প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

নতুন দিল্লিতে ন্যাশনাল মেট্রোলজি কনক্লেভের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 04 JAN 2021 1:43PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৪ জানুয়ারি, ২০২১

আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহকর্মী ডঃ হর্ষ বর্ধনজি, প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজার ডঃ বিজয় রাঘবনজি, সিএসআইআর-এর  প্রধান ডঃ শেখর সি মান্ডেজি, বিজ্ঞান জগতের অন্যান্য গণমান্য ব্যক্তিগণ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ!

ন্যাশনাল ফিজিকাল ল্যাবরেটরির প্ল্যাটিনাম জুবিলি সমারোহ উপলক্ষে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক অভিনন্দন।

 আজ আমাদের বৈজ্ঞানিকরা 'ন্যাশনাল অ্যাটমিক টাইমস্কেল' এবং 'ভারতীয় নির্দেশক দ্রব্য প্রণালী' রাষ্ট্রকে সমর্পণ করছেন।

 পাশাপাশি, দেশের প্রথম ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল স্ট্যান্ডার্ডস ল্যাবরেটরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও হয়েছে। নতুন দশকে এই শুভ সূচনা দেশের গৌরব বৃদ্ধি করবে।

 

বন্ধুগণ,

 

নতুন বছর তার সঙ্গে আরও বড় সাফল্য নিয়ে এসেছে। ভারতের বৈজ্ঞানিকরা একটি নয়, দুই-দুইটি ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ কোভিড ভ্যাক্সিন তৈরি করার ক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছে। ভারতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ কোভিড টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হতে চলেছে। সেজন্য দেশবাসী আমাদের বৈজ্ঞানিকদের অবদান নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত। প্রত্যেক দেশবাসী আপনাদের মতো বৈজ্ঞানিক ও টেকনিশিয়ানদের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ সেই সময়কে মনে করার দিন যখন আমাদের বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানগুলি, আপনারা সবাই করোনা প্রতিরোধের জন্য, ভ্যাক্সিন তৈরি করার জন্য দিন-রাত এক করে দিয়েছিলেন।

 সিএসআইআর সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে প্রতিটি সমস্যার মোকাবিলা করেছে। নতুন নতুন পরিস্থিতির সমাধান খুঁজে বের করেছে।

 আপনাদের এই সমর্পণ ভাব থেকেই আজ দেশে আমাদের এই বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি জনমনে সচেতনতা এবং সম্মানের একটি নতুন ভাব জন্ম নিয়েছে।

 আমাদের যুব সম্প্রদায় আজ সিএসআইআর-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলি সম্পর্কে আরও বেশি জানতে ও বুঝতে চাইছে।

 সেজন্য আমি চাইব যে সিএসআইআর-এর বৈজ্ঞানিকরা দেশের অধিকাংশ স্কুলগুলির সঙ্গে, ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গেও বার্তালাপ করুন।

 করোনাকালে আপনাদের অভিজ্ঞতাগুলি, আর এই গবেষণা ক্ষেত্রে আপনাদের কাজের বিভিন্ন পর্যায়ের কথা আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানান।

 এর মাধ্যমে, ভবিষ্যতে আপনাদের নবীন বৈজ্ঞানিকদের নতুন প্রজন্ম গড়ে তুলতে, তাঁদের প্রেরণা জোগাতে অনেক সুবিধা হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

কিছুক্ষণ আগে এখানে আপনাদের সাড়ে সাত দশকের সাফল্যগুলি সম্পর্কে বলা হয়েছে।

 এই বছরগুলিতে এই প্রতিষ্ঠানের অনেক মহান মনীষী দেশের উন্নয়নে অসাধারণ অবদান রেখেছেন। এই প্রতিষ্ঠানের দেওয়া সমাধানগুলি দেশের পথ অনেক প্রশস্ত করেছে।

