প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

যৌথ বিবৃতি : দ্বিতীয় ভারত–অস্ট্রেলিয়া বার্ষিক শীর্ষ বৈঠক

Posted On: 19 NOV 2024 11:22PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

 

ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাননীয় অ্যান্থনি আলবানিজ এমপি, ২০২৪ সালের ১৯ নভেম্বর রিও ডি জেনেইরোতে অনুষ্ঠিত বিশের গোষ্ঠী (G20) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে দ্বিতীয় ভারত–অস্ট্রেলিয়া বার্ষিক শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হন।

২০২৫ সালে ভারত–অস্ট্রেলিয়া বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্বের পঞ্চম বার্ষিকী উদযাপনের প্রাক্কালে, দুই প্রধানমন্ত্রী উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে—যেমন জলবায়ু পরিবর্তন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, শিক্ষা ও গবেষণা, দক্ষতা উন্নয়ন, গতিশীলতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতা, সম্প্রদায় ও সাংস্কৃতিক সংযোগ এবং জনগণ–জনগণ সম্পর্ক—তা সগর্বে উল্লেখ করেন।

উভয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের অঞ্চলের অভিন্ন স্বার্থের কথা স্মরণ করেন এবং সন্তোষ প্রকাশ করেন যে ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শুধু ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার জন্য নয়, সমগ্র অঞ্চলের জন্যই সুফল বয়ে এনেছে। তাঁরা দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের সংযোগ ও মন্ত্রিসভা পর্যায়ে নিয়মিত সংযোগকে স্বাগত জানান। 

ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি রেখে, দুই প্রধানমন্ত্রী সহযোগিতাকে আরও গভীর করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং পারস্পরিক স্বার্থে প্রচেষ্টাকে আরও কেন্দ্রিত ও ত্বরান্বিত করতে এবং আমাদের অভিন্ন অঞ্চলের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ ঘোষণার কথা জানান।

অর্থনীতি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ

দুই প্রধানমন্ত্রী ভারত–অস্ট্রেলিয়া অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাণিজ্য চুক্তি (ECTA)–এর অধীনে পণ্য ও পরিষেবার ক্ষেত্রে উভয় দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান দ্বিমুখী বাণিজ্য, ব্যবসায়িক সম্পৃক্ততা এবং বাজার–প্রবেশাধিকারের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তাঁরা একটি উচ্চাভিলাষী, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক বিস্তৃত অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি (CECA) সম্পাদনের লক্ষ্যে চলমান প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানান, যাতে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের পূর্ণ সম্ভাবনা বাস্তবায়িত হয়।

প্রধানমন্ত্রীদ্বয় বলেন যে, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘ফিউচার মেড ইন অস্ট্রেলিয়া’—এই দুই উদ্যোগের মধ্যে পারস্পরিক পরিপূরকতা ও সহযোগিতার সম্ভাবনা রয়েছে, যা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা এবং পরিবর্তনশীল বিশ্বে আমাদের ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধিকে সুরক্ষিত করতে সহায়ক হতে পারে। নেতৃবৃন্দ উভয়মুখী বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান, যা বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্বের চেতনার প্রতিফলন ঘটাবে, এবং একইসঙ্গে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন উভয় দেশের অর্থনীতির মধ্যে আরও সাযুজ্য সৃষ্টি ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার উপায় অনুসন্ধান করতে।

দুই প্রধানমন্ত্রী ২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে অস্ট্রেলিয়া–ভারত ব্যবসায়িক বিনিময় (AIBX) কর্মসূচির মেয়াদ আরও চার বছরের জন্য বৃদ্ধিকে স্বাগত জানান। AIBX উদ্যোগটি অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের ব্যবসায়িক সংস্থাগুলির মধ্যে আস্থা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করে পারস্পরিকভাবে লাভজনক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

জ্বালানি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, মহাকাশ

ভারত ও অস্ট্রেলিয়া দ্রুততর  দুই প্রধানমন্ত্রী ভারত–অস্ট্রেলিয়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি অংশীদারিত্ব (Renewable Energy Partnership – REP)–এর সূচনা স্বাগত জানান, যা সৌর ফোটোভোল্টায়িক (Solar PV), সবুজ হাইড্রোজেন, শক্তি সঞ্চয়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে উভয়মুখী বিনিয়োগ ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রসমূহে ব্যবহারিক সহযোগিতার একটি কাঠামো প্রদান করবে; পাশাপাশি, ভবিষ্যতের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে দক্ষ মানবসম্পদ গঠনের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের সুযোগও সৃষ্টি করবে।

প্রধানমন্ত্রীগণ ভারতের ‘খনিজ বিদেশ লিমিটেড’ (KABIL) এবং অস্ট্রেলিয়ার ‘ক্রিটিকাল মিনারেলস অফিস’–এর মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের (MoU) অধীনে অগ্রগতির প্রশংসা করেন। তাঁরা উল্লেখ করেন, এই সহযোগিতা বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ ও সরবরাহ–শৃঙ্খল বৈচিত্র্যকরণের সুযোগ তৈরি করছে। দুই নেতা গবেষণা ও উদ্ভাবন, দক্ষতা উন্নয়ন, পেশাগত বিনিময় এবং পারস্পরিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তাঁরা সুস্থায়ী পদ্ধতির প্রয়োগের মাধ্যমে ক্রিটিকাল মিনারেলস ক্ষেত্রের উন্নয়নকে বৈশ্বিক পরিচ্ছন্ন জ্বালানি রূপান্তরের সহায়ক উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করেন—বিশেষত ব্যাটারি ও ছাদ–স্থাপিত সৌর প্রযুক্তির মতো ক্ষেত্রে।

প্রধানমন্ত্রীদ্বয় উভয় দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান মহাকাশ সহযোগিতাকে স্বাগত জানান, যা মহাকাশ সংস্থা ও শিল্প–উভয় স্তরেই দৃশ্যমান। গগনযান মিশনকে সহায়তা প্রদান, ২০২৬ সালে অস্ট্রেলিয়ান উপগ্রহকে ভারতীয় উৎক্ষেপণযানে পাঠানোর পরিকল্পনা এবং দুই দেশের মহাকাশ শিল্পের মধ্যে যৌথ প্রকল্পসমূহ—এই গভীরতর সহযোগিতারই সুস্পষ্ট প্রতিফলন।

প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা

দুই প্রধানমন্ত্রী বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্বের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা স্তম্ভের অধীনে ধারাবাহিক অগ্রগতিকে স্বাগত জানান। তাঁরা ২০২৫ সালে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা সম্পর্কিত যৌথ ঘোষণাপত্র পুনর্নবীকরণ ও আরও শক্তিশালী করার অভিপ্রায় প্রকাশ করেন, যাতে উভয় দেশের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা অংশীদারিত্বের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং কৌশলগত ঐক্য আরও স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। দুই প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যতের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করেন—যার লক্ষ্য হবে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও দৃঢ় করা, যৌথ সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, দুই দেশের নিরাপত্তায় অবদান রাখা এবং আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা।

নেতৃবৃন্দ ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা মহড়া ও বিনিময়ের দৃঢ়তার প্রশংসা করেন এবং পারস্পরিক লজিস্টিক সহায়তা ব্যবস্থার (Mutual Logistics Support Arrangement) বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্জিত আন্তঃক্রিয়াশীলতার উন্নতিকে উল্লেখযোগ্য বলে অভিহিত করেন।

দুই প্রধানমন্ত্রী সামুদ্রিক ক্ষেত্র–সচেতনতা (Maritime Domain Awareness) বৃদ্ধির উদ্যোগ, প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত তথ্যের পারস্পরিক ও বর্ধিত বিনিময় এবং কার্যকর প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও গভীর করার পদক্ষেপকে স্বাগত জানান। তাঁরা অভিন্ন উদ্বেগ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং একটি উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চল গঠনের লক্ষ্যে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তাঁরা একটি যৌথ সামুদ্রিক নিরাপত্তা সহযোগিতা রোডম্যাপ প্রণয়নে সম্মত হন। এছাড়া, উভয় দেশের ভূখণ্ড থেকে বিমান মোতায়েন অব্যাহত রেখে কার্যগত পারস্পরিক পরিচিতি ও দক্ষতা বৃদ্ধিতেও তাঁরা একমত হন।

দুই প্রধানমন্ত্রী প্রতিরক্ষা শিল্প, গবেষণা ও উপকরণ–সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেন, বিশেষত সামুদ্রিক শিল্পক্ষেত্রে। তাঁরা বলেন যে, ২০২৪ সালে পার্থ শহরে অনুষ্ঠিত ‘ইন্ডিয়ান ওশান ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি কনফারেন্স’ এবং মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত ‘ল্যান্ড ফোর্সেস এক্সপোজিশন’-এ ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাঁরা ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পক্ষেত্র এবং প্রতিরক্ষা স্টার্ট–আপগুলির মধ্যে সংযোগ আরও জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন—বিশেষত একে অপরের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা বাণিজ্য প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের সুযোগের মাধ্যমে। এছাড়া, নিকট ভবিষ্যতে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে প্রতিরক্ষা শিল্প–প্রতিনিধি দলের পারস্পরিক সফর ও গঠনমূলক আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার আশাও তাঁরা ব্যক্ত করেন।

