযুক্ত হয়েছেন চার মহিলা অফিসার।
- বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা সড়ক সুড়ঙ্গ – প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সীমান্ত সড়ক সংস্থার তৈরি অটল টানেল গত ৩ অক্টোবর জাতিকে উৎসর্গ করেছেন।
- ২০ মে, উত্তরাখণ্ডের ধারাচুলা থেকে লিপুলেখ (চিন সীমান্ত লাগোয়া) ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের উদ্বোধন।
- কোভিড-১৯ অতিমারি থেকে মানুষের দুর্দশা কমাতে সশস্ত্র বাহিনী এবং তার বিভিন্ন সংস্থা ও শাখা তৎপতা দেখিয়েছে। চিন, ইরান, ইটালি, মালয়েশিয়া ইত্যাদি কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনা এবং সারা দেশে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতে সশস্ত্রবাহিনী তার লোকবল ও চিকিৎসার সহায়সম্পদ কাজে লাগিয়েছে।
প্রতিরক্ষা দপ্তর
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ পদ এবং ফৌজ বিষয়ক দপ্তর তৈরি
চিফ অফ ডিফেন্স
২০১৯ এর ১৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা মাফিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর তিন শাখার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর জন্য, সরকার চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ পদ সৃষ্টি করে এবং জেনারেল বিপিন রাওয়াত ২০২০-র ১ জানুয়ারি দেশের প্রথম চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ হিসেবে দেন।
ফৌজ বিষয়ক দপ্তর
২০২০-র জানুয়ারি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে নতুন ফৌজ বিষয়ক দপ্তর তৈরি হয়েছে। চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ হলেন এই দপ্তরের সচিব।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর
নিয়ন্ত্রণ রেখা ও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় শত্রুপক্ষকে জোরাল প্রত্যাঘাত
১) ভারতীয় সেনা নিয়ন্ত্রণ রেখা ও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রত্যাঘাত হেনেছে, জঙ্গিপনা/সন্ত্রাস বিরোধী অবিরাম অভিযান চালিয়ে গেছে। দেশের সীমান্ত সুরক্ষায় তাদের তৎপরতায় কখন ঢিলে পড়তে দেয়নি।
২) প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার একাধিক এলাকায় বল প্রয়োগের মাধ্যমে স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের চিনা প্রচেষ্টা দঢ়তার সঙ্গে বানচাল করে দিয়েছে। ভারতীয় সেনা দুদেশের মধ্যেকার যাবতীয় চুক্তি ও আচরণবিধি মেনে চললেও, চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি বহু সেনা সমাবেশ ও কাঁটাপেরেক বসানো লাঠি-মুগুর ব্যবহার করে উত্তেজনা বাড়ায়। পরিস্থিতির মোকাবিলায় ভারতীয় সেনাও বিমান বাহিনীর সাহায্য নিয়ে দ্রুত বাড়তি সেনা মোতায়েন করে। জড় করে ফেলে কামান, ট্যাঙ্ক, গোলাগুলি। আমাদের ভূখণ্ডে চিনা সেনার অনুপ্রবেশ রুখতে গিয়ে গালওয়ানে জোর সংঘর্ষে শহিদ হন ২০ জন বীর ভারতীয় সেনা। চিনের পক্ষেও হতাহতের সংখ্যা অনেক। পরে আমাদের সেনা ২০২০-র ২৮-২৯ আগস্ট পাঙ্গং হ্রদের দক্ষিণ পাড় বরাবর পাহাড়শৃঙ্গগুলি দখন করে চিনাদের সম্প্রসারণবাদী ছক ভেস্তে দেয়। প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে, এসব পাহাড় শৃঙ্গে আমাদের সেনা মোতায়েন অব্যাহত। চিনা বাহিনীর যে কোন অপচেষ্টা রুখতে ভারতীয় ফৌজ সেখানে শেকড় গেড়ে বসে আছে। সেইসঙ্গে, আলোচনা মারফত জট কাটানোর চেষ্টাও চলছে।
৩) সস্ত্রাস আবহের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মন্ত্রক, সরকারি প্রশাসন এবং সরকারি সংস্থার যৌথ কাজকর্ম ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার দরুন, জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সেনারা কড়া নজর রাখায়, উপত্যকায় জঙ্গি ঢোকানর পাক অপপ্রচেষ্টা ভেস্তে যাচ্ছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করলে, ভারতীয় জওয়ানদের পাল্টা জবাবে তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। অনুপ্রবেশ রোখার অভিযানে নিয়্ন্ত্রণ রেখায় নিকেশ হচ্ছে বেশ কিছু জঙ্গি।
৪) গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে ক্রমাগত অভিযান চালানোর ফলে মারা পড়েছে জঙ্গিদের অনেক বড় বড় চাঁই। উপত্যকায় সক্রিয় জঙ্গির সংখ্যা কমতে কমতে এখন শ’দুয়েক। জঙ্গি দলে স্থানীয় লোকজনের ঢোকা কমতে থাকায়, উপত্যকায় অশান্তি পাকানোর পাক অপপ্রচেষ্টা দারুন মার খেয়েছে। গত দু’বছর যাবৎ প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মাত্রা ঢের কমে যাওয়ায়, লোকজন শান্তিতে জীবন কাটানোর সুযোগ পাচ্ছে। কোভিড-১৯ অতিমারি সামলাতে, জওয়ানরা শুধুমাত্র অসামরিক প্রশাসনকে নয়, সাধারণ মানুষকেও সরাসরি সহায়তা জুগিয়েছেন। ভারতীয় সেনার এই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
৫) বহু জঙ্গি ধরা দেওয়ায় উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতির ঢের উন্নতি হয়েছে। মায়ানমারের সঙ্গে চমৎকাল বোঝাপড়া এবং সমন্বয়ের সুবাদে সেখানে ভারতীয় জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর পক্ষে শিবির গাড়া কঠিন হয়ে পড়েছে। সেনা ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর চাপে কোনঠাসা জঙ্গিরা বাধ্য হচ্ছে হিংসার পথ ছেড়ে দিতে।
অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা
৬) কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জাতীয় ডাকে সাড়া দিয়ে লোকবল এবং বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করা। সারা দেশে সেনাবাহিনী ১১৩টি হাসপাতাল ঠিক করে তার সহায়সম্পদ দিয়ে ১২ হাজার রুগিকে চিকিৎসা করেছে। কোভিড পরীক্ষার জন্য ১৭টি ল্যাবরেটরি বেছে নেওয়া হয়। এছাড়া, লকডাউন চলাকালে দেশে ফিরে আসা প্রায় ৪ হাজার প্রবাসী ভারতীয়কে নিভৃতবাসে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
৭) কোভিড-১৯ ভারতীয় সেনাবাহিনীকে বন্ধু বিদেশি রাষ্ট্রগুলোকে সাহায্য করতে এগিয়ে যাওয়ার এক সুযোগ এনে দিয়েছিল। বিশেষ দল ও ওষুধপত্তর পাঠানোর পাশাপাশি কোভিড ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি কাজে লাগাতেও তাদের পরামর্শ যোগান হয়।
৮) কুম্ভ মেলায় মানবিক সহায়তা এবং বিপর্যয় ত্রাণ ব্যবস্থার অঙ্গ হিসেবে অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা, অসমে তেলকূপে আগুন নেভাতে বিশেষ দল মোতায়েন এবং মধ্যপ্রদেশে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সাহায্য।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও যৌথ মহড়া
৯) বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যৌথ মহড়া চালিয়ে প্রতিরক্ষায় সহায়তা, যৌথ প্রশিক্ষণ, রাষ্ট্রসঙ্ঘ মিশনে সেনা পাঠানো এবং বিভিন্ন দরকারে বন্ধু বিদেশি রাষ্ট্রগুলোকে সাহায্যের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সুনিশ্চিত করা।
আত্মনির্ভর ভারত
১০) সেনাবাহিনীর সরঞ্জাম কেনা ও পরিকল্পনার সময় ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এবং আত্মনির্ভর ভারত কর্মসূচি গুরুত্ব পেয়েছে। দেশে প্রতিরক্ষা শিল্প বিকাশের প্রচেষ্টায় সহায়তা করা হচ্ছে।
নৌসেনার তৎপরতা
- অপারেশন সংকল্প : উপসাগীয় অঞ্চলে আমেরিকা ও ইরাকের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়ার সময়কালে, ২০১৯ এর জুন ইস্তক ভারতীয় নৌ বাহিনী ঐ এলাকায় হরমুজ প্রণালী দিয়ে চলাচলকারী ভারতীয় বাণিজ্য জাহাজগুলোর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে অপারেশন সংকল্প চালিয়ে যাচ্ছে। এযাবৎ, আমাদের নৌ বাহিনী ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ১৬টি যুদ্ধ জাহাজ এই অভিযানে নিয়োগ করেছে। ১ কোটি ৬১ লক্ষ টন মাল বোঝাই ১৫৬টি ভারতীয় পতাকাবাহী বাণিজ্য জাহাজকে নিরাপদে হরমুজ প্রণালী পার করিয়ে দিয়েছে।
- অপারেশন সমুদ্র সেতু : কোভিড-১৯ অতিমারি শুরু হওয়ার পর ইরান, মলদ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কায় আটকে পড়া ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য নৌ বাহিনী জলশ্ব, শার্দূল, ঐরাবত এবং মগর এই চারটি জাহাজ কাজে লাগায়। সমুদ্র সেতু অভিযান সাড়ে তিন হাজারের বেশি ভারতীয়কে সরিয়ে আনে।
- মিশন সাগর ও সাগর-২ : দক্ষিণ ভারত ও মহাসাগরীয় অঞ্চলের দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতে সাহায্য পাঠানোর জন্য ‘মিশন সাগর’ এর অংশ হিসেবে নৌ বাহিনী কেশরী হাজাজ নিয়োগ করে। জাহাজটি মলদ্বীপ, মরিশাস, মাদাগাসকার, কমোরোজ এবং সেশেলেসে ওষুধপত্তর এবং মেডিক্যাল কিট নিয়ে যায়। নৌ বাহিনীর চিকিৎসক দল মরিশাস এবং কমোরোজে রুগিদের চিকিৎসাতেও হাত লাগায়। মানবিক উদ্দেশ্যে মিশন সাগর-২ ঐরাবত জাহাজে ২৭০ টন ত্রাণ সামগ্রী পাঠায় জিবুতি, মাসাওয়া (ইরিট্রিয়া), বন্দর সুদান এবং কেনিয়ার মোম্বাসায় (দক্ষিণ সুদানের জন্য)।
বিদেশি নৌ বাহনীর সঙ্গে যৌথ মহড়া
- গোয়ায় ওমানের রয়্যাল নেভির সঙ্গে অনুশীলন চলে ২০২০-র ৭ জানুয়ারি থেকে ১০ অক্টোবর। এতে অংশ নিয়েছিল উভয় পক্ষের দুটি করে জাহাজ। রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ মহড়া অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গোপসাগরে। দু’দেশের তিনটি করে জাহাজ এই মহড়া চালায় ২০২০-র ৪-৫ সেপ্টেম্বর। তিন দিনের ভারত-জাপান জিমেক্স (JIMEX 2020) এর আসর বসে আরব সাগরে। দু’পক্ষের জাহাজ ও হেলিকপ্টার ছাড়াও এই দ্বিবার্ষিক মহড়ায় ভারতীয় নৌ সেনার কয়েকটি যুদ্ধ বিমান যোগ দিয়েছিল। বঙ্গোপসাগরের উত্তরে বাংলাদেশের সঙ্গে মহড়া হয় ২০২০-র ৩ ও ৪ অক্টোবরে। দুটি জাহাজ ছাড়াও বাংলাদেশ পাঠায় সমুদ্রে টহলদার বিমান। ভারতীয় নৌবাহিনীর খুকরি, কিলটান জাহাজ এবং ডর্নিয়ের বিমান ও হেলিকপ্টার বঙ্গোপসাগরে ২০২০ মহড়ায় অংশ নিয়েছিল। বঙ্গোপসাগরে ভারত-শ্রীলঙ্কা দ্বিপাক্ষিক অনুশীলন চলে ২০২০-র ১৯-২১ অক্টোবর। ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া এই চার দেশ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মালাবার ২০২০ মহড়া দেয় ২০২০-র ৩-৬ এবং ১৭ নভেম্বর। এছাড়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ফ্রান্সও ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক মহড়া চালিয়েছে।
বিদেশি রাষ্ট্রকে সহায়তা
ভারতীয় নৌ বাহিনী মাদাগাসকার, মরিশাস, ফিলিপিন্স, মলদ্বীপ, সেশেলেস, শ্রীলঙ্কাকে বিভিন্নভাবে সহায়তা যুগিয়েছে।
ভারতে যুদ্ধ জাহাজ তৈরিতে জোর
সরকারের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ দর্শনের সঙ্গে তাল রেখে চলার জন্য নৌ বাহিনী দেশে নির্মাণের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। নৌ বাহিনীর জন্য বরাত দেওয়া ৪৩টি জাহাজের মধ্যে দেশে তৈরি হচ্ছে ৪১টি। পরিকল্পনা আছে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সমবেত প্রচেষ্টায় দেশে আরও ৪৪টি জাহাজ এবং সাবমেরিন বানানোর। গোয়ার কিনেকো সংস্থা নৌ বাহিনীর জাহাজের জন্য দেশি নকশায় নির্মিত সোনার ডোম বা ধ্বনিতরঙ্গ – প্রেরক গম্বুজ সরবরাহ করেছে। ভারতে উৎপাদনের জন্য নৌ বাহিনীর অবিরাম উৎসাহ যোগানর এ এক অঙ্গ।
কোভিড-১৯ অতিমারি রুখতে ভারতীয় নৌ বাহিনীর প্রচেষ্টা
মুম্বাইয়ের নেভাল ডকইয়ার্ডের ইনস্টিটিউট অব নেভাল মেডিসিন এক উদ্ভাবনমূলক ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম বা বর্ম (পিপিই) তৈরি করেছে। এই পিপিই এমন কাপড় দিয়ে বানানো যে তা প্যাচপেয়ে হয়ে যায় না, সংক্রমণ কণা থেকে পরিধানকারীকে রক্ষা করে, অথচ শ্বাস নিতেও সুবিধে, ফলে কোন ক্লান্তি ছাড়াই এটা পরে অনেক সময় কাজ করা যায়। এটা তৈরি করা বেশ সহজ, সহজেই মেলে দেশি এ কাপড়। এই বর্ম বানাতে খুব দক্ষ দর্জির দরকার পড়ে না বলে স্থানীয় সেলাই করার লোকজনের কাজ জুটিয়ে দিয়ে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচিকেও এগিয়ে দেবে। দাম পড়ে সাড়ে পাঁচশো টাকার কম। বিদেশ থেকে আনা পিপিই-র দামতো ১৮০০-২০০০ টাকা। ন্যাশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ডেভালপমেন্ট কর্পোরেশন এই পিপিই তৈরির জন্য ছটি সংস্থাকে লাইসেন্স দিয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর এবং সরকারি ও বেসরকারি বেশ কয়েকটি হাসপাতাল এই পিপিই ব্যবহার করছে এবং তার কার্যকারিতায় সন্তুষ্ট। দিল্লির এস ভি বি পি কোভিড হাসপাতাল ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা দামে ২৫ হাজারটি পিপিই-র বরাত দিয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ
