প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

ইমার্জিং সায়েন্স টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন কনক্লেভ ২০২৫ – এ ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী

Posted On: 03 NOV 2025 11:13AM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ০৩ নভেম্বর, ২০২৫ 

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ নতুন দিল্লির ভারত মণ্ডপম্‌ - এ ইমার্জিং সায়েন্স টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন কনক্লেভ (ইএসটিআইসি) ২০২৫ – এ ভাষণ দিলেন। এই সম্মেলনে সমবেত দেশ-বিদেশের বিজ্ঞানী, শিক্ষা জগতের প্রতিনিধি, উদ্ভাবক এবং অভ্যাগতদের স্বাগত জানান তিনি। আইসিসি মহিলা বিশ্বকাপ ২০২৫ – এ ভারতের অনবদ্য জয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই প্রথম দেশ মহিলা বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হ’ল। দলের প্রতিটি সদস্যকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি। তাঁদের সাফল্য দেশের যুব প্রজন্মের কাছে প্রেরণার উৎস বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, দেশের সবচেয়ে গুরুভার যোগাযোগ উপগ্রহ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা গতকালই নতুন এক মাইলফলক স্পর্শ করেছে। আজকের দিনটিও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একবিংশ শতকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনার নতুন ধারাগুলির অভিমুখ স্থির করতে সারা বিশ্বের বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বোঝাপড়া গড়ে ওঠা দরকার। এই সম্মেলন আয়োজনের সার্থকতা এখানেই। বিভিন্ন মন্ত্রক, বেসরকারি ক্ষেত্র এবং শিক্ষার্থী মহল এর আয়োজনে যেভাবে এগিয়ে এসেছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সমবেত বিশিষ্ট জনেদের মধ্যে একজন নোবেলজয়ীর উপস্থিতি এই সম্মেলনে বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে। 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একবিংশ শতকে সারা বিশ্বের চালচিত্র যেভাবে পাল্টে যাচ্ছে, তা অভূতপূর্ব। এই রূপান্তরের গতি সরলরৈখিক নয়। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনার ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে চলেছে ভারত। উদাহরণ-স্বরূপ, প্রধানমন্ত্রী গবেষণা খাতে অর্থায়নের বিষয়টি তুলে ধরেন। বহুদিন ধরে প্রচলিত ‘জয় জওয়ান, জয় কিষাণ’ শব্দ বন্ধের সঙ্গে বর্তমানে ‘জয় বিজ্ঞান’ এবং ‘জয় অনুসন্ধান’ শব্দ বন্ধগুলিও আরও বেশি তাৎপর্যবাহী হয়ে উঠছে। সেকথা মাথায় রেখেই ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে গবেষণা ও উদ্ভাবনার প্রসারে গড়ে তোলা হয়েছে অনুসন্ধান ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন। এর পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী গবেষণা, বিকাশ ও উদ্ভাবনা প্রকল্প চালু করার কথা ঘোষণা করেন। এ বাবদ বরাদ্দ হয়েছে ১ লক্ষ কোটি টাকা। দেশে এই প্রথম অত্যন্ত ঝুঁকিবহুল এবং বিশেষভাবে প্রভাব ফেলতে সক্ষম গবেষণা ক্ষেত্রে এত বেশি মূলধনের সংস্থান করা হয়েছে বলে তিনি জানান। দেশে আধুনিক উদ্ভাবনা পরিমণ্ডল তৈরি করতে গবেষণার কাজ সহজে সম্পন্ন করার উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। এজন্য আর্থিক বিধি ও ক্রয় নীতিও পরিমার্জিত হয়েছে। গবেষণা ক্ষেত্রে অর্জিত ধারণার বিপণনের দিকেও বিশেষভাবে লক্ষ্য দিচ্ছে সরকার। বিগত দশকে ভারতে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে ব্যয়ের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে, মেধাস্বত্ত্বের ক্ষেত্রে নিবন্ধন ১৭ গুণ হয়েছে এবং ভারত বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম স্টার্টআপ পরিমণ্ডলের দেশ। ভারতের সেমিকন্ডাক্টর ক্ষেত্র নতুন দিশায় এগিয়ে চলেছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। জৈব – অর্থনীতির ক্ষেত্রেও ভারতের আদান-প্রদানের পরিসর ২০১৪’র ১০ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে বর্তমানে ১৪০ বিলিয়ন ডালারে দাঁড়িয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। 