 সিএসআইআর - এনপিএল দেশের উন্নয়নের বৈজ্ঞানিক বিবর্তন এবং মূল্য নির্ধারণ উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

 বিগত বছরগুলির সাফল্য এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলি নিয়ে আলোচনার জন্যই আজ এই কনক্লেভের আয়োজন।

 

বন্ধুগণ,

 

 আপনারা যখন পেছনে তাকান, আপনাদের এই প্রতিষ্ঠানের সূত্রপাত দাসত্ব থেকে বেরিয়ে ভারতের নব-নির্মাণের জন্য করা হয়েছিল। সময়ের সঙ্গে আপনাদের ভূমিকা আরও বিস্তারিত হয়েছে।

 এখন দেশের সামনে নতুন লক্ষ্য, নতুন গন্তব্যও রয়েছে।

 দেশ ২০২২ সালে তার স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তি পালন করতে চলেছে। ২০৪৭-

এ আমাদের স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তি হবে। এই সময়ের মধ্যে আমাদের ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর নতুন সঙ্কল্পগুলিকে মাথায় রেখে নতুন নতুন মাপকাঠি, নতুন নতুন মাইলফলক গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

সিএসআইআর / এনপিএল তো ভারতের এক প্রকার সময়রক্ষক। অর্থাৎ, ভারতের সময়ের দেখাশোনা, সময়ের ব্যবস্থাপনা আপনাদের দায়িত্বে। যখন সময়ের দায়িত্ব আপনাদের হাতে তখন সময়ের পরিবর্তনও আপনাদের দিয়েই শুরু হবে। নতুন সময়ের নতুন ভবিষ্যতের নির্মাণও আপনাদের মাধ্যমে নতুন দিশা পাবে।

 

বন্ধুগণ,

 

আমাদের দেশ দশকের পর দশক ধরে উৎকর্ষ এবং ব্যবস্থাপনার জন্য বিদেশি মাপকাঠির ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু বর্তমান দশকে আজ ভারতকে নিজেদের মাপকাঠিকে নতুন উচ্চতা দিতে হবে।

 এই দশকে ভারতের গতি, ভারতের প্রগতি, ভারতের উত্থান, ভারতের ছবি, ভারতের সামর্থ্য, আমাদের ক্যাপাসিটি  বিল্ডিং, আমাদের মাপকাঠির মাধ্যমেই ঠিক করা হবে।

 আমাদের দেশে সমস্ত পরিষেবায় যেন উৎকর্ষ থাকে। সরকারি ক্ষেত্র হোক কিংবা বেসরকারি ক্ষেত্র, আমাদের দেশের উৎপাদিত পণ্য যেন উৎকৃষ্ট মানের হ। সরকারি ক্ষেত্র হোক কিংবা বেসরকারি ক্ষেত্র, আমাদের উৎকৃষ্টতার মাপকাঠিই ঠিক করে দেবে যে বিশ্বে ভারত এবং ভারতে উৎপাদিত পণ্যগুলির শক্তি কত বেশি বেড়েছে।

 

বন্ধুগণ,

 

এই মেট্রোলজি, সাধারণ ভাষায় বলা হলে মাপ-জোখের বিজ্ঞান। এটা যে কোনও বৈজ্ঞানিক সাফল্যের জন্যও ভিত্তির মতো কাজ করে। যে কোনও গবেষণা মাপ-জোখ ছাড়া এগোতে পারে না। এমনকি আমাদের সাফল্যও কোনও না কোনও নিরিখে মাপতেই হয়। সেজন্য মেট্রোলজি আধুনিকতার আধারশিলা।

 যত উন্নত আপনাদের মেথডোলজি হবে, ততটাই উন্নত মেট্রোলজি হবে। আর যত বিশ্বস্ত মেট্রোলজি কোনও দেশের থাকে, সেই দেশের বিশ্বস্ততা বিশ্বে তত বেশি হয়। মেট্রোলজি আমাদের জন্য আয়নার মতো।

