প্রতিরক্ষামন্ত্রক
ভারতকে বিশ্বের একটি উন্নত দেশ এবং এক নম্বর সামরিক শক্তি হয়ে উঠতে হবে : প্রতিরক্ষা মন্ত্রী
Posted On:
17 APR 2025 2:04PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী রাজনাথ সিং আজ ১৭ এপ্রিল ২০২৫-এ নতুন দিল্লিতে একটি ডিফেন্স কনক্লেভে আত্মনির্ভর এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত ভারতের জন্য একটি অবশ্যকৃত ভাবনার কথা জানিয়েছেন। দেশজ প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং বিশ্ব নেতৃত্বের বিষয়টি স্পষ্ট করেই জোর দিয়ে তিনি ঘোষণা করেছেন যে, ভারত শুধুমাত্র নিজের সীমান্ত রক্ষা করছে তাই নয়, আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা পরিমণ্ডলে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলছে। তিনি আরও বলেন, “সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যখন ভারত শুধুমাত্র একটি উন্নত দেশ হয়ে উঠবে তাই নয়, বরং আমাদের সামরিক শক্তি বিশ্বে এক নম্বর হয়ে উঠবে।”
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এও বলেন যে, প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে সরকারের কাছে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রটি ঢেলে সাজানো এবং শক্তিশালী করাটাই সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার। তিনি আরও বলেন যে, সরকারের কাছে প্রথম এবং সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল, ভারত যে নিজের প্রতিরক্ষার প্রয়োজনে শুধুমাত্র আমদানিই করে এই মনোভাবের পরিবর্তন করা। তিনি বলেন, “ভারত আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাবে এবং একটি প্রতিরক্ষা শিল্প তালুক গড়বে যা শুধুমাত্র ভারতের প্রয়োজন মেটাবে তাই নয়, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানির সম্ভাবনাকে জোরদার করবে।”
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, “বর্তমানে যখন ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র আত্মনির্ভরতার ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে তখন আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলকে জোরদার করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতেও সে প্রস্তুত”। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আরও বলেন, মেক ইন ইন্ডিয়া কর্মসূচি শুধু দেশের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনকে জোরদার করছে তাই নয়, আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম শৃঙ্খলকে শক্তিশালী এবং নমনীয় করে তুলতেও সে সক্ষম। তিনি আরও বলেন, ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদন সক্ষমতার লক্ষ্য জাতীয় নিরাপত্তা এবং কৌশলগত স্বশাসনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহের ঘাটতির প্রভাব থেকে উৎপাদনকে রক্ষা করার উপায়।
শ্রী রাজনাথ সিং বলেন, ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা সক্ষমতার অর্থ এই নয়, সংঘর্ষে উস্কানি দেওয়া, তিনি আরও বলেন, “আমাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা দায়িত্ববান প্রতিরোধের মতো শান্তি এবং প্রশান্তি স্থাপনে। শান্তি তখনই সম্ভব যখন আমরা শক্তিশালী হবো।”
যুদ্ধের বিবর্তনশীল প্রকৃতি প্রসঙ্গে শ্রী রাজনাথ সিং বলেন, আগামী দিনে সংঘর্ষ এবং যুদ্ধ আরও হিংস্র হয়ে উঠবে এবং যার পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হবে না। সাইবার এবং মহাকাশ ক্ষেত্র দ্রুত নতুন রণক্ষেত্র হয়ে উঠছে এর পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে ধ্যান-ধারণা এবং বক্তব্যের লড়াই চলছে। এই সমস্যার মোকাবিলায় তিনি বলেন, সার্বিক ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং লাগাতার সংস্কারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এও জানান যে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ২০২৫-কে সংস্কারের বর্ষ বলে ঘোষণা করেছে।
সংস্কার বিষয়ে শ্রী রাজনাথ সিং জানান, ২০০ বছরের বেশি পুরোনো অস্ত্র কারখানাগুলির আধুনিকীকরণ সাহসী এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। তিনি বলেন, “বর্তমানে অস্ত্র কারখানাগুলি তাদের নতুন চেহারায় ভালোই কাজ করছে এবং লাভজনক হয়ে উঠছে। আমি বিশ্বাস করি যে, ২০০ বছরের বেশি পুরোনো কাঠামোকে পরিবর্তন করা এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় সংস্কার।”
