প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক কোশি রেল মহাসেতু জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেছেন


বিহারের যাত্রীদের সুবিধার্থে নতুন রেল লাইন এবং বৈদ্যুতিকীকরণ প্রকল্পের উদ্বোধন

কোভিড-১৯ এর সময়েও নিরলসভাবে রেলের কাজ করাকে প্রধানমন্ত্রী প্রশংসা করেছেন

কৃষি সংস্কার বিলের মাধ্যমে কৃষকরা মুক্তি পাবেন

Posted On: 18 SEP 2020 4:11PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০

 

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঐতিহাসিক কোশি রেল মহাসেতু জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেছেন এবং যাত্রীদের সুবিধার্থে বিহারে নতুন রেল লাইন ও বৈদ্যুতিকীকরণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন।


প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিহারে রেল যোগাযোগে নতুন একটি ইতিহাস সূচনা হ’ল। কোশি মহাসেতু, কিউল সেতু এবং বৈদ্যুতিকীকরণ প্রকল্প উদ্বোধনের ফলে ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এর ফলে, নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রকল্পগুলি শুধুমাত্র বিহারের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকেই উন্নত করবে না, এর ফলে পশ্চিমবঙ্গ এবং পূর্ব ভারতও উপকৃত হবে।


প্রধানমন্ত্রী নতুন ও আধুনিক এই ব্যবস্থার জন্য বিহারের জনসাধারণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এর ফলে, বিহার সহ পূর্ব ভারতের রেল যাত্রীরা উপকৃত হবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রাজ্যে অনেক নদী থাকায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যোগাযোগের সমস্যা হ’ত এবং মানুষকে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হত। শ্রী মোদী বলেছেন, এই সমস্যা সমাধানের জন্য পাটনা এবং মুঙ্গেরে চার বছর আগে ২টি মহাসেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এখন এই ২টি রেলসেতু উদ্বোধনের পর উত্তর এবং দক্ষিণ বিহারের মধ্যে যোগাযোগ আরও সহজ হল। এর ফলে, উত্তর বিহারে উন্নয়নে গতি আসবে।


প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সাড়ে আট দশক আগে বিধ্বংসী এক ভূমিকম্পে মিথিলা ও কোশি অঞ্চল বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। এই ২টি অঞ্চলই করোনা মহামারীর আবহে বর্তমানে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত। তিনি বলেছেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের কঠোর পরিশ্রমের ফলে আজ সুপৌল – আসানপুর – কুফা রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করা গেছে। এই শ্রমিকরা একটি সেতু নির্মাণের কাজে যুক্ত ছিলেন। মিথিলা ও কোশি অঞ্চলের মানুষের সমস্যার সমাধান করতে ২০০৩ সালে তদানিন্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং রেলমন্ত্রী শ্রী নীতিশ কুমার নতুন কোশি রেল প্রকল্পের পরিকল্পনা করেছিলেন। বর্তমান সরকারের আমলে এই প্রকল্পটি গতি পায় এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সুপৌল-আসানপুর-কুফা লাইনের কাজ শেষ হয়েছে। 


প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আজ সুপৌল, আরারিয়া এবং সহর্স জেলার জনসাধারণ সুপৌল ও আসানপুরের মধ্যে কোশি মহাসেতু দিয়ে নতুন রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় উপকৃত হবেন। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনসাধারণের জন্যও একটি বিকল্প রেলপথ তৈরি হল। এই মহাসেতু ৩০০ কিলোমিটার দূরত্বকে ২২ কিলোমিটারে কমিয়ে আনলো। এর ফলে, সমগ্র অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানের সুবিধা হবে। তিনি বলেছেন, এই প্রকল্পর ফলে বিহারের মানুষের সময় ও অর্থ দুই-ই সাশ্রয় হবে। 


শ্রী মোদী বলেছেন, কোশি মহাসেতুর মতো কিউল নদীর ওপর বৈদ্যুতিক ইন্টারলকিং ফেসিলিটি যুক্ত রেলপথ চালু হওয়ায় পুরো রেলপথে ঘন্টায় ১২৫ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চালানো যাবে। এর ফলে, হাওড়া-দিল্লি মেইন লাইনে ট্রেন চলাচলে সুবিধা হবে এবং রেল সফর অহেতুক বিলম্ব মুক্ত এবং নিরাপদ হবে।


