প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

নতুন দিল্লিতে আন্তর্জাতিক আর্য মহাসম্মেলন ২০২৫-এ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 31 OCT 2025 7:16PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৩১ অক্টোবর ২০২৫

 

গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল আচার্য দেবব্রতজি, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তজি, জ্ঞান জ্যোতি মহোৎসব আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান সুরেন্দ্র কুমার আর্যজি, ডিএভি কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি পুনম সুরিজি, প্রবীণ আর্য সন্ন্যাসী স্বামী দেবব্রত সরস্বতীজি, বিভিন্ন আর্য প্রতিনিধি সভার সভাপতি ও সহ-সভাপতি, দেশ ও বিশ্বজুড়ে আগত আর্য সমাজের সকল নিবেদিতপ্রাণ সদস্য, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ!

শুরুতেই, দেরিতে পৌঁছানোর জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আজ সর্দার সাহেবের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী। একতা নগরের ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’তে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল এবং সেই অনুষ্ঠানের কারণে আমি এখানে পৌঁছাতে দেরি করেছি। সময়মতো পৌঁছাতে না পারার জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত এবং এর জন্য আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইছি। অনুষ্ঠানের শুরুতে আমরা যে মন্ত্রগুলি শুনেছি সেগুলির শক্তি এবং প্রাণশক্তি এখনও আমাদের সকলের মধ্যে অনুভূত হচ্ছে। যখনই আমি আপনাদের মধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছি, তখনই এই শক্তি আমাকে একটি ঐশ্বরিক এবং অসাধারণ অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ করেছে। এটি স্বামী দয়ানন্দজির আশীর্বাদ, এটি তাঁর আদর্শের প্রতি আমাদের সম্মিলিত শ্রদ্ধা, এবং তা আপনাদের মতো সকল চিন্তাবিদদের সঙ্গে আমার অনেক দশকের দীর্ঘ ব্যক্তিগত বন্ধনের ফল যে আমি আপনাদের মধ্যে থাকার সুযোগ পাচ্ছি। যখনই আমি আপনাদের সঙ্গে দেখা করি এবং কথা বলি, তখনই আমি এক অনন্য শক্তি এবং অনুপ্রেরণায় ভরে উঠি। আমাকে আরও জানানো হয়েছে যে এরকম আরও নয়টি হল তৈরি করা হয়েছে, যেখানে আমাদের সমস্ত আর্য সমাজের সদস্যরা ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানটি দেখছেন। যদিও আমি তাঁদের দেখতে পাচ্ছি না, তবুও এখান থেকে তাঁদের প্রতি আমার প্রণাম জানাচ্ছি।

বন্ধুগণ,

গত বছর, গুজরাটে দয়ানন্দ সরস্বতীজির জন্মস্থানে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল। আমি ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে সেই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছিলাম। তার আগে, দিল্লিতেই মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীজির ২০০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন সমারোহের  উদ্বোধন করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। সেদিনের সেই বৈদিক মন্ত্রের শক্তি, সেই সময়ের হবনযজ্ঞ অনুষ্ঠানের পবিত্র পরিবেশের স্মৃতি আমার মনে এতোই টাটকা যে মনে হচ্ছে যেন গতকালের কথা।

বন্ধুগণ,

সেই অনুষ্ঠানে আমরা সম্মিলিতভাবে ২০০ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সম্পূর্ণ দুই বছর ধরে ‘বিচার যজ্ঞ’ হিসেবে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমি আনন্দের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে এই ‘অখণ্ড বিচার যজ্ঞ’ গত দুই বছর ধরে কোনও বাধা ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। সময়ে সময়ে, আমাকে আপনাদের বিভিন্ন প্রচেষ্টা এবং কর্মসূচি সম্পর্কেও জানানো হয়েছে। এবং আজ, আবারও, আর্য সমাজের ১৫০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই উদযাপনে আমাকে বিনীত আধ্যাত্মিক অবদান রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আমি স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীজির চরণে প্রণাম করছি এবং তাঁকে আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাচ্ছি। এই আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলনে আপনাদের সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। এই উপলক্ষে, আমরা একটি বিশেষ স্মারক মুদ্রা প্রকাশ করার সৌভাগ্যও পেয়েছি।