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সরকারের দেশজ প্রযুক্তির দিকে নজরের উল্লেখ করেন সশস্ত্র বাহিনী এবং ডিফেন্স পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিং (ডিপিএসইউ)-গুলির পাঁচটি করে ইতিবাচক দেশজ প্রযুক্তির তালিকা প্রকাশের কথা বলেন। তিনি বলেন, “বাহিনীর তালিকায় অস্ত্র-শস্ত্র-র সংখ্যা ৫০৯টি। এগুলি এবার থেকে ভারতে তৈরি হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলির তালিকায় থাকা পণ্যের সংখ্যা ৫ হাজার ১২টি।”
শ্রী রাজনাথ সিং আরও বলেন যে, সরকার প্রতিরক্ষা বাজেটের ৭৫ শতাংশ রেখেছে ঘরোয়া কোম্পানিগুলির কাছ থেকে পণ্য কেনার জন্য। ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনের মূল্য ছিল ২০১৪-য় ৪০ হাজার কোটি টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ২৭ হাজার কোটি টাকা। তিনি জানান, “এবছর প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের মূল্য ১.৬০ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে, আমাদের লক্ষ্য ২০২৯-র মধ্যে এই পরিমাণকে ৩ লক্ষ কোটিতে নিয়ে যাওয়া।”
প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানির বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, ২০১৩-১৪-য় এর পরিমাণ ছিল ৬৮৬ কোটি টাকা ২০২৪-২৫-এ তা বেড়ে হয়েছে ২৩,৬২২ কোটি টাকা। তিনি জানান, “আমাদের দেশে তৈরি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানি করা হচ্ছে প্রায় ১০০টি দেশে। আমাদের রফতানির পরিমাণ এবছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং ২০২৯-এর মধ্যে ৫০ হাজার কোটি টাকা হওয়া উচিত।”
শ্রী রাজনাথ সিং জানান, তরুণ সমাজ এবং স্টার্ট আপের জন্য উদ্ভাবনে জোর দিতে চায় সরকার। তিনি জানান, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আনতে আই ডেক্সের সূচনা হয়েছে, যাতে নির্বাচিত স্টার্ট আপগুলিকে ১.৫ কোটি টাকা পর্যন্ত আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়। এর সাফল্যের ভিত্তিতে আইডেক্স প্রাইম চালু করা হয়েছে। আর্থিক সাহায্যের পরিমাণ বাড়িয়ে ১০ কোটি টাকা করা হয়েছে। এছাড়া নবসূচিত অদিতি কর্মসূচিতে ২৫ কোটি টাকা পর্যন্ত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে অভিনব উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে। তিনি আরও বলেন, “এর লক্ষ্য, আমাদের স্টার্ট আপ এবং এমএসএমইগুলির হাত শক্ত করা এবং এরজন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রক স্টার্ট আপ বা এমএসএমই-র জন্য ২৪০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ক্রয়ে অনুমোদন দিয়েছে এবং নতুন প্রযুক্তি তৈরির জন্য ১৫০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের প্রকল্পগুলি অনুমোদন করা হয়েছে।”
ভারতের ক্রমবর্ধমান রণকৌশলগত সক্ষমতার ওপর জোর দিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, দেশ এখন অগ্নি, ব্রক্ষ্মস-র মতো ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি, আইএনএস আরিহান্টের মতো ডুবোজাহাজ, আইএনএস বিক্রান্তের মতো বিমানবাহী জাহাজ, কৃত্রিম মেধা, ড্রোন, সাইবার প্রতিরক্ষা এবং হাইপারসোনিক ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি বলেন, “বিমানের ইঞ্জিন তৈরি করা বেশ কঠিন”- একথা জানিয়ে তিনি কাবেরী ইঞ্জিন প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এবং সাফরান, জিই এবং রোলস রয়েস-র মতো আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলির সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানান।
জাহাজ নির্মাণে ভারতের সাফল্যে জোর দিয়ে শ্রী রাজনাথ সিং জানান, ভারতীয় নৌ-বাহিনী এবং ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর ৯৭ শতাংশের বেশি যুদ্ধ জাহাজ এখন ভারতেই তৈরি হচ্ছে। মরিসাস, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, মালদ্বীপের মতো বন্ধুদেশে ভারতের তৈরি জাহাজ রফতানি করা হচ্ছে।
প্রাক্তন সেনা প্রধান জেনারেল মনোজ পাণ্ডে, প্রাক্তন নৌ প্রধান অ্যাডমিরাল সুনীল লানবা, প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল ভি আর চৌধুরি, প্রতিরক্ষা উৎপাদন সচিব শ্রী সঞ্জীব কুমার, প্রতিরক্ষা গবেষণা দফতরের সচিব এবং ডিআরডিও-র চেয়ারম্যান ডক্টর সমীর ভি কামাত এবং প্রাক্তন প্রতিরক্ষা সচিব শ্রী সঞ্জয় মিত্র সহ শীর্ষ স্থানীয় আধিকারিকরা, বিশেষজ্ঞরা এবং বিশিষ্টজনেরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
SC/ AP /AG
(Release ID: 2122465)
Visitor Counter : 48