- আত্মনির্ভর ভারত দর্শনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ২০২০ এর ১৩ আগস্ট প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নেভাল ইনোভেশন অ্যান্ড ইন্ডিজেনাইজেশন অর্গানাইজেশন (NIIO) এর উদ্বোধন করেন। নৌ বাহিনী প্রতিরক্ষায় স্বনির্ভরতার জন্য উদ্ভাবন ও দেশে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষে পন্ডিত এবং শিল্প মহলের সঙ্গে মত বিনিময়ের উদ্দেশ্যে উত্তর প্রদেশ একসপ্রেসওয়ে ইনডাসট্রিয়াল ডেভালপমেন্ট অথরিটি, গুজরাতের রক্ষা শক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কোচির মেকার গ্রাম এবং সোসাইটি অব ইন্ডিয়ান ডিফেন্স ম্যানুফ্যাকচারার্স এর সঙ্গে চারটি সমঝোতা পত্র সই করেছে। এছাড়া, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী দেশে উৎপাদনের জন্য ‘সামলম্বন’ নামে একটি পরিকল্পনাও প্রকাশ করেন।
- ডিফেক্সপো ২০২০ : লখনৌতে ২০২০ এর ৫-৯ ফেব্রুয়ারি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এই প্রদর্শনীর আসর বসে। দ্বিবার্ষিক এই প্রদর্শনীটির এটি ছিল একাদশ সংস্করণ। এবারের থিম ছিল, ‘ভারত : প্রতিরক্ষা সামগ্রী নির্মাণের উদীয়মান কেন্দ্র’। অনুষ্ঠানে অংশ নেয় ১৭২টি বিদেশি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদক সংস্থা। নৌ বাহিনীর ১০টি স্টলে দেশে প্রতিরক্ষা যন্ত্রপাতি তৈরির উদ্যোগ তুলে ধরা হয়।
- ভারত-আফ্রিকা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সম্মেলন : ডিফেক্সপো-২০২০ এর পাশাপাশি লখনৌতে ২০২০-র ৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম ভারত-আফ্রিকা প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠক বসে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর উদ্বোধন করা এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর পদস্থ কর্তারা। সম্মেলনে ‘লখনৌ ঘোষণা’ বিবৃতিতে সবই করে যোগদানকারী দেশগুলো। আফ্রিকা থেকে ১৪টি দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সহ ১৫৪ জনের বেশি প্রতিনিধি সম্মেলনে অংশ নেন। বৈঠকে হাজির ছিল আফ্রিকার মোট ৩৮টি দেশ।
অ্যানটার্কটিকায় ভারতের ৩৯ তম বৈজ্ঞানিক অভিযান
২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০-র মে অবধি এই অভিযান চলে। অভিযাত্রী দলটি লারসেম্যান পাহাড় এবং প্রিন্সেস অ্যাসট্রিড উপকূলে জল নিয়ে সমীক্ষা (হাইট্রোগ্রাফিক সার্ভে)-র কাজে হাত লাগায়।
হালকা যুদ্ধ বিমান (নৌ সেনা)
এই কর্মসূচি যৌথ উদ্যোগে এগিয়ে চলেছে। প্রকল্পটিতে ২০২০-র ১১ জানুয়ারি এক বড় অগ্রগতি হয়, ঐ দিন হালকা যুদ্ধ বিমান প্রথম বিমানবাহী জাহাজের ডেকে নামে।
ভারতীয় বায়ু সেনা
- বিমানঘাঁটি পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণ : ২০২০-র ৮ মে, এই কর্মসূচির ২য় পর্যায়ে ৩৭টি বিমানক্ষেত্র আধুনিকভাবে গড়ে তোলার জন্য টাটা পাওয়ার এস ই ডি (TPSED) এর সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সমঝোতা পত্র সই করেছে। এ কাজে খরচ হবে ১১৮৯.৪৪ কোটি টাকা। এই বিমানঘাঁটিগুলোর পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শেষ হলে কম দৃশ্যমানতা এবং প্রতিকূল আবহাওয়াতেও সামরিক এবং অসামরিক বিমান নিরাপদে ওঠানামা করতে পারবে। ২০১৯ এর ১৫ ডিসেম্বর বিমানঘাঁটি পরিকাঠামো আধুনিকীকরণ কর্মসূচির প্রথম পর্যায় শেষ হয়। ভারতীয় বায়ু সেনার ৩০টি বিমান ক্ষেত্রে এ কাজ চলে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কর্মসূচির আওতায় আছে বায়ু সেনার ২৪টি বিমাঘাঁটি, নৌ সেনার ৯টি এবং অন্যান্য শাখার ৪টি বিমানঘাঁটি। বিমানঘাঁটি পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণ কর্মসূচিতে আরো কিছু পরিকাঠামো উন্নত করার পাশাপাশি ক্যাট-২ ইনসস্ট্রুমেন্ট ল্যাভিং সিস্টেম (আই এল এম) এবং ক্যাট-২ এয়ারফিল্ড লাইটিং সিস্টেমও থাকবে।
- রাফাল : আটটি রাফাল বিমান ফ্রান্স থেকে ভারতে উড়িয়ে আনা হয়েছে এবং সেগুলো ভারতীয় বিমান বাহিনীতে পুরোদস্তুর যোগ দিয়েছে। ২০২০-র সেপ্টেম্বর রাফালের প্রথম স্কোয়াড্রনটি বায়ু সেনায় অন্তর্ভুক্ত হয়।
- সুখয় বিমানে ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র লাগানো : ভারতীয় বায়ু সেনার সুখয় (এস ইউ-৩০ এম কে আই) বহু দূর থেকে সমুদ্র বা স্থলে শত্রুপক্ষের উপর নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম, তা সে দিনে বা রাতে এবং যে কোন আবহাওয়ায়।
অন্যান্য প্রতিরক্ষা সামগ্রী সংগ্রহ :
- অ্যাসট্রা বি ভি আর ক্ষেপণাস্ত্র, স্মার্ট অ্যান্টি ফিল্ড ওয়েপন, দূর পাল্লার স্থলে আঘাত হানার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ইত্যাদি কিনতে প্রতিরক্ষা পরিষদ (ডিফেন্স কাউন্সিল) এর সায় মিলেছে।
- হ্যাল (হিন্দুস্থান এরোনটিকস লিমিটেড) থেকে উন্নত ৮৩টি হালকা যুদ্ধ বিমান এম কে ওয়ান এ যোগাড় করার জন্য নিরাপত্তা বিষয় ক্যাবিনেট কমিটির অনুমোদন পর্ব এখন চূড়ান্ত এবং শীঘ্রই চুক্তি সই হবে।
- ইউরোপের বহুজাতিক সংস্থা এয়ারবাস থেকে ৫৬টি সামরিক পরিবহণ বিমান কেনার অনুমোদন পর্বও প্রায় চূড়ান্ত এবং শীঘ্রই এজন্য বরাত দেওয়া হবে। এয়ারবাস ৫৬টি বিমানের মধ্যে ৪০টি ভারতের কোন বিমান নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৈরি করবে। কোন বেসরকারি সংস্থায় ঐ ধরণের অংশগ্রহণ এই প্রথম এবং তা আমাদের প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশে মদত যোগাবে।
- হ্যাল থেকে হালকা সামরিক হেলিকপ্টার, বেল (ভারত ইলেক্ট্রনিকস লিমিটেড) সংস্থার আই ই ডবলিউ আর এবং ডি-২৯ ক্রয়, দূর-নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার উন্নয়নেও চুক্তির কাজ অনেকখানি এগিয়েছে। ২০২১- এর প্রথম সিকিভাগ নাগাদ চুক্তি সই হতে পারে।
তৈরির প্রকল্প
আত্মনির্ভর ভারত : ভারতীয় বিমান বাহিনী ‘আত্মনির্ভর ভারত’ দর্শনকে সক্রিয় সমর্থন করে। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাণে স্বনির্ভরতার প্রক্রিয়ায় এই বাহিনী মদত যুগিয়ে আসছে। মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগের বিভিন্ন প্রকল্পে অগ্রগতির হালনাগাদ নিচে দেওয়া হল –
ক) মেক-২ প্রকল্প : বায়ুসেনা সুখয় বিমানের জন্য ইনফ্রারেড সার্চ অ্যান্ড ট্র্যাক ব্যবস্থা (IRST), ফোল্ডিং ফাইবার প্লাস ম্যাট, ১২৫ কেজি ওজনের বোমা এবং বিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য বোমার ফিউজ তৈরির জন্য ভারতীয় শিল্প সংস্থাকে বরাত দিয়েছে।
খ) প্রযুক্তি উন্নয়ত তহবিল (Technology Development Fund - TDF) প্রকল্প : ভারত সরকার একটি প্রযুক্তি উন্নয়ন তহবিল গড়েছে। তহবিলটি পরিচালনার দায়িত্ব প্রতিরক্ষা গবেষণা ও বিকাশ সংস্থা (DRDO) এর হাতে। এই প্রকল্পের আওতায় বায়ু সেনার ১৮টি প্রকল্প এখন অগ্রগতির বিভিন্ন পর্যায়ে আছে। সুখয় বিমানের ভিডিও প্রসেসিং, সুইচ বোর্ড এবং মিরাজ-২০০০ এর ইঞ্জিনের বার্নার রিংয়ের নকশা ও বিকাশের জন্য ভারতীয় সংস্থা বরাত পেয়েছে।
গ) তেজস এম কে -২ এর এয়ারবোর্ন আর্লি ওয়ার্নিং ও কনট্রোল : প্রতিরক্ষা সামগ্রী সংগ্রহ পরিষদ (Defence Acquisitions Council - DAC) ২০২০-র ১৭ ডিসেম্বর তেজস এম কে-২ বিমানের জন্য ৬টি এয়ারবোর্ন আর্লি ওয়ার্নিং ও কনট্রোল কেনায় সম্মতি দিয়েছে। দেশেই তা তৈরি হবে বলে ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্প মদত পাবে। এই প্রকল্প ‘আত্মনির্ভর ভারত’ কর্মসূচিকে জোরদার করবে।
ঘ) হালকা যুদ্ধ বিমান : আধুনিক প্রযুক্তির মজবুত যুদ্ধ বিমান নির্মাণের লক্ষে হালকা যুদ্ধবিমান হচ্ছে দেশীয় প্রচেষ্টার এক ফল। তেজস হল ভারতে তৈরি এ ধরনের প্রথম বিমান। ২০১৬-র ১ জুলাই হালকা যুদ্ধ বিমানের প্রথম স্কোয়াড্রনটি গড়ে হয়। এযাবৎ, ১৬টি বিমান বায়ুসেনাকে সরবরাহ করা হয়েছে। বায়ু সেনা ৮৩টি হালকা যুদ্ধ বিমান এম কে ওয়ান এ সংগ্রহের পরিকল্পনা নিয়েছে। হ্যাল, এডিএ (এরোনটিক্যাল ডেভালাপমেন্ট এজেন্সি) এবং ভারতীয় বায়ুসেনা গোড়ার দিককার সমস্যা কাটিয়ে উঠতে একযোগে কাজ করেছে। নতুন বিমান নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রাথমিক কিছু সমস্যা হয়েই থাকে।
লেহ্-তে দ্রুত সেনা ও যুদ্ধ সরঞ্জাম সমাবেশ : উত্তর সীমান্তে চটজলদি সেনা ও ভারি অস্ত্র পাঠাতে ভারতীয় বায়ুসেনার পরিবহণ বিমানবহর তাদের ক্ষমতা প্রমাণ করেছে। বিমান বাহিনীর এই কর্ম তৎপতার দৌলতে আমাদের জওয়ানরা সীমান্ত এলাকায় তাদের অবস্থান ক্ষিপ্রতার সঙ্গে দৃঢ় করতে সক্ষম হয়।
মানবিক সহায়তা ও বিপর্যয় ত্রাণ
মানবিক সহায়তা ও বিপর্যয় ত্রাণ মিশন (আন্তর্জাতিক) : কোভিড মোকাবিলায় ওষুধপত্র ও সাজসরঞ্জাম পাঠানো এবং কোভিড আক্রান্ত বিভিন্ন দেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার জন্য বায়ুসেনা তৎপর ছিল :-
ক) চিনের উহানে শুভেচ্ছা উড়ান : সেদেশে ১৫ টন ওষুধ পাঠানো এবং সেখান থেকে ১১২ জন ভারতীয় ও বিদেশি নাগরিককে ভারতে নিয়ে আসার জন্য - ২০২০-র ২৬ এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি সি-১৭ সামরিক পরিবহণ বিমান কাজে লাগানো হয়।
খ) ইরানে আটকে পড়া ভারতীয়দের দ্রুত সরানো : ২০২০ এর ১০ মার্চ সি-১৭ বিমান তেহরান থেকে ৫৮ জন ভারতীয়কে দেশে ফিরিয়ে আনে।
ঘ) কিরগিজস্তান থেকে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও বিকাশ সংস্থার কর্মীদের ফিরিয়ে আনা : ২০২০-র ৪ নভেম্বর কিরগিজস্তানের বিশকেক থেকে তাদের (এর মধ্যে ২৫ জন কোভিড-১৯ পজিটিভ) উড়িয়ে আনা হয় বিশাখাপতনমে।
ঙ) কুয়েতে চিকিৎসা সহায়তা : ২০২০-র ১১ এপ্রিল ১.৮ টন কোভিড পরীক্ষার যন্ত্রপাতি নিয়ে ১৮ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে বিমানে কুয়েত পাঠানো হয়।
চ) কঙ্গো ও দক্ষিণ সুদানে সি-১৭ পরিবহণ বিমানের যাত্রা : ২০২০ সালের ১৮ জুলাই ১৮.৬ টন কোভিড-১৯ চিকিৎসার ওষুধপত্র এবং সাজসরঞ্জাম নিয়ে একটি সি-১৭ বিমান হিন্দন বিমানঘাঁটি থেকে কঙ্গো এবং দক্ষিণ সুদান পাড়ি দেয়। একটানা ৭১০০ কিলোমিটার উড়ে কঙ্গো থেকে ১৮ জন ভারতীয় সহ ৬২০ যাত্রী এবং দক্ষিণ সুদান থেকে দুই ব্যক্তির মরদেহ নিয়ে আসে।
ছ) লেবাননের বেইরুটে ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ : একটি সি-১৭ বিমান ২০২০-র ১৪ আগস্ট ওষুধ, খাদ্যশস্য, কম্বল, পিপিই, গ্লাভস ও মাস্ক সহ ৫৭ টন ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে বেইরুট যায়।
জ) মরিশাস মিশন : একটি সি-১৭ বিমান ৩৫ টন সাহায্য নিয়ে ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট মরিশাস রওনা দেয়। বিমানটিতে ছিলেন ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর দশজন কর্মীও।
মানবিক সাহায্য ও বিপর্যয় ত্রাণ (অভ্যন্তরীণ)
ক) বিশাখাপতনম গ্যাস দুর্ঘটনা : বিশাখাপতনমে এক রাসায়নিক কারখানায় গ্যাস লিকের পর মুন্দ্রা থেকে ৮.৩ টন রাসায়নিক সামগ্রী বিমানে বিশাখাপতনম পাঠানো হয়। ১০ মে ত্রাণের মালপত্রও যায়। এছাড়া, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এন ডি আর এফ) এর ৪ জন কর্মী এবং ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল এঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ (NEERI) এর ৫ বিজ্ঞানীকেও উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
খ) ‘আমফান’ ঘূর্ণিঝড় : পুণে ও আরাকোনাম থেকে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দুটি করে দল উদ্ধার কাজের জন্য সি-১৩০ বিমানে দু’দফায় কলকাতা রওনা দেয়। ২০২০-র ২১ মে এই অভিযানে মোট ৯১ জন কর্মী এবং ৮.৬ টন মালপত্র পাঠানো হয়।
গ) ঘূর্ণিঝড় ‘নিসর্গ’ : ২০২০-র ২ জুন ভাটিন্ডা থেকে ১০.৮ টন ত্রাণ সামগ্রী এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১২২ জন কর্মীকে আই এল-৭৬ বিমান সুতরগড় পৌঁছে দেয়। ঐ দিনই আর একটি আই এল-৭৬ বিমান কাজে লাগানো হয় বিজয়ওয়াড়া থেকে ৯.৬ টন মালপত্র ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১০৮ কর্মীকে মুম্বাই পাঠাতে।
