প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
নভি মুম্বাইয়ে ‘ইস্কন’-এর ‘শ্রী শ্রী রাধা মদনমোহনজি মন্দির’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
Posted On:
15 JAN 2025 6:30PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫
হরে কৃষ্ণ – হরে কৃষ্ণ!
হরে কৃষ্ণ – হরে কৃষ্ণ!
মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল সি. পি. রাধাকৃষ্ণনজি, এই রাজ্যের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী দেবেন্দ্র ভাই, উপ-মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে, শ্রদ্ধেয় গুরু প্রসাদ স্বামী, হেমা মালিনী দেবী, উপস্থিত সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, ভক্তিপ্রাণ ভ্রাতা ও ভগিনীগণ,
আজ জ্ঞান ও ভক্তির এই ভূমিতে ‘ইস্কন’-এর উদ্যোগে ‘শ্রী শ্রী রাধা মদনমোহনজি মন্দির’ উদ্বোধন করা হয়েছে। আমি সৌভাগ্যবান যে এমন এক পবিত্র অনুষ্ঠানে আমি যোগ দিতে পেরেছি। এটি হল শ্রীল প্রভুপাদ স্বামীর আশীর্বাদ, ইস্কনের সাধু-সন্তদের অপরিসীম মমতা ও ভালোবাসা। আমি শ্রদ্ধেয় সাধুজনদের ধন্যবাদ জানাই এবং তাঁদের চরণে প্রণাম করি।
আমি সদ্যই ‘শ্রী রাধা মদনমোহনজি মন্দির’ প্রাঙ্গণের রূপরেখা দেখে এলাম। এই মন্দিরের অন্তর্নিহিত ভাবনা, এর স্থাপত্য ও আধ্যাত্মিকতা সম্পূর্ণ ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করেছে। মন্দিরে ভগবানের নানা রূপ প্রতিফলিত হয়েছে। নতুন প্রজন্মের আগ্রহ ও আকর্ষণ অনুযায়ী এখানে রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনির ওপর ভিত্তি করে একটি সংগ্রহশালাও নির্মাণ করা হয়েছে। বৃন্দাবনের ১২ অরণ্যের রূপকে কেন্দ্র করে একটি বাগানও এখানে গড়ে তোলা হয়েছে। আমি নিশ্চিত, এই মন্দির প্রাঙ্গণ বিশ্বাস ও আস্থার এক পবিত্র কেন্দ্র হয়ে উঠবে। এই মহৎ কাজের জন্য আমি ইস্কনের সকল সাধু-সন্ত, সদস্য এবং মহারাষ্ট্রের জনসাধারণকে অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুগণ,
আজকের এই বিশেষ মুহূর্তে আমি শ্রদ্ধেয় গোপালকৃষ্ণ গোস্বামী মহারাজকেও আবেগভরে স্মরণ করছি। এই প্রকল্পের সঙ্গে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি যুক্ত, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি তাঁর অপরিসীম ভক্তি এখানে সঞ্চারিত হয়েছে। এই মুহূর্তে তিনি আমাদের মাঝে শারীরিকভাবে উপস্থিত নাও থাকতে পারেন, কিন্তু আমরা সকলে তাঁর আধ্যাত্মিক উপস্থিতি অনুভব করছি। তাঁর স্নেহ ও স্মৃতি আমার জীবনে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। যখন তিনি বিশ্বের সর্ববৃহৎ গীতা উন্মোচন করেছিলেন, তখন তিনি আমাকে সেখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং আমি সেই পবিত্র গীতা দর্শনের সুযোগ লাভ করেছিলাম। শ্রীল প্রভুপাদজির ১২৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে তাঁর সঙ্গও লাভ করেছিলাম। আজ আমি আনন্দিত যে তাঁর আরেকটি স্বপ্ন পূরণ হতে দেখছি এবং এর সাক্ষী হতে পারছি।
