সংস্কৃতিমন্ত্রক
মহা কুম্ভ মেলা ২০২৫ : বিশ্বাস, সংস্কৃতি এবং আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের পবিত্র সংগম
Posted On:
04 DEC 2024 5:59PM by PIB Kolkata
নতুন দিল্লি, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪
বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ মহা কুম্ভ মেলা। বিশ্বাস, সংস্কৃতি এবং প্রাচীন ঐতিহ্যের এক বিরল সংগম। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী এই পবিত্র উৎসব ১২ বছরে চারবার হয় ভারতের চারটি স্থানে – হরিদ্বার, উজ্জ্বয়িনী, নাসিক এবং প্রয়াগরাজে। এই প্রত্যেকটি স্থানই পবিত্র নদীর ধারে অবস্থিত। হরিদ্বার গঙ্গার তীরে, উজ্জয়িনী শিপ্রার তীরে, নাসিক গোদাবরীর তীরে এবং প্রয়াগরাজ গঙ্গা, যমুনা ও পৌরাণিক সরস্বতীর তীরে অবস্থিত। আগামী বছর ২০২৫-এ ১৩ জানুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রয়াগরাজে এই চিত্তাকর্ষক উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। আসবেন দেশ বিদেশের লক্ষ লক্ষ ভক্ত ও তীর্থযাত্রী।
এই মহান উৎসবের সঙ্গে জড়িত ধর্মীয় আচার, জ্যোতির্বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিদ্যা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং আধ্যাত্মিক উদ্ভাস। ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নান করে পাপমুক্ত হওয়া যায় বলে বিশ্বাস করেন ভক্ত ও তীর্থযাত্রীরা। এই মহা কুম্ভ মেলা শুধুমাত্র ভারতের সুদৃঢ় ঐতিহ্যের প্রতিফলন নয়, এটি মানব জাতির অন্তরের শান্তি, আত্মপরিচয় এবং সংঘবদ্ধ হওয়ার পুরোনো বিশ্বাস।
স্নানের পাশাপাশি পবিত্র নদীর তীরে পুজো করেন ভক্তরা, সাধু-সন্তদের কথা শোনেন। প্রয়াগরাজ মহা কুম্ভে বিশেষ কয়েকটি স্নানের দিন উল্লেখযোগ্য। যেমন ১৩ জানুয়ারি, পৌষ পুর্ণিমা, ১৪ জানুয়ারি মকরসংক্রান্তি ইত্যাদি। এই দিনগুলিতে সাধু-সন্ত, ভক্ত এবং বিভিন্ন আখড়ার সদস্যরা শাহীস্নান বা রাজযোগ স্নানে অংশ নেন বর্ণাঢ্য মিছিল করে গিয়ে। এদিন থেকেই শুরু হয় সরকারি ভাবে কুম্ভ মেলা।
নদীর তীরে চোখ ধাঁধানো গঙ্গা আরতি দেখার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হতে চান না অংশগ্রহণকারীরা। মহা কুম্ভ মেলার স্বল্পপরিচিত, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল কল্পবাস। যে সব তীর্থযাত্রী কল্পবাসে অংশ নেন, তাঁরা অতি সাধারণ জীবনযাপন করেন। পার্থিব সুখ ত্যাগ করে প্রতিদিন ধ্যান, প্রার্থনা এবং ধর্মগ্রন্থ পাঠ করে থাকেন। এই সঙ্গেই হয় বৈদিক মতে যজ্ঞ এবং হোম।
মানুষ বিশ্বাস করেন কুম্ভের সময় সঙ্গম দর্শনে আসেন দেবতারা। সেই কারণে করা হয় দেবপূজা। শ্রাদ্ধ এবং কেশ মুণ্ডন করে গঙ্গায় দান করা এই অনুষ্ঠানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কুম্ভের সময়ে অনেকেই গো-দান করেন, বস্ত্র দান করেন, দ্রব্য দান করেন এবং স্বর্ণ দান করেন।