 বিশ্বে আমাদের উৎপাদিত পণ্য কোথায় দাঁড়াবে, আমাদের কি কি শোধরানোর প্রয়োজন রয়েছে, এই পরিচিতি, এই আত্মবিশ্লেষণ মেট্রোলজির মাধ্যমেই সম্ভব হয়।

 সেজন্য আজ দেশ আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের সঙ্কল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে।

 আমাদের মনে রাখতে হবে, এই লক্ষ্যে এর পরিমাণ যতটা গুরুত্বপূর্ণ এর উৎকর্ষ ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ, কাজের পরিমাণও বাড়বে, পাশাপাশি তার উৎকর্ষও বাড়বে। আমাদের শুধু বিশ্বের বাজার ভারতীয় উৎপাদন দিয়ে ভরিয়ে দিলে চলবে না, আমাদের ভারতীয় পণ্য কেনার জন্য প্রত্যেক ক্রেতার মনও জয় করতে হবে। আর সেজন্য বিশ্বের প্রত্যেক প্রান্তের হৃদয় জিততে হবে। 'মেড ইন ইন্ডিয়া'-র জন্য শুধু আন্তর্জাতিক চাহিদা হলে চলবে না, এর জন্য আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতাও সুনিশ্চিত করতে হবে। আমাদের 'ব্র্যান্ড ইন্ডিয়া'র উৎকর্ষ এবং গ্রহণযোগ্যতাকে শক্তিশালী স্তম্ভগুলির ওপর দাঁড় করাতে হবে, আরও মজবুত করতে হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

আমি অত্যন্ত আনন্দিত, ভারত এখন এই লক্ষ্যে আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আজ ভারত বিশ্বের সেই হাতেগোনা দেশগুলির অন্যতম যাদের নিজস্ব নেভিগেশন সিস্টেম রয়েছে। 'নাবিক'-এর মাধ্যমে ভারত এই সাফল্য অর্জন করে দেখিয়েছে। আজ এদিকে আরেকটি বড় পদক্ষেপ নেওয়া হল।

 আজ যে ভারতীয় নির্দেশক দ্রব্যের লোকার্পণ করা হয়েছে, এটি আমাদের উদ্যোগ জগতকে কোয়ালিটি প্রোডাক্টস গড়ে তুলতে উৎসাহ জোগাবে।

 এখন খাদ্য, ভোজ্যতেল, নানা রাসায়নিক, ভারী ধাতু,  কীটনাশক, ওষুধ উৎপাদন শিল্প এবং তাঁতশিল্পের মতো অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের সার্টিফায়েড রেফারেন্স ম্যাটেরিয়াল সিস্টেম শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আমরা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছি।

 এখন আমরা সেই পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, যেখানে শিল্পজগৎ ‘রেগুলেশন-সেন্ট্রিক অ্যাপ্রোচ’-এর পরিবর্তে ‘কাস্টমার ওরিয়েন্টেড অ্যাপ্রোচ’-এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

 এখন আমরা সেই পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি যেখানে শিল্পজগৎ নিয়ম-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির বদলে গ্রাহক-কেন্দ্রিক ধারণার দিকে এগোচ্ছে।

 এই নতুন মানকগুলির মাধ্যমে সারা দেশের জেলাগুলিতে সেখানকার স্থানীয় পণ্যকে আন্তর্জাতিক পরিচয় প্রদানের অভিযানে অনেক সুবিধা হবে।

 এর ফলে, আমাদের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পক্ষেত্রের একটি বিশেষ লাভ হবে।

 কারণ, বিদেশ থেকে যে বড় নির্মাণ কোম্পানিগুলি ভারতে আসছে, তারা এদেশেই আন্তর্জাতিক মানের স্থানীয় উপাদান সরবরাহ শৃঙ্খল পাবে।

