প্রতিরক্ষামন্ত্রক
azadi ka amrit mahotsav

অপারেশন সিঁদুরের সার্বিক রাজনৈতিক-সামরিক উদ্দেশ্য ছিল ছায়াযুদ্ধের জন্য পাকিস্তানকে শাস্তি দেওয়া; পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাস এক সুপরিকল্পিত কৌশল এবং মৌলিক বিদ্বেষ : লোকসভায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী

Posted On: 28 JUL 2025 5:30PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ২৮ জুলাই ২০২৫

 

প্রতিরক্ষামন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিং ২৮ জুলাই ২০২৫ লোকসভায় বলেছেন, “অপারেশন সিঁদুরের উদ্দেশ্য সীমান্ত অতিক্রম করা বা এলাকা দখল করা ছিল না। এর লক্ষ্য ছিল, বছরের পর বছর ধরে  সন্ত্রাসের যে আঁতুড়ঘরগুলি পাকিস্তান লালন-পালন করে আসছে, সেগুলি নির্মূল করা এবং সীমান্তপারের হামলায় যে নির্দোষ পরিবারগুলি প্রিয়জনদের হারিয়েছে, তাদের ন্যায় বিচার দেওয়া।” পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাস কোন ‘আকস্মিক পাগলামি” নয়, এ এক ‘সুপরিকল্পিত কৌশল” এবং ‘মৌলিক বিদ্বেষ’ বলে তিনি মন্তব্য করেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, অপারেশন সিঁদুরের সার্বিক রাজনৈতিক-সামরিক উদ্দেশ্য ছিল, সন্ত্রাসের আড়ালে ছায়াযুদ্ধের জন্য পাকিস্তানকে শাস্তি দেওয়া। 

প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “যারা সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দিয়েছে, সন্ত্রাসে মদত যুগিয়েছে তাদের রেহাই নেই। যে কোন জঙ্গি হামলার কড়া জবাব দেওয়া হবে। পারমাণবিক ব্ল্যাকমেলিং বা অন্য কোন চাপের কাছে ভারত মাথা নত করবে না।”

চলতি বছরের ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় এক নেপালি নাগরিক সহ ২৬ জন নির্দোষ ব্যক্তিকে ধর্মের ভিত্তিতে হত্যা করাকে অমানবিকতার নিকৃষ্টতম নিদর্শন আখ্যা দিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, এই ঘটনা ভারতের সহনশীলতার সীমা অতিক্রম করে যায়। জঙ্গি হামলার ঠিক পরেই প্রধানমন্ত্রী মোদী উচ্চস্তরীয় বৈঠক করেন এবং সশস্ত্রবাহিনীকে বিচক্ষণতার সঙ্গে কৌশলগত বোঝাপড়া ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে নির্ণায়ক পদক্ষেপ গ্রহণের স্বাধীনতা দেওয়া হয়। 

শ্রী রাজনাথ সিং বলেন, “চলতি বছরের ৬ ও ৭ মে ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনী অপারেশন সিঁদুরের সূচনা করে। এ নিছক সামরিক অভিযান ছিল না, এ ছিল ভারতের সার্বভৌমত্ব, আত্মপরিচয় এবং দেশের নাগরিকদের প্রতি সরকারের দায়িত্ব পালন ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের নীতির কার্যকর ও সিদ্ধান্তমূলক প্রদর্শন। আমাদের সামরিক নেতৃত্ব বিচক্ষণতার পাশাপাশি সেই কৌশলগত প্রজ্ঞাও দেখিয়েছে, যা ভারতের মতো এক দায়িত্বশীল শক্তির ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত।”

প্রতিটি দিক গভীরভাবে বিবেচনার পরই সশস্ত্রবাহিনী অপারেশন সিঁদুর শুরু করে বলে জানিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমাদের সামনে অনেকগুলি বিকল্প ছিল। আমরা সেই পথটিই বেছে নিয়েছি, যাতে জঙ্গিদের এবং তাদের ঘাঁটিগুলির সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়, কিন্তু এর আঁচ পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের ওপর না পড়ে।” পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে সুনির্দিষ্ট ও সুসমন্বিত ভাবে ৯টি সন্ত্রাস পরিকাঠামোর ওপর আঘাত হানা হয়। এতে একশোরও বেশি জঙ্গি, তাদের প্রশিক্ষক ও সহযোগীর মৃত্যু হয়েছে। বেশিরভাগ জঙ্গি ছিল জইস-ই-মহম্মদ, লস্কর-ই-তৈবা, হিজবুল মুজাহিদিনের মতো সংগঠনের সদস্য। পাক সেনাবাহিনী এবং আইএসআই খোলাখুলি ভাবে তাদের সাহায্য করেছে। আমাদের পদক্ষেপ কোনভাবেই উষ্কানিমূলক বা সম্প্রসারণবাদী ছিল না, এ ছিল সম্পূর্ণ ভাবে আত্মরক্ষার জন্য। 

