PIB Headquarters
azadi ka amrit mahotsav

এক উজ্জ্বল স্বীকৃতি

দীপাবলি ইউনেস্কো-র অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হল

प्रविष्टि तिथि: 10 DEC 2025 1:58PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫

 

আলোর উৎসব দীপাবলি মানবতার অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়েছে ইউনেস্কো-র ২০-তম আন্তঃ-সরকার কমিটির বৈঠকে। এই বৈঠক  ৮–১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত নয়াদিল্লির লালকেল্লায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটি এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ভারতের ১৬-তম উপাদান। ১৯৪-টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ এবং ইউনেস্কোর বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্কের সদস্যদের উপস্থিতিতে তালিকাভুক্তির এই স্বীকৃতি গৃহীত হয়। আলোর এই উৎসব এক জীবন্ত ঐতিহ্য, যা বিভিন্ন সম্প্রদায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে নবায়ন করে চলেছে, সামাজিক সংহতি শক্তিশালী করছে এবং উন্নয়নে অবদান রাখছে।

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী দীপাবলিকে UNESCO-র স্বীকৃতি জানানোয় স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দীপাবলি ভারতের সংস্কৃতি ও জীবনধারার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত এবং এটি আমাদের সভ্যতার আত্মাকে প্রতিফলিত করে।

ইউনেস্কো-র প্রতিনিধিত্বমূলক ICH তালিকায় কোনো উপাদান অন্তর্ভুক্ত করতে হলে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রকে একটি মনোনয়ন দলিলপত্র জমা দিতে হয়। প্রতি দুই বছর অন্তর প্রতিটি দেশ একটি করে উপাদান মনোনীত করতে পারে। ভারত ২০২৪–২৫ পর্বের জন্য ‘দীপাবলি’ উৎসবকে মনোনীত করেছিল।

ভারতের কাছে দীপাবলি কেবল একটি বার্ষিক উৎসবের চেয়েও অনেক বেশি -এটি লক্ষ লক্ষ মানুষের আবেগময় ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর মধ্যে বোনা একটি সজীব ঐতিহ্য। প্রতিবছর শহর, গ্রাম ও দূরদেশে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসীর ঘরে যখন প্রদীপ জ্বলে ওঠে, দীপাবলি আবারও উচ্ছ্বাস, পুনরাবৃত্তি এবং সংযোগের এক পরিচিত অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলে।

সংস্কৃতি মন্ত্রক এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এই অন্তর্ভুক্তি ভারতের Intangible cultural heritage  বা অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা আরও প্রসারিত করবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সমাজভিত্তিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করবে।

দীপাবলি, যা দিওয়ালি নামেও পরিচিত, কার্তিক অমাবস্যায় উদযাপিত হয়, যা সাধারণত অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে পড়ে। দীপাবলির মূল দর্শন হল, সকল মানুষের সমৃদ্ধি, নবায়ন এবং প্রাচুর্য্যের উদযাপন। এর অন্তর্ভুক্তিমূলক চরিত্র পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধকে উৎসাহিত করে এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যকে উৎসাহিত করে; ফলস্বরূপ, উৎসবের কোনও দিকই সামাজিক সংহতি এবং সাংস্কৃতিক বহুত্বের প্রতি শ্রদ্ধার নীতির লঙ্ঘন করে না।

