বিদেশমন্ত্রক
azadi ka amrit mahotsav

রাষ্ট্রসংঘের শান্তি রক্ষাবাহিনীতে ভারতের ঐতিহ্য: নেতৃত্বদান, অঙ্গীকার এবং ত্যাগ

Posted On: 09 MAR 2025 11:58AM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ০৯ মার্চ, ২০২৫ 

 

আন্তর্জাতিক স্তরে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৯৪৫ সালে রাষ্ট্রসংঘের প্রতিষ্ঠা হয়। সূচনার সময়কাল থেকেই এই সংস্থাটি সংঘাতময় বিভিন্ন পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে, যাতে সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়, সেই লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। আন্তর্জাতিক স্তরে ৫০টিরও বেশি রাষ্ট্রসংঘের মিশনে ২ লক্ষ ৯০ হাজার সদস্যকে কাজে লাগিয়ে ভারত শান্তি রক্ষাবাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ৯টি মিশনে ভারতীয় শান্তি রক্ষা বাহিনীর ৫ হাজার সদস্য সক্রিয়ভাবে কাজ করে চলেছেন।
রাষ্ট্রসংঘের শান্তি রক্ষা বাহিনী ব্লু হেলমেট নামে পরিচিত। ১৯৪৭ সালে আন্তর্জাতিক এই সংস্থা সিদ্ধান্ত নেয় যে, নীল রঙকে শান্তির রঙ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। কারণ, লাল রঙের সঙ্গে যুদ্ধের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ২০২৩ সালে ভারত রাষ্ট্রসঙ্ঘের শান্তি রক্ষাবাহিনীর সর্বোচ্চ সম্মান ড্যাগ হ্যামারস্কজ্যোল্ড পুরস্কার লাভ করেছে। ভারতের শান্তি রক্ষাবাহিনীর দুই সদস্য শিশুপাল সিং ও সানওয়ালা রাম বৈষ্ণোই এবং রাষ্ট্রসংঘের অসামরিক কর্মী শাবের তাহার আলি গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গতে প্রাণ বিসর্জন দেওয়ায় মরণোত্তর এই পুরস্কার লাভ করেন। 
ফেব্রুয়ারির ২৪ ও ২৫ তারিখ নতুন দিল্লির ম্যানেকশ সেন্টারে, সেন্টার অফ ইউনাইটেড নেশনস্‌ পিসকিপিং দক্ষিণী বিশ্বের থেকে মহিলা শান্তি রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের বিষয়ে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেন। ৩৫টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা এই সম্মেলনে যোগদান করেন। এর মধ্য দিয়ে লিঙ্গসাম্য বজায় রাখা এবং শান্তি রক্ষার ক্ষেত্রে সর্বাঙ্গীন ও যথাযথ এক উদ্যোগকে কার্যকর করতে ভারতের অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে।
রাষ্ট্রসংঘের শান্তি রক্ষাবাহিনী সংঘাত নিরসন, শান্তি ফিরিয়ে আনা এবং শান্তি ফিরিয়ে আনতে উপযুক্ত পরিবেশ গঠনে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে সরকারি কাঠামোর মধ্যে বিভিন্ন আলাপ-আলোচনা চালাতে এই সংস্থাটি সাহায্য করে। সংঘাতময় অঞ্চলে যাঁদের প্রাণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, তাঁদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হন বাহিনীর সদস্যরা। বিভিন্ন নাশকতামূলক কাজে যাঁরা জড়িয়ে পড়েন, তাঁদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে বাহিনী সহায়তা করে। এছাড়াও, ঐসব অঞ্চলে ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করা, মানবাধিকার এবং আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় সংস্কারমূলক উদ্যোগেও বাহিনীর সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। 
শান্তি রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা বর্তমান সময়কালে শান্তি ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি, শান্তির পরিবেশ গড়ে তুলতে নানা ভূমিকা পালন করেন। সংঘাত-প্রবণ অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখাই বাহিনীর সদস্যদের মূল কাজ হলেও তাঁরা অনেক সময়েই বিবাদমান গোষ্ঠীগুলির মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। 
১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রসংঘের শান্তি রক্ষা বাহিনীর কাজ শুরু হয়। সেইসময়, মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র বিরতি কার্যকর করাই বাহিনীর অন্যতম কাজ ছিল। শীতল যুদ্ধের সময় ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে বাহিনীর সদস্যদের কাজকর্ম কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হলেও পরবর্তীতে তাঁদের ভূমিকা প্রসারিত হয়। ১৯৯০ সালে শীতল যুদ্ধের অবসানের পর বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রাষ্ট্রসংঘ বর্তমানে বহুপাক্ষিক মিশনের মাধ্যমে সংঘাতময় অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছে। এক্ষেত্রে সামরিক কর্মতৎপরতার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে আলাপ-আলোচনা চালানো, বিভিন্ন মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করা, অসামারিক নাগরিকদের মধ্যে সংঘাত দূর করা, মানবাধিকার রক্ষা এবং প্রশাসনিক কাজে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হয়।  