বন্ধুগণ,

আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠার ১৫০তম বার্ষিকী কেবল কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায় বা সম্প্রদায়ের সঙ্গে  সম্পর্কিত একটি উপলক্ষ নয়। এটি ভারতের বৈদিক পরিচয়ের সঙ্গে  গভীরভাবে জড়িত একটি উপলক্ষ। এটি এমন একটি উপলক্ষ যা সেই মহান ভারতীয় ধারণাকে প্রতিফলিত করে, যা গঙ্গার শাশ্বত প্রবাহের মতো এবং যা আত্মশুদ্ধির শক্তি ধারণ করে। এই উদযাপন সেই গৌরবময় ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত যা সামাজিক সংস্কারের মহান ঐতিহ্যকে ক্রমাগত এগিয়ে নিয়ে গেছে এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় অগণিত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বৌদ্ধিক শক্তি প্রদান করেছে। লালা লাজপত রায়, শহীদ রাম প্রসাদ বিসমিল এবং আরও অনেক বিপ্লবীর মতো মহান দেশপ্রেমিকরা আর্য সমাজের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন এবং স্বাধীনতার জন্য তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত, দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে আর্য সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাজনৈতিক কারণে প্রকৃত স্বীকৃতি পায়নি।

বন্ধুগণ,

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই, আর্য সমাজ একনিষ্ঠ দেশপ্রেমিকদের সংগঠন। আর্য সমাজ সর্বদা সাহসের সাথে এবং নির্ভীকভাবে ভারতীয়ত্বের সারমর্ম সম্পর্কে কথা বলেছে। আর্য সমাজ ভারতের বিরোধিতাকারী প্রতিটি ধারণাকে ক্রমাগত চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে, তা সে বিদেশী মতাদর্শ, বিভেদমূলক মানসিকতা, অথবা সাংস্কৃতিক দূষণ চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা থেকে আসুক না কেন। আমি ঐকান্তিকভাবে সন্তুষ্ট যে আজ, আর্য সমাজ তাঁর ১৫০ বছর পূর্ণ করার পাশাপাশি, জাতি এবং সমাজ একসঙ্গে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীজির মহান আদর্শের প্রতি এত দুর্দান্তভাবে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।

বন্ধুগণ,

আর্য সমাজের অনেক মহান ব্যক্তিত্ব, যেমন স্বামী শ্রদ্ধানন্দ, যাঁরা তাঁদের আধ্যাত্মিক জাগরণ এবং সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে ইতিহাসের গতিপথকে এক নতুন দিকনির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁদের শক্তি এবং আশীর্বাদ এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমাদের সঙ্গে আধ্যাত্মিকভাবে উপস্থিত। আমি এই পবিত্র মঞ্চ থেকে এই সকল মহান আত্মার প্রতি প্রণাম জানাই এবং তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই।