সংসদীয় সহযোগিতা

দুই প্রধানমন্ত্রী পুনরায় বলেন যে, সংসদীয় সহযোগিতা বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং তাঁরা এই ক্ষেত্রে ধারাবাহিক বিনিময় ও সম্পৃক্ততার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

শিক্ষা, ক্রীড়া ও জনগণ–জনগণ সম্পর্ক

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সমৃদ্ধ করে চলা জনগণ–জনগণ সংযোগের শক্তিকে স্বীকৃতি দিয়ে, দুই নেতা ভারতীয় বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ানদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের প্রশংসা করেন এবং এই “জীবন্ত সেতু” আরও মজবুত করার বিষয়ে সম্মত হন।

দুই প্রধানমন্ত্রী বেঙ্গালুরুতে অস্ট্রেলিয়ার নতুন মহাবাণিজ্যদূতাবাস (Consulate-General of Australia) এবং ব্রিসবেনে ভারতের নতুন মহাবাণিজ্যদূতাবাস (Consulate-General of India) উদ্বোধনকে স্বাগত জানান। তাঁরা আস্থা প্রকাশ করেন যে, এই নতুন কূটনৈতিক উপস্থিতি উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্কের গভীরতাও বৃদ্ধি করবে।

দুই প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেন যে, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে গতিশীলতা বা চলাচলের সুযোগ অর্থনৈতিক বৃদ্ধির একটি প্রধান চালিকাশক্তি। তাঁরা ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ভারতের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ‘ওয়ার্কিং হলিডে মেকার ভিসা প্রোগ্রাম’-এর সূচনাকে স্বাগত জানান এবং অস্ট্রেলিয়ার ‘মোবিলিটি অ্যারেঞ্জমেন্ট ফর ট্যালেন্টেড আর্লি-প্রফেশনালস স্কিম’ (MATES)-এর বাস্তবায়নের প্রতীক্ষা করেন, যা তরুণ পেশাজীবীদের গতিশীলতা বৃদ্ধি করবে এবং অস্ট্রেলিয়ান শিল্পক্ষেত্রকে ভারতের মেধাবী STEM (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) স্নাতকদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ প্রদান করবে।

শক্তিশালী ও ক্রমবর্ধমান শিক্ষা অংশীদারিত্বের মূল্য অনুধাবন করে, দুই প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন যে, অস্ট্রেলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ভারতে তাদের ক্যাম্পাস স্থাপন করছে। তাঁরা বলেন যে, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ‘অস্ট্রেলিয়া–ইন্ডিয়া এডুকেশন অ্যান্ড স্কিলস কাউন্সিল’ বৈঠক শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন সহযোগিতাকে আরও অগ্রসর করেছে।

দুই প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, ক্রীড়া এমন একটি ক্ষেত্র যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করা, জনগণ–জনগণ সংযোগ বৃদ্ধি এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়কে উৎসাহিত করার এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তাঁরা সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সহযোগিতায় সম্মত হন—যার অন্তর্ভুক্ত থাকবে প্রশিক্ষণ ও কর্মীবাহিনী উন্নয়ন, ক্রীড়া বিজ্ঞান ও চিকিৎসা এবং বৃহৎ ক্রীড়া ইভেন্ট ব্যবস্থাপনা।

আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতা

দুই প্রধানমন্ত্রী পুনরায় এই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন যে তাঁরা এমন এক উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পক্ষে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ—যেখানে প্রতিটি দেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা সম্মানিত হবে। তাঁরা জোর দিয়ে বলেন যে, আন্তর্জাতিক আইন—বিশেষত সমুদ্র আইন সম্পর্কিত রাষ্ট্রসংঘ সনদ (UNCLOS)—এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সকল সমুদ্র ও মহাসাগরে চলাচল ও উড্ডয়নের স্বাধীনতা-সহ নৌ–স্বাধীনতা ও অধিকার প্রয়োগের গুরুত্ব অপরিসীম।

দুই প্রধানমন্ত্রী ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্বাধীনতা, উন্মুক্ততা, অন্তর্ভুক্তি ও সহনশীলতার অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গ্লোবাল গুড–এর শক্তি হিসেবে কোয়াড (Quad)–এর মাধ্যমে সহযোগিতা জোরদারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তাঁরা কোয়াডের চলমান উচ্চাভিলাষী প্রকল্পগুলির প্রশংসা করেন—যেগুলি অংশীদার দেশগুলিকে মহামারী ও রোগ মোকাবিলায় সহায়তা করে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রতিক্রিয়া গড়ে তোলে, সামুদ্রিক ক্ষেত্র–সচেতনতা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে, উচ্চমানের শারীরিক ও ডিজিটাল পরিকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখে, গুরুত্বপূর্ণ ও উদীয়মান প্রযুক্তিতে বিনিয়োগে উৎসাহ দেয়, জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মোকাবিলায় সহায়তা করে, সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রযুক্তি নেতাদের বিকাশে অবদান রাখে। প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০২৫ সালে ভারতে কোয়াড নেতৃবৃন্দের শীর্ষ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়াকে আতিথ্য জানাতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

দুই প্রধানমন্ত্রী আসিয়ান (ASEAN)-এর কেন্দ্রিকতা এবং আসিয়ান–নেতৃত্বাধীন আঞ্চলিক কাঠামো—যার মধ্যে পূর্ব এশিয়া সম্মেলন (EAS), আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরাম এবং আসিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠক প্লাস অন্তর্ভুক্ত—এর প্রতি তাঁদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তাঁরা ইন্দো–প্যাসিফিক সংক্রান্ত আসিয়ান দৃষ্টিভঙ্গি (ASEAN Outlook on the Indo-Pacific – AOIP) বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চলমান ব্যবহারিক সহযোগিতাকে সমর্থন জানান। পাশাপাশি, তাঁরা ইন্দো–প্যাসিফিক ওশানস ইনিশিয়েটিভ (IPOI)–এর অধীনে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার অগ্রগতির প্রশংসা করেন এবং সামুদ্রিক পরিবেশ সংরক্ষণ, সামুদ্রিক দূষণের প্রভাব হ্রাস, সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীদ্বয় ২০২৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া যৌথভাবে আয়োজিত ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স–এর সাফল্যের কথা স্মরণ করেন এবং ২০২৫ সালে ভারত যখন ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন (IORA)-এর সভাপতিত্ব গ্রহণ করবে, তখন একসঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

দুই প্রধানমন্ত্রী প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সহযোগিতা জোরদারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন, যাতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশগুলির চাহিদা ও অগ্রাধিকারসমূহ সমর্থন করা যায়। তাঁরা জলবায়ু কার্যক্রম, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা–সহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অগ্রাধিকারমূলক ক্ষেত্রসমূহে দুই দেশের অব্যাহত প্রতিশ্রুতির উল্লেখ করেন। তাঁরা প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ ফোরাম (Pacific Islands Forum) এবং তার 2050 স্ট্র্যাটেজি ফর দ্য ব্লু প্যাসিফিক কনটিনেন্ট–এর কেন্দ্রীয় ভূমিকা স্বীকার করেন, যা আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখছে। প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশগুলির প্রতি ভারতের উন্নয়ন সহযোগিতার ভূমিকার প্রশংসা করেন, বিশেষত ‘ফোরাম ফর ইন্ডিয়া–প্যাসিফিক আইল্যান্ডস কোঅপারেশন’ (FIPIC) কাঠামোর আওতায়। উভয় দেশই ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে একযোগে সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

দুই প্রধানমন্ত্রী সমসাময়িক আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেন। তাঁরা চলমান সংঘাতগুলির শান্তিপূর্ণ সমাধান সংলাপ ও কূটনৈতিক উপায়ে অনুসন্ধানের আহ্বান পুনরায় জানান। পাশাপাশি, তাঁরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াইয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন—বিশেষত আর্থিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ সংস্থা (Financial Action Task Force – FATF)-এর কাঠামোর মাধ্যমে, যা সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন প্রতিরোধে বৈশ্বিক মানদণ্ড স্থাপনকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা। তাঁরা অন্যান্য উদ্যোগ অন্বেষণের দিকেও গুরুত্ব দেন, যাতে সন্ত্রাসবাদী অর্থায়ন রোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরও কার্যকর হয়। দুই নেতা সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থার সকল রূপকে স্পষ্ট ও দৃঢ়ভাবে নিন্দা জানান।

দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততার ইতিবাচক অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং পারস্পরিক স্বার্থ ও আঞ্চলিক মঙ্গলার্থে সম্পর্ককে আরও গভীর করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্বের পঞ্চম বার্ষিকী আসন্ন হওয়ায় তাঁরা ২০২৫ সালে এই গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক যথাযথভাবে উদ্‌যাপনের সুযোগকে স্বাগত জানান। তাঁরা ২০২৫ সালে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী ভারত–অস্ট্রেলিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনের অপেক্ষায় রইলেন।

 

*****

SSS/TM


(Release ID: 2177701) Visitor Counter : 10