ঘ) বন্যা ত্রাণ : ২০২০ সালে বিহার, তেলঙ্গনা, ছত্তীশগড়, মধ্যপ্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর এবং মহারাষ্ট্রে বন্যা কবলিত অঞ্চলে ত্রাণ ও উদ্ধারের জন্য ব্যাপকভাবে হেলিকপ্টার কাজে লাগানো হয়। কপ্টারগুলি বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৩৩৮ জন কর্মী ও ৭৬.৯৫ জন ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেয়।
ঙ) জানস্কার উপত্যকায় আটকে পড়া ট্রেকারদের উদ্ধার : লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অনুরোধে জানস্কার উপত্যকায় বিপন্ন ট্রেকারদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার জন্য বিমান বাহিনী দুটি এ এল এইচ হেলিকপ্টার কাজে লাগায়। ২০২০-র ১৪ থেকে ১৬ জানুয়ারি ২৮ বার উড়ে হেলিকপ্টার দুটি ১০৭ জন ট্রেকারকে উদ্ধার করে লেহ্-তে পৌঁছে দেয়। ট্রেকারদের মধ্যে ছিল ২ জন ফরাসি ও ৭ জন চিনা নাগরিক।
পঙ্গপালের হানা সামলাতে বায়ুসেনার হেলিকপ্টার
কৃষি মন্ত্রক পঙ্গপালের দঙ্গল রুখতে রাসায়নিক বস্তু ছড়ানোর জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করার অনুরোধ জানিয়েছিল। একাজের জন্য খুব তাড়াতাড়ি দুটি হেলিকপ্টারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সেরে ফেলে বিমান বাহিনী রাজস্থান ও গুজরাতে আকাশ থেকে রাসায়নিক বস্তু ছড়িয়ে পঙ্গ ঝাঁক ঝাঁক পঙ্গপালকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
আঞ্চলিক সংযুক্তির উড়ার প্রকল্পের আওতায় সামরিক বিমান ঘাঁটির যৌথ ব্যবহার
অসামরিক বিমান পরিবহণের বর্ধিত চাহিদা মেটানোর জন্য সাহায্য করতে ভারতীয় বিমান বাহিনী তার বিমানক্ষেত্রগুলো ব্যবহার করতে দিতে অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক ও ভারতের বিমান বন্দর প্রাধিকরণ (এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া) এর সঙ্গে বার্তা চালিয়ে যাচ্ছে। গত এক বছরে আঞ্চলিক সংযুক্তির উড়ান প্রকল্পের অঙ্গ হিসেবে আরো ৭টি সামরিক বিমান ঘাঁটি অসামরিক যাত্রী বিমান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের ৮ নভেম্বরে দ্বারভাঙ্গা বিমানক্ষেত্র থেকে প্রথম অসামরিক বিমান চলাচল শুরু করে।
বায়ুচালিত টারবাইন জেনারেটর বসাতে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট দরকার নেই
ভারত সরকারের পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জনে বায়ুচালিত টারবাইন জেনারেটর স্থাপনের প্রক্রিয়া সহজ এবং দ্রুত করার উদ্দেশ্যে, বিমান বাহিনী গুজরাত ও রাজস্থানে কিছু অঞ্চল চিহ্নিত করেছে যেখানে বায়ুচালিত টারবাইন বসানো যাবে কোন নো অবজেকশন সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন ব্যতিরেকেই। কোভিড-১৯ জনিত পরিস্থিতিতে নানা বাধাবিঘ্ন সত্বেও, ২০২০ সালের ১ জুনায়ারি - ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পময়কালে, সারা দেশে ১ ধরনের ১৬৫৪টি জায়গা বাছাই করা হয়েছে।
ভারতীয় বিমান বাহিনীতে বৈদ্যুতিন - শাসন (বৈদ্যুতিন - কার্যালয়) এর রূপায়ণ
বায়ু সেনায় সব আধিকারিকদের জন্য ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বৈদ্যুতিন – শাসন (বৈদ্যুতিন – কার্যালয়) শুরু হয়েছে। ভারত সরকারের ডিজিটাল এবং বৈদ্যুতিন – শাসন নীতির অঙ্গ হিসেবে এই উদ্যোগ রূপায়ণের দৌলতে আগামী বছরে গোটা দেশে বায়ুসেনার ৮০০ ইউনিট কাগজহীন অফিসে রূপান্তরিত হবে। বিমান বাহিনীতে বৈদ্যুতিন – শাসন (বৈদ্যুতিন - কার্যালয়) চালু হওয়াটা হাতে হাতে কাগজপত্তর এবং ফাইল চালাচালির বর্তমান পদ্ধতি থেকে আমূল সরে গিয়ে ডিজিটালে পরিণত হবে। কাগজ ব্যবহার বহু কমানোর পাশাপাশি, এই ব্যবস্থার লক্ষ হচ্ছে আরো স্বচ্ছতা, দক্ষতা, দায়বদ্ধতা বাড়ানো, তথ্যের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা এবং এর ফলে সময় ও মানব সম্পদের কাম্য ব্যবহার সুনিশ্চিত হবে।
বৈদ্যুতিন – রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রকল্প (Project e-Maintenance Management System)
ভারতীয় বিমান বাহিনী বৈদ্যুতিন – রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি রূপায়ণের মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থার অটোমেশনে এক মস্তবড় পদক্ষেপ করেছে। এটা রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর ব্যাপারে বিশ্বের এক অন্যতম বড় প্রকল্প। প্রকল্পটি সরকারি – বেসরকারি অংশীদারি এবং ডিজিটাল ইন্ডিয়ার তত্ত্বকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে ভারতীয় বিমান বাহিনী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সাফল্যের এক সাক্ষীসাবুদ। এই প্রকল্পে খরচের অঙ্ক ৬৩৭ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা। বিমান বাহিনীর ১৭০টি জায়গায় প্রকল্পটি রূপায়ণ করা হবে, সেইসঙ্গে গড়ে উঠবে একটি তথ্য কেন্দ্র এবং একটি বিপর্যয় মোকাবিলা কেন্দ্র। বৈদ্যুতিন – রক্ষাণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রকল্পের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ২০১৯ এর ৩১ ডিসেম্বর উইপ্রো সংস্থার সঙ্গে চুক্তি সই করেছে। প্রকল্পটি কাজ শুরু হওয়ার কথা ২০২০-র ১ জানুয়ারি থেকে।
এই প্রকল্প রূপায়ণের কাজ শেষ হলে ভারতীয় বিমান বাহিনীর উপকার :
- বিমানের যন্ত্রাংশের ৪০ লক্ষের বেশি আইটেম এবং অন্যান্য সাজসরঞ্জামের ৩০ লক্ষ খানেক আইটেমের উপর কমপিউটারে নজর রাখা যাবে। এর দরুন ঠিকঠাক সময়ে তাদের সার্ভিসিং সুনিশ্চিত হবে।
- বাহিনীর সব স্তরে উৎপাদনশীলতা বাড়বে বলে সঠিক পরিকল্পনা করা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজে সুবিধে হবে।
- রাফালের মত সব অত্যাধুনিক সম্পদ বৈদ্যুতিন – রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। নিজস্ব বৈদ্যুতিন – রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি থাকায়, ভারতীয় বিমান বাহিনীকে আর এজন্য বাড়তি পদ্ধতি নিতে হবে না বলে খরচ বাঁচবে।
কোভিড-১৯ মোকাবিলা
কোয়ারেনটিনের সুযোগ : ভারত সরকারের নির্দেশ মাফিক, বায়ুসেনার বিভিন্ন স্টেশনে কোয়ারেনটিনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা ভারতীয় নাগরিক এবং দেশের মধ্যেকার লোকজনের এসব জায়গায় নিভৃতবাসের ব্যবস্থা করা হয়।
- হিন্দনের কোয়ারেনটিন কেন্দ্রে ইরান থেকে বিমান বাহিনীর সি-১৭ বিমানে প্রত্যাগত ৫৮ জন ভারতীয় ঠাঁই নিয়েছিলেন। ১৪ দিনের জন্য তাদের নিভৃতবাসে থাকার কথা থাকলেও, দলটির একজনের কোভিড পজিটিভ ধরা পড়ায় সেই মেয়াদ বেড়ে যায়।
- মালয়েশিয়া থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ানে ফেরত আসা ১১৩ জনকে রাখা হয়েছিল তামবরম নিভৃতবাসে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে আটকে পড়া ১৭৮ জন ভারতীয়ও সেখানে ১৪ দিন কাটান।
- কোভিড-১৯ চিকিৎসা : বিমানবাহিনী তাদের ৫টি হাসপাতালকে শুধুমাত্র কোভিড-১৯ রুগি বা কোভিড-১৯ রুগির সঙ্গে অন্যান্য অসুখে আক্রান্তদেরও চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রেখেছিল। সেখানে বাহিনীর কর্মী ও তাদের উপর নির্ভরশীলরা ছাড়াও সাধারণ মানুষেরও চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল। বাদবাকি হাসপাতাল/স্টেশন মেডিকেয়ার সেন্টারেও বাহিনীর কর্মী ও তাদের পোষ্যজনের কোভিড-১৯ চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা হয়।
ভারতীয় উপকূল রক্ষা বাহিনী
কাজকর্ম
- ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর জাহাজ ও বিমানের সংখ্যা বাড়ায় উপকূলে নজরদারি জোরদার হয়েছে। বাহিনীর জাহাজ এবং বিমানগুলি বছরভর ২৪ ঘন্টা টহল দেয়।
একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলে পাহারা
- ভারতের উপকূল এলাকায় নজর রাখা ছাড়াও, ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর জাহাজ এবং বিমান ও হেলিকপ্টার উপকূল লাগোয়া মিত্র দেশগুলোর উপকূল পাহারা দেওয়ার কাজেও লাগানো হয়েছে। ২০১৯ সালে, বাহিনীর তিনটি জাহাজ ও দুটি বিমান মলদ্বীপের একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলে পাঠানো হয় প্রহরার কাজে।
অসামরিক কর্তৃপক্ষকে সাহায্য
বিশাখাপতনমে রাসায়নিক কারখানায় গ্যাস লিক
- বিশাখাপতনমে গোপালপদনম এল জি পলিমার গ্যাস কারখানায় দুর্ঘটনার দরুন বিষাক্ত স্টাইরিন গ্যাস বেরনোর পর, উপকূল রক্ষী বাহিনীর কাছে অনুরোধ যায় সেই লিক বন্ধ করার জন্য গুজরাতের বাপি শিল্প তালুক থেকে প্যারা টারশারি বিউটিল ক্যাটিকল (Para Tertiary Butil Catechol - PTBC) বিশাখাপতনমে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। সেই ডাকে তৎক্ষণাৎ সাড়া দিয়ে, উপকূল রক্ষা বাহিনীর ডর্নিয়ের বিমান ২০২০ সালের ৭ মে ১ হাজার কেজি রাসায়নিক দমন থেকে পুণে এবং ৯ মে দমন থেকে মুন্দ্রায় ১০৬০ কেজি রায়াসনিক উড়িয়ে নিয়ে যায়।
দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগরে মহা ঘূর্ণিঝড় আমপানের সময় আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা
- ২০২০-র ১৩ মে দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের দরুন আবহাওয়ায় বিপদের প্রথম ইশারা মেলার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী বিপর্যয় সামলে নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করে দেয়। বঙ্গোপসাগরে মৎস্যজীবী এবং বাণিজ্য জাহাজগুলোকে রোজ সতর্ক করতে থাকে।
পড়শি ও বিদেশি রাষ্ট্রের জাহাজকে সহায়তা
কলম্বোর ভারতীয় দূতাবাসের অনুরোধক্রমে, উপকূল রক্ষী বাহিনী রামেশ্বরণের কাছে ধনুষ্কোডি থেকে ২০২০-র ২৬ ফেব্রুয়ারি ১ জন ইংরেজ ও ১ জন মার্কিন সাঁতারুকে উদ্ধার করে। বিপদে পড়া ঐ দু বিদেশি পক প্রণালীতে সাঁতার দিয়ে শ্রীলঙ্কার মান্নার যাচ্ছিলেন।
নিউ ডায়মন্ড জাহাজে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা
২০২০-র ৩ সেপ্টেম্বর জাহাজটিতে আগুন লাগা ও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। পানামার পতাকাধারী ও এক গ্রিকের মালিকাধীন নিউ ডায়মন্ড জাহাজটি ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেডের জন্য কুয়েত থেকে অশোধিত তেল নিয়ে পারাদীপ যাচ্ছিল। দুর্ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর জাহাজ আগুন নেভানো এবং দূষণ সামলানোর সরঞ্জাম নিয়ে সেদিনই অকুস্থানে হাজির হয়। চলে আগুন আয়ত্তে আনার কর্ম তৎপরতা। এক দিনের মধ্যে, বাহিনী চেন্নাই থেকে তাদের আরও ৩টি জাহাজ, বিশাখাপতনম থেকে ১টি দূষণ নিয়ন্ত্রণকারী জাহাজ এবং করাইকল থেকে ২টি জাহাজ নিয়ে যায়। উপকূল রক্ষী বাহিনীর ২টি ডর্নিয়ের বিমান এবং ১টি হেলিকপ্টারও কাজে লেগে পড়ে। শ্রীলঙ্কার উপকূল রক্ষী বাহিনীর জাহাজ ও শ্রীলঙ্কার নৌ বাহিনীর জাহাজ এবং টাগগুলোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে মিলিয়ে ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর জাহাজগুলো পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে।
উপকূল সুরক্ষা
ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে পরামর্শক্রমে উপকূল সুরক্ষার বিষয়ে রাজ্যগুলোতে সমন্বয়ের জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (Standard Operating Procedures) ঠিক করেছে। এর লক্ষ হচ্ছে উপকূল সুরক্ষা বন্দোবস্তের দক্ষতা বাড়ানো। প্রতিটি উপকূল লাগোয়া রাজ্যে এই বন্দোবস্ত খতিয়ে দেখতে দ্বিবার্ষিক মহড়া চলে। এতে অংশ নেয় সংশ্লিষ্ট যাবতীয় পক্ষ। ২০২০ সালে এধরনের ৬টি মহড়ার আয়োজন করা হয়।
উপকূল সুরক্ষা অভিযান
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে, ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী উপকূল সুরক্ষা অভিযান চালায় না তাতে অংশ নেয়। বাহিনী ২০২০ সালে ২৩টি উপকূল সুরক্ষা অভিযান চালিয়েছে।
তল্লাশি ও উদ্ধার
উপকূল রক্ষী বাহিনী সমুদ্র উপকূলে আকস্মিক ঘটনা সামলাতে ভারতের সামর্থ্য ও প্রস্তুতি তুলে ধরার উদ্দেশ্যে ২০২০-র ৫-৬ মার্চ নবম জাতীয় সামুদ্রিক তল্লাশি এবং উদ্ধার মহড়া চালায়। সেইসঙ্গে, তল্লাশি এবং এবং উদ্ধার সংক্রান্ত এক কর্মশালারও আয়োজন করা হয়। প্রতিরক্ষা সচিব গত ৫ মার্চ কর্মশালার উদ্বোধন করেন। এতে যোগ দেন উনিশটি দেশের পর্যবেক্ষকরা। বাণিজ্যিক বিমান পরিবহণ সংস্থা, বেসরকারি হেলিকপ্টার অপারেটর এবং ইনটারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন এই প্রথম কর্মশালায় অংশ নেয়। মহড়া ছিল ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর ১১টি জাহাজ, ৩টি চেতক হেলিকপ্টার ছাড়াও, ভারতীয় নৌ সেনার ১টি জাহাজ, ১টি ধ্রুব হালকা হেলিকপ্টার এবং বায়ু সেনার একটি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার।