বন্ধুগণ,

আমাদের ভারতবর্ষ অসংখ্য দিক থেকে অনন্য। এই পবিত্র ভূমি, এর সভ্যতা, এর বৈদিক ঐতিহ্য যুগ যুগ ধরে চিরন্তন। কারণ যখনই নতুন চ্যালেঞ্জ আসে, যখনই সময় নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করে, তখনই কোন মহান আত্মা, কোন ঋষি, মহর্ষি, অথবা দূরদর্শী আমাদের সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য জন্মগ্রহণ করেন। স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীজী এই মহান ঐতিহ্যের একজন মহান দ্রষ্টা ছিলেন। তিনি ঔপনিবেশিক শাসনের সময় জন্মগ্রহণ করেছিলেন, এমন এক সময় যখন আমাদের জাতি ও সমাজ শতাব্দীর পর শতাব্দী দাসত্বের কারণে অবদমিত ছিল। গভীর চিন্তাভাবনা এবং প্রতিফলনের স্থানকে কুসংস্কার এবং নানা সামাজিক কুফল দখল করে নিয়েছিল। ব্রিটিশরা আমাদের ঐতিহ্য এবং বিশ্বাসকে ছোট করে দেখাতে চেয়েছিল। আমাদের অবমূল্যায়ন করে, তারা ভারতের পরাধীনতাকে ন্যায্যতা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, আমাদের সমাজ নতুন এবং মৌলিক চিন্তাভাবনা করার স্পর্ধাও হারিয়ে ফেলেছিল। আর এই অন্ধকার ও কঠিন সময়ে, একজন তরুণ সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটে। তিনি হিমালয়ের নির্জন, কঠোর ভূখণ্ডে ধ্যান করেন, কঠোর তপস্যার মাধ্যমে নিজেকে পরীক্ষা করেন এবং নিজেকে শান্ত করেন। সমাজে ফিরে এসে তিনি আত্ম-সন্দেহে আটকে থাকা সমাজকে জাগিয়ে তোলেন। যখন সমগ্র ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা ভারতের পরিচয়কে অবমূল্যায়ন করার কাজ করছিল, যখন পশ্চিমীকরণের মাধ্যমে নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়কে আধুনিকীকরণ হিসাবে প্রকাশ করা হচ্ছিল, তখন এই আত্মবিশ্বাসী ঋষি তাঁর কণ্ঠস্বর তোলেন এবং তাঁর জনগণকে ডেকে বলেন: "বেদ-এ ফিরে যাও! বেদ-এ ফিরে যাও!" স্বামী দয়ানন্দজির গুরুত্ত্ব এটাই, তিনি দাসত্বের সেই অন্ধকার যুগে সুপ্ত জাতীয় চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন।

বন্ধুগণ,

স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীজি বুঝতে পেরেছিলেন যে ভারতকে সত্যিকার অর্থে এগিয়ে যেতে হলে কেবল রাজনৈতিক দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে ফেলা যথেষ্ট নয়। যে সামাজিক শৃঙ্খলগুলি আমাদের সমাজকে আবদ্ধ এবং বিভক্ত করেছিল, সেগুলিকেও ভেঙে ফেলতে হবে। এই কারণেই স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীজি বৈষম্য, অস্পৃশ্যতা এবং উচ্চ-নীচের মর্যাদার ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি অস্পৃশ্যতাকে মূল থেকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছিলেন। যারা বেদ ও ধর্মগ্রন্থের বিকৃতি বা ভুল ব্যাখ্যা করেছিলেন তাদের তিনি চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, এমনকি তিনি তুলনামূলক বিদেশী আখ্যানের পর্যালোচনা করেছিলেন এবং প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্য 'শাস্ত্রার্থ' (বৌদ্ধিক বিতর্ক) এর মাধ্যমে সত্য প্রমাণ করেছিলেন।

বন্ধুগণ,

স্বামী দয়ানন্দজি ছিলেন তাঁর যুগের একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি জানতেন যে ব্যক্তি গঠন হোক বা সমাজ গঠন, ‘নারী শক্তি’ (নারীর ক্ষমতায়ন) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই, তিনি সাহসের সঙ্গে সেই মানসিকতাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন যা মহিলাদেরকে তাঁদের বাড়ির চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখে। তিনি আর্য সমাজ স্কুলে মেয়েদের শিক্ষিত করার আন্দোলন শুরু করেন। সেই সময়ে, জলন্ধরে একটি বালিকা বিদ্যালয় শুরু হয়েছিল, যা শীঘ্রই কন্যা মহাবিদ্যালয়ে (মহিলা কলেজ) পরিণত হয়। আর্য সমাজ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে লক্ষ লক্ষ কন্যা শিক্ষা লাভ করেছেন এবং আজ তাঁরা জাতির ভিত্তিকে শক্তিশালী করছে।

