প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
জাতির উদ্দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত ২’০, (১৮তম পর্ব) অনুষ্ঠানের বাংলা অনুবাদ –
Posted On:
29 NOV 2020 11:50AM by PIB Kolkata
নতুনদিল্লি, ২৯শে নভেম্বর, ২০২০
আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। আজ ‘মন কি বাত’-এর শুরুতে আপনাদের সবার সঙ্গে একটা খুশির খবর ভাগ করে নিতে চাই। প্রত্যেক ভারতবাসীর এটা জেনে গর্ব হবে যে দেবী অন্নপূর্ণার একটি খুব পুরনো প্রতিমা কানাডা থেকে ভারতে ফিরে আসছে। এই প্রতিমা প্রায় একশো বছর আগে, ১৯১৩ সালের কাছাকাছি, বারাণসীর একটি মন্দির থেকে চুরি করে, দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কানাডার সরকার আর এই পুণ্য কর্মকে সম্ভব করার ক্ষেত্রে যুক্ত সব ব্যক্তির এই সহৃদয়তার জন্য আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। মাতা অন্নপূর্ণার কাশীর সঙ্গে অত্যন্ত বিশিষ্ট একটি সম্বন্ধ আছে। এখন তার প্রতিমার ফেরত আসা আমাদের সবার জন্য আনন্দের। মাতা অন্নপূর্ণার প্রতিমার মতই, আমাদের ঐতিহ্যের অনেক অমূল্য রত্ন, আন্তর্জাতিক চক্রের শিকার হয়ে চলেছে। এই চক্র আন্তর্জাতিক বাজারে এগুলিকে খুব উঁচু দামে বিক্রি করে। এখন এদের উপর বল প্রয়োগ তো করা হচ্ছেই, এইসব সামগ্রী ফেরানোর জন্য ভারত নিজের প্রয়াস বাড়িয়েছে। এমনই প্রচেষ্টার কারণে বিগত কয়েক বছরে ভারত অনেক প্রতিমা এবং শিল্পসামগ্রী ফেরত আনতে সমর্থ হয়েছে। মাতা অন্নপূর্ণার প্রতিমা ফেরত আসার সঙ্গে আরও একটি ঘটনার সংযোগ রয়েছে। কিছু দিন আগেই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ উইক পালিত হয়েছে। সংস্কৃতি প্রেমীদের জন্য ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ উইক পুরনো সময়ে ফিরে যাওয়ার, তার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ পর্বের খোঁজ নেওয়ার এক চিত্তাকর্ষক সুযোগ এনে দেয়। করোনা পর্ব চলা সত্ত্বেও এবার আমরা উদ্ভাবনী উপায়ে মানুষজনকে এই ‘হেরিটেজ উইক’ পালন করতে দেখলাম। সঙ্কটের সময় সংস্কৃতি খুব কাজে লাগে, এর মোকাবিলা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রযুক্তির মাধ্যমেও সংস্কৃতি আবেগের উদ্দীপনার এক মত কাজ করে। আজ দেশে অনেক সংগ্রহশালা আর গ্রন্থাগার নিজেদের সংগ্রহকে পুরোপুরি ডিজিটাল করার কাজে যুক্ত। দিল্লীতে আমাদের রাষ্ট্রীয় সংগ্রহশালা এই ব্যাপারে কিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। রাষ্ট্রীয় সংগ্রহশালা প্রায় দশটি ভার্চুয়াল গ্যালারি গঠনের জন্য কাজ করছে - এটা আকর্ষণীয় নয় কি! এখন আপনি ঘরে বসে দিল্লীর ন্যাশনাল মিউজিয়ামের গ্যালারি ঘুরে দেখতে পারবেন। যেখানে একদিকে প্রযুক্তির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আরও বেশি-বেশি মানুষের কাছে পৌঁছনো গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি অন্যদিকে এই ঐতিহ্যের সংরক্ষণের জন্য প্রযুক্তির প্রয়োগও গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি আমি একটি আকর্ষণীয় প্রকল্পের ব্যাপারে পড়ছিলাম। নরওয়ের উত্তরে স্ফালবার্ড নামে একটি দ্বীপ আছে। এই দ্বীপে আর্কটিক ওয়ার্ল্ড আর্কাইভ নামে একটি প্রকল্প নির্মিত হয়েছে। এই আর্কাইভে বহুমূল্য হেরিটেজ সংক্রান্ত তথ্য এমনভাবে রাখা আছে যে কোনো রকম প্রাকৃতিক বা মানুষের তৈরি বিপর্যয়ে তা প্রভাবিত হবে না । একেবারে