চোরাচালান ও মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ
১৪.৫৬৮ কিলোগ্রাম সেনা আটক : ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী এবং টিউটিকোরিনের রাজস্ব গোয়েন্দা নির্দেশালয় ২০২০-র ৩ মার্চ এক যৌথ অভিযান চালিয়ে মন্ডপমের দক্ষিণে একটি অনিবন্ধীকৃত (আনরেজিস্টার্ড) ফাইবার বোট আটক করে। বোটটিতে ছিল দুই ভারতীয় মাঝিমাল্লা। বোটে ওঠা অভিযানকারীদের অবশ্য কোন চোরাইমাল চোখে পড়েনি। আপাতদৃষ্টিতে মাছ ধরতে যাওয়া নৌকোটিতে কোন মাছ ছিল না এবং জাল ছিল গোটান। বোট ও তার দুই মাঝিকে রাজস্ব গোয়েন্দা নির্দেশনালয়ের হেপাজতে দেওয়া হয়। পরদিন অর্থাৎ ২০২০-র মার্চ নৌকোটির তলদেশে খানাতল্লাশি চালিয়ে ধরা পড়ে কেজি তিনেক ওজনের ৫টি সোনার প্যাকেট।
৪০০ কেজি হেরোইন আটক : ২০২০-র ৩ এপ্রিল ভারতীয় উপকূল বাহিনীর কাছ থেকে পাওয়া গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তৎক্ষণাৎ অভিযান চালিয়ে, শ্রীলঙ্কার নৌ সেনা ২টি ইরানি ও ২টি শ্রীলঙ্কার নৌকো পাকড়াও করে। ধরা পড়ে ৪০০ কেজি হেরোইন এবং ১০০ কেজি মেথাফেটামিন। শ্রীলঙ্কার মুদ্রায় এই আটক করা মাদকের দাম আনুমানিক ৬০০ কোটি টাকা। শ্রীলঙ্কা নৌ বাহিনীর ইতিহাসে এটাই সমুদ্রে সমুদ্রে এযাবৎ সবচেয়ে বড় পরিমাণে বাজেয়াপ্ত মাদক।
স্ট্যাটিক সেনসর শৃঙ্খল প্রকল্পের ২য় পর্যায়
২০২০-র ১৫ জানুয়ারি ভারতীয় ইলেকট্রনিকস লিমিটেডের সঙ্গে স্ট্যাটিক সেনসর শৃঙ্খল প্রকল্পের ২য় পর্যায় (Chain of Static Sensors Project Phase-II ) এর জন্য চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। এজন্য খরচ হবে ১৮১৪.৩২ কোটি টাকা। প্রকল্পটি রূপায়ণের কাজ ২০২১ এর নভেম্বর নাগাদ শেষ হবে। তারপর থেকে ১০৪টি রেডার স্টেশন ভারতের উপকূল রেখায় নজর রাখবে। ভারতের এ ধরণের নেটওয়ার্ক হবে বিশ্বের অন্যতম বড়।
যৌথ মহড়া
২০২০-র ১৬ জানুয়ারি চেন্নাইতে চলে ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী এবং জাপান কোস্ট গার্ডের ‘সহযোগ-কাইজিন’ যৌথ মহড়া। এতে যোগ দেয় ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর ৫টি এবং জাপান কোস্ট গার্ডের ১টি জাহাজ।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
উচ্চ স্তরের বৈঠক
জাপান কোস্ট গার্ড
জাপান কোস্ট গার্ডের কমান্ডান্ট অ্যাডমিরাল তাকাহিরো ওকুশিমার নেতৃত্বে সাত সদস্যের জাপান কোস্ট গার্ডের প্রতিনিধি দল ২০২০-র ১৪ জানুয়ারি ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর সঙ্গে ১৯ তম উচ্চ স্তরের বৈঠক করে দিল্লিতে ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে। এরপর চেন্নাই উপকূলে দুই বাহিনীর জাহাজগুলির যৌথ মহড়া চলে।
ইউ এস কোস্ট গার্ডের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কমান্ডারের সফর
মার্কিন উপকূল রক্ষী বাহিনীর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল লিন্ডা এল ফাগান এর নেতৃত্বে ইউ এস কোস্ট গার্ড এর এক প্রতিনিধি দল ২০২০-র ২৮ জানুয়ারি দিল্লিতে ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর সদর কার্যালয়ে আসে। দু’পক্ষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজ নিয়ে সমঝোতা পত্র সই
ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন (IORA) এর সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অনুসন্ধান ও উদ্ধার পরিষেবা বিষয়ে, ভারত ২০২০-র ২৪ সেপ্টেম্বর এক সমঝোতা পত্র সই করেছে। এই সমঝোতা পত্র অনুযায়ী ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী রূপায়ণকারী সংস্থা হিসেবে মনোনীত হয়েছে।
ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর বিমান শাখা
ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর একটি দলের পাশাপাশি তাদের একটি ধ্রুব হেলিকপ্টার মলদ্বীপে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিদেশ এটাই ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর প্রথম এবং একমাত্র সমন্বিত দল। হেলিকপ্টারটি সেদেশে কাজে লেগে পড়ার পর এযাবৎ ১৬৮ বার অভিযান চালিয়ে বিপন্ন রুগিদের চিকিৎসার জন্য সারিয়ে এনে ১৭৮টি জীবন বাঁচিয়েছে। ২০২০ সালে ১২ বার উড়ে গিয়ে ধ্রুব হেলিকপ্টার ১২ জন রুগিকে মরণের হাত থেকে রক্ষা করেছে। এই কাজে সন্তুষ্ট হয়ে ভারত সরকার ২০১৯ সালের ১৯ এপ্রিল হেলিকপ্টারটিকে মলদ্বীপে আরো তিন বছর মোতায়েন করার সম্মতি দিয়েছে।
আরও ১৬টি ধ্রুব হেলিকপ্টারের বরাত
২০১৭-র ২৯ মার্চ বেঙ্গালুরুর হ্যাল সংস্থার কাছ থেকে উন্নত হেলিকপ্টার (এ এল এইচ এম কে-৩) ধ্রুব কেনার চুক্তি হয়েছে। সমুদ্র উপকূলে টহলদারি, রুগিকে সরিয়ে আনা, দুর্ঘটনায় জখমকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা ইত্যাদির সঙ্গে দূষণ সামলানোর জন্য ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী এসব হেলিকর্টার কাজে লাগাবে। কপ্টারগুলিতে নজরদারির জন্য রেডার, ইলেকট্রো অপটিক ইনফ্রা রেড সিস্টেম, ১২.৭ এম এম মাউন্টেড কামান, অতি জোরাল সার্চ লাইট ইত্যাদি সর্বাধুনিক সাজসরঞ্জাম থাকবে। হ্যালে এই কপ্টারগুলি তৈরির কাজ অনেকখানি এগিয়ে গেছে। কোভিড-১৯ অতিমারি এবং তার দরুন লকডাউন সত্ত্বেও নির্মাণের কাজ থমকে যায় নি এবং আসা করা যায় যে প্রথম দফায় দুটি হেলিকপ্টার ২০২১ এর জানুয়ারি নাগাদ উপকূল রক্ষী বাহিনীর কাছে চলে আসবে। বাদবাকি ১৪টি কপ্টার ২০২১-র সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা আছে।
দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট ভারি হেলিকপ্টার
ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী ১৪টি দুই ইঞ্জিন যুক্ত ভারি কপ্টার কেনার ব্যাপারে অনেকখানি এগিয়েছে। এসব হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হবে উপকূলের কাছাকাছি স্টেশনে এবং সেগুলির ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর জাহাজের ডেকেও ওঠানামার ক্ষমতা থাকবে। এই ভারি হেলিকপ্টার উপকূল রেখা থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল দূরত্ব অবধি টহলদারি, রুগি সরিয়ে আনা এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণের কাজকর্ম চালাতে সক্ষম। প্রতিরক্ষা সামগ্রী সংগ্রহ পরিষদ (Defence Acquisitions Council) ২০২০-র ২০ জানুয়ারি এই হেলিকপ্টার কেনায় সায় দিয়েছে এবং ঐ বছর ২৪ জুন চারটি আন্তর্জাতিক সংস্থাকে প্রস্তাব পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। ২০২২ এর মার্চ নাগাদ এব্যাপারে চুক্তি সই হতে পারে। হেলিকপ্টারগুলি ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে উপকূল রক্ষা বাহিনী হাতে পাবে বলে আশা করা যায়।
উপকূল রক্ষী বাহিনীর ১৭টি ডর্নিয়ের বিমান আরো উন্নত করে তুলতে হ্যালের সঙ্গে চুক্তি
আগামী দিনে প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে পাল্লা দিতে ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ইত্যাদির পাশাপাশি ১৭টি ডর্নিয়ের বিমান সর্বাধুনিক বিভিন্ন ব্যবস্থার মাধ্যমে আরো উন্নত করে তোলার জন্য ২০২০-র ৭ ফেব্রুয়ারি হ্যালের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে। প্রথম বিমানটি পাওয়া যাবে ২০২২-র জুলাইয়ে। সব কটি বিমান আরো উন্নত করার কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে ২০২৫-র ডিসেম্বরের মধ্যে।
বিমানক্ষেত্র পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণ
২০২০-র ৮ মে ভারতীয় বায়ু সেনা এবং টাটা পাওয়ার এস ই ডি লিমিটেড বিমানক্ষেত্র পরিকাঠামো আধুনিকীকরণের জন্য এক চুক্তি সই করেছে। দমন ও রত্নগিরিতে উপকূল রক্ষী বাহিনীর বিমান ঘাঁটি পরিকাঠামোর উন্নয়ন করাও এই চুক্তির অন্যতম অংশ। পরিকল্পনা অনুসারে দমনে কাজ শেষ হবে ২০২১-র নভেম্বরে। আর ২০২৩ সালের নভেম্বরে রত্নগিরির কাজ শেষ হওয়ার কথা।
প্রতিরক্ষা গবেষণা ও বিকাশ সংস্থা (ডি আর ডি ও)
২০২০ সালে কয়েকটি বড় সাফল্য
- ডি আর ডি ও তরুণ বিজ্ঞানী ল্যাবরেটরি (DRDO Young Scientist Laboratories - DYSLS) : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২০-র ২ জানুয়ারি ৫টি ডি আর ডি ও তরুণ বিজ্ঞানী ল্যাবরেটরি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন। উচ্চস্তরের প্রযুক্তি সংক্রান্ত গবেষণার জন্য ল্যাবরেটরি গড়ে তোলা হয়েছে বেঙ্গালুরু, মুম্বাই, চেন্নাই, কলকাতা ও হায়দ্রাবাদে। এই পাঁচ ল্যাবরেটরি যথাক্রমে কৃত্রিম মেধা, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি, কগনিটিভ প্রযুক্তি, অ্যাসিমিট্রিক প্রযুক্তি এবং স্মার্ট মেটিরিয়াল নিয়ে কাজ করবে।
নৌ সেনার ডি আর ডি ও-র তৈরি হালকা যুদ্ধ বিমানের সফল অবতরণ বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ বিক্রিমাদিত্যে
নৌ সেনার জন্য ডি আর ডি ও-র তৈরি হালকা যুদ্ধ বিমান ২০২০-র ১১ জানুয়ারি বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ বিক্রমাদিত্যের ডেকে নামতে সফল হয়েছে।
প্রতিরক্ষা প্রদর্শনী ২০২০-তে সংস্থার অংশগ্রহণ
ডি আর ডি ও ২০২০-র ৫-৯ ফেব্রুয়ারি লখনৌয়ে আয়োজিত প্রতিরক্ষা প্রদর্শনী ২০২০-তে দেশে তৈরি ৫০০র বেশি প্রতিরক্ষা সামগ্রী তুলে ধরে। সেইসব সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের বেশ নজর কেড়ে নেয়। সংস্থার প্যাভিলিয়নে বিভিন্ন প্রতিরক্ষা সামগ্রীর মধ্যে হালকা যুদ্ধ বিমান তেজস এম কে – ওয়ান এ, অ্যাডভান্সড টোড আর্টিলারি গান, অর্জুন এম কে – ওয়ান এ ট্যাঙ্ক, মাইন বিধ্বংসী যন্ত্র ছিল অন্যতম।
এয়ার ডিফেন্স ফায়ার কন্ট্রোল রেডার ‘অতুল্য’
ভারতীয় সেনার জন্য ডি আর ডি ও এই রেডার তৈরি কারেছে। সবরকম আবহাওয়ায় দিনরাত যে কোন সময় এবং শত্রুপক্ষের জ্যামিং উপেক্ষা করে অতুল্য কাজ চালাতে সক্ষম। ২০২০-র ফেব্রুয়ারি মাসে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে পাহাড়ি ঠাণ্ডা জায়গায় এই রেডারের প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষা সম্পূর্ণ হয়।
হালকা ওজনের উন্নত টর্পেডো
সাবমেরিন বিধ্বংসী এই টর্পেডো ছোঁড়া হয় জাহাজ, হেলিকপ্টার অথবা বিমান থেকে। জাহাজ বা বিমানে থাকা সোনার অর্থাৎ ধ্বনিতরঙ্গ – প্রেরক যন্ত্রের মাধ্যমে শত্রু সাবমেরিনের সুলুক সন্ধান করে এই টর্পেডো তা ধ্বংস করে দেয়। ২০২০-র মার্চ মাসে ডি আর ডি ও দুবার এই টর্পেডোর ট্রায়াল চালিয়েছে।
৩য় প্রজন্মের হেলিকপ্টার থেকে নিক্ষেপযোগ্য ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র ‘ধ্রুবাস্ত্র’
ডি আর ডি ও ২০২০-র জুলাইতে ওড়িশার চাঁদিপুর কেন্দ্র থেকে দেশে নির্মিত এই ক্ষেপণাস্ত্র দাগার তিনটি পরীক্ষা করে। বিশ্বে সবচেয়ে উন্নত ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী অস্ত্রের মধ্যে এটি অন্যতম।
৭৪তম স্বাধীনতা দিবসে জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ দেওয়ার সময় তার নিরাপত্তার জন্য লালকেল্লায় ডি আর ডি ও-র ড্রোন প্রতিরোধী ব্যবস্থা কাজে লাগানো হয়েছিল। জ্যাম মারফত কমান্ড ও কন্ট্রোল সংযোগ অকেজো করে দিয়ে বা লেসার অস্ত্রে ঘায়েল করে এই ব্যবস্থা ক্ষুদ্র ড্রোনকে মাটিতে পেড়ে ফেলতে পারে।
‘আত্মনির্ভর ভারত’ এর লক্ষ অর্জনে, নকশা বানানো, বিকাশ ও নির্মাণ করতে ডি আর ডি ও শিল্পের জন্য ১০৮টি ব্যবস্থা চিহ্নিত করেছে।
আত্মনির্ভর ভারতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে, ডি আর ডি ও দেশে প্রতিরক্ষা আবহ জোরদার করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সংস্থার এক প্রতিনিধি দল শুধুমাত্র দেশি শিল্পে নকশা ও উন্নয়নের জন্য ১০৮টির মত বাছাই করা ব্যবস্থা সম্বন্ধে তাকে ওয়াকিবহাল করার জন্য ২০২০-র ২৪ আগস্ট প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে দেখা করে। এসব ব্যবস্থার প্রযুক্তির তালিকা মিলবে https://www.pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=1648234 এ। আত্মনির্ভর ভারত গড়ার পাশাপাশি, এই উদ্যোগ বহু প্রযুক্তি উন্নয়নে ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য পথ করে দেবে।
উন্নয়ন তথা উৎপাদনের অংশীদার হিসেবে শিল্প
ডি আর ডি ও জন্য বর্তমানে শিল্পের ভিত্তি হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিরক্ষা সংস্থা, অর্ডন্যান্স কারখানা এবং বৃহৎ শিল্প সহ ১৮০০ খানেক অতি ছোট, ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন নীতির মাধ্যমে উন্নয়ন ও উৎপাদনের অংশীদার রূপে ভারতীয় শিল্পকে জড়িত করার জন্য, ডি আর ডি ও ইতোমধ্যে বেশ কিছু বড়সড় উদ্যোগ নিয়েছে, বিনামূল্যে তার পেটেন্ট এবং নামমাত্র খরচে ভারতীয় শিল্প সংস্থাকে প্রযুক্তি যোগাচ্ছে। এসব উদ্যোগ দ্রুত বৃদ্ধিশীল ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্প আবহ বা পরিবেশকে সহায়তা এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গঠনে অবদান রাখতে সাহায্য করবে অনেকখানি।
হাইপারসোনিক টেকনলজি ডেমনসট্রেটর ভেহিকল এর প্রথম পরীক্ষামূলক উড়ান
২০২০-র সেপ্টেম্বর, ডি আর ডি ও ওড়িশা উপকূলের হুইলার দ্বীপে ডঃ এ পি জে আব্দুল কালাম উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে হাইপারসোনিক টেকনলজি ডেমনসট্রেশন এর প্রথম পরীক্ষামূলক উড়ান চালিয়ে হাইপারসোনিক এয়ার-ব্রিদিং, স্ক্র্যামজেট প্রযুক্তিতে তার কেরামতি দেখিয়েছে। সলিড স্টেট মোটর ব্যবহার করে উৎপেক্ষিত হাইপারসোনিক ক্রুজ ভেহিকলটি ৩০ কিলোমিটার উপরে তুলে নিয়ে গিয়ে এরোডায়নামিক হিট শিল্ড পৃথক করে ফেলতে সক্ষম হয়। ক্রুজ ভেহিকল শব্দের চেয়ে ৬ গুণ গতি অর্থাৎ সেকেন্ডে প্রায় ২ কিলোমিটার বেগে ২০ সেকেন্ডের বেশি তার নির্দিষ্ট পথে উড়ান চালিয়ে যায়।
মালটি ইনফ্লুয়েন্স গ্রাউন্ড মাইন
ডি আর ডি ও-র নেভাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনলজিকল ল্যাবরেটরি স্টেলম জাহাজের উপর টেক্কা দিতে ভারতীয় নৌ বাহিনীর জন্য এই মাইনের নকশা বানিয়েছে। জাহাজ ও সাবমেরিন থেকে এই মাইন বসানো যায়। এই মাইনের কারিগরি ট্রায়াল সফল হয়েছে।
অ্যাকটিভ ইলেকট্রনিক্যালি স্ক্যানড আরে রেডার ‘উত্তম’
এই রেডার বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ বিমানে বসানো যেতে পারে। আকাশ থেকে আকাশ, আকাশ থেকে স্থল এবং আকাশ থেকে সমুদ্রে সঠিক নিশানায় ক্ষেপণাস্ত্রে হানার পথ বাতলাতে সক্ষম এই উত্তম রেডার।
‘অভ্যাস’ এর পরীক্ষামূলক উড়ান সফল
ডি আর ডি ও ২০২০-র সেপ্টেম্বর ওড়িশার বালেশ্বর পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে হাই-স্পিড এক্সপেন্ডেবল এরিয়াল টার্গেট, অভ্যাস এর পরীক্ষামূলক উড়ানে সফল হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্রের কার্যকারিতা খতিয়ে দেখার জন্য এই অভ্যাসকে চাঁদমারি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক নিক্ষেপ সফল
২০২০-র ৩০ সেপ্টেম্বর ওড়িশার বালেশ্বর ইন্টারিম টেস্ট রেঞ্জ থেকে দেশি বুস্টার ও এয়ারফ্রেম সেকশান এবং ভারতে তৈরি ব্রহ্মস ভূতল থেকে ভূতল ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার পরীক্ষায় ডি আর ডি ও উতরে গেছে। দেশে নির্মিত সরঞ্জাম ব্যবহার বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা আর এক বড় পদক্ষেপ। ২০২০-র ১৮ অক্টোবর, আর একটি ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র সাফল্যের সঙ্গে নিক্ষেপ করা হয়। ভারতীয় নৌ সেনার দেশে তৈরি স্টেলথ ডেস্ট্রয়ার চেন্নাই থেকে দাগা এই ক্ষেপণাস্ত্রটি আরব সাগরে একটি লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে আঘাত হানে। দূর পাল্লায় শত্রু জাহাজকে চাঁদমারি করে আক্রমণ চালানোর ক্ষমতাধর ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র চেন্নাই ডেস্ট্রয়ারটিকে দুর্ধর্ষ করে তুলবে। গত বছরেই ১ ডিসেম্বর আর একটি ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র বাতিল এক জাহাজে হামলা চালানোর পরীক্ষায় উতরে যেতে সক্ষম হয়। ভারতীয় নৌ বাহিনী এই পরীক্ষা চালায়। ক্ষেপণাস্ত্রটি চাঁদমারির একেবারে মধ্যবিন্দুতে আঘাত হানে।
লেজার নিয়ন্ত্রিত ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক নিক্ষেপ
দেশে নির্মিত লেজার নিয়ন্ত্রিত ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার পরীক্ষা সফল হয়েছে। ২০২০-র ১ অক্টোবর আহমেদনগরের কে কে রেঞ্জে অর্জুন ট্যাঙ্ক থেকে এই পরীক্ষা চালানো হয়। এর আগে ২০২০-র ২২ সেপ্টেম্বর এই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ট্রায়াল সফল হয়েছিল। অর্জুন ট্যাঙ্কের কামান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার ট্রায়ালের এখন কারিগরি মূল্যায়ন চলছে।
স্মার্ট এর পরীক্ষামূলক নিক্ষেপ সফল
শব্দের চেয়ে দ্রুতগামী ক্ষেপণাস্ত্র বাহিত টর্পেডো (Supersonic Missile Assisted Release of Torpedo - SMART) এর প্রথম পরীক্ষামূলক নিক্ষেপ সাফল্য পেয়েছে। ওড়িশা উপকূলের হুইলার দ্বীপ থেকে ২০২০-র ৫ অক্টোবর এই পরীক্ষা চালানো হয়। স্মার্ট হল সাবমেরিন বিধ্বংসী হালকা ওজনের টর্পেডো। ক্ষেপণাস্ত্র বাহিত স্মার্ট সাধারণ টর্পেডোর তুলনায় ঢের দূরপাল্লার লক্ষ্যে আঘাত হানার ক্ষমতা ধরে।
দেশি তৈরি অ্যান্টি-রেডিয়েশন ক্ষেপণাস্ত্র (রুদ্রম)
নতুন প্রজন্মের অ্যান্টি-রেডিয়েশন ক্ষেপণাস্ত্র (রুদ্রম) ২০২০-র ৯ অক্টোবর পরীক্ষামূলক হানা চালায় ওড়িশা উপকূলের হুইলার দ্বীপের এক নিশানায়। ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোঁড়া হয় সুখয় যুদ্ধ বিমান থেকে। ডি আর ডি ও ভারতীয় বায়ু সেনার জন্য প্রথম অ্যান্টি-রেডিয়েশন ক্ষেপণাস্ত্র এই রুদ্রম তৈরি করছে। সুখয় যুদ্ধ বিমানে এই ক্ষেপণাস্ত্র বসানো হবে। বহু দূর থেকে শত্রু পক্ষের আকাশ প্রতিরক্ষা গুঁড়িয়ে দিতে রুদ্রম ক্ষেপণাস্ত্র হবে ভারতীয় বিমান বাহিনীর এক জোরাল হাতিয়ার।
শিল্পকে ডি আর ডি ও-র সহায়তা
‘আত্মনির্ভর ভারত’ এর লক্ষ অর্জনের জন্য প্রতিরক্ষা গবেষণায় এবং বিকাশে স্মার্ট-আপ, অতি ছোট, ও মাঝারি উদ্যোগ সহ ভারতীয় শিল্পের আরো বেশি অংশগ্রহণে উৎসাহ দিতে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ২০২০-র অক্টোবরে ডি আর ডি ও প্রকিওর ম্যানুয়াল এর এক নতুন সংস্করণ প্রকাশ করেন। দেশি শিল্পকে সহায়তা করার জন্য পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে জামিন রাখার ব্যবস্থাটি রদ করা হয়েছে। তবে ওয়ারিন্টি পিরিয়ডে ওয়ারান্টি বন্ড জমা দেওয়ার প্রথাটি বহাল থাকবে।
নাগ ক্ষেপণাস্ত্রের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তির চূড়ান্ত ট্রায়াল
২০২০-র ২২ অক্টোবরে পোখরান রেঞ্জে তৃতীয় প্রজন্মের ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র নাগ এর চূড়ান্ত ট্রায়াল হয়। ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোঁড়া হয় নাগ ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী যান নামিকা থেকে। ক্ষেপণাস্ত্রটি নির্ভুল নিশানায় আঘাত হানতে সক্ষম হয়।
দূরপাল্লার পিনাকা রকেটের প্রথম পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ
২০২০-র ৪ নভেম্বর ওড়িশা উপকূলের চাঁদিপুর ইনটিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জ থেকে ডি আর ডি ও-র তৈরি দূরপাল্লার পিনাকা রকেট এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ সফল হয়েছে। এর আগে ডি আর ডি ও-র বানানো পিনাকা রকেট ছিল তুলনায় স্বল্প পাল্লার।
বাসে আগুন লাগার খোঁজ পাওয়া ও তা নেভানোর ব্যবস্থা
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গড়করি ২০২০-র ৯ নভেম্বর দিল্লিতে ডি আর ডি ও ভবনে সংস্থাটির উদ্ভাবিত যাত্রিবাহী বাসে আগুন লাগার সন্ধান মেলা ও তা নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যবস্থা সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন। প্রতিরক্ষা গবেষণা ও বিকাশ সংস্থার সেন্টার ফর ফায়ার এক্সপ্লোসিভ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সেফটি এর প্রযুক্তি বের করেন। প্রযুক্তিটি ৩০ সেকেন্ডের কম সময়ের মধ্যে আগুনের খোঁজ পেতে এবং ৬০ সিকেন্ডের মধ্যে আগুন আয়ত্তে আনতে পারে। এর ফলে জীবন ও সম্পত্তি হানির ঝুঁকি কমে যায় অনেকখানি।
QRSAM ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য
Quick Reaction Surface to Air Missile (QRSAM) ব্যবস্থাপনা মাঝারি পাল্লা ও মাঝারি উচ্চতায় বাঁশি চালকহীন বিমানে সরাসরি আঘাত হেনে এক বড় সাফল্য অর্জন করেছে। ওড়িশা উপকূলে চাঁদিপুর ইনটিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জ থেকে ২০২০-র ১৩ নভেম্বর এই ক্ষেপণাস্ত্র দাগা হয়। ক্ষেপণাস্ত্রটিতে ব্যবহৃত সব সাব সিস্টেমই দেশে বানানো। ঐ বছরেই ১৭ নভেম্বর QRSAM আর একটি পরীক্ষায় লক্ষ্যবস্তুকে ঠিকপথে ধাওয়া করে আকাশে ধ্বংস করে ফেলতে সফল হয়।
৫.৫৬ x ৩০ এম এম জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রটেকটিভ বন্দুকের সফল ট্রায়াল
ডি আর ডি ও-র তৈরি ৫.৫৬ x ৩০ এম এম জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রটেকটিভ বন্দুক এর চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়াল ২০২০-র ৭ ডিসেম্বর সফল হয়েছে। এই পরীক্ষায় বন্দুকটি গুণমানের সবকটি মাপকাঠি পূরণ করতে পেরেছে। এর ফলে, এই অস্ত্র সশস্ত্র বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার পথ খুলে গেল। শেষ পর্বে এই ট্রায়াল চলে গরমকালের চড়া তাপমাত্রা এবং শীতে উঁচু পাহাড়ি এলাকায় কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে। জঙ্গি/সন্ত্রাসী হামলা রুখতে এই বন্দুক সশস্ত্র বাহিনীর কাছে এক জোরাল হাতিয়ার হয়ে উঠবে।
দুই ডি আর ডি ও ল্যাবরেটরির মধ্যে কোয়ান্টাম সংযোগ
গোয়া দুনিয়াতেই প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলির জন্য সুরক্ষিত যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই জরুরি এবং এর প্রেক্ষিতে মাঝে মাঝে এনক্রিপশন কি (Encription Keys) বন্টন করা দরকার। কোয়ান্টাম ভিত্তিক সংযোগ এই কি বন্টন সুরক্ষিত রাখার এক জবরদস্ত হাতিয়ার। এই প্রযুক্তি আয়ত্ত করার জন্য প্রতিরক্ষা ও গবেষণা ও বিকাশ সংস্থা একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। ২০২০-র ৯ ডিসেম্বরে প্রকল্পটির কাজে এক বড়সড় সাফল্য মেলে - ডি আর ডি ও উদ্ভাবিত কোয়ান্টাম কি বন্টন প্রযুক্তির মাধ্যমে হায়দরাবাদে সংস্থার দুটি ল্যাবের মধ্যে সুরক্ষিত সংযোগের ট্রায়াল চলে।
হায়দ্রাবাদ ডি আর ডি ও-তে হাইপারসোনিক উইন্ড টানেল উদ্বোধন
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ২০২০-র ১৯ ডিসেম্বর ডঃ আব্দুল কালাম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিষ্ঠানে এই টানেল উদ্বোধন করেন। আমেরিকা ও রাশিয়ার পর অত্যাধুনিক এত বড় টানেল তৈরিতে ভারত তৃতীয় দেশ। দেশি উদ্যোগে নির্মিত এই টানেলটি ভারতীয় শিল্প সংস্থাগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করার সুফল। এই টানেল সর্বাধুনিক বিমান ও মহাকাশযান চালনা এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এক বড় ভূমিকা পালন করবে।
সমঝোতা পত্র
প্রতিরক্ষা গবেষণা ও বিকাশ সংস্থা বিটেক ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি কোর্স খোলার জন্য আমেদাবাদের গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইনস্টিটিউট অপ ইনফ্রাস্ট্রাকচার টেকনলজি রিসার্চ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, গান্ধীনগর এর সঙ্গে এক সমঝোতা পত্র সই করেছে।
কোভিড অতিমারির সময় ডি আর ডি ও-র কর্ম তৎপরতা
ডি আর ডি ও কোভিড অতিমারি মোকাবিলার জন্য যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজে নেমে পড়ে। সংস্থা ১৯টি প্রযুক্তি এবং পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, অতি সংক্রমণ প্রবণ এলাকার জন্য ইউ ভি ব্লাস্টার বা আল্ট্রাভায়োলেট ভিত্তিক স্যানিটাইজার, জার্ম ক্লিন এর মত ১০০টি জিনিস তৈরি করে ফেলে। এইসব জিনিস এবং প্রযুক্তির খোঁজখবর মিলবে ডি আর ডি ও-র ওয়েবসাইট https://www.drdo.gov.in/message-board/drdo-fight-against-Covid-19 এ। এসব প্রযুক্তি ও জিনিসপত্র তৈরির কলাকৌশল বিনামূল্যে ভারতীয় শিল্প সংস্থাকে হস্তান্তর করা হয়।
তিনটি বিশেষ কোভিড-১৯ হাসপাতাল