প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গত ৬ বছরে নতুন ভারতের চাহিদা অনুসারে, ভারতীয় রেলকে তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে, আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের স্বপ্ন পূরণ হবে। তিনি বলেছেন, আজ ভারতীয় রেল আগের তুলনায় অনেক পরিচ্ছন্ন। ব্রডগেজ রেল লাইন এবং প্রহরী বিহীন লেভেল ক্রসিং সরিয়ে যোগাযোগের অন্য ব্যবস্থা করার ফলে রেলযাত্রা আরও সুখকর হয়েছে। ভারতের রেলের গতিও বেড়েছে। আত্মনির্ভরতা ও আধুনিকতার প্রতীক বন্দে ভারত ট্রেন ভারতে তৈরি হয়েছে।


শ্রী মোদী বলেছেন, রেলের আধুনিকীকরণের ব্যাপক সুফল বিহার পাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির মাধ্যমে মাধেপুরায় ইলেক্ট্রিক রেল ইঞ্জিন ফ্যাক্টরি এবং মারহাওড়ায় ডিজেল লোকো ফ্যাক্টরি গড়ে তোলা হয়েছে। এই ২টি প্রকল্পে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, বিহারের জনসাধারণ গর্ববোধ করতে পারেন এই ভেবে যে, দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী বৈদ্যুতিক রেল ইঞ্জিন তাঁদের রাজ্যেই তৈরি হয়েছে। এই রেল ইঞ্জিনের ক্ষমতা ১২ হাজার হর্স পাওয়ার। বৈদ্যুতিক রেল ইঞ্জিন মেরামতের জন্য বিহারে প্রথম লোকোশেড কাজ শুরু করেছে।


শ্রী মোদী বলেছেন, আজ বিহারে ৯০ শতাংশ রেল লাইনের বৈদ্যুতিকরণের কাজ শেষ হয়েছে। গত ৬ বছরে এই রাজ্যেই ৩ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি রেলপথে বৈদ্যুতিকরণ হয়েছে। ২০১৪ সালের আগে ৫ বছরে বিহারে ৩২৫ কিলোমিটার নতুন রেলপথ চালু হয়েছিল। ২০১৪ সালের পর দ্বিগুণেরও বেশি ৭০০ কিলোমিটার নতুন রেলপথ চালু হয়েছে। আরও ১ হাজার কিলোমিটার নতুন রেলপথ তৈরির কাজ চলছে। 


হাজিপুর - ঘোষওয়ার – বৈশালী রেলপথের সূচনা হওয়ায় দিল্লির সঙ্গে পাটনার সরাসরি রেল যোগাযোগ গড়ে উঠলো। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এর ফলে, বৈশালীতে পর্যটনের বিকাশ হবে এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ডেডিকেটেড ফ্রেইড করিডরের কাজ দ্রুতগতিতে হচ্ছে। এই প্রকল্পের ২৫০ কিলোমিটার বিহারের মধ্যে অবস্থিত। এই প্রকল্পটি শেষ হলে যাত্রীবাহী ট্রেনের দেরীতে চলাচল সমস্যা কমে যাবে। একই সঙ্গে, পণ্যবাহী ট্রেনেরও অহেতুক বিলম্বের সমস্যা দূর হবে।


করোনা মহামারীর সময়েও রেল কর্মীরা যেভাবে কাজ করে চলেছেন, প্রধানমন্ত্রী তার প্রশংসা করেছেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজের যোগান এবং শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে করে তাঁদের ফিরিয়ে আনার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ রেল করেছে। তিনি বলেছেন, করোনার সময়েই বিহার এবং মহারাষ্ট্রের মধ্যে প্রথম কিষাণ রেল চালু হয়েছে।