বন্ধুগণ,

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা জিও আজ এই মঞ্চে উপস্থিত আছেন। মাত্র দুই দিন আগে, আমাদের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুজি স্কোয়াড্রন লিডার শিবাঙ্গী সিং-এর সঙ্গে রাফালে যুদ্ধবিমানে উড়েছিলেন। আজ, আমাদের মেয়েরা যুদ্ধবিমান চালাচ্ছেন, এবং তাঁরা ড্রোন দিদি হিসেবে আধুনিক কৃষিকেও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে ভারতে আজ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মহিলা এসটিইএম স্নাতক রয়েছে। মহিলারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করছেন। আমাদের শীর্ষ বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে, মহিলা বিজ্ঞানীরা মঙ্গলযান, চন্দ্রযান এবং গগনযানের মতো মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এই রূপান্তর দেখায় যে জাতি সঠিক পথে এগিয়ে চলেছে, স্বামী দয়ানন্দ জি-এর স্বপ্ন পূরণ করছে।

বন্ধুগণ,

আমি প্রায়ই স্বামী দয়ানন্দজির একটি গভীর ভাবনা নিয়ে ভাবি এবং অনেকের সঙ্গেই তা শেয়ার করেছি। স্বামীজী বলেছিলেন: “যে ব্যক্তি সবচেয়ে কম গ্রহণ করে এবং সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে, সেই প্রকৃত পরিপক্ক।” এই কয়েকটি কথায় একটি অসাধারণ দর্শণ রয়েছে, যা সম্পূর্ণরূপে ব্যাখ্যা করলে অনেক কিছু পূর্ণ হতে পারে। কিন্তু একটি দর্শণের আসল শক্তি কেবল তার অর্থের মধ্যেই নয়, বরং এটি কতদিন টিকে থাকে এবং এর মাধ্যমে কতজন জীবনকে রূপান্তরিত করে তার মধ্যেই নিহিত। আর যখন আমরা মহর্ষি দয়ানন্দজির ভাবনাগুলিকে এই মাত্রায় পরীক্ষা করি, আর্য সমাজের নিবেদিতপ্রাণ অনুসারীদের দেখি, তখন আমরা বুঝতে পারি যে সময়ের পাশাপাশি তার ধারণাগুলি ক্রমে আরও উজ্জ্বল এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।

ভাই ও বোনেরা,

স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীজি তাঁর জীবদ্দশায় পরোপকারিণী সভা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর রোপিত বীজ এখন একটি বিশাল বৃক্ষে পরিণত হয়েছে, যার অনেক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। গুরুকুল কাংরি, গুরুকুল কুরুক্ষেত্র, ডিএভি প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে নিষ্ঠার সঙ্গে সেবা করে চলেছে। যখনই জাতি কোনও সংকটের মুখোমুখি হয়েছে, তখনই আর্য সমাজের লোকেরা সর্বদা দেশবাসীর সেবায় নিবেদিতপ্রাণ হয়ে আত্মনিবেদন করেছেন। ভারত বিভাগের দুঃখজনক সময়ে, আর্য সমাজ সর্বস্ব হারিয়ে শরণার্থীদের সাহায্য, পুনর্বাসন এবং শিক্ষিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। আজও, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে, আর্য সমাজ দুর্দশাগ্রস্তদের সেবা করার ক্ষেত্রে প্রথম স্থানে রয়েছে।

