PIB Headquarters
জনজাতীয় গৌরব দিবস
ভারতের জনজাতি সম্প্রদায়ের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন
Posted On:
14 NOV 2025 12:08PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
মূল বিষয়
১৫ নভেম্বর জনজাতি সম্প্রদায়ের স্বাধীনতা সংগ্রামী বিরসা মুণ্ডার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জনজাতীয় গৌরব দিবস (আদিবাসী গর্বের দিন) হিসেবে পালিত হয়।
কেন্দ্রীয় জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রক ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জনজাতি আন্দোলন এবং বিদ্রোহকে স্মরণ করতে এবং তাদের সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে তুলে ধরতে ১১-টি জাদুঘর স্থাপন করছে।
জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রক 'আদি সংস্কৃতি' এবং 'আদি বাণী'-র মত অন্যান্য ডিজিটাল উদ্যোগের মাধ্যমে আদিবাসী শিল্পকলা, ভাষা এবং ঐতিহ্যকে তুলে ধরে।
সূচনা
উপনিবেশ-বিরোধী এবং জনজাতি সম্প্রদায়ের স্বাধীনতা সংগ্রামী বিরসা মুণ্ডার (যিনি ১৮৭৪ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন) জন্মবার্ষিকী স্মরণ করার জন্য ভারত প্রতি বছর ১৫ নভেম্বর জনজাতীয় গৌরব দিবস (আদিবাসী গর্বের দিন) উদযাপন করে। তাঁর জন্মের ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০২৪-২৫ সালটিকে 'জনজাতীয় গৌরব বর্ষ' হিসেবে পালন করা হচ্ছে। দেশজুড়ে এই বছরব্যাপী উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে, ১ নভেম্বর থেকে ১৫ নভেম্বরের এই এক পক্ষকাল বিশেষভাবে পালিত হচ্ছে বিরসা মুণ্ডা এবং ভারতের উপনিবেশ-বিরোধী সংগ্রামে অন্যান্য ভারতীয় জনজাতি সম্প্রদায়ের নেতাদের ত্যাগ ও সংগ্রামকে সম্মান জানাতে এবং দেশের আদিবাসী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সমৃদ্ধ বৈচিত্র্যকে উদযাপন করতে।
জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রক আদিবাসী মানুষদের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরে এমন বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করে। বর্তমানে চলমান জনজাতীয় গৌরব বর্ষ উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে, সারা দেশে বহু কর্মশালা, অনুষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে। সরকারের অন্যতম প্রধান একটি উদ্যোগ হল আমাদের জনজাতি সম্প্রদায়ের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য ১১-টি জাদুঘর স্থাপন করা।
জনজাতি স্বাধীনতা সংগ্রামী সংগ্রহালয় উদ্যোগ
ভারতের জনজাতি নেতারা অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসন এবং সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এই আন্দোলন আজকের ভারতকে রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকখানি অবদান রাখলেও, এদের মধ্যে অনেক বিদ্রোহ, অভ্যুত্থান ও আন্দোলন মূলধারার ভারতীয় ইতিহাসে এখনও কম গুরুত্বপ্রাপ্ত বা কম আলোচিত। সরকার আদিবাসী নেতাদের সম্পর্কে তথ্য সংরক্ষণ, নথিভুক্তকরণ এবং প্রচার করার জন্য এবং এই আন্দোলনগুলি সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করতে জাদুঘর স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জনজাতি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলিকে সহায়তা প্রকল্পের অধীনে, জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রক রাজ্য সরকারকে এই জাদুঘরগুলি স্থাপনের জন্য তহবিল সরবরাহ করে।
জাদুঘরগুলির বিস্তারিত তথ্য নিচে দেওয়া হল :

ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড এবং মধ্যপ্রদেশে ইতিমধ্যেই চারটি জাদুঘরের উদ্বোধন করা হয়েছে।
ছত্তিশগড়ের রায়পুরে অবস্থিত শহীদ বীর নারায়ণ সিং স্মারক ও জনজাতি স্বাধীনতা সংগ্রামী সংগ্রহালয়টি ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করেন। এটি উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ছত্তিশগড়ের জনজাতি সম্প্রদায়গুলির সংগ্রামকে তুলে ধরে।