শান্তি রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা দেশ গড়ার কাজ যেমন করে থাকেন, একইভাবে ভোটদাতাদের নানাভাবে সহায়তা করা হয়। পাশাপাশি, হিংস্র জঙ্গী গোষ্ঠীর বিভিন্ন কর্মতৎপরতা মোকাবিলা করে তাঁরা। রুয়ান্ডা ও বসনিয়ায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হওয়ার পর, ব্রাহিমির একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনে সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এছাড়াও, বাহিনীতে লিঙ্গসাম্য বজায় রাখা এবং আঞ্চলিক স্তরে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে সুপারিশ করা হয়। আজ রাষ্ট্রসংঘ শান্তি রক্ষী বাহিনী নতুন নতুন নিরাপত্তাজনিত সমস্যা মোকাবিলায় সুষমভাবে চিরায়ত বিভিন্ন রীতি-নীতিকে ব্যবহার করে। এই বাহিনীগুলিতে ভারতের অংশগ্রহণের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ১৯৫৩ সালে কোরিয়ায় রাষ্ট্রসংঘের বিভিন্ন অভিযানে ভারতীয় বাহিনীর সদস্যরা যুক্ত হন। মহাত্মা গান্ধীর অহিংস নীতিকে অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক স্তরে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা বাহিনীর অন্যতম উদ্দেশ্য। এক্ষেত্রে ‘বসুধৈব কুটুম্বকম্‌’ অর্থাৎ সমগ্র বিশ্বই আমার পরিবার – এই ভাবনাকে পাথেয় করা হয়। ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত রাষ্ট্রসংঘের ৯টি শান্তি রক্ষা অভিযানে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সামিল হয়েছিলেন। গোলান মালভূমি, লেবানন, মধ্যপ্রাচ্য, সাইপ্রাস, গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, দক্ষিণ সুদান, এ্যাবেই, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র এবং পশ্চিম সাহারা অঞ্চলে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী শান্তি রক্ষা মিশনে যুক্ত হয়েছিল।  
দক্ষিনী বিশ্বের মধ্যে বিভিন্ন আলাপ-আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভারত সবরকমের সহায়তা করতে প্রস্তুত। শান্তি রক্ষা বাহিনীতে ভারতীয় দলের সদস্যদের দক্ষতা বিকাশ সহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে বাহিনীর মহিলা সদস্যদের জন্য বিশেষ ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। আলাপ-আলোচনা, কূটনৈতিক দৌত্য এবং আন্তর্জাতিক স্তরের সহযোগিতা বিশেষ গুরুত্ব পালন করে। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণী বিশ্বগুলির মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে ভারত যেসব অঞ্চলে শান্তি রক্ষার কাজে যুক্ত রয়েছে, সেগুলি হ’ল – 
২০১৪ সাল থেকে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, দক্ষিণ সুদান, গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, গোলান মালভূমি, সুদান, লেবানন, লাইবেরিয়া, ইথিওপিয়া-এরিথ্রিয়া, হাইতি, সিয়েরা লিয়ন, অ্যাঙ্গোলা, রুয়ান্ডা, সোমালিয়া, কঙ্গো, মধ্যপ্রাচ্য, আইভরি কোস্ট এবং কোরিয়া। ভারত রাষ্ট্রসংঘ শান্তি রক্ষাবাহিনীতে তার বিভিন্ন সংস্থার কর্মী ও আধিকারিক, প্রতিরক্ষা পর্যবেক্ষক এবং নিরপেক্ষ পুলিশ আধিকারিক নিয়োগ করে থাকে। 
মহিলাদের বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে। 
শান্তি রক্ষী বাহিনীতে মহিলাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহিলা সদস্যরা সংঘাতময় অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের আস্থা সহজে যাতে অর্জন করা যায়, তা নিশ্চিত করে থাকেন। তাঁরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিভিন্ন কাজে যুক্ত হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগান। রাষ্ট্রসংঘের শান্তি রক্ষা বাহিনীতে ভারত বৃহত্তম ট্রুপ কন্ট্রিবিউটিং নেশন – এর স্বীকৃতি লাভ করেছে। ২০০৭ সালে লাইবেরিয়ায় প্রথম যে পুলিশ বাহিনী পাঠানো হয়, সেই বাহিনীতে ভারত সব মহিলা সদস্যদের পাঠিয়েছিল। ভারতের সেই উদ্যোগ অন্যতম পথপ্রদর্শক হিসেবে বিবেচিত হয়। এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রাপ্ত হিসেবানুযায়ী, ৬টি গুরুত্বপূর্ণ মিশনে ভারতের ১৫০ জন মহিলা সদস্য রয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে লিঙ্গসাম্য বজায় রাখা এবং বিশ্ব জুড়ে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মহিলাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে ভারত স্বীকৃতি দেয়। 