বন্ধুগণ,
বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত ইস্কনের অনুগামীরা ভগবান কৃষ্ণের প্রতি ভক্তির সূত্রে আবদ্ধ। আরেকটি সূত্র আছে যা তাঁদের সকলে একত্রে বেঁধে রাখে, যা প্রতিটি ভক্তকে ২৪ ঘণ্টা পথ প্রদর্শন করে। সেটি হল শ্রীল প্রভুপাদ স্বামীর চিন্তার সূত্র। তিনি বেদ, বেদান্ত ও গীতার গুরুত্ব এমন সময়ে প্রচার করেছিলেন, যখন দেশ দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ ছিল। তিনি ভক্তিবেদান্তকে সাধারণ মানুষের চেতনার সঙ্গে যুক্ত করার জন্য এক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। ৭০ বছর বয়সে, যখন মানুষ নিজের কর্তব্য সম্পূর্ণ মনে করে, তখন তিনি ইস্কনের মতো এক বিশ্বব্যাপী আন্দোলন শুরু করেছিলেন। এরপর তিনি নিরন্তর বিশ্বভ্রমণ করেছেন শ্রীকৃষ্ণের বার্তা বিশ্বের প্রতিটি কোণে পৌঁছে দিতে। আজ কোটি কোটি মানুষ তাঁর তপস্যার প্রসাদ ভোগ করছে। শ্রীল প্রভুপাদ স্বামীর সক্রিয়তা ও তাঁর সাধনা আজও আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়।
বন্ধুগণ,
আমাদের ভারত এক অসাধারণ এবং বিস্ময়কর ভূমি। ভারত কেবল ভৌগোলিক সীমারেখায় আবদ্ধ কোনো ভূখণ্ড নয়। ভারত এক প্রাণবন্ত ভূমি, এক জীবন্ত সংস্কৃতি, এক সজীব ঐতিহ্য। আর এই সংস্কৃতির আত্মা হল আধ্যাত্মিকতা! তাই, যদি আমরা ভারতকে সত্যিই বুঝতে চাই, আমাদের আগে আধ্যাত্মিকতাকে আত্মস্থ করতে হবে। যারা পৃথিবীকে কেবল ভৌত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চান, তাঁদের কাছে ভারত কেবল নানান ভাষা ও প্রদেশের সমাহার মনে হবে। কিন্তু যখন আমরা আমাদের চেতনাকে এই সাংস্কৃতিক চেতনার সঙ্গে যুক্ত করি, তখন আমরা ভারতের বিশাল রূপ প্রত্যক্ষ করতে পারি।
তখন আমরা দেখতে পাই, চৈতন্য মহাপ্রভুর মতো মহান সাধকের জন্ম হয়েছিল সুদূর পূর্বের বঙ্গভূমিতে। আবার, সন্ত নামদেব, তুকারাম ও জ্ঞানদেবের মতো মহাপুরুষদের জন্ম হয়েছিল পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্রে। চৈতন্য মহাপ্রভু মহামন্ত্রকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। মহারাষ্ট্রের সাধুরা ‘রামকৃষ্ণ হরি, রামকৃষ্ণ হরি’ মন্ত্রে আধ্যাত্মিক অমৃত বিলিয়েছিলেন। সন্ত জ্ঞানেশ্বর ভগবান কৃষ্ণের গুপ্ত জ্ঞানকে ‘জ্ঞানেশ্বরী গীতা’র মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য করেছিলেন। একইভাবে, শ্রীল প্রভুপাদও ইস্কনের মাধ্যমে গীতাকে জনপ্রিয় করেছিলেন। তিনি তাঁর ব্যাখ্যা প্রকাশ করে গীতার চেতনার সঙ্গে মানুষকে যুক্ত করেছিলেন।
