তথ্যওসম্প্রচারমন্ত্রক
iffi banner

বর্ণাঢ্য সমারোহের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটল ভারতের ৫৫তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের

নতুন দিল্লি, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

 

যে কোন সৎ প্রচেষ্টাই একদিন শেষ বা সম্পূর্ণ হয় সাফল্যের মধ্য দিয়ে। এমনই এক ঘটনার সাক্ষী রইলো গোয়ার শ্যামা প্রসাদ মুখার্জী ইন্ডোর স্টেডিয়াম। এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘোষণা করা হল ভারতের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৪-এর। উৎসব শেষ হল বটে, কিন্তু তার রেশ ও আবহ অমলিন রইলো চলচ্চিত্র প্রেমী অসংখ্য মানুষ তথা ভবিষ্যৎ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাছে। ১১,৩৩২ জন প্রতিনিধির সমারোহে বৈশিষ্টময় হয়ে উঠলো এবারের উৎসব প্রাঙ্গন। দেশের ৩৪টি রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিশ্বের ২৮টি দেশের প্রতিনিধিরা উপভোগ করলেন চলচ্চিত্র উৎসবের যাবতীয় প্রদর্শন ও অনুষ্ঠান। 

অন্যদিকে, ফিল্ম বাজারের কথা যদি ধরা যায় তাহলে বলতে হবে যে সেখানে সমবেত প্রতিনিধিদের সংখ্যা ছিল ১,৮৭৬। এদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বহির্বিশ্বের ৪২টি দেশের প্রতিনিধিরাও। জানা গেছে যে এবারের ফিল্ম বাজারে ব্যবসা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি। ১৫টি শিল্প সংস্থার সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে যে প্রযুক্তি মণ্ডপটি গড়ে তোলা হয়েছিল তা হয়ে উঠেছিল সমবেত প্রতিনিধিবৃন্দের কাছে এক অন্যতম মূল আকর্ষণ। এই উৎসবকে সাফল্যমন্ডিত করে তুলতে শিল্প সংস্থাগুলির কাছ থেকে স্পন্সরশিপ বাবদ পাওয়া গেছে ১৫৩৬ কোটি টাকা। 

এবারের উৎসবের উদ্বোধন ও সমাপ্তি অনুষ্ঠান ছিল তারকাখচিত। তাঁরা সকলেই ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের মঞ্চকে আলোকিত করে তুলেছিলেন। ভারতীয় চলচ্চিত্রের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের শতবার্ষিক উদযাপনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে সূচনা হয় এবারের উৎসব। অন্যদিকে, সঙ্গীত ও নৃত্যের মোহ ও মুর্ছনার মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে এবারের উৎসবের। সত্যজিৎ রায় জীবনকৃতি পুরস্কার অর্পণ করা হয় ফিলিপ নয়েস এবং ভারতীয় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় বিক্রান্ত মেসি-র হাতে।

এবারের উৎসবে ১৮,০০০ এন্ট্রির মধ্য থেকে ১৮৯টি আন্তর্জাতিক ছবি নির্বাচিত করা হয়। ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির বিভিন্ন দেশ ও সেগুলির বৈচিত্র্য, চিন্তা-ভাবনা ও বক্তব্য তুলে ধরতে ৮১টি দেশের নানান ছবি প্রদর্শিত হয়। সমান ভাবেই আকর্ষণীয় ছিল প্রতিযোগিতা বিভাগে প্রদর্শিত ১৫টি ছবি। 

এবারের উৎসবের ফোকাস হিসেবে তুলে ধরা হয় অস্ট্রেলিয়াকে। ঐ দেশের শ্রেষ্ঠ ছবিগুলি প্রদর্শিত হয় এবারের চলচ্চিত্র মঞ্চে। মাইকেল গ্রেসির 'বেটার ম্যান' ছবিটি দিয়ে অস্ট্রেলিয়ান সিনেমার প্রদর্শন শুরু হয়। 

লিথুয়ানিয়ার 'টক্সিক' ছবিটি অর্জন করে নেয় গোল্ডেন পিকক পুরস্কার। অন্যদিকে, রোমানিয়ার 'এ নিউ ইয়ার দ্যাট নেভার কেম' ছবিটি নির্বাচিত হয় সিলভার পিকক পুরস্কারের জন্য। 

এবারের ইন্ডিয়ান প্যানোরমা বিভাগে স্থান পায় ২৫টি কাহিনীচিত্র এবং ২০টি অ-কাহিনীচিত্র। দেশের তরুণ চলচ্চিত্র প্রতিভা আবিস্কারের জন্য প্রবর্তিত হয় একটি নতুন পুরস্কারেও। 

এবারের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মূল ফোকাস ছিল ইয়াং ফিল্মমেকার্স - 'দ্য ফিউচার ইজ নাও'। সৃজনশীলতার ভবিষ্যৎকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ইয়াং ফিল্মমেকার্স মঞ্চটি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর বিশেষ চিন্তা-ভাবনা প্রসূত। 'ক্রিয়েটিভ মাইন্ড অফ টুমরো' মঞ্চটির উদ্দেশ্য ছিল ১০০ জন তরুণ চলচ্চিত্র প্রতিভাকে উৎসাহ দান। চলচ্চিত্রের আঙিনায় প্রথম আবির্ভাব পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয় এমন একজন চলচ্চিত্র নির্মাতার জন্য, যাঁর ছবি পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রথম হাতেখড়ি হল। তরুণ চলচ্চিত্র প্রতিভাকে উৎসাহদানের লক্ষ্যে আয়োজন করা হয় মাস্টার ক্লাস, প্যানেল ডিসকাশন, ফিল্ম বাজার এবং ফিল্ম প্যাকেজের। 

জোম্যাটোর সহযোগিতায় ইফিয়েস্টা এক নতুন বিনোদনের আয়োজন করে। যার নাম দেওয়া হয় 'ডিস্ট্রিক্ট'। ফুড স্টল এবং বিশেষ ভাবে আয়োজিত সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের মধ্যে মঞ্চস্থ হয় নাটক। ভারতের চলচ্চিত্র নির্মাণের সমৃদ্ধ ইতিহাসকেও তুলে ধরা হয় সেখানে। ৬ হাজার ছাত্র-ছাত্রী সহ মোট ১৮,৭৯৫ জন দর্শক উপভোগ করেন ইফিয়েস্টার উদ্যোগ আয়োজন। 

ভারতের ৫৫ তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় ভারতের চলচ্চিত্র জগতের প্রবাদ প্রতিম দিকপালদের। এই উদ্দেশ্যে স্মরণ করা হয় এ নাগেশ্বর রাও (এএনআর), রাজ কাপুর, মহম্মদ রফি এবং তপন সিনহাকে। তাঁদের স্মরণীয় উত্তরাধিকার ও পরম্পরার উদযাপনের মধ্য দিয়ে প্রবাদ প্রতিম ব্যক্তিত্বদের অসামান্য এবং অতুলনীয় অবদান উপস্থাপিত করা হয় শ্রোতা-দর্শকদের কাছে।

এনএফডিসি এবং ন্যাশনাল ফিল্ম আরকাইভ অফ ইন্ডিয়া-র পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা হয় রেস্টোর্ড ক্লাসিকস সেকশনের। জাতীয় চলচ্চিত্র মিশনের এক অঙ্গ হিসেবে এনএফডিসি এবং এনএফএআই নির্মিত ছবিগুলির ডিজিটাল কপি তৈরি করার মধ্য দিয়ে অতীতের এই ক্লাসিক ছবিগুলিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক। 

যে সমস্ত ছবির ডিজিটাল রূপান্তর করা হয় তার মধ্যে ছিল - ১৯১৯ সালে দাদা সাহেব ফালকে নির্মিত নির্বাক ছবি 'কালিয়া মর্দন'। এতে যুক্ত করা হয় স্পেশাল লাইভ সাউন্ড। এছাড়াও ছিল রাজ কাপুরের আওয়ারা (১৯৫১), এএনআর-এর দেবদাস (১৯৫৩), মহম্মদ রফির সঙ্গীত সমৃদ্ধ হামদোনো (১৯৬১), তপন সিনহার হারমোনিয়াম (১৯৭৫) এবং সত্যজিৎ রায়ের সীমাবদ্ধ (১৯৭১)। 


ভারতের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৪ পর্বের আরও একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন ছিল 'ক্রিয়েটিভ মাইন্ডস অফ টুমরো'। এই বিভাগে মাত্র ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ছবি প্রযোজনা ও নির্মাণ করে দেখানোর বিষয়টি ছিল বেশ চ্যালেঞ্জের। কিন্তু তা সত্বেও চলচ্চিত্র প্রতিভার কৃতিত্ব ও নৈপুণ্য প্রতিফলিত হয় এই বিশেষ বিভাগটিতে। নির্দিষ্ট সময়সীমা অর্থাৎ ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তৈরি করা হয় ৫টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি। হিন্দিতে আর্শালি যোশের 'গুল্লু', পীযূষ শর্মার কোঙ্কনি ও ইংরেজিতে তৈরি 'দ্য উইন্ডো' এবং ইংরেজি ভাষায় নির্মিত বনিতা রাজপুরোহিতের 'উই ক্যান হিয়ার দ্য সেম মিউজিক', ইংরেজিতে নির্মিত মল্লিকা জুনেজার 'লাভফিক্স সাবসক্রিপশন' এবং এস দেও শ্রীবাস্তবের 'হে মায়া' ছবিগুলি নির্মিত হয় ৪৮ ঘন্টার মধ্যে। বিচারকদের রায়ে শ্রেষ্ঠ ছবি ঘোষণা করা হয় 'গুল্লু'-কে। প্রথম রানারআপ ছবি হিসাবে নির্বাচিত হয় 'উই ক্যান হিয়ার দ্য সেম মিউজিক'। শ্রেষ্ঠ পরিচালকের কৃতিত্ব অর্জন করেন আর্শালি যোশ। অন্যদিকে, শ্রেষ্ঠ কাহিনী তথা চিত্রনাট্য রচনার কাজে পুরস্কৃত হন অধিরাজ বোস' দ্য লাভফিক্স সাবসক্রিপসন' ছবিটির জন্য। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন পুষ্পেন্দ্র কুমার (গুল্লু) এবং বিশাখা নায়েক (লাভফিক্স সাবসক্রিপশন)। 

উৎসবের সাতটি দিনে ভারতের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কর্তৃপক্ষ আয়োজন করে ৩০টি মাস্টার ক্লাসের। আন্তর্জাতিক সিনেমা জগতের নামী ব্যক্তিত্বরা যোগ দেন প্যানেল ডিসকাশন এবং আলোচনা ও মত বিনিময় অনুষ্ঠানে। 

২২ নভেম্বর মণি রত্নমকে নিয়ে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে উপস্থিতির সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ। ৮৩ শতাংশ উপস্থিতির হার লক্ষ্য করা যায় রণবীর কাপুর পর্বে। 

এবারের উৎসবের প্রচার পর্বের সঙ্গে যুক্ত ছিল দেশের প্রথম শ্রেণীর সংবাদপত্রগুলি ছাড়াও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যম। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরো এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে উৎসবের প্রচার এবং অন্যান্য কাজে।  

 


PG/SKD/AS

iffi reel

(Release ID: 2079655) Visitor Counter : 19