শান্তি রক্ষা বাহিনীতে ভারতীয় সদস্যদের মোতায়েন করার পাশাপাশি ভারত রাষ্ট্রসংঘের বিভিন্ন মিশনে প্রশিক্ষণ, দক্ষতা বিকাশ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা করে থাকে। বাহিনীতে মহিলা সদস্য মোতায়েন করার ক্ষেত্রে ভারত পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সহযোগিতার পরিবেশ গড়ে তুলে তাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে সুরক্ষিত এক পৃথিবী গড়ে তুলতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করা হয়, যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অন্যান্য রাষ্ট্রের কাছে অনুপ্রেরণাদায়ক। এক্ষেত্রে ভারতীয় সদস্যরা একনিষ্ঠভাবে তাঁদের দায়িত্ব পালন করেন। 
কিছু উল্লেখযোগ্য সূত্র – 
•    MEA S Jaishankar Speech
•   http:// https://www.un.org/en/global-issues/peace-and-security
•    https://peacekeeping.un.org/en/what-is-peacekeeping
•  http:// https://indembassy-amman.gov.in/pdf/25012024_India%20and%20UN_%20India's%20Contribution%20to%20UNPK%20Missions.doc.pdf
•   http:// https://peacekeeping.un.org/en/terminology
•    https://peacekeeping.un.org/en/our-history
•    https://www.un.org/en/exhibits/exhibit/75-years-un-peacekeeping
•    https://gallantryawards.gov.in/assets/wars/1.pdf
https://www.mea.gov.in/Speeches-Statements.htm?dtl/39099/EAMs_remarks_during_the_Inaugural_session_of_the_Conference_for_Women_Peacekeepers_from_the_Global_South__Women_in_Peacekeeping__A_Global_South_Perspe
•    https://www.mea.gov.in/photo-features.htm?842/Indias+contribution+to+UN
•    https://www.pminewyork.gov.in/pdf/menu/submenu__668040979.pdf
•    https://pminewyork.gov.in/pdf/menu/submenu__1260383365.pdf
•    https://pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2022052
•    United Nations In India
•    https://peacekeeping.un.org/en/women-peacekeeping
•   http:// https://indembassy-amman.gov.in/pdf/25012024_India%20and%20UN_%20India's%20Contribution%20to%20UNPK%20Missions.doc.pdf
•    https://www.mea.gov.in/Speeches-Statements.htm?dtl/39099/EAMs_remarks_during_the_Inaugural_session_of_the_Conference_for_Women_Peacekeepers_from_the_Global_South__Women_in_Peacekeeping__A_Global_South_Perspe#:~:text=4.%E2%80%8B%20India%20has%20been,trail%20for%20others%20to%20follow.
•    https://www.mea.gov.in/Speeches-Statements.htm?dtl/39099/EAMs_remarks_during_the_Inaugural_session_of_the_Conference_for_Women_Peacekeepers_from_the_Global_South__Women_in_Peacekeeping__A_Global_South_Perspe#:~:text=4.%E2%80%8B%20India%20has%20been,trail%20for%20others%20to%20follow
•   http:// https://indembassy-amman.gov.in/pdf/25012024_India%20and%20UN_%20India's%20Contribution%20to%20UNPK%20Missions.doc.pdf
•    https://pib.gov.in/Pressreleaseshare.aspx?PRID=1928025
•    https://www.pib.gov.in/newsite/PrintRelease.aspx?relid=147695
•    https://pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=2105783
•    https://x.com/DefProdnIndia/status/1894062079566614714/photo/1
•    https://pib.gov.in/PressReleseDetailm.aspx?PRID=2105749&reg=3&lang=1
এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে এই লিঙ্কটি দেখুন - https://static.pib.gov.in/WriteReadData/specificdocs/documents/2025/mar/doc202539516101.pdf

 

 

SC/CB/SB


(Release ID: 2109807) Visitor Counter : 12