ডি আর ডি ও দিল্লি, পাটনা এবং মুজাফফরপুরে চিকিৎসা পরিকাঠামো বাড়ানোর জন্য তিনটি বিশেষ কোভিড হাসপাতাল চালু করে। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল কোভিড হাসাপাতল হচ্ছে ডি আর ডি ও-র এক হাজার শয্যার হাসপাতাল। দিল্লি এবং অন্যান্য রাজ্যের কোভিড-১৯ পজিটিভ রুগিদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালটি ২০২০-র ৫ জুলাই থেকে কাজ শুরু করে দেয়। দিল্লি জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে রুগির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায়, কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শ মোতাবেক ডি আর ডি ও সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল কোভিড হাসপাতালে আই সি ইউ শয্যা বাড়িয়ে ৫০০ করে দেয়। প্রতিটি শয্যায় রুগিকে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া, ডি আর ডি ও বিহারের পাটনা এবং মুজাফফরপুরে ১২৫টি আই সি ইউ শয্যা সহ ৫০০ শয্যার একটি করে হাসপাতাল গড়ে তোলে।
ভাইরলজি গবেষণা ল্যাব
ডি আর ডি ও কোভিড পরীক্ষার জন্য গ্বলিয়র, তেজপুর এবং দিল্লির মত বিভিন্ন জায়গায় ভাইরলজি রিসার্চ ল্যাবরেটরিগুলির উন্নতিও ঘটিয়েছে। কোভিড পরীক্ষার ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য, সংস্থাটি তার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী ও পরিকাঠামো রাজ্য সরকারগুলির কাজে লাগতে দিয়েছে।
প্রতিরক্ষা উৎপাদন দপ্তর
প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনে বেসরকারি ক্ষেত্রের ভূমিকা বাড়ানো
গ্রিন চ্যানেল স্টেটাস নীতি (Green Channel Status Policy - ECS)
- বছরে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করা সংস্থা এবং গত ৫ বছরের মধ্যে অন্তত ৩ বছর লাভে চলা বৃহৎ শিল্প সংস্থা গ্রিন চ্যানেল স্টেটাস এর জন্য আবেদন জানানোর যোগ্য তবে তাদের উপযুক্ত গুণমান ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (Quality Managements System) থাকা আবশ্যিক। যোগ্য বিবেচিত হলে, সংস্থাকে ৫ বছরের জন্য গ্রিন চ্যানেল স্টেটাস মঞ্জুর করা হবে। এই প্রকল্প অনুসারে, প্রতিরক্ষা উৎপাদন দপ্তরের অধীন ডাইরেকটরেট জেনারেল অব কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স এর পরীক্ষা ছাড়াই সংস্থাটি সরাসরি প্রাপকের কাছে মালপত্র পাঠিয়ে দিতে পারে।
- এযাবৎ, গ্রিন চ্যানেল স্টেটাস মঞ্জুর করা হয়েছে ১৪টি সংস্থাকে।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিরক্ষা সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থার স্ব-শংসা (Self - Certification) প্রকল্প-২০১৯
- এই প্রকল্প মাফিক ডাইরেকটরেট জেনারেল অব কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স এর পরীক্ষা ছাড়াই সংস্থা প্রাপকের কাছে সরাসরি মালপত্র সরবরাহ করবে। এটা গুণমান বজায় রাখা বা বাড়াতে সংস্থাকে নিজেই দায়িত্ব নিতে উৎসাহ যোগাবে। এই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব পেয়েছে ডাইরেকটরেট জেনারেল অব কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স। এখন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিরক্ষা সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থার মালপত্রের গুণমান ডাইরেকটরেট জেনারেল অব কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স খতিয়ে দেখে। প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনে স্বনির্ভরতার উপর সরকার জোর দেওয়ায় স্ব-শংসাকরণের গুরুত্ব বেড়ে গেছে।
- এই অবধি, ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড, টাটা মোটরস লিমিটেড এবং বেঙ্গালুরুর ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেড – এই তিনটি সংস্থা সেলফ সার্টিফিকেশন স্টেটাসের মঞ্জুরি পেয়েছে।
প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি
বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের শিল্প ও অভ্যন্তরীণ ব্যবসা বিকাশ দপ্তর ২০২০-র ১৭ সেপ্টেম্বর প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি নীতি সংশোধনের মাধ্যমে প্রতিরক্ষায় অটোমেটিক রুটে অর্থাৎ সরকারের কোন অনুমতি ছাড়াই ৭৪ শতাংশ পর্যন্ত সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে সায় দিয়েছে। সরকারি রুটে অর্থাৎ সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে এই লগ্নি ৭৪ শতাংশের বেশি হতে পারে যদি তার সুবাদে আধুনিক প্রযুক্তি মিলতে পারে বা অন্য কোন কারণ থাকে।
শিল্পে লাইসেন্স
শিল্প (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ১৯৫১ এবং অস্ত্র আইন, ১৯৫৯ মোতাবেক শিল্প অভ্যন্তরীণ ব্যবসা বিকাশ দপ্তর এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে শিল্প লাইসেন্স দেয়। এযাবৎ, ইসু করা হয়েছে ৫০০-র বেশি লাইসেন্স।
প্রতিরক্ষায় উদ্ভাবনা
- প্রতিরক্ষায় উৎকর্ষের জন্য উদ্ভাবনা (Innovations for Defence Excellence – iDEX) এর সূচনা ২০১৮ সালে। এর উদ্দেশ্য হল প্রতিরক্ষা এবং এরোস্পেসে উদ্ভাবনা, প্রযুক্তি বিকাশ ও সমস্যা সমাধানে স্টার্টআপ বা নতুন নতুন সংস্থা আনা। iDEX চালু করেছে Defence India Startup Challenges (DISCs) - ১,২,৩ এবং ৪। এতে যোগ দিয়েছে হাজার খানেক সদ্যোজাত সংস্থা, ২৯টি চ্যালেঞ্জ ইসু করা হয়েছে এবং ৫৫টির বেশি সংস্থা বিজয়ীর স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০১৯-র জুন থেকে এপর্যন্ত সবাধুনিক পণ্য তৈরির জন্য iDEX বিজয়ীদের সঙ্গে ৩৮টি চুক্তি সারা হয়েছে।
- ২০২০-র সেপ্টেম্বরে শুরু DISK ৪ এ এক অসাধারণ উদ্যোগ “iDEX 4 Fauji” ও চালু করা হয়। এই উদ্যোগটি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের চিহ্নিত করা উদ্ভাবনকে সহায়তা করে এবং তাদের কাছ থেকে নতুন নতুন ধ্যানধারণা খোঁজে।
প্রতিরক্ষা আত্ম-নির্ভরতা সপ্তাহ
- প্রতিরক্ষা সামগ্রী তৈরিতে স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ অর্জন করতে প্রতিরক্ষা উৎপাদন দপ্তর মালপত্র ও সরঞ্জাম দেশে নির্মাণে উৎসাহ দেওয়ার জন্য ২০২০-র ৭-১৪ আগস্ট প্রতিরক্ষায় আত্ম-নির্ভরতা সপ্তাহ উদযাপন করে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিরক্ষা সংস্থা ও অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের আধুনিকীকরণ/মানোন্নয়ন এবং নতুন পরিকাঠামোর উদ্বোধন করেন। এরমধ্যে, কলকাতার গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স এন্ড এঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডে সহজে বহনযোগ্য আসল্ট ব্রিজ (Portable Assault Bridge) তৈরির জন্য সংস্থার রাজাবাগান ডকইয়ার্ডের ক্ষমতা বৃদ্ধি অন্যতম।
দেশে তৈরি
- ভারতে বানানো সৃজন পোর্টাল চালু : অত্মনির্ভর ভারত ঘোষণা মাফিক, প্রতিরক্ষা উৎপাদন দপ্তর/প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ‘প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতে তৈরির সুযোগ’ হিসেবে srijandefence.gov.in পোর্টালটি দেশে বানিয়েছে। বেসরকারি ক্ষেত্র দেশে তৈরি করতে পারে এমন সব পণ্যের ব্যাপারস্যাপারে এই পোর্টালে তথ্যাদি মিলবে। পোর্টালটিতে রাষ্ট্রয়ত্ত প্রতিরক্ষা সংস্থা/অর্ডন্যান্স ফ্যাকটরি বোর্ড তারা যে সব আইটেম আমদানি করেছে বা করতে চলেছে তার বিবরণ তুলে ধরে যাতে কিনা ভারতীয় শিল্প তা নিজের সামর্থ্যে বা সরঞ্জাম উদ্ভাবনকারী সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এদেশে বানাতে পারে। এই অবধি, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিরক্ষা সংস্থা/অর্ডন্যান্স ফ্যাকটরি বোর্ড হাজার সাতেক আইটেম পোর্টালটিতে তুলে ধরেছে। বেসরকারি শিল্প আটশর মত আইটেম দেশে তৈরির ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে।
- প্রতিরক্ষা উৎপাদন দপ্তর বর্তমানে আমদানি করা ৫ হাজার যন্ত্রাংশ দেশে নির্মাণের লক্ষ ধার্য করেছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে, ১৫০২টি আইটেম দেশেই তৈরি করে নেওয়ার লক্ষ আছে। এর মধ্যে আজ অবধি ৮৪৯টি আইটেম উৎপাদন করতে পারা গেছে।
বিদেশ থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনলে শর্ত থাকবে সেই বিদেশি সংস্থা ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্পকে মদত যোগাবে (Defence offset Policy 2020)
প্রতিরক্ষা সামগ্রী সংগ্রহ পদ্ধতি, ২০২০ (Defence Acquisition Procedure 2020) এর অঙ্গ হিসেবে ২০২০-র ৩০ ডিসেম্বর ডিফেন্স অফসেট গাইডলাইনস ২০২০ জারি হয়। অফসেটের মাধ্যমে দেশের প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদন ক্ষেত্রের সামর্থ্য বৃদ্ধি এবং “মেক ইন ইন্ডিয়া” উদ্যোগকে জোরদার করে তুলতে, গাইডলাইনে লগ্নি ও প্রযুক্তি টানতে প্রয়োজনীয় সংস্থানের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রতিরক্ষা সামগ্রী রপ্তানি
সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানির জন্য ২০২০-র ৯ জানুয়ারিতে জারি করা সংশোধিত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওরে কিছু রদবদল :-
- যন্ত্রাংশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়ার আগে মূল এন্ড ইউজার সার্টিফিকেট দেখানোর আর দরকার নেই।
- ওয়াসেনার বন্দ্যোবস্তের শরিক দেশগুলোয় ইঞ্জিনিয়ারিং জিনিসপত্র রপ্তানির জন্য সরকারের সই করা এন্ড ইউজার সার্টিফিকেট এর দরকার বাতিল করা হয়েছে।
- টেন্ডার/প্রদর্শনী, পরীক্ষা ও মূল্যায়নের সরকারের জন্য সই করা এন্ড ইউজার সার্টিফিকেট জমা দেওয়া ছাড়াই পুরোদস্তুর সিস্টেম/প্ল্যাটফর্ম/সাব-সিস্টেম রপ্তানি করা যাবে। তবে অঙ্গীকার করতে হবে যে আইটেম ফেরত আনা হবে এবং এমন কোন তথ্য জানানো হবে না যে তার দরুন প্রযুক্তি হস্তান্তর হতে পারে।
- অস্ত্র আইন ২০১৬ অনুযায়ী প্রতিরক্ষা উৎপাদন দপ্তরকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ক্ষমতা অর্পণের বিষয়টিও স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওরে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অস্ত্র আইনের আওতায় রপ্তানি লাইসেন্স ইসুর জন্য শিল্প লাইসেন্স থাকার দরকার এবং রপ্তানি লাইসেন্সের জন্য আবেদন পত্রের নির্দিষ্ট ছকও তাতে দেওয়া আছে।
প্রতিরক্ষা সামগ্রী রপ্তানি ও রপ্তানির অনুমোদন
গত ৫ বছরে প্রতিরক্ষা সামগ্রী রপ্তানি :
মোট রপ্তানি
|
২০১৪-১৫
|
২০১৫-১৬
|
২০১৬-১৭
|
২০১৭-১৮
|
২০১৮-১৯
|
২০১৯-২০
কোটি টাকা
|
২০২০-২১
(আজ অবধি)
|
১৯৪১
|
২০৫৯
|
১৫২২
|
৪৬৮২
|
১০৭৪৬
|
৯১১৬
|
৫৭১১
|
অনুমোদনের সংখ্যা
|
৪২
|
২৪১
|
২৫৪
|
২৮৮
|
৬৬৮
|
৮২৯
|
৬৩৩
|
রপ্তানি প্রসারে ডিফেন্স অ্যাটাশে প্রকল্প : বিভিন্ন দেশে ভারতীয় দূতাবাসে নিযুক্ত ডিফেন্স অ্যাটাশের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা সামগ্রী রপ্তানি বাড়াতে সরকার এক নতুন প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৩৪টি দেশে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ২ কোটি টাকা। ২০২০-২১ এর জন্য বরাদ্দের অঙ্ক ২.০১ কোটি টাকা।
বন্ধু বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ওয়েবিনার : এসব দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করা এবং প্রতিরক্ষা সামগ্রী রপ্তানি প্রসারের উদ্দেশ্যে ওয়েবিনারের আয়োজন করা হচ্ছে। এসব ওয়েবিনারে অংশ নেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের হর্তাকর্তা এবং ভারত ও সংশ্লিষ্ট দেশের শিল্প প্রতিনিধিরা। ওয়েবিনারের পাশাপাশি ব্যবসায়িক কথাবার্তায় অংশ নেয় ভারত এবং সংশ্লিষ্ট দেশের শিল্প মহল। ইতোমধ্যে ইজরায়েল, কম্বোডিয়া, কাজাকস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, উজবেকিস্তান, বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফরিকা, নাইজিরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, তুর্কমেনিস্তান, ব্রাজিল এবং মলদ্বীপ এই ১৪টি দেশের সঙ্গে ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইজরায়েলের সঙ্গে ওয়েবিনারে দুদেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা শিল্প সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি সাব ওয়ার্কিং গোষ্ঠী গড়া এবং একটি সমঝোতা পত্র সই হয়। নেপালের সঙ্গে ওয়েবিনার এর আয়োজন হতে চলেছে খুব শীঘ্রই।
