প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
ভারত গ্রামীণ মহোৎসবে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
Posted On:
04 JAN 2025 2:04PM by PIB Kolkata
নতুন দিল্লি, ৪ জানুয়ারি ২০২৫
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন জি, অর্থপ্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী জি, নাবার্ডের মাননীয় শীর্ষ স্থানীয় সদস্যগণ, স্বনির্ভর গোষ্ঠী, সমবায় ব্যাঙ্ক, ফার্মার প্রোডিউসার অর্গানাইজেশনগুলির সদস্যগণ, অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথি, ভদ্রমহোদয়া এবং ভদ্রমহোদয়গণ,
আপনাদের সকলকে ২০২৫ নববর্ষের শুভেচ্ছা। ২০২৫-এর শুরুতে গ্রামীণ ভারত মহোৎসবের চিত্তাকর্ষক উদযাপন প্রমাণ করে ভারতে বিকাশযাত্রার অগ্রগতি এবং একটি বিশিষ্ট পরিচিতি। আমি এই অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য নাবার্ড এবং অন্য সকল সহযোগীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুগণ,
আমাদের মধ্যে যাঁরা গ্রামের সঙ্গে যুক্ত, গ্রামে বেড়ে উঠেছেন, তাঁরা বোঝেন ভারতের গ্রামগুলির প্রকৃত শক্তি। গ্রামে যিনি বাস করেছেন, তাঁর মনের ভেতর গ্রাম বাস করে। যাঁরা গ্রামে কাটিয়েছেন, তাঁরা জানেন কিভাবে সত্যিকরে গ্রামীণ জীবনকে আঁকড়ে ধরা যায়। আমি মনে করি, আমার সৌভাগ্য যে আমার ছোটবেলা কেটেছে একটি ছোট্ট শহরে, সাধারণ পরিবেশে! এবং পরে যখন আমি ঘর ছেড়েছি তখনও আমার বেশির ভাগ সময় কেটেছে দেশের গ্রামগুলি এবং গ্রামাঞ্চলে। ফলে, আমি হাতেকলমে গ্রাম জীবনের সমস্যাগুলি দেখেছি এবং এও বুঝতে পেরেছি যে আমাদের গ্রামগুলির মধ্যে প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে। ছোটবেলা থেকে দেখেছি গ্রামের মানুষ কত কঠোর পরিশ্রম করেন কিন্তু মূলধনের অভাবে তাঁরা যথেষ্ট সুযোগ পান না। আমি দেখেছি, গ্রামের মানুষের কত ধরনের প্রতিভা এবং ক্ষমতা আছে। তবুও জীবনের মৌলিক সমস্যা মেটাতেই সেই সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হয়। অন্যান্য অনেক সময় বাজারের অভাবে ফসল নষ্ট করে ফেলতে হয়। খুব কাছ থেকে এই কঠিন জীবন দেখে আমি গ্রামগুলি এবং অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য কাজ করতে উৎসাহিত হই। তাঁদের সমস্যার সমাধান খোঁজার সংকল্প নিই।
আজ দেশের গ্রামাঞ্চলে যে কাজ করা হচ্ছে তা গ্রাম থেকে শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা নিয়েই। ২০১৪ থেকে আমি প্রতিটি মুহূর্ত লাগাতার ব্যয় করেছি গ্রাম ভারতের সেবায়। গ্রামের মানুষের জীবনে মর্যাদা এনে দেওয়াই এই সরকারের অগ্রাধিকার। আমাদের লক্ষ্য, ভারতের গ্রামের মানুষের ক্ষমতায়ন। গ্রামে থেকেই যাতে উন্নতির প্রভূত সম্ভাবনা পাওয়া যায় তা নিশ্চিত করা। যাতে তাঁদের অন্য কোথাও যেতে না হয়। আমাদের লক্ষ্য গ্রামের মানুষের জীবন সহজ করা। এটি অর্জন করতে আমরা প্রত্যেকটি গ্রামে মৌলিক সুবিধার গ্যারান্টির অভিযান চালিয়েছি। স্বচ্ছ ভারত অভিযানের মাধ্যমে আমরা প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার বানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় আমরা গ্রামের লক্ষ লক্ষ পরিবারকে পাকা বাড়ি দিয়েছি। বর্তমানে জল জীবন মিশনের মাধ্যমে হাজার হাজার গ্রামে স্বচ্ছ পানীয় জল পৌঁছোচ্ছে প্রতিটি বাড়িতে।
