প্রতিরক্ষামন্ত্রক
জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন ঘটিয়ে সরকার যে ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে, অপারেশন সিঁদুর তার প্রমাণ : প্রতিরক্ষা মন্ত্রী
Posted On:
10 JUN 2025 5:41PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ১০ জুন, ২০২৫
গত ১১ বছরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন ঘটিয়ে ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে। সারা বিশ্ব অপারেশন সিঁদুরে তা প্রত্যক্ষ করেছে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং মন্তব্য করেছেন। উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁও-এ অসহায় সাধারণ মানুষের ওপর কাপুরুষোচিত জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে ভারত যে প্রত্যাঘাত করেছে, তা এখনও পর্যন্ত সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে নেওয়া ভয়ঙ্করতম পদক্ষেপ। পহেলগাঁও হামলা দেশের সামাজিক ঐক্যের ওপর আঘাত হেনেছিল। পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে ভারত তার সমুচিত জবাব দিয়েছে। শ্রী সিং বলেন, ৩৭০ ধারার বিলোপসাধনের পর জম্মু-কাশ্মীর শান্তি ও প্রগতির এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছিল। আমাদের প্রতিবেশীরা তা সহ্য করতে পারেনি। সেজন্যই পহেলগাঁও-এ সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানো হয়। কিন্তু, পাকিস্তানের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও কাশ্মীরের উন্নয়ন থামানো যায়নি। সরকার জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়নে যে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে, তার জ্বলন্ত নিদর্শন হল উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুলা রেল সংযোগ। পাক-অধিকৃত কাশ্মীরও খুব শীঘ্রই ভারতের অন্তর্ভুক্ত হবে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আশাপ্রকাশ করেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী সন্ত্রাসবাদীদের মুখের মতো জবাব দিয়েছে। পহেলগাঁও-এর মতো ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে তা সুনিশ্চিত করতে হবে। এজন্য শুধু সরকারি স্তরেই নয়, সাধারণ মানুষকেও সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। সন্ত্রাসবাদকে তিনি মানবতার বিরুদ্ধে সবথেকে বড় অভিশাপ, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও গণতন্ত্রের সামনে বড় বিপদ এবং অগ্রগতির পথে বৃহৎ প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুধু নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, মানবতার মৌলিক মূল্যবোধের সুরক্ষার জন্যই সন্ত্রাস প্রতিহত করা দরকার।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদীদের কোনো আদর্শ নেই। কোনো ধর্ম, আদর্শ বা রাজনীতি সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না। হিংসা ও রক্তপাতের মধ্য দিয়ে কোনকিছু অর্জন করা সম্ভব নয়। ভারত ও পাকিস্তান একই সময়ে স্বাধীনতা লাভ করেছিল। কিন্তু আজ ভারত যেখানে গণতন্ত্রের ধাত্রীভূমি হিসেবে সম্মানিত, সেখানে পাকিস্তান পরিচিত হচ্ছে বিশ্বজনীন সন্ত্রাসবাদের জনক হিসেবে। পাকিস্তান বরাবর সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় দিয়েছে, তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে, মদত যুগিয়েছে। এই সন্ত্রাসবাদীদের তাদের পরিকাঠামো সমেত নির্মূল করা প্রয়োজন।
পাকিস্তানকে আর্থিক সাহায্য বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানকে অর্থ দেওয়া মানে সন্ত্রাসবাদকেই মদত দেওয়া। এই প্রথা বন্ধ হওয়া দরকার।
রাষ্ট্রসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাস দমন প্যানেলের ভাইস-চেয়ার হিসেবে পাকিস্তানকে মনোনীত করার সিদ্ধান্তে হতাশা ব্যক্ত করে রাজনাথ সিং বলেন, পাকিস্তান ৯/১১-র সন্ত্রাসবাদী হামলার মূল চক্রীদের আশ্রয় দিয়েছিল। বিশ্বজোড়া সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি পাকিস্তানের মাটি থেকে কাজ চালায়। সেখানে হাফিজ সইদ ও মাসুদ আজহারের মতো সন্ত্রাসবাদীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। পাক সেনাবাহিনীর পদস্থ আধিকারিকরা সন্ত্রাসবাদীদের শেষকৃত্যে যোগ দেন। এরপরও পাকিস্তানকে এই পদে মনোনীত করায় আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির সদিচ্ছা ও নীতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠছে।
রাষ্ট্রসঙ্ঘ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে সন্ত্রাসবাদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবার অনুরোধ জানিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসের আবর্ত থেকে মুক্ত হলে তবেই আমরা বিশ্বজনীন শান্তি, প্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে এগোতে পারব। পাকিস্তানের সাধারণ মানুষও এই ধারণাতেই বিশ্বাসী, কিন্তু শাসকরা সে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