প্রতিরক্ষা সামগ্রী রপ্তানি বিকাশ প্রকল্প : প্রতিরক্ষা মন্ত্রক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানি বিকাশের এক প্রকল্প ঘোষণা করেছে। প্রতিরক্ষা সামগ্রী রপ্তানি করতে ইচ্ছুক সংস্থার সামনে দুটি পথ খোলা – ডাইরেক্টরেট কোয়ালিটি এসুরেন্স/ডাইরেক্টর জেনারেল নেভাল আর্মামেন্ট ইনসপেকশন এবং প্রতিরক্ষা উৎপাদন দপ্তর প্রজ্ঞাপিত অন্যান্য সংস্থাকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম। ব্যবস্থার ক্ষেত্রে “ভারতীয় সামরিক ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত” এই মর্মে সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে হবে অথবা গুণমানের ব্যাপারে পরীক্ষিত এবং সংসিত (Tested and Certified) ভারতীয় প্রতিরক্ষা সামগ্রী রপ্তানিকারী/উৎপাদককের দ্বারা এই ঘোষণাপত্র থাকা চাই। আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় সামরিক পণ্যের বিপণনযোগ্যতা বাড়ানোই এর লক্ষ। ২০১৯-র ৬ মার্চ, প্রতিরক্ষা সামগ্রী রপ্তানি বিকাশ প্রকল্পের আওতায় সার্টিফিকেশন, টেস্টিং অ্যান্ড সার্টিফিকেশন এর জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর জারি করা হয়েছে।
প্রকল্পটির অধীনে ভারতীয় সামরিক ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত এই শংসাপত্র পেয়েছে ৪টি সংস্থা। ভারত ফোর্জ লিমিটেড ২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবর লাইট স্ট্রাইক ভেহিকল এর জন্য একটি লাইসেন্স পেয়েছে। ঐ দিনই ৪০ মি মি এল-৭০ গান আপগ্রেডের জন্য এল এন্ড টি ডিফেন্স সংস্থাকে দেওয়া হয় একটি লাইসেন্স। ২০২০-র ৩ ফেব্রুয়ারি জে সি বি লিমিটেড এক্সক্যাডেটর ৭/১২ টন এর জন্য লাইসেন্স পেয়েছে। আর ২০২০-র ২৮ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন রকম যানবাহনের জন্য সাতটি লাইসেন্স হাতে পেয়েছে টাটা মোটরস লিমিটেড।
প্রতিরক্ষা সামগ্রী প্রদর্শনী
- ডিফেক্সপো ২০২০ : একাদশ ডিফেক্সপো এর আসর বসে লখনৌতে। চলে ২০২০ এর ৫-৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পাঁচ দিনের এই প্রদর্শনীর থিম ছিল প্রতিরক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর – “Digital Transformation of Defence”। ডিফেক্সপো এর সূচনা হওয়া ইস্তক, এটাই সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী। প্রদর্শনীটি অভূতপূর্ব সাড়ে ফেলে দেয়। দেশবিদেশের শিল্প মহল এবং বিদেশি প্রতিনিধি দলের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মত। অনুষ্ঠানটির কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক :- মোট ৩৫টি রাষ্ট্রের বিদেশ মন্ত্রীর যোগদান এবং প্রথম ভারত-আফ্রিকা প্রতিরক্ষা সম্মেলন। বিদেশ মন্ত্রকের সহযোগিতায় প্রদর্শনীর ফাঁকে আয়োজিত এই বৈঠকে অংশ নেন আফ্রিকার ১২টি দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।
আরো একদিক থেকে প্রদর্শনীটি নজির গড়েছে – এই প্রথম এক হাজারের বেশি সংস্থা স্টল বা প্যাভিলিয়ন দেয়। এরমধ্যে ছিল ৮৫৬ দেশি এবং ১৭২টি বিদেশি কোম্পানি।
এই প্রথম সমঝোতা পত্র সইয়ের জন্য এক বিশেষ ‘বন্ধন’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শিল্প মহল এতে সোৎসাহে সাড়া দেয় এবং ২০০টি অংশীদারি এবং ১৮টি ToT-তে সম্মত হয়।(এর মধ্যে আন্তঃ সরকার চুক্তি কাঠামোর আওতায় বৃহৎ রুশ সামরিক শিল্প সংস্থা এবং ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থার মধ্যে সম্পাদিত ১৪টি সমঝোতা পত্রকে হিসেবে ধরা হয়নি। এই সমঝোতা পত্রগুলো সইয়ের কাজ সারা হয় ভারত-রাশিয়া সামরিক সম্মেলনের ৫ম দফা বৈঠকে)।
প্রদর্শনী চলাকালে ডি আর ডি ও ১৮টি লাইসেন্স তুলে দেয় বেসরকারি শিল্পের হাতে।
গত বছরের তুলনায় এবার প্রদর্শনীতে অতি ছোট, ছোট ও মাঝারি শিল্প সংস্থার যোগদান বেড়ে হয় দুগুণ। লখনৌতে ২০২০-র প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিল ২৯১টি অতি ছোট, ছোট এবং মাঝারি উদ্যোগ।
এরো ইন্ডিয়া ২০২১ (Aero India 2021)
ত্রয়োদশ এরো ইন্ডিয়া ২০২১ এর ৩-৫ ফেব্রুয়ারি বেঙ্গালুরুর ইয়েলাহাংকা এয়ার ফোর্স স্টেশনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এটি প্রতিরক্ষা, এরোস্পেস, অসামরিক বিমান পরিবহণ, বিমানবন্দর পরিকাঠামো এবং প্রতিরক্ষা ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত এক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী। এ ব্যাপারে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী দিল্লিতে বিদেশি দূত/দূতাবাস প্রধানদের সঙ্গে ২০২০-র ৭ অক্টোবর এক ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। এই সম্মেলনে অংশ নেয় ৭৯টি বিদেশি রাষ্ট্র এবং ছিলেন তাদের ২০০-র বেশি প্রতিনিধি।
সীমান্ত সড়ক সংস্থা
সংস্থাটি ২০২০ সালে সামরিক দিন থেকে গুরুত্বপূর্ণ নিচে উল্লিখিত সড়কগুলো তৈরির কাজ শেষ করেছে :-
ক্রমিক সংখ্যা
|
সড়ক
|
কিলোমিটার
|
রাজ্য
|
১
|
সুমনা – রিমখিম
|
১৪
|
উত্তরাখণ্ড
|
২
|
গাসতোলি – রাত্তকোনা
|
১৭.৯৫
|
উত্তরাখণ্ড
|
৩
|
মালারি – গিরথি ডোবলা
|
১৯
|
উত্তরাখণ্ড
|
৪
|
পোরিয়া – পূহ্
|
৫৬
|
হিমাচল প্রদেশ
|
৫
|
টাটো – মানিগঙ – টাডাগাডে
|
৮৫.৯৮
|
অরুণাচল প্রদেশ
|
৬
|
মাহে – চুলুম
|
৭৭.৬৩
|
লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল
|
সামরিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অরুণাচল প্রদেশের ৫২ কিলোমিটার দীর্ঘ লুঙরো জি জি – ইয়াংসি সড়ক তৈরির কাজ শেষ। দুর্গম, পাহাড়ি এলাকায় ঘন ঘন খাড়াই ও বাঁক নেওয়া বহু উঁচুতে বানানো রাস্তাটি ২০২০-র ২৩ অক্টোবর যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
সেনা টানেল : তাওয়াং এর পথে সেনা সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ এগিয়ে চলেছে পুরোদমে। ২০২২-র নভেম্বর নাগাদ টানেলটি প্রস্তুত হয়ে যাবে। সুড়ঙ্গটি খোলা হলে সড়কপথে তাওয়াং যাওয়ার দূরত্ব ৯.২৪ কিলোমিটার কমবে।
ব্রহ্মপুত্র টানেল : ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তর এবং দক্ষিণ পাড়ের মধ্যে সংযুক্তির জন্য জলের তলায় ১২.৩০ কিলোমিটার লম্বা এই সুড়ঙ্গটির পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিশদ প্রকল্প রিপোর্ট বানানোর চুক্তি হয় ২০২০-র ৩ জুলাই। এই রিপোর্ট ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।
যোগাযোগ পুনঃ প্রতিষ্ঠা
ক) সীমান্ত সড়ক সংস্থা ২০২০-র ২৭ জুন উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড় জেলায় মুনসিইয়ারি-মিমন রোডে যানবাহন চলাচলের জন্য এক বিকল্প সেতু বানিয়ে যোগাযোগ পুনঃ প্রতিষ্ঠা করেছে।
খ) সীমান্ত সড়ক সংস্থা ২০২০ সালের ২৯ জুন অরুণাচল প্রদেশের শি-ইয়োমি জেলায় আলো-মেনচুকা রোডে সিকম সিবু নালার উপর একটি নতুন সেতুর মাধ্যমে যাতায়াত ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনেছে। আগেকার সেতুটি প্রবল ভূমিধসের দরুন ভেঙ্গেচুরে জলের তোড়ে ভেসে যাওয়ায় নতুন গঠিত জেলাটির সঙ্গে রাজ্যের বাদবাকি অংশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।
এঞ্জিনিয়ারিং প্রকিওরমেন্ট কনস্ট্রাকশন (ই পি সি) মোডে বাইরের সংস্থা থেকে কাজ করিয়ে
নেওয়া
- চারধান যাত্রা প্রকল্পে ১২৩৩.২৮ কোটি টাকা খরচে জোশীমঠ – মানা, ঋষিকেশ – ধারাসু এবং ধারাসু – গঙ্গোত্রী সড়ক তৈরির কাজ এগিয়ে চলেছে।
- আখনূর – পুঞ্চ রোডকে জাতীয় সড়ক ডবল লেনে উন্নীত করার জন্য ২০২০-র ৪ ফেব্রুয়ারি ৬৩.১৫ কোটি টাকার বরাত দেওয়া হয়েছে এবং কাজে হাত পড়েছে।
- নেচিফু টানেল – অরুণাচল প্রদেশের পশ্চিম কামেং জেলায় ৪৫০ কিলোমিটার লম্বা এই সুড়ঙ্গপথটি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ভি ডি ও কনফারেন্স মারফত ২০২০-র ১২ অক্টোবর টানেলটির শিলান্যাস করেন।
তুষার সরিয়ে গিরিপথ খুলে দেওয়া
দেশজুড়ে লকডাউন চলাকালে, সীমান্ত সড়ক সংস্থা জোজিলা, রোটাং সহ গুরুত্বপূর্ণ ১১টি গিরিপথে বরফ সরানোর কাজ চালিয়ে গেছে। রেকর্ড তুষারপাত সত্ত্বেও অদম্য প্রচেষ্টা, আগাম পরিকল্পনা, অত্যাধুনিক সরঞ্জামের মাধ্যমে এসব গিরিপথ অন্যান্য বছরের তুলনায় আগেভাগেই খোলা সম্ভব হয়েছে।
উদ্ধার অভিযান
শ্রীনগর – কারগিল – লেহ্ রোডে তুষার ধস নামায় জোজিলা পাসে ২০২০-র ২৮ নভেম্বর ৬ যাত্রীসহ একটি এস ইউ ভি আটকা পড়ে। ঐ দিনই গাড়িটি উদ্ধার করে সব যাত্রীকে বাঁচানো সম্ভব হয়। বরফ সরিয়ে রাস্তাও যান চলাচলের জন্য খেলে দেওয়া যায়।
রাস্তা, সেতু, সুড়ঙ্গপথের উদ্বোধন
- কোভিড-১৯ জনিত লকডাউনের কারণে মানসরোবর যাত্রা পথের ঘাটিবাগরহ্ – লিপুলেখ অংশটির কাজে ব্যাঘাত ঘটে। বর্ষার আগেই কিছু কাজ সেরে ফেলার তাগিদে উত্তরাখণ্ড রাজ্য সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়ে এবং সহায়সম্পদ যোগাড় করে জোর উদ্যমে লেগে পড়া হয়। এর ফলে ২০২০-র ১৭ এপ্রিল প্রাথমিক যোগাযোগের পথ খুলে যায়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ২০২০-র ৮ মে কৈলাস মানসরোবর যাত্রার সংযোগকারী রাস্তাটি (রাস্তাটি কৈলাস মানসরোবর রুটকে লিপুলেখ পাসের সঙ্গে যুক্ত করেছে) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন।
- অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু ২০২০-র ২৩ মে পশ্চিম কামেং জেলায় সুখা নালায় উপর ৪৫ মিটার দীর্ঘ সুখা সেতু এবং তাওয়াং জেলায় তাওয়াং ছু নদীর উপর ৫০ মিটার লম্বা তাওয়াং ছু সেতু জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন।
- চাম্বা টানেল তৈরিতে অগ্রগতি – কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী ২০২০ সালের ২৬ মে ঋষিকেশ – ধারাসু রোডে কর্মব্যস্ত চাম্বা শহরের নিচে চাম্বা টানেল নির্মাণের অগ্রগতি ভিডিও মারফত দেখেন।
- পুণেজা ও দেবীকা সেতু – কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং ২০২০-র ২৪ জুন ভিডিও-র মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের উধমপুর জেলায় দেবীকা নদীর উপর ১০ মিটার দীর্ঘ দেবীকা সেতু এবং ডোডা জেলায় ৫০ মিটার লম্বা পুণেজা সেতু উদ্বোধন করেন। সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুদুটি সেনা কনভয় এবং যান চলাচল মসৃণ হতে সাহায্য করবে।
- রোটাং অটল টানেল – প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২০ সালের ৩ অক্টোবর ৯.২ কিলোমিটার লম্বা অটল টানেলের উদ্বোধন করেন। দশ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতায় এটাই বিশ্বের দীর্ঘতম সুড়ঙ্গপথ।
- ৪৪টি সেতু উদ্বোধন – প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ২০২০-র ১২ অক্টোবর ভিডিও মারফত লাদাখ এবং জম্মু ও কাশ্মীর এই দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং পঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, অরুণাচল প্রদেশে ও সিকিম রাজ্যের ৪৪টি সেতুর উদ্বোধন করেন। এই সেতুগুলির মোট দৈর্ঘ্য ৩৫০৬ মিটার।
গ্যাংটক – নাথুলা সড়কের কিছু অংশ বিকল্প পথ – প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ২০২০-র ২৫ অক্টোবর গ্যাংটক – নাথুলা সড়কের প্রথম ১৯.৩৫ কিলোমিটারে এক বিকল্প পথ জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেছেন। গ্যাংটক – নাথুলা সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৫৪ কিলোমিটার।
প্রাক্তন – সেনা কল্যাণ দপ্তর
- সশস্ত্র বাহিনী পতাকা দিবস তহবিল (Armed Forces Flag Day Fund)-এ কর্পোরেট সামাজিক দায়িত্ব (Corporate Social Responsibility) ওয়েবিনার, ২০২০ : কোভিড-১৯ অতিমারি কালে, ডিজিটাল মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে সশস্ত্র বাহিনী পতাকা দিবস তহবিলে কর্পোরেট সামাজিক দায়িত্ব বিষয়ে কর্পোরেট সংস্তাগুলির মধ্যে সচেতনতা জাগানোর জন্য ২০২০-র ৪ ডিসেম্বর এক ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এবং ফরচুন ৫০০ কোম্পানির হর্তাকর্তারা এতে অংশ নেন। ওয়েবিনারে প্রাক্তন সেনারা যে সব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন তা তুলে ধরে তাদের এবং তাদের পোষ্যদের পুনর্বাসন ও কল্যাণে কর্পোরেট দুনিয়াকে এগিয়ে আসার ডাক দেওয়া হয়।
কল্যাণ – কেন্দ্রীয় সৈনিক বোর্ড
- ২০২০-র ৬ মে গেজেটে এক বিজ্ঞপ্তি মারফত আর্মি ব্যাটল ক্যাজুয়ালটিজ ওয়েলফেয়ার ফাণ্ড নামটি বদলে হয় আর্মড ফোর্সেস ব্যাটল ক্যাজুয়ালটিজ ওয়েলফেয়ার ফাণ্ড। এর ফলে বায়ু এবং নৌ সেনাও এই প্রকল্পের আওতায় চলে আসে। ফ্যাটাল ব্যাটল ক্যাজুয়ালটির ক্ষেত্রে এক্স গ্রাসিয়া বাবদ দেয় টাকার অঙ্ক ২ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ৮ লক্ষ করা হয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রে এক্স গ্রাসিয়া ১ লক্ষ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪ লক্ষ টাকা।
