প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

ইন্ডিয়া এনার্জি ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 26 OCT 2020 7:01PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ২৬শে অক্টোবর, ২০২০

 

মাননীয় মার্কিন জ্বালানী সচিব মি. ড্যান ব্রাউলেত্তে,

মহামান্য সৌদি আরবের জ্বালানী মন্ত্রী, যুবরাজ আবদুলাজিজ,

আইএইচএস মার্কিটের ভাইস চেয়ারম্যান ড. ডেনিয়াল ইয়ারগিন,

আমার সহকর্মী শ্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান ,

আন্তর্জাতিক তেল ও গ্যাস শিল্পের কর্ণধাররা

নমস্কার !

ইন্ডিয়া এনার্জি ফোরাম সেরা উইকের চতুর্থ পর্বে আপনাদের সঙ্গ পেয়ে আমি আনন্দিত। আমি ড. ডেনিয়াল ইয়ারগিন-কে জ্বালানী ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের জন্য এই সুযোগে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি তাঁর নতুন বই দ্য নিউ ম্যাপ”-এর জন্য তাঁকে শুভেচ্ছা জানাই।

বন্ধুগণ,

এবছরের বিষয়টি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক – “পরিবর্তনশীল বিশ্বে ভারতে জ্বালানীর ভবিষ্যৎ। আমি আপনাদের নিশ্চিত করে বলতে পারি : ভারত, শক্তিতে ভরপুর ! ভারতের জ্বালানীর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল ও সুরক্ষিত। কেন এটা আমার মনে হচ্ছে, সেটা আপনাদের আমি ব্যাখ্যা করে বলছি।

বন্ধুগণ,

জ্বালানী ক্ষেত্রের জন্য এই বছরটা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। জ্বালানীর চাহিদা প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমে গেছে। মূল্যের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এর ফলে বিনিয়োগের সিদ্ধান্তে প্রভাব পড়েছে। প্রথম সারির আন্তর্জাতিক প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে আগামী কয়েক বছর বিশ্বজুড়ে জ্বালানীর চাহিদার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে এই সব সংস্থাগুলি যে পূর্বাভাস দিচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে, জ্বালানী ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারত, অগ্রগণ্য উপভোক্তা হতে চলেছে। ভারতে দীর্ঘ মেয়াদী ভিত্তিতে জ্বালানীর ব্যবহার প্রায় দ্বিগুণ হতে চলেছে।

বন্ধুগণ,

অনেক গুলি ক্ষেত্রে আমরা এই সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। যেমন ধরুন বিমান চলাচল ক্ষেত্র। ভারত হল তৃতীয় বৃহত্তম দেশ এবং দেশের অভ্যন্তরে বিমান পরিবহণের ক্ষেত্রে এদেশের বাজার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ৬০০টি ভারতীয় উড়ানের থেকে ২০২৪ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হবে ১২০০। এটা একটা বিরাট অগ্রগতি !

বন্ধুগণ,

ভারত বিশ্বাস করে যে জ্বালানী ক্ষেত্র নির্ভরশীল এবং আয়ত্ত্বাধীন হওয়া প্রয়োজন। যখন আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন হচ্ছে, সেই সময় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মনে করি জনসাধারণের জ্বালানী ক্ষেত্রের সাহায্যে ক্ষমতায়নের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে এবং সহজ জীবনযাত্রার দিকে আরো এগোনো যাবে। ভারতে ১০০ শতাংশ বৈদ্যুতিকরণ হয়েছে। রান্নার গ্যাসের ব্যবহার বেড়েছে। এই পরিবর্তনগুলো বিশেষ করে আমাদের গ্রামাঞ্চলে, আমাদের মধ্যবিত্ত শ্রেণির নাগরিকদের এবং ভারতের মহিলাদের জন্য সুবিধে হয়েছে।