বন্ধুগণ,
আজ মানুষ ১.৫ লক্ষ আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দিরে স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে দেশের প্রত্যেকটি গ্রামে সেরা চিকিৎসক এবং হাসপাতালকে যুক্ত করেছি। গ্রামাঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষ ই-সঞ্জীবনি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই টেলিমেডিশন পরিষেবা পেয়েছেন। কোভিড ১৯ অতিমারীর সময়ে বিশ্বজুড়ে সন্দেহ ছিল যে ভারতের গ্রামগুলি কিভাবে এই সঙ্কটের মোকাবিলা করবে। কিন্তু আমরা প্রতিটি গ্রামে শেষ মানুষ পর্যন্ত টিকা পৌঁছোনো নিশ্চিত করেছি।
বন্ধুগণ,
গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এমন অর্থিকনীতি জরুরি যা গ্রামের মানুষের প্রত্যেকটি শ্রেণীকে বিবেচনা করবে। আমি খুশি গত ১০ বছরে আমাদের সরকার অনেক বিশেষ নীতি তৈরি করেছে এবং গ্রাম সমাজের প্রতিটি শ্রেণীর জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই তো কিছু দিন আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা পিএম ফসল বীমা যোজনার মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়েছে। ডিএপি (ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট) সারের দাম বিশ্ববাজারে বেড়ে চলেছে। যদি আমাদের কৃষকদের আন্তর্জাতিক দরে এটা কিনতে হয়, তাতে তাঁরা যে চাপে পড়বেন তা থেকে বেরোতে পারবেন না। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি যাই হোক না কেন এবং আমাদের ওপর যত ভারই পড়ুক না কেন, আমরা সেই ভার আমাদের কৃষকদের ওপর পড়তে দেবো না। ডিএপি-র জন্য যদি আমাদের ভর্তুকি বাড়াতেও হয়, আমাদের তা করতে হবে কৃষকদের জন্য দাম কম রাখতে। আমাদের সরকারের এই উদ্দেশ্য, নীতি এবং সিদ্ধান্ত গ্রাম ভারতে নতুন প্রাণশক্তির সঞ্চার করেছে। আমাদের লক্ষ্য গ্রামীণ মানুষকে সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়া, যাতে তাঁদের শুধুমাত্র কৃষিকাজই করতে হয় তা নয়, বরং কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ খুঁজে নিতে পারেন এবং গ্রামেই স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারেন। এই লক্ষ্যে প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে আর্থিক সহায়তা হিসেবে কৃষকদের পিএম কিষাণ সম্মান নিধিতে। গত ১০ বছরে কৃষি ঋণের পরিমাণ ৩.৫ গুণ বেড়েছে। এখন এমনকি গবাদি পশুপালক এবং মৎস্য চাষীদেরও কিষাণ ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে। দেশে ৯০০০-এর বেশি ফার্মার প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন (এফপিও)-গুলিও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। এছাড়া গত এক দশকে বিভিন্ন শস্যের জন্য আমরা নিয়মিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়িয়েছি।
বন্ধুগণ,