ভাই ও বোনেরা,

আর্য সমাজের কাছে জাতি যে অসংখ্য অবদানের জন্য ঋণী, তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো জাতির প্রাচীন গুরুকুল ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রচেষ্টা। একটা সময় ছিল যখন গুরুকুল ব্যবস্থার শক্তির মাধ্যমে ভারত জ্ঞান ও বিজ্ঞানের শীর্ষে দাঁড়িয়েছিল। ঔপনিবেশিক আমলে এই ব্যবস্থা ইচ্ছাকৃতভাবে আক্রমণ করা হয়েছিল। ফলস্বরূপ, আমাদের জ্ঞানের ভিত্তি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছিল, আমাদের মূল্যবোধ দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং আমাদের তরুণ প্রজন্ম দিকনির্দেশনা হারিয়ে ফেলেছিল। আর্য সমাজই ভেঙে পড়া গুরুকুল ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত ও রক্ষা করার জন্য এগিয়ে এসেছিল। আর্য সমাজের গুরুকুলগুলি কেবল তাই নয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদেরকে পরিমার্জিত ও আধুনিক করে তুলেছিল, প্রাচীন মূল্যবোধ সংরক্ষণের পাশাপাশি সমসাময়িক শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। আজ, যখন জাতি আবারও জাতীয় শিক্ষা নীতির মাধ্যমে শিক্ষাকে মূল্যবোধ এবং চরিত্র গঠনের সঙ্গে সংহত করছে, তখন আমি আর্য সমাজের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এই পবিত্র ভারতীয় শিক্ষার ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্য।

বন্ধুগণ,

আমাদের বেদ ঘোষণা করে: “কৃণ্ব্যন্তো বিশ্বমার্যম”, অর্থাৎ, আসুন আমরা সমগ্র বিশ্বকে মহৎ করি, মহৎ চিন্তাভাবনা এবং কর্মের মাধ্যমে মানবতাকে উন্নীত করি। স্বামী দয়ানন্দজি এই বৈদিক বার্তাটিকে আর্য সমাজের মূলমন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। আজ, এই একই বৈদিক আদর্শ ভারতের উন্নয়ন যাত্রার পথপ্রদর্শক নীতি হয়ে উঠেছে: ভারতের অগ্রগতির মাধ্যমে বিশ্বের কল্যাণ; ভারতের সমৃদ্ধির মাধ্যমে মানবতার সেবা। ভারত আজ টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি বিশ্বব্যাপী কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। স্বামীজি যেমন একবার মানুষকে "বেদ-এর দিকে ফিরে যাওয়ার" আহ্বান জানিয়েছিলেন, তেমনি ভারত আজ বিশ্বকে বৈদিক জীবনযাত্রায় ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। আমরা মিশন লাইফ (পরিবেশের জন্য জীবনধারা) চালু করেছি, যা বিশ্বব্যাপী সমর্থন পাচ্ছে। "এক সূর্য, এক বিশ্ব, এক গ্রিড" এর দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে আমরা ‘নির্মল শক্তি’কে একটি বিশ্বব্যাপী আন্দোলনে রূপান্তরিত করছি। আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের মাধ্যমে আমাদের যোগও এখন ১৯০ টিরও বেশি দেশে পৌঁছেছে। যোগের এই বিশ্বব্যাপী গ্রহণ, ভারসাম্যপূর্ণ, সচেতন জীবনযাপনের প্রতিশ্রুতি এবং লাইফ -এর মতো পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনের প্রতি বিশ্বব্যাপী উৎসাহ, এই সবই আর্য সমাজের লোকেরা তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে দীর্ঘকাল ধরে যে মূল্যবোধ ধারণ করে আসছে তারই বহিঃপ্রকাশ। আর্য সমাজের লোকেরা একটি সরল জীবনধারা, সেবার মনোভাব, ভারতীয় পোশাক ও সংস্কৃতির প্রতি অগ্রাধিকার, পরিবেশের প্রতি যত্ন এবং ভারতীয় মূল্যবোধের প্রচার অব্যাহত রেখেছে।

সেইজন্যই, ভাই ও বোনেরা,

ভারত যখন "সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ" (সকল প্রাণী সুখী হোক) এই প্রাচীন নীতিবাক্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে, মানবতার কল্যাণের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং ভারত যখন 'বিশ্ববন্ধু' (বিশ্বের প্রকৃত বন্ধু) হিসেবে তার ভূমিকাকে শক্তিশালী করছে, তখন আর্য সমাজের প্রত্যেক সদস্য স্বাভাবিকভাবেই এই লক্ষ্যকে নিজের বলে মনে করে। এর জন্য, আমি আপনাদের সকলের আন্তরিক প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতা জানাই।