সম্প্রতি এটাও জানা গিয়েছে যে অজন্তা গুহার সম্পদকেও ডিজিটাইজ করে এই প্রজেক্টে যুক্ত করা হচ্ছে। এতে অজন্তা গুহার পুরো দৃশ্য দেখতে পাওয়া যাবে। এখানে ডিজিটালাইজড এবং রেস্টোরড পেইন্টিংয়ের সঙ্গে-সঙ্গে সম্পর্কিত নথিপত্র এবং উদ্ধৃতি যুক্ত থাকবে। বন্ধুরা, মহামারী যেখানে একদিকে আমাদের কাজকর্মের পদ্ধতি বদলে দিয়েছে, অন্যদিকে প্রকৃতিকে নতুনভাবে উপলব্ধি করার সুযোগ দিয়েছে। প্রকৃতিকে দেখার ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীতেও পরিবর্তন এসেছে। এখন আমরা শীতের মরশুমে প্রবেশ করছি। আমরা প্রকৃতির ভিন্ন-ভিন্ন রঙ দেখতে পাব। বিগত কয়েকটি দিন চেরি ব্লসমের ভাইরাল ছবিতে পরিপূর্ণ রয়েছে ইন্টারনেট। এখন আপনারা হয়ত ভাবছেন যে যখন আমি চেরি ব্লসমের কথা বলছি তখন জাপানের এই প্রসিদ্ধ পরিচিতির কথা বলছি – কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়! এগুলো জাপানের ছবি নয়! এগুলো আমাদের মেঘালয়ের শিলঙের ছবি। মেঘালয়ের অপরূপ সৌন্দর্যকে এই চেরি ব্লসম আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
বন্ধুরা, এই নভেম্বর মাসের ১২ তারিখ থেকে ডক্টর সালিম আলি-জীর একশো পঁচিশতম জন্মজয়ন্তী সমারোহ শুরু হয়েছে। ডক্টর সালিম পাখিদের জগতে বার্ড ওয়াচিংয়ের ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। দুনিয়ার পক্ষী বিশারদদের ভারতের প্রতি আকৃষ্টও করেছেন। আমি চিরদিন বার্ড ওয়াচিং-এ অনুরক্ত মানুষদের কদর করি। অনেক ধৈর্য নিয়ে, তারা, ঘন্টার পর ঘন্টা, সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি, বার্ড ওয়াচিং করতে পারেন, প্রকৃতির অনুপম সৌন্দর্যের আনন্দ নিতে পারে, আর নিজেদের জ্ঞানকে আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়। ভারতেও অনেক বার্ড ওয়াচিং সোসাইটি সক্রিয়। আপনারাও অবশ্যই এই বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত হোন। আমার দৌড়ঝাপের জীবনেও, বিগত দিনে কেবাড়িয়াতে পাখিদের সঙ্গে সময় কাটানোর স্মরণীয় সুযোগ আমিও পেয়েছিলাম। পাখিদের সঙ্গে সময় কাটানোর মধ্য দিয়ে আপনি প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত হবেন আর পরিবেশ ভাবনা আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ভারতের সংস্কৃতি ও শাস্ত্র সবসময়ই সমগ্র বিশ্বের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। অনেক মানুষই তো এর খোঁজে ভারতে আসেন আর চিরকালের জন্য এখানকার হয়েই থেকে যান। আবার অনেক লোক নিজের দেশে ফিরে গিয়ে এই সংস্কৃতির সংবাহক হয়ে ওঠেন। আমার জোনেস মেসেত্তি-র কাজের সম্বন্ধে জানার সুযোগ হয়, যিনি 'বিশ্বনাথ' নামেও পরিচিত। জোনেস ব্রাজিলের মানুষদের বেদান্ত আর গীতা শেখান। উনি 'বিশ্ববিদ্যা' নামক একটি সংস্থা চালান, যা রিও ডি জেনিরো থেকে ঘণ্টাখানেকের দূরত্বে পেট্রোপোলিসের পাহাড়ে অবস্থিত। জোনেস মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করার পর, স্টক মার্কেটের এক কোম্পানিতে কাজ করেন। পরে ভারতীয় সংস্কৃতি বিশেষ করে বেদান্তের প্রতি তিনি আকৃষ্ট হন। স্টক থেকে আধ্যাত্মিকতা, বাস্তবে ওনার যাত্রা পথ অতি সুদীর্ঘ। জোনেস ভারতে বেদান্ত দর্শন নিয়ে অধ্যয়ন করেন আর চার বছর পর্যন্ত কোয়েম্বাটুরের আর্শ বিদ্যা গুরুকুলামে থাকেন। জোনেসের আরো একটি বৈশিষ্ট্য আছে, তিনি নিজের মেসেজ সকলের কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার করছেন। উনি নিয়মিত অনলাইন প্রোগ্রাম করেন। প্রতিদিনর পডকাস্টও করেন। বিগত সাত বছরে জোনেস বেদান্তের উপর সকলের জন্য বিনামূল্যের পাঠক্রমের মাধ্যমে দেড় লাখেরও বেশি ছাত্রছাত্রীকে পড়িয়েছেন। জোনেস শুধুমাত্র একটি বড় কাজই করছেন না, তাকে এমন ভাষায় করছেন, যাতে অনেক বেশি লোকের বুঝতে সুবিধে হয়। করোনা আর কোয়ারান্টাইনের এই সময়ে বেদান্ত কিভাবে সাহায্য করতে পারে সেটি জানার জন্য মানুষের এই বিষয়ে অনেক আগ্রহ আছে। মন কি বাত এর মাধ্যমে জোনেসের প্রয়াস গুলির জন্য তাঁকে অভিনন্দন এবং তাঁর ভবিষ্যত প্রচেষ্টার শুভকামনা জানাই।
বন্ধুরা, সম্প্রতি, এইরকমই, একটি খবরের প্রতি আপনাদের নজর নিশ্চয়ই গেছে। নিউজিল্যান্ডে ওখানকার নবনির্বাচিত সাংসদ, ডঃ গৌরব শর্মা বিশ্বের প্রাচীন ভাষাগুলির অন্যতম, সংস্কৃত ভাষায় শপথ গ্রহণ করেন। একজন ভারতীয় হয়ে ভারতীয় সংস্কৃতির এই প্রসারে আমাদের গর্ব বোধ হয়। ‘মন কি বাত’ এর মাধ্যমে গৌরব শর্মাজিকে শুভকামনা জানাই। আমাদের সবার এই কামনা রইল যে নিউজিল্যান্ডের মানুষের সেবায় উনি নতুন উচ্চতায় পৌঁছবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, কাল ৩০ শে নভেম্বর। আমরা শ্রী গুরু নানক দেবজির ৫৫১তম প্রকাশ পর্ব উদযাপন করব। সমগ্র বিশ্বে গুরু নানাক দেবজির প্রভাব স্পষ্টরূপে দেখা যায়। ভ্যাঙ্কোবার থেকে ওয়েলিংটন , সিঙ্গাপুর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত ওঁর উপদেশ সর্বত্রই শোনা যায়। গুরুগ্রন্থ সাহিব এ বলা হয়েছে "সেবক কো, সেবা বন আই " অর্থাৎ সেবকের কাজ, সেবা করা। বিগত কিছু বছরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পর্ব এসেছে, আর একজন সেবক হিসেবে আমি অনেক কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। গুরু সাহিব আমার থেকে সেবা গ্রহণ করেন। এর আগে গুরু নানক দেবজির ৫৫০তম প্রকাশ পর্ব, শ্রী গুরু গোবিন্দ সিং জির ৩৫০তম প্রকাশ পর্ব ছিল। আর আগামী বছর শ্রী গুরু তেগবাহাদুর জির ৪০০তম প্রকাশ পর্ব। আমি অনুভব করি, যে গুরু সাহেবের আমার ওপর বিশেষ কৃপা আছে, তাই উনি সর্বদা আমায় নিজের কাজে, খুব কাছ থেকে যুক্ত করেছেন।
বন্ধুরা আপনারা কি জানেন কচ্ছে একটি গুরদ্বারা আছে- 'লাখপত গুরদ্বারা সাহেব' । শ্রী গুরু নানকজী নিজের বিষন্নতার সময়ে 'লাখপত গুরদ্বারা সাহেবে' থেকেছিলেন। ২০০১ এর ভূমিকম্পে এই গুরুদ্বারেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়।এটা গুরু সাহেবেরই কৃপা যে আমি একে জীর্ণাবস্থা থেকে উদ্ধারের কাজ সুনিশ্চিত করতে পেরেছি। শুধু মেরামত নয়, এই গুরুদ্বারের বৈভব ও পূর্ব গৌরবকেও ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আমরা সকলে গুরু সাহেবের আশীর্বাদ লাভ করেছি। লখপত গুরুদ্বার সংরক্ষণের প্রয়াসকে ২০০৪ সালে ইউনেস্কোর এশিয়-প্রশান্তমহাসাগরিয় হেরিটেজ পুরস্কারে এওয়ার্ড অফ ডিসটিংশন দেওয়া হয়। মেরামতের সময় শৈল্পিক খুঁটিনাটি কে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জুরির মত ছিল। জুরি এও জানিয়েছিল, মেরামতের কাজে শিখ সসম্প্রদায়ের মানুষ শুধু যুক্ত ছিলেন তাই নয়, বরং তাদের তত্ত্বাবধানেই সমস্ত কাজ সম্পূর্ণ হয়। যখন আমি মুখ্যমন্ত্রীও ছিলাম না, তখনও লখপত গুরুদ্বার যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। ওখানে গেলে আমি অসীম শক্তি পাই। সকলেই এই গুরুদ্বারায় যেতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করবে। গুরু