আমরা স্বামিত্ব যোজনার মতো উদ্যোগের সূচনা করেছি। যার মাধ্যমে গ্রামবাসীরা তাঁদের সম্পত্তি স্বত্ব পাচ্ছে। গত ১০ বছরে অনেক নীতি রূপায়িত হয়েছে এমএসএমই-র প্রসার ঘটাতে। এই ব্যবসাগুলি উপকৃত হয়েছে ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্মসূচিতে। যাতে সহায়তা পেয়েছেন এক কোটির বেশি গ্রামীণ এমএসএমই। আজ গ্রামের তরুণরা মুদ্রা যোজনা, স্টার্টআপ যোজনা এবং স্ট্যান্ডআপ যোজনার মতো কর্মসূচির মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা পাচ্ছেন।
বন্ধুগণ,
সমবায়গুলি গ্রামের মানচিত্রের বদল ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। আজ ভারত সমবায়ের মাধ্যমে সমৃদ্ধি অর্জনের পথে। এই লক্ষ্য নিয়ে নতুন সমবায় মন্ত্রক স্থাপিত হয়েছে ২০২১-এ। দেশে প্রায় ৭০,০০০ প্রাইমারি এগ্রিক্যালচারাল ক্রেডিট সোসাইটিজ (পিএসিএস)-এ কম্পিউটার বসানো হয়েছে, যাতে কৃষক এবং গ্রামবাসীরা তাঁদের পণ্যের জন্য ভাল দাম পান এবং গ্রামীণ অর্থনীতি যাতে শক্তিশালী হয়।
বন্ধুগণ,
কৃষি ছাড়া গ্রামের অনেক মানুষ বিভিন্ন কারুশিল্প এবং চারুশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। উদাহরণস্বরূপ কর্মকার, সূত্রধর এবং কুম্ভকার- তাঁদের বেশির ভাগই গ্রামেই বসবাস করেন এবং কাজ করেন। এই সব শিল্পীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে গ্রামীণ এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে। তবে, অতীতে তাঁরা প্রায়ই অবহেলিত হতেন। এই সমস্যার সমাধানে আমরা তাঁদের ক্ষমতায়ন করতে বিশ্বকর্মা যোজনার সূচনা করেছি। এই কর্মসূচিতে তাঁদের সুলভে সহায়তা দেওয়া হয় নতুন দক্ষতা অর্জন করতে, নতুন নতুন উদ্ভাবন তৈরি করতে এবং তাঁদের কর্ম ক্ষমতা বাড়াতে। বিশ্বকর্মা যোজনায় দেশে বংশানুক্রমিক পেশায় যুক্ত লক্ষ লক্ষ শিল্পীকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে এগিয়ে যাওয়ার এবং ব্যবসায় সফল হওয়ার।
বন্ধুগণ,
যখন উদ্দেশ্য সৎ হয় তখন ফলাফলও সমান ভাবে সন্তোষজনক হয়। গত ১০ বছরের কঠোর পরিশ্রম দেশকে ফল দিতে শুরু করেছে। মাত্র কিছু দিন আগে দেশে একটা বড় সমীক্ষা চালানো হয়েছে, যার থেকে প্রকাশ পেয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য। ২০১১-র তুলনায় গ্রামবাসীদের ব্যয় ক্ষমতা প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। এর অর্থ গ্রামের মানুষরা পছন্দের মতো জিনিসের জন্য এখন অনেক বেশি খরচ করছেন। পূর্বে এমন অবস্থা ছিল যে গ্রামবাসীরা তাঁদের উপার্জনের ৫০ শতাংশের বেশি খরচ করতেন খাদ্য ও মৌলিক চাহিদা মেটাতে। স্বাধীনতার পর এই প্রথম গ্রামাঞ্চলে খাদ্যের জন্য খরচ কমে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশেরও কম এবং অন্যান্য জিনিসে খরচ বেড়েছে। এতে প্রমাণ হয় মানুষ এখন জিনিস কিনছেন তাঁদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য, ইচ্ছার জন্য। জীবনের মান উন্নত করতে বেশি করে খরচ করছেন।
বন্ধুগণ,
সমীক্ষায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে যে, গ্রামাঞ্চল এবং শহরাঞ্চলের মধ্যে ব্যয় পার্থক্যের হ্রাস হয়েছে। অতীতে একটি শহুরে পরিবার যা খরচ করতো তার থেকে অনেক কম খরচ করতো গ্রামীণ পরিবার। কিন্তু এখন ক্রমশ গ্রামের মানুষ শহরের মানুষকে ধরে ফেলছে। আমাদের লাগাতার প্রয়াসে গ্রাম এবং শহরের এই ফারাক কমে আসছে। গ্রামীণ ভারতে এরকম অনেক সাফল্যের কাহিনী রয়েছে, যা আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়।