বন্ধুগণ,

স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীজির প্রজ্জ্বলিত মশাল, গত ১৫০ বছর ধরে আর্য সমাজের কাজের মাধ্যমে সমাজকে আলোকিত করে চলেছে। আমি বিশ্বাস করি স্বামীজি আমাদের সকলের মধ্যে গভীর দায়িত্ববোধ জাগ্রত করেছেন এবং এই দায়িত্ব হল নতুন ধারণাগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, স্থবির রীতিনীতি ভেঙে ফেলা এবং যেখানে প্রয়োজন সেখানে সংস্কার শুরু করা। আপনারা সর্বদা আমাকে আপনার স্নেহ দিয়ে গেছেন এবং তাই আজ, আমি আপনার সামনে একটি অনুরোধ, একটি বিনীত আবেদন নিয়ে এসেছি। আমি কি আপনার কাছ থেকে কিছু চাইতে পারি? হ্যাঁ, আমি জানি আপনারা তা আন্তরিকভাবে দেবেন! আপনারা ইতিমধ্যেই জাতি গঠনের এই মহাযজ্ঞে অপরিসীম অবদান রাখছেন, তবে আমি আপনাদের সামনে জাতির বর্তমান অগ্রাধিকারের কয়েকটি পুনরাবৃত্তি করতে চাই। উদাহরণস্বরূপ, স্বদেশী আন্দোলন ঐতিহাসিকভাবে আর্য সমাজের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আজ, যখন জাতি আবারও স্বদেশীর আহ্বান গ্রহণ করে, "স্থানীয়দের জন্য কণ্ঠস্বর" হয়ে ওঠে, তখন এই প্রচেষ্টায় আপনাদের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

বন্ধুগণ,

আপনাদের মনে থাকতে পারে যে কিছুদিন আগে দেশ ‘জ্ঞান ভারতম মিশন’ চালু করেছিল। এর উদ্দেশ্য হল ভারতের প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলিকে ডিজিটালাইজ করা এবং সংরক্ষণ করা। অসীম জ্ঞানের এই অমূল্য ভান্ডারগুলিকে কেবলমাত্র তখনই সত্যিকার অর্থে সুরক্ষিত করা সম্ভব যখন তরুণ প্রজন্ম সেগুলির সঙ্গে যুক্ত হবে এবং সেগুলির গুরুত্ব বুঝতে পারবে। তাই, আমি আর্য সমাজের কাছে আবেদন জানাই। আপনারা ভারতের পবিত্র প্রাচীন গ্রন্থগুলি পুনরাবিষ্কার এবং সংরক্ষণের জন্য ১৫০ বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে, আর্য সমাজের অনুসারীরা আমাদের ধর্মগ্রন্থগুলিকে সেগুলির মূল আকারে রক্ষা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ‘জ্ঞান ভারতম মিশন’ এখন এই প্রচেষ্টাকে জাতীয় পর্যায়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এটিকে আপনার নিজস্ব অভিযান হিসেবে বিবেচনা করুন, এতে অবদান রাখুন এবং আপনাদের গুরুকুল এবং প্রতিষ্ঠানগুলির মাধ্যমে, যুবকদের এই পাণ্ডুলিপিগুলি অধ্যয়ন এবং গবেষণা করতে উৎসাহিত করুন।

বন্ধুগণ,

মহর্ষি দয়ানন্দজির ২০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে, আমি ‘যজ্ঞ’ (পবিত্র আচার)-এ ব্যবহৃত শস্য সম্পর্কে কথা বলেছিলাম। আমরা সকলেই জানি যে যজ্ঞে শ্রীঅন্ন কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরণের আচার-অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত শস্যগুলিকে বিশেষভাবে বিশুদ্ধ বলে মনে করা হয়। এর পাশাপাশি, আমাদের প্রাচীন মোটাদানার শস্যের ঐতিহ্য, আমাদের শ্রীঅন্নের ঐতিহ্যকেও প্রচার করতে হবে। এই শস্যগুলির একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল এগুলি প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো হয়। আচার্যজি যা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, তা একসময় ভারতের অর্থনীতির একটি প্রধান ভিত্তি ছিল। আজ, বিশ্ব আবারও এর মূল্য স্বীকার করছে। আমি আর্য সমাজকে প্রাকৃতিক কৃষির অর্থনৈতিক এবং আধ্যাত্মিক উভয় দিক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অনুরোধ করছি।