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গী বজায় রাখলে সামগ্রিক সাফল্যের পরিসরে অনেক দূর এগোনো সম্ভব বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি ভারতের বিগত ১০-১১ বছরের যাত্রার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ভারত বর্তমানে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কেবলমাত্র উপভোক্তা নয়, সামগ্রিক চিত্রটা পরিবর্তিত হয়েছে প্রযুক্তির কল্যাণে। কোভিড অতিমারীর সময়ে অতিদ্রুত এদেশে প্রতিষেধক তৈরি হয়েছে এবং বিশ্বের বৃহত্তম টিকাকরণ কর্মসূচির সম্পাদনও হয়েছে এই দেশে। 
বিস্তৃত পরিসরে এই ধরনের সাফল্যের মূলে রয়েছে ডিজিটাল জনপরিকাঠামো, একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২ লক্ষেরও বেশি গ্রাম পঞ্চায়েত অপ্টিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়েছে এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি হাতের নাগালে পেয়ে যাচ্ছেন প্রতিটি নাগরিক। 
ভারতের মহাকাশ কর্মসূচির মধ্যে চন্দ্র ও মঙ্গল অভিযান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, আবার অন্যদিকে, মহাকাশ প্রযুক্তিকে কৃষক ও মৎস্যজীবীদের পরিষেবা প্রদানেও কাজে লাগাচ্ছে এই দেশ। 
মহাকাশ অভিযানে দেশের সাফল্য নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে তিনি গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লার আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র পরিক্রমা ঘিরে যে উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঞ্চার হয়েছিল, তা তুলে ধরেন। বিজ্ঞান ও গবেষণা ক্ষেত্রে নবীন প্রজন্মকে আরও উৎসাহিত করার লক্ষ্যে দেশের প্রায় ১০ হাজার অটল টিঙ্কারিং ল্যাব গড়ে তোলা হয়েছে এবং আরও ২৫ হাজার এই ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দেশে বহু নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে এবং নতুন শিক্ষা নীতির কল্যাণে স্থানীয় ভাষায় বিজ্ঞান পড়ার সুযোগ পাচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। 
তরুণ গবেষকদের সহায়তায় প্রাইম মিনিস্টার্স রিসার্চ ফেলোশিপ এক সফল পদক্ষেপ বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। এর আওতায় আগামী ৫ বছর ১০ হাজার ফেলোশিপ দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। 
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রয়োগে ন্যায় ও অন্তর্ভুক্তির আদর্শ প্রতিফলিত হওয়া উচিৎ বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। ইন্ডিয়া এআই মিশনের আওতায় ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি নিয়োগ করা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ন্যায়সঙ্গত প্রয়োগ সুনিশ্চিত করতে এআই গভর্ন্যান্স ফ্রেমওয়ার্ক খুব শীঘ্রই চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ২০২৬ – এর ফেব্রুয়ারি’তে ভারতে গ্লোবাল এআই সামিট – এর আয়োজন হবে বলেও তিনি ঘোষণা করেন। 
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে আরও যে বিষয়গুলি উপর জোর দিয়েছেন, তার মধ্যে রয়েছে – নিছক খাদ্য নিরাপত্তার পরিসর থেকে ধীরে ধীরে পুষ্টিগত সুরক্ষার দিকে অগ্রাধিকারের প্রসঙ্গ। সারা বিশ্বে অপুষ্টির মোকাবিলায় ভারতে পরবর্তী প্রজন্মের বায়ো-ফর্টিফায়েড শস্যবীজ তৈরি করা সম্ভব কিনা, তা খতিয়ে দেখার আবেদন জানান প্রধানমন্ত্রী। একইভাবে, কম দামে মাটির উর্বরতা বজায় রাখার প্রণালী গড়ে তোলার বিষয়টিও বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে বলে তিনি উল্লেখ করেন। পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও একই ধরনের চিন্তাভাবনা দরকার বলে তিনি মনে করিয়ে দেন। 
অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ডঃ জিতেন্দ্র সিং, ভারত সরকারের বিজ্ঞান বিষয়ক প্রধান পরামর্শদাতা অধ্যাপক অজয় কুমার সুদ, নোবেল জয়ী স্যর অ্যান্ড্রে জেইম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

 

SC/AC/SB


(Release ID: 2185809) Visitor Counter : 9