সাহেব আমার থেকে অনেক সেবা গ্রহন করেছেন আর এই জন্য আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ। গত বছর নভেম্বরে কারতারপুর সাহেব করিডর খোলার ঐতিহাসিক ঘটনা হয়েছিল। এই বিষয়টিকে আমি জীবনভর মনের মনিকোঠায় রেখে দেব। এটা আমাদের সকলের সৌভাগ্য যে আমাদের শ্রী দরবার সাহেবের সেবা করবার আরেকটি সুযোগ হয়েছে। আমার প্রবাসী শিখ ভাই বোনেরা এখন আরও সহজে দরবার সাহেবের সেবায় টাকা পাঠাতে পারবেন। এই পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে গোটা বিশ্বে তাঁরা যে যেখানে আছেন দরবার সাহেবের আরও নিকটে এসে গেলেন।
বন্ধুরা, গুরু নানকজীই লঙ্গরের প্রথা আরম্ভ করেন। আমরা করোনা মহামারীর এই সময়ে দেখলাম কিভাবে শিখ ভাই বোনেরা তাদের এই পরম্পরাকে বজায় রেখে মানবসেবার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। এই পরম্পরা আমাদের জন্য প্রেরণাস্বরূপ। আমার চাই, আমরা সকলে সেবক হয়ে কাজ করে যাই। গুরু সাহেব আমার থেকে ও আমার দেশবাসীর থেকে এভাবেই সেবা নিতে থাকুন। আরও একবার, গুরু নানক জয়ন্তীতে সকলকে জানাই অনেক অনেক শুভ কামনা।
আমার প্রিয় দেশবাসী, বিগত কয়েকদিনে, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলার, তাদের শিক্ষালাভের মহত্ত্বপূর্ণ ঘটনার অংশীদার হওয়ার সুযোগ হয়। আইআইটি গুয়াহাটি, আইআইটি দিল্লি, গান্ধীনগরের দীনদয়াল পেট্রোলিয়াম ইউনিভার্সিটি, দিল্লীর জেএনইউ, মাইশোর বিশ্ববিদ্যালয় ও লক্ষনৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে প্রযুক্তির সাহায্যে আমি যোগাযোগ করতে পেরেছি। দেশের যুবসম্প্রদায়ের মাঝে থাকতে পারলে মন তরতাজা ও উজ্জীবিত হয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসর এক ধরনের মিনি ইন্ডিয়া। একদিকে যেমন এই ক্যাম্পাসগুলোতে ভারতের বিবিধতা নজরে আসে, অন্যদিকে নতুন ভারত তৈরীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনার ইচ্ছেও চোখে পড়ে। করোনা মহামারীর আগে যখন আমি সশরীরে কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে যেতাম, তখন আমি অনুরোধও করতাম যে আশপাশের স্কুলের গরিব ছাত্রছাত্রীদেরও তাতে আমন্ত্রণ জানানো হোক। এই বাচ্চারা আমার বিশেষ অতিথি হিসেবে আসত। একজন ছোটো বাচ্চা যখন এই বিরাট সমারোহে কাউকে ডাক্তার, কাউকে ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী হতে দেখে, কাউকে মেডেল নিতে দেখে, তখন তার মনেও নতুন স্বপ্ন জাগে। ‘ আমিও পারি’- এই আত্মবিশ্বাস জাগে। নতুন সংকল্পের অনুপ্রেরণা পায়।
বন্ধুরা, আর একটি বিষয় সম্পর্কে আমার সবসময়ে কৌতূহল থাকে সেটা হল এই প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তনি কারা, সেই প্রাক্তনিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের কি ব্যবস্থা, এঁদের প্রাক্তনিদের সঙ্গে যোগাযোগ কতটা কার্যকরী।
আমার যুবা বন্ধুরা, আপনারা ততক্ষণ পর্যন্তই কোন প্রতিষ্ঠানের বিদ্যার্থী হন যতক্ষণ পর্যন্ত আপনারা সেখানে পড়াশোনা করেন, কিন্তু সেখানকার প্রাক্তনি আপনারা আজীবন থাকেন। স্কুল কলেজ থেকে বেরোনোর পরেও দুটি বিষয় কখনো শেষ হয় না। প্রথম - আপনার শিক্ষার প্রভাব, এবং দ্বিতীয় - নিজের স্কুল কলেজের সঙ্গে আপনার আত্মিক যোগ। যখন প্রাক্তনিরা নিজেদের মধ্যে কথা বলেন তখন স্কুল-কলেজ নিয়ে তাঁদের স্মৃতির মধ্যে বইপত্র, পড়াশোনার থেকেও ক্যাম্পাসে কাটানো