এভাবে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া এই সাধু-সন্তরা নিজ নিজ উপায়ে কৃষ্ণভক্তির প্রবাহকে গতিশীল করেছেন। তাঁদের জন্মবর্ষে পার্থক্য আছে, ভাষা আলাদা, পদ্ধতি ভিন্ন—কিন্তু উপলব্ধি একই, চিন্তা একই, চেতনা একই। ভক্তির আলো দিয়ে তাঁরা সমাজে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছেন, তাকে এক নতুন দিশা দিয়েছেন, নিরন্তর শক্তি যুগিয়েছেন।
বন্ধুগণ,
আপনারা সকলে জানেন যে আমাদের আধ্যাত্মিক সংস্কৃতির মূল ভিত্তি হল সেবার মনোভাব। আধ্যাত্মিকতায় মানুষের সেবা ও মানবতার সেবা এক হয়ে যায়। আমাদের আধ্যাত্মিক সংস্কৃতি সাধনাকারীদের সমাজের সঙ্গে যুক্ত করে, তাঁদের মধ্যে সহমর্মিতার সৃষ্টি করে। আর ভক্তির এই অনুভূতি তাঁদের সেবার পথে পরিচালিত করে।
শ্রীকৃষ্ণ প্রকৃত সেবার অর্থ আমাদের বুঝিয়েছেন। তিনি সুন্দরভাবে বলেছেন— প্রকৃত সেবা সেখানেই,যেখানে কোনো স্বার্থপর উদ্দেশ্য থাকে না। আমাদের সব ধর্মগ্রন্থ ও শাস্ত্রের মূল কথাই হল সেবার বোধ। এমনকি ইস্কনের মতো বিশাল সংগঠনও সেবার এই মনোভাবকে সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সংক্রান্ত অসংখ্য কার্যক্রম আপনারা সম্পাদন করছেন। ইস্কন ‘কুম্ভ’-এও বৃহৎ সেবাকর্ম পরিচালনা করছে।
বন্ধুগণ,
আমি আনন্দিত যে আমাদের সরকারও সম্পূর্ণ নিষ্ঠা ও সেবার এই মনোভাব নিয়ে দেশবাসীর স্বার্থে কাজ করে চলেছে। প্রতিটি ঘরে শৌচাগার নির্মাণ করা, প্রতিটি দরিদ্র মহিলাকে উজ্জ্বলা গ্যাস সংযোগ প্রদান করা, প্রতিটি ঘরে জলের সুবিধা পৌঁছে দেওয়া, প্রতিটি দরিদ্র মানুষকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া, ৭০ বছরের বেশি বয়সী প্রতিটি প্রবীণ ব্যক্তিকেও এই সুবিধার আওতায় আনা, প্রতিটি গৃহহীনকে বাসস্থান প্রদান করা— এগুলো সবই সেবার এই মনোভাব থেকে করা কাজ। এই উৎসর্গের মনোভাব আমার কাছে আমাদের মহান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক প্রসাদ। সেবার এই মনোভাবই প্রকৃত সামাজিক ন্যায়কে সম্ভব করেছে এবং এটাই প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক।
বন্ধুগণ,
আমাদের সরকার ‘কৃষ্ণ সার্কিট’-এর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন তীর্থস্থান ও ধর্মীয় স্থানকে সংযুক্ত করছে। এই সার্কিট গুজরাট, রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ এবং ওডিশা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এই স্থানগুলো ‘স্বদেশ দর্শন’ ও ‘প্রসাদ’ যোজনার আওতায় উন্নত করা হচ্ছে। এই মন্দিরগুলোতে ভগবান কৃষ্ণের নানা রূপ প্রতিফলিত হয়। কোথাও তাঁকে শিশু রূপে পূজা করা হয়, কোথাও বা রাধারাণীর সঙ্গে একত্রে পূজা করা হয়। কিছু মন্দিরে তাঁকে কর্মযোগী রূপে দেখা যায়, আবার অন্য কোথাও তাঁকে রাজা হিসেবে পূজা করা হয়। আমাদের প্রচেষ্টা হলো ভগবান কৃষ্ণের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত স্থানগুলোতে যাওয়া এবং মন্দির দর্শনকে সহজতর করা। এজন্য বিশেষ ট্রেনও চালু করা হয়েছে। ইস্কন কৃষ্ণ সার্কিটের সঙ্গে যুক্ত এই আধ্যাত্মিক কেন্দ্রগুলোতে ভক্তদের নিয়ে যেতে নিশ্চয়ই বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, আপনার কেন্দ্রগুলোতে যোগদানকারী প্রতিটি ভক্তকে অন্তত ভারতের পাঁচটি স্থানে পাঠাবেন।
বন্ধুগণ,
গত দশকে দেশে উন্নয়ন ও ঐতিহ্য একই সঙ্গে গতি লাভ করেছে। ঐতিহ্যের মাধ্যমে বিকাশের এই অভিযানে ইস্কনের মতো প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন পাওয়া গেছে। আমাদের মন্দির বা ধর্মীয় স্থানগুলো বহু শতাব্দী ধরে সামাজিক চেতনার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছে। আমাদের গুরুকুলগুলো শিক্ষা ও দক্ষতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ইস্কন তার কর্মসূচির মাধ্যমে যুবকদের আধ্যাত্মিকতাকে জীবনের অংশ করে তুলতে অনুপ্রাণিত করছে। এবং ইস্কনের তরুণ অনুসারীরা তাঁদের ঐতিহ্য বজায় রেখে আধুনিক প্রযুক্তি আত্মস্থ করছে, এটি সত্যিই বিস্ময়কর। আপনাদের তথ্য-নেটওয়ার্কও অন্যদের জন্য অনুকরণযোগ্য। আমি নিশ্চিত যে ইস্কনের দিশায় যুবসমাজ সেবা ও নিষ্ঠার মনোভাব নিয়ে জাতীয় স্বার্থে কাজ করবে।
এখানে মানুষ ভক্তিবেদান্ত আয়ুর্বেদিক নিরাময় কেন্দ্রের সুবিধাও পাবে। এবং আমি যেমন বারবার বিশ্বকে বার্তা দিয়ে আসছি— ‘ভারতে আরোগ্য লাভ করুন’। চিকিৎসার জন্য, সামগ্রিক উপায়ে সুস্থ হওয়ার জন্য, ‘ভারতে আরোগ্য লাভ করুন’। এখানে ‘ভক্তিবেদান্ত বৈদিক শিক্ষা মহাবিদ্যালয়’-ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিটি সমাজ, সমগ্র দেশ উপকৃত হবে।
বন্ধুগণ,
আমরা সকলে লক্ষ্য করছি যে বর্তমান সমাজ যতই আধুনিক হয়ে উঠছে, ততই এর সংবেদনশীল হওয়ার প্রয়োজন বাড়ছে। আমাদের এমন এক সমাজ গড়ে তুলতে হবে, যা সংবেদনশীল হবে, মানবিক মূল্যবোধে এগিয়ে যাবে। এমন এক সমাজ, যেখানে স্বকীয়তার অনুভূতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। ইস্কনের মতো প্রতিষ্ঠান ভক্তিবেদান্তের মাধ্যমে বিশ্বে সংবেদনশীলতাকে নতুন প্রাণ দিতে পারে। আপনাদের প্রতিষ্ঠানটির সামর্থ্য আছে সমগ্র বিশ্বে মানবিক মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেওয়ার। আমি নিশ্চিত যে ইস্কনের মহৎ ব্যক্তিরা সর্বদা প্রভুপাদ স্বামীর আদর্শকে জীবন্ত রাখার জন্য প্রস্তুত।
‘রাধা মদনমোহনজি মন্দির’-এর জন্য আমি আবারও সমগ্র ইস্কন পরিবার এবং সমগ্র দেশবাসীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
হরে কৃষ্ণ – হরে কৃষ্ণ!
হরে কৃষ্ণ – হরে কৃষ্ণ!
হরে কৃষ্ণ – হরে কৃষ্ণ!
SC/PK..
(Release ID: 2160412)
Visitor Counter : 5
Read this release in:
Odia
,
English
,
Urdu
,
Hindi
,
Marathi
,
Manipuri
,
Assamese
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam