নীতিআয়োগ
azadi ka amrit mahotsav

নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের দশম বৈঠকে সভাপতিত্ব করলেন প্রধানমন্ত্রী

Posted On: 24 MAY 2025 7:56PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৪ মে, ২০২৫

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ নতুন দিল্লির ভারত মণ্ডপমে নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের দশম বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন। বৈঠকে যোগ দেন ২৪টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং ৭টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের উপরাজ্যপাল। এ বছর বৈঠকের থিম ছিল, বিকশিত ভারত@২০৪৭-এর জন্য বিকশিত রাজ্য। বৈঠকের শুরুতে পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় নিহদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিকশিত ভারত গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন ১৪০ কোটি ভারতবাসী। এই বিষয়টি কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি নয়। সব রাজ্য একযোগে কাজ করলে প্রগতির পথে কোনও বাধাই থাকবে না। প্রতিটি রাজ্য, প্রতিটি শহর এবং প্রতিটি গ্রামের বিকাশের ক্ষেত্রে আমাদের দায়বদ্ধ থাকতে হবে। এইভাবে এগোলে ২০৪৭-এর আগেই বিকশিত ভারতের লক্ষ্যপূরণ সম্ভব। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের ৫টি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে ভারত। এদেশের ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্রের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছেন। পরিবর্তনের এই অধ্যায়কে আরও দ্রুত করে তুলতে হবে। ভারত সরকারের ঘোষিত ম্যানুফ্যাকচারিং মিশনের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি রাজ্যকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে উৎপাদনের কর্মকাণ্ড বাড়িয়ে তোলার পরামর্শ দেন। 

বিনিয়োগকারীরা ভারতের প্রতি খুবই আকৃষ্ট হয়ে পড়ছেন বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। এর সুযোগ নিতে রাজ্যগুলিকে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার পরামর্শ দেন তিনি। সংযুক্ত আমির আমিরশাহী, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত বাণিজ্য চুক্তির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী রাজ্যগুলিকে এই বোঝাপড়ার সুযোগ কাজে লাগাতে বলেছেন। 

দক্ষতায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জাতীয় শিক্ষা নীতি শিক্ষার পাশাপাশি প্রায়োগিক কর্মকুশলতা বৃদ্ধির কথা বলে। কৃত্রিম প্রযুক্তি, সেমি-কন্ডাক্টর, থ্রিডি প্রিন্টিং-এর মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ক্ষেত্রগুলির জন্য প্রয়োজনীয় মানব সম্পদ গড়ে তোলার জন্য তিনি রাজ্যগুলির কাছে আবেদন রেখেছেন। জনবিন্যাসগত সুবিধা কাজে লাগিয়ে ভারত দক্ষ মানব সম্পদের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বের ভরকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। তিনি আরও বলেন, দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে ভারত সরকার ৬০,০০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছে। রাজ্যগুলির উচিত, আধুনিক প্রশিক্ষণ পরিকাঠামো গড়ে তোলা এবং গ্রামাঞ্চলেও দক্ষতায়ন কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া। 

সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রধানমন্ত্রী একইসঙ্গে চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ হিসেবে দেখছেন। হাইড্রোজেন এবং পরিবেশ বান্ধব শক্তিক্ষেত্র আগামীদিনে প্রভূত সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে বলে তিনি মনে করেন। 

ভারতে জি-২০ শিখর সম্মেলনের আয়োজন এই দেশকে আরও বেশি করে সারা বিশ্বের পর্যটকদের গন্তব্য করে তুলেছে এবং তার সুযোগ নেওয়ার জন্য প্রতিটি রাজ্যে আন্তর্জাতিক মানের অন্তত একটি করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা বলেন তিনি। সারা দেশে এ ধরনের ২৫-৩০টি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। 

নরেন্দ্র মোদী বলেন যে ভারতে নগরায়ন হচ্ছে দ্রুত হারে। টিয়ার ২ এবং টিয়ার ৩ শহরগুলির ওপর বিশেষ লক্ষ্য দিয়ে এইসব জনপদকে পরিবেশ বান্ধব বিকাশ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলায় উদ্যোগী হতে প্রধানমন্ত্রী রাজ্যগুলির কাছে আবেদন রেখেছেন। এই কাজে গতি আনতে ১ লক্ষ কোটি টাকার আরবান চ্যালেঞ্জ ফান্ড গড়ে তোলা হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। 

ভারতের নারী শক্তির অতুলনীয় ক্ষমতার কথা ফের উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। বিকাশের কাজে মহিলাদের অংশগ্রহণ আরও বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের ওপর গুরুত্ব দেন। কর্মক্ষেত্রকে মহিলাদের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে সরকারি এবং বেসরকারি- দুটি স্তরেই সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। 

জলের সঙ্কট এবং বন্যার মোকাবিলায় নদী সংযুক্তিকরণের উদ্যোগ সব রাজ্যের পক্ষেই সহায়ক বলে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য। কোশি-মোচি সংযুক্তি গ্রিড চালু করার জন্য তিনি বিহারের প্রশংসা করেন। সার্বিক বিকাশের ক্ষেত্রে বিকাশকামী জেলা কর্মসূচি বিশেষ সহায়ক হয়ে উঠেছে বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। 

কৃষি ক্ষেত্রে ‘পরীক্ষাগার থেকে খামার’ প্রণালীর ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিকশিত কৃষি সংকল্প অভিযানের আওতায় প্রায় ২,৫০০ বিজ্ঞানী আগামীদিনে গ্রাম এবং গ্রামীণ কেন্দ্রগুলিতে গিয়ে ফসলের বৈচিত্র্যকরণ এবং রাসায়নিক মুক্ত কৃষি বিষয়ে এলাকার মানুষজনকে অবহিত করবেন। এক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীদের সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। 

স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান ব্যবস্থাপনাকে আরও জোরদার করে তোলার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কোভিডের মতো চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এবং অক্সিজেন প্ল্যান্টগুলির অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখার ওপর তিনি জোর দিয়েছেন। জেলা হাসপাতালগুলিতে থাকা চিকিৎসকদের পরামর্শ যাতে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন পেতে পারেন, সেজন্য টেলি-মেডিসিন কর্মসূচি জোরদার করার কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে তিনি ই-সঞ্জীবনী প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপারেশন সিঁদুর-কে নিছক একবারেরই একটি বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ হিসেবে দেখা উচিত নয়। যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গী এবং নাগরিক স্তর পর্যন্ত প্রস্তুতির ওপর তিনি জোর দিয়েছেন। এজন্যই সম্প্রতি দেশ জুড়ে মক ড্রিলের আয়োজন হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। 

অপারেশন সিঁদুর যেভাবে জঙ্গিদের পরিকাঠামো ধ্বংস করেছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়- বলেছেন সমবেত মুখ্যমন্ত্রী এবং উপরাজ্যপালরা। সশস্ত্র বাহিনীর শৌর্য এবং প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের তাঁরা ভূয়সী প্রশংসা করেন। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার উদ্যোগ সশস্ত্র বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করেছে এবং দেশের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে বলে তাঁরা একমত।

বিকশিত ভারত@২০৪৭-এর জন্য বিকশিত রাজ্য- এই ধারণা সংক্রান্ত্র বিভিন্ন অভিমত পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী ও উপরাজ্যপালরা। এইসব প্রস্তাব মূলত কৃষি, শিক্ষা, দক্ষতায়ন, পানীয় জল, সাইবার নিরাপত্তা, মহিলাদের ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত্র। 

বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে যেসব প্রস্তাব এসেছে, তা পর্যালোচনা করে দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রী নীতি আয়োগের আধিকারিকদের পরামর্শ চেয়েছেন। নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের বৈঠকগুলি যৌথ ভিত্তিতে দেশ গঠনের কাজে এগিয়ে যাওয়ায় বিশেষভাবে সহায়ক হয়ে উঠেছে বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিত্তিতে বিকশিত ভারতের লক্ষ্যপূরণ অবশ্যই সম্ভব হয়ে উঠবে বলে প্রধানমন্ত্রী প্রত্যয়ী। 

 

SC/AC/NS…


(Release ID: 2131175)