বন্ধুগণ,
আজ যখন এই সাফল্যগুলির দিকে তাকাই তখন আমি অবাক হয়ে ভাবি এগুলি আগের সরকারের আমলে কেন হয়নি - কেন আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে মোদীর জন্য? স্বাধীনতার পরে দশকের পর দশক লক্ষ লক্ষ গ্রামবাসী বঞ্চিত থেকেছেন তাঁদের ন্যূনতম চাহিদা থেকে। বলুনতো, তপশিলি জাতি, তপশিলি উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর মানুষ বেশি সংখ্যায় কোথায় থাকেন। এঁরা বেশির ভাগই থাকেন গ্রামাঞ্চলে। পূর্বেকার সরকারগুলি এই সম্প্রদায়গুলির চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে, ক্রমাগত দেখে গেছে মানুষ গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, দারিদ্র্য বেড়েই যাচ্ছে এবং শহর ও গ্রামের ফারাক আরও বাড়ছে। একটা উদাহরণ দিই, আপনারা জানেন, অতীতে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলি সম্পর্কে আমাদের কী ধারণা ছিল? সেগুলিকে বলা হত দেশের শেষতম গ্রাম। আমরা ওই শেষতম গ্রাম বলা বন্ধ করে দিয়েছি। তার বদলে বলছি, “যখন সূর্যের প্রথম রশ্মি বেরোয়, তখন তা পড়ে প্রথমেই গ্রামে এবং এটা শেষতম গ্রাম নয় এবং যখন সূর্য অস্ত যায় তথন আলোর শেষ রশ্মিটুকু ওই দিকেই পড়ে প্রথম গ্রামে।” তাই আমাদের কাছে এই গ্রামগুলি আজ শেষতম গ্রাম নয়, এগুলি প্রথম। এই সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির উন্নতি করতে আমরা ভাইব্র্যান্ট ভিলেজেস কর্মসূচি শুরু করেছি। আজ এই গ্রামগুলির উন্নয়নে সেখানকার মানুষের আয় বাড়ছে। এর অর্থ যাঁরা তাঁদের চাহিদার জন্য কিছু চাইতেন না, মোদী তাঁদের সম্মান দিচ্ছেন। আমরা আদিবাসী অঞ্চলগুলির উন্নতিতে পিএম জনমন যোজনারও সূচনা করেছি। যে অঞ্চলগুলি দশকের পর দশক ধরে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত ছিল, তারা এখন সমান অধিকার পাচ্ছে। গত ১০ বছরে আমাদের সরকার পূর্বতন সরকারগুলির অনেক ভুল সংশোধন করেছে। আজ আমরা সেই মন্ত্র নিয়ে এগোচ্ছি, যাতে বলা হয়েছে গ্রামগুলির উন্নতি হলেই দেশে উন্নতি হবে। এই প্রয়াসগুলির ফল, দেশের প্রায় ২৫ কোটি মানুষ গত ১০ বছরে দারিদ্র্য মুক্ত হয়েছেন। আর এর মধ্যে বেশির ভাগই আমাদের গ্রামগুলির বাসিন্দা।
এই তো গতকাল স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১২-য় ভারতের গ্রামীণ দারিদ্র্য ছিল প্রায় ২৬ শতাংশ। দশকের পর দশক ধরে কিছু মানুষ দারিদ্র্য দূরীকরণের শ্লোগান দিতেন। আপনি যদি গ্রামের কোন ৭০-৮০ বছর বয়সী মানুষকে জিজ্ঞাসা করেন, তাঁরা বলবেন যে তাঁদের ১৫-২০ বছর বয়স থেকেই এই দারিদ্র্য দূরীকরণের শ্লোগান শুনে আসছেন। এখন তাঁদের ৮০ বছর বয়স কিন্তু আজ পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের দেশে দারিদ্র্য প্রকৃতই কমতে শুরু করেছে।
বন্ধুগণ,
ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতিতে মহিলাদের সব সময়ই একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে এবং আমাদের সরকার সেই ভূমিকার প্রসার ঘটাচ্ছে। বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি মহিলারা গ্রাম জীবনের নতুন সংজ্ঞা দিচ্ছেন ব্যাঙ্ক সথী এবং বিমা সখী হিসেবে। আমি একবার ব্যাঙ্ক সখীদের সঙ্গে কথা বলি। তাঁদের একজন আমাকে বললেন, তিনি প্রতিদিন ৫০-৬০-৭০ লক্ষ টাকার লেনদেনের দেখভাল করেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম কিভাবে? তিনি উত্তর দিলেন, “আমি সকালে ৫০ লক্ষ টাকা নিয়ে বোরোই।” আমার দেশের একজন তরুণী তাঁর ব্যাগে ৫০ লক্ষ টাকা নিয়ে ঘুরছেন, এ আমাদের দেশে এক নতুন জিনিস। গ্রামে গ্রামে মহিলারা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে বিপ্লব করছেন। আমরা ১.১৫ কোটি মহিলাকে ‘লাখপতি দিদি’ বানিয়েছি এবং ’লাখপতি দিদি’ মানে এই নয় যে একদিনে এক লক্ষ টাকা রোজগার করছেন – এর অর্থ বছরে ১ লক্ষ টাকার ওপর রোজগার করছেন। আমাদের সংকল্প তিন কোটি মহিলাকে লাখপতি দিদি করা। আমরা দলিত, অনগ্রসর এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের মহিলাদের ক্ষমতায়ন করতে বিশেষ কর্মসূচি চালাচ্ছি।
বন্ধুগণ,
আজ দেশের গ্রামীণ পরিকাঠামোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে আগের থেকে বেশি। দেশের বেশির ভাগ গ্রাম এখন হাইওয়ে, এক্সপ্রেসওয়ে এবং রেলপথের সঙ্গে যুক্ত। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় প্রায় ৪ লক্ষ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হয়েছে গ্রামাঞ্চলে গত ১০ বছরে। ডিজিটাল পরিকাঠামো ক্ষেত্রে আমাদের গ্রামগুলি একবিংশ শতাব্দীতে আধুনিক হাব হয়ে উঠেছে। আমাদের গ্রামের মানুষ তাঁদের ব্যর্থ প্রতিপন্ন করবেন, যাঁরা মনে করেন গ্রামবাসীরা ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণ করতে সক্ষম হবেন না। আমি এখানে দেখতে পাচ্ছি প্রত্যেকে মোবাইল ফোনে ভিডিও রেকর্ডিং করছেন, এঁরা সকলেই গ্রামবাসী। আজ ৯৪ শতাংশের বেশি গ্রামীণ পরিবারে টেলিফোন বা মোবাইল ফোন আছে এবং ইউপিআই-এর মতো বিশ্বমানের প্রযুক্তি পাওয়া যায় গ্রামে। ২০১৪-র আগে আমাদের দেশে ১ লক্ষের কম কমন সার্ভিস সেন্টার সিএসসি ছিল। এখন সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ লক্ষের বেশি। এই কেন্দ্রগুলি অনলাইনে অনেক সরকারি পরিষেবা দিতে সাহায্য করে। এই পরিকাঠামো গ্রামের অগ্রগতিকে চালিত করছে। তৈরি করছে কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং গ্রামাঞ্চলকে দেশের অগ্রগতির একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ করে তুলছে।
বন্ধুগণ,
এখানে আমাদের মধ্যে আছেন নাবার্ডের শীর্ষস্থানীয় আধিকারিকরা। আপনারা অনেক উদ্যোগের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন - স্বনির্ভর গোষ্ঠী থেকে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড পর্যন্ত। ভবিষ্যতে দেশের উদ্দেশ্য পূরণে আপনারা তখনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন। আপনারা সকলেই এফপিও-র ক্ষমতার সঙ্গে পরিচিত। এফপিও স্থাপনের ফলে কৃষকরা তাঁদের শস্যের জন্য ভালো দাম পাচ্ছেন। আমাদের আরও এফপিও স্থাপনের কথা ভাবতে হবে এবং সেই উদ্দেশ্যে এগোতে হবে। বর্তমানে দুধ উৎপাদন থেকে কৃষকদের বেশি আয় হচ্ছে। আমাদের প্রয়োজন আমূলের মতো আরও ৫-৬ সমবায়, যার উপস্থিতি থাকবে সারা দেশে। দেশ এখন প্রাকৃতিক চাষকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক চাষের প্রসারে আরও বেশি কৃষককে যুক্ত করা প্রয়োজন। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকেও ক্ষুদ্র এবং অণুশিল্পের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত। তাদের দ্বারা প্রস্তুত পণ্যের চাহিদা আছে দেশজুড়ে। কিন্তু আমাদের নজর দিতে হবে ব্র্যান্ডিং এবং বিপণনের ওপর। এছাড়া আমাদের জিআই পণ্যের জন্য গুণমান, প্যাকেজিং এবং ব্র্যান্ডিং-এ নজর দিতে হবে।