বন্ধুগণ,

ভারতের জ্বালানী পরিকল্পনাটি শক্তি ক্ষেত্রে সাম্য নিশ্চিত করে। এক্ষেত্রে স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অঙ্গীকারকে নিশ্চিত করা হচ্ছে। এর অর্থ, আরো জ্বালানীর মাধ্যমে ভারতীয়দের জীবনযাত্রা উন্নত করা। কিন্তু কার্বন নিঃসরণ কম হবে।

বন্ধুগণ,

আমাদের জ্বালানী ক্ষেত্র উন্নয়ন কেন্দ্রিক, শিল্পবান্ধব এবং পরিবেশ সচেতন। আর তাই পুর্ননবিকরণযোগ্য জ্বালানীর উৎসের বিষয়ে ভারত, সব থেকে সক্রিয় রাষ্ট্র।

বন্ধুগণ,

বিগত ৬ বছরে ৩৬ কোটির বেশি এলইডি বাল্ব বিতরণ করা হয়েছে। এই এলইডি বাল্বগুলির দাম এক দশমাংশে কমিয়ে আনা হয়েছে। গত ৬ বছরে ১ কোটি ১০ লক্ষ স্মার্ট এলইডি স্ট্রীট লাইট লাগানো হয়েছে। এগুলির মাধ্যমে প্রায় ৬ হাজার কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ-এর সাশ্রয় হয়েছে। এই কর্মসূচীর মাধ্যমে বছরে ৪ কোটি ৫০ লক্ষ টন কার্বন ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ কমানো হয়েছে। তার ফলে গ্রীণ হাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমেছে। এগুলির মধ্য দিয়ে আমরা বছরে ২৪ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পেরেছি। এই সব উদ্যোগ গুলির ফলে পরিবেশ বান্ধব জ্বালানীর ক্ষেত্রে বিনিয়োগের বিষয়ে ভারত, সব থেকে আকর্ষণীয় বাজার হয়ে উঠেছে।

বন্ধুগণ,

যেমনটা আমি বলেছিলাম, ভারত, সব সময় বিশ্বের ভালো চায়। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতিকে সবসময় মেনে চলি। ২০২২ সালের মধ্যে পুর্ননবিকরণযোগ্য জ্বালানী উৎপাদনের ক্ষমতা ১৭৫ গিগাওয়াট করার পরিকল্পনা করেছি। আমরা আরো পরিকল্পনা করেছি যে, ২০৩০ সালের মধ্যে এই ক্ষমতা ৪৫০ গিগাওয়াটে বৃদ্ধি করব। বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলির তুলনায় ভারতে যথেষ্ট কম কার্বন নিঃসরণ হয়। এর সঙ্গে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চালিয়ে যাবো।

বন্ধুগণ,

বিগত ৬ বছরে ভারতে সংস্কারের কাজ দ্রুত গতিতে চলেছে। জ্বালানী ক্ষেত্রে অনেক যুগান্তকারী সংস্কার নেওয়া হয়েছে। ২০১৯এর ফেব্রুয়ারীতে উত্তোলন এবং লাইসেন্স নীতির ক্ষেত্রে সংস্কার আনা হয়েছে। রাজস্বের পরিবর্তে উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে আরো স্বচ্ছতা এবং পদ্ধতিগত দিক থেকে সংস্কারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। আমরা সংশোধনাগারের ক্ষমতা ২৫০০ থেকে বাড়িয়ে ২০২৫ সালের মধ্যে বছরে ৪০০০ লক্ষ মেট্রিকটন করার পরিকল্পনা করেছি। সরকার, দেশে গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এক দেশ, এক গ্যাস গ্রিডগড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি। যার মাধ্যমে গ্যাস ভিত্তিক অর্থনীতির দিকে ভারত এগোচ্ছে।

বন্ধুগণ,

দীর্ঘদিন ধরে সারা বিশ্ব অপরিশোধিত তেলের দামকে রোলার কোস্টারের মতো দেখে এসেছে। যুক্তি সংঙ্গত দাম নির্ধারণের জন্য এবার আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তেল এবং গ্যাস ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ও নমনীয় বাজার গড়ে তোলার জন্য আমরা একযোগে কাজ করবো।

