প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

মণিপুরের চুরাচাঁদপুরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 13 SEP 2025 2:34PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

ভারত মাতার জয় হোক, ভারত মাতার জয় হোক, ভারত মাতার জয় হোক! রাজ্যপাল শ্রী অজয় ভাল্লা জি, রাজ্য প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা এবং এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত মণিপুরের আমার ভাই ও বোনেরা, আপনাদের সকলকে উষ্ণ নমস্কার!

 

মণিপুরের এই ভূমি সাহস এবং দৃঢ়তার ভূমি। এই পাহাড়গুলি প্রকৃতির এক মূল্যবান উপহার, এবং একই সঙ্গে, এই পাহাড়গুলি আপনাদের সকলের নিরন্তর কঠোর পরিশ্রমের প্রতীকও। আমি মণিপুরের জনগণের চেতনাকে প্রণাম জানাই। এই ভারী বৃষ্টির মধ্যেও আপনারা এত বিপুল সংখ্যায় এখানে এসেছেন, আপনাদের ভালোবাসার জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। ভারী বৃষ্টির ফলে আমার হেলিকপ্টার আসতে পারেনি, তাই আমি সড়কপথে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর আজ রাস্তায় যেসব দৃশ্য দেখেছি, তাতে আমার হৃদয় বলছে যে ঈশ্বর ভালো করেছেন যে আজ আমার হেলিকপ্টারটি ওড়েনি। আমি সড়কপথে এসেছি, আর পথের দুপাশে ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট থেকে বড় সকলের ভালোবাসা ও স্নেহের পরশ পেয়েছি । জীবনের এই মুহূর্তগুলি আমি কখনো ভুলতে পারব না। মণিপুরের মানুষের ভালবাসার কাছে মাথা নত করছি।

 

বন্ধুগণ,

 

এই অঞ্চলের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, এর বৈচিত্র্য এবং প্রাণবন্ততা ভারতের এক উল্লেখযোগ্য শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে। এমনকি ‘মণিপুর’ নামটিতেও ‘মণি’ (রত্ন) শব্দটি আছে। এটি এমন একটি রত্ন যা আগামী দিনে সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে। ভারত সরকার সর্বদা মণিপুরকে উন্নয়নের পথে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সচেষ্ট। এই ভাবনা নিয়েই আমি আজ আপনাদের সকলের মাঝে এসেছি। কিছুক্ষণ আগে, এই মঞ্চ থেকে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। এই প্রকল্পগুলি মণিপুরের মানুষ এবং পাহাড়ে বসবাসকারী আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবনকে আরও উন্নত করবে। এই প্রকল্পগুলি আপনাদের সকলের জন্য নতুন স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা স্থাপন করবে। এই প্রকল্পগুলির জন্য আমি মণিপুরের সকল মানুষকে এবং চুরাচাঁদপুরের সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।

 

বন্ধুগণ,

মণিপুর ভারতের সীমান্তবর্তী একটি রাজ্য। এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা সবসময়ই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ভালো রাস্তাঘাটের অভাবে আপনারা যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন তা আমি পুরোপুরি বুঝতে পারি। সেই কারণেই, ২০১৪ সাল থেকে আমি মণিপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য ধারাবাহিকভাবে কাজ করার উপর জোর দিয়েছি। ভারত সরকার এই কাজের জন্য দুটি স্তরে প্রচেষ্টা চালিয়েছে। প্রথমত, আমরা মণিপুরে রেলপথ এবং সড়কপথের জন্য বাজেট কয়েকগুণ বাড়িয়েছি এবং দ্বিতীয়ত, আমরা কেবল শহরগুলিতে নয়, গ্রামগুলিতেও সড়ক সম্প্রসারণের উপর মনোনিবেশ করেছি।

 

বন্ধুগণ,

 

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, এখানে জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণে ৩,৭০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে এবং ৮,৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে নতুন মহাসড়কের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। আপনারা ভালোভাবেই জানেন যে একসময় এখানে গ্রামে পৌঁছানো কতটা কঠিন ছিল। এখন, এই অঞ্চলের শত শত গ্রামে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে পাহাড় এবং উপজাতি গ্রামে বসবাসকারী মানুষরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছেন।

 

বন্ধুগণ,

 

আমাদের সরকারের আমলে মণিপুরে রেলপথ যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রসার ঘটেছে। জিরিবাম-ইম্ফল রেলপথ শীঘ্রই রাজধানী ইম্ফলকে জাতীয় রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। সরকার এই প্রকল্পে ২২,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নবনির্মিত ইম্ফল বিমানবন্দরটি বিমান যোগাযোগকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। এই বিমানবন্দর থেকে দেশের অন্যান্য অংশে হেলিকপ্টার পরিষেবাও শুরু হয়েছে। এই ক্রমবর্ধমান সংযোগ মণিপুরের সকল মানুষের জন্য সুবিধা বৃদ্ধি করছে এবং এখানকার যুবকদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ ভারত দ্রুতগতিতে উন্নয়ন করছে। খুব শীঘ্রই, আমরা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হতে প্রস্তুত। আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টা হল উন্নয়নের সুফল দেশের প্রতিটি কোণে পৌঁছানো। একটা সময় ছিল যখন দিল্লিতে করা ঘোষণাগুলি এখানে বাস্তবায়ন করতে কয়েক দশক সময় লাগত। আজ, আমাদের চুরাচাঁদপুর, আমাদের মণিপুর, দেশের বাকি অংশের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা সারা দেশে দরিদ্রদের জন্য স্থায়ী গৃহ নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প চালু করেছি। মণিপুরের হাজার হাজার পরিবার এই উদ্যোগ থেকে উপকৃত হয়েছে এবং এখানে প্রায় ষাট হাজার গৃহ নির্মিত হয়েছে। একইভাবে, এই অঞ্চলটি আগে বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে অসংখ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল। আমাদের সরকারও আপনাকে এই সমস্যাগুলি থেকে মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং ফলস্বরূপ, মণিপুরের এক লক্ষেরও বেশি পরিবার বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছে।

 

আমাদের মা ও বোনেরা জল পেতে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতেন। তাই, এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা ‘হর ঘর নল সে জল’ (প্রতিটি বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল) প্রকল্প চালু করেছি। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, সারা দেশে ১৫ কোটিরও বেশি নাগরিক নলের জলের সুবিধা পেয়েছেন। মণিপুরে, এই ৭-৮ বছর আগেও মাত্র ২৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ পরিবারে নলের মাধ্যমে জল সরবরাহের সংযোগ ছিল। আজ, এখানকার ৩,৫০,০০০ এরও বেশি পরিবারে নলের মাধ্যমে জলের সুবিধা রয়েছে। আমি নিশ্চিত যে মণিপুরের প্রতিটি পরিবার খুব শীঘ্রই তাঁদের বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পাবে।

 

বন্ধুগণ,

 

আগেকার দিনে পাহাড়ি ও আদিবাসী অঞ্চলে ভালো স্কুল, কলেজ এবং হাসপাতাল পাওয়া ছিল স্বপ্নের মতো ব্যাপার। কেউ বেশি অসুস্থ হলে, রোগী হাসপাতালে পৌঁছানোর সময় প্রায়ই অনেক দেরি হয়ে যেত। আজ, ভারত সরকারের প্রচেষ্টার ফলে পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। চুরাচাঁদপুরের মেডিকেল কলেজ এখন প্রস্তুত, নতুন ডাক্তার তৈরি করছে এবং স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করছে। একবার ভাবুন, স্বাধীনতার পর বহু দশক ধরে মণিপুরের পাহাড়ি অঞ্চলে কোনও মেডিকেল কলেজ ছিল না; এই সাফল্য আমাদের সরকারই অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রীর দিব্য প্রকল্পের আওতায়, আমাদের সরকার পাঁচটি পাহাড়ি জেলায় আধুনিক স্বাস্থ্য পরিষেবা গড়ে তুলছে। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের মাধ্যমে, সরকার দরিদ্রদের জন্য ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করে। মণিপুরের প্রায় আড়াই লক্ষ রোগী এই প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে চিকিৎসা পেয়েছেন। এই সুবিধা না থাকলে, আমার এখানকার দরিদ্র ভাইবোনদের চিকিৎসার জন্য নিজেদের পকেট থেকে ৩৫০ কোটি টাকারও বেশি খরচ করতে হত। কিন্তু পুরো খরচ ভারত সরকার বহন করেছে, কারণ প্রত্যেক দরিদ্র ব্যক্তির উদ্বেগ দূর করা আমাদের অগ্রাধিকার।

 

বন্ধুগণ,

 