বন্ধুগণ,
গ্রামীণ উপার্জনে বৈচিত্র আনার পথ খুঁজতে আমাদের কাজ করা প্রয়োজন। গ্রামে কিভাবে সুলভে সেচ দেওয়া যায় আমাদের নজর দিতে হবে অণুসেচ ব্যবস্থায় এবং “ওয়ান ড্রপ মোর ক্রপ” মন্ত্রকে বাস্তবায়িত করতে হবে। গ্রামাঞ্চলে আরও সরল গ্রামীণ সংস্থা স্থাপন করার প্রয়োজন আছে। এছাড়া আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যাতে প্রাকৃতিক চাষ থেকে যতটা বেশি সম্ভব উপকৃত হয় গ্রামীণ অর্থনীতি। আমি আপনাদের সময় বেধে এই লক্ষ্যে কাজ করার আবেদন জানাচ্ছি।
বন্ধুগণ,
আপনাদের গ্রামে যে অমৃত সরোবর তৈরি হয়েছে তার দেখভাল করতে হবে আপনাদের সকলকে। একই সঙ্গে “এক পেঢ় মাকে নাম” (একটি গাছ মায়ের জন্য) অভিযান চালু আছে। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে গ্রামের প্রত্যেককে এই অভিযানে অংশীদার হয়ে উঠতে অনুপ্রাণিত করতে হবে, যাতে আমাদের গ্রামে গ্রামে আরও বেশি সংখ্যায় গাছ রোপণ করা সম্ভব হয়। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আমাদের গ্রামগুলির পরিচয় নিহিত আছে তার ঐক্য, সম্প্রীতি এবং ভালোবাসায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন কেউ কেউ আছে যাঁরা জাতের নামে সমাজে বিষ ছড়ানোর চেষ্টা করছেন, আমাদের সামাজিক ঐক্যকে দুর্বল করার চেষ্টা করছেন। আমাদের এই ষড়যন্ত্র রুখতে হবে এবং আমাদের ‘সানঝি বীরাসত’ এবং ‘সানঝি সংস্কৃতি’-কে রক্ষা ও শক্তিশালী করতে হবে।
ভাই ও বোনেরা,
আমাদের সংকল্পের কথা প্রতিটি গ্রামে পৌঁছোনো উচিত। গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দিতে হবে গ্রামীণ ভারতের এই উদযাপন। আমাদের একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন, যাতে আমাদের গ্রামগুলি আরও শক্তিশালী এবং সক্ষম হয়ে ওঠে। আমার পূর্ণমাত্রায় বিশ্বাস যে গ্রামগুলির উন্নয়নের দায়বদ্ধতা বিকশিত ভারতের স্বপ্নকে সফল করবে। গ্রামবাসীদের জিআই ট্যাগ লাগানো পণ্যগুলি দেখার আজ আমার সুযোগ হয়েছে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি দিল্লির মানুষের কাছে আবেদন জানাবো যাঁরা নিয়মিত গ্রামে যেতে পারেনি, তাঁরা যেন অন্তত একবার গ্রামে গিয়ে তার সম্ভাবনার বিষয়টি দেখেন। আমাদের গ্রামে যে কত বৈচিত্র এবং সম্ভাবনা আছে এবং আমি নিশ্চিত যাঁরা কখনও গ্রামে যাননি তাঁরা চমৎকৃত হবেন। এই সব কাজই আপনারা করেছেন এবং আপনাদের অভিনন্দন প্রাপ্য। আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই আপনাদের প্রত্যেককে। অনেক ধন্যবাদ।
(প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি হিন্দিতে)
SC/AP/AS/
(Release ID: 2091425)
Visitor Counter : 68
Read this release in:
English
,
Urdu
,
Hindi
,
Marathi
,
Manipuri
,
Assamese
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam