রাষ্ট্রপতিরসচিবালয়

জাতীয় শিক্ষা নীতিতে একটি ন্যায় সঙ্গত ও প্রাণবন্ত জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে : রাষ্ট্রপতি

Posted On: 19 SEP 2020 12:06PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি,  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০

 


জাতীয় শিক্ষা নীতির উদ্দেশ্যই হলো সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার সাধন করে একবিংশ শতাব্দীর চাহিদাগুলি পুরণ করা। একই সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থায় সকলের অংশগ্রহণ ও উৎকর্ষতার বিষয়গুলি অর্জন করা। সমাজের সকলের কাছে গুণগত মানের শিক্ষা ব্যবস্থা পৌঁছে দিয়ে একটি ন্যায় সঙ্গত ও প্রাণবন্ত জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি শ্রী রামনাথ কোবিন্দ। আজ “উচ্চ শিক্ষায় জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ কার্যকর” শীর্ষক পরিদর্শক সম্মালনের উদ্বোধনী ভাষণে একথা জানান তিনি।


কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রী এবং ডঃ কস্তুরি রঙ্গন সহ তাঁর দলের আন্তরিক প্রয়াসের প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ২ লক্ষ ৫০ হাজারেরও বেশি গ্রাম পঞ্চায়েত, ১২,০০০ –এরও বেশি স্থানীয় স্বশাসিত প্রশাসন এবং ৬৭৫টি জেলার সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য ব্যাপক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই নীতিতে সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে। তাই সমগ্র প্রক্রিয়ায় একেবারে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত বোঝাপড়ার অনুকূল বাতাবরণের বিষয়টি এই নীতির মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়।


উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে উৎসাহিত করে রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ বলেন, ভারতকে বিশ্বের জ্ঞান সমৃদ্ধ দশের মানচিত্রে জায়গা করে দিতে এই ধরণের প্রতিষ্ঠানগুলির বড় দায়িত্ব রয়েছে। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি মাপকাঠি হিসেবে উৎকর্ষতার দিক থেকে যে মান তৈরি করে তা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছে অনুসরণযোগ্য হয়ে উঠতে পারে বলেও তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রপতি জোর দিয়ে বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতির মৌলিক উদ্দেশ্যই হলো সৃজনশ্লীলতা ও স্বতন্ত্র চিন্তাভাবনার প্রয়োগ, যাতে স্থানীয়ভাবে সিদ্ধান্ত প্রণয়ন ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলিকে উৎসাহিত করা হয়। ভগবৎ গীতা তথা কৃষ্ণ ও অর্জুমের মধ্যে কথোপকথন থেকে উৎসাহিত হয়ে সে প্রসঙ্গের অবতারণা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, শিক্ষক সমাজ ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অবাধ যোগাযোগ ও পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা এই শিক্ষা নীতিকে সফল করে তুলতে বড় ভূমিকা নিতে পারে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় শিক্ষা নীতির কার্যকর রূপায়ণ সম্ভব হলে তক্ষশীলা ও নালন্দার সময় শিক্ষার ক্ষেত্রে ভারতের যে গৌরব ছিল তা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে।


রাষ্ট্রপতি শ্রী কোবিন্দ জাতীয় শিক্ষা নীতির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলির কথা উল্লেখ করে বলেন, এই নীতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে মেধা ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। মেধার ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংস্করণ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির কাছে ডিগ্রি প্রদান তথা ছাত্র-ছাত্রীদের মেধার ভিত্তিতে তাঁদের মাপকাঠি নির্ধারণে এক নতুন যুগের সূচনা করতে পারে। এমনকি মেধা ভিত্তিক এ ধরণের ব্যবস্থা ছাত্র-ছাত্রীদের খোলা মনে তাঁদের পছন্দের বিষয় পড়াশোনার জন্য বেছে নিতে তথা প্রয়োজন অনুসারে পঠন-পাঠন সময়িক বন্ধ রেখে পরবর্তী সময়ে তা পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রেও বড় সুযোগ করে দিয়েছে।
রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে জাতীয় শিক্ষা নীতির উদ্দেশ্যগুলির কথা উল্লেখ করে বলেন, ২০৩৫ সাল নাগাদ উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে মোট নাম নথিভুক্তিকরণের হার বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা এই লক্ষ্য পূরণে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে অনলাইন শিক্ষার ব্যবস্থার অসীম সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে যাঁরা সশরীরে উপস্থিত হতে পারেন না তাঁদের ক্ষেত্রেও অথবা অন্যান্য দেশের ছাত্র-ছাত্রীরাও এই ব্যবস্থার সুবিধা নিতে পারবেন। এক পরিসংখ্যান দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০১৮-১৯ এর সর্বভারতীয় উচ্চ শিক্ষা সম্পর্কিত এক সমীক্ষায় প্রকাশ পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের অংশগ্রহণভাবে হার তুলনামূলকভাবে বেশি। অবশ্য জাতীয় স্তরে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলিতে এবং প্রযুক্তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত কম। জাতীয় শিক্ষা নীতিতে এই বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিয়ে এক সার্বিক ও ন্যায় সঙ্গত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থায় এই ধরণের লিঙ্গ বৈষম্য দ্রুত সংশোধন করা প্রয়োজন। অবশ্য এই কাজে প্রতিষ্ঠানগুলির প্রধানের বড় ভূমিকা রয়েছে এবং জাতীয় শিক্ষা নীতির সফল রূপায়ণেও তাঁরা কার্যকর ভূমিকা নিতে পারেন বলে রাষ্ট্রপতি অভিমত প্রকাশ করেন।


শ্রী পোখরিয়াল গত ৭ই সেপ্টেম্বর এই একই বিষয়ের উপর রাষ্ট্রপতির পৌরহিত্যে রাজ্যপালদের সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সুদক্ষ নেতৃত্ব ও বিচক্ষণতার এক কৌশল হিসেবে জাতীয় শিক্ষা নীতি রূপায়ণ করা হচ্ছে। এই নীতি রূপায়ণের উদ্দেশ্যই হলো দেশে গুণগত মানের শিক্ষার প্রসার ঘটানো। এই নীতিতে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ভারতে যেমন ক্যাম্পাস খুলতে পারবে, তেমনই ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বিদেশে পঠন-পাঠন কেন্দ্র চালু করতে পারবে। পক্ষান্তরে এই ব্যবস্থা শিক্ষা ক্ষেত্রে ভারতকে এক সফট পাওয়ারে পরিণত করতে পারবে বলে শ্রী নিশাঙ্ক অভিমত প্রকাশ করেন।


শিক্ষা হলো যে কোনো সমাজের ভিত্তি এবং দেশের যুব সম্প্রদায়ের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে উল্লেখ করেন শ্রী পোখরিয়াল। তিনি আরও বলেন, শিশুদের সঠিক প্রতিপালনের শিক্ষা এক বড় মাধ্যম হিসেবে কাজ করে এবং পরবর্তী সময়ে শিক্ষাই একজন ব্যক্তি বিশেষের ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলে। তাই যে কোনো দেশের কাছে শিক্ষা নীতির ভূমিকা রয়েছে সেই দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা ও সঠিক দিশা নির্ধারণের ক্ষেত্রে। ২০২০-র জাতীয় শিক্ষা নীতিতে বিদ্যালয় ও উচ্চতর শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষা নীতির উদ্দেশ্যগুলির উপর গুরুত্ব দিয়ে শ্রী নিশাঙ্ক বলেন, এই নীতি রূপায়ণের ক্ষেত্রে যে সমস্ত বাধা বিপত্তি রয়েছে তা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শীঘ্রই দূর করা সম্ভব হবে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির প্রধানদের নতুন এই শিক্ষা নীতি সম্পর্কে আরও বেশি প্রচার করার জন্য অনুরোধ জানান। নতুন এই শিক্ষা নীতি রূপায়ণ প্রক্রিয়ায় বিচক্ষণতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিমত প্রকাশ করে শ্রী পোখরিয়াল বলেন, জাতীয় শিক্ষা নীতি দ্রুত রূপায়ণ সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সমস্ত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা কেন্দ্র, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক সমাজ এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।


এদিন এই ভার্চুয়াল সম্মেলনে সমস্ত কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ এবং আইআইটি, এনআইটি ও এপিএ-র অধিকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 



CG/SS/SKD



(Release ID: 1656812) Visitor Counter : 285