এই জাদুঘরটি ৫৩.১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে, যার মধ্যে জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রক দ্বারা ৪২.৪৭ কোটি টাকা এবং রাজ্যের অংশ হিসেবে ১০.৬৬ কোটি টাকা অর্থায়ন করা হয়েছে। এখানে ১৬-টি গ্যালারি জুড়ে ৬৫০-টি ভাস্কর্য রয়েছে, সঙ্গে অনেক ডিজিটাল ইনস্টলেশনও আছে। এর মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল স্ক্রিন ও ডিসপ্লে, টপোগ্রাফিক প্রোজেকশন মানচিত্র, অডিও-ভিজ্যুয়াল ডিসপ্লে, একটি এআই-ফটো বুথ, একটি কার্ভ স্ক্রিন এবং একটি আরএফআইডি ডিজিটাল স্ক্রিন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সময় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী বীর নারায়ণ সিং-এর একটি মূর্তির উন্মোচন করেন, আদি শৌর্য শিরোনামে একটি ই-বুকলেট প্রকাশ করেন, এবং শহীদ-এর বংশধরদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

চিত্র ১ - ছত্তিশগড়ে অবস্থিত শহীদ বীর নারায়ণ সিং স্মারক ও জনজাতি স্বাধীনতা সংগ্রামী সংগ্রহালয়টি ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করেন।
এই জাদুঘরটি ভারতের জনজাতি ঐতিহ্যের অকথিত বীরদের সম্মান জানায় এবং:
ব্রিটিশ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বীর নারায়ণ সিং-এর নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলন ও তাঁর আত্মবলিদানের ইতিহাস তুলে ধরে।
হলবা ক্রান্তি, সরগুজা ক্রান্তি, ভোপালপট্টনম ক্রান্তি, পারলকোট ক্রান্তি, তারাপুর ক্রান্তি, মেরিয়া ক্রান্তি, কোই ক্রান্তি, লিঙ্গাগিরি ক্রান্তি, মুরিয়া ক্রান্তি এবং গুন্ডাধুর ও লাল কালিন্দ্র সিং-এর নেতৃত্বে পরিচালিত আইকনিক ভূমকাল ক্রান্তির মত প্রধান জনজাতি বিদ্রোহগুলি অন্তর্ভুক্ত করে।
জনজাতি গ্রামের কাঠামো, বিশ্বাস এবং সংস্কৃতি প্রদর্শন করে।
১৮৭৮ সালের রানি চো-রিস ক্রান্তিকে বিশেষভাবে তুলে ধরে, যিনি নারীদের নেতৃত্বে প্রথম বিক্ষোভের সূত্রপাত করেছিলেন।
ঝান্ডা সত্যাগ্রহ এবং জঙ্গল সত্যাগ্রহ প্রদর্শন করে, যা দেখায় যে জনজাতি সম্প্রদায়গুলি কীভাবে মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল।
বিনঝওয়ার জনজাতির নারায়ণ সিং ছত্তিশগড়ের রায়পুর জেলার সোনায়খান-এর জমিদার ছিলেন। ১৮৫৬ সালে, যখন ব্রিটিশদের দ্বারা খাদ্যশস্য মজুত করার কারণে ওড়িশায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, তখন তিনি ক্ষুধার্ত মানুষদের খাওয়ানোর জন্য ব্রিটিশ শস্যভাণ্ডারের তালা ভেঙে দেন। ব্রিটিশরা তাঁকে গ্রেফতার করে এবং রায়পুর জেলে বন্দি করে। বীর নারায়ণ সিং সেখান থেকে পালিয়ে যান এবং নিজের একটি বাহিনী গঠন করেন।
১৮৫৬ সালের ২৯ নভেম্বর, নারায়ণ সিং-এর সৈন্যদের কাছে ব্রিটিশ বাহিনী পরাজিত হয়েছিল। তবে, পরে ব্রিটিশরা আরও বৃহত্তর বাহিনী নিয়ে ফিরে আসে, এবং নারায়ণ সিং ধরা পড়েন। ১৮৫৭ সালের ১০ ডিসেম্বর, তাঁকে একটি মোড়ে নির্মমভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
ভগবান বিরসা মুণ্ডা জনজাতি স্বাধীনতা সংগ্রামী সংগ্রহালয়
ভগবান বিরসা মুন্ডা জনজাতি স্বাধীনতা সংগ্রামী সংগ্রহশালা, রাঁচি, ঝাড়খণ্ড
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর তারিখে রাঁচি, ঝাড়খণ্ডে ভগবান বিরসা মুন্ডা জনজাতি স্বাধীনতা সংগ্রামী সংগ্রহশালার উদ্বোধন করা হয়েছিল।
ঝাড়খণ্ডের উল্লিহাতু গ্রামে জন্মগ্রহণকারী বিরসা মুন্ডা উলগুলান বা "মহা বিদ্রোহ" (১৮৯৯–১৯০০) এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন - যা ছিল জনজাতিদের স্ব-শাসন এবং খুঁটকাটি (গোষ্ঠীগত ভূমি অধিকার) পুনরুদ্ধার করার জন্য একটি তীব্র আন্দোলন। একজন আধ্যাত্মিক সংস্কারক ও স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে, তিনি ব্রিটিশ ভূমি আইন এবং সামন্ততান্ত্রিক শোষণের বিরুদ্ধে মুন্ডা উপজাতিদের ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। "ধরতি আবা" ("পৃথিবীর পিতা") নামে পরিচিত বিরসা মুন্ডা ঔপনিবেশিক প্রভাবমুক্ত একটি নৈতিক, স্বশাসিত সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন। বস্তুত, ২৫ বছর বয়সে তিনি রাঁচি জেলে বন্দী হন এবং সেখানেই শহিদ হন।
বাদল ভোই রাজ্য জনজাতি স্বাধীনতা সংগ্রামী সংগ্রহশালা
মধ্যপ্রদেশের ছিঁদওয়াড়াতে বাদল ভোই রাজ্য জনজাতি স্বাধীনতা সংগ্রামী সংগ্রহশালাটি ২০২৪ সালের ১৫ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয়েছিল।
বাদল ভোই ১৮৪৫ সালে ছিঁদওয়াড়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে, ১৯২৩ সালে হাজার হাজার জনজাতি মানুষ কালেক্টরের বাংলোর সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এই প্রতিবাদের ফলস্বরূপ লাঠিচার্জ হয় এবং ভোইকে গ্রেপ্তার করা হয়। কয়েক বছর পর, ১৯৩০ সালের আগস্ট মাসে, বন আইন ভাঙার অভিযোগে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাঁকে আবার রামাকোনা থেকে গ্রেপ্তার করে। তিনি জীবনের শেষ বছরগুলি জেলে কাটান এবং জানা যায় যে ১৯৪০ সালে ব্রিটিশরা তাঁকে বিষ প্রয়োগে শহীদ করে।
রাজা শঙ্কর শাহ এবং কুনওয়ার রঘুনাথ শাহ জনজাতি স্বাধীনতা সংগ্রামী সংগ্রহশালা
মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে রাজা শঙ্কর শাহ এবং কুনওয়ার রঘুনাথ শাহ জনজাতি স্বাধীনতা সংগ্রামী সংগ্রহশালাটি ২০২৪ সালের ১৫ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয়েছিল।
গন্ড রাজ্যের রাজা নিজাম শাহ-এর বংশধর রাজা শঙ্কর শাহ এবং কুনওয়ার রঘুনাথ শাহ, ১৮৫৭ সালের ঘটনাবলীর সময় ব্রিটিশ শাসনের সক্রিয় বিরোধিতা করেছিলেন। অহিংসার প্রতি তাঁদের প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও, এই দক্ষ কবিরা তাঁদের কবিতাকে ব্রিটিশ প্রভাব প্রতিরোধের এক শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। রাজা শাহ এবং তাঁর পুত্র কুনওয়ার রঘুনাথ শাহকে ব্রিটিশরা বন্দী করে ১৮৫৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয়।
জনজাতীয় গৌরব বর্ষ উদযাপন
জনজাতিদের পরিচিতি, তাদের প্রচলিত জ্ঞান-পদ্ধতি তুলে ধরতে এবং জনজাতিদের ক্ষমতায়নের জন্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে দেশজুড়ে এই বিশেষ 'জনজাতীয় গৌরব বর্ষ'-এর এক পক্ষকাল উদযাপন করা হচ্ছে।
এই এক পক্ষকাল চলাকালীন দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক, শিক্ষামূলক এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এগুলির মধ্যে রয়েছে :

উপজাতিদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রচারকারী অন্যান্য উদ্যোগ
ভারত সরকার জনজাতি সম্প্রদায়গুলির সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিভিন্ন প্রকল্প এবং উদ্যোগের মাধ্যমে প্রচার করে। এর লক্ষ্য হল তাদের অনন্য পরিচিতি সংরক্ষণ করা এবং তাদের মূলধারার ভারতীয় চেতনা ও ইতিহাসে প্রতিষ্ঠিত করা।
এগুলির মধ্যে রয়েছে :

উপসংহার
জনজাতীয় গৌরব দিবস সমাজের একটি বৃহৎ এবং মূলত প্রান্তিক অংশ - অর্থাৎ জনজাতি মানুষদের - অবদান, ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। এই দিবস এবং জনজাতি গৌরব বর্ষের মাধ্যমে বিরসা মুন্ডার ঐতিহ্যকে স্মরণ করে এবং অন্যান্য উদ্যোগের পাশাপাশি, এগারোটি জনজাতি স্বাধীনতা সংগ্রামী সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করে ভারত সরকার এই সম্প্রদায়ের সংগ্রাম ও অর্জনগুলিকে জাতির সামূহিক চেতনার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সচেষ্ট। সম্মিলিতভাবে এই সমস্ত প্রচেষ্টা 'এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত'-এর স্বপ্নকে বারবার নিশ্চিত করে - যে ঐক্যবদ্ধ জাতি তার সমস্ত সম্প্রদায়ের শক্তি ও আত্মাকে সম্মান জানায়।
তথ্যসূত্র
Press Information Bureau:
Others:
Click here to see pdf
SSS/AS...
(Release ID: 2190142)
Visitor Counter : 4