সময়, বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো বেশি করে উঠে আসে। আর সেই স্মৃতির মধ্য থেকেই জন্ম নেয় প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছু করার ইচ্ছা। যেখানে আপনার ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটেছে, তার উন্নতির জন্যে আপনি যদি কিছু করেন তার থেকে আনন্দের কথা আর কী হতে পারে! আমি এমন কিছু প্রয়াসের সম্বন্ধে পড়েছি যেখানে প্রাক্তন ছাত্ররা নিজেদের পুরনো প্রতিষ্ঠানের প্রভূত উন্নতি ঘটিয়েছেন। আজকাল প্রাক্তনীরা এ বিষয় নিয়ে অত্যন্ত সক্রিয়। আইআইটিয়ানরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের জন্য কনফারেন্স সেন্টার , ম্যানেজমেন্ট সেন্টার, ইনকিউবেশন সেন্টার ইত্যাদি অনেক পৃথক পৃথক ব্যবস্থা নিজেরাই তৈরি করে দিয়েছেন। এই সমস্ত উদ্যোগ বর্তমান বিদ্যার্থীদের শেখার অভিজ্ঞতাকে উন্নত করে। আইআইটি দিল্লি একটি এনডাওমেন্ট ফান্ডের সূচনা করেছে যা একটি দুর্দান্ত আইডিয়া। বিশ্বের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এ ধরনের এনডাওমেন্ট তৈরি করার সংস্কৃতি রয়েছে, যা ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করে। আমার মনে হয় ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও এই সংস্কৃতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সক্ষম। যখন প্রতিদানে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ওঠে তখন কোন কিছুই বড় বা ছোট হয়না। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সাহায্যও অর্থ বহন করে। প্রতিটি প্রয়াসই হয় তাৎপর্যপূর্ণ। প্রায়শই প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তির মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে, ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে, পুরষ্কার ও বৃত্তি চালু করার ক্ষেত্রে, দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচী শুরু করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কোন কোন স্কুলের "প্রাক্তনী সংগঠন" মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম চালু করেছেন। এর মাধ্যমে তাঁরা আলাদা আলাদা ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীদের গাইড করেন। একই সঙ্গে শিক্ষার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। বহু স্কুলে বিশেষ করে বোর্ডিং স্কুলগুলির প্রাক্তনীদের সংগঠন অত্যন্ত সক্রিয়, তাঁরা ক্রীড়ানুষ্ঠান এবং কমিউনিটি সার্ভিসের মতো কর্মসূচির আয়োজন করে থাকেন। আমি প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের অনুরোধ করতে চাইব, তাঁরা যে প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন তার সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ককে আরো বেশি মজবুত করতে থাকুন। তা স্কুল হোক কলেজ হোক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানগুলির কাছেও আমার অনুরোধ প্রাক্তনীদের যুক্ত করার নতুন ও উদ্ভাবনী উপায় নিয়ে কাজ করুন। সৃজনশীল প্লাটফর্ম তৈরি করুন যাতে প্রাক্তনীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ সম্ভব হয়। শুধু বড় কলেজ আর ইউনিভার্সিটিই নয়, গ্রামের স্কুলগুলিরও দৃঢ়, প্রাণবন্ত সক্রিয় প্রাক্তনী নেটওয়ার্ক হোক।