 সব থেকে বড় কথা, নতুন মানকগুলির মাধ্যমে রপ্তানি ও আমদানি - উভয় ক্ষেত্রেই উৎকর্ষ সুনিশ্চিত হবে। এর ফলে ভারতের সাধারণ উপভোক্তারাও ভালো জিনিস পাবেন।

 রপ্তানিকারকদের সমস্যাও কমবে।

 অর্থাৎ, আমাদের উৎপাদন, আমাদের পণ্যের উৎকর্ষ যত বৃদ্ধি পাবে, দেশের অর্থনীতি ততটাই শক্তিশালী হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

অতীত থেকে নিয়ে বর্তমান পর্যন্ত যদি আপনারা কখনও ফিরে দেখেন, তাহলে দেশ বিজ্ঞানকে যতটা এগিয়ে নিয়ে গেছে, বিজ্ঞানও দেশকে ততটাই এগিয়ে দিয়েছে। এটাই বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং শিল্পের 'মূল্য সৃষ্টি চক্র’। বিজ্ঞানের মাধ্যমে কোনও কিছু আবিষ্কার হলে সেই আবিষ্কারের আলোতে প্রযুক্তি বিকশিত হয়। আর প্রযুক্তির মাধ্যমে শিল্প গড়ে ওঠে, নতুন নতুন পণ্য তৈরি হয়। শিল্প তখন নতুন গবেষণার জন্য বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে। আর এই চক্র নতুন সম্ভাবনার লক্ষ্যে এগিয়ে যায়।

 সিএসআইআর / এনপিএল ভারতের এই মূল্য বৃত্তকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

 আজ যখন দেশ আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে তখন বিজ্ঞানের মাধ্যমে ব্যাপক উৎপাদনের এই মূল্য সৃষ্টি চক্রের গুরুত্ব বেড়ে যায়। সেজন্য সিএসআইআর-কে এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

সিএসআইআর / এনপিএল আজ যে ন্যাশনাল অ্যাটমিক টাইমস্কেল দেশকে সমর্পণ করেছে তার মাধ্যমে ভারত ন্যানো-

সেকেন্ড অর্থাৎ,  ১ সেকেন্ডের ১০ কোটি ভাগের ১ ভাগ সময় মাপার ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হয়ে উঠেছে। ২.৮ ন্যানো-সেকেন্ডের এই অ্যাকিউরেসি লেভেল অর্জন করা নিজেই একটি সামর্থ্য। এখন ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড টাইমকে আমাদের ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড টাইম ৩ ন্যানো-সেকেন্ডেরও কম সময়ে অ্যাকিউরেসি লেভেলের মাধ্যমে ম্যাচ করছে। এর ফলে ইসরো সহ আমাদের যেসব প্রতিষ্ঠান 'কাটিং এজ' প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে, তাদেরও খুব সাহায্য হবে।

 এর ফলে ব্যাঙ্কিং, রেল, প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য, টেলিকম, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা - এরকম অসংখ্য ক্ষেত্র-সংশ্লিষ্ট আধুনিক প্রযুক্তি অনেক লাভবান হবে। শুধু তাই নয়, আমরা যে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০-র কথা বলি, এই ইন্ডাস্ট্রি ৪.০-র ক্ষেত্রেও এটি ভারতের ভূমিকাকে আরও শক্তিশালী করবে।

 

বন্ধুগণ,

 

আজকের ভারত পরিবেশের লক্ষ্যে বিশ্বে নেতৃত্ব করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাতাসের উৎকর্ষ এবং দূষিত বায়ু নিঃসরণ মাপার প্রযুক্তি থেকে শুরু করে যন্ত্রাংশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমরা অন্যদের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। আজ এক্ষেত্রেও আমরা আত্মনির্ভরতার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছি। এর ফলে, ভারতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ আরও সস্তা এবং কার্যকর ব্যবস্থা বিকশিত হওয়ার পাশাপাশি বায়ুর উৎকর্ষ এবং দূষিত বায়ু নিঃসরণ-সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি আন্তর্জাতিক বাজারেও ভারতের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি পাবে। আমাদের বৈজ্ঞানিকদেরই প্রতিনিয়ত প্রচেষ্টার ফলে ভারত আজ এই সাফল্য অর্জন করছে।

 

বন্ধুগণ,

 

যে কোনও প্রগতিশীল সমাজে গবেষণা জীবনের একটি সহজ স্বভাবও হয়, আর সহজ প্রক্রিয়াও হয়। গবেষণার প্রভাব বাণিজ্যিকও হয়, সামাজিকও হয়। আর গবেষণা আমাদের জ্ঞানকে, আমাদের বুদ্ধিকে বিস্তারিত করার ক্ষেত্রে উপযোগী হয়। অনেকবার গবেষণা করার সময় আমরা আন্দাজও করতে পারি না যে কতটা কি করে ফেলেছি। যে অন্তিম লক্ষ্য ছাড়াও কোনদিকে এই গবেষণা যাবে, ভবিষ্যতে তা আরও কি কি কাজে লাগবে। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে গবেষণা জ্ঞানের নতুন অধ্যায় কখনও ব্যর্থ হয় না। আমাদের দেশের শাস্ত্রে যেমন বলা হয়েছে, আত্মা কখনও মরে না, আমি মনে করি গবেষণাও কখনও মরে না। ইতিহাসে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে।

 ‘ফাদার অফ জেনেটিক্স’ ম্যান্ডেলের কাজ কবে স্বীকৃতি পেয়েছে? তাঁর মৃত্যুর পর। বিশ্ববাসী নিকোলা টেসলার কাজের সম্ভাবনাও অনেক পড়ে বুঝতে পেরেছে। অনেক  গবেষণা আমাদের যে লক্ষ্য, যে উদ্দেশ্য নিয়ে করি, তা সম্পূর্ণ হয় না। কিন্তু সেই গবেষণা অন্য ক্ষেত্রে যুগান্তকারী হয়ে ওঠে।

 উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি, জগদীশ চন্দ্র বোস যখন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে মাইক্রো-ওয়েভের তত্ত্ব তৈরি করেন, স্যর বোস সেই তত্ত্বের বাণিজ্যিক ব্যবহারের লক্ষ্যে এগিয়ে যাননি। কিন্তু আজ রেডিও-কমিউনিকেশন সিস্টেম সেই তত্ত্বের ভিত্তিতেই দাঁড়িয়ে রয়েছে।

 বিশ্বযুদ্ধের সময় যে গবেষণা যুদ্ধের জন্য ছিল কিংবা সৈনিকদের রক্ষার জন্য, পরে সেই গবেষণাই ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। ড্রোন তো শুরুতে যুদ্ধের জন্যই তৈরি করা হয়েছিল।

 কিন্তু আজ ড্রোন দিয়ে ফটোশ্যুটও করা হচ্ছে। এমনকি, এর মাধ্যমে জিনিসপত্র সরবরাহও করা হচ্ছে। সেজন্য আজ এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যে আমাদের বৈজ্ঞানিকরা, বিশেষ করে নবীন বৈজ্ঞানিকরা, গবেষণালব্ধ তত্ত্বের বহুবিধ ব্যবহারের সমস্ত সম্ভাবনাকেও খতিয়ে দেখেন।

 তাঁদের ক্ষেত্র থেকে বেরিয়ে তাঁদের গবেষণা কিভাবে প্রয়োগ হতে পারে, এই ভাবনা সব সময় মাথায় থাকতে হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