সন্ত্রাসের মোকাবিলায় সক্ষম না হলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পাকিস্তানকে ভারতের সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী সীমান্তের যে কোন দিকেই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে। অপারেশন সিঁদুরে পাকিস্তান তার প্রমাণ পেয়েছে। পাকিস্তানের মাটি থেকে সন্ত্রাস নির্মূল করার জন্য সে দেশের ওপর কৌশলগত, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।
শ্রী সিং বলেন, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র আত্মনির্ভর ভারতের অন্যতম মজবুত ভিত্তি হয়ে দেখা দিয়েছে। অপারেশন সিঁদুরে যেসব অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলি ভারতে তৈরি হয়েছিল। ভারত আজ শুধু নিজের সীমান্তই রক্ষা করছে না, এমন এক সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে, যা কৌশলগত, অর্থনৈতিক ও কারিগরি দিক থেকে অত্যন্ত মজবুত। আগে আমরা প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের জন্য বিদেশের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম, এখন ভারত দ্রুতগতিতে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে এগোচ্ছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, প্রতিরক্ষা বাজেট উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে। ২০১৩-১৪ সালে যেখানে অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২.৫৩ লক্ষ কোটি টাকা, সেখানে ২০২৪-২৫ সালে এই পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৬.২২ লক্ষ কোটি টাকা। বাজেটের ৭৫ শতাংশ অর্থ দেশীয় সংস্থাগুলির কাছ থেকে মূলধনী দ্রব্য কিনতে ব্যয় করা হয়। দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রের ১০টি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এতে ৫,৫০০-রও বেশি প্রতিরক্ষা সামগ্রী অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ভারতের দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি অস্ত্রশস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাঙ্ক ও অন্যান্য সিস্টেম সেনাবাহিনী আজ ব্যবহার করছে। অগ্নি, পৃথ্বী ও ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র শত্রুদের মুখের মতো জবাব দিতে প্রস্তুত। আমরা এখন আইএনএস বিক্রান্তের মতো বিমানবাহী রণতরী তৈরি করতেও সক্ষম।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, বার্ষিক প্রতিরক্ষা উৎপাদন ২০১৪ সালে ছিল ৪০ হাজার কোটি টাকার আশপাশে, যা আজ ১.৩০ লক্ষ কোটি টাকা ছাপিয়ে রেকর্ড অঙ্কে পৌঁছেছে। প্রতিরক্ষা রপ্তানি ২০১৪ সালে ছিল ৬৮৬ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ সালে তা ২৩,৬২২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। বর্তমানে প্রায় ১০০টি দেশে মেড ইন ইন্ডিয়া প্রতিরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে। চলতি বছরে প্রতিরক্ষা উৎপাদন ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা করার লক্ষ্য ধার্য করা হয়েছে। ২০২৯ সালের মধ্যে এই অঙ্ক ৩ লক্ষ কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। চলতি বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রতিরক্ষা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে। ২০২৯ সালের মধ্যে এই অঙ্ক ৫০ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
শ্রী সিং বলেন, একবিংশ শতাব্দীতে তথ্যের যুদ্ধও গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে। ফলে সাধারণ মানুষকে মিথ্যা চিহ্নিত করার, গুজব রোখার এবং সমাজে চেতনা বৃদ্ধির দায়িত্ব নিতে হবে। তথ্য পরিসংখ্যান যেমন আমাদের শক্তি, তেমনই চ্যালেঞ্জও বটে। অপারেশন সিঁদুরের সময় পাকিস্তান ভুয়ো ভিডিও, মিথ্যা খবর ও পোস্ট ছড়িয়ে আমাদের সেনা ও নাগরিকদের মনোবল ভাঙতে চেয়েছিল। সামরিক অভিযান বন্ধ হলেও তথ্যযুদ্ধ এখনও চলছে। মানুষ কোনো ভাবনাচিন্তা না করে ভুয়ো খবর শেয়ার করলে, তাঁরা অজান্তেই শত্রুর হয়ে কাজ করতে থাকবেন। তাই আজ নাগরিকদের সামাজিক যোদ্ধা হয়ে উঠতে হবে। সরকার সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু প্রতিটি নাগরিককেও এই বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, আজকের দিনে সংবাদমাধ্যমে সবাই আগে খবর দিতে চান, কিন্তু আগে খবর দেওয়ার থেকেও সঠিক খবর দেওয়া বেশি জরুরি। ভাইরাল হওয়ার থেকেও বেশি দরকার ভেরিফায়েড হওয়া।
সংবাদমাধ্যমে জাতীয় সুরক্ষার প্রহরী হিসেবে বর্ণনা করে শ্রী সিং বলেন, জাতীয় সুরক্ষা কেবল সীমান্তের সঙ্গেই সংযুক্ত নয়, সাইবার ও সামাজিক ক্ষেত্রের সঙ্গেও এটি জড়িত। সাংবাদিকতা শুধু একটি পেশা নয়, এ এক জাতীয় কর্তব্য। সাংবাদিকরা তথ্যজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে সবাইকে সজাগ করেন। এর মাধ্যমেই সমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়, চেতনা বাড়ে।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী পুশকর সিং ধামী সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
SC/SD/DM
(Release ID: 2135613)