শ্রী সিং বলেন, ১০ মে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, রকেট এবং অন্যান্য দূরপাল্লার অস্ত্রশস্ত্র প্রয়োগ করে। এছাড়া ভারতীয় বায়ুসেনা ঘাঁটি, সেনাবাহিনীর গোলাবারুদের ডিপো, বিমানবন্দর ও সামরিক সেনানিবাসগুলি লক্ষ্য করে প্রযুক্তির সাহায্যে বৈদ্যুতিন যুদ্ধ চালানো হয়। ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ড্রোন মোকাবিলা ব্যবস্থা এবং ইলেক্ট্রনিক সরঞ্জামগুলি এই হামলা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ করে দেয়। এক্ষেত্রে এস৪০০, আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ও এয়ার ডিফেন্স গানগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল অভেদ্য, যা পাকিস্তানের প্রতিটি হামলাকে প্রতিহত করতে সমর্থ হয়েছে। পাকিস্তান ভারতের কোন নিশানায় আঘাত হানতে পারেনি এবং কোন গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি”। সাহসিকতা ও দৃঢ় সংকল্পের জন্য প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভারতীয় সেনার ভূয়সী প্রশংসা করেন। 

এর জবাবে ভারতের প্রত্যাঘাতকে সাহসী, সুদৃঢ় ও কার্যকর আখ্যা দিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “ভারতীয় বায়ুসেনা পশ্চিম ফ্রন্টে পাকিস্তানের বিমানঘাঁটি, নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, সামরিক পরিকাঠামো এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর আঘাত হানে। এই মিশন সফল ভাবে সম্পন্ন হয়। আমাদের প্রত্যাঘাত ছিল দ্রুত, যথাযথ এবং সুনির্দিষ্ট।”

শ্রী সিং বলেন, “সন্ত্রাসে মদত যুগিয়ে যারা ধারাবাহিক ভাবে ভারতে হানা চালানোর চেষ্টা করেছিল, ভারতীয় সেনাবাহিনী কেবলই তাদেরই নিশানা করেছে। পুরোদস্তুর যুদ্ধে যাওয়া আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। আমরা চেয়েছিলাম শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে শত্রুদের মাথা ঝুঁকিয়ে দিতে”। এই অভিযানে ভারতের কোন সেনা হতাহত হয়নি বলে তিনি জানান। 

শ্রী রাজনাথ সিং বলেন, ১০ মে পাকিস্তানের ডিজিএমও, ভারতের ডিজিএমও-র সঙ্গে যোগাযোগ করে সামরিক অভিযান থামাবার অনুরোধ জানান। ১২ মে দুই ডিজিএমও-র মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনার পর দু-পক্ষ অভিযান স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, অভিযানের পর তিনি সীমান্তে গিয়ে সেনাদের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁদের অটল সংকল্পের সাক্ষী হন। তিনি বলেন, “আমাদের সেনারা শুধু সীমান্ত রক্ষা করছেন না, তাঁরা আমাদের জাতীয় আত্মমর্যাদারও রক্ষক।”

অপারেশন সিঁদুরকে তিন বাহিনীর সমন্বয়ের জ্বলন্ত নিদর্শন আখ্যা দিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ভারতীয় বায়ুসেনা আকাশ থেকে আঘাত হেনেছে, সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণরেখায় সজাগ সুদৃঢ় প্রহরায় শত্রুপক্ষের প্রতিটি আক্রমণের যোগ্য জবাব দিয়েছে এবং ভারতীয় নৌবাহিনী উত্তর আরব সাগরে মোতায়েন থেকেছে। নৌবাহিনী পাকিস্তানকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, সমুদ্রে হোক বা জমিতে, তাদের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে আঘাত হানতে আমরা শুধু সক্ষমই নই, প্রস্তুতও বটে। 