আপনাদের ছোট গবেষণা কিভাবে বিশ্বের ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে, অনেক উদাহরণ রয়েছে বিশ্বে। যেমন বিদ্যুতের কথাই যদি ধরেন, আজ জীবনের এমন কোনও অংশ নেই যেখানে বিদ্যুৎ ছাড়া চলতে পারে! পরিবহণ ব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিল্প কিংবা দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে বিদ্যুৎ যুক্ত রয়েছে। অথচ ভাবুন একটিমাত্র সেমি-কন্ডাক্টার আবিষ্কার এই বিশ্বকে কিভাবে বদলে দিয়েছে। একটি ডিজিটাল বিপ্লব আমাদের জীবনকে কত সমৃদ্ধ করেছে।

 এমন কত না সম্ভাবনা এই নতুন ভবিষ্যতে আমাদের নবীন গবেষকদের সামনে পড়ে আছে। আগামী ভবিষ্যৎ আজকের থেকে একদমই ভিন্ন হবে।

 আর এই লক্ষ্যে সেই একটি গবেষণা, সেই একটি আবিষ্কার আপনাকেও করতে হবে। বিগত ছয় বছর ধরে দেশ এজন্য নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে। আজ ভারত আন্তর্জাতিক উদ্ভাবন র‍্যাঙ্কিং--এ বিশ্বের সর্বোচ্চ ৫০টি দেশের মধ্যে পৌঁছে গেছে। দেশে আজ মৌলিক গবেষণার দিকে অনেক জোর দেওয়া হচ্ছে, আর পিয়ার রিভিউড বিজ্ঞান এবং ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকাশনার সংখ্যার ক্ষেত্রেও ভারত বিশ্বের সর্বোচ্চ তিনটি দেশের মধ্যে রয়েছে। আজ ভারতে শিল্প এবং প্রতিষ্ঠানগুলির মাঝে সহযোগিতাকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলি ভারতে তাদের গবেষণাকেন্দ্র এবং তার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলছে। বিগত বছরগুলিতে এই গবেষণা ব্যবস্থাপনার সংখ্যাও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

সেজন্য বন্ধুগণ,

 

আজ ভারতের নবীন প্রজন্মের সামনে গবেষণা ও উদ্ভাবনের অসীম সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আজ আমাদের জন্য উদ্ভাবন যতটা সমস্যাকীর্ণ, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবনকে প্রাতিষ্ঠানিক করে তোলা।

 এটা কিভাবে হবে, ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টির নিরাপত্তা কিভাবে সাধিত হবে, এটাও আজ আমাদের নবীন প্রজন্মকে শিখতে হবে।

 আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের যত পেটেন্ট হবে, ততটাই 'ইউটিলিটি' আমাদের এই পেটেন্টগুলির থাকবে।

 আমাদের গবেষণা যতগুলি ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে, ততটাই আপনাদের পরিচয় আরও শক্তিশালী হবে, ততটাই 'ব্র্যান্ড ইন্ডিয়া' শক্তিশালী হবে, আমাদের সবাইকে 'কর্মন্যে বাধিকারস্তে মা ফলেসু কদাচন’ মন্ত্র থেকে প্রাণশক্তি কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

 আর যদি এই মন্ত্রকে কেউ নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করে থাকেন, আমার মনে হয় বৈজ্ঞানিকেরাই তা করে থাকবেন।

 তাঁদের মনে এই ভাব থাকে, তবেই তাঁরা গবেষণাগারে একজন ঋষির মতো তপস্যা করে যান। 'কর্মন্যে বাধিকারস্তে মা ফলেসু কদাচন’ কর্ম করতে থাক, ফল পাও বা না পাও, কাজ করে যেতে হবে। আপনারা শুধুই ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কর্মযোগী নন, আপনারা ১৩০ কোটিরও বেশি ভারতবাসীর আশা ও আকাঙ্ক্ষা পূর্তির  যজ্ঞে এক একজন সাধক।

 আপনারা সফল হতে থাকুন - এই কামনা নিয়ে আপনাদের নতুন বছরের জন্য আরেকবার অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

***

 

 

CG/SB/DM


(Release ID: 1686152) Visitor Counter : 225