প্রয়াগরাজে কুম্ভ মেলা চলাকালীন দীপদান উৎসব অত্যন্ত আকর্ষণীয় এক অনুষ্ঠান। ভক্তরা হাজার হাজার জ্বলন্ত প্রদীপ ভাসিয়ে দেন ত্রিবেণী সঙ্গমের জলে। কখনও কখনও চালগুঁড়ি বা ময়দা দিয়েও প্রদীপ তৈরি করা হয়।
প্রাচীন আচারের সঙ্গে ভক্তরা নিজেদের যুক্ত করতে ৫ ক্রোশ পথ পরিক্রমাও করেন। এই পরিক্রমার পথে পড়ে দ্বাদশ মাধব এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মন্দির।
চিরাচরিত রীতি-নীতি, আচার-বিচার ছাড়াও ২০২৫-এর মহা কুম্ভে থাকবে আরও নানা আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান। শুধু ধর্ম নয়, প্রয়াগরাজ সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং স্থাপত্যের এক অনিন্দ্য নিদর্শন। বহু প্রাচীন মন্দির আছে এখানে, যেমন – হনুমান মন্দির, আলোপি দেবী মন্দির এবং মনকামেশ্বর মন্দির। প্রত্যেকটি মন্দিরের সঙ্গেই নানা ধর্মীয় অনুসঙ্গ জড়িত। প্রাচীন মন্দিরগুলির সুন্দর স্থাপত্য পর্যটন এবং ইতিহাসপ্রেমীদের আকর্ষণ করে। প্রায়গরাজেই আছে অশোকস্তম্ভ, যা আমাদের ভারতের সমৃদ্ধ অতীত ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এর গায়ে অঙ্কিত লিপি দেশের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন। এর পাশাপাশি আছে ঔপনিবেশিক যুগের এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় ভবন এবং স্বরাজ ভবন।
প্রয়াগরাজের সদাব্যস্ত রাস্তা এবং বাজারও ভক্ত ও তীর্থযাত্রীদের আকর্ষণ করে। স্থানীয় শিল্প ও সংস্কৃতি, রন্ধনশৈলীর নমুনা পাওয়া যায় এখানে। এই শহরেই আছে বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা বহু বছর ধরেই ভারতের বুদ্ধিবৃত্তিকে সতেজ করার কাজে মগ্ন।
যাঁরা আধ্যাত্মিক পথের সন্ধানে যান তাঁদের কাছে আখড়া এবং তার সাধুরা মূল আকর্ষণ। এই আখড়াগুলি শুধুমাত্র পুজো করার জায়গা নয়, এখানে আধ্যাত্মিক ভাবনার বিনিময় ঘটে। আলোচনা হয় দর্শন নিয়ে। মহা কুম্ভ মেলায় যোগদানকারী যে কেউ নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারেন এই সব আখড়ায়।
মহা কুম্ভ মেলা শুধু ধর্মীয় সম্মেলন নয়, এটি বিশ্বাস, রীতি-নীতি এবং আধ্যাত্মিক আলোয় আলোকিত। ভারতের সংস্কৃতি এবং আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের নির্যাস। মোক্ষ সন্ধানকারীদের জন্য এটি এক মহৎ উৎসব। কাল ও সময় পেরিয়ে এখনও কুম্ভ মেলা সজীব। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষ তাঁর পূর্বপুরুষের শিকড়ের পরিচয় পেতে সমবেত হন এই মেলায়। যে বাঁধনে সমগ্র ভারতের মানুষ বদ্ধ, সেই ঐক্য, সহমর্মিতা এবং বিশ্বাসের অসীম মূল্যবোধের জীবন্ত দলিল এই মেলা। সাধু-সন্তদের মিছিল, মন্ত্রধ্বনি এবং পবিত্র ক্রিয়া-কর্ম এই মেলাকে এক দৈব অভিজ্ঞতায় পরিণত করে, যা ছুঁয়ে যায় প্রত্যেক মানুষের হৃদয়।
PG/AP/AS
(Release ID: 2081041)
Visitor Counter : 28