বন্ধুগণ,

প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বাজারে গ্যাসের মূল্যে সমতা আনার জন্য এমাসের গোড়ায় আমরা প্রাকৃতিক গ্যাস বিপণন সংস্কার কর্মসূচী ঘোষণা করেছি। এর ফলে বৈদ্যুতিন পদ্ধতিতে নিলামের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাস বিক্রির ক্ষেত্রে আরো স্বাধীনতা পাওয়া যাবে। এবছরের জুন মাসে ভারতের প্রথম স্বয়ংক্রিয় জাতীয় স্তরে গ্যাস ব্যবসার প্ল্যাটফর্মের সূচনা করা হয়েছে। গ্যাসের বাজার দর নির্ধারণের জন্য এর ফলে সাধারণ একটি পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।

বন্ধুগণ,

আমরা আত্মনির্ভর ভারতের দিকে এগিয়ে চলেছি। আত্মনির্ভর ভারত, আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে গতির সঞ্চার করবে। জ্বালানীর সুরক্ষার বিষয়টি আমাদের উদ্যোগের কেন্দ্রে রয়েছে। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, আমাদের এই উদ্যোগের ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে। সঙ্কটের এই সময়ে আমরা দেখেছি তেল ও গ্যাসের সরবরাহ শৃঙ্খলে বিনিয়োগ আসছে। অন্য ক্ষেত্রগুলিতেও আমরা একই লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি।

বন্ধুগণ,

আমরা আন্তর্জাতিক স্তরে জ্বালানী সংস্থাগুলির সঙ্গে কৌশলগত এবং সর্বাঙ্গীন একটি উদ্যোগ গ্রহণ করছি। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির পারস্পরিক সুবিধের কথা বিবেচনা করে আমরা আমাদের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতি অনুসরণ করে জ্বালানী করিডর গড়ে তুলছি।

বন্ধুগণ,

সূর্যের আলো মানব জাতির প্রগতিকে আরো উজ্জল করে তুলেছে। সূর্য দেবতার রথ যেমন সাতটি ঘোড়া চালায় ভারতের জ্বালানীর পরিকল্পনাতেও সাতটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। পরিবর্তনের এই উপাদানগুলি হল :

১) গ্যাসভিত্তিক অর্থনীতির দিকে অগ্রগতির জন্য আমাদের উদ্যোগকে ত্বরান্বিত করা

২) মূলত পেট্রোলিয়াম ও কয়লা সহ জীবাশ্ম জ্বালানীর পরিবেশ বান্ধব ব্যবহার

৩) জৈব জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে দেশীয় সম্পদের ওপর আরো বেশি নির্ভর করা

৪) ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৫০ গিগাওয়াট পুর্ননবিকরণযোগ্য জ্বালানীর লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো

৫) কার্বন মুক্ত পরিবহণ ব্যবস্থার দিকে এগোনোর জন্য বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানো

৬) হাইড্রোজেন সহ নতুন নতুন জ্বালানীর ব্যবহার বাড়ানো

৭) সমস্ত জ্বালানীর ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটাল উদ্ভাবন পদ্ধতিতে নিয়ে আসা

 

বিগত ৬ বছর ধরে জ্বালানী নীতির এই বিষয়গুলির ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বন্ধুগণ,

ভারত এনার্জি ফোরাম সেরা সপ্তাহ শিল্প, সরকার এবং সমাজের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলবে। আমি আশাবাদী আরো উন্নত জ্বালানীর ভবিষ্যৎ পাওয়ার জন্য এই সম্মেলনের আলোচনাগুলি ফলপ্রসু হবে। আরো একবার আমি বলতে চাই, ভারতের শক্তি সারা বিশ্বকে শক্তিশালী করবে !

ধন্যবাদ।

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 

 

CG/CB/SFS



(Release ID: 1667709) Visitor Counter : 241