মণিপুরের ভূমি ও অঞ্চল আশা ও প্রতিশ্রুতির ভূমি। দুর্ভাগ্যবশত, এই মহান এলাকাটি হিংসার কবলে পড়েছিল। কিছুক্ষণ আগে, আমি শিবিরে বসবাসকারী ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে দেখা করেছি। তাঁদের সঙ্গে কথা বলার পর, আমি বলতে পারি যে আশা ও আত্মবিশ্বাসের এক নতুন ভোরের আলোর জন্য অপেক্ষা করছে মণিপুর।

 

বন্ধুগণ,

 

যেকোনো জায়গায় উন্নয়নের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। গত এগারো বছরে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অনেক দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ ও সংঘাতের সমাধান হয়েছে। মানুষ শান্তির পথ বেছে নিয়েছে এবং উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। আমি আনন্দিত যে সম্প্রতি পাহাড় ও উপত্যকার বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য সংলাপ শুরু হয়েছে। এই প্রচেষ্টাগুলি সংলাপ, শ্রদ্ধা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ভারত সরকারের প্রতিশ্রুতির অংশ। আমি সমস্ত সংগঠনকে শান্তির পথে এগিয়ে যেতে, তাঁদের স্বপ্ন পূরণ করতে এবং তাঁদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার আহ্বান জানাচ্ছি। আজ, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে আমি আপনাদের সঙ্গে রয়েছি, কেন্দ্রীয় সরকার আপনাদের সঙ্গে আছে এবং মণিপুরের জনগণের সঙ্গে আছে।

 

বন্ধুগণ,

 

মণিপুরে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার জন্য ভারত সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। আমাদের সরকার বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলির জন্য সাত হাজার নতুন বাড়ি নির্মাণে সহায়তা প্রদান করছে। সম্প্রতি প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার একটি বিশেষ প্যাকেজও অনুমোদিত হয়েছে। এছাড়াও, বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য ৫০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ বরাদ্দ করা হয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

আমি মণিপুরের আদিবাসী যুবকদের স্বপ্ন এবং সংগ্রাম সম্পর্কে ভালভাবে অবগত। আপনাদের উদ্বেগের সমাধানের জন্য, বিভিন্ন সমাধানের জন্য কাজ করা হচ্ছে। সরকার স্থানীয় প্রশাসন সংস্থাগুলিকে শক্তিশালী করতে এবং তাঁদের উন্নয়নের জন্য যথাযথ তহবিল বরাদ্দ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ দেশের জন্য প্রত্যেক আদিবাসী সম্প্রদায়ের উন্নয়ন একটি অগ্রাধিকার। প্রথমবারের মতো, উপজাতি এলাকায় উন্নয়নের জন্য 'ধর্তি আবা জনজাতিয় গ্রাম উৎকর্ষ অভিযান' চলছে। এই উদ্যোগের আওতায়, মণিপুরের ৫০০ টিরও বেশি গ্রামে উন্নয়নমূলক কাজ করা হচ্ছে। উপজাতি এলাকায় একলব্য মডেল আবাসিক বিদ্যালয়ের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হচ্ছে। মণিপুরেও, ১৮টি এই জাতীয় একলব্য মডেল আবাসিক বিদ্যালয় নির্মিত হচ্ছে। স্কুল ও কলেজের আধুনিকীকরণ এখানকার পার্বত্য জেলাগুলিতে শিক্ষাগত সুযোগ-সুবিধা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করার জন্য নির্ধারিত হয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

 

মণিপুরের সংস্কৃতি সর্বদা ‘নারী শক্তি’ (নারীর ক্ষমতায়ন) প্রচার করে আসছে। আমাদের সরকার নারীর ক্ষমতায়নেও সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত। মণিপুরের কন্যাদের সহায়তার জন্য সরকার কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলও নির্মাণ করছে।

 

বন্ধুগণ,

 

আমরা মণিপুরকে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে কেন্দ্রীয় সরকার, মণিপুর সরকারের সঙ্গে মিলে মণিপুরের উন্নয়নে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাস্তুচ্যুতদের যথাযথ স্থানে পুনর্বাসনে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। আবারও, উন্নয়ন প্রকল্পগুলির জন্য আপনাদের সকলকে অভিনন্দন জানাই, এবং আপনাদের দেখানো ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার জন্য মণিপুরের জনগণের প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আসুন আমরা সকলে একসঙ্গে বলি :

 

ভারত মাতার জয়,

 

ভারত মাতার জয়,

 

ভারত মাতার জয়,

 

ভারত মাতার জয়,

 

আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। 

 

 

 

 

SC/SC/AS


(Release ID: 2166502) Visitor Counter : 13