- ২০২০-র ১৫ অক্টোবর কেন্দ্রীয় সৈনিক বোর্ড এবং শ্রী সিমেন্ট লিমিটেড এর মধ্যে স্বাক্ষরিত এক সমঝোতা পত্র মোতাবেক শ্রী সিমেন্ট সশস্ত্র বাহিনীর শহিদদের নিকট জনকে ৪ হাজার বর্গ ফুট পর্যন্ত জমিতে একটি বাড়ি তৈরির জন্য সংস্থার কারখানায় উৎপাদিত প্রয়োজনীয় সিমেন্ট যোগাবে। গত ২০ বছর অর্থাৎ ১৯৯৯-র ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত শহিদের নিকট জন এই সুবিধে পাবেন।
পুনর্বাসন
- ডাইরেকটরেট জেনারেল রিসেটলমেন্ট (DER) এবং ফেজারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইনডাসট্রিজ (FICCI) ২০২০-র ২৭ জানুয়ারি এক সমঝোতা পত্র সইয়ের মাধ্যমে প্রাক্তন সেনা কর্মীদের কাজের সুযোগ বাড়ানোর জন্য কর্পোরেট ক্ষেত্রে তাদের চাকরি বৃদ্ধির ব্যবস্থা করেছে।
- ২০২০-র ৬ ফেব্রুয়ারি ডি জি আর প্যানেলভুক্ত রাজ্য প্রাক্তন সেনা কর্মী নিগমগুলির মাধ্যমে সরকারি প্রতিষ্ঠানে কারিগরি কাজে প্রাক্তন সেনা কর্মী যোগানর প্রকল্পটির জন্য নীতিনির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
- প্রারম্ভিক কর্মকাল সম্পূর্ণ করার পর যথাকালের আগে অবসর নেওয়া শর্ট সার্ভিস কমিশন্ড অফিসারদের প্রাক্তন সেনা কর্মীর আখ্যা মঞ্জুর করে ২০২০-র ১৬ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞপ্তি বেরিয়েছে।
স্বাস্থ্য পরিচর্যা – এক্স – সার্ভিসমেন কনট্রিবিউটারি হেলথ স্কিম (ECHS)
- ২০২০-র ১৩ জানুয়ারি থেকে দিল্লি/জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের ৪টি ই সি এইচ এস পলিক্লিনিকে পরীক্ষামূলক ভিত্তিতে আয়ুষ চিকিৎসা চালু হয়েছে।
- ২০২০-র ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে রেফার করার ব্যবস্থায় সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট হেলথ স্কিম (CEHS) এর সংস্থানগুলি ই সি এইচ এস গ্রহণ করেছে।
- ই সি এইচ এস তাদের প্যানেলভুক্ত বেসরকারি হাসপাতাল/ডায়াগনস্টিক কেন্দ্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বা পরীক্ষার জন্য রেফার করলে তা ৩০ দিন বৈধ থাকবে।
- পঁচাত্তর বছর বা তার বেশি বয়সিরা প্যানেলভুক্ত বেসকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে সরাসরি চিকিৎসা করাতে পারবেন।
- পুরো সময়ের জন্য কর্মী না মেলায় ঘাটতি মেটানোর জন্য ই সি এইচ এস পলিক্লিনিকে আংশিক সময়ের ভিত্তিতে ডাক্তার এবং প্যারা মেডিক্যাল স্টাফ নিয়োগের অনুমতি দিয়ে বিধি পালটানো হয়েছে।
- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের ২০২০-র ১ জানুয়ারির বিধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে, ই সি এইচ এস উপকৃতদের ছেলেদের ক্ষেত্রেও ২৫ বছর বয়স পেরনোর পর প্রতিবন্ধকতার দরুণ কিছু শর্তসাপেক্ষে তারা নির্ভরশীল হিসেবে ই সি এইচ এস-এর স্বাস্থ্য পরিচর্যার সুযোগ পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে।
পেনসন নীতি
- ২০২০-র ৭ জুলাই জারি করা এক আদেশ বলে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দশ বছরের কম কোয়ালিফাইং সার্ভিসের ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীতে কাজের সূত্রে না হলেও শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতার দরুন চাকরি ছাড়তে হলে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মীরা পেনশন পাবেন।
- ২০২০ সালের ১৬ জুলাই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পেনশন নীতি সংক্রান্ত এক চিঠি মাফিক ২০০৬ এর আগে অবসর নেওয়া হাবিলদার যারা নায়েব সুবেদার সাম্মানিক পদ পেয়েছিলেন তারা ১.১.২০০৬ থেকে বর্ষিত হারে পেনসন পাবেন। ঐ তারিখ থেকে তাদের পেনসন সংশোধন করে ন্যূনতম ৮৩৩০ টাকা করা হয়েছে। এর দরুন সরকারের ব্যয় হবে ১৮১৬.৯২ কোটি টাকা। ২০০৬ সালের আগে অবসরপ্রাপ্ত প্রায় ৭৫,২৫০ জন অনারারি নায়েব সুবেদার সরকারের এই সিদ্ধান্তে উপকৃত হবেন। ২০০৬ সালের আগে অবসর নেওয়া নায়েব সুবেদারদের বহুদিনের এ দাবি মেটার ফলে এ ব্যাপারে আদালতে মামলা কমে আসবে বলে আশা করা যায়।
- বর্ধিত হারে সাধারণ ফ্যামিলি পেনশনের জন্য অন্তত সাত বছরের কোয়ালিফাইং সার্ভিসের শর্ত তুলে দেওয়া হয়েছে। একটানা চাকরি ৭ বছরের কম এমন ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মী মারা গেলে/অক্ষম হয়ে পড়লে বর্ষিত হারে ফ্যামিলি পেনসন পাওয়া যাবে। এছাড়া, ২০১৯ এর ১ অক্টোবরের আগে ৭ বছরের কম একটানা চাকরি করে যাওয়া কেউ কর্মজীবনে দশ বছরের মধ্যে মারা পড়লে তার পরিবারও বর্ষিত হারে পেনসন পাবে। এই হার কার্যকর হবে ২০১৯ এর ১ অক্টোবর থেকে।
জাতীয় সমর শিক্ষার্থী বাহিনি (National Cadet Corps - NCC)
শিবির প্রশিক্ষণ
- বছরে ১৫০০ শিবির বসে। শিবির কিছু শিক্ষার্থী থাকে শ পাঁচেক। প্রায় ৭.৫ লক্ষ ক্যাডেট অংশ নেয়। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে জমায়েতে কড়াকড়ি দরুন ২০২০ সালে তা করা যায় নি।
- এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত – ৩৫টি শিবির পরিচালনা করা হয়েছিল। এতে যোগ দেয় ২০,৪০০ সমর শিক্ষার্থী।
- বায়ু সৈনিক শিবির – বায়ু সেনার কেন্দ্রীয় শিবিরে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ৫৯০ থেকে বাড়িয়ে ৬২৯ করা হয়েছে। আগামী ৪ বছরে আরও ৬৮ জন ক্যাডেটকে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
- নৌ সৈনিক শিবির – নৌ সেনার কেন্দ্রীয় শিবিরে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫৯০ থেকে বাড়িয়ে ৬১২ করা হয়েছে। আগামী ৪ বছরে এই সংখ্যা আরও ৯৪ বাড়ানোর চিন্তাভাবনা আছে।
- স্থল সৈনিক শিবির – স্থল সেনার কেন্দ্রীয় শিবিরেও যোগদানকারীর সংখ্যা বেড়েছে। আগে ছিল ১৩৬০ জন। এখন তা ১৫৬৪। অর্থাৎ ১৫১ জন শিক্ষার্থী বেড়েছে। পরিকল্পনা আছে আগামী ৪ বছরে আরো ১৩৬ জন বাড়ানোর।
- নেতৃত্ব শিবির – ফি বছর ৬টি শিবিরে যোগ দেয় ১৮০০ সমর শিক্ষার্থী।
- পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ শিবির – ১০৮০ জন ক্যাডেটের জন্য প্রতি ৪টি শিবির বসে। এখন পরিকল্পনা করা হচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ শতাংশ বাড়ানোর জন্য। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির দরুন এ বছর অবশ্য শিবিরগুলি বসে নি।
- সাধারণতন্ত্র দিবস শিবির – জাতীয় সমর শিক্ষার্থী বাহিনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই শিবিরে এবছর থেকে আরো ৮৫ জন ক্যাডেট বাড়িয়ে করা হবে ২১৫৫। আগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২০৭০। কিন্তু কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে জমায়েতে কড়াকড়ির দরুন প্রতিটি নির্দেশনালয় থেকে মাত্র ২৬ জনকে নেওয়া হয়। চারটি নির্দেশনালয় থেকে অবশ্য ৩৪ জন ক্যাডেট এসেছিল। এবছর সাধারণতন্ত্র দিবস শিবিরে অংশগ্রহণকারী মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৪৯৫। পরিকল্পনা আছে ২০২৩ সাল নাগাদ শিবিরে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়িয়ে ২৫০০ করা হবে।
- ইয়টিং বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবির – ১৬০ জন নৌ সমর শিক্ষার্থী ওয়াই এ আই ১/২/৩ স্তরের পরীক্ষায় যোগ্যতা অর্জন করেছিল।
- প্রশিক্ষণ অ্যাপের উদ্বোধন – প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ২০২০-র ২৭ আগস্ট অনলাইন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এন সি সি ট্রেনিং অ্যাপ ভার্সান ১ এর সূচনা করেন। অ্যাপটিতে আছে জাতীয় সমর শিক্ষার্থী বাহিনীর সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত, পাঠক্রম, ইন্টারঅ্যাকটিভ ভিডিও, সমর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বারবার আসা প্রশ্নাদি এবং খোঁজখবর ইত্যাদি। সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েট এন সি সি অফিসার (ANO) এর তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীদের অনলাইন প্রশিক্ষণও এগিয়ে চলেছে। এখনকার প্রশিক্ষণ অ্যাপটির দ্বিতীয় সংরক্ষণ এর পরিকল্পনা করা হচ্ছে শীঘ্রই।
কোভিড-১৯ এর সময় জাতীয় সমর শিক্ষার্থী বাহিনীর সদস্যদের যোগদান অভিযান
‘অভিযান যোগদান’ এর মাধ্যমে জাতীয় সমর শিক্ষার্থী বাহিনীর স্বেচ্ছাসেবকরা কোভিড-১৯ সম্বন্ধে লোকজনকে ওয়াকিবহাল করার কাজে স্থানীয় প্রশাসনকে যথেষ্ট সহায়তা করেছিল। এযাবৎ, প্রায় ১,৩৯,১৪৫ জন সমর শিক্ষার্থী এবং ২১,০৬৭ অ্যাসোসিয়েট এন সি সি অফিসার (ANO) একাজে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। দু’ লক্ষের বেশি এন সি সি ক্যাডেট ইনটিগ্রেটেড গভর্নমেন্ট অনলাইন ট্রেনিং (iEOT) সম্পূর্ণ করেছে।
- এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত – সবকটি রাজ্য নির্দেশালয়ের এন সি সি সদস্যরা প্রতি মাসে অনলাইন এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত সাপ্তাহিক শিবিরে অংশ নেয়। এখন অবধি এহেন চারটি শিবির বসেছে। শিবিরে অনলাইন ওয়েবিনার পরিচালনা করা হয়। এই ওয়েবিনারে রোজ তিন ঘন্টা সংস্কৃতি চর্চা ও বিনিময়ের ব্যবস্থা থাকে। এসব শিবিরে আত্মনির্ভর ভারত, ফিট ইন্ডিয়া অভিযান, নতুন শিক্ষা নীতি এবং স্বচ্ছতা থিম নিয়েও আলোচনা চলে। ৬৫টি শিবিরে অংশ নিয়েছিল জাতীয় সমর শিক্ষার্থী বাহিনীর ৫৭০০ সদস্য।
চারাগাছ পোঁতা – ২০২০-র জুন-জুলাইয়ে এন সি সি গাছ লাগানোর এক অভিযানে নামে। বাহিনীর সদস্যরা সাড়ে তিন লক্ষের বেশি গাছের চারা বসান।
আন্তর্জাতিক যোগ দিবস ২০২০ – মোট ১০.৫ লক্ষ এন সি সি সদস্য, কর্মী ও আধিকারিক এবং তাদের পরিবার আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে “বাড়ি থেকে যোগ” এ অংশগ্রহণ করেন।
আত্মনির্ভর ভারত অভিযান – স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২০২০-র ১-১৫ আগস্ট এন সি সি দেশ জুড়ে আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের আয়োজন করে। এতে যোগ দিয়েছিলেন ৩ লক্ষ ৫৯ হাজারের মত ক্যাডেট।
বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা (বন্যা ত্রাণ) – এন সি সি সদস্যরা বিহার, কেরালা এবং উত্তরপ্রদেশে বানভাসি জেলাগুলিতে ত্রাণকাজে স্থানীয় প্রশাসনকে স্বেচ্ছায় সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিল।
ফিট ইন্ডিয়া অভিযান – জাতীয় সমর শিক্ষার্থী বাহিনী ২০২০-র ১৫ আগস্ট থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর এই অভিযানের আয়োজন করে। সচেতনতা গড়া সহ বিভিন্ন রকম সক্ষমতা ভিত্তিক কাজকর্মে অংশ নেন বাহিনীর ১৪ লক্ষ ৭৫ হাজারের বেশি সদস্য। পাড়াপড়শি, বাড়ির লোকজন ও বন্ধুবান্ধব সহ ৩৫ লক্ষখানেক নাগরিকের উপর এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। মন্ত্রকের নির্দেশ মত, ২০২০-র ২ অক্টোবর (গান্ধী জয়ন্তী) পর্যন্ত প্রতিদিন এন সি সি সদস্য এবং তাদের পরিবারের লোকজন ও বন্ধুরা স্বল্প পাল্লার দৌড়ে অংশ নিতেন। এই সময়কালে তারা সবাই মিলে ৫৯ লক্ষ কিলোমিটারের বেশি পথ দৌড়িয়েছেন।
নতুন শিক্ষা নীতি নিয়ে সচেতনতা অভিযান – প্রতিটি রাজ্য নির্দেশনালয় এই অভিযান চালিয়েছে।সারা দেশে ৯৪৫টি ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন ৫০৪১১ জন এন সি সি সদস্য। তারা সোশাল মিডিয়ায় ৩৩৫৮৪টি পোস্ট করেন এবং তার প্রভাব পড়ে আনুমানিক ২ লক্ষ মানুষের মনে।
সংবিধান দিবস যুবা ক্লাব অভিযান (Constitution Day Youth Club Campaign) – প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক, সব যুব সংগঠনকে এক সাধারণ মঞ্চে জড় করতে, সাধারণ থিমগুলির বিষয়ে সমন্বয় বাড়াতে, প্রতিটি যুবা সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে সংবিধান দিবস যুবা ক্লাব কর্মসূচি পরিচালিত হয় ২০২০-র ১৭ নভেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ১৭ নভেম্বর ডি ডি ও সম্মেলন মারফত এই অভিযান উদ্বোধন করেন। ২২ নবেম্বর (এন সি সি দিবস) রক্তদান এর কর্মসূচিও ছিল।
কারগিল বিজয় দিবস ওয়েবিনার – নির্দেশনালয়গুলি মোট ২৮০টি ওয়েবিনারের আয়োজন করে। এগুলোতে যোগ দিয়েছিল ৩ হাজার এন সি সি সদস্য।
স্বচ্ছতা পক্ষ ১-১৫ ডিসেম্বর ২০২০ – অন্যান্য সব যুবা সংগঠনের সঙ্গে মিলেমিশে এন সি সি স্বচ্ছতা পক্ষে অংশগ্রহণ করেছিল।
স্বচ্ছতা অভিযান (১৪ সেপ্টেম্বর – ১৬ অক্টোবর ২০২০) – ৮৫০টি ওয়েবিনারের মাধ্যমে এই কর্মসূচিতে যোগ দেন ৫.৫ লক্ষ এন সি সি সদস্য।
***
CG/SM/SKD
(Release ID: 1690382)
Visitor Counter : 6093