দীপাবলির জনপ্রিয় কিংবদন্তি

* রামায়ণে, এটি চিহ্নিত করে প্রভু রাম, সীতা ও লক্ষ্মণের ১৪ বছরের বনবাস শেষে অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন এবং রাবণের বিরুদ্ধে তাঁদের বিজয়কে, যা প্রদীপ জ্বালিয়ে উদযাপন করা হয়েছিল।
* মহাভারতে, এটি পাণ্ডবদের বনবাস শেষে প্রত্যাবর্তনকে নির্দেশ করে।
* নরকা চতুর্দশীতে স্মরণ করা হয় শ্রীকৃষ্ণের নরকাসুর বধ, যা অশুভের অবসানের প্রতীক।
* বিশ্বাস করা হয়, দীপাবলির রাতে আলোকিত গৃহে অধ্যুষিত হন দেবী লক্ষ্মী।
* জৈন পরম্পরায়, ২৪-তম তীর্থঙ্কর মহাবীর দীপাবলির দিনই পাওয়াপুরী-তে নির্বাণ লাভ করেন। তাঁর শিষ্যরা, চোখে জল নিয়ে, তাঁকে না যেতে অনুরোধ করলে, মহাবীর তাঁদের অন্তরের আলো জ্বালাতে এবং আঁধার জয় করতে বলেন। জৈন ভক্তরা এই দিনটিকে ‘নির্বাণ দিবস’ হিসেবে উৎসাহের সঙ্গে পালন করেন।
* হিন্দু পুরাণ মতে, তারকাসুরের পুত্র দানব ত্রিপুরাসুর তিন নগর গঠন করে এমন বর লাভ করেছিল যে, একটিমাত্র বাণেই তাকে বধ করা সম্ভব। তারা ত্রাস সৃষ্টি করলে মহাদেব ‘ত্রিপুরান্তক’ রূপে এক বাণে তাদের বিনাশ করেন। এই বিজয় স্মরণে দীপাবলি বা দেব দীপাবলি পালিত হয়; ভক্তরা গঙ্গাস্নান, প্রদীপ প্রজ্বলন ও শিবপূজা করেন।
* মহারাষ্ট্রে, রাজা বালির আগমনকে স্মরণ করে দীপাবলি ন্যায় ও উদারতার প্রতীক হিসেবে উদযাপিত হয়।
* বাংলায়, ওড়িশা ও অসমে, দীপাবলির সঙ্গে কালীপূজা অনুষ্ঠিত হয়, যা রক্ষা ও অন্তর্গত শক্তির আহ্বান হিসেবে বিবেচিত।
* গোবর্ধন/অন্নকূট: কিছু অঞ্চলে শ্রীকৃষ্ণের গোবর্ধন পাহাড় উত্তোলন স্মরণ করা হয়, যা বিনয় ও কৃতজ্ঞতার চিরন্তন বার্তা বহন করে।

প্রদীপ প্রজ্বলনের পাশাপাশি, দীপাবলি-উৎসবে রয়েছে নানান বৈচিত্র্যময় আচার - রঙিন রঙোলি অঙ্কন, মিষ্টি প্রস্তুত করা, বাড়ি সাজানো, পূজা-অনুষ্ঠান সম্পাদন, উপহার বিনিময় এবং সমাজ-ভিত্তিক মিলনমেলার আয়োজন। এই উৎসব কৃষি, সংস্কৃতি ও পুরাণকে উদযাপন করে; বিভিন্ন অঞ্চলের নিজস্ব রীতি এর বহুমাত্রিক বৈচিত্র্যকে প্রতিফলিত করে। দীপাবলি নতুন সূচনা, নবায়ন এবং সামাজিক ঐক্যের প্রতীক, আশা, সমৃদ্ধি ও সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এর সারবত্তা প্রকাশ পায়। পাঁচ দিনের এই উৎসবের প্রতিটি দিনের রয়েছে স্বতন্ত্র তাৎপর্য ও সৌন্দর্য।

দীপাবলি দেশের সর্বত্র জীবিকা ও ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলার ধারাবাহিকতাকে শক্তিশালী করে। গ্রামীণ সম্প্রদায় প্রকৃতিকে সম্মান জানিয়ে ও কৃষি-চক্রকে চিহ্নিত করে নানান আচার পালন করেন। কুমোর, ফানুস নির্মাতা, সজ্জাশিল্পী, ফুলচাষি, ময়রা, স্বর্ণকার, বস্ত্রশিল্পী এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মতো কারিগর ও শিল্পীরা এই সময়ে অধিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ পান। তাঁদের কাজ ভারতের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দীপাবলি দান, উদারতা ও খাদ্যনিরাপত্তার মূল্যবোধকেও সুদৃঢ় করে; বহু সম্প্রদায় খাদ্য বিতরণ, অনুদান প্রদান এবং বয়োজ্যেষ্ঠ, দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী, কারাবন্দী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ আয়োজন করে থাকে।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পরিবেশ-রক্ষার দায়বদ্ধতা দীপাবলি উদযাপনের আলোচনায় ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সরকারি উদ্যোগ, যেমন CSIR-NEERI কর্তৃক “সবুজ আতশবাজি” উদ্ভাবন এবং ‘স্বচ্ছ দিওয়ালি’, ‘শুভ দিওয়ালী’-র মতো জাতীয় প্রচারাভিযান উৎসবের সাংস্কৃতিক সারমর্ম অক্ষুণ্ণ রেখে পরিবেশবান্ধব উদযাপনকে উৎসাহিত করেছে। ঘরবাড়ি, বাজার এবং জনসমাগমস্থল নির্মল করার সঙ্গে যুক্ত আচার পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনধারা গঠনে সহায়তা করে; একইসঙ্গে পরিবার ও বন্ধুদের মিলন সামাজিক ও মানসিক সুস্থতাকে সমৃদ্ধ করে।

দীপাবলির সাংস্কৃতিক পরিবেশ সুস্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্যের (SDGs) প্রতি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। দীপাবলি হল,  জীবিকা-সমর্থনের মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস, অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ ও কারুশিল্পের ধারায় লিঙ্গসমতা, সামাজিক বন্ধন ও পরিচ্ছন্নতা-চর্চার মাধ্যমে সুস্বাস্থ্য এবং সাংস্কৃতিক জ্ঞান-হস্তান্তরের মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষার প্রসার।

ইউনেস্কো-র Intangible Cultural Heritage List-এ দীপাবলির মনোনয়ন প্রক্রিয়া এক অন্তর্ভুক্তিমূলক, সম্প্রদায়-নির্ভর পন্থাকে সামনে আনে। সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনস্থ সঙ্গীত নাটক আকাদেমি দেশের নানা প্রান্তের পণ্ডিত, অনুশীলনকারী, শিল্পী, লেখক ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বহুমুখী একটি কমিটি গঠন করে। বিস্তৃত পরামর্শ-পর্বে হিমালয় থেকে সাগর, শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম, এমনকি প্রবাসী ভারতীয়, আদিবাসী গোষ্ঠী, তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের মানুষজন, কারিগর, কৃষক ও বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী-সহ নানান সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং দীপাবলির সাংস্কৃতিক গুরুত্ব তুলে ধরা  সামাজিক সম্মতি নিশ্চিত করে এবং দীপাবলির বৈচিত্র্য, দৃঢ়তা ও জীবন্ত ঐতিহ্য হিসেবে তার শক্তিকে তুলে ধরে।

ইউনেস্কোর Intangible Cultural Heritage List-এ দীপাবলির অন্তর্ভুক্তি অগনিত মানুষের ভক্তিভরে উদযাপন, ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখা কারিগরদের শ্রম ও দীপাবলির চিরন্তন মূল্যবোধের প্রতি এক হৃদয়স্পর্শী সম্মান। এটি বিশ্বকে জানায় যে ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কেবল স্মরণ করা হয় না - এটিকে ভালোবেসে জীবিত রাখা হয় ও আগামী প্রজন্মের হাতে সযত্নে অর্পণ করা হয়।

তথ্যসূত্র 

https://www.incredibleindia.gov.in/en/festivals-and-events/diwali

https://utsav.gov.in/major-festival/diwali

https://magazines.odisha.gov.in/Orissareview/2013/nov/engpdf/19-20.pdf

https://www.tamilnadutourism.tn.gov.in/events/deepavali

https://maharashtratourism.gov.in/festivals/diwali/

https://utsavapp.in/gyan/g/dev-deepavali-history-significance--rituals

Click here to see in PDF


****

 SSS/SS


(रिलीज़ आईडी: 2201681) आगंतुक पटल : 7
इस विज्ञप्ति को इन भाषाओं में पढ़ें: English , Urdu , हिन्दी