প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এর আগে বিহারে গুটিকয়েক মেডিকেল কলেজ ছিল। এর ফলে, বিহারের রোগীরা অনেক অসুবিধায় পড়তেন। রাজ্যের মেধাবী তরুণ-তরুণীরা ডাক্তারি পড়তে অন্য রাজ্যে যেতেন। আর আজ বিহারে ১৫টিরও বেশি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। যেগুলির বেশিরভাগই গত কয়েক বছরে তৈরি করা হয়েছে। দিন কয়েক আগে দ্বারভাঙ্গায় নতুন এইমস্ তৈরির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এর ফলে, বিহারে হাজার হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

কৃষি সংস্কার বিল

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,  দেশে কৃষি সংস্কারের ক্ষেত্রে গতকাল ছিল একটি ঐতিহাস দিন। আমাদের কৃষকরা কৃষি সংস্কার বিল পাশের ফলে বিভিন্ন বাধা থেকে মুক্ত হয়েছেন। দেশের কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য নতুন এই সংস্কারের ফলে বিক্রির আরও বিকল্প খুঁজে পাবেন বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই সংস্কারগুলির ফলে মধ্যস্বত্ত্বাভোগীদের থেকে কৃষকরা রক্ষা পাবেন। কারণ, এরা কৃষকদের আয়ের বড় একটি অংশ নিয়ে যেত। 


কৃষি সংস্কার বিলের বিষয়ে বিরোধী দলগুলি মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কয়েকজন লোক যাঁরা এই দেশকে দশকের পর দশক ধরে শাসন করেছেন, তাঁরা আজ এই বিষয়ে কৃষকদের ভুল বোঝাচ্ছেন। কৃষি পণ্য বাজার কমিটি আইনের পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি যেসব বিরোধী দলগুলি তাদের নির্বাচনী ইস্তাহারে করেছিল, আজ কৃষি বাজার সংক্রান্ত সেই পরিবর্তনগুলি করার পর তারাই এখন এর বিরোধিতা করছে। কৃষকরা ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের সুবিধা পাবেন না বলে যে প্রচার চালানো হচ্ছে, তা সর্বৈব মিথ্যা বলে উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেছেন, কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের মাধ্যমে উৎপাদিত শস্যের ন্যায্য দাম দিতে সরকার বদ্ধ পরিকর। সরকার আগের মতোই শস্য সংগ্রহের কাজ করবে। তিনি বলেছেন, নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হলে কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত শস্য দেশের যে কোনও বাজারে তাঁদের পছন্দ মতো দামে বিক্রি করতে পারবেন। কৃষি পণ্য বাজার কমিটি আইনের ক্ষতিকর প্রভাবের দিক বুঝতে পেরে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী এই আইনটি তাঁর রাজ্য থেকে প্রত্যাহার করেছেন। প্রধানমন্ত্রী কিষাণ কল্যাণ যোজনা, প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঞ্চাই যোজনা, নিমের আস্তরণ যুক্ত ইউরিয়া উৎপাদন, দেশ জুড়ে হিমঘর তৈরির উদ্যোগ এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বিনিয়োগের মতো সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করে বলেছেন, বর্তমানে কৃষি পরিকাঠামো তহবিল গড়ে তোলা হয়েছে।


প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কৃষকদের আয় বৃদ্ধির জন্য সরকার কাজ করে চলেছে। গৃহপালিত পশুদের বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচানোর জন্য দেশ জুড়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষকদের প্রতি এক স্পষ্ট বার্তায় তিনি আবেদন জানিয়েছেন, যাঁরা তাঁদের ভুল বোঝাচ্ছেন, তাঁদের বিষয়ে সতর্ক থাকুন। তিনি আরও বলেছেন, এইসব মানুষ কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য গলা ফাটালেও তাঁদের আসল উদ্দেশ্য কৃষকদের বিভিন্ন শৃঙ্খলে আটকে রাখা। কৃষকদের রোজগার যেসব মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা লুঠ করে নিয়ে যায়, এরা তাদের সমর্থনে কথা বলছেন। দেশের প্রয়োজনে এবং সময়ের চাহিদা মেটাতেই এই বিল পাশ করা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন।

 


CG/CB/SB



(Release ID: 1656336) Visitor Counter : 178