বন্ধুগণ,

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল জল সংরক্ষণ। আজ, দেশ জল জীবন মিশনের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে বিশুদ্ধ জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করছে। জল জীবন মিশন বিশ্বের সবচেয়ে অনন্য অভিযানগুলির মধ্যে একটি। তবে, আমাদের মনে রাখতে হবে যে এই ব্যবস্থাগুলি কেবলমাত্র তখনই তাদের উদ্দেশ্য পূরণ করবে যদি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পর্যাপ্ত জল থাকে। এটি অর্জনের জন্য, আমরা ‘ড্রিপ’ প্রথায় সেচ করার কথা প্রচার করছি এবং ইতিমধ্যেই সারা দেশে ৬০ হাজারটিরও বেশি অমৃত সরোবর (পবিত্র পুকুর) তৈরি করেছি। তবে সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। ঐতিহ্যগতভাবে, প্রতিটি গ্রামে পুকুর, হ্রদ, কূপ এবং জলাশয় ছিল, কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে  সঙ্গে, সেগুলির মধ্যে অনেকগুলিই অধিকৃত, অবহেলিত এবং শুকিয়ে গেছে। আমাদের এই প্রাকৃতিক জলের উৎসগুলি পুনরুদ্ধার এবং সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মানুষকে ক্রমাগত সচেতন করতে হবে। "ক্যাচ দ্য রেইন", তেমনই একটি সরকারি অভিযান, রিচার্জ কূপ নির্মাণ এবং ভূগর্ভস্থ জল রিচার্জের জন্য বৃষ্টির জল ব্যবহার করা সময়ের প্রয়োজন।

বন্ধুগণ,

বেশ কিছুদিন ধরে, "এক পেড় মা কে নাম" (মায়ের নামে একটি গাছ) অভিযানও অত্যন্ত সফল হয়েছে। এটি কয়েক দিন বা বছরের জন্য অভিযান নয়। বৃক্ষরোপণ অবশ্যই একটি ধারাবাহিক অভিযান হতে হবে। আর্য সমাজ আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে এই মহৎ উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারে।

বন্ধুগণ,

আমাদের বেদ আমাদের শিক্ষা দেয়: "সংগচ্ছধ্বং সংব্দধ্বং সং ভো মনাংসি জানতাম” যার অর্থ, "আসুন আমরা একসঙ্গে চলি, একসঙ্গে কথা বলি এবং একে অপরের মন বুঝতে পারি।" মূলত, এটি পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং চিন্তার সামঞ্জস্যের আহ্বান। আমাদের এই বৈদিক বার্তাকে জাতির আহ্বান হিসাবে দেখতে হবে এবং জাতির সংকল্পগুলিকে আমাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত সংকল্প হিসাবে গ্রহণ করতে হবে এবং জনসাধারণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে হবে। গত ১৫০ বছর ধরে, আর্য সমাজ তার কাজের মাধ্যমে এই চেতনাকে মূর্ত করে তুলেছে। এই চেতনাকেই আমাদের শক্তিশালী এবং সমুন্নত রাখতে হবে। আমি নিশ্চিত যে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীজির শিক্ষা মানবতাকে কল্যাণের পথে পরিচালিত করবে। এই বিশ্বাস নিয়ে, আমি আবারও আর্য সমাজের ১৫০ তম বার্ষিকীতে আপনাদের সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনাদের সকলকে অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।

 

SC/SB/DM


(Release ID: 2185282) Visitor Counter : 4