চাপের মুখে পড়ে এই অভিযান থামাতে হয়েছে বলে জল্পনাকে ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘ভুল’ আখ্যা দিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক ও সামরিক উদ্দেশ্য সম্পূর্ণরূপে সাধিত হওয়ায় ভারত এই অভিযান থামিয়েছে। মনে রাখা দরকার, অপারেশন সিঁদুর শেষ হয়নি, স্থগিত রয়েছে মাত্র। তিনি বলেন, “পাকিস্তান যদি আবার কোন ঘৃণ্য কাজ করার চেষ্টা করে, তাহলে আমরা আরও তীব্র ও নির্ণায়ক পদক্ষেপ নিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত”। 

প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে ভারত আর সহ্য করে না, প্রতিটি ঘটনার যথাযথ প্রতিক্রিয়া দেয়, সন্ত্রাসবাদের সমস্ত রূপ ও প্রকাশকে সম্পূর্ণ ভাবে নির্মূল করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মন্তব্য করেন। 

শ্রী সিং বলেন, ভারত পাকিস্তান সহ সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রাখতে চায়। কিন্তু তার শান্তি প্রয়াসকে অনেক সময় ভীরুতা বলে ভাবা হয়। সেজন্যই ২০১৬ সালের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, ২০১৯ সালের বালাকোট বিমান হানা এবং ২০২৫ সালের অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে ভারত শান্তি নিশ্চিত করার আর একটি পথ গ্রহণ করেছে। সন্ত্রাস ও আলোচনা একই সঙ্গে চলতে পারে না বলে মন্তব্য করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “আলোচনা হয় সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশগুলির মধ্যে। কিন্তু যে দেশে গোড়া থেকেই গণতন্ত্রের কোন অস্তিত্ব নেই, কেবল ভারতের বিরুদ্ধে ধর্মান্ধতা, সন্ত্রাস ও ঘৃণা রয়েছে, সেখানে আলোচনা চলতে পারে না।”

প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান বিশ্ব সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর, সন্ত্রাস তাদের রাষ্ট্রীয় নীতির ভিত্তি। সেখানে সন্ত্রাসবাদীদের জন্য রাষ্ট্রীয় শেষকৃত্যের আয়োজন করা হয়, সেখানে উপস্থিত থাকেন সামরিক আধিকারিকরা। তিনি বলেন, “সীমান্তে সরাসরি লড়াই করার মতো সাহস পাকিস্তানের নেই। তাই তারা নির্দোষ, সাধারণ মানুষ, শিশু ও তীর্থযাত্রীদের নিশানা করে। পাক সেনাবাহিনী ও আইএসআই সন্ত্রাসকে ছায়াযুদ্ধের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে ভারতকে অস্থির করার স্বপ্ন দেখে। যারা ভারতকে হাজার টুকরো করার কথা ভাবে, তারা যেন ভুলে না যায় যে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে এ এক নতুন ভারত, যারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যতদূর যেতে হয়, তা যেতে প্রস্তুত।”

শ্রী রাজনাথ সিং বলেন, ভারত কখনও অন্য কোন দেশের এক ইঞ্চি জমি দখল করেনি। আকার, শক্তি, সমৃদ্ধি - কোন দিক থেকেই ভারতের সঙ্গে পাকিস্তান তুলনাতে আসে না। তাই তার সঙ্গে প্রতিযোগিতার কোন ভাবনাই ভারতের নেই। ভারতের নীতি হল, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। পাকিস্তান সন্ত্রাসে মদত যোগায় বলেই ভারত পাকিস্তানের বিরোধিতা করে। 

প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই শুধু সীমান্তে নয়, আদর্শগত ক্ষেত্রেও। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের জিরো টলারেন্স নীতি এবং অপারেশন সিঁদুরের বার্তা বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার জন্য প্রতিনিধি দলের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। রাজনৈতিক দলগুলি দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে দেশ, সেনা ও সরকারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন শ্রী সিং। 

সরকার, সশস্ত্রবাহিনী এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি দেশের ঐক্য, সংহতি ও নিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় প্রতিটি পদক্ষেপ গ্রহণে অঙ্গীকারবদ্ধ বলে সভা এবং দেশের নাগরিকদের আশ্বস্ত করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। 

 

SC/SD/AS


(Release ID: 2149734)