আমার প্রিয় দেশবাসী, পাঁচই ডিসেম্বর শ্রী অরবিন্দের পুণ্য তিথি। শ্রী অরবিন্দকে আমরা যত পড়ি ততই গভীরতা খুঁজে পাই। আমার যুবক বন্ধুরা শ্রী অরবিন্দকে যত জানবেন ততই নিজেকে জানতে পারবেন, নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারবেন। আপনার জীবনের যে চিন্তাভাবনা ও পরিস্থিতির মধ্যে আপনি রয়েছেন, যেসব সংকল্পকে সফল করার জন্য আপনি সচেষ্ট, তার মধ্যে সবসময়ই শ্রী অরবিন্দকে নতুন প্রেরণাদায়ক হিসেবে, এক নতুন পথের দিশারী রূপে আপনি পাবেন। যেমন আজ যখন আমরা "লোকাল ফর ভোকাল" - এই অভিযানে শামিল হয়ে অগ্রসর হচ্ছি তখনো অরবিন্দের স্বদেশী দর্শন আমাদের পথ দেখায়। শ্রী অরবিন্দ তাঁর স্বদেশীর প্রেরণা নিজের পরিবার থেকে পেয়েছিলেন। বাংলায় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কবিতা আছে।
“শুই সুতো পর্যন্ত আসে তুঙ্গ হতে।
দিয়াশালাই কাঠি, তাও আসে পোতে।।
প্রদীপটি জ্বালিতে খেতে, শুতে, যেতে।
কিছুতে লোক নয় স্বাধীন"।।
অর্থাৎ আমাদের এখানে সূঁচ এমনকি দেশলাইও বিদেশি জাহাজে করে আসে। খাওয়া-দাওয়া, শোওয়া কোন বিষয়েই মানুষ স্বাধীন নয়। নিজের দাদুর মনের এই কষ্ট শ্রীঅরবিন্দের শিশুমনকেও প্রভাবিত করেছিল। এরপরই উনি স্বাদেশীকতাকে নিজের জীবনের লক্ষ্য হিসেবে স্থির করেছিলেন। উনি বলতেন, স্বাদেশীকতার অর্থ হলো আমরা আমাদের ভারতীয় কর্মচারী এবং কারিগরদের তৈরি করা জিনিসকে প্রাধান্য দেব। এমনও নয় যে শ্রী অরবিন্দ বিদেশিদের থেকে কোনো কিছু শেখার ব্যাপারে বিরোধিতা করেছেন। যেখানে যা নতুন আছে, সেখান থেকে আমরা শিখব, আমাদের দেশে যা কিছু ভালো হতে পারে, আমরা তার সঙ্গে সহযোগিতা করব এবং উৎসাহ প্রদান করব, এটাই তো আত্মনির্ভর ভারত অভিযানে ভোক্যাল ফর লোক্যাল মন্ত্রের ভাবনা। বিশেষ করে স্বাদেশিকতাকে আপন করে নেওয়ার বিষয়ে উনি যা কিছু বলেছিলেন, তা আজ প্রত্যেক দেশবাসীর পড়া উচিত। বন্ধুরা, এভাবেই শিক্ষার বিষয়েও শ্রী অরবিন্দের বক্তব্য খুবই সুস্পষ্ট ছিল। উনি শিক্ষাকে শুধুমাত্র পুঁথিগত জ্ঞান, ডিগ্রি এবং চাকরির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখায় বিশ্বাস করতেন না। শ্রী অরবিন্দ বলতেন, আমাদের রাষ্ট্রীয় শিক্ষা, আমাদের যুবসমাজের মন এবং মস্তিষ্কের প্রশিক্ষণ হওয়া উচিত, অর্থাৎ মস্তিষ্কের বৈজ্ঞানিক বিকাশ হবে এবং মনে ভারতীয় চিন্তা-ভাবনাও থাকবে, তবেই একজন যুবক দেশের আরও ভালো নাগরিক হতে পারবে। শ্রী অরবিন্দ রাষ্ট্রীয় শিক্ষার বিষয়ে যে কথা বলেছিলেন, যে প্রত্যাশা করেছিলেন, আজ দেশ তাকেই নতুন রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে পূর্ণ করছে।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ভারতে কৃষিক্ষেত্র এবং তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক যুক্ত জিনিসে নতুন মাত্রা যুক্ত হতে চলেছে। কিছুদিন আগে হওয়া কৃষি সংশোধনীতে কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খোলা হয়েছে । বহু বছর ধরে কৃষকদের যে দাবি ছিল, যে দাবিগুলো পূরণ করার জন্য কোন না কোন সময়ে প্রত্যেক রাজনৈতিক দল ওঁদের কথা দিয়েছিল, সেই সব দাবি পূরণ হয়েছে। অনেক বিচার বিবেচনার পরে ভারতীয় সংসদ কৃষি সংশোধনীকে আইনি স্বরূপ দিয়েছে। এই সংশোধনীর ফলে কৃষকদের অনেক সীমাবদ্ধতারই কেবল সমাপ্তি হয়নি, বরং ওঁরা নতুন অধিকার পেয়েছেন, নতুন সুযোগও পেয়েছেন। এই অধিকার অনেক কম সময়েই কৃষকদের অনেক সমস্যা কমাতে শুরু করে দিয়েছে। মহারাষ্ট্রের ধুলে জেলার কৃষক জিতেন্দ্র ভৈজী এই নতুন কৃষি আইনের ব্যবহার কিভাবে করেছেন তা আপনাদের সকলের জানা উচিত। জিতেন্দ্র ভৈজী ভুট্টার চাষ ও সেই ফসল সঠিক দামে ব্যবসায়ীদের বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ফসলের মোট মূল্য নির্ধারিত হয় প্রায় ৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা। জিতেন্দ্র ভাই প্রায় ২৫০০০ টাকা এডভান্সও পেয়েছিলেন। এটাই ঠিক করা হয়েছিল যে বকেয়া টাকা উনি ১৫ দিনের মধ্যে পেয়ে যাবেন। কিন্তু পরে পরিস্থিতি এমনই তৈরি হয়েছিল যে উনি বাকি টাকা পাননি। কৃষকের থেকে ফসল কিনে নাও, অথচ মাসের-পর-মাস টাকা দিও না, সম্ভবত ভুট্টা ক্রেতা বছরের পর বছর ধরে চলে আসা এই ধারাকেই অনুসরণ করেছিলেন। এভাবেই প্রায় চার মাস ধরে জিতেন্দ্র জির টাকা শোধ করা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সেপ্টেম্বরে পাশ হওয়া সংশোধনী যা কৃষি আইন হিসেবে রূপায়িত হলো, সেটাই ওঁর কাজে লাগলো। এই আইনে এটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে ফসল কেনার তিন দিনের মধ্যে কৃষককে পুরো মূল্য দিয়ে দিতে হবে, যদি এই মূল্য দেওয়া না হয় তাহলে কৃষক অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। এই আইনে আরও একটা বড় বিষয় রয়েছে যে, এই আইন অনুযায়ী কোন অঞ্চলের এসডিএম কে এক মাসের ভেতর কৃষকের অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে হবে। এখন যখন এরকম আইনের শক্তি আমাদের কৃষক বন্ধুদের কাছে আছে তাহলে ওঁদের সমস্যার সমাধান তো হওয়াই উচিৎ ছিল। উনি অভিযোগ করেছিলেন এবং কয়েক দিনের মধ্যেই ওঁর বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ আইনের সঠিক এবং সম্পূর্ণ জ্ঞানই জিতেন্দ্র জির শক্তি হল।
যে কোনও ক্ষেত্রই হোক, সব ধরনের ভুল বা গুজবের থেকে দূরে থেকে, সঠিক তথ্য প্রত্যেকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্বল হয়ে ওঠে। কৃষকদের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য রাজস্থানের বারাঁ জেলার বাসিন্দা মহম্মদ আসলাম জী এমন একটা কাজ করছেন। কিষান উৎপাদক সংস্থার সিইও ও তিনি। হ্যাঁ আপনারা ঠিকই শুনছেন কৃষিপণ্য উৎপাদক সংস্থার সিইও! আশা করি বড়ো বড়ো কোম্পানির সিইওরা জেনে খুশি হবেন যে দেশের দূর দূরান্তেও কিষাণ সংস্থার সিইও হয়ে উঠছেন অনেকেই। হ্যাঁ বন্ধুরা, মহম্মদ আসলাম জী নিজের কর্মক্ষেত্রের অন্যান্য অনেক কৃষকদের নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলেছেন। এই গ্রুপে প্রতিদিন তিনি আসপাশের বাজারের দর হালচাল কি তা কিষাণদের জানিয়ে দিচ্ছেন। ওঁর নিজের এফপিও ও চাষীভাইদের থেকে ফসল কেনে, তাই ওঁর এই প্রচেষ্টায় কৃষকদের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধে হয়।
বন্ধুরা, সচেতন হলেই সজীবতা গড়ে ওঠে। নিজের সচেতনতা দিয়ে হাজার হাজার মানুষের জীবন প্রভাবিত করার আরেক কৃষি উদ্যোগী বীরেন্দ্র যাদব জী। বীরেন্দ্র যাদব জী কিছুদিন অস্ট্রেলিয়ায় ছিলেন! দু বছর আগে তিনি দেশে ফিরে এখন হরিয়ানার কৈথল এ থাকেন। অন্যান্য কৃষকদের মতো তাঁরও ক্ষেতে পড়ে থাকা খড় নিয়ে সমস্যা হচ্ছিলো। এর সমাধানের জন্য ব্যাপক প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আজ ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে বীরেন্দ্রজীর কথা আলাদা ভাবে উল্লেখ কারণ ওঁর প্রচেষ্টা ব্যতিক্রমী। তা এক নতুন দিশা দেখিয়েছে। পড়ে থাকা বাড়তি খড়ের সমস্যার সমাধানে বীরেন্দ্রজী বিচালি আটি বাঁধার জন্য স্ট্র বেলার মেশিন কিনেছেন। এর জন্য তিনি কৃষি বিভাগের আর্থিক সহায়তাও পেয়েছেন। ঐ মেশিনের সাহায্যে তিনি বাড়তি খড়ের গাঁটরি বানানো শুরু করেছিলেন। এই গাঁটরি এগ্রো এনার্জি প্ল্যান্ট এবং পেপার মিলে বিক্রি করছেন। আপনারা শুনলে তাজ্জব হয়ে যাবেন বীরেন্দ্রজী ক্ষেতের ঐ বাড়তি খড় থেকে দু বছরে দেড় কোটি টাকারও বেশি ব্যবসা করেছেন এবং তার থেকে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা মুনাফা করেছেন। যে সব কৃষকেরা বীরেন্দ্রজীর ক্ষেত থেকে বাড়তি খড় তুলতেন তাঁদেরও উপকার হলো। আমরা আস্তাকুঁড় থেকে মণিকাঞ্চন বানানোর কথা শুনেছি, তবে বাড়তি খড় কাজে লাগিয়ে অর্থ ও পুণ্য অর্জনের এ এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ! আমার তরুণ বন্ধুরা বিশেষ করে কৃষিবিদ্যা নিয়ে যে লক্ষ লক্ষ ছাত্র পড়াশোনা করছেন তাঁদের উদ্দেশে বলছি আপনারা আপানাদের আশেপাশের গাঁয়ের কৃষকদের কে আধুনিক কৃষি পদ্ধতি, কৃষি সমস্যার যে সব সাম্প্রতিক সমাধান প্রক্রিয়া হয়েছে সে সম্পর্কে সচেতন করুন। এর সাহায্যে আপনি দেশে যে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে তার সহযোগী হয়ে উঠতে পারবেন।
আমার প্রিয় দেশবাসী, ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আমরা আলাদা আলাদা নানান রকম বিষয় নিয়ে কথা বলি। কিন্তু এমন একটা কথা এক বছর ধরে চলছে যা আমরা খুশি মনে আলোচনা করতে চাই না। প্রায় এক বছর হতে চললো বিশ্বে প্রথম করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের খবর জেনেছি। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত সারা বিশ্ব নানান উত্থান পতন দেখেছে। লক ডাউন পর্ব পেরিয়ে এখন ভ্যাক্সিন নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। কিন্তু করোনা নিয়ে যে কোনো রকম অসাবধানতা খুবই ভয়ংকর। করোনা নিয়ে আমাদের কঠোর লড়াই চালু রাখতে হবে৷
বন্ধুরা, কয়েকদিন বাদে ৬ই ডিসেম্বর বাবাসাহেব আম্বেদকরের পুণ্য তিথি। এই দিন বাবাসাহেবকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের প্রতি আমাদের কর্তব্য, সংবিধান একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের কি কি দায়িত্ব দিয়েছে সে সবও আরেকবার মনে করার সময়। দেশের বৃহত্তর ভাগে শীত ক্রমশ জাঁকিয়ে পড়ছে। অনেক জায়গায় বরফ পড়ছে। এই মরশুমে বাচ্চাদের, বয়স্কদের, অসুস্থ মানুষদের বাড়তি যত্ন নিতে হবে এবং নিজের স্বাস্থ্যের প্রতিও নজর রাখতে হবে। আমার খুব ভালো লাগে যখন দেখি মানুষ নিজের চারপাশের অসহায় মানুষের চাহিদার কথা খেয়াল রাখে। শীতার্তকে গরম জামাকাপড় দেওয়া এমনই একটা কাজ। আশ্রয়হীন পশুদেরও এই শীতে খুব কষ্ট হয়। অনেকে আবার এদিকেও খেয়াল রাখেন। আমাদের যুব সমাজ এসব ব্যাপারে বেশ আগ্রহের সঙ্গেই অংশগ্রহণ করে। বন্ধুরা, এর পরের ‘মন কি বাত’ এর সময় ২০২০ সাল শেষ হয়ে আসবে।নতুন অঙ্গীকার, নতুন বিশ্বাস নিয়ে আমরা অগ্রসর হবো। এখন আপনাদের নতুন নতুন পরামর্শ, ভাবনা আমার কাছে পাঠাতে থাকুন। আপনাদের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভকামনা জানাই। আপনারা সবাই সুস্থ থাকুন, দেশের জন্য কাজ করতে থাকুন। অনেক অনেক ধন্যবাদ!
***
CG/CB
(Release ID: 1676935)
Visitor Counter : 428
Read this release in:
Punjabi
,
Telugu
,
Assamese
,
English
,
Urdu
,
Marathi
,
Hindi
,
Manipuri
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Kannada
,
Malayalam